User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Great book
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার একটা বই। বাদশাহ হুমায়ূনের বিচিত্র এক স্বভাব। বিচিত্র বিষয় নিয়ে জানার তার আগ্রহ। তাঁর আচরণ খুবই সরল, আর ক্ষমাশীল। অসাধারণ এক ব্যাক্তিত্ব এই বাদশা হুমায়ূন। মানুষের প্রতি তার মায়া মমতা ভালোবাসা সত্যিই অতুলনীয়। তিনি মানুষ হিসেবে যেমন অদ্ভুত তাঁর ভাগ্য টাও তেমন অদ্ভূত। বইটির মাধ্যমে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হবে সবার আশাকরি।
Was this review helpful to you?
or
Greatest one
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া সবচেয়ে সেরা বই এটি
Was this review helpful to you?
or
আমি যদিও ইতিহাস জানার বিষয়ে অত আগ্রহী না। কিন্তু হুমায়ূন আহামেদ ইতিহাস গুলোকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা সত্যি অসাধারণ। আমার পড়া অন্যতম সেরা বইয়ের কাতারে এটাকে আমি রাখছি।
Was this review helpful to you?
or
একটা ঐতিহাসিক কাহিনী এত সুন্দর ভাবে উপন্যাস এর আলোকে প্রকাশ করা হুমায়ূন স্যার এর দ্বারা ই সম্ভব। অসাধারণ লেগেছে বইটি
Was this review helpful to you?
or
#আড্ডাখানায়_রকমারি #রিভিউ_২০২৩ বই: বাদশাহ নামদার ?প্রারম্ভিক কথা: ইতিহাসের নাম শুনলেই মনে হয় এ তো একঘেয়ে এক বিষয়। ইতিহাস সম্পর্কে কিছু পড়া মানেই যেন ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়া। ইতিহাসকে কেন এত সাল,এত স্থান, নামের আড়ালে বাঁধা হয় যে আসলে কী ঘটেছিল সেই সময়ে মনে রাখাটাই কঠিন হয়ে যায়?ইতিহাসও তো এমন আনন্দায়ক উপায়ে বর্ণনা করা যায় যা হৃদয়ে সুক্ষ্ম এক ছিদ্র রেখে যেতে পারে যেন মনে হবে আরো একটু খানি জানতে পারতাম যদি। 'বাদশাহ নামদার' সে ইতিহাসের-ই 'নিরানন্দ' হওয়ার অপমানটা বেশ খানিকটা গুছিয়ে দেয়। ?বইকথন: বাবরের পুত্র হুমায়ূন, হুমায়ূনের পুত্র আকবর পৃথিবীর ইতিহাসে বলা হয় 'আকবর দ্যা গ্রেট',আকবর পুত্র জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাহান, শাহজাহান পুত্র আওরঙ্গজেব। ইতিহাসের পাতায় মোঘলদের আমল নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এ বইয়ে তার একাংশ মোঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট 'বাদশাহ আকবর'কে নিয়ে কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। সম্রাট বাবরের মৃত্যু,বাদশাহ হুমায়ুনের সিংহাসনে আরোহণ, ভাইদের রাজ্য দখলের রাজনীতি,শের শাহ কর্তৃক বারংবার সাম্রাজ্য আক্রমণ, পিতার ওয়াদা রক্ষা, চিত্রাঙ্কন ও কবিতার প্রতি হুমায়ূনের অনুরাগ, সতীদাহ থেকে এক কিশোরীকে উদ্ধার, বিপদগ্রস্ত হুমায়ূনের অদ্ভুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সম্রাটের একাধিক বিবাহের প্রতি আসক্তি, হুমায়ূনের সর্বশেষ স্ত্রীর অলৌকিকভাবে ইচ্ছা পূরণ,সর্বোপরি হুমায়ূনের দয়া ও দানশীল মনোভাব। ?বই পর্যালোচনা: পানিপথের যুদ্ধের পর সম্রাট বাবরের জন্য শরবত তৈরি করার সময়ে আগ্রার দিক থেকে বিশাল অশ্বারোহী বাহিনীর সাথেই প্রথম আগমন ঘটে বাদশাহ হুমায়ূনের। বাদশাহ হুমায়ূন পিতা বাবরকে একটি মূল্যবান বস্তু উপহার দেন এবং তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই এমন এক কাণ্ড ঘটান যার ফলে বাবর হুমায়ূনের প্রতি ক্রুদ্ধ হন। বাদশাহ হুমায়ূন ছিলেন অলস,আরামপ্রিয়,একাকিত্বে থেকে কবিতা লেখা ও ছবি আঁকা ও জ্ঞান চর্চায় আগ্রহী যা রাজপুরুষের চরিত্রের জন্য উপযুক্ত না। পুত্র হুমায়ূনকে রক্ষা করতে গিয়ে সম্রাট বাবর এক ব্যাধিতে মৃত্যুবরণ করলে তিন দিনের মাথায় হুমায়ূন সিংহাসন লাভ করেন ফলে ভাইদের ঈর্ষার পাত্র হন। সিংহাসন লাভের জন্য মির্জা কামরান হুমায়ূনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন এমনকি তিনি রাজত্ব লাভের বিপরীতে ভাইকে জীবিত শত্রুর হাতে তুলে দেয়ার চুক্তি করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। মির্জা হুমায়ূন ভাইয়ের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েও বিশ্বাসঘাতক ভাইকে শাস্তি দিতে পারেননি। বাদশাহ হুমায়ূন বৈচিত্র্যময় চরিত্রের অধিকারী হলেও পারস্য সম্রাট শের শাহও কম অদ্ভুত নন। তার প্রতিপক্ষ হুমায়ূনের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও সম্মান ছিল অসীম। হুমায়ূন-পত্নী বেগা বেগম শের শাহ এর হাতে ধরা পড়ার পরও তার জন্য দোয়া করেন যেন তিনি কখনো কোন যুদ্ধে পরাজিত না হন।কাহিনী চলাকালীন আমরা হুমায়ূনসহ বিভিন্ন সম্রাটের উদ্ভট সব শখ ও কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। রত্ন, অর্থ, জ্ঞান, জাদুবিদ্যার বই বা হাতি-ঘোড়া সংগ্রহ ছাড়াও 'মানুষ' রাখার শখের কথা উঠে এসেছে।বাঙ্গালমুলুক থেকে আসা আমের শরবত করার কাহিনী থেকে প্রত্যেকটা বর্ণনা -ই যেন চোখে ভেসে ওঠে। এত বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের মধ্যেও বৈরাম খাঁ-র আনুগত্য ও বুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়েছি বারবার। দেখতে সুদর্শন না হলেও সাহস, বুদ্ধি আর সম্রাটের প্রতি আনুগত্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন বৈরাম খাঁ। রাজ্যহারা সম্রাট যখন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ পথে পথে ঘুরছেন,সৈন্যদের বেতন পরিশোধ করার অর্থও তার নেই বৈরাম খাঁ তখনও হুমায়ূনের সঙ্গ ছাড়েননি। তবে শেষমেশ তার পরিণতিটা মেনে নেওয়া যায় না। এত বছর সম্রাট সেবার ফল এরকম ছিল? আসলে কী তার শেষ সেখানেই হবার কথা? আসহারি,জওহর আবতাবচি, বাহাদুর শাহ, আকিকা বেগম, অম্বা, হরিশংকর,ভিসতি নিজাম,শাহ তামাস্প,লছমি বাই,গুলবদন,উছি বেগ, ইসলাম শাহ, হুমায়ূন মাতা গুলরুখ বেগম ও হুমায়ূনের হুবহু চেহারার মুচির আবির্ভাব ইতিহাসের এক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে তুলে ধরে। ?বইপাঠে আমার উপলব্ধি: কোথায় যেন পড়েছিলাম ইতিহাসের সার-সংক্ষেপ করা যায়না। তাই সে ব্যর্থ চেষ্টাটা আমিও করলাম না। ইতিহাস পরিবর্তন করা যায় না, পূর্বপুরুষের কিছু স্বভাব তাই আজও দেখা যায় আমাদের মধ্যে। হয়তো 'বাদশাহ নামদার' আপনাকেও ঘুরিয়ে আনতে পারে অতীতের সে সময়টায় যে সময়টার কথা মনে পড়লে দুঃখ পাবেন, কখনো কখনো হয়তো বিজয়ীর হাসি হাসবেন কখনো বা কোন এক ঘটনা ঘটুক চাইবেন না কিন্তু ইতিহাস আপনাকে সে সুযোগটা দিবে না। সময়ের কাছে সবাই অসহায়। ?বই হতে প্রিয় কিছু উদ্ধৃতি: ▪️"গারদেশে গারদূন গারদানান রা দার্ ক কার্ দ বার সারে আহ্ লে তামীজ ভা নাকেসান মা মারদ কারদ" অর্থ: ললাটের এমনই লিখন যে, সে শ্রেষ্ঠ জনকে মাটিতে মেশায় যোগ্যদের মাথার উপর অযোগ্যদের বসায়। ▪️"দুশমান আগার বেখা'হাদ সাদ হেজার বাদাম চেবাশাদ বালকে অনচে খোদা মিখাহাদ ইয়াকবার হামান বাশাদ" অর্থ: শত্রু আমার যতই অনিষ্ঠ কামনা করুক তাতে কিছুই হবে না। ঈশ্বর যা মঞ্জুর করবেন তাই হবে আমার ভাগ্যলিপি। বইবৃত্তান্ত: বইয়ের নাম: বাদশাহ নামদার লেখক: হুমায়ূন আহমেদ জনরা: ইতিহাস পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৩০ ধরন:হার্ডকভার প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ প্রকাশকাল: ২০১১ মলাটমূল্য: ৪৫০ টাকা রিভিউ লেখা: তাহেরা তানজিল বইছবি: তাহেরা তানজিল
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস কাউকে কাউকে মনে রাখে, কাউকে রাখে না। বৈরাম খাঁ'র বীরত্বগাথা ইতিহাস মনে রেখেছে। কাশেম খাঁ'র বীরত্বগাথা মনে রাখেনি।' কিন্তু একথা আমাদের লেখক 'হুমায়ূন আহমেদ' ঠিকই মনে রেখেছেন। উল্লেখ করেছেন তার ঐতিহাসিক বই 'বাদশাহ নামদার' এ। দেখিয়েছেন একজন বীরের বীর হয়ে ওঠার পেছনে কত বড় মনের মানুষকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। সম্রাট বাবরের পুত্র মোঘল সম্রাট হুমায়ূন কে নিয়ে লেখা 'বাদশাহ নামদার'। ভারতবর্ষের অন্যতম সম্রাট হওয়া সত্বেও যার মধ্যে একজন সম্রাটের চরিত্রের লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া ছিল কষ্টের বরং তিনি ছিলেন একটু উদাস স্বভাবের জ্ঞানপিপাসু সম্রাট। শাস্তির ব্যবস্থা না করে যিনি নির্দিধায় নিজের চিরশত্রুকে পর্যন্ত ক্ষমা করেছেন। হাজারো অন্যায় করা সত্বেও যিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন নিজের আপন ভাইকেও। জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে ছিল তার অসাধারণ আগ্রহ যার জন্য নিজের গোটা একটা লাইব্রেরীও ছিলো তার,তিনি যেখানে যেতেন তার লাইব্রেরীও তার সাথে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা রাখতেন। অথচ তার এই দুর্বলতাকে উপজীব্য করেই শত্রুবাহিনীরা বিভিন্ন যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারত। কিন্তু সম্রাটের সবথেকে কাছের কিছু লোকজন ছিল যারা সবসময়ই তাকে ছায়া দিয়ে গিয়েছে ,থেকেছে সম্রাট হুমায়ূনের সব বিপদ আপদে। ঐতিহাসিক বই হলেও বইতে ইতিহাসের সাথে সাথে পেয়েছি শিক্ষা, পেয়েছি একজন সম্রাটের জীবনের বিভিন্ন উত্থান পতন। কল্পনায় দেখেছি রাজ্যের সম্রাট হওয়া সত্বেও নিজের সন্তানের প্রতি কিভাবে একজন সম্রাট বিনয়ী আচরণ করতে পারে। কিভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে পারে নিজের সন্তানের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে। আবার দেখেছি রাজপ্রাসাদ ছেড়ে একজন রাজ্যহারা সম্রাট কতটা অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে পথে পথে যাযাবরের মত। তবে সম্রাটের সবথেকে বড় হাতিয়ার ছিলো তার বিশ্বস্ত সহযোগী যারা সম্রাটের কঠিন সময়েও তার পাশে ছায়ার মত থেকেছেন, থেকেছেন তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী যার গর্ভেই এসেছিল 'আকবর দি গ্রেট'। আবার বাংলায় প্রবেশ করে কিভাবে এখানকার নদ-নদী আর আবওহাওয়া তাকে মুগ্ধ করেছিলো এবং এখানের অন্যতম সুস্বাদু খাবার সম্রাট কে কতটা মুগ্ধ করেছিলো তার ও বর্ণনা পাওয়া যায়। বাংলায় এসে সতীদাহ প্রথানুযায়ী সদ্য বিবাহিত এক কিশোরী কে কিভাবে তিনি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে নিজের প্রাসাদে আশ্রয় দিয়েছিলেন তা যেন অন্যতম এক বিষ্ময়। তবে বইয়ের শেষ টা পড়ে হয়ত পাঠক অবাক হতে পারেন। শেষ টা হয়ত পাঠকদের ধারণার বাইরে। বইটার নাম অনুসারে প্রচ্ছদ টা আসলেই দারুণ লেগেছে আমার কাছে। প্রচ্ছদ শিল্পী 'ধ্রুব এষ' এর করা অন্যতম সেরা প্রচ্ছদ বলবো এটাকে। ঐতিহাসিক বই হলেও 'হুমায়ূন আহমেদ' এর কলমের জাদু তে বইটা এতটাই সুখপাঠ্য হয়েছে যে সব শ্রেণির পাঠক ই বইটা পড়ে আনন্দ পাবে। জানতে পারবে গল্পের ছলে ইতিহাসের নানান কথা। কল্পনায় দেখতে পাবে ঐতিহাসিক বিভিন্ন চিত্র সাথে উপলব্ধি করতে পারবে মোঘল আমলের সম্রাট দের আধিপত্য ও শৌর্যবীর্য। বইঃ বাদশাহ নামদার লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৫০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
বাদশাহ হুমায়ুন কতোটা অসাধারণ ভাবে তার জীবন পরিচালনা করেছিলেন কতটা দয়ালু ছিল।তার কিছুটা ইতিহাস এখানে খুজে পাওয়া যায় ।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ বাদশাহ নামদার লেখকের নামঃ হুমায়ূন আহমেদ রিভিউ দাতাঃ অরোরা তাহসিন তন্দ্রা ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯/১০ ইতিহাস আমার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু বাদশাহ নামদার বইটিতেও তো মূলত মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসই বর্ণনা করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে এই বইটি আমার এতো প্রিয় হলো? যারা বইটি পরেছেন তারা তো উত্তরটা জানেনই। এই বইটি পড়তে গিয়ে আপনার এক মুহুর্তের জন্যেও মনে হবেনা আপনি ইতিহাস পড়ছেন। মনে হবে আপনি সেই সময়ে হারিয়ে গিয়েছেন, সম্রাটের কান্ডকারখানা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। মূলত মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে নিয়েই এই উপন্যাস। মুঘল ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা যাদের আছে তারা তাকে পরাজিত সম্রাট বলেই জানেন। কিন্তু তিনি রাজ্য দখলে পরাজিত হলে কি হবে? মানুষ হিসেবে তিনি জয়ী।সম্রাট হওয়ার যোগ্যতা কিছুটা কম থাকলেও যেসব মানবীয় গুণ মানুষকে মহান করে তোলে তার সবটাই ছিলো তার মধ্যে। সম্রাট কম, শিল্পীই বেশি বলা যায় তাকে। নিজের মতো ছবি আকা, বই পড়া আর শরাব পানে মশগুল থাকা- এই নিয়েই তার জগৎ। বিচিত্র ধরনের বই বা প্রাণীর প্রতি তার আকর্ষণ ছিল সবসময়। সহজ সরল এই মানুষটি মনুষ্যত্বে ছিলেন স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল, যেখানে কলুষতার কোন স্থান ছিলোনা। অবশ্য খামখেয়ালিও ছিল তার চরিত্রে অনেক, নয়তো কি সর্বস্ব হারিয়ে পালিয়ে বেরানোর সময়ও কেউ একটি ১৪ বছরের বালিকার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চায়? তার ছিল অসাধারণ দয়াবান একটি মন এবং অপরিসীম ভাতৃস্নেহ, যা সহসা কোন সম্রাটের মধ্যে দেখা যায় না। তার ভাইয়েরা সিংহাসনের জন্য বারবার তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা সত্ত্বেও তিনি তাদের মন থেকেই ভালবেসেছিলেন। তার চরিত্রের মহত্ত্ব তো সেই একটি ঘটনাতেই বোঝা যায়। তার চিরশত্রু শের শাহ, যিনি তাকে পরাজিত করতে পাগল ছিলেন, তিনি পর্যন্ত তার তার প্রজাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তাকে কোনভাবেই হত্যা করা যাবেনা, এবং তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। চিরশত্রুর এমন শ্রদ্ধা অর্জন করা এতো সহজ নয়। এতো খেয়ালি সম্রাটও যে সফলভাবে রাজ্য পরিচালনা করতে পেরেছেন, তার কারণ সেনাপতি বৈরাম খা। সিংহের মতো সাহসী এই মানুষটার মাথা ছিল অসম্ভব পরিষ্কার, আর অন্তরে ছিলো সম্রাট হুমায়ুনের প্রতি গভীর ভালবাসা। এমন বিশ্বস্ত সেনাপতি থাকলে সম্রাটদের চিন্তা এমনিতেই অর্ধেক কমে যাওয়ার কথা। পরবর্তীতে পরাজিত হতে হলেও যতদিন সম্রাট সিংহাসনের মালিক ছিলেন, তার পেছনে সিংহভাগ অবদান এই বৈরাম খা এরই। হায়, এই ভালো মানুষগুলোর কপালেই বুঝি এমন নৃশংসভাবে মৃত্যু লেখা থাকে? সম্রাট হুমায়ুন সম্পর্কে কত খুটিনাটি কাহিনি হুমায়ুন আহমেদ বর্ণনা করেছেন এই গল্পে। নিজের জীবন বাচানোর জন্য এক ভিস্তিওয়ালাকে আধবেলার জন্য সিংহাসনে বসানো, রাজ্যহারা অবস্থায় পালিয়ে বেরানোর সময় স্ত্রী হামিদা বেদানা খেতে চাওয়ামাত্র সামনে হাজির করা, এক গায়িকার গানে মুগ্ধ হয়ে তাকে সেই মুহুর্তে তার ওজনের সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা দান করা, পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য মনে হতো এসব। কিন্তু পরে ইতিহাস ঘেটে দেখেছি, সবই সত্যি কথা। নীরস রাজা বাদশাদের কাহিনিকে এতো অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়তো হুমায়ুন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব। এই বইটির কল্যাণেই সবসময় ইতিহাসে পরাজিত শাসক হিসেবে জেনে আসা সম্রাট হুমায়ুনের প্রতি আমার কখনোই অশ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়নি, বরং বইয়ের শেষ কাহিনিটার জন্য তার সন্তান, সবচেয়ে সফল, মহান মুঘল সম্রাট আকবর দ্য গ্রেটের প্রতি কিছুটা হলেও ঘৃণা আমার থেকে যাবে আজীবন। আমার মতে, হুমায়ুন আহমেদের অন্যতম সেরা বই এই বাদশাহ নামদার। এই বইয়ের প্রতি পাতায় একধরণের মাদক আছে। যারা এই বই পড়েননি, তারা সেই মাদকের নেশা থেকে বঞ্চিতই বলা যায়। কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী। ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
প্রাইস অনুযায়ী পেজ কোয়ালিটি ভালো করা উচিত।
Was this review helpful to you?
or
আমি মনে করি লেখক হুমায়ুন আহমেদ, বাদশাহ নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুনকে একজন সফল বাদশাহ হিসেবে উপস্থাপন করার বদলে একজন খেয়ালি মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বাদশাহ নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুনকে অনেকটা হিমুর মতো উপস্থাপন করেছেন। এজন্য বইটি আমার কাছে ভালো লাগেনি। তবে আমার কাছে ভালো না লাগার কারণে আমি আপনাকে পড়তে নিষেধ করবো না। আমার মতামত অনুযায়ী বইটি আপনার পড়া উচিত কিন্তু কেবল এই বইটি পড়ে বাদশাহ নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুনকে মূল্যায়ন করা উচিত হবে না।
Was this review helpful to you?
or
খুবই চমৎকার একটি উপন্যাস। অসাধারণ লাগল।
Was this review helpful to you?
or
আমার কাছে মনে হয়েছে এই উপন্যাসের আসল নায়ক হচ্ছেন বৈরাম খাঁ
Was this review helpful to you?
or
an amazing book.
