User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদী কথাশিল্পী আহমাদ মোস্তফা কামালের নতুন উপন্যাস ‘কান্নাপর্ব’র নামটিই চমকপ্রদ ও কৌতূহলোদ্দীপক। বইটি হাতে নিয়ে দেখা গেল- প্রচ্ছদটিও নজরকাড়া ও চিত্ত-আকর্ষক। উপন্যাসে প্রবেশের আগে ভাবতে চেষ্টা করি ‘কান্নাপর্ব’ শিরোনামে লেখক কান্নার কোন অভিনব রূপায়ন বা বিচিত্র আবেগ উপস্থাপন করেছেন তাঁর নতুন উপন্যাসে! তাঁর গল্পের বৈচিত্র্যময় নির্মাণ-কৌশলে আমি বরাবরই মুগ্ধ হয়েছি। কামালের সংবেনশীলতা ও সহানুভূতির স্নিগ্ধ দাক্ষিণ্যের গুণে ইতিমধ্যে তাঁর বেশিরভাগ লেখাই আলোচিত এবং সফল হয়েছে। এসব কথা মনে এসেছে উপন্যাসটির কথা ভাবতে গিয়েই। ভেবেছি, কান্নার মতো একটি অতি সংবেনশীল ও আবেগময় বিষয়কে তিনি কীভাবে উপস্থান করতে চান! মানব জন্মের প্রথম চিৎকার কান্নায়; এরপর মানুষ সারাজীবন মূলত কেঁদেই যায়। কখনো চিৎকার করে, কখনো নিভৃতে, কখনো ফুঁপিয়ে, কখনো স্তব্ধ হয়ে! সুখে, সাফল্যে, গৌরবে, অপমানে মানুষ কাঁদে... কাঁদে দুঃখে ব্যর্থতায়, পরাজয়েও। শুধু কি তাই? এই দুঃখী- বিষণ্ন দেশটিই তো সারাক্ষণ কাঁদছে! কোন কান্না, বা কান্নাপর্ব নিয়ে আহমাদ মোস্তফা কামাল কান্নার কোন নতুন দিক উন্মোচন করতে এসেছেন জানতে উপন্যাসে প্রবেশ করি! ২ উপন্যাসের মূল আখ্যানভাগের কেন্দ্রে আছে একটি যাত্রাদল- নিউ সোনালী অপেরা- এবং এর কলাকুশলীরা। তবে শুধু যাত্রাদলেই থেমে থাকেননি লেখক, প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে তুলে এনেছেন একটি জনপদের অন্তজ শ্রেণীর শিল্পীদের জীবন ও শিল্পচর্চার ধরন-ধারণ। নিউ সোনালী অপেরার দুই প্রধান স্তম্ভ অধকিারী মধুবাবু আর নায়িকা কাম প্রিন্সেস মালতি, পোশাকী নাম যার সুজাতা। মালতি অথবা সুজাতা অসামান্য সুন্দরী, দক্ষ অভিনয়শিল্পী এবং একইসঙ্গে অসামান্য নৃত্যপটিয়সী। শুরুতে লেখক প্রধান চরিত্র মালতি বিষয়ক কৌতূহল মেটান এভাবে- ‘এক নিভৃত মফস্বলের মৃতপ্রায় এক যাত্রাদলের এই শিল্পী নগরবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করার এই সৌভাগ্য অর্জন করে এক তরুণ লেখকের কল্যাণে’। পরক্ষণে আমাদের পরিচয় ঘটে তরুণ লেখকের সঙ্গে, যার নাম হাসিব জামিল। শুরুতে আমরা জেনেছি মালতি যাত্রাদলের নায়িকা, সে হারিয়ে গেছে, তার নিখোঁজ হবার ঘটনা পত্রিকায় আসে বটে কিন্তু খবরটি স্রেফ খবর হিসেব না এসে, আসে এক মানবিক আবেদনের দলিল হিসেবে এই হাসিব জামিলের কল্যাণেই। মালতিকে শয্যাসঙ্গী করে নির্মম আদিরসাত্মক বিনোদনের অংশীদার করে নিয়েছিলো সরকারদলীয় এক এমপিপুত্র। যে দেশে সরকারী দল মানে অপরাধের সাতখুন মাফ, সবকিছুই চলে তাদের আঙুলের ইশারায়- সেখানে নিভৃত মফস্বলে এমপিপুত্রের লালসার শিকার অখ্যাত এক শিল্পীর জন্য কে-ইবা কী করবে! কিন্তু অত্যন্ত সংবেদনশীল মনের একজন তরুণ লেখকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং উদ্যোগে মালতির নিখোঁজ হবার খবরটি ‘অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও হৃদয়গ্রাহী’ ভাষায় বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় বক্স আইটেম হিসেবে ছাপা হয়; সে সাথে ছাপা হয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট। এই লেখার কল্যাণে মালতিকে নিয়ে দেশে এতটাই তোলপাড় হয়ে যায় যে, স্বয়ং সরকারপ্রধান খবরটিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন এবং ভাবেন- ‘এটি এমন এক খবর যে, সঠিকভাবে ‘ডিল’ করতে পারলে এর থেকে অনেক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।’ উপন্যাসের একেবারে প্রথম অধ্যায়েই রাষ্ট্রপ্রধানের এই উপস্থিতি পাঠককে ভাবনায় ফেলে দেয়, এবং আমরা পরে দেখবো- তাঁর এই উপস্থিতি অকারণ ছিলো না! যাহোক, রাষ্ট্রপ্রধানের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। আর ঔপন্যাসিক অত্যন্ত কুশলী ভাষায় উন্মোচন করেন প্রশাসন এবং এর কর্তাব্যক্তিদের মুখোশ। মাসাধিককাল ধরে মালতি ওই এমপিপুত্রের আস্তানায় আটক থাকলেও যে প্রশাসন কোনো উদ্যোগই নেয়নি তাকে উদ্ধারের জন্য, সরকার-প্রধানের নির্দেশে মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যেই তারা সেটি করে ফেলে। মালতি উদ্ধার হয় বটে, কিন্তু আমরা বুঝতে পারি- এ এমন এক রাষ্ট্র যেখানে শেষ পর্যন্ত আসলে মানবতার মুখ থুবড়ে পড়াটাই মুখ্য। আর তাই মালতির উদ্ধারের পরও গভীর শোকের সাথে আমরা পড়ি- ‘মালতি ফিরে এসে কারো সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি। এমনকি মধুবাবুর সঙ্গেও না। বরং অন্যান্য প্রিন্সেসদের বিশ্রী রসিকতায় আহত হয়েছে। তারা হাসতে-হাসতে একে অপরের গায়ে লুটিয়ে পড়তে-পড়তে বলেছে- ‘সখী কী সোন্দর হইয়া গেছে রে!’ ‘এমপির পোলার রঙমহলে থাকছে, সোন্দর হইবো না!’ ‘কপাল নিয়া জন্মাইছস রে সখী, আমরা পইড়া থাকি পথেঘাটে, আর তুই থাকস রাজপ্রাসাদে!... ‘ও সখী কস না, এমপির পোলা তরে নিয়া কী করছে, খালি লাগাইছে না অন্যকিছু করছে!’ ‘কেমনে লাগাইছে রে সখী?... এই সমস্ত আদিরসাতœক রঙ্গ-রসিকতায় তার শরীর রি রি করে উঠেছে। এই একমাস তার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, এই মেয়েগুলো তা কল্পনাও করতে পারবে না।’ কান্নাপর্বের লেখক মুখ থুবড়ে পড়া, মুখ লুকিয়ে থাকা এই মানবতাকেই তাঁর উপন্যাসে তুলে এনেছেন। সংবাদপত্রে মানবতার এমন উদ্ধার ঘটতে দেখা যায়, কিন্তু সাহিত্যে যখন তা আসে আমরা বুঝতে পারি উদ্দেশ্যপরায়ন সাংবাদিকতা আর সাহিত্যের মধ্যে বড় পার্থক্য কোথায়! ৩ সূচনা-পর্বের একটি তথ্য ঘাটতি রেখে গল্পের গভীরে চলে গিয়েছি। উপন্যাসের শুরুতেই আমাদের জানা হয়ে যায়, মালতির জন্য তরুণ লেখকের অতি আগ্রহের- তাকে এমপিপুত্রের কবল থেকে উদ্ধার করা, তাকে নিয়ে উপন্যাস লেখার জন্য মালতির কর্মস্থল তার জন্মভূমে যাওয়া ইত্যাদি- একটি সচেতন কারণ রয়েছে। ঔপন্যাসিক জানিয়েছেন তরুণ লেখকের অন্তস্থ অনুভূতিটি- ‘মেয়েটির জন্য তার ভেতরে অদ্ভুত ধরনের একটি অনুভূতি কাজ করে। হয়তো এর নাম প্রেম। কিন্তু যাত্রাদলের একটি মেয়ের জন্য এরকম