3 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
হ্যাপি নিউইয়ার
'পয়লা জানুয়ারিটা কেমন যেন! বড় বেশি অফিশিয়াল। ধর্মটম নেই। কাগজে-কলমে আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক বছরটা গেল। যে বছরের শুরুতে বাংলা পাঁজি বেরোয় না, জ্যোতিষ..
TK. 540TK. 367 You Save TK. 173 (32%)
In Stock (only 3 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
হ্যাপি নিউইয়ার
'পয়লা জানুয়ারিটা কেমন যেন! বড় বেশি অফিশিয়াল। ধর্মটম নেই। কাগজে-কলমে আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক বছরটা গেল। যে বছরের শুরুতে বাংলা পাঁজি বেরোয় না, জ্যোতিষ-মতে গ্রহ- নক্ষত্র ঘর বদলায় না, রাষ্ট্রফল, বর্ষফল, রাশি ও লগ্নফল জানা যায় না, সেই নববর্ষ আমাদের মনে তেমন কোনও দাগ কাটে না। আমাদের পঞ্জিকা একটা অসাধারণ ব্যাপার। আষ্টেপৃষ্ঠে বিজ্ঞাপন সাঁটা, জ্যালজেলে কাগজে ঘন করে ছাপা টাইট একটা বাংলা বছর। পাতায় পাতায় তিথি-নক্ষত্র, নির্ঘণ্ট, শুভ-অশুভক্ষণের উল্লেখ। মহাপুরুষের ছবি। তাঁদের জন্মক্ষণ। মাস শুরুর পাতায় মাসফল, কী কী ভক্ষণ নিষিদ্ধ, কী ভক্ষণ উচিত তার নির্দেশ। পৃথিবীর আর কোথাও এমন একটি জিনিস প্রকাশিত হয় কিনা আমার জানা নেই। পাঁজি ছাড়া নববর্ষ বড় সাহেবি ব্যাপার। ইংরেজ-ভজা সম্প্রদায় জাতে ওঠার জন্যে, বোতলামৃত পান করার জন্যে, বেতো কোমরে ধুমসো নিতম্ব দুলিয়ে এলভিস প্রিসলে হবার জন্যে, হ্যাপি নিউইয়ার বলে নৃত্য জোড়েন। আজকাল একটা রেওয়াজ হয়েছে, নিজেকে ভারতীয় না ভাবা। এই ভাবনার প্রতিফলন ভার্চুতে নেই, আছে ভাইসে। তেনারা মানে সায়েবরা কাজকর্মে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে নিজেদের দেশটাকে ঠেলে একেবারে গ্রহান্তরে পাঠিয়ে দিলেন, আর আমরা এখনও পড়ে আছি বয়েল গাড়ির যুগে। পৃথিবীর কোন দেশে শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুঁটে দেওয়া হয় । কোন দেশে পঞ্চাশ ভাগ মানুষ ফুটপাথে সংসার পাতে। যাঁরা পয়লা জানুয়ারির বিলেতি কায়দায় নর্তনকুর্দন করেন তাঁদের ট্যাঁকের জোর অবশ্যই আছে। পেটে শুধু দুপাত্তর নেই বিদ্যেও হয়তো আছে, তবে একটা ব্যাপারে তাঁরা অতিশয় উদাসীন, যেটা প্রায় অপরাধের পর্যায়ে চলে যায়, সেটা হল এই দেশ। স্বদেশে তাঁরা বিদেশি। তাঁদের জীবনযাত্রার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার কোনও মিল নেই। তাঁদের খানাপিনা, মেলামেশার জায়গা আলাদা । আলাদা তাঁদের পাড়া। প্রত্যেকেই টাকার কুমির। তাঁদের কিছু সংঘ সংগঠন আছে, তার মাধ্যমে সমাজসেবা করেন দয়ার মনোভাব নিয়ে। একটু ওষুধ-বিষুধ বিতরণ করলেন, দু-একখানা কম্বল। ছানি কাটাবার ক্যাম্প করলেন হয়তো। পরিবার পরিকল্পনার কথা শোনালেন। এমন কিছু করলেন না, যাতে সমস্ত মানুষ মানুষের মতো বেঁচে থাকার ভরসা পায়। এ বড় শক্ত ঠাঁই, গুরু-শিষ্যে দেখা নাই। তাহলে ভাগাভাগিটা এইভাবেই হোক—পয়লা জানুয়ারি পয়সাওয়ালাদের, আর পয়লা বৈশাখ বাকি সকলের। এই বাকির গ্রুপে আছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, খেটে খাওয়া দিন আনি দিন খাই মানুষের দল। পয়লা জানুয়ারি আমাদের সকলের হবে কী করে। পার্কস্ট্রিট, ফ্রিস্কুল স্ট্রিটের বিশাল ভালো দোকানের একটা কেকের যা দাম, একটি মাত্র কেক, সেই দামে আমার গোটা পরিবারের একদিনের বাজার খরচ হয়ে যাবে। এইটুকু গোলমতো একটা কেক। মুখে, জয় বাবা জানুয়ারি বলে ফেলামাত্রই মিলিয়ে গেল। জানুয়ারিকে মনে রাখতে হলে আমার মতো চাষাড়ে লোককে ডজনখানেক খেতে হবে। এই হিসেবে গোটা পরিবার মানে ভিটেমাটি চাঁটি। বউয়ের গয়না সোনার দোকানে বাঁধা রাখতে হবে। তারপরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে হবে—হ্যাপি নিউইয়ার। ছেড়ে দে মা। আমার ওই পৌষ পিঠেই ভালো।