Was this review helpful to you?
or
ami boi premi na. shomoy pele phone niye busy thaki. ai boita amr atto vallagse j ki bolbo. pura 6 hours aktana pdf pore shesh korechilam ami. atto sbundor akta boi j kew e er preme pore jabe.. itihash er pashapashi onk bastobadi kotha royeche er majhe.
Was this review helpful to you?
or
nice story
Was this review helpful to you?
or
excellent
Was this review helpful to you?
or
this is the first time i learn some history with fiction. History makes people bore but fictional history brings history with good interested. after all its a good novel
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
Great
Was this review helpful to you?
or
Good Quality Product ...❤❤❤❤
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
বেস্ট অব হুমায়ূন স্যার!!!
Was this review helpful to you?
or
বহূ কথা লিখলে অনেক লিখতে হবে। এক কথায় অসাধারণ!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
ব্যক্তিগতভাবে একাডেমিক বই ছাড়া আমার অন্যান্য বই পড়ার অভ্যাস তেমন একটা ছিল না। কোন একটা সময় হঠাৎ করেই মনে হলো, ছাত্রজীবনের কীর্তিটা যদি কেবল কতগুলো সার্টিফিকেট হয়, তাহলে হয়তোবা নিজেকে অফিশিয়ালি শিক্ষিত একজন ব্যক্তি হিসেবে বুঝাতে পারলেও এই শিক্ষা জীবনে কতটুকু হৃদয় স্পর্শ করল তা নিজের মনকে প্রশ্ন করলেই উত্তর বেরিয়ে আসে। আর এই মহান প্রশ্নের উত্তর নিজের মাঝে খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো হতাশই হয়ে পড়িনি, বরং নিজেকে অভিসম্পাত করতেও কোন প্রকার দ্বিধা বোধ হচ্ছিল না। আর তখন থেকেই বই পড়ার অভ্যাস শুরু হয়ে গেল। আমার কোনো এক বন্ধু আমাকে হুমায়ূন আহমেদের "বাদশাহ নামদার" বইটা পড়ার সুপারিশ করে এবং সেটা আমাকে অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই করে। তার কথামতো আমি এই বইটা কিনে ফেলি এবং পড়তে পড়তে হারিয়ে যায় সুদূর অতীতে। হাঁটতে থাকি প্রায় পাঁচশত বছর আগের মুঘল সাম্রাজ্যের পথে-প্রান্তরে। দেখে আসি সম্রাট হুমায়ুনের রাজত্ব আর বৈচিত্র্যময় জীবন। দেখে আসি আলো-আঁধারির খেলা। দেখে আসি বিশাল শান শওকত আর জাকজঁমকত্বের আগে-পিছের অধ্যায়। এই বইয়ে সম্রাট হুমায়ুনকে ঘিরেই লেখা হয়েছে এবং তার রাজত্ব কালটা হুমায়ূন আহমেদ যথার্থ আকর্ষণীয় ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। বইটা পড়ার পর আমি যেমন সম্রাট হুমায়ুনের জাঁকজমকপূর্ণ ও বিলাসপূর্ণ জীবনের ধারণা পেয়েছি, ঠিক তেমনি পেয়েছি নিজেকে টিকিয়ে রাখার অবিরাম সংগ্রামের স্পষ্ট ধারণা। অনুভব করেছি ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা কতটা তীব্র, কতটা আত্মকেন্দ্রিক আর কতটা অমানবিক। দেখেছি উদারতা, মানবতাও কখনও কখনও পতনের চরম সীমানায় পৌঁছে দেয়। দেখেছি আন্তরিকতার পুরস্কার কখনও কখনও কৃতজ্ঞতার বদলে তাকে কেবল দুর্বলতা হিসেবেই মূল্যায়ন করা হয়। এই বইটি পড়ে বুঝেছি যে কিভাবে কাগজের পাতায় চোখ বুলিয়ে ইতিহাসের দৃশ্যপটে ফিরে যাওয়া যায়, সুদূর অতীতকেও খুব কাছ থেকে অনুভব করা যায়। কত আন্তরিকতা, কত ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, হিংস্রতা ইত্যাদি ঘিরেই সম্রাট হুমায়ুনের শাসনকাল! মনে হচ্ছিল এই বইটা যদি আর একটু বড় হতো! সম্রাট হুমায়ুনের তৎকালীন মুঘল সাম্রাজ্যের পথে-প্রান্তরে হেঁটে চলার আরেকটু সময় পেতাম! কিন্তু তা আর হলো না। প্রকৃতির নিয়ম যেমন সম্রাট হুমায়ুনের ইতি ঘটিয়েছে, ঠিক তেমনি কলমও থেমে গেছে, আবার একইভাবে কলম এর বাহকও হয়ে গেছেন এক ইতিহাস।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই?
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
valo
Was this review helpful to you?
or
সত্যি বলছি,হুমায়ূন আহমেদের লেখার প্রতি আলাদা আকার্ষণের কারণে নয়।আমার কাছে এটা আমার পড়া সেরা বইগুলোর একটা।Highly recommended।
Was this review helpful to you?
or
সহজ সাবলীল ভাষায় অনন্য ইতিহাস। মনে হয়েছে আরও যদি কয়েক পৃষ্ঠা লিখতেন!!
Was this review helpful to you?
or
?
Was this review helpful to you?
or
বইটি পড়ার পর মনেই হচ্ছিলো না যে কোন ইতিহাসের কথা পড়ছি। খুবই চমৎকার একটা বই।
Was this review helpful to you?
or
Nice book
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
আমার প্রিয় বইগুলোর একটি।
Was this review helpful to you?
or
বইটিতে খারাপ লাগার মত কিছুই পাইনি। প্রথমে খুব ভাললাগা কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করি। হিন্দুস্তান সম্রাট হুমায়ুন এর শত্রু শের খাঁ হুমায়ূন এর ভক্ত ও ছিলেন বটে। শের খাঁ একবার এক গোপন বৈঠকে বলেছিলেন হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না। তখন তার পুত্র জলাল খাঁ এর মানে জানতে চাইলে শের খাঁ বললেন “ হুমায়ূন আমার পরম শত্রু এটা সত্যি, কিন্তু তিনি এমন শত্রু যাকে আমি শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। তিনি মহান মানুষদের মধ্যে একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কনামাত্রও নেই”। তখন শের খাঁ সম্রাট হুমায়ূন এর লেখা একটি কবিতা পাঠ করলেন যা আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে। নিচে তা দেয়া হলো। “অশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয়। যেমন বন্ধু নয় বায়ু, মেঘমালার। বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না। দুজনই থাকবে দুজনের কাছে অদৃশ্য। দৃশ্যমান থাকবে তাদের ভালবাসা।“ আরেকটি যায়গায় সম্রাট হুমায়ূন বৈরাম খাঁ কে তার এক কাজের জন্য তাকে শাবাশ বলেন। এই শাবাশ শব্দটির উৎপত্তি কিভাবে তাও ভালো লেগেছে। পারস্য সম্রাট শাহ আব্বাসের কারনে সম্রাট হুমায়ূন শাবাশ বলেন। শাহ আব্বাস সারাজীবন প্রশংসনীয় সব কাজকর্ম করে গেছেন। সেখান থেকেই শাবাশ শব্দটি এসেছে। শাহ তামাস্প যখন সম্রাট হুমায়ূন কে তার বন্ধুত্তের হাত বাড়িয়ে দেয় তখন আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো এ যেন আমার দিকেই বন্ধুত্তের হাত বাড়িয়ে দিলো। কেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি তা পড়ার সময় আপনিও বুঝতে পারবেন। বিশাল মোঘল সেনাবাহিনীর প্রধান বৈরাম খাঁ সম্রাট হুমায়ূন এর আমীর ফৈয়জ খাঁ কে একবার বলেছিলেন “আমার প্রিয় সম্রাট পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত প্রায়ই পাঠ করতেন। সেই আয়াতে আল্লাহ্পাক বলেছেন, (((আমি তোমাদের ভাগ্য তোমাদের গলায় হারের মতো ঝুলাইয়া দিয়াছি। ইহা আমার পক্ষে সম্ভব।))) ইতিহাস নিয়ে এত সুন্দর করে বই লিখা যায় তা এই বই পড়ে জানতে পারলাম। এই বই নিয়ে যে কয়টা রিভিউ পড়েছি সবাই বলেছে বইয়ের শেষে টুইস্ট আছে। কিন্তু টুইস্ট কেউ বলেনি। আমিও বলবো না। তবে হুমায়ূন স্যার এর এই বইয়ের শেষ তিনটি লাইনে আমি উনার সাথে একমত না। আমি ফিকশন পছন্দ করলেও আমি বাস্তববাদী। হুমায়ূন স্যার তার লেখার পরিশিষ্ট এর শেষ তিন লাইন আমি তুলে ধরছি। “পৃথিবীর ইতিহাসে আকবরের পরিচয় আকবর দ্যা গ্রেট। বৈরাম খাঁর করুণ পরিণতি গ্রেট আকবরের কাছ থেকে আশা করা যায় না, তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার।“ আমি যদি আকবরের যায়গায় থাকতাম আমিও তাই করতাম। কারন এই শেষ তিন লাইনের আগে বৈরাম খাঁর কথাই তার করুণ পরিণতির কারন আমার হিসেবে। এখন আপনি হয়তো ভাবছেন নিশ্চয়ই খারাপ কোন কথার জন্য তার করুণ পরিণতি। সেই কথাটি কি এবং এ কথার জন্য বিশাল মোঘল সেনাবাহিনীর প্রধান বৈরাম খাঁর কি এমন করুণ পরিণতি হলো তা জানতে হলে এখনি পড়ে ফেলুন হুমায়ূন আহমেদ এর “””বাদশাহ নামদার”””। তাইবলে সেই শেষ কথা আর করুণ পরিণতি জানার জন্য আবার বইয়ের শেষ পাতাটি আগে পড়বেন না যেন। তো আমিও স্যার এর মত বলতে চাই আসুন আমরা বাদশাহ নামদারের জগতে ঢুকে যাই। মোঘল কায়দায় কুর্নিশ করে ঢুকতে হবে কিন্তু। নকিব বাদশার নাম ঘোষণা করছে- “” আল সুলতানুল আল আযম ওয়াল খাকাল আল মুকাররাম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আল সালাতিন, আবু মোজাফফর নাসির উদ্দিন মোহাম্মাদ হুমায়ূন পাদশাহ, গাজি জিল্লুল্লাহ।“” (এখানে, কিন্তু পাদশাহ ই হবে বাদশাহ নয় আরো অনেক কথাই ছিলো বললে হয়তো আগ্রহ কমে যাবে তাই বলা হয়নি।)
Was this review helpful to you?
or
gf
Was this review helpful to you?
or
অনেক সুন্দর ও সহজভাবে বাদশা হুমায়ুনের গল্প লেখা এই বইয়ে।এরথেকে সহজ করে কোন ইতিহাসের গল্প লেখা সম্ভব কিনা আমার জানা নেই।আমার মতে হুমায়ুন আহমেদের অন্যতম সেরা বই এটি।রেকমেন্ডেড।
Was this review helpful to you?
or
ভালো বই।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাসভিত্তিক বই আমার সবসময়ই পছন্দের, আর হুমায়ূন স্যার কখনো নিরাশ করেন না
Was this review helpful to you?
or
Valo
Was this review helpful to you?
or
❤️
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় চমৎকার বই। আমি হুমায়ুন ভক্ত না হলেও বাদশাহ নামদার বইটির ভক্ত হতে বাধ্য হয়েছি। এই একটি বই পড়ে ইতিহাসের প্রতি আকর্ষণটি বেশি জেগেছে। এছাড়া মোগল সাম্রাজ্যের ওপর যারপরনাই আকর্ষিত হয়েছি। সাহাদত হোসেন খান এর লেখা "মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায় " বইটি সংগ্রহ করেছি। জানি না আমার এই আকর্ষণ ও আমার ইতিহাস জানার এই তৃষ্ণা বইটি কতটা মেটাতে পারে। তবে আমি মানতে বাধ্য যে হুমায়ুন আহমেদ' র সেরা কয়েকটি উপন্যাসের মধ্যে "বাদশাহ নামদার "অন্যতম।
Was this review helpful to you?
or
★বই নামঃ বাদশাহ নামদার ★লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ ★প্রকাশনাঃ অন্যপ্রকাশ ★পার্সোনাল রেটিংঃ ৮/১০ বিঃদ্রঃ মূলত যারা বইটি পড়েন নাই তাদের জন্য সামারি অংশটা,যারা পড়েছেন তাদের না পড়লেও চলবে,ভুল-ক্রটি ক্ষমা করবেন। #সামারিঃ সম্রাটের কোন পুত্র থাকেনা।স্ত্রী থাকেনা।আত্মীয়-পরিজন থাকে না।সম্রাটের থাকে তরবারী ------------------------------------------------------সম্রাট বাবর সম্রটা বাবর চিন্তিত কারণ তার পুত্র হুমায়ুন একটু বিশেষ ধরনের মানুষ, সে(হুমায়ুন) শাহজাদা হয়েও রাজ্যের প্রতি তার কোন আকর্ষণ নেই।স্বভাব-চরিত্রে সম্রাটপুত্র অত্যান্ত বেখেয়ালি,দয়ালু ও কোমল হৃদয়ের মানুষ।হঠাৎ একদিন তার এই স্নেহের পুত্রের কঠিন রোগ হয় সম্রাট নিজ প্রাণের বিনিময়ে পুত্রের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রবের কাছে প্রার্থনা করেন।চিন্তিত পিতা সম্রাট বাবরের মৃত্যুর মাধ্যমে উপন্যাসের প্রথম অংশ শেষ হয়। হুমায়ুন এখন বিশাল হিন্দুস্থানের অধিকর্তা।চারিদিকে শত্রুদের লীলাখেলা।ভাইয়েরাও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত,আরেকদিকে আরেক শত্রু শেরশাহও চোখ রাঙাচ্ছে।সেনাপতি বৈরাম খা সম্রাটের হেয়ালিপনা দেখে চিন্তিত। শত্রুদের বারবার ক্ষমা করে দেওয়ায় সম্রাটকে রাজসভার সকলে দূর্বল ও অযোগ্য মনে করছে। শেরশাহ নিজের মিলিটারি এক্সিলেন্স দেখিয়ে যাচ্ছেন বরাবরের মতো। এরই মধ্যে দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় অংশ হয়। অবশেষে শেরশাহ'র বিরুদ্ধে হুমায়ুন যুদ্ধযাত্রা করলেন,ভাইদের কাছ থেকেও সাহায্য না পাওয়া পরও তিনি যুদ্ধের দিকে এগোলেন।কিন্তু একরাতে শেরশাহ'র বাহিনীর অতর্কিত হামলার মাধ্যমে হুমায়ুন এর সব আয়োজন পন্ড হলো।পথে ঘাটে,রাজ্যহারা হুমায়ুন বিভিন্ন মানুষদের সাহায্য পেয়েছিলেন,পরবর্তীতে রাজ্য পাওয়ার পরেও তাদেরকে মনে রেখছিলেন।পালক মা দিলদার বেগম এর কাছে এলেন হুমায়ুন ,দিলদার বেগম এর সাথে থাকা মেয়েটির প্রেমে পড়ে তাকে সরাসরি বিবাহের প্রস্তাব দিলেন।সবার এক প্রকার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাহ হলো সেই মেয়েটির সাথে যিনি আমাদের সবার কাছে পরিচিত মহামতি আকবর এর মা "হামিদা বানু" হিসেবে। সম্রাট হুমায়ুন এখন পুরোপুরি নিঃস্ব, তার আমি-উমরা-সৈন্যদের অধিকাংশই এখন তাকে পরিত্যাগ করেছেন ।একদিকে তাকে তাড়া করছে তারই আপন ভাই কামরান মির্জা আর আরেকদিকে শেরশাহ। উভয়ে মিলে এক সম্রাট এখন দিশেহারা। দিশেহারা এই সম্রাটকে দিয়ে শেষ হলো তৃতীয় অংশ। দিশেহারা এই সম্রাট(হুমায়ুন ) নানা জায়গা ঘুরতে অবশেষে গিয়ে ঠেকলেন পারস্যের শাহ এর দরবারে ,লক্ষ্য তার মক্কা অভিযাত্রা ,পিছনে শত্রুদের হাতে পড়ে রইলো তার পুত্র আকবর।পারস্যর সম্রাট শাহ তামাস্প নানা ফন্দি-ফিকির করে সম্রাট হুমায়ুন এর পরীক্ষা নিতে লাগলেন ,অবশেষে জিতে গেলেন হুমায়ুন ।পারস্য সম্রাট তাকে আপন বন্ধু হিসেবে গ্রহন করলেন এবং প্রয়োজনীয় সৈন্য-সামর্থ দিয়ে তাকে সাহায্য করলেন ।বিচক্ষণ সেনাপতি বৈরাম খা এর সাহায্যে একের পর এক যুদ্ধে জিতে গেলেন হুমায়ুন,উদ্ধার হলো তার রাজ্য ও পুত্র।দীর্ঘদিন শাসন করার পর হুমায়ুন এখন মৃত,তার পুত্র আকবর এখন তার আসনে ।ক্ষমতায় আরোহনের কিছুক্ষনের মধ্যেই তার পিতার বিশ্বস্ত সেনাপতি বৈরাম খা'কে ক্ষমতাচ্যুত করলেন,মক্কায় পাঠিয়ে দেওয়ার নাম করে তাকে হত্যা করলেন পথিমধ্যে । এই দিয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর সচরাচর উপন্যাস শেষ করার সেই "হঠাৎ" স্টাইল আবারো ফুটে উঠলো । #ব্যাক্তিগত অভিমতঃ হুমায়ুন আহমেদ নিয়ে নতুন করে লিখার কিছু নাই ।তবে বাদশাহ নামদার বইটি নিয়ে কিছু বলার আছে। ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে হলে অনেক সময় অনেক রসালো জিনিস টেনে নিয়ে আসতে হয় যার ঐতিহাসিক সত্যতা থাকা বাধ্যতামূলক না এবং লেখক নিজেও এইক্ষেত্রে বিষয়টি স্বীকার করেছেন ।তাই ঐতিহাসিক উপন্যাসকে বিশুদ্ধ ইতিহাস হিসেবে ধরা সমুচিত না ।উপন্যাসটি এমন করে লিখা যেন এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখতে সক্ষম হবে,একবার যদি উপন্যাসটি পড়া শুরু করেন তাহলে শেষ না করে উঠতে মন চাইবে না।হুমায়ুন আহমেদ এর অন্যান্য উপন্যাস থেকে এই উপন্যাসটা একটু ব্যাতিক্রম আমার কাছে মনে হয়েছে কারণ এই উপন্যাসটির প্রতিটি পর্ষদে পর্ষদে লেখক খুব সুন্দর করে ইতিহাসের ছায়া অবলম্বন করে গল্পটি বলে গিয়েছেন এবং এই ধারা রক্ষা করারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক মিলে রেখেছেন এবং হঠাৎ শেষ হওয়াটা অনেকটা আশানুরুপ করেছেন । লিখেছেনঃ এ, এম, রাফিনুল হক
Was this review helpful to you?