কোনো অনুভূতিকে সচেতনভাবে স্বীকার করে নেয়া কঠিন বলে একে প্রেম বলতে দ্বিধা হয় তার। অনুভূতিটির নাম যা-ই হোক- সে ভাবে- উপন্যাসটি লিখতে পারলে অন্তত এর প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। মালতি নয়, মালতির প্রতি তার প্রেম-বোধকে মর্যাদা দেয়ার জন্যই লেখা হবে উপন্যাসটি- নিজের কাছে এভাবেই স্বীকারোক্তি দেয় সে’। ‘প্রেম’ নয় ‘প্রেমবোধকে’ সম্মান জানানো! যারা গভীর জীবনবোধে আকীর্ণ সৎসাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন, জানতে চান জীবনের গভীর যন্ত্রণা, ঘাত-প্রতিঘাত আর সুখ-অসুখ সম্পর্কে তাদের কাছে এটি শিল্পের আরাধনায় নিয়োজিত একজন লেখকের প্রেম ভিন্ন ‘প্রেমবোধ’কে সন্ধান করার এক গভীর দর্শনের দিক উন্মোচন করে; উন্মোচন করে Ñ ভালোবাসার মুক্তাঙ্গনে প্রবেশ করার একটি নতুন দিগন্তের। এবার অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। আমরা মধুবাবুর কথা বলি। কারণ উপন্যাসে মধুবাবু চরিত্রটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিকশিত হয়েছে। মধুবাবু যাত্রাপালার অধিকারী আর ‘সামাজিক পালার এক মহা কারিগর।’ মধুবাবু জাতে শিল্পী। তার ভেতরে বাস করে এক দার্শনিক মন। আমরা পড়ি, মধুবাবু একজন সম্পন্ন পরিবারের সন্তান, নিজেও শিক্ষিত, কিন্তু কী এক অদ্ভুত মোহে পড়ে জড়িয়ে পড়েন যাত্রা দল গড়ার কাজে। মধুবাবু সামাজিক পালা লেখেন, মানুষ তার পালা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়, আর তিনি আমাদেরকে কান্নার এক অদ্ভুত দর্শনের গল্প শোনান। বলেন, ...আমি মানুষরে আসলে কান্দাইতেই চাই। কানতে দেখলে খুশি হই। মনে অয় আমি সফল হইছি, আমার লেখা সফল হইছে, অ্যাক্টরগো অভিনয় সফল হইছে।... মানুষের যে এত দুঃখ-কষ্ট, এত অভাব-অভিযোগ, এত অনিশ্চিত জীবন- তাও মানুষ কান্দে না ক্যান? মানুষের তো সবসময়ই কান্দার কথা। কন তাইলে, কান্দে না ক্যান?... কান্দে না ক্যান জানেন? আসলে কানতে পারে না। চাইলেও পারে না। কান্দনডা এত সহজ ব্যাপাার না গো দাদারা। শরীর কাইটা রক্ত বাইর করানোর চেয়ে চোখ ফাইটা জল বাইরানো কঠিন। মানুষ তো কানতে চায়, কাইন্দা বুকের ভার হালকা করতে চায়, আমি খালি সেই সুযোগডা কইরা দেই। এমনভাবে পালা লেখি য্যান তাগো মনে অয়- এসবই তাগো জীবনের কথা, য্যান দেইখা মন ভইরা কানতে পারে। মানুষ কান্দে, মন হালকা কইরা বাড়ি ফিরা যায়। আর আমি ভাবি, এই এতগুলা মানুষের মন আইজ হালকা কইরা দিলাম। অ্যাক্টরগো কই- তোমরা আইজ অনেক বড় পূণ্য করছো, মানুষের বুকের ভার নামায়া দিছো, পরকালে তোমাগো স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত।... খালি ধর্মকর্ম করলে কী আর অয় দাদা! ধর্মকর্ম কইরা তাঁরে সন্তুষ্ট করা যাইবো না। তিনি বড় কঠিন বিচারক, খালি নিজের স্বর্গপ্রাপ্তির চিন্তায় যারা ধর্মকর্ম করে, তিনি তাগো ডাক শোনেন না। আমরা এক অভূতপূর্ব কান্না-দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হই। শুধু তাই নয়, নদীর কান্নার কথাও বলেন তিনি- ‘শুধু কালীগঙ্গা নয়, সব নদীই কাঁদে। একটু কান পাতলেই নদীর কান্না শোনা যায়।’ নদীর কান্না! অদ্ভুত দর্শনই বটে! এ-লেখার শুরুতে কান্না নিয়ে নিজের যে অনুভূতির কথা বলেছি, বা যা জেনে এসেছি তার বাইরে কান্নার অন্য একদিক উন্মোচিত হয় আমাদের সামনে। নদীর কান্না- যেটি কান পাতলেই শোনা যায়! সে নদীদেরই একটি কালিগঙ্গা, মরতে বসেছে, তার কান্না শোনা যায় আরো বেশি করে। আমাদের চিরচেনা নদীগুলোর অনেকগুলোইতো প্রায় মৃত, সেগুলোর কান্না কি আমরা শুনতে পাই? পাই নাÑ শুনতে পেলে তাদের কান্না থামাবার চেষ্টা নিশ্চয়ই করতাম! হয়তো নদীর কান্না শোনার মত কানই তৈরি হয়নি আমাদের অথবা কান্না হৃদয়ঙ্গম করার মতো সংবেদনশীল মনটাই আমাদের নেই। এই মধুবাবুকে কী আমরা চিনি? হ্যাঁ, ইনি আমাদের কিছুটা চেনা মধুবাবু। আমরা লক্ষ্য করেছি, আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প-উপন্যাসের চরিত্ররা কখনো বিচ্ছিন্নভাবে আসে না, গল্প থেকে গল্পে, কাহিনী পরিক্রমায় তারা ধারাবাহিক চক্রে আসে, যায়। তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘ঘরভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য’র প্রথম গল্পেই আমরা মধুবাবুকে একভাবে পেয়েছি। এখানে, কান্নার রূপকার আর বর্ণনাকারী মধুবাবু আরো বিস্তৃতরূপে সমাগত হন এবং অংশগ্রহণ করেন জীবনের আশ্চর্য কান্নার সংবেদী উপস্থাপনে, এবং আমরা, ঔপন্যাসিকের সুনিপুণ দক্ষতা বিপুল বিস্ময়ে অনুধাবন করি। গল্পের চরিত্রকে ফিরিয়ে এনে তাকে আরো বিস্তারিতভাবে বিনির্মাণ করার জন্য ঔপন্যাসিক কান্নাপর্বে যে নির্মাণ-কৌশলটি ব্যবহার করেছেন সেটিও চমকপ্রদ। উপন্যাসটি শুরু হয় সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর বয়ানে- সাধারণত যেমনটি হয়ে থাকে আর কি! এই বর্ণনাকারী এমনকি মানুষের মনের কথাও কীভাবে জেনে বসে থাকেন সে প্রশ্ন পাঠকদের মনে জাগে না, কারণ তাকে সুকৌশলে আড়ালে রাখা হয় সবসময়- তার অস্তিত্ব পাঠকরা ভুলেই যান। এই উপন্যাসে আহমাদ মোস্তফা কামাল তেমনটি করেননি। সর্বজ্ঞ বয়ানকারীকে তিনি সামনেই নিয়ে এসেছেন। তিনি পাঠকের সঙ্গে কথপোকথনে মেতে ওঠেন, এবং নিজেই পাঠককে সঙ্গে করে মানিকগঞ্জ নিয়ে গিয়ে একদল ‘বেকার যুবকের’ হাতে বর্ণনার ভার ছেড়ে দিয়ে সরে পড়েন। যাওয়ার আগে অবশ্য এটাও জানিয়ে যেতে ভোলেন না যে, এই যুবকদের ওপর তিনি সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারছেন না, প্রয়োজনে তাকে ফিরে আসতে হতে পারে! উপন্যাসের মাঝামাঝিতে তিনি ফিরে আসেনও। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো- বর্ণনাকারীর এই পরিবর্তন এত আলগোছে ঘটে যায়, যে, বোঝাই যায় না- কোথা দিয়ে কী হয়ে গেল! আঙ্গিক নির্মাণে কতোটা কুশলী হলে এটা করা সম্ভব, ভেবে বিস্ময় মানি। যাহোক, উপন্যাসটি প্রধানত বর্ণিত হয় ওই যুবকদের মাধ্যমেই, যারা ওই অঞ্চলের সবকিছুর সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে, প্রতিটি ধূলিকণা যাদের