179 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"দুর্গেশনন্দিনী" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
‘দুর্গেশনন্দিনী’ তাঁর প্রথম সৃষ্টি হলেও কালের বিচারে তাে বটেই, বিষয়ে ও আঙ্গিকেও তা অভিনব ও অসামান্য। মানসিংহের ছেলে জগৎস..
TK. 280TK. 210 You Save TK. 70 (25%)
In Stock (only 2 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
"দুর্গেশনন্দিনী" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
‘দুর্গেশনন্দিনী’ তাঁর প্রথম সৃষ্টি হলেও কালের বিচারে তাে বটেই, বিষয়ে ও আঙ্গিকেও তা অভিনব ও অসামান্য। মানসিংহের ছেলে জগৎসিংহের সঙ্গে কতলু খাঁর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কাহিনী বর্ণনার ভেতর দিয়ে তিনি যে-প্রণয়কাহিনী সৃষ্টি করেছেন তা সাহিত্যমূল্যে এখন ক্ল্যাসিক পর্যায়ে উন্নীত। দুর্গেশনন্দিনী তিলােত্তমা ও জগৎসিংহের প্রেম এই কাহিনীর মূল উপজীব্য হয়েও আয়েষার প্রেম উজ্জ্বলতর হয়ে ফুটে আছে।
বাংলায় প্রথম রােমান্টিক উপাখ্যান হিসেবে 'দুর্গেশনন্দিনী’ পাঠকধন্য হয়ে আছে। মােগল ও পাঠানদের মধ্যে চলমান যুদ্ধের পটভূমিতে ত্রিভুজ প্রেমের এক অনুপম আখ্যান এখানে বর্ণিত হয়েছে। কতলু খাঁর মেয়ে অর্থাৎ রাজকন্যা আয়েষা যখন কারাগারে আটক রাজসিংহকে উদ্দেশ করে বলেন, এই বন্দী আমার প্রাণেশ্বর’ তখন তিলােত্তমার প্রেমিকের প্রতি আয়েষার প্রেম আর চাপা থাকে না। সেই ১৮৬৫ সালে হিন্দু-মুসলমানের প্রেম যেভাবে বঙ্কিম প্রকাশ করেছেন, তাতে সাহস আছে। কিন্তু মুসলমান মেয়েকে হিন্দুর প্রণয়াকাক্ষী করে মুসলমান জাতিকে ছােট করেছেন— এরকম মন্তব্যে বঙ্কিম সমালােচিত হয়েছেন। কিন্তু প্রেম যে জাত মানে না— এই অমিয় বাণী আমরা তার এই উপন্যাস থেকে পেয়ে যাই। আর এও লক্ষ করি যে, আয়েষা জগৎসিংহের প্রণয়াকাক্ষী ছিলেন কিন্তু তিলােত্তমার হৃদয় থেকে তাকে কেড়ে নিতে চাননি বরং তিলােত্তমা ও জগৎসিংহের মিলনকে সহজেই মেনে নিয়েছেন। আয়েষার এই প্রেম সামাজিক বন্ধনের ঊর্ধ্বে। আয়েষার প্রেমময়ী চরিত্রের মহত্ত্ব এখানে প্রকাশিত।
এ সম্পর্কে আহমদ শরীফের মন্তব্য উল্লেখ করা যায় : ‘আয়েষার মতাে চরিত্র বাঙলা সাহিত্যে এরপর আর সৃষ্টি হয়নি। এ নারী রত্ন, যথার্থ অর্থে। কিন্তু কথা সেটা নয়। ঐযে আমাদের-যে একটা পূর্বশর্ত আছে, পূর্বধারণা আছে, যেমন : ভদ্রলােকেরা দাসীসম্ভোগ করে, কিন্তু দাসেরা যদি স্ত্রী-কন্যার দিকে দৃষ্টি দেয় তাহলে সেটা মহা অপরাধ হয়ে ওঠে। এটাও ঠিক সেরকম ব্যাপারই হয়েছে। তারা ধরেই নিয়েছেন যে, মুসলমান বাদশাহর জাত; হিন্দুর মেয়ে বিয়ে করা, উপভােগ করা, সম্ভোগ করা মুসলমানের ন্যায্য অধিকার, জন্মগত অধিকার। সেই মুসলমানের বাদশাজাদী, নওয়াবজাদী আয়েষা হিন্দুর প্রতি আকৃষ্ট হয়— এরকম কথা বঙ্কিমচন্দ্র যখন লিখলেন, তখন এই অশিক্ষিত মুসলমানদের ভয়ঙ্করভাবে আত্মসম্মানে বাধল। মর্যাদায় ঘা লাগল। (আবুল কাসেম ফজলুল হক সম্পাদিত বঙ্কিমচন্দ্র অর্ধশত জন্মবর্ষে’, বাঙলা উপন্যাস পরিষদ, ১৯৯০, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮)।
ইতিহাসশ্রয়ী কাহিনীর মােড়কে বঙ্কিম যে-প্রণয়ােপাখ্যান রচনা করেছেন, তা পাঠকের কাছে আরাে কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথমত এর ভাষা; সাহিত্যের ইতিহাসে এটি নতুন স্বাদ। প্রায় দেড়শ বছর আগের এই ভাষা আমরা এখনাে উপভােগ করি। বঙ্কিমচন্দ্রের রসবােধের পরিচয় পেয়েও আমরা ধন্য হই। কাহিনীবিন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্রের দক্ষতা তাে অতুলনীয়। বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যের বিচারে বঙ্কিমচন্দ্র সকল অর্থেই একজন অসাধারণ ও আদর্শ পুরুষ হিসেবেই সম্মানিত হয়ে আছেন।
'দুর্গেশনন্দিনী’ তাঁর অসামান্য সৃষ্টি। বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্ট চরিত্রের কূটকৌশল ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয়েও পাঠক বিস্মিত ও আনন্দিত না হয়ে পারে না।
‘দুর্গেশনন্দিনী’ বাংলাসাহিত্যের একটি আলােচিত উপন্যাস। উপন্যাসের প্রকৃত রস খুঁজতে এখনও আমাদের বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে যেতে হয়— ‘দুর্গেশনন্দিনী’র মাধ্যমে যে-বঙ্কিমের অগ্রযাত্রা সূচিত।