or
Nice
Was this review helpful to you?
or
বই: বাদশাহ নামদার লেখক: হুমায়ুন আহমেদ বইয়ের ধরণ: ঐতিহাসিক উপন্যাস পৃষ্ঠা: ২৩২ প্রকাশনী: অন্যপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্য: ফরম্যাট: পিডিএফ সাইজ: ৫ এমবি পারর্সোনাল রেটিং: ১০/১০ ★বুক রিভিউ: ৬২ ইতিহাস কাউকে টানে, কাউকে আবার টানে না, আমাকে ইতিহাস প্রচন্ড ভাবে টানে। ইতিহাসের প্রতি সবসময় একটা প্রবল আগ্রহ ছিল এবং এখনও আছে। যেহেতু বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি সুতরাং আমার দেশের এবং পার্শ্ববর্তী দেশের ইতিহাস জানার আগ্রহই বেশী আমার। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সবসময় আমাকে একটু বেশীই টানে। 'বাদশাহ নামদার' উপন্যাসের কাহিনী মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জাকে নিয়ে রচিত। কাহিনী শুরু হয় ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে। সম্রাট হুমায়ুন।ইতিহাসের এক বিচিত্র চরিত্র।স্ম্রাট হুমায়ূন রাজকর্মে অত মনোযোগী ছিলেন না। তিনি ডুবে থাকতেন নিজের জগতে। নিজের এক তৃতীয়াংশ বয়সী মেয়ে কে বিয়ে করা ।খামখেয়ালি পনা।বিচিত্র বিষয়ে আগ্রহ। ভাইদের বিদ্রোহ, মানুষকে বিশ্বাস করা এই সবি সম্রাট হুমায়ুন কে অন্যান্য দের থেকে আলাদা করে তুলেছে। কবি, চিত্রকর, শিল্পের সমঝদার, মূলত একজন মানুষের কাহিনিই বিধৃত বাদশাহ নামদার-এ। অদ্ভুত সব বস্তু এর বর্ণনা রয়েছে।যেমন হিন্দুস্তানের জাদুকর।মোঘল স্ম্রাট দের খাবার এর তালিকা, দোতলা তাবু ইত্যাদি। ছোট মেয়ে আকিকা বেগমের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। তার প্রতি সম্রাটের প্রগাড় ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার অনুগত্য অ ভালোবাসা এর নিদ্রশ্ন ইতিহাসে আর দ্বিতীয় নেই। এছাড়া আমরা পাবো বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্করকে, সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জাকে, হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি জওহরকে।এই জওহর আফতাবচি এই স্ম্রাট হুমায়ুন এর জীবন কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন। শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন। বৈরাম খাঁ জিনি আকবর কে গড়ে তুলেছিলেন আকবর দা গ্রেট করে। কিন্তু সম্রাট আকবর বৈরাম খাঁ কে হত্যা করে। এই বইটা পড়ে ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে পারবেন খুব সুন্দর উপস্থাপনায়। যাদের ইতিহাসের উপর নূন্যতম আগ্রহও নাই তাদেরও অসম্ভব ভালো লাগবে। বাদশাহ নামদার থেকে নেয়া আমার সবচেয়ে প্রিয় কয়েকটি পঙক্তি- অশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয় । যেমন বন্ধু নয় বায়ু, মেঘমালার । বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না । দু'জনেই থাকবে দু'জনের কাছে অদৃশ্য । দৃশ্যমান থাকবে তাঁদের ভালোবাসা । "রাজ্য হলাে এমন এক রূপবতী তরুণী যার ঠোটে চুমু খেতে হলে সুতীক্ষ্ণ তরবারির প্রয়ােজন হয়। (হুমায়ূনের বিদ্রোহী ভ্রাতা মির্জা কামরানের লেখা কবিতা) ?️হাসিব হাসান
Was this review helpful to you?
or
As usual great writing!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
Itihash k shahitte rup diche.. Eta lekhoker chomotkar shofolota..❤️
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদ এর অন্যতম সেরা লেখা। প্রত্যেকটা চরিত্রকে অনুভব করা গেছে, ঘটনাগুলো চোখের সামনে ঘটছে বলে মনে হয়েছে। একবিংশ শতাব্দিতে বসেও নিজেকে সেই মোঘল আমলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সাক্ষী বলে মনে হয়েছে। বই পড়ার সময়টা ছিল অসাধারণ এক ভ্রমণ আর অভিজ্ঞতা।
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ুন আহমেদ মানেই কি প্রেম ভালোবাসা? ব্লা ব্লা ব্লা । অনেকে বলে ওনার বই পড়লে খালি এগুলাই শিখবা । বিশ্বাস করেন এই বইটা ছিলো অসাধারণ এতোটাই অসাধারণ যে আমি মাত্র ২ বসাতেই এইটা পড়েছি । এই বইটা পড়ে অনেক কিছু জানতেও পেরেছি । হাইলি রেকমেন্ডেড একটা বই ।
Was this review helpful to you?
or
দূর্দান্ত একটি বই
Was this review helpful to you?
or
লেখক হুমায়ূনের হাতে বাদশাহ হুমায়ুনের জীবনীর এক অসাধারণ উপস্থাপনা। ইতিহাসের সত্য ঘটনাগুলোর মূল বিষয় ঠিক রেখে বাদশাহ হুমায়ূনের জীবনঘনিষ্ঠ উপাদানগুলো দিয়ে বইটি সাজানো। ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিক উপন্যাসে অনাগ্রহী পাঠকদেরও ইতিহাস বিষয়ে এই বইটি আগ্রহী করে তোলার মত একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই!
Was this review helpful to you?
or
এ বইটা হুমায়ুন আহমেদের অনন্য এক সৃষ্টি। ইতিহাসের বই ও যে আকর্ষণীয় ও প্রাঞ্জল হতে পারে,এ বইটা না পড়লে কখনো অনুভব করতে পারতাম না। অসম্ভব ভালো একটা বই।
Was this review helpful to you?
or
বইটা দারুণ, অসম্ভব ভালো লাগবে। হুমায়ন আহম্নেদ এর বই বরাবরই সব শ্রেণির পাঠকের জন্যই ভালো।
Was this review helpful to you?
or
Amazing book, must read
Was this review helpful to you?
or
Didn't go for details rather simple elocution for historic character
Was this review helpful to you?
or
এই বইটা সেরা।
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়ার পর আপনি দুই হুমায়ূনের উপর মুগ্ধ হয়ে যাবেন! একজন সম্রাট হুমায়ূন আর একজন আমাদের নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ । হুমায়ন আহমেদ সম্রাটের জীবনের কাহিনী অসাধারণভাবে বর্ণনা করেছেন ! বইটা না পড়লে বুঝতেই পারবেন না মুঘলদের সম্পর্কে !! ইতিহাস অনেকের কাছেই হয়তো ভালো লাগে না । কিন্তু এই বইটা পড়ার পর আপনার ধারণাই পাল্টে যাবে ! !! বইটা হুমায়ূন আহমেদের একটা মাস্টার পিস নো ডাউট।
Was this review helpful to you?
or
মনে হলো এক নিশ্বাসে উপন্যাসটি পড়ে ফেললাম ❤️
Was this review helpful to you?
or
অতি অসাধারণ উপন্যাস। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস পাঠ!
Was this review helpful to you?
or
মুঘল সম্রাজ্যে একবার ঢু মেরে আসতে চান? তাহলে এই বইটা আপনাকে পড়তেই হবে। " বাদশাই নামদার" মূলত মুঘল সম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট, নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুনের ইতিহাস উপন্যাসের ভাষায় লিখেছেন স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ নিজে। কবি সুলভ, সৌখিন, মহানুভব অথচ খামখেয়ালি সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ুনের দিল্লির সম্রাট থেকে যাযাবর হওয়া, তার ভাই কামরান মির্জার কুটচাল, শের শাহের ধূর্ততা, বৈরাম খাঁ- এর আনুগত্য এবং হুমায়ুনের পুনরায় দল্লির গদিতে আরহণের বর্ণনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর স্বয়ং সম্রাট হুমায়ুন রচিত শের (কবিতা) তো আছেই৷ আরও পাবেন প্রায় সম্পূর্ণ ভারতবর্ষের অধিপতি হওয়া হুমায়ুনের পুত্র আকবরের জন্ম লগ্নের গল্প যে কিনা ইতিহাসের পাতায় দ্য গ্রেট আকবর নামে পরিচিত।
Was this review helpful to you?
or
বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ রাজা যায় রাজা আসে।প্রজাও যায় নতুন প্রজা আসে।কিছুই টিকে থাকে না। ক্ষুধার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে, তবপ গল্প গিলতে পারে না। গল্প থেকে যায়।তেমনি," বাদশাহ নামদার" বইটি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবারের প্রিয় পুত্র নাসির উদ্দীন মুহাম্মদ হুমায়ুন মীর্জাকে নিয়ে রচিত একটি গল্প ইতিহাস। বইটিতে ঢুকতেই দেখা যায়, রাজত্ব পেয়ে রাজা বনে যাওয়া চরিত্র হুমায়ুন মীর্জা ছিলেন না। তিনি ছিলেন বলে বিচিত্র চরিত্রের একজন বাদশাহ। তাঁর চরিত্রে ছিল খামখেয়ালিপনা, বিচিত্র জিনিসের প্রতি অধীর আগ্রহ এবং তাই নিয়ে ব্যস্ততা, আবেগি হওয়া,সহজেই যাকে তাকে বিশ্বাস করদ,ভোগবিলাসী,এমনকি রাজ্যহারা হয়ে পলাতক থেকে যখন জীবন বাচাতে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে সবার দিশেহারা অবস্থা তখন তিনি পাগল হলেন কুমারী বয়সের এক বাদীকে বিয়ে করার জন্যে। অর্থাৎ দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত থাকার মতো দায়িত্ববান বাদশাহ হুমায়ুন ছিলেন না।তবে তিনি থাকতেন তার মতো করে। তার এই জগৎ নিয়ন্ত্রিত হতো সুরা,আফিম এবং কবিতা দিয়ে। বইটিতে গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র হলো বৈরাম খা। হুমায়ুনের একান্ত অনুগত বিশ্বস্ত সেনাপতি। যার বীরত্ব, সাহসীকতা, বিচক্ষণতা, কঠিন সময়ে সঠিক দিকনির্দেশনা, উপদেশ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। সম্রাট হুমায়ুনের প্রতি বৈরাম খা- এর আনুগত্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বিরল এক ইতিহাসের জন্ম দেয়।যার কারণে হুমায়ূন ফিরে পেয়েছিল তার হারানো রাজ্যকে। তাইতো শেষ সময়ে রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব বৈরাম খা- কে দিয়ে নিজের মতে অবসর কাটিয়েছেন। পাশাপাশি হুমায়ুন পুত্র গ্রেট আকবরের অভিভাবকত্বের দায়িত্বও পালন করেছিলেন নিষ্ঠার সাথে। বিশ্বাস যোগ্য সেনাপতির পাশাপাশি বিশ্বাসঘাতক কয়েক সদস্যের পরিচয় পাওয়া যায় বইটিতে। আচার্য হরি সংকর, সিংহাসন লোভী হুমায়ুনের ভাই কামরান মীর্জা,হুমায়ুনের অনুগত আবতাবচি জওহর। আরও কিছু বিশেষ চরিত্রে পাওয়া যায়, হুমায়ুনের ছোট কন্যা আকিকা বেগম।হমিদা বানু, যার জন্য পাগল হয়ে রাজ্যহারা হুমায়ুন বিয়ে করেন এবং তার মাধ্যমেই জন্ম হয় মুঘল সাম্রাজ্যের বংশধারার গ্রেট আকবরের। বইটতে পরিচয় করানো হয়েছে অদ্ভুত সব জিনিসের বর্ণনা দিয়ে।যেমন- দোতলা তাবু, দুই শূঁড় বিশিষ্ট হস্তিশাবক,হিন্দুস্তানেী জাদুকর, ইয়েমেনের আগরবাতি, পারস্যের দমীহ,বাঙালমুলুকের কাঁচা আমের শরবতের পাশাপাশি মুঘল সম্রাটদের খাবার তালিকা ইত্যাদি। বইটির সবচেয়ে আকর্ষণিয় বিষয় হলো হুমায়ুনের রচিত কতগুলো "শের”।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো- “অশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয়। যেমন বন্ধু নয় বায়ু, মেঘমালার। বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না। দুজনেই থাকবে দুজনের কাছে অদৃশ্য। দৃশ্যমান থাকবে তাদের ভালোবাসা।”
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ুনের বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালোলাগা বই এটি
Was this review helpful to you?
or
ভাইয়া উপহার দিয়েছিল পড়ে চমৎকিত হয়েছি
Was this review helpful to you?
or
বাদশাহ নামদার.... উহ... ইতিহাস বাহ... অসাধারণ...!
Was this review helpful to you?
or
বই পড়ে মনে হচ্ছে জীবনে প্রথম আমি ঐতিহাসিক ঘটনা নিজের চোখে দেখলাম
Was this review helpful to you?
or
আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি পড়া এই বই যতোবারই পড়ি ততোবারই নতুন লাগে
Was this review helpful to you?
or
লেখক প্রতিটা চরিত্র বেশ সরল ভাবে উপস্থাপন করেছেন । আর একজন বাদশাহ'র চরিত্র এত সরলভাবে উপস্থাপন পাঠক হিসাবে আমাক মুগ্ধ করেছে।
Was this review helpful to you?
or
Badshah Namdar is a very popular novel by Humayun Ahmed. This book was written in the last phase of his life. The story of the novel is centered around the life of Mughal king Babur’s son King Humayun. Why did Humayun start to write about King Humayun’s life? There is no answer to this question. The idea of Badshah Namdar might pop up in his mind from a poem that was read by Humayun in his childhood about chitor queen and king Humayun. The story of Badshah Namdar starts from the month of August in 1527. The story of Badshah Namdar includes different fantastic life events of King Humayun like as a letter from his father Babur, getting the world’s greatest diamond from his father, his system of punishment which was so much whimsical, his realization about his faults next, King Humayun as a poet, etc. One can know many fantastic and astonishing facts about King Humayun through Badshah Namdar.
Was this review helpful to you?
or
বেস্ট
Was this review helpful to you?
or
সম্রাট হুমায়ুনের জীবনী কে কেন্দ্র করে লেখা হুমায়ুন আহমেদের এক অনবদ্য উপন্যাস বাদশাহ নামদার। এখানে লেখক, নিজস্ব লেখনীর স্বকীয়তা বজায় রেখে, হুমায়ুনের জীবন কে কেন্দ্র করে গল্প লিখে গেছেন। এখানে মনে রাখতে হবে, এটা কোনো ইতিহাসের বই না, বরং একটি উপন্যাস। একটি উপন্যাসে যেমন নাটকীয়তা থাকে, প্লটের উত্থান পতন থাকে, কাহিনি থাকে, থাকে রোমাঞ্চ, এখানেও লেখক অত্যন্ত সাবলীল ভাবে সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। এটি আমার কাছে অত্যন্ত সুখপাঠ্য মনে হয়েছে আর উপন্যাসের কাহিনি অত্যন্ত দ্রতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে, শেষ না করে উঠতে পারবেন না। হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে অত্যন্ত ধন্যবাদ এমন একটি সুখপাঠ্য রচনা করে রেখে গেছেন আমাদের জন্য। ওপারে ভালো থাকুন স্যার। আপনাকে অনেক ভালোবাসি।
Was this review helpful to you?
or
ফ্লাপে লিখা কথা ”দর আইনা গরচে খুদ নুমাই বাশদ পৈবস্তা জ খেশতন জুদাই বাশদ। খুদ রা ব মিসলে গোর দীদন অজব অস্ত; ঈ বুল অজবো কারে খুদাই বাশদ।” যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায় কিন্তু তা পৃথক থাকে নিজে নিজেকে অন্যরুপে দেখা আশ্চর্যের ব্যাপার। এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ। ভূমিকা কেউ যদি জানতে চান ’বাদশাহ নামদার’ লেখার ইচ্ছা কেন হলো, আমি তার সরাসরি জবাব দিতে পারব না। কারণ সরাসরি জবাব আমার কাছে নেই। শৈশব আমাদের পাঠ্যতালিকায় চিতোর রানীর দিল্লীর সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠানো-বিষয়ক একটা কবিতা ছিল।
Was this review helpful to you?
or
বইটা এক কথায় অসাধারণ। যাদের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ কম তারা এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন। আমি নিশ্চিত আপনাদের ইতিহাসের প্রতি নুতন করে আগ্রহ তৈরি হবে। হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে নিয়ে কলম জাদুকর হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস। দুটো কারনেই বইটাকে নিয়ে আশার পারদ তুঙ্গে। অনেকেই বইটার খুব প্রশংসা করেন। হুমায়ুন আহমেদের লিখন শৈলী নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। চমৎকার করেই লিখেছেন কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ তার স্বাভাবিক খামখেয়ালী ভাব হুমায়ুনের উপর আরোপ করেছেন। হুমায়ুনের আচরন এ উপন্যাসে হিমুর মতো। ইতিহাসের কাছাকাছিই থেকেছেন লেখক। চরিত্র চিত্রণও চমৎকার। সব মিলিয়ে দারুণ। কিন্তু কোথাও একটু খামতি থেকে যায়।
Was this review helpful to you?
