User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো থেকে বইয়ের নামকরণ যথার্থ। ড. আকবর আলি খানের অফুরান জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় অন্ধকারের উৎস হতে অন্ধকার বিদূরিত, পুরোপুরি আলোকিত। বাংলা সাহিত্যের মোনালিসা বনলতা সেনের স্বরূপ উদ্ঘাটনের প্রয়াস তাঁর প্রবন্ধগুচ্ছের মধ্যে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক। প্রতিটি প্রবন্ধই রীতিমতো মৌলিক গবেষণাধর্মী। কিন্তু তাঁর দাবি, লেখা হয়েছে রম্য রচনার আদলে। তবে ১৪টি সারণি বইটিকে নীতিনির্ধারক, গবেষক ও লেখকদের জন্য এক দরকারি হ্যান্ডবুকেও পরিণত করেছে। আকবর আলি খান জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেনকে অধিকতর মৌলিকত্ব দিয়েছেন। সমালোচনার দায়মোচনে তাঁর প্রয়াসে যত্ন ও দরদ উপচানো। সমালোচকেরা বলার চেষ্টা করেন যে বনলতা সেন কবিতায় অন্তত দুটি ইংরেজি কবিতার প্রভাব রয়েছে। এর একটি মার্কিনি কবি এডগার এলান পোর প্রথম প্রেমের নৈবেদ্য ‘টু হেলেন’ (মূল কবিতা ১৮৩১-এর, বইয়ে ১৮৪৫-এর পরিমার্জিত রূপটি ছাপা হয়েছে)। অন্যটি গ্রিক কবি হোমারের ইলিয়াডের চ্যাপম্যানকৃত অনুবাদ পড়ে রোমান্টিক ইংরেজ কবি জন কিটসের লেখা চতুর্দশপদী। আকবর আলি খানের মতে, এসবের প্রভাব ‘অতি নগণ্য’। বাঙালি সংস্কৃতির প্রগাঢ় জারকরসেই বনলতা সেন সিক্ত। তবে পো প্রেমিকা হেলেনের ‘ক্ল্যাসিক ফেস’ কী শ্রাবস্তির কারুকার্য, ‘পারফিউমড সি’ কী দারুচিনি দ্বীপ—সেই প্রশ্নের গুঞ্জরন এড়ানোর নয়। সন্দেহ কী, ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছে’ এর চৌকস অনুবাদ কিটসের সনেটের প্রথম লাইন ‘মাচ হ্যাভ আই ট্রাভেলড ইন দ্য রিয়েলম অব গোল্ড’ হতে পারেই। এমনকি পো ও কিটসের বাইরেও ‘জোনাকির রঙে ঝিলমিল’ সন্ধ্যার সঙ্গে ইয়েটসের ‘দেয়ার মিডনাইটস অল গ্লিটার’ ঠিকই স্মরণ করিয়ে দেবে। জীবনানন্দ দাশ নিজেই বনলতা সেনের ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন। আনাড়িরা বলবেন, কাঁচা। আকবর আলি খান বলেছেন, ‘প্রহেলিকা’। পো ও হেলেন সম্পর্কে এত কথা জীবনানন্দ জানতেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আকবর আলি খান। তবে ইংরেজির শিক্ষক হওয়ায় এর বিপরীত সম্ভাবনা হয়তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। বইটিতে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ, ভাষা ও ধর্মের সঙ্গে তার সম্পর্ক, জাতীয়তাবাদী বিপ্লবের তাৎপর্য, পরিবেশ সমস্যা বিশেষ করে টিপাইমুখ বাঁধ, বাংলাদেশ অর্থনীতির সবলতা ও দুর্বলতা, শহুরে গরিবির রকমফের, ব্যাংক-ব্যবস্থায় নৈতিকতার টানাপোড়েন গভীরতায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে বইটিতে হরতালসর্বস্ব রাজনীতির মুখোশ খুলে দেওয়া, ধর্মের সঙ্গে বাঙালি মুসলিমের আত্মপ্রবঞ্চনা এবং সংবিধান সংশোধনবিষয়ক সুপারিশ বইটিকে সময়োপযোগী ও সমৃদ্ধ করেছে। পাকিস্তানি আমলের ‘আজগুবি’ জাতীয়তাবাদের পাকচক্রে আজও আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। ধর্মেই মানুষের প্রথম পরিচয়, ভারতীয় উপমহাদেশের সব মুসলমান একটি জাতি—এই পাকিস্তানি ভুয়ো দর্শনের লিগেসি আজও আমাদের মানুষ হতে বাধা দিচ্ছে। আকবর আলি খান লিখেছেন, ‘ইসলামি উম্মাহর আদর্শকে আরবিভাষী মুসলমানদের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংলগ্ন ভূখণ্ডে বসবাসকারী আরবরা কমপক্ষে ২২টি জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত।’ (পৃ. ৮৯)। এটা পাঠে পাঠকদের মনে পড়বেই, বাহাত্তরের সেক্যুলার সংবিধানে ফেরার প্রবক্তাদের অনেকে ইতিমধ্যে ক্লান্ত ও বিভ্রান্ত। তাঁরা ভোটের রাজনীতির কারণে সংবিধান থেকে উম্মাহর গন্ধ মুছতে দোদুল্যমান, পলায়নপর। সংবিধান সংশোধনে লেখকের ভাবনা ২০১০ সালে প্রকাশিত তাঁর হাম্পটি ডাম্পটি বইয়েও দেখেছি। কিন্তু পরিহাস হলো, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ তাঁর সুনির্দিষ্ট সুপারিশগুলো সংসদের বিশেষ কমিটির প্রতিবেদনে অগ্রাহ্য থেকেছে। চরমতম পরিহাস হলো, এসব নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কোনো আলাপ-আলোচনা পর্যন্ত নেই। বুদ্ধিজীবীরাও নির্বাক। তবে এ নিয়ে উচ্চকিত হওয়ার সময় শেষ হয়ে যায়নি। আকবর আলি খান যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলোকে বাদ দিয়ে আমরা অবশ্যই কোনো গণতান্ত্রিক সংবিধান পেতে পারি না। তাঁর ‘ক্রীড়াতত্ত্ব’ আমাদের ‘রাজনীতিবিদদের’ জন্য অবশ্য পাঠ্য। বিশেষ করে, বিরোধী দলের নেতার প্রতি সরকারপ্রধানের সাম্প্রতিক ‘খাল কেটে কুমির আনা’ প্রসঙ্গে আকবর আলি খানের ‘কয়েদিদের উভয় সংকট’ (প্রিজনার্স ডিলেমা) অতীব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তাঁর ক্রীড়াতত্ত্বের (গেম থিওরি) সার কথা হলো, যুক্তভাবে দোষী দুই আসামিকে পুলিশ কয়েদে পাঠায়। কিন্তু পুলিশের কাছে তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। পুলিশ এই অবস্থায় তাদের একজনকে আরেকজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে উৎসাহিত করতে চারটি প্রস্তাব দেয় (পৃ. ১১৭)। এই প্রস্তাবগুলোর মূল কথা হলো, তারা যদি পরস্পরকে বিশ্বাস করে, তাহলে মাত্র এক বছরের সাজা ভোগ করে তারা মুক্তি পাবে। কিন্তু এই গেম থিওরির মজাটাই এই যে তারা নিজেদের সন্দেহ ও অবিশ্বাস করে এবং এর ফলে তারা যুক্তভাবে সর্বোচ্চ সাজা ভোগ করে। অবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশে বহুকাল ধরে সর্বোচ্চ সাজা ভোগের রাজনীতি চলছে। আকবর আলি খানের হরতাল-সংক্রান্ত বিশ্লেষণ সরকারি প্রচারমাধ্যম বিশেষ করে বিটিভি ব্যাপকভাবে প্রচারে আনন্দ পেতে পারে। একটি হরতালে গড় ক্ষতি ৬০ মিলিয়ন ডলার। ইউএনডিপির মতে, ১৯৯১-২০০০ সময়কালে হরতালের মোট ক্ষতি জাতীয় উৎপাদনের ৩ থেকে ৪ শতাংশ। আকবর আলি খান মনে করেন, এসব তথ্য অতিরঞ্জিত। এটা বড়জোর দশমিক ৫ শতাংশ হতে ১ শতাংশ হতে পারে। তাঁর মন্তব্য, ‘সম্ভবত এ জন্যই রাজনৈতিক অস্থিরতার বড় প্রভাব অর্থনীতিতে দেখা যায় না।’ হরতালের ক্ষতি বড় করে দেখালে বিরোধী দলকে আরও হরতাল দিতে উন্মাদনায় পেয়ে বসে। বরং সত্যিটা বললে হয়তো তারা কিঞ্চিৎ হলেও নিরুৎসাহিত হতে পারে। আকবর আলি খানের পাণ্ডিত্যপূর্ণ বাক ও বাক্যশৈলী অসাধারণ। নান্দনিকতায় যুক্তিশক্তির বহিঃপ্রকাশের এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। তাঁর রূপকল্প ও গাঁথুনি অবশ্যই চেনা রম্য নয়, এক অনিন্দ্যসুন্দর নির্ভার গদ্য।
