User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সংক্ষিপ্ত, সারবান ও সংবেদী- এই তিনটি চাবি-শব্দ দিয়ে কবি পিয়াস মজিদের ব্যতিক্রমী ও প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ-এর বৈশিষ্ট্যগুলোকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এ বইয়ের প্রবন্ধগুলো ক্ষীণতনু তবে নিটোল। কিন্তু তার মানে এ নয় যে বলবার কথাটি তিনি পুরোপুরি বলতে পারেননি। নির্যাস তো সবসময় পরিমাণে অল্পই হয়। আর তা যদি হয় সুধাসম তো কথাই নেই; অনেককাল তার স্বাদ লেগে রইবে রসনায়। চিরঞ্জীব বটবৃক্ষতুল্য রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে কালো অক্ষরের ফুল ফোটানো কবি আলতাফ হোসেন পর্যন্ত কালোত্তীর্ণ শব্দসাধকদের সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য নিরূপণ আর সাহিত্যরস আস্বাদনে পিয়াস মজিদ পূর্বসূরি সমালোচকের থেকে একেবারেই আলাদা। বড়মাপের সব কবি-সাহিত্যিকদের মূল্যায়নে অযথা নিঃসার বাগবিস্তার না করে লেখক বিন্দু থেকে সমগ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। এ সমগ্রতাকে অনুধাবন করবার জন্যে,পাঠককে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। গ্রন্থে আলোচ্য সাহিত্যকারদের লেখকসত্তার উন্মোচনে পিয়াস মজিদ স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত এক মৌলিক চিন্তাবৃত্তে বিচরণশীল এবং তা বেশ অতলস্পর্শীও বৈকি । যেমন সচরাচর কেউ রবীন্দ্রনাথকে পাগল বলে অভিহিত না করলেও পিয়াসের চোখে তিনি এক ‘একলা পাগল’ কিংবা ‘ঐন্দ্রজালিক উন্মাদ’। আর সে পাগলামি এক ব্যতিক্রমী প্রাঞ্জল কথামালায় চিত্রায়িত: ‘আমার আঁধার রাতের সে একলা পাগল। পাগল না হলে কেউ নির্দয় মহানগর আর ততোধিক নিষ্ঠুর আত্মীয়-পরিজনের গঞ্জনার ব্যামোয় বাঁধা ফটিকটাকে ওভাবে চিরকালের ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়? পাগল না হলে কেউ অভাগী রতনের কাছ থেকে প্রিয় পোস্টমাস্টারকে দূরে সরিয়ে ফেলে? এর আগে সব লেখক তো জিতিয়ে দিত তার নায়ক নায়িকাকে আর এই পাগলটা কিনা তার বা আমাদের কারো ইচ্ছাকে পাত্তা না দিয়ে এক্কেবারে ন্যাংটো করে দেখায় সত্যটাকে।’ আবার অপূর্ব বিস্ময়-বিমুগ্ধ কবি জীবনানন্দকে আপন বিরল বৈশিষ্টসমেত পিয়াস তুলে ধরেন কবিতাপ্রতিম স্বচ্ছন্দ-সহজ-সুন্দর গদ্যে- জীবনানন্দ তাঁর কাছে ‘শুদ্ধতম’, ‘নক্ষত্রপ্রতিম’ কিংবা ‘নির্জনতম’ নন; পিয়াস মজিদের জীবনানন্দ‘জগতের যাবতীয় সুতীর্থে খাপ না খাওয়া এক করুণ মাল্যবান মাত্র’। এমনি করে এ বইতে পিয়াস মজিদ তার পছন্দের কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে অজান্তেই একাকার হয়ে যান। তাঁর প্রবন্ধে একজন প্রকৃত শিল্পীর হৃৎস্পন্দন শোনা যায়, টের পাওয়া যায়- এতে রয়েছে অন্তরের উত্তাপ। পুরোনো কথার পুনরাবৃত্তি করেন না কখনো। শাণিত, যুক্তিময় অনায়াস শিল্পমাতাল গদ্য ভাষায় তাঁর নির্বাচিত লেখকদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে যেন জন্ম দেন এক নবতর সাহিত্য প্রকরণের। অতঃপর রবীন্দ্রনাথ,জীবনানন্দ, বিনয় মজুমদার অথবা আবদুল মান্নান সৈয়দ,সৈয়দ শামসুল হক, শহীদুল জহির প্রমুখ সাহিত্যিক হিসেবে পিয়াস মজিদের কলমে এক নব তাৎপর্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন এই প্রবন্ধগ্রন্থে। এই বই পাঠককে লেখক-হৃদয়ের আবেগের তলটুকু দেখাবে, আলো-আঁধারিময় পৃথিবীতে স্পষ্ট করে দেবে বিস্ময়ের সূত্রস্বর, এবং গড়ে তুলবে এক নৈঃশব্দ্যের সেতু- যেখানে কিনা পিয়াস মজিদের মৌনি ও ধ্যানি গদ্যের ভেতরেই আমরা খুঁজে পাবো বাঙ্ময় ব্যপ্তির দিশা। বইটা আমাদের একটু হলেও ভাবাবে, এ-নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।