or
Nice book
Was this review helpful to you?
or
ঐতিহাসিক উপন্যাস আমার খুব প্রিয় একটা জনরা। তবে এখানে কথা আছে, ইতিহাসকে উপজীব্য করে উপন্যাস লেখা সহজ কিছু না। প্রচুর পড়াশোনার পাশাপাশি সেটাকে পাঠকের কাছে উপভোগ্য করে তুলতে হয়। কারণ লেখককে একই সাথে ঔপন্যাসিকের পাশাপাশি ইতিহাস-বচনের কাজও করতে হয়। কাজটা একদম সহজ নয় নিশ্চয়ই। নিজের নাম হুমায়ূন বলেই বাদশাহ হুমায়ূনের প্রতি দুর্বলতা লেখকের। ভূমিকায় লেখকের মতে, সেখান থেকেই এই উপন্যাসের জন্ম। উপন্যাস হিসেবে এর সার্থকতা শতভাগ আমি বলবো। পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। তবে যাইহোক, এই উপন্যাস ইতিহাসের উৎস হিসেবে কতটুকু সফল সেই তর্কে যাবার জন্য আমি যথেষ্ট যোগ্য না। তবে এটুকু বলতে পারি, ইতিহাসের আমার অন্যরকম একটা ভালোলাগাও তৈরি হয়েছিল এটা পড়ে। চমৎকার লেখা। নিজের আকর্ষণীয় লেখার স্টাইল ধরে রেখেও লেখক এই উপন্যাসে কয়েকশ বছর আগের একটা আমেজ আনতে পেরেছেন।
Was this review helpful to you?
or
দেশ শাসনের ইতিহাসে পৃথিবীর প্রভাবশালী রাজ বংশের মধ্যে ভারতের মুঘল সাম্রাজ্য (১৫২৬-১৮৫৭) অন্যতম৷ বর্তমান ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্থান এই চারটি দেশের অধিকাংশ এলাকা এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো৷ এ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট ছিলেন 'নাসির উদ্দীন মোহাম্মদ হুমায়ূন' (১৫০৮-১৫৫৬)৷ এই হুমায়ুন ছিলেন বিচিত্র স্বভাবের মানুষ৷ বোধ করি এ জন্যই কথাসাহিত্যের আরেক সম্রাট হুমায়ূন আহমেদ তার নামের সাথে মিল থাকা এই সম্রাটের জীবনী লিখতে বেশ শ্রমসাধ্য সাধনা করেছেন৷ লেখক অনেক বইপুস্তক পড়ে ও ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে এ ২৩২ পৃষ্ঠার এ ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসটি লিখেছেন৷ আমাদের লেখক হুমায়ূন আহমেদের মতোই সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন খেয়ালী স্বভাবের৷ সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন বেশ অলস ও আরামপ্রিয়৷ সাতার না জানা সম্রাট হুমায়ূন জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সাতার কেটে৷ এ জন্যই নমের মিল থাকার কারণে আমাদের লেখক হুমায়ূনকে স্কুল জীবনে বন্ধুরা বলতো হারু হুমায়ূন৷ যারা হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজকে হালকামোতে পরিপূর্ণ উপন্যাস বলে নিন্দা করেন এবং বেশ বিরক্ত হন তারা বাদশাহ্ নামদার পড়লে নতুন এক লেখক হুমায়ূনকে খুঁজে পাবেন৷ হুমায়ূন আহমেদের এমন কর্ম আরো অনেক বেশি হতে পারতো৷ তিনি এ উপন্যাস লিখেছেন জীবনের শেষের দিকে৷
Was this review helpful to you?
or
উদার বাদশাহ হুমায়ূনকে নিয়ে রচিত হুমায়ূন আহমেদ এর অসাধারণ সুন্দর একটি বই। বাদশাহ হুমায়ূনের জীবনের উত্থান পতন এই বইতে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল কহিনূর হীরা কিভাবে হাতে হাতে ঘুরে বেড়িয়েছে তার এক রমাঞ্চকর বর্ণনা। মহানুভব বাদশাহ হুমায়ূন তার ভাইদেরকে অতিরিক্ত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার খেসারত কীভাবে দিয়েছিলেন এবং তার পরবর্তী জীবনের সংগ্রামের সুন্দর একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রতি যারা আকৃষ্ট তাদের জন্য বইটি পড়া আবশ্যক।
Was this review helpful to you?
or
এই বই পড়ে আমার মন চেয়েছে প্রথমে আমি হুমায়ুন কে মেরে ফেলি,মানুষ এতো বড় পদে বসেও কিভাবে এতো বোকামি করতে পারে,এছাড়া একটা রাজার সিদ্ধান্ত গ্রহন কিভাবে এমন গা ছাড়া হতে পারে। তবে বই শেষ করে হুমায়ুনের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। আর শেষ পৃষ্ঠা পড়ে মন চেয়েছে আকবর কে মেরে ফেলি
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ুন আহমেদের অনেক বই আমার পছন্দ। তার মধ্যে ঐতিহাসিক কাহিনী সমৃদ্ধ বাদশাহ নামদার অন্যতম। এই বইটি ২০১১ সনের “একুশের বইমেলায়” প্রথম প্রকাশিত হয়। বাদশাহ হুমায়ূন ছিলেন এক বিচিত্র চরিত্রের অধিকারী। যেখানে তিনি সাঁতারই জানেননা, সেখানে সারাজীবন তাঁকে সাঁতরাতে হয়েছে স্রোতের বিপরীতে। তাঁর সময়টা ছিলো অদ্ভুত। সম্রাট বাবরের প্রথম পুত্র হুমায়ূন ছিলেন অলস ও আরামপ্রিয়। সে ঘর দরজা বন্ধ করে একা থাকতে পছন্দ করতো। কিন্তু একাকীত্ব রাজপুরুষদের মানায় না। ইব্রাহীম লোদির কোষাগার এবং রাজধানী দখল করতে সম্রাট বাবর তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে পরাজিত করে, হুমায়ূন বাবার জন্য উপহার এনেছিলেন ‘ কোহিনুর ‘ নামক হীরা। কিন্তু পিতা সম্রাট এই উপহার পেয়ে এতো খুশি হয়েছিলেন যে, আবার তাঁকেই এই উপহার দিয়েছিলেন। লোদির রাজকোষ পেয়ে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে হুমায়ূন অদ্ভুত কাণ্ড করেছিলেন। সেনাবাহিনী নিয়ে পিতার কোষাগার দখল করে সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিলো তাঁর নাম যখন নকীব ঘোষণা করতো। ” আল সুলতান আল আজম ওয়ল খাকরে আল মুকাররম, জামিই সুলতানাত – ই- হাকিকি ওয়া মাজজি, সৈয়দ আল সালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসির উদ্দীন মোহাম্মদ হুমায়ূন বাদশাহ, গান্জি জিলুল্লাহ।” বাগানের ভিতরে একটি দোতালা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তিনি থাকতেন। প্রচুর পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ছবি আঁকতেন। একটা জানালার সামনে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা যেতো। একবার হুমায়ূন খুব অসুস্থ হয়েছিলেন। দিল্লীর চিকিৎসক ঘোষণা দিলো তিনি চিকিৎসার অতীত। একজন সুফি সাধক তাঁর বাবাকে বলেছিলেন “আপনার প্রিয় কিছু দান করেন, তাহলে হয়তো তাঁর জীবন রক্ষা হবে।” বাবর তাঁর প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। পুত্রের কালান্তর রোগ শরীরে ধারণ করে তিনি মারা গেলেন। আর হুমায়ূন সুস্থ হওয়ার তিনদিন পর সিংহাসনে বসেছিলেন। সম্রাট হুমায়ুন গ্রহ নক্ষত্র দিয়ে বিচার করাকে রাজকার্যের অংশ ভাবতেন। পোশাকও পরতেন গ্রহ বিবেচনা করে। রবিবার রাজ্য পরিচালনার সময় হলুদ পোশাক। সোমবার গীতবাদ্য হতো, ঐদিন আনন্দে থাকতেন তাই সবুজ পোশাক, মঙ্গলবার যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে আলোচনা হতো, মেজাজ থাকতো উগ্র, পরতেন লাল পোশাক। সভা শুরুর আগে, তিনি শের আবৃত্তি করতেন। ” মুরদই লাখ বুড়া চাহে তো কেয়া হোতা হ্যায়, ওই হোতা হ্যায় যো মন্জুরে খোদা হোতা হ্যায়।” অর্থ:শত্রুরা আমার যতই অনিষ্ট কামনা করুক তাতে কিছুই হবেনা। ঈশ্বর যা মন্জুর করবেন তাই হবে, আমার ভাগ্যলিপি। বাহদুর শাহকে আক্রমণ করার সময় একটি টিয়া পাখি পেয়েছিলেন। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কে বড়? তোতা বলল,” আল্লাহ আকবার।” এই পাখিকে স্বর্গীয় পাখি উপাধি দিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সম্রাট যুদ্ধ বিরতিতে যা খেতেন——পোলাও পাঁচ ধরনের, রুটি সাত প্রকার, পাখির মাংস, কিসমিসের পানিতে ভেজানো পাখি ঘিতে ভেজে দেয়া, ভেড়ার আস্ত রোস্ট, পাহাড়ি ছাগের মাংস, পল, শরবত, মিষ্টান্ন এখনও পুরান ঢাকার কিছু রেস্তোরা সম্রাটের প্রধান বাবুর্চি নকি খানের উদ্ভাবিত খাবার গ্লাসি পাওয়া যায়। শেরশাহের কাছে পরাজিত হয়ে যখন তিনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শের রচনা করেছিলেন। আমরা বাস করি সুন্দরের মধ্যে সুন্দরকে ঘিরে থাকে অসুন্দর যেমন পুণ্যের চারিদিকে থাকে পাপের শক্ত খোলস। ভাগ্যবান সেইজন যে অসুন্দরের পর্দা ছিঁড়ে সুন্দর দেখে, পুণ্যের কাছে যায় শক্ত খোলস ভেঙ্গে। পরে বৈরাম খাঁ তাঁকে উদ্ধার করে আগ্রায় নিয়ে যান। হুমায়ূনের ছিলো চার স্ত্রী। বেগা বেগম, মাহচুচুক, গুলজার বেগম, মেওয়াজান, হামিদা বানু। হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেয় আকবার দ্যা গ্রেট। হুমায়ূন নিয়তি বিশ্বাস করতেন। একের পর এক যুদ্ধে হেরেও ; তিনি সূরা বনী ইসরাইল থেকে বলেছেন,”আমি তোমাদের ভাগ্য তোমাদের গলায় হারের মতো ঝুলাইয়া দিয়েছি।” হুমায়ূনের আর একটি বিখ্যাত শের হলো,” একজন প্রেমিকের কাছে চন্দ্র হলো তার প্রেমিকার মুখ, জোসনা হলো প্রেমিকার দীর্ঘশ্বাস। হুমায়ূন তাঁর ভাইদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বার বার সিংহাসন চুত্য হন। কাবুল জয়ের সময় বৈরাম খাঁর বুদ্ধির কারণে মীর্জা কামরানের হাত থেকে বেঁচে যান। কিন্তু যুদ্ধে ছোটভাই হিন্দোল নিহত হন। এরপর হুমায়ূন সিংহাসনে বসেন ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে। এবং ঘোষণা করেন, যেকোন সময় আমি দুনিয়া থেকে চলে যাবো। আকবর যতদিন বয়োপ্রাপ্ত না হন, ততদিন বৈরাম খাঁর নির্দেশে হিন্দুস্তান চলবে। বৈরাম খাঁ কথা রেখেছিলেন। হুমায়ূুন আহমেদ সুচারুভাবে রাজনীতির মারপ্যাঁচ পিছনে রেখে, সফলভাবে বাদশাহ হুমায়ূনকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। বাদশাহর বর্ণনাময় ও আড়ম্বরময় জীবন আমাদের উপভোগ্য করে তুলেছে। পাঠক হিসেবে প্রথম থেকে শেষ লাইন এক নিঃশ্বাসে পড়ে মনকে আনন্দ দেবার অতুলনীয় একটি উপন্যাস। ২৩১ পৃষ্ঠার বইটি পড়ে রিভিউ লিখা অনেক কঠিন। তারপরেও চেষ্টা করলাম। এটা পড়ে, ভালো লাগা থেকে যদি বইটা পড়ে দেখেন ; তাহলে আমার লিখাও সার্থক
Was this review helpful to you?
or
ঈশ্বর থাকেন দুখী মানুষের অন্তরে.... হয়তো সত্য.... ভাল বই...
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস অনেককে টানে আবার অনেকে তেমন একটা আগ্রহ পায় না।কিন্তু এই বইটিতে হুমায়ূন আহমেদের রিমার্কেবল সেই গল্প লেখার কৌশলে সহজ এবং সাবলীল ভাষায় ইতিহাস বর্ণণা করা হয়েছে।বাদশাহর প্রতি তার অধিনস্তদের আনুগত্যতা,ভালোবাসা আবার কখনও কখনও বিশ্বাসঘাতকতা একটা অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চার তৈরী করেছে । বাদশাহ শত সমস্যায় থাকার পরও বেগমের প্রতি তার ভালোবাসা,গট বাঁধা প্রেমের কাহিনীর বাইরে যেয়ে তাদের এক অন্যরকম ভালোবাসার গল্পের অনুভূতি ছুঁয়ে যাবে আপনার হৃদয়কে। তাই শুধুমাত্র ইতিহাস নয় বাকি দিকগুলো আশা করি আপনাকে আশাহত করবে না। ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ না থাকলেও এই বইটি একবার পড়েই দেখুন অন্যরকম ভালো লাগার জায়গা যে তৈরী হবে সে বিষয়ে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতেই পারেন।
Was this review helpful to you?
or
এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে মোঘল সাম্রাজ্যের নানান ইতিহাস। আলো এবং অন্ধকারের দিক। মোঘল পরিবারের শিল্প- সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসার অসাধারণ সব উপমা। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, তিনি কোথাও গল্পের প্রয়োজনেও ইতিহাস বিকৃতি ঘটাননি। প্রকৃত ঘটনাই তিনি তুলে ধরেছেন মাত্র। তবে তার লেখার অসাধারণ ক্ষমতা গুণে পাঠকের একবারও মনে হবে না যে, এটি ইতিহাস গ্রন্থ। বরং কল্পণার সাগরে ভেসে ভেসে, এটাকে হুমায়ূনীয় উপন্যাসই মনে হবে। আমি বার বার এই বইটি পড়তে চাই। আমার পড়া সেরা বইয়ের তালিকায় এটি যুক্ত হলো।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস ভূলার মতো নয়
Was this review helpful to you?
or
নামঃবাদশাহ নামদার,প্রকাশনঃঅন্যপ্রকাশ,দামঃ৪০০টাকা। চলমান সিংহাসনে মুঘল সম্রাট বাবর আধাশোয়া হয়ে আছে।পাশে খিদমগার নতজানু হয়ে আমের শরবত হাতে দাড়িয়ে। আম আনা হয়ে বাঙ্গালমুলক থেকে। সম্রাট যাত্রা করেছেন আগ্রার দিকে।তার চিরশক্র ইব্রাহীম লোহী পানিপথের যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।তাই বড়পুত্র হুমায়ুনকে পাঠিয়েছেন আগ্রার কোষাগার ও রাজধানী দখল করতে।সম্রাট বাবর চিন্তিত..পুত্র হুমায়ুনের প্রতি সে বিরক্ত।এই ছেলে অলস, আরামপ্রিয় সবচেয়ে দুঃখজনক হল পুত্র হুমায়ুন আফিমে আসক্ত। একাকি সে তার প্রাসাদে আফিমের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে আর ছবি আঁকে।তবু সম্রাট বাবর তার এই পুত্রকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। সম্রাট বাবর তাই পুত্রকে পাঠিয়ে ভরসা পাচ্ছে না তাই নিজেই যাত্রা শুরু করেছেন। সম্রাট বাবর কিছুটা চিন্তিত,কারন তিনি একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছেন... হঠাৎ করেই সম্রাট দূরে ধূলিঝড় দেখতে পেলেন..পুত্র হুমায়ুন। বাদশাহ নামদার শুধু সম্রাট হুমায়ুনের বৈচিত্র্যময় জীবনিই নয়।পুত্রের প্রতি পিতার ভালোবাসার নিদর্শন..মানুষ হুমায়ুনের মানবিক মূল্যায়ন।মানুষের কদর্যময় মানসিকতা।মজার ব্যাপার হল সম্রাট হুমায়ুনের হাত ধরেই মুঘলদের চিত্রকলায় আগমন।
Was this review helpful to you?
or
Author: হুমায়ূন আহমেদ Publisher: অন্যপ্রকাশ Category: ঐতিহাসিক উপন্যাস Language: বাংলা বাদশাহ নামদার , এই বই পড়ে প্রথম যে কথা মাথায় এসেছিল তা হলো এই রাজা প্রজা মোঘল দের ইতিহাস এত মজার হতে পারে ! আমাদের স্কুলের ইতিহাস বই গুলো এমন নয় কেনো ইশ হুমায়ূন স্যার যদি লিখতেন . হে এই বই এক নবীন পাঠক মনে এমন ই ছাপ ফেলবে এমনই ভাবতে বাধ্য করবে . বাদশা নামদার এক হতভাগা সম্রাটের গল্প . হুমায়ূন এমন ই এক সম্রাট জিনি কহিনুর দান করে দেন খেলার ছলে , শত্রু কেও বিশ্বাস করে ফেলেন চোখের পলকে . এ যেনো এক ভিন্ন ধারার নদী জিনি কিনা একই সাথে সম্রাট ও কবি . এই বই জুরে পাঠক দেখতে পাবেন লেখক হুমায়ূনের সম্রাট হুমায়ূনের জন্য এক দরদ
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস সবসময় মানুষকে তার দিকে টানে।এই উপন্যাস এর কাহিনী মূলত হুমায়ূন মির্জাকে নিয়ে রচিত যিনি ছিলেন জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র। উপন্যাসটি পড়ে ইতিহাসের এমন অনেক অজানা তথ্যই জানা যায় যেগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না। তার উপর হুমায়ূন স্যারের লেখা নিয়ে বললে তো কিছুই বলার থাকে না। বাংলাদেশের সব মানুষের প্রিয় লেখক তিনি। সবার একবার হলেও বাদশাহ নামদার পড়া উচিত ইতিহাসের কিছু অব্যক্ত গল্প জানার জন্য। আসলেই অসাধারণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস আমার বরাবরই দারুন প্রিয় বিষয়, আর হুমায়ুন আহমেদ প্রিয় লেখক৷ প্রিয় দুইটা জিনিস যখন একসাথে হয় তখন সেটা আরো প্রিয় হয়ে উঠে। আমার পড়া হুমায়ুন আহমেদ এর অন্যতম সেরা একটা রচনা এই "বাদশাহ নামদার"। অনবদ্য, ব্যতিক্রমী, বাস্তবিক এই লেখা টা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের এক দুর্দান্ত লেখনী হয়ে থাকবা। জানা অজানা ইতিহাসের এক অপূর্ব উপস্থাপন এই বইটি।
Was this review helpful to you?