Was this review helpful to you?
or
‘অন্ধকারে উৎস হতে – সাহিত্য, সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতি সম্পর্কে আলোর সন্ধান’ গ্রন্থটি অর্থনীতিবিদ ও সাবেক আমলা ডঃ আকবর আলি খানের দীর্ঘ গবেষণার ফসল। যদিও গ্রন্থটি বেশ কিছু জটিল বিষয়ের প্রবন্ধে সমৃদ্ধ, তারপরও গবেষণা গ্রন্থের কঠিন কঠোর ভাব এতে নেই। বরং বলা চলে সাধারণ পাঠকের জন্যই লেখক অনেক যত্নের সঙ্গে প্রবন্ধগুলো রচনা করেছেন। নামকরণ প্রসঙ্গে বইয়ের লেখক ভূমিকায় লিখেছেন, “ ‘অন্ধকারে উৎস হতে’ বাঙালি জীবনের কিছু জটিল ও দুর্জ্ঞেয় প্রহেলিকা সম্পর্কে আলোর অন্বেষা”। সাহিত্য, সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির দুর্গম অঞ্চলে আলো জ্বালিয়ে নতুন কিছু দিক উদ্ভাসিত করার সচেতন প্রয়াস দেখা যায় আলোচ্য গ্রন্থে। বইটিতে ছয়টি প্রবন্ধ রয়েছে যাদেরকে লেখক চারটি ভাগে ভাগ করেছেন- সাহিত্য, সমাজ ও রাষ্ট্র, পরিবেশ এবং অর্থনীতিতে নামে। যদিও বিষয়বস্তুগুলোর নিজেদের মধ্যে কোনো মিল নেই তারপরও প্রতিটি প্রবন্ধই পাঠকের সমান মনোযোগ আকর্ষণ করে। এখন একে একে প্রবন্ধগুলোর দিকে নজর দেয়া যাক। ১/ প্রথম প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের চির রহস্যময় চরিত্র ‘বনলতা সেন’কে নিয়ে। হ্যাঁ, সেই বনলতা সেন যিনি জীবনানন্দকে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিলেন, কিন্তু সাহিত্য-বিশ্লেষকদের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। নানা মুনির নানা মতের মতোই নানান সাহিত্য সমালোচক নিজেদের মতো করেই ব্যাখ্যা করেছেন জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি। যখন বিশ্লেষকরা ধারণ করছিলেন যে তারা বনলতার পরিচয় উদ্ঘাটন করেছেন তখনই দৃশ্যপটে আকবর আলি খানের আবির্ভাব। তিনি ২০০১ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ বইয়ে বনলতা সেনকে নিয়ে নিজের ব্যাখ্যাটুকু সংক্ষেপে তুলে ধরেছিলেন, যদিও ওটাকে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা বলা চলে না। লেখক নিজের ভাষায়, ‘এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু লেখার আগে আমি পাঠকদের প্রতিক্রিয়া দেখতে চেয়েছিলাম’। “অন্ধকারে উৎস হতে উৎসারিত আলো: নতুন আলোকে বনলতা সেন” প্রবন্ধে লেখক তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেছেন, সাথে সাথে পূর্ববর্তী সমালোচকদের ব্যাখ্যার দুর্বলতাটুকু ধরিয়ে দিয়েছেন। অধিকাংশ জীবনানন্দ গবেষক যেখানে ‘বনলতা সেন’ কবিতার textual criticism বা বিশ্লেষণমূলক আলোচনার প্রয়োজন মনে করেননি সেখানে আকবর আলি খান কাজটা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন এতে করে কবিতাটির নতুন অর্থ আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়। শুধু তাই নয়, তিনি চমকে যাওয়ার মতো এক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যা যেকোনো সাহিত্যানুরাগীকে অবাক