User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Jahan-E-Noor

      11 Apr 2013 03:00 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক , প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক রফিক কায়সার তিন পুরুষের রাজনীতি গ্রন্থে গত দুই শতকে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি, সাহিত্য ও সমাজ চিন্তার ইতিহাসের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন । এই গ্রন্থে তৎকালীন সময়ের রাজনীতিবিদ ,সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীদের কর্ম ও ব্যক্তিত্ব সূক্ষ্মভাবে ও নিরপেক্ষ বিচার এর মাপে উঠে এসেছে। বইটি পাঠের মধ্য দিয়ে পাঠক তৎকালীন সময়ে রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারকদের নতুনভাবে মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ ও বাঙালি মুসলমান এখানে মুখ্য বিষয় হলেও এটি কেবলমাত্র ইতিহাস এর বই হয়ে থাকেনি।রফিক কায়সার এ বইয়ে বাঙালি মুসলমান দের ইতিহাস তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তৃতীয় পক্ষ হয়ে। কোন পক্ষের প্রতি তার বিশেষ কোন মোহ নেই। ‘তিন পুরুষের রাজনীতি’ গ্রন্থটি কার্তিক ১৩৯৪, নভেম্বর ১৯৮৭ সালে ইউনিভাসির্টি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির প্রচ্ছেদ করেছেন সমর মজুমদার। প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ। মুদ্রণ করেছে বর্ণমিছিল। ২০৩ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ টাকা। বইটিতে প্রকাশিত ১১টি প্রবন্ধের অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছিলো: মিজানুর রহমানের ত্রৈমাসিকে। বইটির লেখক রফিক কায়সার ১৯৫২ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তার রচিত ’তিন পুরুষের রাজনীতি ও কমল পুরাণ বইদুটি কলকাতার প্রবাসি ‘আনন্দ বাজার পত্রিকায়‘ ‘একজন বাংলাদেশীর স্মরণীয় কর্ম নামে আখ্য পায় ’। নিউইয়র্ক রিভিউ অফ বুকস্ এর একজন নিয়মিত সদস্য হিসেবে তিনি লন্ডন ভিত্তিক বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে চলমান বিশ্ব সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কঠোর সমালোচনা করে থাকেন। তার গদ্য অত্যন্ত পোয়েটিক যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে চুম্বক এর মত টানতে থাকে। তার প্রধান আগ্রহের বিষয় বাংলাদেশ ও বঙালি মুসলমান। তিন পুরুষের রাজনীতি যারশ্রেষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। ‘আবুল হুসেন ও ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রবন্ধে পশ্চাৎপদ বাঙালি মুসলমানকে জাগ্রত করার মানসে সংঘবদ্ধ সাহিত্যিক প্রয়াসের যে উন্মেষ ঘটেছিলো তা উঠে এসেছে। ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ তাদের ধারণগত দিক থেকে পূর্ববতী সকল গোষ্ঠীকে অতিক্রম করে যায়। এদের প্রকাশিত সাময়িক পত্র ‘শিখা’ তে তাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাগুলো প্রকাশিত হওয়ায় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’, ‘শিখা গোষ্ঠী’ নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। এই প্রবন্ধে শিখা গোষ্ঠীর অন্যতম সংগঠক আবুল হুসেনের কর্ম ও ব্যক্তিত্বের সমালোচনা উঠে এসেছে। মতার্দশগত কারণে জীবদ্দশায় সৈয়দ আবুল হুসেন বির্তকিত ব্যক্তিতে পরিনত হন। যদিও তৎকালীন খ্যাতনামা লেখক আবদুল ওদুদের সাথে আবুল হোসেনের পার্থক্য ছিল বুদ্ধি-মুক্তির প্রশ্নে। আবদুল ওদুদের চিন্তা চেতনায় কেবল গোষ্ঠী মুক্তির বিষয়টি উঠে আসলেও আবুল হোসেনর চিন্তা চেতনায় উঠে এসেছে মানব মুক্তি। ওদুদের বিষয় ছিল সাহিত্য আবুল