24 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
মফস্বল শহরের এক পাশ দিয়ে গঙ্গার ধার ঘেঁষা রাস্তার এক মাথা এসে থেমেছে মেয়ে- ইস্কুলের সামনে । উঁচু বাঁধানো রাস্তা । নিচে গঙ্গা । অসতর্ক মুহূর্তে গাড়ি-ে -ঘোড়া রাস্তা ছেড়ে যাতে নি..
TK. 270
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
বইটি বিদেশি সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে।
Product Specification & Summary
মফস্বল শহরের এক পাশ দিয়ে গঙ্গার ধার ঘেঁষা রাস্তার এক মাথা এসে থেমেছে মেয়ে- ইস্কুলের সামনে । উঁচু বাঁধানো রাস্তা । নিচে গঙ্গা । অসতর্ক মুহূর্তে গাড়ি-ে -ঘোড়া রাস্তা ছেড়ে যাতে নিচের দিকে না গড়ায় সেইজন্য সে-দিকটায় হাঁটু-উঁচু দেড়-হাত চওড়া বাঁধানো কার্নিস । একটু দূরে দূরে এক-একটা অতিবৃদ্ধ বট-অশ্বত্থ ডালপালা ছড়িয়ে মাঝে মাঝে গঙ্গাকে আড়াল করেছে । অন্য দিকটায় বাড়িঘর, দু-চারটে দোকানপাট, চুন-সুরকির আড়ত, আড্ডিদের মস্ত আমবাগান, কোম্পানি-আমলের মুসলমান গোরখানা, পাড়ার ক্লাব-ঘর, শর্টহ্যাণ্ড টাইপ শেখার ছোট্ট প্রতিষ্ঠান, কেশ-বাহার আর বাবু-আসুন সেলুন—ইত্যাদি ।
সকাল নটা না বাজতে রাস্তাটার ভোল বদলায় । ইস্কুল-মুখী মেয়েদের পায়ের ছোঁয়া পেয়ে এতক্ষণের ঝিমুনিভাব কাটিয়ে যেন সজাগ হয়ে ওঠে । সাদা লাল নীল হলদে বেগুনী ফ্রক আর শাড়ির শোভাযাত্রা শুরু হয় । কিশোরী মেয়েদের কলমুখরতায় লাল গঙ্গা আর লালচে অশ্বত্থ-বটের শাস্ত উদাসীনতায় বেশ একটা ছেদ পড়ে কিছুক্ষণের জন্য ।
দোতলার বারান্দায় অথবা ঘরের জানলায় দাঁড়িয়ে কোন কোন বাড়ির বউয়েরা খানিক দাঁড়িয়ে অলস চোখে এই প্রাণ-তারুণ্য দেখে । দত্ত স্টেশনারির প্রৌঢ় মালিক চকোলেট লজেঞ্জুস বিস্কুট ডালমুট ভরা কাচের বয়ামগুলির ওধারে এসে দাঁড়ায় চুপচাপ । বয়ামগুলি এবারে খানিকটা করে খালি হওয়ার আশা । বুড়ো মুদি মাখন শিকদার চাল ডাল তেল নুন মসলাপাতি ওজনের ফাঁকে অনেকবার অন্যমনস্ক হয়ে সামনের হাফ-জানলার ভিতর দিয়ে মেয়েদের যাওয়া দেখে । তার নাতনী আছে একটি । ছেলে নেই । নাতনী বড় হচ্ছে । আর একটু বড় হলে এই মেয়েদের মত সাজিয়ে-গুজিয়ে ইস্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে কিনা তাহ ভাবে বোধহয় ।
চুন-সুরকির আড়তের কাছে এসে রাস্তা ঘেঁষা সুরকির স্তূপের মধ্যে জুতোসুদ্ধ পা ঢুকিয়ে দেয় এক-একটা ফ্রকপরা মেয়ে । ইস্কুলে পৌঁছে পা ধোয়ার একটা কর্তব্য পালন করতে পারবে । তাদের দেখাদেখি আবার আরো ছোট এক-আধজন হয়তো পা ঢুকিয়ে দেয় চুনের ঢিপির মধ্যেই । অন্যেরা শাসন করে তক্ষুনি, পা খেয়ে যাবে মরবি- গঙ্গার জলে ধুয়ে আয় এক্ষুনি !
টাইপ-রাইটিং স্কুলের সামনে দিয়ে যেতে যেতে মুখ দিয়ে টকটক টকটক শব্দ বার করবেই কোন না কোন একদল ছোট মেয়ে । আরো ছোটরা অনুকরণ করে তাদের । ক্লাব - ঘর পেরুনোর সময় উঁচু ক্লাসের মেয়েরা চেষ্টা করে গম্ভীর হয় একটু । নতুবা দাড়ি-গোঁপের আভাস নির্মমভাবে নির্মূল করে, মাথার চুল পাট করে আঁচড়ে, ফর্সা ধুতি আর ফর্সা স্যাণ্ডো- গেঞ্জি পরে এই সময়টায় নিস্পৃহ গাম্ভীর্যে ক্লাব-ঘর ছেড়ে পথে এসে দাঁড়ায় দু-পাঁচজন নতুন বয়সের ছেলে । কেউ কলেজের ফার্স্ট সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ে, কেউ বা সেটুকুও ছেড়ে সম্প্রতি শুধুই শরীরচর্চা করছে । উঁচু ক্লাসের মেয়েরা মুখ গম্ভীর করে এদের প্রতীক্ষার মর্যাদা দেয় । কিন্তু একটু এগিয়ে এরাই আবার মুখে কাপড় গুঁজে হাসে সামনের কেশবাহার বা বাবু-আসুন সেলুনের দোর দিয়ে কাউকে ঢুকতে-বেরুতে দেখলেই । বিশেষ করে সদ্য চুল ছেঁটে কাউকে বেরুতে দেখা গেলে কম করে বিশ-তিরিশ জোড়া চপল চোখ সেই মাথাটা চড়াও করবেই ।