করে দেবে। তিনি কবিতাটির দার্শনিক ভিত্তি উন্মোচিত করে এর গূঢ় বক্তব্যে আলো ফেলে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। আলোচ্য প্রবন্ধে একই সাথে জীবনানন্দ-কৃত ‘বনলতা সেন’ কবিতার ইংরেজি অনুবাদের প্রহেলিকা, জীবনানন্দের বিভিন্ন কবিতায় চিত্রিত বনলতাদের তুলনা এবং ‘বনলতা সেন’ কবিতায় ইংরেজি কবিতার প্রভাব আলোচিত হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, উক্ত প্রবন্ধ সাহিত্যাঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলবে। ২/ বইয়ের দ্বিতীয় প্রবন্ধ ‘বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ: কতিপয় প্রাসঙ্গিক ভাবনা’। জাতীয়তাবাদ বর্তমান বিশ্বে এক প্রহেলিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্নদাশংকর রায় গত শতাব্দীর বিশের দশকে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, “ যে কারণে এখন ছোট ছোট কারবার টিকতে পারছেন না, পৃথিবীব্যাপী combine গড়ে উঠছে । ঠিক সেই কারণে একদিন ছোট ছোট রাষ্ট্র টিকতে পারবে না, মহা-দেশব্যাপী মহারাষ্ট্র গড়ে তুলতেই হবে”। অথচ দেখা গেল মহাদেশ ভেঙ্গে গড়ে উঠেছে বহু নতুন নতুন জাতিরাষ্ট্র। গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক থেকে এ দশকের শু পর্যন্ত আশি বছরে মোট জাতি রাষ্ট্রের সংখ্যা ৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯২। এর পেছনে কারণ কী? তা ই খুঁজে ফিরেছেন আকবর আলি খান আলোচ্য প্রবন্ধে। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আলোকে। ভাষা ও ধর্মের সাথে জাতীয়তাবাদের সম্পর্ক তিনি খুঁজে ফিরেছেন ইতিহাসের পাতায়, দেখিয়েছেন কার কতোটুকু ভূমিকা। একই সাথে primordial ও instrumental জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গে এসেছেন, যুক্তি ও ইতিহাসের আলোকে এই দু’ঘরানার ঐতিহাসিকদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন। সবশেষে আছে জাতীয়তাবাদী বিপ্লবের তাৎপর্য নিয়ে নিয়ে দু’চার কথা। ৩/ আলোচ্য গ্রন্থের ‘সমাজ ও রাষ্ট্র’ খণ্ডের দ্বিতীয় প্রবন্ধ আলো ফেলেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার উপর। ‘বিসমিল্লায় গলদ: বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাত’ নামক প্রবন্ধের ভূমিকায় লেখক রাজনৈতিক অস্থিরতা মূল অনুসন্ধানে নেমেছেন। এখানে তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আলোকে এবং সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের বক্তব্য আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরেছেন। সাবেক একজন আমলা হিসেবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত প্রবন্ধটি পাঠককে ভাবায়। সবশেষে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে game theory ‘র আলোকে সংঘাত নিরসনের কিছু প্রস্তাব পেশ করেছেন যা এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। ৪/ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাব্যথার একটি কারণ হয়েছ দাঁড়িয়েছে ভারতে নির্মিতব্য টিপাইমুখ বাঁধ। আকবর আলি খান সরকারে সেচ ও পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ছিলেন। তাই তাঁর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ করেছেন ‘পরিবেশ-বিনাশী টিপাইমুখি বাঁধঃ ঝুঁকির রাজনীতি ও অর্থনীতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে। একদিকে ভারত সরকারের স্বার্থ, অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে আলোচ্য বাঁধের ফলে বাংলাদেশেরই বেশি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি, লাভের গুড় পাতে পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই প্রবন্ধের শেষাংশে টিপাইমুখ বাঁধ প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারে সম্ভাব্য ভূমিকার বিষয়ে আলোকপাত করেছে সাবেক এই আমলা। গুরুত্বপূর্ণ এইসব প্রস্তাব সরকার বিবেচনা করতে পারে কিংবা এইসব প্রস্তাব আমলে নিয়ে নিজদের কার্যপরিধি ঠিক করতে পারে। এতে সবারই লাভ। ৫/ বইয়ের ৫ম প্রবন্ধের নাম ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: আশা নিরাশার দোলাচল’। নামটাই প্রবন্ধের বক্তব্য তুলে ধরছে। তলা-বিহীন ঝুড়ি বলে খ্যাত বাংলাদেশের জন্মের সময় বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদের ধারণা ছিল এদেশ কখনো অর্থনৈতিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু ৪০ বছরে নৈরাশ্যবাদদের এই এইসব অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান বিগত ষাট বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছেন যে পৃথিবীর অন্যান্য অনুন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে আলোচ্য প্রবন্ধে। কিন্তু এদেশের অর্থনীতির সীমাবদ্ধতাও রয়েছে যা কাটিয়ে ওঠার কিছু সুপারিশ তিনি দাখিল করেছেন। ৬/ সর্বশেষ প্রবন্ধ ‘ব্যাংক ব্যবস্থা ও নৈতিকতা-বোধ’। লেখক ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈতিকতার প্রয়োজন কেন তার উত্তর দিতে গিয়ে লিখেছেন, “ আজকের বিশ্বের লোভ-তাড়িত অন্তর্বিস্ফোরণের ফলে ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার বিপন্ন হচ্ছে। কর্পোরেট জগতে ঘটছে পৌনঃপুনিক রগরগে কেলেঙ্কারি, ব্যাংক-ব্যবস্থায় নৈতিকতা-বোধ আজ আর মুষ্টিমেয় বিবেকবান ব্যক্তিদের বিমূর্ত আদর্শ নয়। ব্যাংক-ব্যবস্থায় নৈতিকতা আজকের বিষের জীবন মরণ সমস্যা”। একজন অর্থনীতিদের দৃষ্টিতে লেখক বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈতিকতার বিভিন্ন দিক আলোচনা করেছেন। সবশেষে লেখকের ভাষারীতি নিয়ে কিছু না বললেই নয়। অত্যন্ত জটিল কিছু বিষয়ে লিখেছেন আকবর আলি খান, কিন্তু যেকোনো পাঠক এতে কামড় বসাতে পারবে। স্বাদু গদ্যে তিনি প্রহেলিকাময় কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন যা প্রশংসনীয়। বইয়ের ফ্লাপে লেখা আছে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় দেশ পত্রিকায় এই লেখকেরই ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, 'এই লেখক লিখতে জানেন’। উক্ত গ্রন্থ পাঠ শেষে আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি হলো- এই লেখক শুধু লিখতেই জানেন না, বরং অনেক ভালোই লেখেন।