হুসেনের বিষয় ছিল সমাজ। কোন নিদিষ্ট প্রসঙ্গে আবুল হোসেনর লেখা বাধা পড়েনি। মোতাজিলা দর্শন থেকে শুরু করে সৈয়দ আহমদের শিক্ষানীতি পর্যন্ত তাঁর কৌতুহল পরিব্যাপ্ত ছিল। তার রচনাবলীতে কর্মযোগ ও জ্ঞানযোগের সমন্বয় ঘটেছে। অর্থনীতি ও আইন তার পঠিত বিষয় হলেও তিনি ছিলেন শিখা গোষ্ঠীর একজন নৈব্যক্তিক সমালোচক। ধর্মীয় দিক থেকে তিনি ছিলেন উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসের বিশ্লেষণে বিশ্বাসী। তিনি সমাজকে ধর্মীয় গোড়ামীর শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। তিনি ছিলেন ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদে বিশ্বাসী ও ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী। এ কারণে তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজে বারবার নিন্দিত হয়েছেন। আদর্শগত কারণে তিনি ত্যাগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সুচক পেশা। আবুল হোসেনের এ শক্তির মূল উৎস ছিল বিশ্বাসের ওপর মুক্তি এবং শাস্ত্রের ওপর মানুষকে স্থান দেয়ার নৈতিক ঐশ্বর্য্য। আবুল হুসেনের ভাবনা কল্পনায় অনেক ত্র“টি থাকলেও বুদ্ধিজীবীর দয়িত্ব এড়াবার চেষ্টা তিনি কখনো করেননি। তিনি সমাজের সমালোচনায় ছিলেন নির্ভীক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা ধারায় একজন দায়িত্বশীল কলমযোদ্ধা। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের কাছে নিজেদের বিদ্যাবুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে এদেশের বুদ্ধিজীবীরা অর্জন করেছেন প্রতিপত্তি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। তাদের দায় বিবেকের কাছে হলেও আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তা এড়িয়ে গেছেন। ‘শেষ আরতির শিখা’ প্রবন্ধে এহেন দুঃসময়ে আবুল ফজলের মতো প্রাণবন্ত ও প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন লেখক। পাকিস্তান আমলে বুদ্ধিজীবীদের সমস্যা ছিল আত্ম পরিচয়ের স্বরূপ নির্ণয়। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী প্রলোভনের জাল বিস্তার করে বুদ্ধিজীবীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। আবুল ফজল প্রলভোনকে উপেক্ষা করে বুদ্ধিজীবীর সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। ফজলের স্বাধীন চিন্তার উন্মেষ ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে। রক্ষণশীল মোল্লা বাড়ির ছেলে হয়েও তিনি উদার নৈতিক চিন্তা চেতনায় তাড়িত হয়েছিলেন। তবে তা তাকে ধর্মীয় আনুগত্য হারানো নয়, বরং শুভ চেতনায় সহায়তায় ধর্ম বিশ্বাসকে যাচাই করার পথ দেখিয়েছিল। বাঙালি মুসলমান সমাজের অসঙ্গতি ও রক্ষণশীল মানসিকতাকে তিনি তার ছোট গল্প ও উপন্যাসে মূল্যায়ন করছেন। ফলে আবুল ফজলের গল্প ও উপন্যাসে ধর্মনিরপেক্ষ জীবনচেতনা স্থান পেয়েছে। তৎকালীন কথা সাহিত্যে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও সমাজকে আচ্ছন্ন করে ফেলে রক্ষণশীল মানসিকতা। এ পরিস্থিতিতে আবুল ফজলের লেখক সত্তা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রতি তার সমর্থন ছিল না কোন সময়ে। তার মতে ধর্ম রাষ্ট্রের এখতিয়ারভূক্ত নয়। ‘রাঙা প্রভাত’ উপন্যাসে ধর্মীয় চেতনার চেয়ে সমাজ অভিব্যক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। এখানে নায়ক নায়িকাদের ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় মূখ্য হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক কোন ব্যক্তিত্ব না হয়েও তিনি ‘রাঙা প্রভাতে’ উপস্থাপন করছেনে স্বচ্ছ রাজনৈতিক বক্তব্য। উপন্যাসে ফজল রূপ দিতে চেয়েছেন সমাজ ভাবনাকে, ছোট গল্পে যৌন সমস্যা। যৌনতার পাশাপাশি সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতকে বাদ দেননি আবুল ফজল। ব্যক্তিত্বের প্রতি ফজলের মোহ ছিল। গান্ধী, জিন্নাহ, আবুল কালাম আজাদ, মোজাফ্ফর আহমেদ, ফজলুল কাদের চৌধুরীদের ওপর বিশ্লেষণী লেখা লিখেছেন। তার সমাজ দর্শনকে উদার তন্ত্রের বিশিষ্ট দর্শন বলে উল্লেখ করেছেন লেখক। