User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শুদ্ধস্বর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম প্রকাশ করে ওয়াসি আহমেদের কালাশনিকভের গোলাপ গল্পগ্রন্থটি। যদিও ১৯৭৫ সালে ওয়াসি আহমেদের প্রথম কাব্য গ্রন্থ 'শবযাত্রী স্বজন' প্রকাশিত হয়, এবং এর পর থেকেই বাঙলা সাহিত্যের উন্মুক্ত মঞ্চে ওয়াসি আহমেদের পথচলা কিছুটা সংকোচ, সঙ্গোপন আর মাপকাঠির গজ-ফিতায়। সদ্য প্রকাশিত "কালাশনিকভের গোলাপ" বইটিতে ওয়াসি আহমেদ তুলে এনেছেন আমাদের কঠিন, ধুসর কিংবা স্বচ্ছ বাস্তব, স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের উদ্বেলিত কলরোল কিংবা শ্যাওলা ধরা সভ্যতার খোলসে নাগরিক টানাপোড়েন অথবা ঘৃণ্য অসভ্যতার নষ্ট রাজত্বের চলমান জলছবি। প্রকাশের পর-ই ২০১৩ সালে প্রথম আলো- বর্ষসেরা বইয়ের মর্যাদা পায় "কালাশনিকভের গোলাপ"। বইটিতে সংযুক্ত হয়েছে ১১টি গল্প, যার প্রতিটির গায়ে গা ঘেঁষে বেড়ে উঠেছে গল্পগুলির ভেতরে ঢুকে যাবার অপ্রতিরোধ্য টান। অপূর্ব নির্মাণশৈলী, ঘোরলাগা মুগ্ধতাময় বর্ণনা, অনুভূতির গভীর এবং কাছের ছোঁয়া দিয়ে তিনি লিখেছেন প্রতিটি গল্প। শেষ মার্চের সন্ধ্যায় শহরে সন্দেহজনক একজনের পুটলিতে দায়িত্বরত পুলিশের পিস্তল পাওয়া যাওয়ার মধ্য দিয়ে শিরোনাম গল্প "কালাশনিকভের গোলাপ" এর শুরু হয়েছে। কবি ও একে-৪৭ এসোল্ট রাইফেলের নকশাকার মাইকেল কালাশনিকভের সাথে তার নিজের বিবেকের কথোপকথনের শেষ পর্যায়ে কালাশনিকভের মনে হয়, তার নকশাকৃত পিস্তলটি বর্তমান সভ্যতায় প্রাণ নাশে ব্যাবহ্রত হচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে।তারপরপর-ই কালাশনিকভ সিদ্ধান্ত নেয় নতুন কিছু আবিষ্কার করার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবিদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার মধ্য দিয়ে লেখক সুকৌশলে তুলে এনেছেন বর্তমান অস্থির সময়ের এক নির্মম সত্য। গার্মেন্টস কর্মী শরাবন তহূরার পুবাইল রেলস্টেশনে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় লেখক আসলে উদ্ধারকারী-আক্রমণকারীহিসেবে আমাদের দ্বৈত অবস্থান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন "উদ্ধার-পুনরুদ্ধার" গল্পে। গত হওয়া মায়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা মায়ের স্মৃতিজড়িত সুন্দিকাঠের আলমারির প্রতিটি ডালায়, তোরঙ্গে জমে থাকা আবেগের সুনিপুণ বর্ণনায় লেখক অতীত আর বর্তমানের সেতু রচনা করেছেন "সুন্দিকাঠের আলমারি" গল্পে। উত্তম প্রুষে বর্ণিত "পা" গল্পে অপারেশনে কেটে ফেলে দেয়া পায়ের স্মৃতি আমাদের নস্টালজিক করে দেয়। খেঁটে খাওয়া মানুষের ক্ষোভ আর অপ্রাপ্তির ছোট্ট একটি প্রতিশোধের কড়চা "চিনাবাদামের খোসা" গল্পটি। আর্মড পুলিশের এএসআই আলী নেওয়াজের একটি উপন্যাস পড়াকে কেন্দ্র করে তার বদলে যাওয়া এবং একটি বস্তি উচ্ছেদের অপারেশনে নির্মম একটি ঘটনার পুনারাবৃত্তি নিয়ে "নিরাপদ সন্ত্রাস" গল্পের পটভূমি। গল্পটির এগিয়ে যাওয়া আমাদের উজ্জীবিত করবে, বিস্তার আমাদের অনুরণিত করবে আর পরিণতি আমাদের ভাবাবে। সোনারগা যাদুঘরে বেড়াতে যাওয়া এ্যাড ফার্মের কর্ণধার জামিল আর সহকারী মিলা এবং গল্পের শেষে তাদের পরিণতি "কানামাছি" গল্পের মাধ্যমে লেখক আমাদের নোংরা সমাজের-ই ছায়াচিত্র এঁকেছেন। কয়েন, ফুল, কলম, মানুষকে অদৃশ্য করে দেয়া ম্যাজিকের মাধ্যমে শুরু করা হাত পেকে যাওয়া যাদ্দুশিল্পীর বড়সড় একটা কিছু ভ্যানিশ করে দেয়ার গল্প "হোয়াইট ম্যাজিক", যার আবেদন আমাদের মস্তিষ্কের কোষে চিন্তার স্ফূরণ ঘটাবে। একটি দৈনিকের অর্থনীতি পাতার রিপোর্টার তারেকের সেই সময়কার অর্থমন্ত্রী, অর্থনৈতিক সমস্যার খেরোখাতার হাস্যকর বিশ্লেষণ আর নানা দিক দিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর গল্প "ওয়ে আউট"। ভ্যান চালক আরজু'র বাবলা গাছে লেপ্টে থাকা একটা তাবিজ পাওয়া এবং তারপর তার দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তন ও তার আকস্মিক পরিণতির এক আবেগঘন গল্প "আরজু যা বুঝতে চেয়েছিল"। কিছু কিছু জায়গায় যদিও কাহিনীর প্রয়োজনে একটু হোঁচট খেতে হয়েছে, তবুও প্রতিটি গল্পের টান টান উন্মাদনা, অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গী এবং সামগ্রীক উপসংহার পাঠক মনকে ভাবিয়ে তুলবে, তারিয়ে তারিয়ে আস্বাদন করাবে। সমাজের গলি-ঘুপচিতে বেড়ে উঠা কানুন আর সংস্কার, মগজের প্রকোষ্টে শিকড় গজানো অসভ্যতার নোংরা চারা আর স্বপ্নের কাছে আজন্ম নতজানু কিছু গল্পের সংকলন "কালাশনিকভের গোলাপ"।