User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তার গল্পে সমসাময়িক কিংবা সম্প্রতি ফেলে আসা অতীত অথবা আগামীর মানুষদের দৈনন্দিন টানাপোড়েন, অনুযোগ, প্রাপ্তির শুন্যতা অথবা শুন্যতার প্রাপ্তি, জাগতিক স্বার্থান্ধতা এবং প্রেম ও অপ্রেমের চিরাচরিত অথচ জটিল সমীকরণ যাদুকরী ভঙ্গিমায় তুলে এনেছেন। “বেলা অবেলার সঙ্গী- সানজিদাকে” উৎসর্গ করা “বেলা অবেলার গল্প” বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। ১৩টি ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন প্রেক্ষাপটের গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে চমৎকার এ বইটি। “রাস্তাটা ঢালু হয়ে নদীর দিকে নেমে গেছে” বাক্যটি দিয়ে শুরু হয়েছে প্রথম গল্প “পিণ্ডমেঘের আলো”। উত্তম পুরুষে বর্ণিত গল্পে একটি ঘুড়িকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় চরিত্র আজমত এবং তার বাবা ও তার বন্ধুদের উৎসাহ মোহময় ভঙ্গীতে দেখানো হয়েছে। একটা ঘুড়ির পিছনে কিশোর আজমতের ছুটে চলা এবং শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি আমাদের ভাবাবে। গল্পের শেষও হয়েছে আশ্চর্যজনকভাবে গল্পের ঠিক শুরুর মত। “বৃষ্টির দিন” গল্পটিতে রাজশাহীর কণা এবং রাঙ্গামাটির সুতপার আকস্মিক পরিচয় এবং দুজনের ব্যাক্তিগত স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ফ্ল্যাশব্যাক দিয়ে এগিয়ে গেছে গল্পের কাহিনী। একটা কোম্পানিতে তাদের যোগদানের পর অন্য কলিগদের অপুর্ব সম্মোহনের মাধ্যমে শেষ হয় গল্পটি, যেদিন আকাশ বৃষ্টিময় ছিলো। রাজুর মা’র মৃত্যুর পর রাজুর বাবার এবং রাজুর স্ত্রীর পৃথক স্মৃতিচারণায় শুরু হয়েছে “নেই” গল্পটি। সারা গল্প পড়ে শাশুড়ির প্রতি সরু চোখে তাকানো পাঠকের মন ‘নেই’জনিত শুন্যতায় ছেয়ে যাবে গল্পের শেষে এসে। এক-ই সাথে বর্তমান এবং অতীতের কথা বর্ণনায় এগিয়ে গেছে অসাধারন আরেকটি গল্প- “শিকার”। ব্যাংকের বড়কর্তার জবানিতে জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময় ডুরি আঙ্গুল লেনের এক বাসায় প্রাইভেট টিউশনি করতে গিয়ে চরম অস্বস্তিকর একটি ঘটনার স্মৃতির সাথে কাকতালীয় ভাবে যুক্ত হয় তার-ই ব্যাংকের মনিরা। বড়কর্তা আরও অবাক হয়ে যায় গল্পের শেষে যখন দেখে মনিরা সেই বাড়ীর-ই মেয়ে! আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনের নেওয়া প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’তে প্রকাশিত বাসের হেলপার রফিকের সাক্ষাতকারের মাধ্যমে রফিকের যে নতুন জীবন শুরু হয়, তা সহসাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নানা নাটকীয়তায় হারিয়ে যাওয়া মাকে ফিরে পেয়ে শুরু হয় রফিকের “আনন্দভ্রমণ”-এর গল্প। ট্রেনের তেল আর তরকারি কিংবা মাছবোঝাই ট্রাক চুরি করে আড়তদার ধনু মিয়ার কাছে বিক্রীর ঘটনা দিয়ে সাজানো হয়েছে বদি, আলফাজ, মতি আর সুমনের “চার সন্ত্রাসী” গল্পটি। ধনু মিয়ার উপর ক্ষ্যাপা এই চার সন্ত্রাসীর ধনু মিয়াকে জঘন্য প্রতিশোধ নেয়ার প্রাক্কালে তাদের করুণ পরিণতির মাধ্যমে শেষ হওয়া গল্পে পাঠক অজান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। “”উদ্ধার” গল্পে নাজিম সাহেবের হারিয়ে যাওয়া ছেলে নেহালকে খুঁজতে গিয়ে চট্টগ্রামগামী বাসে আসমা নামের মেয়েটির সাথে পরিচিত হয়ে হারানো ঘটনা মিলে যায় নাজিম সাহেবের। তারপর শুরু হয় তাকে উদ্ধারের জন্য যাত্রা। মুক্তিযুদ্ধকালীন গল্প- “নিশান”-এ ছোট্ট মাইদুলের চিরতরে মায়ের হাত ধরে নানাবাড়ি আসার পথে মা’র মৃত্যু এবং কয়েক বছর পর পাকসেনাদের একটি দলের কাকতালীয়ভাবে ঐ জায়গাতেই মৃত্যু লেখক আবেগের সাথে তুলে ধরেছেন। ইউনানি কবিরাজ হাকিম ইসমাইল আর তার বুদ্ধিমতী মেয়ে ঊর্মিকে নিয়ে জীবনযুদ্ধের অসাধারণ গল্প “শোধ”। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাকিমের বসত-বাড়ী রক্ষা এবং চতুর জয়নালকে শাস্তি দেওয়া আর স্বার্থপর ডাঃ আতিউল্লাহর প্রতি নাটকীয় প্রতিশোধের চটুল বর্ণনা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। “স্নান” গল্পের কাহিনী মেধাবী ও জেদী মেয়ে সুমনাকে তার অফিসের বড়কর্তা ইকবাল হাসান তার ব্যাক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টার মাধ্যমে এগিয়ে গেছে। পরবর্তীতে তার বিরদ্ধে নেয়া পদক্ষেপের মাধ্যমে গল্পের সমাপ্তি ঘটে। এ গল্পে লেখক বর্তমান সময়ের নারীদের প্রতি লোলুপ সমাজের অবস্থান এবং তার জবাব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। ভূতত্ব বিশেষজ্ঞ কাদেরের ভূমিকম্পাতংক অবচেতনভাবে লেখকের নিজের ভেতর নিয়ে আসার মাধ্যমে শেষ হয়েছে “মাটির দুলুনি” গল্পটি। বাস থেকে নেমে একুশে রেষ্টুরেন্টের ভেতর পাঁচ বছর আগে ভালবেসে বিয়ে করা রেহানা, তার বন্ধু তৌফিকের আগমন, জটিলতা, দূর্ঘটনা, এবং গোয়ালাবাজারের নির্জন বাড়িটিকে ঘিরে আরিফের স্মৃতিকাতরতা দিয়ে শুরু হয়েছে “হারানো বাড়ি” গল্প। গল্পের শেষে লেখা “সবকিছুর দেখা মেলে কি হারিয়ে যাবার জন্যই?” লাইনটা আমাদেরকে আরও নষ্টালজিক করে তুলে। শেষ গল্প “তাজমহল”-এ তাজমহলের কিছু অজানা তথ্য লেখক আসাদ আর আনিকার মাধ্যমে সুকৌশলে তুলে এনেছেন। তাদের দুজনের নাটকীয়তাময় ভালবাসা পাঠকের ভালবাসাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে। “বেলা অবেলার গল্প” আমাদের চেনা কিছু ঘটনার চমকপ্রদ সংকলন, যা আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়, ভাবাতে শেখায়, জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে শেখায়।