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুজিবীয় জনপ্রিয়তাকে অগ্রাহ্য করে প্রথম মুখ খুলেছেন আবুল ফজল। দালাল, অবাঙালি, যুদ্ধবন্ধী এবং মাদ্রাসা শিক্ষার স্বপক্ষে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা পালন করেন তিনি। তার ‘মানবতন্ত্র’ ছিল স্বৈরাচার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। স্বাধীন বাংলাদেশে আবুল ফজল চেয়েছিলেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সমকালীন বাংলাদেশে মানবন্ত্র ও শুভবুদ্ধির আপত পরাজয় ঘটলেও মানবতন্ত্রের প্রতি তিনি বিশ্বাস হারাননি। ‘রবীন্দ্র চর্চায় তিন পান্থ’ প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশে রবীন্দ্র চর্চার ক্ষেত্রে বাধা এবং সে বাধা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে সেসময়ে যে সব বাঙালি মুসলিম উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন তাদের সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। প্রবন্ধের শুরুতে লেখক বলেছেন ‘রবীন্দ্র চর্চা বাংলাদেশে এখনো সার্বজনীন বিষয় নয়’। আর এ জন্য তিনি আমাদের মানসিক দৈন্যতাকে দায়ী করেছেন। প্রাম্য-গম্ভীর সংস্কৃতির চাপে রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবন থেকে বহুকাল আগেই লুপ্ত হয়ে গেছেন। পারিবারিক সংস্কার, প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস এবং গোঁড়ামিকে দূরে ঠেলে তিরিশ দশকে বাঙালি মুসলমান রবীন্দ্র চর্চা শুরু হয়। আর এ ক্ষেত্রে কাজী আব্দুল ওদুদ, আবু সয়ীদ আইয়ুুব ও সৈয়দ মুজতবা আলীর বিশেষ অবদানের কথা লেখক তার এ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মধ্যে উদার নৈতিক চিন্তাধারার অনুশীলনে ঢাকার ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলিম মধ্যবিত্তের মুক্তবুদ্ধির অনুশীলনে শিখাগোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা লেখক তার প্রবন্ধে তুলে ধরছেন। রফিক কায়সার তার এ প্রবন্ধে রবীন্দ্র চর্চায় আব্দুল ওদুদকে পথিকৃত বলে উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি আব্দুল ওদুদের অধীত বিষয় হলেও সমালোচনামূলক সাহিত্য ছিলো তার অনুশীলনের বিষয়। ওদুদের রবীন্দ্র চর্চা ছিল পরিশীলিত। ‘কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক প্রবন্দে লেখক কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভাবগত, কালগত এবং রূপগত সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য নির্ণয় করেছেন। কালিদাসকে তিনি ভোগবাদী ও রবীন্দ্রনাথকে আনন্দবাদী বলে অবিহিত করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ’ শীর্ষক প্রবন্ধে ওদুদ স্বধর্ম ও স্বসমাজের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু মৌলিক সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের লেখায় বাঙালি মুসলমান প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আব্দুল ওদুদ অর্থনৈতিক দূরত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু সয়ীদ আইয়ুব রবীন্দ্রনাথকে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করেছেন। আইয়ুবের রবীন্দ্রবোধ তার অন্যন্য সাধারণ মেধা এবং প্রমিতির নির্দশন। জরা, বাধিকে অস্বীকার করে