চেনা। কিন্তু তাদের সঙ্গে আছেন হাসিব জামিলও, ঔপন্যাসিক তাকেও শহরের ড্রয়িংরুমে বসিয়ে রাখেননি, পাঠিয়ে দিয়েছেন ওই অঞ্চলে- যেখানে এইসব শিল্পীরা বাস করেন। হাসিব জামিলেরও জন্মভূমি এটা, কিন্তু দীর্ঘকালের বিচ্ছিন্নতায় তিনি বেকার যুবকদের মতো প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে সংলগ্ন হতে পারেন না। তবে তার রয়েছে এক হৃদয়ভেদী চোখ, তীক্ষè অন্তদৃষ্টি- ফলে অল্প দেখেই চমৎকার সব ব্যাখ্যা হাজির করতে সক্ষম তিনি। প্রকৃতপক্ষে হাসিব জামিল-যুবকরা-সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী এই তিন-স্বরের সম্মিলিত বয়ানে রচিত হয় এক বিপুল-বর্ণাঢ্য জীবনগাথা। আমার লোকজ শিল্পের ইতিহাস ও চর্চা, আমাদের নদীকেন্দ্রিক জীবনের মনোগ্রাহী বর্ণনা, আমাদের গ্রামীণ সমাজ-কাঠামোর যুথবদ্ধতা ও ভাঙনের গল্প- আরো কতকিছু! দেড়শ পৃষ্ঠার এক অসাধারণ উপন্যাসের আখ্যানপর্ব কি আর এত অল্প কথায় বর্ণনা করা যায়? ঔপন্যাসিক এরপর আমাদের উদাসপুরের গল্প শোনান। আমাদের জানা হয় অভাব, দারিদ্র, আর অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও উদাসপুর খুবই সম্প্রীতির গ্রাম। জটিল সামাজিক সমস্যা- যেটি সারা দেশজুড়ে ঘটে চলেছে তেমন বড় কোনো সমস্যা নেই উদাসপুরের। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায় এখানে পাশাপাশি বসবাস করে। তারা ভাঙনপ্রবণ এলাকার লোক আর তাই নদী ভাঙনে সব হারাবার যে অনিশ্চয়তা সেটি তাদেরকে নিজেদের আরো কাছাকাছি করে দেয়। বেকার যুবকেদের এরা বাইরের মানুষ মনে করে না। তারা হয়ে ওঠে তাদের আনন্দ-বেদনার সঙ্গী। ৪ এই উপন্যাসে আহমাদ মোস্তফা কামাল আমাদের বহুযুগের উজ্জ্বল লোকজ সংস্কৃতির পরিচয়, বিকাশ আর ক্রমাগত অবক্ষয়কে চিন্তিত করতে করতেই জটিল সমস্যা সৃষ্টিকারী জটগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে, আবার ঔপন্যাসিক সুনিপুণ দক্ষতায় নিজেই সেই জট খুলে দিতে উদ্যোগ নেন। এটি করেন তিনি তাঁর উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের সংযম, ক্ষমতাশীলতা বা প্রতিবাদী মনোভাব দেখিয়ে এবং কাহিনির বিপুল বিস্তারের মাধ্যমে। আমাদের শহুরে চোখ যখন অভ্যস্ত দৃশ্যের বাইরে যেতে চায় না, তখন লেখক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশকে তাঁর এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু করেছেন। যাত্রাশিল্পীদের কথা তো আগেই বলেছি- আমরা এবার পরিচিত হই মৃদঙ্গবাদক হরিচরণ দাস, প্রতিমাশিল্পী জয়দেব পাল, কীর্তনশিল্পী বরুণ কুণ্ড’র সঙ্গে। যেন শিল্পীদের মেলা বসেছে এই উপন্যাসে। মৃদঙ্গ শিল্পী হরিচরণ দাসের কথাই বলা যাক। সম্পর্কের দিক থেকে তিনি মালতির বাবা। কিন্তু উপন্যাসে তিনি নিজেই এক আশ্চর্য শিল্পী হিসেবে উপস্থপিত হয়েছেন। ঋষিদাস সম্প্রদায়ের এই শিল্পীদের মূল পেশা ছিলো বাদ্যযন্ত্র বাজানো। কিন্তু সে বহু পুরনো দিনের কথা। এখন আর সেই উৎসব নেই দেশে, পেট বাঁচাবার জন্য তারা বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র