or
বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদের অসামান্য সৃষ্টিগুলোর অন্যতম। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জাকে নিয়ে বাদশাহ নামদার উপন্যাসের কাহিনী রচিত। লেখক অত্যন্ত যত্ন নিয়ে উপন্যাসটির চরিত্রগুলোকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসটি পড়ার সময় একটুও বিরক্তি ভাব আসবেনা তা বলতে পারি। বরং চরিত্রগুলোর প্রেমে পড়ে যাবেন। ইতিহাস আশ্রিত এই অসামান্য ফিকশনটি আজই সংগ্রহ করুন। বইটি আজই সংগ্রহ করুন বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ প্রচ্ছদ মূল্য: ৪০০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
কেউ যখন আমার কাছে কোনো ভালো বই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন আমি চোখ বন্ধ করে তাকে এই বইটির কথা বলি।ইতিহাস পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।আগেকার রাজা আর প্রজাদের কাহিনিতে আমার খুব আগ্রহ রয়েছে।তবে বাদশাহ নামদার বইটা ইতিহাসের বই হলেও কোনো কাঠখোট্টা বই নয়।যা শুধু সন তারিখ দিয়ে ঘটনা বলে যাওয়া হয়ে থাকে।বাদশাহ নামদার বইটি সম্রাট হুমায়ূন এর জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত।সম্রাট হুমায়ূন নানান রঙের মানুষ। লেখক নিজেও এই কথা বলেছেন।ফলে সাধারণত ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে যেমন রঙ চড়াতে হয় এখন তেমনটি করতে হয়নি।আর হুমায়ূন বইটি লিখতে গিয়ে অনেক বইয়ের সাহায্য নিয়েছেন।ফলে তথ্য ও উপাত্তের দিক থেকে বইটি অনেক সমৃদ্ধ। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো গল্পের আকারে ঘটনা বলে যাওয়ার কারণে সবার কাছে বইটি ভালো লাগবে।একটা ভালো বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।বইটি পড়ে খুব ভালো লাগবে
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ুন আহমেদের যতগুলো বই পড়েছি, এটাই আমার নিকট সেরা। বাদশাহ নামদারকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, আর কারো পক্ষে এটা সম্ভব না। ওপারে ভালো থাকবেন হুমায়ুন।
Was this review helpful to you?
or
"বাদশাহ নামদার" বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে হুমায়ুন আহমেদ যদি ইতিহাসের বই গুলা লিখতেন ছাত্র ছাত্রীরা ইতিহাসকে অনেক আনন্দের সাথে পড়তে ও জানতে পারতো। আমি হুমায়ুন আহমেদ এর ১৭৫ টির উপরে বই পড়েছি, এর মধ্যে যদি আমাকে ১০ টি বই ও বাছাই করতে বলা হয় আমি "বাদশাহ নামদার" রাখবোই। ইতিহাসকে কেউ এতো সুন্দর করে তুলে ধরতে পারে এটা না পড়লে জানা হতনা।অনেকেই বলবেন এটা শুধুমাত্র একটি ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাস কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এতে কোন ভুল/মিথ্যা তথ্য নেই, কারণ আমি মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস পড়েছি ডিগ্রি লেভেল এর টেক্সট বই থেকেই।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন কি তা এই লেখা পড়লেই বোঝা যায়। ইতিহাসের মতো কাঠখোট্টা জিনিসও যে এত সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারে তার জুড়ি মেলা আসলেই সম্ভব না। অসাধারন লেখনি দিয়ে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এই লেখার মাধ্যমে। সকল শ্রেণীর পাঠকেই এই বইটি পড়ার জন্য আমি অনুপ্রাণিত করবো।
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন, বাদশাহ হুমায়ূন, না বাদশাহ হুমায়ূন নয় মানুষ হুমায়ূনকে নিয়ে রচিত হয়েছে "বাশাহি নামদার" ইতিহাস মানে আমাদের পূর্বের মানুষ গুলোর কাজ কর্ম, ঘটনার বর্ণনা, নানান সিদ্ধান্ত, বিশাল বড় বিজয় বা অনেক বড় ভুল। বিশ্বাসঘাতকদের স্বরূপ ও তার পরিনাম, থাকে আরো অনেক কিছু। যা ঘটে গেছে তা হুবহু বর্ণনা করেন ঐতিহাসিকরা। আমাদের কে জানান ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার ঘটন বা অঘটন। ইতিহাস বিষয়টার প্রতি অনেকের রয়েছে সবিস্তর আগ্রহ আবার এটাই অনেকের বিরক্তির কারণ। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থী। ইতিহাস গ্রন্থে সরাসরি ঘটনা কল্প হুবহু বর্ণনা করায় আমাদের একটা একঘেয়েমি চলে আসে। ফলে আমরা এগুতে পারি না। একটা কমিক্স বইয়ে থেকে যা পাওয়া যায় তা যদি ইতিহাস থেকে পাওয়া না যায় তাহলে কেন পড়ব? মনে মনে প্রশ্ন করে অনেক শিক্ষার্থী, আমিও করেছি নিজেকে, যখন সমাজ নামের একটা ইতিহাস বই পড়তে হতো আমাকে। নিরস উপস্থাপনা ইতিহাসের প্রতি অনিহার একটা অন্যতম কারণ হতে পারে। যাইহোক ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যৎকালের পাথেয়, পথ নির্দেশ ও অতীতের ভুল আর সঠিকের সাক্ষী। তাই ইতিহাসকে কেন্দ্র করে এমন একটি উপন্যাস যদি লেখাযায় যা রসাত্মক, কল্পনার রাজ্যে এক বিশাল অনুভূতি তৈরী করে। যেন এমন মনে হয় সকল ঘটনা আমার সামনেই ঘটছে, আমি দেখছি, আমিও সেখানকারই একজন, তাহলে বলাযায় তা সার্থক ঐতিহাসিক উপন্যাস। আর এমই এক উপন্যাস "বাদশাহি নামদার"। পড়তে পড়তে মোঘল সাম্রাজ্য ঘুরে আসতে পারবেন নিমেষেই। ইতিহাসের প্রতি একঘেয়েমি দূর করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে ঐতিহাসিক উপন্যাস তবে তা থেকে নিরেট ইতিহাস জানা যায় না। মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা "জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর" এর বড় পুত্র "নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জা" র ইতিহাসকে আশ্রয় করে মুগ্ধকর এক ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করেছেন "হুমায়ূন আহমেদ" উপন্যাসে প্রবেশ করা যাক- "আল সুলতান আল আজিম, ওয়াল খাকাল আল মুকাররাম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আল সালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসির উদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন বাদশাহ, গাজী জিল্লুল্লাহ" সাবধান!!! উপন্যাসের সূচনা ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দেরর আগষ্ট মাসে। বাদশাহ বাবর, পুত্রের প্রতি তার অপরিসীম ভালোবাসা, আর সেই পুত্রই তার চিন্তার মূল কারণ। রাজ্য জয়ে তার মন নেই, নেই মন রাজ্য শাসনে, যুদ্ধ ক্ষেত্র তাকে ডাকে না, কামানের হুঙ্কার তার বুকে বাজে না। সে তার মতো তার মনের রাজ্যে বিচরণ করে,শের রচনা করে, রং তুলিতে ছবি আঁকে, থাকে প্রকৃতির মাঝে। এই পুত্রর জন্য বাবর তার জীবনদান করলেন, অসুস্থ পুত্রকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিয়ে, নিজে মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন। সিংহাসনে আরুহন করলেন বাদশাহ হুমায়ূন। হুমায়ূনের কাব্যিক ভাবনা, রাজ্যের প্রতি অনিহা, খামখেয়ালি পূর্ণ জীবনযাপন শত্রুদের আরু শক্তিশালী করে। বাংলার শাসক শের খান (শের শাহ) যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে, কিন্তু তার প্রেরিত চাটুকারিতাপূর্ণ পত্র পড়েই বাদশাহ মুগ্ধ। অপরদিকে তার ছোট ভাই কামরান মীর্জা ও শক্তি সঞ্চয় করছেন। এটাও হুমকি স্বরূপ। এক অলিখিত বিধাণ হলো সিংহাসনে আসিন হলে ভাইদের হত্যা করা যাতে কেউ বিদ্রোহ করতে না পারে, বাদশাহ হুমায়ূন তা করেন নী। বরাবর ভাইদের তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই উপন্যাসকে যদি যুদ্ধ, রাজ্যজয় আর রাজনীতি ধরে থাকেন তাহলে বৈরাম খাঁ হলেন এর নায়ক। তিনি বাশার প্রধান সেনাপতি। তার ত্যাগ, সততা, আনুগত্য, সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর তার শেষ পরিনতি আপনার হৃদয় ছুয়ে যাবে তা নিশ্চিত। উপন্যাসে পাবেন শের শাহ র সাথে যুদ্ধ ও পরাজিত সম্রাটের পলায়ন, পথে আকবরের জন্ম। তাকে রেখেই পলায়ন করেন বাদশাহ। হামিদা বানু (আকবরের মাতা) র প্রতি রাজ্যহারা সম্রাটের ভালোবাসা, বিশ্বাস ঘাতক হরিসঙ্কর যার শেষ পরিনতি আপনাকে কিছুটা আনন্দ দিবে। আর সম্রাটের ভাই মীর্জা কামরান যার কথা আগেই উল্লেখ করেছি, আরু আছে জওহর আবতাবচি যিনি বাদশাহ হুমায়ূনের জীবনী রচনা করেছিলেন। বারবার ঘুরে ফিরে পাবেন বাদশাহর প্রিয় কন্যা আকিকা বেগমের বর্ণনা। যার শেষ পরিনতি লোমহর্ষক। রাজ্যহারা বাদশাহ, মক্কা গিয়ে বাকি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন, পথে পারস্য সম্রাটের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন, সম্রাটের ভাইয়ের বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয়ও পাবেন উপন্যাসে। "রাজ্য হলো এমন এক রূপসী তরুণী যার ঠোঁটে চুমু খেতে হলে সুতীক্ষ্ণ তরবারি প্রয়োজন " - কামরান মীর্জা পারস্য সম্রাটের সহযোগিতায় রাজ্য ফিরেপান হুমায়ূন। শেষ জীবনে সব কিছুর দ্বায়িত্ব বৈরাম খাঁর উপর ছেড়ে দিয়ে অবসরে যান সম্রাট। বৈরাম খাঁ পরবর্তীতে আকবরের অভিবাবক হয়েছিলেন এবং ১৪ বছর বয়সে মসনদে বসেছিলেন আকবর দ্যা গ্রেট। কিন্তু "মোমবাতির শিখার ঠিক নিচেই থাকে অন্ধকার" সকল চরিত্রের শেষ পরিনতি লোকায়তিক আছে বাদশাহি নামদারে, এক জীবন গাথায় আপনাকে আমত্রণ। সম্রাটের শের --- " আশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয় যেমন বন্ধুনয় বায়ু, মেঘমালার। বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না দু'জন থাকবে দু'জনের কাছে অদৃশ্য দৃশ্যমান থাকবে তাদের ভালোবাসা " পরিশেষে একটা কথাই বলব, বইটা আমার রিভিউ থেকেও অনেক বেশি আকর্ষণীয়। পাঠক পতিক্রিয়া: অসাধারণ একটি উপন্যাস পড়লেই তা টের পাবেন, এটি হুমায়ূন আহমদের সেরা রচনা গুলোর অন্যতম। অসাধারণ প্রচ্ছদ এবং বান্ডিং প্রশংসনীয়।
Was this review helpful to you?
or
মোগল সম্রাট হুমায়ূনের নাম আমরা সবাই শুনেছি।কিন্তু তার স্বভাব বৈশিষ্ট্য, জীবনভাবনা, কাব্যপ্রতিভা সম্পর্কে হয়তো আমরা তেমন জানি না। তিনি সম্রাট বাবরের পুত্র,আকবরের পিতা। বিভিন্ন অলৌকিক আর রহস্যময় ঘটনায় বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল তাঁর জীবন। কেমন ছিল মোগল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাটের পথচলা? জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে 'বাদশাহ নামদার'। অত্যন্ত সহজ-সাবলীল ভাষায় পাঁচশো বছরের পুরনো সেই ইতিহাস তুলে ধরেছেন হুমায়ূন আহমেদ। মোগল সংস্কৃতির ভাবধারা, হুমায়ুনের পত্নী-প্রণয়, বৈরাম খাঁর(প্রধান সেনাপতি)বিচক্ষণতা, তৎকালীন হিন্দুস্থানী কুসংস্কার- এর পাশাপাশি শেরশাহ, ইরানের শাহ তামাস্প সহ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের অসাধারণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই রচনায়। এটি লেখকের ব্যতিক্রমধর্মী ও স্বতন্ত্র একটি বই, আমি পড়ে বিস্মিত হয়েছি। পাঠশেষে আপনার মনে হবে আরও কিছুটা পড়তে পারলে ভালো হত! রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, 'শেষ হয়েও হইল না শেষ...'
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুলাই বইয়ের নামঃ বাদশাহ নামদার লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ রেটিংঃ ৯/১০ বইয়ের ধরণঃ ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০১১ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ পৃষ্ঠাঃ ২৩১ গায়ের মূল্যঃ ৪০০ টাকা রকমারি মূল্যঃ ৩৪০ টাকা প্রচ্ছদ শিল্পীঃধ্রুব এষ ভাষাঃবাংলা সংস্করণঃ ৬ষ্ঠ অনলাইন পরিবেশকঃ rokomari. /com ISBNঃ97898450200176 *প্রাথমিক কথাঃ "বাদশাহ নামদার” একটি ইতিহাস আশ্রিত ফিকশন। ইতিহাসের কোন চরিত্রকে সরাসরি নিয়ে এই প্রথম কোন উপন্যাস রচনা করলেন হুমায়ূন আহমেদ। সেটা আবার হুমায়ূন মীর্জার মতো ‘বহু বর্ণে’র একজন সম্রাটকে নিয়ে। হুমায়ুন আহমেদ বইয়ের ভুমিকায় লিখেছেন – সম্রাট হুমায়ুন বহু বর্ণের মানুষ। তার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে আলাদা রঙ ব্যাবহার করতে হয়নি। আলাদা গল্পও তৈরী করতে হয়নি। নাটকীয় সব ঘটনায় তার জীবন পুর্ন।ইতিহাস কখনো ম্যাড়ম্যাড়ে কখনো বা রহস্যপূর্ণ। প্রথাগতভাবে পাঠ্যপুস্তকে যে ইতিহাস লেখা হয় তা যে কতটা নিরস পাঠকমাত্রই তা স্বীকার করবেন। সে নিরস ইতিহাসকে লেখক হুমায়ূন এমন ভাবে পরিবেশন করেছেন যে, বইটা একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না করে উঠা বেশ কঠিন। তো সময় করে লেখক হুমায়ূনের হাত ধরে চলে যান মোগল সম্রাট হুমায়ূনের রাজত্বে। তবে হ্যা রাজকীয় ভঙ্গিতে কুর্নিশ করে যেতে হবে কিন্তু। *কাহিনী সংক্ষেপেঃ বাদশাহ নামদার' উপন্যাসের কাহিনী মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জাকে নিয়ে রচিত। কাহিনী শুরু হয় ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে। বাদশাহ বাবর আদরের পুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে বড্ড চিন্তিত। পুত্র হুমায়ুন সাম্রাজ্য নিয়ে পুরাপুরি উদাসীন। সে ব্যস্ত থাকে তাঁর রংতুলি ও পদ্য নিয়ে। প্রকৃতির মাঝেই তাঁর প্রকৃত সুখ। ওই সময়কালেই একবার পুত্র হুমায়ূন মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায়। বাদশাহ বাবর নিজের প্রাণের বিনিময়ে খোদার কাছে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন। পুত্রের কালান্তক ব্যাধি শরীরে ধারন করে পঞ্চাশ বছর বয়সে সম্রাটের মৃত্যু হয়। তার তিন দিন পর হুমায়ূন মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আসীন হন। বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মোঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জা- কে নিয়ে। যিনি পিতার দিক থেকে তৈমুরের পঞ্চম অধস্তন এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের পঞ্চদশ পুরুষ। খেয়ালী সম্রাট হুমায়ূন সর্বশ্রেষ্ঠ মোঘল সম্রাট আকবরের জম্মদাতা। জীবনের অধিকাংশ সময়ই যার কাটাতে হয়েছে শের খা (শের শাহ) নামক এক আফগান বীরের তাড়া খেয়ে। হুমায়ুন খেয়ালীপনা করে যেমন রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে। তেমনি তিনি সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের কিশোরী হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন। এবং তাকে বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!! পরে এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আরেক সম্রাট আকবর দ্যা গ্রেট। এই খেয়ালী সম্রাট হুমায়ুনই স্বল্প অপরাধে যেমন কাউকে দিয়ে দিতেন মৃত্যুদন্ড। তেমনি গানে মুগ্ধ হয়ে গায়িকার সমওজনের স্বর্ন্মুদ্রাও দিয়ে দিতেন। একবার শের খা’র তাড়া খেয়ে নদীতে লাফ দিলে এক ভিসতিওয়ালার সাহায্য তার জীবন বাচে। পরে এই ভিসতিওয়ালাকে একদিনের (মুলত অর্ধেক দিন) জন্য দিল্লির সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন সম্রাট হুমায়ুন। অবশ্যই পরে এজন্য হুমায়ুনের ভ্রাতা মির্জা কামরানের হাতে জীবনও দিতে হয়েছে ভিসতিওয়ালাকে। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না। মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরে। বইয়ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় স্ত্রী হামিদা বানু এই সম্রাটকে বলছেন, ‘আপনি দুর্বল সম্রাট; কিন্তু অত্যন্ত সবল একজন কবি।’ ৭৩ পৃষ্ঠায় তার চিরশত্রু শের শাহ যিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন। তাঁরও নির্দেশ ছিল সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” *চরিত্র বিশ্লেষণঃ বৈরাম খাঁঃ আমাকে যে চরিত্রটা সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ করেছে সেটা হল বৈরাম খাঁ।সম্রাট হুমায়ূন ছাড়াও বইতে পরিচয় পাওয়া যাবে এক অসাধারন বুদ্ধিমান ও কূটনীতিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বৈরাম খাঁ এর।সিরাজউদ্দৌলা যেমন মীরজাফরের জন্য রাজ্য হারিয়েছিলেন, সম্রাট হুমায়ূন তেমনি বৈরাম খাঁ র বীরত্ব ও বুদ্ধিমত্তার জন্যই হৃত সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন।তিনি নিজের জীবনকেই সমর্পণ করেছিলেন সম্রাটের কল্যানে। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার প্রগাড় নিষ্ঠা চোখে পড়বার মতো। সম্রাট হুমায়ূনঃ সম্রাট হুমায়ূন এর চরিত্র ছিলো বহু বর্ণের। তিনি চিত্রকলা, যাদুবিদ্যা সম্পর্কে প্রবল আগ্রহী ছিলেন।এমনকি যুদ্ধকালীন সময়েও তাকে এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।ছিলেন আমুদে ও ভাগ্যে বিশ্বাসী। তার হৃদয় ছিলো ভালোবাসায় পূর্ণ।তিনি হৃদয়ে এতটাই বিশ্বাসী ছিলেন যে রাস্তার ফকির কে অর্ধদিনের সম্রাট বানিয়েছিলেন নিজের মুখের কথা রাখার জন্য।চরম বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও ভাই মির্জা কামরান কে বারবার ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন!তার পরম শত্রু ও তাকে ভালোবাসতো শ্রদ্ধা করতো। হামিদা বানুঃসম্রাট হুমায়ূনের হামিদা বানুর প্রতি অগাধ ভালবাসা নিদর্শনসরুপ। সম্রাটের ভালো সময় যেমন হামিদা বানু ছিলেন তেমনি সম্রাটের খারাপ সময় তিনি উনাকে ছেড়ে চলে যায় নি। তেমনি সম্রাট হুমায়ূন উনার ভালো সময় যেমন হামিদা বানুর যেকোন আবদার রাখতেন ঠিক তেমনি সম্রাট যখন পথে পথে ঘুরে পালাচ্ছিলেন তখনও কিন্তু হামিদা বানুর কোন আবদার তিনি বাকি রাখেন নি। অন্যান্য চরিত্রঃ হুমায়ূনের মেয়ে আকিকা বেগমের কথাও ঘুরেফিরে এসেছে। এছাড়াও বইয়ে বেশ কিছু চরিত্র আমরা পাবো। এর মাঝে বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্কর। সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জা। হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি (যিনি পানি সরবরাহ করেন) জওহরকে। আগ্রা দখল করা শের শা। হুমায়ূনের বোন গুলবদন। উদার পারস্য সম্রাট শাহ তামাম্পা সহ আরো বেশ কিছু চরিত্রই পাঠকদের মুগ্ধ করবে। মুগ্ধ করার মত আরো আছে হুমায়ুন ও কামরান মির্জার চমৎকার কিছু শের। *যে উক্তিগুলো ভালো লেগেছেঃ ১."রাজ্য হলো এমন এক রূপবতী তরুণী যার ঠোঁটে চুমু খেতে হলে সুতীক্ষ তরবারির প্রয়োজন হয়।" ২.হে প্রিয়তমা, যুক্তি বলেছে তোমাকে পাওয়া আকাশের চন্দ্রকে পাওয়ার মতোই দুঃসাধ্য। কিন্তু মন বলেছে তোমাকে পেয়েছি। মনের কথাই সত্য। তুমি আমার।" ৩.”দর আইনা গরচে খুদ নুমাই বাশদ পৈবসতা জ খেশতন জুদাই বাশদ । খুদ রা ব মিসলে গোর দীদন অজব অসত; ঈ বুল অজবো কারে খুদাই বাশদ।” যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায় কিন্তু তা পৃথক থাকে নিজে নিজেকে অন্যরুপে দেখা আশ্চর্যের ব্যাপার। এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ। ৪.রাজা যায় রাজা আসে। প্রজাও যায়, নতুন প্রজা আসে। কিছুই টিকে থাকে না। ক্ষুধার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে, তবে গল্প গিলতে পারে না। গল্প থেকে যায়। *পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ ইতিহাস নামক বিষয়টিকে আজীবন খুব ভয় পেতাম। এত ভুড়ি ভুড়ি সাল, স্থানের নাম, ব্যাক্তির নাম এসব মনে রাখা সম্ভব হত না। তবে ইতিহাস নিয়ে লেখা গল্পের মতন একটি বই যে এতটা উপভোগ করব তা আমার বিন্দুমাত্র জানা ছিল না। সম্রাট বাবরের পর কিভাবে এবং কেন সম্রাট হুমায়ূন আসে তা আমাদের পাঠ্য সমাজ বই শিখায় নি। আমাদের শুধুমাত্র জানা আছে বাবরের পুত্র হুমায়ূন আর হুমায়ূনের পুত্র আকবর। এমনি অজানা অনেক কিছু জেনেছি এই বই থেকে। সম্রাট হুমায়ূন কবি ছিলেন। কবিতা ছাড়াও জাদুবিদ্যায় তাহার যে বিশেষ আগ্রহ ছিল। গুলবদন হুমায়ূনের বোন তেমনি আকিকা বেগম হুমায়ূনের মেয়ে। এসব চরিত্রের কথা কখনই আমাদের উল্লেখ করা হয় নি। ইতিহাসের পাতায় এরাও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। কামরান মীর্জা (সম্রাট হুমায়ূনের ভাই), বৈরাম খাঁ এই দুই ব্যাক্তিত্ব হুমায়ূন জীবনীতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। এদের নিয়ে কিছুই বলব না, যদিও সব বলতে ইচ্ছা করছে। তবে বলা হয়ে গেলে পাঠকের জন্য স্পয়লার হয়ে যাবে। মোঘল রাজা বাদশাহদের ব্যাপারে আমরা যখনই পড়তে যাই, তখনই চোখের সামনে তুলে ধরা হয় তাদের রাজনৈতিক জীবন। তবে বাদশাহ নামদারে লেখক সম্রাট হুমায়ূনের ব্যক্তিগত দিক গুলোকে বেশি করে হাইলাইট করেছেন। তার খামখেয়লী, দোষ, গুণ, মানবিক দিকগুলো ফুটে উঠেছে এখানে। হুমায়ুন মির্জা তাঁর জীবনের ১৬ বছর সিংহাসনচ্যুত ছিলেন। এই দুঃসময়ের বর্ণনাও উঠে এসেছে গল্পে। এছাড়া বাদশাহ নামদারে আছে অনেককিছু। আছে থ্রিল, আছে ভালোবাসা, আছে মানবতা, আছে বিশ্বাসঘাতকতা; সেই সাথে আরো আছে তৎকালীন দেশ ও সমাজের অবস্থা; আছে শত্রুর প্রতি শত্রুর সম্মান ইত্যাদি।এছাড়া মোঘল আমলের হেরেম নীতি, বহুবিবাহ, ষড়যন্ত্র, মিথাচারের দৃশ্য অত্যান্ত প্রাঞ্জলভাবে ছাপ ফেলেছে গল্পের আনাচে কানাচে। উপহার লেনদেন, প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ, সবই চূড়ান্ত লেগেছে! *নিজস্ব মতামতঃ কী অপূর্ব কাহিনী! বইটা পড়তে পড়তে এই বাক্য নিজমনে অজান্তেই উচ্চারণ করেছিলাম! চমকপ্রদ সব ঘটনাবহুল একটি বই। লেখক এতো প্রাসঙ্গিকভাবে একের পর এক ঘটনা উপস্থাপন করেছেন যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পুরো বইটা পড়ে গেছি। একজন বাদশা বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন এটাই স্বাভাবিক। অথচ বাদশা হুমায়ুন যে শুধু বিলাসিতা করতেন তা না, সে খুব উদাসিন এবং হেঁয়ালি ধরণের জীবন যাপন করেছেন। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল। তবে গল্পের শেষে লেখক যে সত্যের সামনে দাঁড় করালেন সেই সত্য জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার ছিলনা। হুমায়ূন আহমেদ কেবল একটি গল্প লেখার চেষ্টা করেছেন, যা মোঘল সম্রাট হুমায়ূনের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। এতে ইতিহাস আছে, তবে তা পাঠককে বেঁটে খাওয়ানোর কোনও চেষ্টা করা হয়নি। জোর করে রেফারেন্স টেনে, ঘটনা প্রলম্বিত করে পাঠকের চোখে নিজের রিসার্চকে বড় করা হয়নি। এমনকি বাদশাহ হুমায়ূনের জীবনাবসান কিংবা জন্মলাভ পর্যন্ত সম্পূর্ণ চিত্রও এতে চিত্রিত নয়। বরং টুকরো টুকরো বিষয় বেশি টানা হয়েছে, যার উপস্থিতি হয়তো মূল ইতিহাসে তো বেশিভাবে ছিলনা। যেমন হুমায়ূনের মেয়ের কাহিনী, কিংবা হরিশংকরের শেষের দিকের দিনগুলো। কিংবা শের শাহ্'র ছেলেদের সাথে তার কুটনৈতিক আলাপচারিতা। কিংবা হুমায়ূনের খাবার, কিংবা হুমায়ূনের ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনার বিবরণ। তবুও এই জিনিশগুলোই গল্পকে আলাদা করেছে, গল্পের মতো করেছে, মানবিক করেছে, আকর্ষণীয় এবং সাবলীল করেছে। *প্রচ্ছদ বিশ্লেষণঃ বইটি যেহেতু ইতিহাস নির্ভর সেই অনুযায়ী প্রচ্ছদ টা বলবো খুব লোভনীয় হয়েছে। একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায় প্রচ্ছদে আসলে তাদের জীবনধারা তুলে দেওয়া হয়েছে। বইয়ের আলোচ্য বিষয়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রচ্ছদের যথার্থ মিল রয়েছে *নামকরনঃ বইটি সম্পুর্ন বাদশাহ হুমায়ূন এর জীবন সম্পর্কে আলোচনা। তার শখ, শাসনব্যবস্থা, সেনা পরিচালনা, ব্যাক্তিগত জীবন, একজন রাজা হিসেবে কি কি ভালো গুন ছিলো আর খারাপ গুন ছিলো সবকিছু সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ হয়েছে। তাই সবকিছু মিলিয়ে বলবো বইটির নামকরনে যথেষ্ট স্বার্থকতা রয়েছে। *প্রুফ রিডিংঃ পুরো বইয়ে এই বিষয় টা ছিলো নজরকাঁড়ার মতো। বইটি পড়ার সময় আমি কোথাও এতোটুকু বানান ভুল পাইনি, পুরো বইটির এই দ্বায়িত্ব যার হাতে ছিলো সে খুব দ্বায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেছে। এতো ভালো একটা বইতে কোনরকম বানানের অসংগতি আমার চোখে পড়েনি। *লেখক পরিচিতিঃ হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮–১৯ জুলাই ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন এবং নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিমার রসায়ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।[২] হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। সত্তর দশকের এই সময় থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তার গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তার সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনীও তার সৃষ্টিকর্মের অন্তর্গত, তার রচিত প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা। তার টেলিভিশন নাটকসমূহ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত অন্যতম উপন্যাসসমূহ হলো মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সর্ব সাধারণ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৯৪-এ তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তার নির্মিত অন্যান্য সমাদৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), শ্যামল ছায়া (২০০৪), ও ঘেটু পুত্র কমলা (২০১২)। শ্যামল ছায়া ও ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। রকমারি বইয়ের লিঙ্কঃ
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাসের মত বোরিং বিষয়কে দারুণ লেখনীতে এতটা সজীব করতে পারেন কেবল হুমায়ূন আহমেদ ই
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_নভেম্বর বইয়ের নামঃ বাদশাহ নামদার লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ বইয়ের ধরণঃ ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০১১ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ পৃষ্ঠাঃ ২৩১ মূল্যঃ ৩০০ টাকা (রকমারি) সার-সংক্ষেপঃ “আমি বাদশাহ নামদার গ্রন্থে ৯১৩ আবজাদ সংখ্যায় সম্রাট হুমায়ুনের বিচিত্র কাহিনী বর্ননা করবো। এই কাহিনীতে ঔপন্যাসিকের রঙ চড়ানোর কিছু নেই। সম্রাট হুমায়ুন অতি বিচিত্র মানুষ। ভাগ্য বিচিত্র মানুষ নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। ভাগ্য তাঁকে নিয়ে অদ্ভুত সব খেলা খেলেছে” -হুমায়ুন আহমেদ পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ রিভিউ লেখা শুরু করার আগে বলতে চাই, এটি একটি বড় পোস্ট! এখানে আমি অনেক বেশী কথা বলেছি। মূলত উপন্যাসটির ব্যাপারে নিজের অনুভূতি তুলে ধরেছি। তাই স্পয়লার আছে কিনা জানিনা। সুতরাং প্রিয় পাঠক, রিভিউটি পড়ার সময় একটু সাবধানে পড়বেন। কোথাও স্পয়লার মনে হলে নিজগুণে ক্ষমা করে দিবেন! তাহলে শুরু করা যাক... “বাবার হলো আবার জ্বর, শারিলো ঔষধে” মূল বইয়ের প্রসঙ্গে আসার আগে কাহিনীর প্রেক্ষাপঅট কিছুটা বলে নেই। প্রথম প্রসংগ হচ্ছে ইতিহাস। মোঘল সাম্রাজ্য। ইতিহাসের অন্যতম জমকালো অধ্যায়। এই সাম্রাজ্যের কথা মাথায় এলে সবার চোখের সামনেই ভেসে ওঠে জাকজমকপূর্ণ সব কর্মকান্ড। হিরে-মতি-জহরত, সোনার সিংহাসন, বিশাল রাজ দরবার, শত শত খাদেমদার, বিশাল কামান ও ঘোড় সাওয়ারী নিয়ে যুদ্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি। আলোচ্য বইয়ের কাহিনীও সেই জমকালো গল্প নিয়ে। মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন সম্রাট বাবর। ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীকে পরজিত করার মাধ্যমে ভারতবর্ষে তিনি এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ইতিহাসমতে তিনি সেই সাম্রাজ্য পুরোপুরি ভোগ করে যেতে পারেন নি। ১৫৩০ সালে তার মৃত্যু হয়। বাবরের মৃত্যুর পর মসনদে বসেন তার পূত্র হুমায়ুন মির্জা। যদিও তার সন্তানদের সংখ্যা ছিল ১৮টি। তবে তার ভেতর অনেকেই শৈশবে মৃত্যবরণ করেন। সর্বশেষ ৪ জন পুত্র বেঁচে ছিল তার। এর ভেতর সবার বড় ছিলেন হুমায়ুন। তাই রাজ্য পরিচালনার ভার তার কাধেই পড়ে। ইতিহাস অনুযায়ী, হুমায়ুন মির্জা দিল্লির অধিপতি হয়েও অত্যন্ত খামখেয়ালী একজন মানুষ ছিলেন। ছিলেন অসম্ভব জ্ঞানপিপাসু, দয়ালু ও মার্জিত আচরণের অধিকারী। এমনকি নিজের পরম শত্রুকেও তিনি ক্ষমা করতে দ্বিধা করতেন না। হুমায়ুন মির্জার এই সব গুনের কারণেই তার জীবন হয়ে ওঠে অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়! বাদশাহ নামদারের কাহিনী সেই বৈচিত্রময়তাকে ঘীরেই। এবার আসি ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রসঙ্গে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায় বলেছিলেন, “উপন্যাস, উপন্যাস। উপন্যাস ইতিহাস নহে”। অর্থাৎ ইতিহাস সাধারণত কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বর্ণনা করে। শুধুমাত্র ঘটনাকেই তুলে ধরে, ঘটনার সাথে জড়িত মানুষদেরকে না। কিন্তু ঐতিহাসিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে সেটি হয় না। একজন লেখক যখন তার উপন্যাসে ইতিহাসকে টেনে আনেন। কিংবা ইতিহাসকেই প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন, তখন তিনি সেই চরিত্রগুলোর দিকে নজর দেন। মূল ঘটনা একই রেখে নিজের কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করে নতুন দৃশ্যপট তৈরী করেন। চরিত্রগুলোকে বাস্তব করে তোলেন। এবার আসি বইয়ের কথায়। “বাদশাহ নামদার” হুমায়ুন স্যারের লেখা একটি ঐতাহাসিক উপন্যাস। আমার জানা মতে স্যার তার জীবনে দু’টি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন। একটি “দেয়াল”, অপরটি “বাদশাহ নামদার”। সাধারণত আমি কোন উপন্যাসকে অসাধারণ হিসেবে আখ্যায়িত করিনা। তবে এটিকে করছি। কেন করছি, তা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি... ১। উপস্থাপনাঃ সাধারণত আমরা ইতিহাস পড়তে গেলে এক ধরণের গুরু গম্ভীর বর্ণনার সম্মুখিন হই। সে যতই উপন্যাস হোক, গুরু গম্ভীর ব্যাপারটা থেকেই যায়। বাদশাহ নামদার’এ সেসব নেই। হুমায়ুন স্যার তার অভুতপূর্ব লেখনির মাধ্যমে খুব সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিতে ইতিহাসের জায়গাগুলো তুলে ধরেছেন। ২। বর্ণনাঃ আগেই বলেছি মোঘল সাম্রাজ্যের কথা মাথায় এলে বেশ ঝকঝকে এক ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ঝলমলে ব্যাপার। হুমায়ুন স্যার এই ব্যাপারগুলো অনেক চমৎকারভাবে ফুটিতে তুলেছেন। তৎকালীন সম্রাটদের খামখেয়ালী, তাদের বিলাসী জীবনযাপন, রাজরানী ও রাজকুমারীদের জীবন ধারা ইত্যাদি ব্যাপারগুলো খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন স্যার। এই প্রসঙ্গে গল্পের একটি জায়গা তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না... আলোচ্য গল্পে দেখা যায়, হুমায়ুন মির্জার কন্যা আকিকা বেগম সদ্য সতিদাহ থেকে বেঁচে আসা এক দাসী অম্বার সাথে খেলা করছে। ধাঁধাঁর খেলা। একজন আরেকজনকে ধাঁধাঁ জিজ্ঞেস করবে, না পারলে মাটিতে নাক ঘসবে। এরকম অবস্থায় খেলা চলতে চলতে এক সময় রাজকুমারি একটি ধাঁধাঁর উত্তর পারলো না। তখন অম্বা তাকে উত্তরটি বলে। উত্তরটি হলো আনারস। রাজকুমারি সেটি কখনও দেখে নি বলে তক্ষুনি লোক পাঠায় আনারস খুজে আনতে। এই জায়গাটিতে হুমায়ুন স্যার লিখেছেন এইভাবে, “আকিকা বেগম আনারস ফল বঙ্গালমুলুক থেকে আনার হুকুম দিল। ফল দেখার পর সে নাকে মাটি ঘষবে। আকিকা বেগমের নির্দেশে দুজন অশ্বারোহী আনারস সন্ধানে গেলো। অম্বা হতভম্ব। বাচ্চা একটি মেয়ের এত ক্ষমতা!” ৩। হুমায়ুন স্যারের হিউমারঃ হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখার সব থেকে অসাধারণ দিক হলো, তার সূক্ষ্ম হিউমারগুলি। গল্প বলার ফাকে ফাকে তিনি কিছু অসাধারণ কথা বলেন। কখনও নিজে, কখনওবা চরিত্রকে দিয়ে। বাদশাহ নামদার’এও এর বিপরীত হয় নি। এছাড়া বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আছে হুমায়ুন মির্জার কিছু সের বা অনুকাব্য। যা হুমায়ুন স্যার নিজে অনুবাদ করে লিখেছেন। ৪। হুমায়ুনের চরিত্র বিশ্লেষণঃ মোঘল রাজা বাদশাহদের ব্যাপারে আমরা যখনই পড়তে যাই, তখনই চোখের সামনে তুলে ধরা হয় তাদের রাজনৈতিক জীবন। তবে বাদশাহ নামদারে লেখক সম্রাট হুমায়ুনের ব্যক্তিগতদিকগুলোকে বেশি করে হাইলাইট করেছেন। তার খামখেয়লী, দোষ, গুণ, মানবিক দিকগুলো ফুটে উঠেছে এখানে। হুমায়ুন মির্জা তাঁর জীবনের ১৬ বছর সিংহাসনচ্যুত ছিলেন। এই দুঃসময়ের বর্ণনাও উঠে এসেছে গল্পে। এছাড়া বাদশাহ নামদারে আছে অনেককিছু। আছে থ্রিল, আছে ভালোবাসা, আছে মানবতা, আছে বিশ্বাসঘাতকতা; সেই সাথে আরো আছে তৎকালীন দেশ ও সমাজের অবস্থা; আছে শত্রুর প্রতি শত্রুর সম্মান ইত্যাদি। এবার বলি বইটির বাইরের দিক। বাদশাহ নামদার বইটির প্রচ্ছদটি বেশ সুন্দর। ছোট খাটো সাইজের বইটি দেখতেও বেশ। কাগজ, বাঁধাই, ছাপা সবই খুব সুন্দর। তবে দামের ব্যাপারে কিছুটা খটকা লেগেছে আমার। ছোট সাইজের ২৩০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের তুলনায় দামটা একটু বেশি। মূদ্রিত মূল্য ৪০০টাকা। তবে হুমায়ুন স্যারের বই যারা পড়েন, তারা তাঁর বইয়ের দামের ব্যাপারে খুব ভালোভাবেই অবগত। তাই কিছু বলার নেই! :p সবশেষে বলতে চাই, বাদশাহ নামদার অত্যন্ত চমৎকার একটি বই। এক কথায় অসাধারণ। এমনকি আমার মতে এটি হুমায়ুন আহমেদ স্যারের সেরা কাজগুলোর একটি। তাই যারা এখনও পড়েন নি, দ্রুত পড়ে ফেলুন। নতুন বছরটা একটি চমৎকার অতীতের গল্প দিয়ে শুরু করুন। কথা দিচ্ছি, ঠকবেন না! :) ধন্যবাদ। :) হ্যাপি রিডিং! :) প্রিয় উক্তিঃ *** “রাজা যায়, রাজা আসে। প্রজাও যায়, নতুন প্রজা আসে। কিছুই টিকে থাকে না। ক্ষুধার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে, তবে গল্প গিলতে পারে না। গল্প থেকে যায়।” *** "রাজ্য হলো এমন এক রূপবতী তরুণী যার ঠোঁটে চুমু খেতে হলে সুতীক্ষ্ন তরবারির প্রয়োজন হয়।" (ভারত উপমহাদেশের মোঘল সম্রাট বাবরের প্রথম পুত্র সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন মির্জা'র বিদ্রোহী ভাই মির্জা কামরানের লেখা কবিতা) রেটিংঃ ৪.৫/৫ (দামের কারণে .৫ কেটে রাখলাম! :p )
Was this review helpful to you?