রবীন্দ্র চর্চা করেছেন আইয়ুব। রবীন্দ্র প্রেমের প্ররোচনায় তিনি পরিত্যাগ করেছেন মাতৃভাষা। আইয়ুবের রবীন্দ্র চর্চা প্রতি নিষ্ঠা ও মনীষাকে লেখক পৌরাণিক পুরুষের মহিমায় সমুজ্জ্বল বলে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালি মুসলিম ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সেতু বন্ধন রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রবীন্দ্র-সত্তা মুজতবা আলীর জীবননির্যাস। ‘পুর্ব বাঙলার রাজনীতি ও রাজনৈতিক চরিতমানস’ প্রবন্ধে লেখক বাংলার রাজনীতিবিদদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার ভাষায় ‘বক্তৃতা এবং বিবৃতি দিতে যতখানি দক্ষ ততখানি দক্ষতা আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ লেখার মধ্য দিয়ে তাদের সময়কে ধরে রাখতে পারেননি। ফজলুল হক প্রসঙ্গে তিনি বলেন , যে সময় থেকে ফজলুল হক রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিজেকে সংশ্লিষ্ট রেখেছিলেন সেই সময় খেকে শুরু করে যুক্তফ্রন্টের শেষ দিনগুলো সম্পর্কে তার ভাষ্য আমাদের অজানা। সোহরাওয়ার্দী রাজনৈতিক জীবনে র্র্দীঘ পথ অতিক্রম করলেও সেই পথ চলার জবানবন্দী উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে লেখক মন্তব্য করেছেন। ৪০ এর দশকের নেতাদের মধ্যে আবুল হাশিম তার রাজনৈতিক আত্মজীবনীতে সমসাময়িক বাংলাদেশ এবং মুসলিম বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেনীর উল্লেখ্যযোগ্য রাজনৈতিক ঘটনাবলীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। মুজাফ্ফর আহমদের আত্মজীবনীটিও একটি উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ। রাজনৈতিক মতার্দশের প্রশ্নে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হলেও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তার রাজনৈতিক মতাদর্শকে তিনি কখনো রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রয়োগ করেননি। দলীয় কর্মীদের প্রতি জিন্নাহর খুব একটা আস্থা ছিলনা বলে লেখক মন্তব্য করেন। আবুল মনসুরের ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ একটি উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ। এ গ্রন্থে লেখক বঙ্গভঙ্গ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বলক্ষণ পর্যন্ত সময়কে উল্লেখ করেছেন। বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত নেতৃবৃন্দের অর্ধ শতাবব্দীর রাজনৈতিক কার্যাবলির ইতিবৃত্ত এই গ্রন্থের মূল উপপাদ্য। কামরুদ্দীন আহমদ তার তিন খন্ডের গ্রন্থে বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক ক্রমবিবর্তনের কাহিনীকে হাজির করছেন। বাঙালি মুসলমান সমাজকে নিয়ে কামরুদ্দীন আহমদ দীর্ঘদিন ধরে অনুশীলন করেছেন। পূর্ব বাংলার রানীতিতে আরেকটি নাম আইয়ুব। ৫৮ সালের সামরিক শাসন প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে ৬৯ সালের গণভূত্থানের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটে। ‘ওদুদনামা’ প্রবন্ধে লেখক কাজী আব্দুল ওদুদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। লেখকের মতে, উনিশ শতকের নবজাগরণে বাংলার মুসলমান সমাজের অবদান প্রায় শূণ্যের কোঠায়। কিন্তু এখানে আব্দুল ওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সমাজ ভাবনায় নবাব আব্দুল লতিফ, আমীর আলী ও মীর মোশাররফ হোসেনের ভূমিকা গৌন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। চিন্তা ভাবনায় এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাঙালি হিন্দরা অনেকখানি অগ্রসর হবার হবার পর বাঙালি মুসলমানরা তাদের যাত্রা শুরু করে। সাহিত্য বিষয়ক আলোচনায় কাজী আব্দুল ওদুদ তার মনীষাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। হিন্দু-মুসলিম বিরোধ নিয়েও তিনি ভেবেছেন এবং লিখেছেন। এই ধরণের রচনায় লেখকের সমাজভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে। হিন্দু-সুসলমান বিরোধের কার্যকারণ হিসবে তিনি ধর্মান্ধতার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।