বানায়, কোনোরকম বেঁচে থাকে আর রাত হলে হাতে তুলে নেয় বাদ্যযন্ত্রগুলো। হরিচরণ অবশ্য তাও নেন না। তিনি ভিন্ন এক জগতের মানুষ, উঁচুস্তরের এক শিল্পী - তাঁর মৃদঙ্গ যে কথা বলে! শিল্পীর প্রাণে কীভাবে শিল্প নিজেই বেজে ওঠে, তার নিখুঁত রূপায়ন করেন লেখক। আমরা দেখি, এক বিশেষ মুহূর্তে হরিচরণ দাস হয়ে ওঠেন স্রষ্টা, বোল তুলতে তুলতে কথা ফোটান মৃদঙ্গের মুখে, মৃদঙ্গে টোকা দিতে দিতে বলেন- ‘কথা ক মৃদঙ্গ!’ তারপর নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন- ‘কী কয়?’ তারপর আবার টোকাÑ ‘কী কয়?’ আমরা স্পষ্ট শুনতে পেলামÑ ‘কমু না!’ আবার টোকা- ‘কথা ক রে মৃদঙ্গ’Ñ ‘কী কয়?’- ‘কমু না!’- ‘তরে কলা দিমু, বিস্কুট দিমু, পাউরুটি দিমু, আম দিমু, কাঁঠাল দিমু, কথা ক’Ñ ‘কমু না!’- এইভাবে ঘুরতে-ঘুরতে তিনি জামিল ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন, বললেনÑ ‘কবি না ক্যান, শোননের মানুষ আছে, বোজোস না? কথা ক মৃদঙ্গ, তোর কথা শোনার মানুষ আছে মৃদঙ্গ, মানুষ আছে, মানুষ আছে, কথা ক মৃদঙ্গ, কথা ক, কথা ক মৃদঙ্গ, কথা ক, কথা ক’- এবার যেন সম্পূর্ণ পাল্টে গেল মৃদঙ্গর বোল। হরিচরণের হাতে সে যেন নিজেই বেজে উঠছে, মালতি মালতি মালতি... যেন এই একটি নামই ধ্বণিত হচ্ছে জগৎ জুড়ে, হরিচরণের চোখে নেমেছে জলের ধারা, ঠোঁটে খুব মৃদুস্বরে একটিই শব্দ- মা, মা, মা, মা, মাগো...। ঔপন্যাসিক মেদহীন ঘোরলাগা ভাষায় স্বপ্ন কল্পনার মতো করে বলেন, আমরা কেবল মৃদঙ্গের শব্দ শুনি তখন, স্তব্ধতা ঘিরে রেখেছে সবাইকে, যেন নেমে এসেছে বিপুল নৈঃশব্দ্য, যদিও হরিচরণ আর তার মৃদঙ্গ বেজেই চলেছে। এমন মগ্ন সে, যেন চারপাশে কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই। এমন মগ্নতার দেখা সচরাচর মেলে না। টের পাই, মৃদঙ্গের ভাষা আমাদের বোঝার বাইরে চলে গেছে, কী যে বলে চলেছে সে কে জানে! মৃদঙ্গ, তুমি কার কথা বলছো এখন? আরেক শিল্পী জয়দেব পালের কথা আমরা পড়ি, যার কাজ প্রতিমা তৈরী করা। তাকে উদ্দেশ্য করে করা গল্পের তরুণ লেখকের এক অদ্ভুত প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের দেখা পাই আমরা। এই যে মুর্তি গড়ার কাজ করতে গিয়ে প্রতিমাদের শরীরের নানা অংশ নির্মাণ করতে জয়দেব, তখন কী তার কোনো ইচ্ছে জাগে না? কখনো কী শরীর জেগে ওঠে না? পুরুষ তো! জয়দেব পাল জানান, ’না, কুনোদিনই এমুন ইচ্ছা জাগে নাই। আমি যে তখন শিল্পী অইয়া যাই গো বাবা, আর তারা আমার সৃষ্টি। নারীও না, দেবীও না। নিজের সৃষ্টির জইন্যে শিল্পীর এইরম কোনো লোভ জাগা উচিত না। জাগলে শিল্প অয় না’। শিল্প নিখাদ হলে নাকি একতরফা দিয়েই যায়, নেবার কোনো উদ্যোগ সে নেয় না। আমরা বুঝতে পারি আহমাদ মোস্তফা কামাল যে জয়দেব পালের গল্প উপন্যাসে টেনে এনেছেন তাঁর শিল্প নিখাদ। তাই জয়দেব পাল লোভের কাতর হন না, কেবল সৃষ্টির আরাধনায়ই নিমজ্জিত থাকেন। জয়দেব পাল মহাদেব দর্শনের গল্পও শোনান। এক বিশেষ মুহূর্তে মহাদেব তাকে দর্শন