or
বাদশাহ হুমায়ুনের ইতিহাস একটা সংক্ষিপ্ত, খুব সুন্দর পরিপাটি করে তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। হুমায়ুন আহমেদ স্যার সত্যিকারের একজন কলমের জাদুকর।
Was this review helpful to you?
or
বাদশাহ নামদার-বুক মিভিউ রিভিউ প্রতিযোগিতার জন্য সাধারনত লিখিনা। খুব বস্তুগত মনে হয়। বই পড়া আর বইয়ের আলোচনা দুটোই মনের ব্যাপার। তবে যেহেতু রিভিউয়ের শুরুতে কুর্নিশ করে নামদারের জগতে প্রবেশ করতে আদেশ আরোপ করা হয়েছে। তাই কুর্নিশ দিয়ে শুরু করি। আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকাল আল মুকাররাম, জামিই সুলতানাই-ই হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আল সালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসির উদ্দিন মোহাম্মদ হুমায়ুন পাদশাহ, গাজি জিল্লুল্লাহ। কুর্নিশ এর লোভেই মিভিউ লেখা। মানুষ নিজের নামকে বড় ভালোবাসে। হুমায়ুন আহমেদ বাসতেন তো বটেই। তাই আলাদা যত্নে, খাবারের আভিজাত্যে বইকে রসময় করে তুলেছেন। হুমায়ুনের মাঝে নিজেকে খুজেছেন। আমি যেমন নিজের ক্ষেত্রে করি। মারুফ নামে কেউ যদি ফাস্ট হয়-খারাপ কি। এমনিতে তো খটমটে ইতিহাস পড়তে ইচ্ছা করেনা-রসে সাহিত্যে যদি একটু জানা যায়-পড়া যায় মন্দ কি। লেখক হুমায়ুন আগেই বলে দিয়েছেন যে সম্রাট হুমায়ুনের জীবনে এমনিতেই এত বৈচিত্র্য ছিল যে নতুন করে কিছু আনতে হয়না। হয়ত উপন্যাসের প্রয়োজনে তিনি নিজে কিছু যোগ করেছেন-আর আমিও যেহেতু ঐতিহাসিক নই-তাই তা ধরব না। বাবার প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা, পরক্ষনেই অন্যমনস্ক, ভাইদের প্রতি ক্ষমার অপার নিদর্শন। আবার লাল পোশাকে হলুদ পোশাকের মর্মার্থ-রাজকার্যের বিহবলতা ভাবা যায়! অনেকেই দেখবেন রাস্তার ক্যানভাসার বলে বেড়ায় যে-এই বই পড়লে জানতে পারবেন যে কিভাবে কি করতে হয়, কখন কি করলে কি হয়। বলাই বাহুল্য এই বই পড়লে আপনার রুচি বাড়তে বাধ্য। অনেকে আবার রান্নার প্রনালী শুনে পুরাতন ঢাকায় গ্লাসি খুজে বসতে পারেন। সত্যি এখনো গ্লাসি পাওয়া যায়-তবে রান্না পদ্ধতি অবশ্যই সেরকম না। জানি হারু হুমায়ুন। তবুও কেন জানি বার বার মনে হচ্ছিল এই হুমায়ুন জিতে যাচ্ছেন। লেখক এই হারু হুমায়ুনের জন্য আমাদের কাছ থেকে পুরোপুরি সমর্থন উদ্ধার করে নিয়েছেন। আর তাই তো শেষে এসে আমরা হুমায়ুনের ইতিহাস জানতে পারছি। ইতিহাস রচিত হয় বিজয়ীদের দিক থেকে, পরাজিতরা ইতিহাস রচনা করেনা। এখনকার মত পিপলস চ্যাম্পিয়ন উপাধি তখন ছিল না। বই পড়তে পড়তে আপনার খুব আমোদ লাগতে পারে। মনে হতে পারে ইশ কত আরাম। বলাই বাহুল্য হুমায়ুন ছিলেন একজন। সেই সময়ে আমরা জন্মালে হয়তো এই লেখাপড়ার ধারের কাছে যেতে পারতাম না। জীবনের কোন মুল্য থাকতো কিনা সন্দেহ। থাক। ব্রিটিশরা অন্তত জাতিকে এই দিক থেকে সভ্য করে দিয়ে গিয়েছে। আর সেই জোসনা রাতে দুজনে পাশে বসার গল্প। হুমায়ুনের রচনা আর তাতে জোসনা থাকবেনা?? হুমায়ুন তার স্ত্রীর পাশে বসে আছেন। তাদের গায়ে অবাক জোসনা গলে গলে পড়ছে। অবশ্যই সংগ্রহে থাকার মত বই।
Was this review helpful to you?
or
mohe pore gelam, best.poropare bhalo takok ,dowa roilo
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদ সহজ সরল ভাষায় যা রচনা করেন তা হৃদয়গ্রাহী। বাদশাহ নামদার বইটিও দারুণভাবে রচনাকৃত। বাবরের সেই ঐতিহাসিক ত্যাগ পুত্র হুমায়ুনের জন্য। হুমায়ুনের উদাসীনতা, আফিমের নেশা সব কিছু তুচ্ছ করে এখানে বড় হয়ে হয়ে উঠেছে হুমায়ূনের কমল হৃদয়। ভ্রাতা মির্জা কামরানের একের পর এক বিস্বাসঘাতকতা, বৈরাম খাঁ এর সুনিপুণ বুদ্ধি অবশই চমকপ্রদ। মোঘল চিত্রকলার পথপ্রদর্শক হুমায়ূনের কিছু ছেলেমানুষি কার্যকলাপ অবশই পাঠককে ভাবিত করবে। কোহিনূর থেকে শের শাহ সবই স্থান পেয়েছে এই বইয়ে। যারা ইতিহাস একদম দুচোখে সহ্য করতে পারেন না, তারাও বইটি ভালোবাসবেন। একবার ঘুরেই আসুন না বাদশাহ হুমায়ূনের রাজদরবার থেকে। আমিররা আপনাকে অভ্যার্থনা জানানোর জন্য হয়তোবা বসে আছেন। বাদশাহকে কুর্নিশ করতে ভুলবেন না কিন্তু না হয় গর্দান যাবে।
Was this review helpful to you?
or
মোঘল সাম্রাজ্য, এ এমন এক সাম্রাজ্য, যে সাম্রাজ্যের প্রতিটি চরিত্র ইতিহাসের পাতায় কোননা কোন ভাবে কিংবদন্তী হয়ে আছে। শত শত বৎসরের ইতিহাস, ঐতিহ্য। যুগেযুগে হয়েছে বহু গবেষণা, রচিত হয়েছে কালজয়ী বিভিন্ন পুস্তিকা। ঠিক তেমনি এক কিংবদন্তী তুল্য চরিত্র নিয়ে লেখা হয়েছে এই বই। সে কিংবদন্তীর নাম "আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকাল আল মোকাররম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আলসালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসিরুদ্দিন মোহাম্মদ #হুমায়ূন পাদশাহ গাজি জিল্লুল্লাহ"। সম্রাট হুমায়ূনের বাবা ছিলেন মোঘল সাম্রাজ্যের আরেক কিংবদন্তী সম্রাট বাবর। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ূন অসুস্থ হয়ে পড়েন, হুমায়ূন ছিলেন সম্রাট বাবরের চার ছেলে সন্তানের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রিয়। ভবিষ্যৎ মোঘল সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে যাকে বিবেচনায় রেখেছেন সম্রাট বাবর। ছেলের দুরারোগ্য ব্যধিতে যখন সকল হাকিম কবিরাজ ব্যর্থ, ঠিক তখনি সম্রাট বাবর স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করলেন যাতে তাঁর প্রানের বিনিময়ে তাঁর সন্তানকে আরোগ্য দান করা হয়, স্রষ্টা দোয়া কবুল করলেন, হুমায়ূন আরোগ্য লাভ করলেন এবং সম্রাট বাবর মৃত্যুবরণ করলেন, তার তিনদিন পর সিংহাসনে বসলেন হুমায়ূন। বাদশা হুমায়ূন ছিলেন বড্ড বেখায়ল প্রকৃতির মানুষ। যার কিনা রয়েছে শাসক স্বত্বা ছাড়াও একটি ভিন্ন মনুষ্য রূপ, যেখানে বসবাস করে ভাবাবেগ, ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, ক্ষমা করার এক অতিমানবিয় গুণাবলী, এবং সর্বোপরি এক কবি স্বত্বা, যিনি কিনা তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত নিয়ে শের বাঁধতেন। যিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী, যার ছিল পৃথিবীকে জানার এক অপার্থিব আকাঙ্খা, যিনি ছুটে বেড়াতেন নতুনের খোঁজে, যেখানে প্রকৃতি মিশেছে মানব মনে শুন্যতা তৈরীর সকল উপাদান নিয়ে। বারবার আক্রান্ত হয়েছেন আফগান সেনাদের দ্বারা, কিন্তু তিনি এমনি এক ব্যক্তিত্ব'র অধিকারী ছিলেন যে ভয়ংকর শেরশাহ পর্যন্ত সৈন্যদের নির্দেশ দিলেন যাতে কোন ভাবেই পরাজিত হুমায়ুনকে আটক, জখম বা হত্যা করা না হয়, কারন তিনি হয়তো শের শাহ'র প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু তিনি মনের দিক থেকে এক অনন্য মানুষ, যার মানবিক গুনাবলিতে মুগ্ধ তাঁর শত্রু পক্ষও। ভুলেভরা আর আবেগিয় চিন্তার হেতু হারিয়েছেন রাজত্ব, ছুটে চলেছেন পথেঘাটে, জলে জঙ্গলে, এসেছেন এ বাঙ্গাল মুলুকেও, তবুও তিনি ছিলেন সম্রাট, যে মানুষটি তাঁকে আবার সর্বস্ব ফিরে পাবার স্বপ্ন দেখিয়েছেন এ দুঃসময়েও, তিনি ইতিহাসের আরেক সাহসী কিংবদন্তী বৈরাম খাঁ। মৃত্যুর হাতছানি যাদের পিছু ছাড়েনি এক মুহূর্তও, যেখানে আপন রক্ত করেছে বিশ্বাস ঘাতকতা, যেখানে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়নি কেউই, সেখানে বৈরাম খাঁ ছিলেন সম্রাট হুমায়ূনের সকল আশার প্রদীপ, যার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর অপরিসীম আনুগত্যতায় সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন রাজ্য হারা সম্রাট, চাঁদের আলোতে খোলা ময়দানেও ছিলেন তিনি সম্রাট, যে বৈরাম খাঁ না থাকলে হয়তো হুমায়ূনের ইতিহাস লেখা হতো অন্য ভাবে, যে বৈরাম খাঁ'র সহযোগিতা না পেলে হুমায়ূন ফিরে পেতেন না তাঁর হারানো সাম্রাজ্য, আর হয়তো ইতিহাস পেতনা আকবর দ্য গ্রেটকে। বাদশাহ হুমায়ূনের নানা উত্থান পতন আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সব ঘটনার সমন্বয় ঘটেছে এ বইতে, তো পাঠক চলুন হারিয়ে যাই বাদশাহ নামদারের ভুবনে, যেখানে অপেক্ষা করছে শত বছরের পুরনো, অথচ জীবন্ত সব কিংবদন্তীর অনুভূতি। --------------------------- পাঠানাভূতি -------------------------- লেখক বইয়ের শুরুতেই বলে দিয়েছেন যে হুমায়ূন এমন এক চরিত্র, যেখানে অতিমাত্রায় কোন রং চড়ানোর প্রয়োজন নেই, কারন তাঁর জীবন আর প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড এতটাই নাটকীয় যে অবলীলায় সেটি ফিকশনের চেয়েও বেশি কিছু। এ বইটির মূল উপজীব্য ইতিহাস হলেও এটি কোন নিখাদ ইতিহাস নয়, এতে আছে প্রেম, জোছনা, আছে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, আছে মানবিকতার গল্প, আছে নিষ্ঠুরতা আর রক্তের দাগ। মন্ত্রমুগ্ধের মতন পড়ে গেছি বইটি। লেখকের লেখার গতি এতটাই বেশি ছিল যে মনে হচ্ছিলো জীবন্ত ছবিগুলো আমার চোখের সামনে দিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, রাজ প্রাসাদ, যুদ্ধের ময়দান কিংবা হেরেম ভেসে উঠেছে আমার সামনে। মনে হচ্ছিলো আমি টাইম মেশিনে চড়ে ফিরে গিয়েছি সে মোঘল সাম্রাজ্যে। সাধারনত ইতিহাস আশ্রিত বইগুলোতে বাহুল্যতা থাকে, কিন্তু এ বইটি একদমি ব্যতিক্রম, বাহুল্যতা বিবর্জিত, ইতিহাসকে যে এভাবেও উপস্থাপন করা যায়, এভাবেও ভালো লাগানো যায় সেটি এ বই না পড়লে হয়তো অনুভব করতে পারতাম না। তবে, কিছু জায়গায় ভালো না লাগারও কারন ছিল। যেমন আমার মনে হয়েছে লেখার গতিটা মসৃণ ছিলোনা, মনে হয়েছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লাফিয়ে যাচ্ছে, ঘটনাগুলো ঠিক মতো জোড়া লাগছেনা। কিছু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটেছে ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণ পর তাঁদের আর দেখা যায়নি, অথচ আবির্ভাব ঘটেছে গুরুত্বের সাথেই। সবচেয়ে বেশি চোখে লেগেছে বৈরাম খাঁ চরিত্রটির উপস্থাপনা নিয়ে। অনেক জায়গাতেই তাঁর উপস্থিতি ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই নেই হয়ে গেলো, আমার মনে হয় বৈরাম খাঁ'কে লেখক ঠিক সেভাবে ফোকাস করেননি প্রথম দিকে, তিনি যতটা ফোকাস পাবার কথা, শুরুতে সেটি ছিলোনা, যদিও বা শেষের দিকে এসে সেটি গুরুত্ব পেয়েছে। তাছাড়া বর্ণনা ভঙ্গিতেও কখনও কখনও মনে হয়েছিলো যে খুব দ্রুত টানা হচ্ছে, আরেকটু স্লথ হলে হয়তো আরও ভালো হতো। এছাড়া বইয়ের প্রচ্ছদ এবং বাঁধাই, কাগজের মান ছিল দুর্দান্ত। আমার রেটিংঃ ৪/৫
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ বাদশাহ নামদার লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ২৩১ ধরণঃ ঐতিহাসিক উপন্যাস . "বাদশাহ নামদার" হুমায়ূন আহমেদ রচিত এমন এক বই যার রিভিউ দেয়া বেশ কষ্টসাধ্য! তবুও, পছন্দের বই গুলো নিয়ে না লেখলে মনের ভেতর কেমন অস্থিরতা থেকেই যায়.... তাই, বলতে গেলে একটু একটু ভয় নিয়েই এই অসাধারণ বইটির রিভিউ লিখায় হাত দিলাম! . সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ূন ছিলেন বেশ খামখেয়ালি ধাঁচের মানুষ। তার দিনের বেশীর ভাগ সময়ই কাঁটত বই পড়ে। হুমায়ূন এর বই পড়ায় ছিল অপরিসীম আগ্রহ। যাদুবিদ্যা, দর্শনবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে জানার এক তীব্র কৌতূহল ছিল তার। পুত্রদের মধ্যে হুমায়ূন ছিলেন বাবরের কাছে কোহিনুর হিরক খন্ডের চেয়েও প্রিয়! অবশ্য এই বিখ্যাত #কোহিনূর হিরক খন্ডটি হুমায়ূনই পিতাকে উপহার দেন... উপহার দেয়ার চব্বিশ ঘন্টার ভেতরই হুমায়ূন ঘটান এক অদ্ভুত ঘটনা! দিল্লির রাজকোষ দখল করে রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে হুমায়ূন আবার পালিয়ে যান... এই ঘটনা ঘটান হুমায়ূন ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে। যাইহোক, হুমায়ূন এর খামখেয়ালিপনার বেশীর ভাগ অংশই পিতা সম্রাট বাবরকে কেন্দ্র করেই চলত। একটা সময় হুমায়ূন হয়ে পড়েন অসুস্থ। তার শারীরিক অবস্থা এতই খারাপের দিকে এগুতে থাকে যে সম্পূর্ণ রাজ্যে শাহজাদা হুমায়ূনের অসুখ সেরে যায় তেমন চিকিৎসা আর নেই! তবে? পিতার সামনে প্রাণপ্রিয় পুত্র মারা যাবে? না... সম্রাট বাবর তা মেনে নিতে পারলেন না! সম্রাট বাবর যে কিভাবে ছেলের জীবন বাঁচান তা আশা করি আমরা সবাই ক্লাস টেনে কবি গোলাম মোস্তফার #জীবন_বিনিময় কবিতায় পড়ে আসছি, তাই ওইদিকে আর গেলামনা। . ১০ জমাদিউল আউয়াল ৯৩৭ হিজরিতে ৩০ ডিসেম্বর, ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ূন বসেন দিল্লির সিংহাসনে...... সম্রাট হুমায়ূনের জীবন কাটে নানান বিচিত্র ঘটনার মধ্য দিয়ে। লেখক #বাদশাহ_নামদার গ্রন্থে হুমায়ূনের জীবনের বেশ অনেকটাই আলোচনা করেছেন, কিন্তু যেহেতু এটি একটি রিভিউ তাই বইয়ের সব দিক আলোচনায় না আনাই ভাল। সম্রাট হুমায়ূনের রাজ্যশাসন এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন #বৈরাম_খাঁ এই মানুষটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মুগ্ধ করে আমায়! এত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক মানুষ বৈরাম খাঁ যে, বই পড়তে