লেখকের সমাজ ভবনার আর্থ সমাজিক পরিপ্রেক্ষিতটি গরহাজির। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সা¤প্রদায়িক বিষয় সম্পর্কে লেখকের বক্তব্যগুলো জোরালো হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ও ইকবাল সম্পর্কে কাজী আব্দুল ওদুদ ব্যাপক পর্যালোচনা করছেন। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তার পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ ‘কবিগুরু বরীবন্দ্রনাথ’। গ্রন্থটিতে আছে রবীন্দ্রনাথের কাব্যকৃতির অনুপুঙ্খ পর্যালোচনা। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে কাজী আব্দুল ওদুদ বিশ্ব ভারতীয় ‘হিন্দু-মুসলমান বিরোধ’ শীর্ষক বক্তৃতা দান করেন। এতে তিনি বাঙালি সমাজের সামাজিক বিবর্তন নিয়ে আলোকপাত করেন। আব্দুল ওদুদের ভাব পুরুষ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। কল্যাণ ও শুভ চেতনার প্রতি তিনি ছিলেন গভীরভাবে আস্থাশীল। ধর্মকে তিনি যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তা পালনও করেছেন। প্রচলিত ধর্ম প্রথার বিরোধীতা করায় সমালোচিতও হয়েছেন অনেক। ‘নোনা দরিয়ার ডাক’ প্রবন্ধে লেখক ভারতীয় উপমহাদেশে কমিউনিষ্ট পার্টির উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ও ঘটনাক্রমের আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে মোজাফ্ফর আহমেদকে নিয়ে। রুশ বিপ্লব ভারতীয় রাজনীতিতে মেরুকরণ ত্বরান্বিত করে। কিন্তু সেই সময়কার মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ সম্পর্কে তেমন মনোযোগী ছিলেন না। তবে বাঙালিদের কাছে রুশ বিপ্লবের কথা তুলে ধরেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তার ‘বাঁধন হারা’ উপন্যাসে। ব্রিটিশ বুঝতে পেরেছিলো রুশ বিপ্লবের প্রভাব ভারতীয় রাজনীতিতে অনিবার্য। তাই ১৯১৮ সালে ঘোষিত হয়েছিল ‘মন্টেগু চেমসফোর্ড’ সংস্কার। কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় কংগ্রেসের সমাপ্তির পর ১৯২০ সালে মানবেন্দ্র নাথ ইউরোপ প্রবাসী ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ও আত্মনির্বাসিত মুজাহিদদের নিয়ে তাসখন্দে ভারতীয় কমিনিষ্ট পার্টি গঠন করে। তিনি ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টি গঠন করেন। ভারতের অভ্যন্তরে ২০ এর দশকে কমিউনিষ্ট পার্টি গঠনের উদ্যোগ বাংলাদেশে গ্রহণ করেন মোজাফ্ফর আহমেদ ও আব্দুর হালিম। অসহযোগ, সন্ত্রাসবাদ ও মুসলিম লীগের বৈঠকীয় রাজনৈতিক পটভুমিতে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির উদ্ভব। ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের আদি পর্বের অন্যতম কর্মী ছিলেন মোজাফ্ফর আহমদ । ’নবযুগ পত্রিকায় কাজ করার সময় মোজাফ্ফর আহমদ মার্কস বাদের প্রতি আকৃষ্ট হন । নজরুল স¤পাদিত ধুমকেতু পত্রিকায় ’দ্বৈপায়ন’ ছদ্দনামে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে লিখতেন।তিনি ছিলেন একজন লেখকও। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর অন্যতম হচ্ছে ’আমার জীবন ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্র্টি’ যেটি ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের উপর প্রকাশিত প্রামান্য গ্রন্থ । তাছাড়া তিনি ’কাজী নজরুল ইসলাম প্রসংগে’ নামে কবির জীবনী লিখেছেন । ’আমার জীবন ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি’ বইটিতে মোজ্ফাফর আহমদ মানবেন্দ্রনাথ রায়ের একটা পুর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত দিয়েছেন । তিনি একের পর এক ঘটনাক্রম দিয়ে রায়ৈর চরিত্রের দুর্বলতা রাজনৈতিক অসংগতির প্রসংগ পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন। ব্যক্তি বিশেষের প্রতি অকরুন মন্তব্যে বইটি ভারাক্রন্ত হলেও এটি ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রাথমিক যুগের একটি ঐতিহসিক দলিল । রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে তাঁর আর একটি পরিচয় তিনি অন্যতম নজরুল বিশেষজ্ঞ ।তিনি নজরুল এর জীবন কথার অন্যতম কথক ঠাকুর।তিনি ’কাজী নজরুল প্রসংগে’ বইটিতে কবি জীবনের একটা পূর্ণাঙ্গ পরিচয় খুটিনাটি সমেত পাঠকের কাছে হাজির করেছেন। বাদ দেননি কবির দুর্বলতার দিকগুলো। মোজাফ্ফর আহমদ সমাজ পরিবর্তনের অভিযানের স্বপ্ন দেখেছে। অভিযানের অংশগ্রহনের আহবান জানিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ব্যর্থ অভিযাত্রী ও বাংলাদেশের বৈপ্লবিক প্রত্যাশ্যার আদিদ্রষ্টা কমরেড মোজাফ্ফর আহমেদ। ‘কাফেলার সালার’ প্রবন্ধটিতে লেখক সিপাহী বিদ্রোহের পর ইংরেজদের মানসিকতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তাছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যেমন; আব্দুল জব্বার, আবুল কাশেম, আবুল হাশিম, ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী প্রমূখের রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও ঘটনাক্রমের উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রবন্ধে বিশেষ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে আবুল হাশেমের পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত। লাহোর প্রস্তাবের জের ধরে ফজলুল হক মুসলিম লীগ ত্যাগ করলেও আবুল হাশেম ত্যাগ করেননি। হাশিমের রাজনৈতিক কর্ম ও আদর্শে তরুণ মুসলিম শ্রেনী অনুপ্রাণিত হয়। আবুল হাশিম একই সাথে ইসলামের অনুশাসন প্রচার অনুরোধ গস্খহণ করেন। আবার কমিউনিষ্ট পার্টিও সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। আবুল হাশিম তার রাজনৈতিক জীবনে বেশ সফলই ছিলেন। তার সাধারণ সম্পাদকের কালে পূর্ব বাংলার মুসলিম তরুণরা ক্রমশ: ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত হয়। আবুল হাশিম তার রাজনৈতিক জীবনে শেখ মুজিব, শামসুল হক, তাজউদ্দিন, ও তোহার মতো রাজনৈতিক কর্মী রেখে যান। কিন্তু ৪৬ এর নির্বাচনের পর থেকে তার পতন দ্রুততর হতে থাকে। তার রাজনৈতিক পতনের বিন্যাসটা বেদনাদায়ক, ট্রাজিক নয়। রফিক কায়সার ‘ভাবের ঘরে চুরি’ প্রবন্ধে মূলত মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ও মুক্তিযুদ্ধের আগে বিশেষ করে ১৯৪৭ সালের পরবর্তী রাজনীতিবিদদের উপর লেখা বিভিন্ন বইয়ের সমলোচনা করেন। তিনি সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেন এম আর আখতার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’ বইটির।তিনি এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তা হলো স্বাধীনতার এক দশকের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ এবং তথ্যাবলির বিকৃতির কথা।‘আমি বিজয় দেখেছি’ গ্রন্থে এক পাক্ষিক হিন্দু সা¤প্রদায়িকতার কথা বাদ দিয়ে মুসলমান সা¤প্রদায়িকতার কথা তোলার আহ্বান জানান। বায়ান্ন থেকে একাত্তর সাল পযর্ন্ত ক্রমবির্বতনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিবৃত্তকে জোড়ালোভাবে তুলে ধরার দাবি জানান। