2 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"গীতিসমগ্র" বইয়ের ভূমিকা:
আঞ্চলিক কোনাে বিষয় অবলম্বনে রচিত সংগীতকে যেমন বলে আঞ্চলিক গান, তেমনি পল্লীর কোনাে বিষয় অবলম্বনে রচিত সংগীতকে বলে পল্লীগীতি। কিন্তু লােকগীতি ..
TK. 250TK. 188 You Save TK. 62 (25%)
Product Specification & Summary
"গীতিসমগ্র" বইয়ের ভূমিকা:
আঞ্চলিক কোনাে বিষয় অবলম্বনে রচিত সংগীতকে যেমন বলে আঞ্চলিক গান, তেমনি পল্লীর কোনাে বিষয় অবলম্বনে রচিত সংগীতকে বলে পল্লীগীতি। কিন্তু লােকগীতি বা লােকসংগীত সেরকম কিছু নয়। লােকসংগীতের সংজ্ঞা একেবারেই ভিন্ন। প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকে বিদ্যাপ্রাপ্ত না হয়েও; গুরু বা মুর্শিদ কর্তৃক লব্ধ জ্ঞান কিংবা জীবনাভিজ্ঞতা লােকসংগীত।
বিচিত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে, বিচিত্র ভাবের অনুষঙ্গে লােকসংগীত রচিত হয়ে থাকে। পারিপার্শ্বিক বিষয় থেকে শুরু করে রাজপ্রসাদের কাহিনি, ইতিহাস থেকে শুরু করে পৌরাণিক উপাখ্যান, কোনাে কিছুই এ থেকে বাদ পড়ে না। তবে বাংলাদেশে এমনকি গােটা বাংলাতেই সকল বিষয়কে ছাপিয়ে বিশেষ এক ধরনের অধ্যাত্ম-সংগীত বিশ্ব মনীষীদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। সন্দেহ নেই, এই সংগীত হলাে বাউল। বাউল ছাড়াও অবশ্য আগে বেশ কিছু মরমী সংগীত বাংলার লােকসংগীত অঙ্গনে শক্ত অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। মুর্শিদি, মারফতি, বৈষ্ণবগীতি প্রভৃতি এদের মধ্যে অন্যতম। এসব সংগীতের রচয়িতাগণ বিশেষ একটি মতের অনুসারী হলেও তাঁদের সংগীতে অন্য মতের প্রভাবও প্রত্যক্ষগােচর। বিভিন্ন মতকে নিজের মতের মধ্যে সমন্বিত করার প্রয়াস ছিল বিধায়, ওই সংগীতের রচয়িতাগণ অসাম্প্রদায়িক হিসেবে হয়েছেন স্বীকৃত। সিলেটে লােকসংগীতের প্রচলন ঘটে প্রাচীন কালেই। তবে বিশুদ্ধ মরমি সংগীতের সূত্রপাত ঘটে ষােড়শ শতাব্দীর গােড়ার দিকে। গােলাম হুছন থেকে শুরু হওয়া এই ধারা রাধারমণ, শেখ ভানু, হাসন রাজার হাতে সিদ্ধি লাভ করে শাহ আবদুল করিম পর্যন্ত বিস্তৃত হয় সচ্ছন্দ গতিপথে। লােকসংগীতের এই গতিপথে আরাে অনেক কবি-সাধকেরই পথ-পরিক্রমণ ঘটেছে। দীন ভবানন্দ, সৈয়দ শাহনূর, শাহ আব্দুল ওহাব প্রমুখ এঁদের অন্যতম। কালাশাহ, কামাল পাশা প্রমুখ স্বল্পপরিচিত সাধকগায়কের অবদানের কথাও আমরা স্মরণ করতে চাই তাঁদের সঙ্গে।
কালাশাহ একজন উচ্চস্তরের সাধক-কবি। তাঁর পিতার নাম তমিজ উদ্দিন ব্যাপারী ও মাতার নাম নূরজাহান বিবি। মরমী গানে সুনামগঞ্জ (২০০২) গ্রন্থের তথ্য মতে, তিনি
ভারতের ত্রিপুরা জেলার বাঞ্চারামপুর থানার ফর্দাবাজ গ্রামে, ১২৪৮ বঙ্গাব্দের ২০ ফাণ্ডন জন্মগ্রহণ করেন। আর ১৩৬৯ বঙ্গাব্দের ২ জ্যৈষ্ঠে দিরাই থানার দাইপুর গ্রামে পরলােক গমন করেন। তাঁর আয়ুষ্কাল যেমন ছিল দীর্ঘ, তেমনি গানও লিখেছেন প্রচুর। রত্ন সাগর, আনন্দ সাগর ও প্রেম তরঙ্গ প্রভৃতি তাঁর সংগীতসংকলন।
কালাশাহের সংগীত বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টই বােঝা যায় যে, তিনি একজন সুফি ধারার সাধক। জীবাত্মা-পরমাত্মা তত্ত্ব থেকে শুরু করে দেহতত্ত্ব এবং মুর্শিদি মারফতি থেকে রাধা-কৃষ্ণ প্রসঙ্গ একারণেই তাঁর সংগীতে সুলভ। কালাশাহের সংগীতের ভাষা খুবই সরল। অত্যন্ত সহজ শব্দে তিনি অধ্যাত্মবিষয়ক বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও জটিল বিষয় উপস্থাপন করেছেন। যদিও এই ভাষা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা-প্রভাবিত, তথাপি স্বচ্ছ উপস্থাপন-কৌশলের কারণে তা দুর্বোধ্য কিংবা অবােধ্য হয়ে ওঠেনি কখনাে। | কালাশাহের সংগীতের সুর আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সুরের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলাের সবই অধ্যাত্ম-সংগীত; কিন্তু পারিবারিক ভাটিয়ালি সুরও প্রয়ােগ করা হয়েছে বেশ কিছু গানে। তাল এবং ছন্দের ক্ষেত্রেও লােক-ঐতিহ্য প্রয়ােগ করা হয়েছে বেশ কিছু গানে। তাল এবং ছন্দের ক্ষেত্রেও লােক-ঐতিহ্য অনুসরণের চিত্র স্পষ্ট। কালাশাহ ভাববাদী মরমী কবি, আর তাই তাঁর গানে স্রষ্টা ও সৃষ্টি তত্ত্ব নানা রূপ ও ভাবে হয়েছে প্রকাশিত। তবে এসব গানে বিশেষ কোনাে মত ও পথকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপনের পরিবর্তে, ভক্তি ও প্রেম-চিত্র উত্থানের চেষ্টা রয়েছে সর্বাগ্রে। বৈষ্ণব, সুফি ও বাউলধারার সমন্বিত রূপ উপহার দেয়ায়, কবি হিসেবে তাঁর পরিচিতি হয়েছে অসাম্প্রদায়িক।