35 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"আহমদ ছফা রচনাবলি - উত্তর খণ্ড" বইয়ের ভূমিকাঃ
উত্তরখণ্ড’ প্রকাশ আমার ব্যর্থতারই নামান্তর। দুই হাজার আট সালে ‘আমহমদ ছফা রচনাবলি’ আট খণ্ডে প্রকাশ পেয়েছিল। তখন ধরে নিয়েছি..
TK. 600TK. 450 You Save TK. 150 (25%)
In Stock (only 4 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
"আহমদ ছফা রচনাবলি - উত্তর খণ্ড" বইয়ের ভূমিকাঃ
উত্তরখণ্ড’ প্রকাশ আমার ব্যর্থতারই নামান্তর। দুই হাজার আট সালে ‘আমহমদ ছফা রচনাবলি’ আট খণ্ডে প্রকাশ পেয়েছিল। তখন ধরে নিয়েছিলাম আহমদ ছফা রচনাবলি সীমানা আমরা এঁকে দিতে পেরেছি। এরকম মনে করার যথেষ্ট কারণ ছিল। ওই সময় আমি ‘আহমদ ছফা রচনাবলি সম্পাদনা করতে গিয়ে আমার পরিশ্রমকে আমি একটুও খাটো করে দেখিনি। আমি একটানা এক বছরের অধিক সময় নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে এই রচনাবলি প্রকাশের পেছনে ব্যয় করেছিলাম। আহমদ ছফার রচনা লুকিয়ে থাকার সম্ভাব্য জায়গাগুলাে আমি তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। যেখানে তার রচনা আছে সন্ধান পেয়েছি ছুটে গিয়েছি। খাটুনিটা এত বেশি করেছি যে, ওই সময় আট খরে বাইরের আর কোন রচনা পাওয়া যাবে সেটা একবারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি। আহমদ ছফা রচনাবলি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পেরেছি এ মর্মে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিলাম। পরে পরে টের পেতে থাকলাম সন্তুষ্টি লাভ করার মত কাজ অল্পই করেছি। লক্ষ করতে থাকলাম আহমদ ছফার লেখা আরও নানা জায়গায় নানাভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ সমস্ত লেখা একত্রিত করার মানসে শেষাবধি আমাকে ‘আহমদ ছফা রচনাবলি উত্তরখণ্ড’ প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছে।
উত্তরখণ্ড থেকে পাঠক আহমদ ছফা সম্পর্কে একটা অন্যরকম ধারণা লাভ করবেন। আহমদ ছফার লেখকজীবনের প্রথম এবং শেষের দিককার লেখার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা অপূর্ব সুযােগ এই খণ্ডে পাওয়া যাবে। তার মাঝামাঝি সময়ের কোন রচনা এ খণ্ডে তেমন একটা নেই বললেই চলে। আমরা কমবেশি জানি, আহমদ ছফার প্রথম লেখা প্রকাশ পেয়েছিল অধ্যাপক শাহেদ আলী সম্পাদিত সবুজপাতা' পত্রিকায়। লেখাটি ছিল শিশু-কিশােরদের জন্য লেখা একটি ছােটগল্প। নাম ‘অপূর্ব বিচার'। গল্পটি ‘সবুজপাতায় প্রকাশিত হওয়ার পর অধ্যক্ষ মিন্নাত আলী নিজের নামে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বইটি তিনিই সম্পাদনা করেছিলেন। নিজের লেখা অন্যের নামে ছাপা দেখে আহমদ ছফা ক্ষিপ্ত হয়ে তার নামে উকিল নােটিশ পাঠিয়েছিলেন এবং তিন হাজার টাকা রয়্যালিটিও তিনি আদায় করে নিয়েছিলেন। আমি আমার ছফামৃত' বইয়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি। বাংলা একাডেমী লাইব্রেরিতে ‘সবুজপাতা' পত্রিকার ভল্মটি পাওয়া গেছে। ওখান থেকে ‘অপূর্ব বিচার ছাড়াও প্রতিবেশী এবং মহান প্রতিশােধ' নামে আরাে দুটি গল্প উদ্ধার করতে সক্ষম হলাম।