দিয়েছিলেন। ঔপন্যাসিকের জাদু বিস্তারি ভাষায় সেই দৃশ্যের বর্ণনা উপস্থাপন না করে পারছিনা। জয়দেব পাল বলেন, আমার বয়স তখন বেশি না, নিজে কাম শুরু করার কয়েক বছর পরের কথা। একদিন গড়পাড়ার সরকার বাড়িতে কাম করতেছি। ওই বাড়িতেই সবচেয়ে বড় প্রতিমা হইতো তখন। তো কাম করতে-করতে কি মনে কইরা হঠাৎ পিছন ফিরা দেখি, মহাদেব খাড়ায়া আছেন। চোখের ভুল মনে কইরা আমি আবার কামে মন দেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু মনের মইধ্যে খুঁতখুঁতি, কামে আর মন বসে না। অনেকক্ষণ পর আবার পিছন ফিরা চাইয়া দেখলাম, মহাদেব ঠিকই খাড়ায়া আছেন, এইবার আবার মিটিমিটি হাসতেছেন। আমার সারা শরীল ডরে ঠাণ্ডা অইয়া গ্যালো। কথা কওয়ার চেষ্টা করলাম, পারলাম না। তারপর আর কিছু মনে নাই। অজ্ঞান অইয়া গেছিলাম, বুঝছেন তো! জ্ঞান ফিরলো তিনদিন পর। জয়দেব পাল জানান আবার মহাদেব দর্শনের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন... এসব পড়ে আমরা ঘোরলাগা মন নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি! মনে হয়- এই প্রথম কোনো লেখকের কলমে এই চরিত্রগুলো উঠে এলো, এই আশ্চর্য জগৎটির সঙ্গে আর কখনো কোনো লেখক আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেননি । ৫ এদিকে সেই মালতি, যাত্রাদলের প্রিন্সেস কাম নায়িকা- যাকে নিয়ে প্রেমবোধে আক্রান্ত তরুণ লেখক, তাদের মধ্যে নাটকীয় একটি ঘটনা ঘটে। মালতির যাত্রাপালা দেখে তরুণ লেখক এতটাই মুগ্ধ হন যে ভক্তি নিবেদনের করতে মালতিকে তিনি নমস্কার করে বসেন। তরুণ লেখক হাসিব জামিল মালতির অভিনয় দেখে আর যা করেন তার বিবরণ এভাবে আসে- মালতির অভিনয়-পর্ব শেষ হলে বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে সবাই। তারপর হঠাৎ একজন মাত্র দর্শক কোথাও থেকে তালি দিতে থাকে। আমরা আরেকবার অবাক হয়ে দেখি- জামিল ভাই-ই সেই দর্শক। মুহূর্তে করতালিতে ভরে ওঠে প্রাঙ্গণ। অন্য কোনো শব্দ নয়, কেবল একটানা অবিরাম করতালি। মালতি চারদিকে মাথা ঝুঁকে অভিবাদন জানায়, আলগোছে চোখ মোছে, তারপর দৌড়ে ড্রেসিং রুমে চলে যায়। এই নাটকীয় দৃশ্যে পাঠকের সামনে ঔপন্যাসিক তরুণ লেখকের মালতির এবং তার অভিনয়ের প্রতি প্রেম আর সমর্পনের মুহূর্ত হাজির করে, পাঠক চমকে যায় নিশ্চিত, কিন্তু এটি এমন নয় যে ঔপন্যাসিক তরুণ লেখকের আবেগকে মুক্তি দেবার জন্য স্বাভাবিক বেপেরোয়া প্রেম উপন্যাসে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন, কারণ পরিচ্ছেদের শেষে শিল্পের প্রতিই তরুণ লেখকের গভীর সমর্পন প্রদর্শিত হয়। এতকিছুর পরে, বর্ণাঢ্য যাত্রপালা, নিউ সোনালী অপেরা আর গৌরব নিয়ে থাকতে পারে না। হঠাৎ করে উদ্দেশ্যমূলক রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধের খড়গ নেমে আসে যাত্রাশিল্পের ওপর। যাত্রাপালার প্রতি ক্ষমতাশীলদের কালোহাত প্রদর্শিত হয়, রোষানলের শিকার হন মধুবাবুরা। মধুবাবুর সারাজীবনের সাধনার ফসল- নিউ সোনালী অপেরা আর নতুন পালা নামাতে পারে না। যাত্রাপালা