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আওয়ামীলীগের কিছু নেতাকে অপরিনামদর্শী ভাবার পাশাপাশি নেতৃবৃন্দের স্বার্থপরের মতো ভারতে চলে যাওয়ার সমালোচনা করেন তিনি। মোশতাক আহম্মেদকে খল নায়ক, তাজউদ্দিন আহমেদ ও কামাল হোসেনকে সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব বলে তিনি আখ্যায়িত করেন। তাছাড়া তিনি, স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে শেখ মুজিব বা আওয়ামীলীগ কেন চট্ট্রগ্রামের আব্দুল হান্নানের মাধ্যমে স্বাধীনতার বার্তা প্রেরণ করেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মুজিব গ্রেফতার হওয়ার আগে সর্বশেষ সাক্ষাতকারী তাজউদ্দিন ও কামাল হোসেনকে কেন স্বাধীনতার বার্তাটি দেননি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি তিনি জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার গল্পতে সন্দেহের আঙুল প্রদর্শন করেন। নিয়াজী আত্মসর্মপনের সময় কেন যৌথ কমান্ড অরোরার পাশে বাংলাদেশী কোন প্রতিনিধি ছিল না এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন লেখক। ‘বোল বাঙালি উর্দু বোল’ এ প্রবন্ধে মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে র্উদু ভাষার প্রভাব কিভাবে এলো, কারা আনলো, তার আলোচনা বর্ণিত। উর্দু ব্যবহারের কারণে কারা সুবিধা পেলো তার ইতিবৃত্ত বর্ণনা আছে। এখানে বলা হয়েছে মুঘল ফৌজি ছাউনির জবান হিসেবে উর্দু ভাষার উৎপত্তি। উত্তর ভারতের কথ্য ভাষা, হিন্দুস্থানী ভাষা, আরবি লিপিমালা এবং আরবি-ফারসি শব্দ নিয়ে গড়ে উঠে উর্দু ভাষা। উর্দু ভাষা ছিল মূলত, ওই সময়কার ঢাকা ও মুর্শিদাবাদের দরবারি মানুষের মুখের ভাষা তবে বেশি ব্যবহার করতো ওই সময়ের বহিরাগত মুসলমান বণিক, সৈনিক, আমলা এবং ধর্মপ্রচারকরা। নবাবি আমলের পর কোম্পানির শাসনকালে আরবি, ফারসি এবং উর্দুর সমন্বয়ে এক ধরণের মিশ্র ভাষার শুরু হয়। গরীবুল্লাহ ও সৈয়দ হামজা মিশ্র ধারার কাব্য রচনা করতেন। তবে মুসলমান ভাষার সঙ্গে গ্রামীণ মানুষের ভাষার পাথর্ক্য বিরাজমান ছিল। এই ভাষা বাঙালি ধর্মান্তরিত মুসলমান তাদের কথ্য ভাষা হিসেবে আদৌ ব্যাপকতা লাভ করেনি। এ সময়ের আরেক উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্রশাসনের তিনটি শাখায় অর্থাৎ সেনা, রাজস্ব এবং বিচার বিভাগের দায়িত্বে ছিল বহিরাগত মুসলমান। উর্দু জানার জন্য এরা সুবিধা পেতো বেশি। তবে প্রশাসনে বাঙালি তথা হিন্দু স¤প্রদায় খুব একটা সুবিধা করতে পেতো না। ভারতবর্ষে বর্ণ প্রথার প্রভাবে এবং বহিরাগত মানসিকতার কারণে মুসলিম প্রশাসনের কাছে বাঙালি মুসলমান ছিল অপাঙক্তেয় শ্রেণী। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে বাঙালি মুসলমানদের পক্ষে পূর্ব পুরুষের অনেক সামাজিক আচার-আচরণ প্রাত্যহিক জীবন থেকে একেবারে ফেলে দেয়া যায় না। রফিক কায়সার তার এ প্রবন্ধে উনিশ শতকের মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার কথাই উল্লেখ করেছেন। ‘প্রাক নির্বাণ দীপের উদ্ভাস’ প্রবন্ধে লেখক বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিকদের সাহিত্য দর্শন, ব্যক্তি দর্শন এবং ভারতীয় দর্শন সর্ম্পকে আলোকপাত করেছেন। যাদের কথা তিনি এখানে বলেছেন তারা হলেন-রবীন্দ্রনাথ, রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, কবি সুধীন্দ্রনাথ, মাইকেল মধুসুধন দত্ত, বেন্থাম, জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল, ইমানুয়েল কান্ট, কাজী নজরুল ইসলাম সবশেষে হুমায়ুন কবিরের দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন। বঙ্কিম সম্পর্কে এখানে বলা হয়েছে পাশ্চাত্য দর্শন অনুশীলন করলেও বঙ্কিম পুরোপুরি পাশ্চাত্য দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হননি। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলা হয়, ‘রবীন্দ্রনাথকে দার্শনিক অভিধায় অভিষিক্ত করলে তার সাহিত্য কৃতি ও ব্যক্তি সত্তার প্রতি অবিচার করা হবে। আসলে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা চৈতন্যের স্বনির্ভরতা তাকে সুনির্দিষ্ট কোন তত্ত্বালোকের প্রতি প্রলুব্ধ করেনি। আমাদের চিন্তা ভাবনার দৈন্য এবং তত্ত্ববিদ্যার শূন্যতার কারণে আমরা রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভুল করে দার্শনিকের দায় এবং বোঝা চাপিয়ে দিয়েছি। এখানে ভারতীয় দর্শন সম্পর্কে লেখক বলেছেন, ভারতীয় দর্শন বিষয় বস্তুর দিক দিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত। ভারতীয় ধর্ম স¤প্রদায়ের ইতিহাস এবং ভাবাদর্শে নিন্দা-প্রশংসা ভারতীয় দর্শনের বিষয়বস্তু। অপরদিকে বস্তু ও ভাব, রাষ্ট্র ও সমাজ, জ্ঞান ও নৈতিকতা, সার্বিকতা এবং বিশ্বমুখীনতা ইউরোপীয় দর্শনের আলোচ্য বিষয়। ‘তিন পুরুষের রাজনীতি’ প্রবন্ধে লেখক কোম্পানীর শাসন আমল থেকে শুরু করে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক পর্যন্ত মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানদের রাজনৈতিক পরিচয়, তাদের নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দলের ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ফরায়েজী ও ওহাবী আন্দোলন থেকে এ অঞ্চলের মুসলমান প্রজা সংগ্রামের সূচনা। হাজী শরীয়ত উল্লাহ ফরায়েজী আন্দোলন এবং তিতুমীর ওহাবী মতবাদ ভিত্তিক আন্দোলন পরিচালনা করে ব্যর্থ হলেও মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজের রাজনৈতিক চেতনার বীজ নিহিত হয় এখানে। তারই ধারাবাহিকতায় মুসলমানদের নেতৃত্বদানের জন্য এগিয়ে আসেন আব্দুল লতিফ। যিনি বাঙালি মুসলমানদের নেতা হয়েও বাংলাদেশি বা বাংলাভাষা কোনটার সংস্পর্শে আসেননি। এরপর আসে ঢাকার নবাব পরিবারের চার পুরুষের রাজনীতির ইতিহাস। নবাব সলিমুল্লাহ পুর্ববাংলার মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার্থে ‘বঙ্গভঙ্গের’ নেৃতৃত্ব দেন। এ জন্য তার নিকটতম ও সমসাময়িক অনেক নেতার বিরাগভাজন হলেও বঙ্গভঙ্গের প্রশ্নে তিনি অটল থাকেন। এ কারণে তিনি মধ্যবিত্ত মুসলমানদের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তবে তিনিও সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এরপর শেরে বাংলা একে ফজলুল হক পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে আসেন। তার সম্পর্কে লেখকের মূল্যায়ন,- ‘শেরে বাংলার রাজনৈতিক জীবনটা ছিল আন্দোলন কেন্দ্রিক না, নির্বাচন ভিত্তিক। ভোট টানার চুম্বকীয় ক্ষমতা ছিল তার। রাজনৈতিক অঙ্গন ও মন্ত্রী পরিষদের প্রাধান্য লাভের জন্য তিনি যেমন নবাব ও উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রেখে গেছেন, তেমনি ভোটের জন্য তিনি ছিলেন সাধারণ কৃষক প্রজার কাছের মানুষ। তবে বাংলার স্বার্থের প্রশ্নে আপোষহীন ভূমিকা ও সীমিত পর্যায়ে হলেও কৃষক শ্রেণীর উপকার করায় তিনি পরিণত হয়েছিলেন তার সময়ের একজন অসাধারণ জন নেতায়। যিনি নিজেই ছিলেন রাজনৈতিক দলের উর্ধ্বে একটি স্বতন্ত্র্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। পুস্তকপীড়িত পণ্ডিতদের মতো রফিক কায়সারের কোনো লেখাই অহেতুক নির্ঘণ্টে ভারী হয়ে ওঠেনি। ফলে পাঠকের হাঁপিয়ে ওঠার কোনো আশঙ্কা নেই। গ্রন্থটি কলেবরে ছোট হলেও অত্যন্ত মূল্যবান তথ্যে এটি সমৃদ্ধ, যা ছাত্র-লেখক-গবেষক সবার জন্য খুবই গুরুত্ববাহী।

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!