মূলত সংবাদ পত্রিকায় আহমদ ছফা লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তখন তার বয়স বড়জোর বাইশ-তেইশ। সাধারণত এ বয়সের লেখা দুর্বল হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আহমদ ছফার সংবাদের ওসব লেখা পড়লে ওরকম কিছু মনে হয় না। তার লেখার মধ্যে কাঁচা এবং পরিণত বয়সের ভেদ নির্ণয় করা একরকম কঠিন। সংবাদে প্রথমে তিনি কবিতা দিয়ে শুরু করেছিলেন। তারপর প্রবন্ধ। সূর্য তুমি সাথী' উপন্যাসের দুয়েকটি কিস্তি ওই পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সময়টা ছিল উনিশ শ' পঁয়ষট্টি-ছেষট্টি সাল। কর্ণফুলীর ধারে’ নামের ধারাবাহিক একটি প্রবন্ধ লিখে তিনি পাঠকদের নজরে এসেছিলেন। সংবাদে কিভাবে লেখা শুরু করেছিলেন তারও অনেক ইতিহাস আছে। আমি ছফামৃত গ্রন্থে ওসব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। | ‘সংবাদের লেখাগুলাে উদ্ধার করতে পারব এ আশা আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম। যেসব জায়গায় ‘সংবাদ’ থাকার কথা আমি সব জায়গায় বিচরণ করেছিলাম। কোথাও কেউ আমাকে হদিস দিতে পারেননি। সকলের একটা কথা, একাত্তরে সংবাদ পত্রিকা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। কি মনে করে বলতে পারব না, আমি বাংলা একাডেমীর লাইব্রেরি ঘাটাঘাটিতে লেগে যাই এবং একসময় পত্রিকাগুলাে খুঁজে পেতে সক্ষম হই। তখন আমার মনে হয়েছিল আমি অসম্ভব কিছু আবিষ্কার করেছি, যেটা কোনকালে সম্ভব হত না। কর্ণফুলীর ধারে’, ‘অচলায়তন’, ‘সংগ্রাম কি এবং কেন', গণসাহিত্য প্রসঙ্গে এই চারটি প্রবন্ধ ছাড়া রক্তের স্মারকলিপি’ ও ‘বেতারে খবর ঝরে' শিরােনামের দুটি কবিতা ‘সংবাদ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, এসব লেখার বাইরে সংবাদে তিনি আর অন্যকোন লেখা লিখেননি।
সংবাদের লেখাগুলাে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রথমে ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু তার থেকে পাঠোদ্ধার করা একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। লেখাগুলাে পুনরায় হাতে লিখে কপি করার কথা আমাদের ভাবতে হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে সদ্য এমএ পাশ করা ছাত্র মানিক মিয়া এ কষ্টসাধ্য কাজটি করে দিয়েছিলেন। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে তাকে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। অস্বীকার করব না, লেখাগুলাে তার কষ্টেরই নিদর্শন। ‘ঢাকায় যা দেখেছি যা শুনেছি লেখাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শ্রীমান আবুল মনছুর উদ্ধার করে দিয়েছেন, নইলে এ লেখাটি আমাদের অগােচরে থেকে যেত। পাকিস্তানের শিক্ষানীতি’ প্রবন্ধটি মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত প্রবন্ধসংকলন রক্তাক্ত বাংলা বইয়ে ছাপা হয়েছিল। লেখাটিও সম্প্রতি নজরে এসেছে। দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, দস্তয়েভস্কি’ এবং একটি প্রাতিস্বিক গ্রন্থ শিরােনামের এই লেখাগুলাে এক সময় বাঙালি মুসলমানের মন বইয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে লেখক নিজে ওই গ্রন্থ থেকে রচনাগুলাে ছেটে দেন। বাঙালি মুসলমানের মন’-এর পুরনাে সংস্করণ আমার হাতে ছিল না বলে এই লেখাগুলাে আহমদ ছফা রচনাবলি’র কোন খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।