2 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
উর্মী কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়লো তার জীবনে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পর সে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য অ্যাফিডেভিড করে নিজের নাম পরিবর্তন করেছে, পরিচিত বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে নিজেকে..
TK. 150TK. 113 You Save TK. 37 (25%)
Related Products
Product Specification & Summary
উর্মী কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়লো তার জীবনে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পর সে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য অ্যাফিডেভিড করে নিজের নাম পরিবর্তন করেছে, পরিচিত বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রায় সবরকম চেষ্টাই করেছে, এতদিন নিজেকে লুকাতেও পেরেছে কিন' আজ বোধ হয় আর নিজেকে লুকানো হলো না। উর্মী নিজের কাছে সান্ত্বনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো, আমি তো বোরকা পরে আছি আমার শুধুমাত্র চোখ দু’টা দেখতে পাবে, শুধুমাত্র চোখ দেখে কী বারো বছর আগে কোনো মেয়েকে কেউ চিনতে পারবে? না, না, তা পারবে না কিন' আমার কন্ঠস্বর? আমি আমার কন্ঠস্বর লুকাবো কী করে?
মেয়েটি বোরকা পরে ছিলো। তাকে চেনার কোনো উপায় ছিলো না। কিন' তার কন্ঠস্বরটা শুভ্র’র খুব পরিচিত বলে মনে হচ্ছিলো। শুভ্র মনে মনে বললো, মেয়েটি বললো নাম উর্মী কিন' কন্ঠস্বরটা একেবারে মায়ার মতো?
চাকরিতে প্রথম দিন জয়েন করতে এসে এভাবেই উর্মী আর শুভ্র মুখোমুখি হয়।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে দু’জনে কথাবার্তা হয়। বেশিরভাগ সময় শুভ্র উর্মীর পরিচয় নিশ্চিত হয় আবার মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়।
কাজের অবসরে বা নিঃসঙ্গতায় উর্মীর তার অতীতের কথা মনে পড়ে।
মায়া উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র আদুরে কন্যা। চঞ্চল, সারাদিন হৈ চৈ করে ঘুরে বেড়ানো, আবেগপ্রবণ, জেদী এবং গেছো টাইপের মেয়ে মায়া। মামুনের সঙ্গে কবে কোথায় প্রথম পরিচয় হয়েছিলো তা মনে নেই। দু’জনের বাড়ি একই গ্রামে, দু’জনে শৈশব থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে, এমনিভাবে দু’জন পাশাপাশি পথ চলতে চলতে অদৃশ্য এক বাঁধনে আবদ্ধ হয়েছিলো। শুধু মায়াই আবেগপ্রবণ ছিলো না। মামুনও ছিলো যেন মায়ার চেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ। একজনের অনুপসি'তি অন্যজনকে উতলা করে তুলতো। মামুনের মোবাইল ব্যস্ত দেখলে মায়ার মাথায় রক্ত উঠে যেতো।
মামুন আর মায়ার ভালোবাসার কথা মায়ার বাবা জানতে পেরে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে ঘরে আবদ্ধ রেখে বিয়ের আয়োজন আরম্ভ করে। একদিকে মায়ার বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে আর মায়া বার বার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মায়া একবার জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় সে শ্বশুরবাড়ি, বাসর ঘরে। প্রথমে মায়ার খুব মামুনের কথা মনে পড়তে থাকে পরে ধীরে ধীরে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে কিন' ততদিনে তার স্বামী, ননদ, শাশুড়ি তার ওপর আরো যৌতুকের টাকা আনার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে।
একসময় স্বামী, ননদ আর শাশুড়ির অত্যাচারে সে আত্মহননের চেষ্টা করে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে কিন' আগুনের লেলিহান শিখায় তার সমস্ত শরীর দগ্ধ হলেও সে প্রাণে বেঁচে যায়। প্রতিবেশি এবং স্বামী, ননদ এবং শাশুড়ি তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করে হাসপাতালে। মায়া প্রথমে কোনকিছু মনে করতে পারে না পরে নার্সের কাছ থেকে জেনে সবকিছু মনে করার চেষ্টা করে। তার মনে পড়ে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথা।
হাসপাতালে মায়ার সঙ্গে পরিচয় হয় আশার সঙ্গে। আশা একটি এন.জি.ও’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। মায়া হাসপাতাল থেকে তার বাবা-মা’র কাছে ফিরে যেতে অস্বীকার করে এবং নিজের মতো করে বাঁচার জন্য আশার সহযোগিতা চায়।
মায়া সুস' হয়ে ওঠার পর অ্যাফিডেভিড করে, তার নাম রাখা হয় উর্মী। তাছাড়া আরো কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষে আশা উর্মীকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় দেয় এবং তার লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে। উর্মী তার দগ্ধ মুখ ঢেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য বোরকা পরতে শুরু করে।
উর্মী একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে থেকে আবার লেখাপড়া শুরু করে। উচ্চবিত্ত পরিবারের আদুরে মেয়ের নতুন জীবন যুদ্ধ।
লেখাপড়া শেষ করে উর্মী একটি বেসরকারি সংস'ায় জয়েন করে। সেখানে আবার দেখা হয় তার স্কুল জীবনের বন্ধু শুভ্র’র সঙ্গে।
শুভ্রর বাবা সরকারি চাকরি করতো, সেই সুবাদে শুভ্র দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করেছে। শুভ্র ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে ধামইরহাট সোফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। শুভ্র আর মায়া একসঙ্গে ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। শুভ্র মায়াকে মনে মনে ভালোবাসতো কিন' কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি। উর্মীর কন্ঠস্বর শোনার পর থেকে বার বার করে শুভ্রর মায়ার কথা মনে পড়ছে। শুভ্র যতই উর্মীর কাছ থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে চেয়েছে উর্মী ততবারই শুভ্রকে এড়িয়ে গেছে।
শুভ্র’র বিয়ের জন্য অনেক আগে থেকেই কনে দেখা শুরু হয়েছে তার চাকরিতে জয়েন করার পর থেকে শুরু হয়েছে আরো জোরে শোরে। শেষ পর্যন্ত শুভ্র দেরি করছিলো উর্মীর পরিচয় নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য। শুভ্র’র ইচ্ছা মায়া আর উর্মী যদি একজনই হয়ে থাকে তবে সে উর্মীকে বিয়ে করবে। শুভ্র তার ইচ্ছার কথা উর্মীকে জানিয়েছে কিন' উর্মী যখনই শুভ্রকে মামুনের পাশাপাশি দাঁড় করিয়েছে ততবারই যেন মামুনের ছবি তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।
অবশেষে শুভ্র’র অনুরোধে উর্মী একদিন তার জীবনের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। তারপর কান্না ভাঙ্গা গলায় বলে, শুভ্র তুমি আমার হাতে যে দাগ দেখছো এই দাগ মামুনকে আমার ভালোবাসার দাগ, আমার মনের মধ্যে যে দাগ আছে সেটা মামুনকে হারানোর দাগ আর আমার দগ্ধ, বিকৃত মুখে যে দাগ দেখছো এটা প্রতিপত্তি আর আভিজাত্যের দেয়ালে বন্দী সমাজে বসবাসকারী নির্যাতিত, বঞ্চিত নারীদের হৃদয়ের দাগ, বলে উর্মী তার মুখ থেকে বোরকা খুলে ফেলে।