19 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"কোমরের ব্যথা" বইয়ের ভূমিকা:
মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড়ো বাধা হলো বাঙালি উচ্চশিক্ষিতদের মনোভাব। চিকিৎসাবিজ্ঞান, কারিগরী, প্রযুক্তিবিজ্ঞানের কথা বাদ দিলেও ইতিহাস..
TK. 360TK. 320 You Save TK. 40 (11%)
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Related Products
Product Specification & Summary
"কোমরের ব্যথা" বইয়ের ভূমিকা:
মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড়ো বাধা হলো বাঙালি উচ্চশিক্ষিতদের মনোভাব। চিকিৎসাবিজ্ঞান, কারিগরী, প্রযুক্তিবিজ্ঞানের কথা বাদ দিলেও ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, সমাজতত্ত্ব নিয়ে সাম্মানিক স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলায় পঠন পাঠনে অধ্যাপককুল নিরুৎসাহী করেন। অধ্যাপকদের মতে এই সব বিষয়ের উপযুক্ত পাঠ্যবই বাংলায় নেই। ভালো বই যা আছে সব ইংরেজিতে লেখা। সুতরাং পঠিত বিষয়টি শেখার আগে ইংরেজি ভাষাজ্ঞান বেশি জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষিত, পরবর্তী প্রজন্মের উচ্চশিক্ষিতদের মাতৃভাষা সম্পর্কে মনোভাব আর মতামত যে তাদের শিক্ষাগুরুদের চেয়ে আলাদা কিছু হবে না, অনায়াসে অনুমান করা যায়। উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত বাংলা বই তাই লেখা হয় না। লেখার সম্ভাবনা, ক্রমাগত সুদূরপরাহত হতে থাকে। বাংলায় জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ লেখার ভার মহাকালের হাতে সঁপে দিয়ে অধ্যাপকরা পরম নিশ্চিন্তে শিক্ষা বিতরণ করে যান। অথচ দু'শো বছর আগে, বাংলাগদ্যের সূচনাপর্ব থেকে বাংলায় জ্ঞানবিজ্ঞানের নিবন্ধ লেখা শুরু হয়। বাংলাভাষায় প্রথম দুটি সাময়িক পত্র, সমাচার দর্পণ এবং দিকদর্শনে প্রকাশিত প্রবন্ধ নিবন্ধগুলির বিষয় বৈচিত্র আজও অবাক করে। ইতিহাস, ভূগোল, নক্ষত্রবিদ্যা, মহাকাশ বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজতত্ত্ব, ভূবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, আধুনিক জ্ঞানভাণ্ডারের যাবতীয় শাখা প্রবন্ধের বিষয়ভুক্ত হয়েছিল। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পাদিত তত্ত্ববোধিনী এবং রাজেন্দ্রলাল মিত্র সম্পাদিত বিবিধার্থ সংগ্রহ পত্রিকাদুটিতে প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ নিবন্ধগুলি আজও সমান পাঠযোগ্য। বিশ্ববিদ্যার গভীর গম্ভীর বিষয় পরিবেশনের উপযোগী বাংলাগদ্যের সুদৃঢ় কাঠামো তৈরি করে দিয়েছিলেন অক্ষয়চন্দ্র আর রাজেন্দ্রলাল। রেভারেণ্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত, তের কাণ্ডে বিভক্ত বিদ্যাকল্পদ্রুম নামে মহাগ্রন্থটিকে বাঙলা বিজ্ঞান সাহিত্যের বিশ্বকোষ। বললে অত্যুক্তি হয় না। মাতৃভাষায় জ্যামিতি, ভূগোল, ক্ষেত্ৰতত্ত্ব, বীজগণিত চর্চার এমন অসামান্য নজির অল্প আছে। বাংলা বিজ্ঞান পরিভাষার সূত্রপাতও করেছিলেন কৃষ্ণমোহন। মনস্বী শিক্ষক ভূদেব মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ১ম ও ২য় ভাগ। পদার্থবিদ্যা সংক্রান্ত এই গ্রন্থে ত্রিকোণমিতি, যন্ত্রবিজ্ঞান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। শুধু বিজ্ঞানবিষয়ক বাংলাগ্রন্থ নয়, গত দেড়শো বছরে মানববিদ্যা সংক্রান্ত অসংখ্য গ্রন্থ বাংলায় লেখা হয়েছে। চলতি শতকের প্রথম চার দশকে জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, জগদানন্দ রায় প্রমুখের বিজ্ঞানবিষয়ক রচনাবলি রীতিমতো সাহিত্য হয়ে উঠেছিল। ইংরেজ আমলে জ্ঞানবিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক বাংলা বই লেখার যে আগ্রহ বাঙালি শিক্ষিতকুলে প্রবল ছিল, স্বাধীনতার কিছুকাল পর থেকে তা হঠাৎ উল্টোখাতে বইতে শুরু করলো। ইংরেজ রাজত্ব অন্তর্হিত হবার পরে স্বার্থপর দেশের শিক্ষিত বাঙালি অতর্কিতে আবিষ্কার করলো। মাতৃভাষার দৈন্য। ইংরেজি ছাড়া উচ্চশিক্ষা সম্ভব নয়, এমন এক ধরতাই বুলির আড়ালে বিগত দেড়শো বছরব্যাপী মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যকে তারা খারিজ করে দিল। আত্মপীড়নের এই ঘটনার জন্যে দেশের ভাষানীতি, রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা আর রাজনৈতিক মতলব যে দায়ী, এ সম্পর্কে সন্দেহ নেই। জাতীয় মর্যাদা ও আত্মাভিমানকে নষ্ট করে দিয়ে জন্ম নিল হীনমন্যতা, হতাশা, ভাষাগত বৈরিতা আর সর্বাত্মক বিদ্বেষ। মাতৃভাষা ভুলে যাওয়াই হলো আধুনিক উচ্চশিক্ষার আভিজাত্য। কেতাদুরস্ত সাহেবি পোষাকের নেটি বাঙালি, আর ধুতি পাঞ্জাবি পরা পাকা বাঙালি বাবু, মাতৃভাষা সম্পর্কে একই মনোভাব পোষণ করেন। দুশো বছরের ঔপনিবেশিকতার ভূত শিক্ষিতসম্প্রদায়ের শরীর ছেড়ে মগজে ঠাই পেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তরুণ স্নায়ুশল্যচিকিৎসক ডাঃ নৃপেন ভৌমিক বাংলায় চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত গ্রন্থ রচনার স্বেচ্ছাব্রত গ্রহণ করেছেন। বাংলা ভাষা এবং বাংলাভাষী মানুষ সম্পর্কে নিগূঢ় কোনো দায়বদ্ধতা তাঁকে যে এই কাজে প্ররোচিত করেছে, এ নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। মৃগীরোগ ও তার চিকিৎসা নামে তাঁর লেখা একটি বই ইতিমধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। কোমরের ব্যথা এবং তার প্রতিকার সংক্রান্ত বর্তমান রচনাটিও যে হিতকর ভূমিকা পালন করবে, নির্দ্বিধায় একথা বলা যায়। চিকিৎসাবিদ্যার গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি এই বিষয়ের বাংলা পরিভাষা সন্ধানের কাজেও কঠিন শ্রম আর অলনীয় মেধার প্রমাণ রেখেছেন ডক্টর ভৌমিক। বাংলায় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার নানা গ্রন্থ প্রকাশ করে দীপ প্রকাশনের তরুণ স্বত্ত্বাধিকারী শ্ৰী শঙ্কর মণ্ডল ইতিমধ্যে পাঠক সমাজের নজর কেড়েছেন। তরুণ লেখক আর নবীন প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা আর উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যত যে উজ্জ্বলতর হবে, এমন আশা অনায়াসে করা যায়।