15 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"গ্রেটডেন রহস্য" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
ঘটনা ও গল্পের মাঝখানে একটা গােলাপি রঙের মায়াবী মসলিনের ওড়না উড়ে বেড়ায়। এই ভেদ রেখাটিই শৈশব কৈশােরের স্বপ্ন। যে শিশু..
TK. 55
বইটি বিদেশি সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে।
Product Specification & Summary
"গ্রেটডেন রহস্য" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
ঘটনা ও গল্পের মাঝখানে একটা গােলাপি রঙের মায়াবী মসলিনের ওড়না উড়ে বেড়ায়। এই ভেদ রেখাটিই শৈশব কৈশােরের স্বপ্ন। যে শিশুদের কাকা, মামা, মাসি পিসি, ঠাকুমা দিদিমা এবং দাদুদের সমৃদ্ধ জগত নেই, তারা বড় অভাগা। একক পরিবারে বাবা মায়ের কাঠিন্য, সহবত, আদর প্রশ্রয় ও স্বার্থপরতা তাদের শৈশবের রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ, ব্লটিং পেপারের মত শুষে নেয়।।
বর্তমানে, কিশাের-কিশােরীদের জন্যে ছাপা পত্র-পত্রিকাগুলােও তাদের স্বপ্নের রঙিন রুমালগুলাে কেড়ে নিয়ে, কুইজ, পরীক্ষা পাশের সহজ উপায়, ধাঁধাঁ আর সামগ্রিক চালাকির মধ্যে ফেলে দিয়ে প্রাজ্ঞ মানুষদের ‘বনসাই তৈরি করছে। বদলে হৃদয়ে ভরে দিচ্ছে বিষাদ, আত্মকেন্দ্রিকতা, নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতা এবং এক ব্যাঙ্গাত্মক জীবনভঙ্গী। যেন অনেক তথ্যে ভরা এক কম্পিউটর, কিন্তু জ্ঞানী নয়।
আমাদের নাগরিক ছেলেমেয়েদের আকাশ রেখা এত উঁচু যে তাদের অনেকেই সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মত মহান দৃশ্য দেখতেই পায়নি। তারা কখনও একাকি নির্জনে কোনাে বৃক্ষ বা নদীর মুখােমুখি হয়নি। চঁদনি রাতে শােনেনি নদীর ছলাৎছল শব্দ। গভীর অন্ধকারে চিৎ হয়ে আকাশের নীচে শুয়ে দেখেনি আকাশের মধ্যে দিয়ে দুধ-গঙ্গার মত বয়ে যাওয়া লক্ষ-কোটি তারকাপুঞ্জের ছায়াপথ, প্রথম বৃষ্টিতে ঘাস মাঠের ওপর দিয়ে বয়ে আসা সোঁদা গন্ধের পরশ পায়নি। অনুভব করেনি কিভাবে ঋতু বদলে বদলে যায়।
আর মফঃস্বলে গ্রামে-গঞ্জে, ছেলেমেয়েদের সমস্ত মানসিক রস নিংড়ে দরকচা করে দিচ্ছে গ্রাম্য, অশিক্ষিত, সংকীর্ণরাজনীতি। চারপাশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে ভিডিও পার্লার। সিনেমার অশালীন ভঙ্গুর মিথ্যে স্বপ্নরা শিখিয়ে দিচ্ছে মেকি চলন-বলন, সাজপােষাক, জীবনধারন— ভেঙে টুকরাে টুকরাে করে দিচ্ছে কিশােরকিশােরীর সহজ সম্পর্ককে। কর্কট রােগের মত কোষ বিভাজন করে তৈরি করে চলেছে। শিশু ও কিশাের-অপরাধী। ভোতা মােটা দাগের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
শিশু ও কিশােরদের জন্যে লিখতে গিয়ে প্রথমেই মনে হয়েছিল একজন আধুনিক, রড় মাপের, সহজ সুন্দর মানুষ হয়ে উঠতে হলে— সুন্দর করে স্বপ্ন দেখতে হয়, দেখাতে হয়। এবং চেষ্টা করে যেতে হয় কিভাবে সেই স্বপ্ন সার্থক হয়। তবেই একজন শিশু বা কিশাের-কিশােরী ভবিষ্যতে বিশ্ব নাগরিকত্ব অর্জন করে। প্রত্যেকটি মহৎ প্রাণ মানুষই ছেলেবেলায় স্বপ্নিল ছিলেন। তারা প্রথমে স্বপ্ন দেখেছেন পরে বাস্তবায়িত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ থেকে মা টেরিজা পর্যন্ত সবাই এই গােলাপি রঙের ওড়নাটা কৈশােরে উড়তে দেখেছেন, তাকে ধরেছেন, তারপর নিজেরাও উড়িয়েছেন।
এই কাহিনীটির প্রথমে নাম ছিল ‘সাড়ে ছ’আনার গ্রেটডেন্’। শ্রদ্ধেয় মণীশ চক্রবর্তী মশাই-এর উপদেশে এর নামকরণ করলাম ‘গ্রেটডেন রহস্য’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই উপন্যাস রচিত হলেও এর ফাঁক-ফোকরগুলােতে স্বপ্ন ভরে দিয়েছি। কারণ গল্পটা আমার জন্মের আগেই ঘটে গেছে। জীবিত চরিত্রদের মুখে শুনে শুনে গল্পটা আমার কৈশাের থেকেই মনের মধ্যে দানা বেঁধে ওঠে। আমাদের টালার বাড়ি ও আমার কাকা জ্যাঠা-ঠাকুরদা-ঠাকুরমা— যাঁরা এই গল্পের পাত্রপাত্রী তাঁদের নামও আমি পাল্টাই নি। আর একটি বিশেষ চরিত্র ‘রতন ভাইয়া, যে আমাদের বাড়িতে পঁয়ষট্টি বছর কাজ করে আমার বাবা-কাকা এমনকি আমাদের ভাইবােনেদেরও মানুষ করে গেছে। সে আমাদের পরিবারের বৃদ্ধ ঠাকুর্দার মত ছিল। তার জীবনের সত্য ঘটনাগুলাের উল্লেখ আমার কাছে স্মৃতিতর্পণের মত।
বিহারী বস্তি থেকে মাত্র সাড়ে ছ’আনা দিয়ে কেনা একটা গ্রেটডেন কুকুরের বাচ্চার গল্পের মধ্যে দিয়ে আমি ধরতে চেয়েছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব এক পরাধীন জাতির আত্মগরিমা ও তৎকালীন কলকাতার মানুষজন, বসতি ও স্বাধীনতার স্বপ্নের ইতিহাস। অবশ্য কৈশােরের চোখে। এখানে বড়রাও আছেন তবে ছােটদের চোখে ধরা পড়া বড়রা। সুদীপ্ত মুখােপাধ্যায়