প্রদর্শন পুরোই বন্ধ হয়ে যায়- নেমে আসে ঘোর অমানিশা। সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার নির্মম বলী মধুবাবু- যিনি জীবনের এক আশ্চর্য কান্নার আবিষ্কার ও রূপায়ণ ঘটিয়েছিলেন- তাঁর স্বপ্নের নিউ সোনালী অপেরা ধ্বংস হয়ে যায়! আর উপন্যাসের শুরুতে যে রাষ্ট্রপ্রধানকে আমরা দেখেছিলাম মালতিকে উদ্ধারে তৎপর, তিনিই এবার সেই তৎপরতার ক্রেডিট নেন- এর মধ্যেই এক ঘটনা ঘটে। বিশ্ব নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সরকার-প্রধানের মনকাড়া বক্তৃতায় মালতির প্রসঙ্গটি উঠে আসে। মফস্বলের মৃত এক যাত্রাদলের তুচ্ছ এক প্রিন্সেস তখন রাষ্ট্রীয় লেভেলে প্রবেশ করে। তিনি নিজে এবং তাঁর সরকার নারীদের অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় কতোটা আন্তরিক তার উদাহরণ দিতে গিয়ে নিজ দলীয় এমপি-পুত্রের কবল থেকে মালতিকে উদ্ধার এবং এমপি-পুত্রকে শাস্তি দেয়ার কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করেন। মুহুর্মুহু করতালিতে আলোকিত অডিটোরিয়াম শব্দমুখর হয়ে ওঠে। হায়, কারোরই জানা হয় না, সরকারপ্রধান যখন এই মনকাড়া বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন প্রদর্শনী বন্ধ রাখার ফলে যাত্রাদলের বেকার নারীরা পেটের তাড়নায় শরীর বিক্রির জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল! হ্যাঁ, মালতিদের শিল্পী জীবনের এবং তাদের সামাজিক জীবন এভাবেই করুণ-মর্মান্তিক পরিণতিপ্রাপ্ত হয়! আমার কান্নাপর্ব পাঠ সমাপ্ত হয়। ৬ কান্নাপর্বে আমরা স্বপ্ন বিনির্মাণের এবং নানাবিধ সংযোজন, বিয়োজনের গল্প অবলোকন করি। আহমাদ মোস্তফা কামালের জাদুবিস্তারি ভাষায় কান্নাপর্ব কেবল নিহত হতে যাওয়া যাত্রাপালা নিউ সোনালী অপেরা, মধুবাবু, মালতি, বেকারযুবকদের গল্প নিয়েই সম্পন্ন হয় নি; এখানে আছে গ্রামের প্রতিমাশিল্পীদের কথা, মৃদঙ্গবাদকের কথা, কীর্তনশিল্পীদের কথা... শিল্পের উৎস সন্ধানে নিয়োজিত এই শিল্পীরা বিচ্ছিন্নভাবে নন বরং তাদের স্ব-স্ব শিল্প নিয়ে সুমহান দার্শনিক চর্চার অনুধাবনে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রময়তায় উপন্যাসে উঠে এসেছে। উপন্যাসের চরিত্রগুলো সৃষ্টিতে আহমাদ মোস্তফা কামাল তাঁর বিপুল দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। যাত্রা, মৃদঙ্গ বাদক, প্রতিমা শিল্পীদের গল্প শোনাতে গিয়ে আহমাদ মোস্তফা কামাল আমাদের শিল্প সম্পর্কে পুরনো প্যারাবল ভেঙে এক নতুন প্যারাবলের দিক দর্শন করান। পাশাপাশি, গ্রামের একটি নষ্টালজিক চিত্রও উপহার দেন। যেখানে একদিকে যেমন যুথবদ্ধতা, প্রেম, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, সুখময়তার গল্প আছে তেমনি অস্বস্তির গল্পও রয়েছে প্রচুর। ঐতিহ্যের আর বহুমাত্রিকতার আলোয় উদ্ভাসিত শিল্পচর্চার, প্রকৃতি আর মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিনির্মাণে কান্নাপর্ব আমাদেরকে টেনে নিয়ে যায় জাদুবিস্তারি অন্যজীবনের দিকে!