পড়তে এক সময় মনে হয় "বাদশাহ নামদার" বইটি বোধহয় বৈরাম খাঁ সাহেবকে কেন্দ্র করেই লিখা! সম্রাট হুমায়ূনের ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন #শের_খাঁ শের খাঁ এমনই এক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি যে তিনি তার বুদ্ধির জোরেই জীবদ্দশায় রাজত্ব করে যান! অদ্ভুত এক ব্যক্তি তিনি। অদ্ভুত বলছি কারণ, শের খাঁ চান দিল্লির সিংহাসন, অথচ তিনি চাননা সম্রাট হুমায়ূনের কোন ক্ষতি! সম্রাট হুমায়ূনের গায়ে যেন এতটুকু আঁচ না লাগে শের খাঁ নিজ পুত্রদের সেই কথা বারবার বলে দেন!! যাইহোক, চুনার দূর্গ জয়লাভের পর সম্রাট হুমায়ূন চলেন চুনার দূর্গ দেখবেন বলে। নিজ বিজিত রাজ্য ঘুরে দেখবেন বলে সম্রাট বের হন #জওহর_আবতাচি কে নিয়ে। পেছনে সম্রাটের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বাহিনী। সম্রাট চলছেন, পথে নানান আনন্দময় দৃশ্য দেখে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। আরো সামনে চলেন, হঠাৎ নজরে পড়ে- এক জায়গা। শ্মশান! লোকে লোকারণ্য! ঢোল বাজছে, ঘন্টা বাজছে। চারজন পুরোহিত আসন গেড়ে বসে আছেন। সতীদাহ হবে! এই সেই ঘৃণ্য সতীদাহ প্রথা! সম্রাট দেখতে চান সতীদাহের মেয়েটিকে। দেখতে পান একটি বাচ্চা মেয়েকে। অম্বা তার নাম। সম্রাটের কন্যা আকিকা বেগমের সাথে এই মেয়েটির কোথায় যেন এক মিল পান তিনি! সম্রাট তৎক্ষণাৎ ফরমান জারি করেন, বন্ধ হোক সতীদাহ প্রথা! কিন্তু, জওহর আবতাচি জানান, সম্রাটের এ অঞ্চলের বেশীর ভাগ প্রজাই হিন্দু, যদি সম্রাট এ আদেশ জারি করেন তবে প্রজারা ক্ষুব্ধ হবে আর সম্রাটের পক্ষে রাজ্য পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে! তবে? সম্রাটের হুমায়ূনের চোখের সামনেই ঘটবে ইতিহাসের এই বর্বরতম কাজ??? কি করবেন সম্রাট? কি করে বাঁচাবেন নিজ কন্যাসম এই মেয়েটিকে? অতঃপর... কাহিনী চলতে থাকে। চলতে থাকে সম্রাট হুমায়ূনের রাজ্য। ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন শের খাঁ। শের খাঁ যে দিল্লি জয় করে নেন সে ইতিহাস আমার ধারণা কারো অজানা নয়। বীর শের খাঁ, দিল্লি জয় করার আগে পুত্রদের যেমন বলে দেন হুমায়ূনের যেন কোন ক্ষতি হয়না, তেমনই পুত্রদের জানিয়ে দেন যেকোনো মূল্যে হত্যা করতে হবে বৈরাম খাঁ কে!! কারণ, বৈরাম খাঁ বিহীন সম্রাট হুমায়ূন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবেননা! তারপর.... দিল্লির শাসন হারিয়ে হুমায়ূন যখন পানিতে ডুবে মরার অপেক্ষায় তখন ফেরেশতাসম সামনে আসেন #ভিসতিওয়ালা_নাজিম! সম্রাট কথা দেন এই ব্যক্তিটিকে, যদি তিনি বেঁচে গিয়ে আবার দিল্লির সিংহাসনে বসতে পারেন তবে অবশ্যই এই নাজিমকে একদিনের জন্য হলেও দিল্লির সিংহাসনে বসাবেন। কি হয় তারপর সেই ভিসতিওয়ালা নাজিমের? . এদিকে, বৈরাম খাঁ কে হত্যা করার জন্য দাঁড়িয়ে সৈন্য... কিন্তু তারা ঠিক চিনতে পারছেনা তাকে। কারণ বৈরাম খাঁর পাশে ছিলেন #কাশেম_খাঁ। কে বৈরাম আর কে কাশেম সৈন্যরা ঠিক বুঝতে পারছেনা.... তারপর... কি হয়? কেমন করে বেঁচে যান বৈরাম খাঁ... ইতিহাসে কি তেমন আত্মত্যাগের প্রমাণ আর পাওয়া যাবে? . সম্রাটের ভাই মীর্জা কামরান। মানুষ যে বিশ্বাসঘাতকতা কতবার করতে পারে মীর্জা কামরানের কাহিনী না পড়লে হয়তো জানাই হতোনা! এত বিশ্বাসঘাতকতা করার পরও সম্রাট হুমায়ূন ভালবেসে ক্ষমা করে দিতেও পারতেন এই অকৃতজ্ঞকে! কতবার যে এই মানুষটা নবাবের ক্ষতি করার জন্য চেষ্টা করেছে! হ্যাঁ, নিজ ভাইকে হত্যা করতেও তার বাঁধেনি!! . কাহিনীর প্রথম দিকেই #আচার্য_হরিশংকর নামে এক হিন্দু ব্যক্তির আগমন হয় সম্রাট হুমায়ূন এর কাছে। আরেক জঘন্য নির্দয় ব্যক্তি সে! যার একটি কাজই তাকে জঘন্য উপাধি দেয়ার জন্য যথেষ্ট! . রাজ্যহারা হুমায়ূনের পরিচয় হয় এক সময় পারস্য সম্রাট #শাহ_তামাস্প এর সাথে। শুরুতে এই ব্যক্তিটিকে আমার বেশ বিরক্ত লাগে... কিন্তু ধীরে ধীরে আসে এই সম্রাটের উপর এক অবাক মুগ্ধতা! . কাহিনী চলতে থাকে। কাহিনী বললে ভুল হবে, ইতিহাসের পাতা বাড়তে থাকে..... এক সময়, হুমায়ূন_পত্নী হামিদার বানুর কোল জুড়ে আসেন ইতিহাসের আরেক সম্রাট। #সম্রাট_আকবর। আকবরের জন্মকে কেন্দ্র করেও ঘটে যায় অনেক কাহিনী..... তারপর... পৃথিবী থেকে বিধাতার অমোঘ নিয়মেই বিদায় নেন সম্রাট হুমায়ূন। তবে বিদায়ের পূর্বেই তিনি দিল্লির সিংহাসন পুনরায় ফিরে পান। বড় হতে থাকেন আকবর। বুঝতে শিখেন নিজ স্বার্থ! কিন্তু সব বুঝার ক্ষমতা উনার আদৌ হয়.....? জানিনা..... তবে খুব কষ্ট লাগে ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র #বৈরাম_খাঁ এর জন্য.............. . #পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ হুমায়ূন আহমেদের সুপরিচিত বই #বাদশাহ_নামদার আমাকে উপহার দেয় আমার ছোট বোন। আমি তখন খুব অসুস্থ। বিছানা থেকে নড়ার শক্তি নেই আমার.... তবুও প্রিয় লেখকের বই বলে কথা! মৃতপ্রায় আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে সন্ধ্যায় পড়তে শুরু করি বইটি, শেষ হতে দুই ঘন্টাও লাগেনি! এত উত্তেজনাপূর্ণ একটি বই! বইয়ের ভাল লাগার দিক বলতে গেলে সম্পূর্ণ বই নিয়েই বলতে হয়। তবে #বৈরাম_খাঁ সাহেবকে আমার সবচেয়ে বেশী ভাল লেগেছে! #কাশেম_খাঁ নামক মানুষটার আত্মত্যাগ আমায় করেছে মুগ্ধ! আর খারাপ লাগার দিক সম্পূর্ণ জুড়ে আছে "আচার্য হরিশংকর" এবং "মীর্জা কামরান"। অবশ্য মীর্জা কামরানের জন্য শেষ দিকটায় বেশ মায়া লেগে যায়। বইয়ে সম্রাট হুমায়ূনের লিখা বেশ কিছু কবিতার প্রকাশ রয়েছে, একটি কবিতার লাইন না লিখে পারছিনা! #প্রদীপ্ত_সূর্য_ছিল_আমার_পিতার_কাছে_ম্লান !!!! এত সুন্দর কবিতা! আমি সারারাত এই বইটা পড়ে কেঁদে কাঁটিয়ে দিছি... কেন কাঁদছি সেটা জানিনা.... ভাল লাগার বই পড়লে মনে হয় কাঁদতে হয়.... যাইহোক, "বাদশাহ নামদার" এক কথায় আমার পড়া শ্রেষ্ঠ বইয়ের একটি.... অবশ্যই অবশ্যই পড়বেন! ভাল লাগবেই..... হ্যাপি রিডিং... :)
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মোঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জা- কে নিয়ে। যিনি পিতার দিক থেকে তৈমুরের পঞ্চম অধস্তন এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের পঞ্চদশ পুরুষ। খেয়ালী সম্রাট হুমায়ূন সর্বশ্রেষ্ঠ মোঘল সম্রাট আকবরের জম্মদাতা। জীবনের অধিকাংশ সময়ই যার কাটাতে হয়েছে শের খা (শের শাহ) নামক এক আফগান বীরের তাড়া খেয়ে। হুমায়ুন খেয়ালীপনা করে যেমন রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে। তেমনি তিনি সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের কিশোরী হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন। এবং তাকে বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!! পরে এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আরেক সম্রাট আকবর দ্যা গ্রেট। এই খেয়ালী সম্রাট হুমায়ুনই স্বল্প অপরাধে যেমন কাউকে দিয়ে দিতেন মৃত্যুদন্ড। তেমনি গানে মুগ্ধ হয়ে গায়িকার সমওজনের স্বর্ন্মুদ্রাও দিয়ে দিতেন। একবার শের খা’র তাড়া খেয়ে নদীতে লাফ দিলে এক ভিসতিওয়ালার সাহায্য তার জীবন বাচে। পরে এই ভিসতিওয়ালাকে একদিনের (মুলত অর্ধেক দিন) জন্য দিল্লির সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন সম্রাট হুমায়ুন। অবশ্যই পরে এজন্য হুমায়ুনের ভ্রাতা মির্জা কামরানের হাতে জীবনও দিতে হয়েছে ভিসতিওয়ালাকে। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না। মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরে। বইয়ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় স্ত্রী হামিদা বানু এই সম্রাটকে বলছেন, ‘আপনি দুর্বল সম্রাট; কিন্তু অত্যন্ত সবল একজন কবি।’ ৭৩ পৃষ্ঠায় তার চিরশত্রু শের শাহ যিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন। তাঁরও নির্দেশ ছিল সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” আমাকে যে চরিত্রটা সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ করেছে সেটা হল বৈরাম খাঁ। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার প্রগাড় নিষ্ঠা চোখে পড়বার মতো। হুমায়ূনের মেয়ে আকিকা বেগমের কথাও ঘুরেফিরে এসেছে। এছাড়াও বইয়ে বেশ কিছু চরিত্র আমরা পাবো। এর মাঝে বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্কর। সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জা। হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি (যিনি পানি সরবরাহ করেন) জওহরকে। আগ্রা দখল করা শের শা। হুমায়ূনের বোন গুলবদন। উদার পারস্য সম্রাট শাহ তামাম্পা সহ আরো বেশ কিছু চরিত্রই পাঠকদের মুগ্ধ করবে। মুগ্ধ করার মত আরো আছে হুমায়ুন ও কামরান মির্জার চমৎকার কিছু শের। এর মাঝে একটা – "হর মুসিবৎকো দিয়া এক তবুসুমসে জবাব ইসতরাহ গরদিসে দৌড়োকে রুলায়া হ্যায় ম্যায়নে।" অর্থঃ দুর্দিন ভেবেছিল সে আমাকে কাঁদাবে। উলটো হাসিমুখে আমি তাকে কাঁদিয়েছি। বইয়ের শেষের দিকে এসে জানা যাবে শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। যিনি হাজারো উত্থান- পতনে সম্রাটের সাথে থেকে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন এই বৈরাম খাঁ। তবে তার করুণ মৃত্যুকে অবিচারই বলা যায়। কারন সিংহাসনে বসেই সম্রাট আকবর বৈরাম খাঁ কে মক্কায় পাঠিয়ে দিতে চাইলেন। এবং আকবরের পাঠানো গুপঘাতকেরা বৈরাম খাঁ কে পথেই হত্যা করে। পৃথিবীর ইহিহাসে আকবরের পরিচয় আকবর দ্যা গ্রেট। কিন্তু বৈরাম খাঁ’র এমন করুন পরিনতি গ্রেট আকবরের কাছ থেকে আশা করা যায়না। তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার।
Was this review helpful to you?
or
সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ুনের জীবন নিয়ে লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস। সম্রাটের নামও হুমায়ুন আর লেখকের নামও হুমায়ুন! দারুণ উপন্যাস। দারুণ বলতে মজার। বাদশা হুমায়ুনের জীবনের সবটাই মজায় মজায় ভরপুর। কী বিচিত্র আর অসাধারণ গল্পে ভরা জীবন। এক জীবনে এতকিছু কীভাবে সম্ভব! হুমায়ুন আহমেদের (লেখক) অনেক উপন্যাসই আছে মজার। এখন সেসব মজার উপন্যাসগুলিকে যদি সাধারণ ধরে নেই তবে সাধারণের মাঝে মজার হবে “বাদশাহ নামদার”। আমাদের শহরের বই বিক্রেতা আলী লাইব্রেরীর মালিককে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি আমার মতোই জানিয়েছেন। উনি নিজে এই উপন্যাস পড়েছেন এবং মজা পেয়েছেন। :D পকেট সাইজের বই হওয়াতে বইটা আরামে আরামে পড়ে ফেলা যাবে। হুমায়ুনের জীবনী নিয়ে এই বইটার কালেবর আরও অনেক বড় হতে পারতো। হতে পারতো ‘প্রথম আলো’ ‘পূর্ব পশ্চিম’এর মত বই। কে জানে লেখকের মাঝে থাকা প্রবল পেশাদারিত্বের কারণে হয়তোবা এমনটা না হয়ে থাকতে পারে। যাহোক বইয়ে আমার কিছুটা খটকা লেগেছে। যেমন বাদশা হুমায়ুন জ্যোতিষবিদ্যা অনুসরণ করতেন। গ্রহ নক্ষত্র বিচার করে একেক দিনে একেক রঙের পোশাক পরতেন। মঙ্গলবারে পরতেন মঙ্গলগ্রহের লাল রঙের পোশাক। অবশ্যই তিনি জীবনের কিছুটা সময় মঙ্গলবারে লাল পোশাক পরতেন, কিন্তু সেটা কি মঙ্গল গ্রহের লাল রঙের জন্য? পনের শতকে মোঘলরা কীভাবে জানল যে মঙ্গল গ্রহ লাল? এটা কি বইটা পড়তে গিয়ে আমার বোঝার সমস্যা? নাকি হুমায়ুন আহমেদের ত্রুটি(ভুল)? উল্লেখ্য হুমায়ুন আহমেদ তার “জোছনা ও জননীর গল্প” বইতেও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ভুল করেছিলেন। [সুত্র: জাফর ইকবালের কোনো একটা নন-ফিকশন বই।] আরেকটা ব্যপার হুমায়ুন কন্যার শিক্ষক হরিশংকরকে নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। মূল উপন্যাসের সাথে হরিশংকরের কাহিনীর কী ভূমিকা তা আমি ধরতে পারি নি। এই চরিত্রটাকে নিয়ে এত পরিমাণ শব্দ বরাদ্ধ করাকে আমার কাছে অযথা ব্যয় বলে মনে হয়েছে। একটা সময় পর এই চরিত্রকে নিয়ে কোনো কথা না বলে থামিয়ে দিলেও হতো। আপনারা যারা বইটা পড়েছেন তারা কি এর পেছনের কারণটা পেয়েছেন? আমি পেতে চাই। আমি নিজে নিজে যেটা বের করলাম, তখনকার সতী দাহের বর্বর প্রথা লেখককে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। এবং এই গোরা ব্রাহ্মণ দুজন নিষ্পাপ শিশুকে পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা করেছে। তাদের করুণ মৃত্যুর জন্য সেই দায়ী। এটা হয়তো লেখককে বিদ্ধ করেছিল। তাই তিনি একপর্যায়ে এই ব্রাহ্মণের পচে গলে কুষ্ঠে আক্রান্ত হবার দৃশ্যটাকে দেখিয়েছেন এবং শেষে দেখিয়েছেন ঘরে নিজের জ্বালানো কুপির আগুন থেকে ঘরে আগুন লেগে নিজে পুড়ে যেতে। সবশেষে আবারো বলব বইটা অসাধারণ। বইটা একটা মহাকাব্য হতে পারতো। হুমায়ুন আহমেদের অভাব অনুভব করছি। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তোবা অন্য বাদশাদের নিয়েও লিখতেন।
Was this review helpful to you?
or
In one word his book is GREAT. The way of story writing is amazing.
Was this review helpful to you?
or
আপনি যদি খুব সহজেই,মুঘল রাজ্য,প্রাসাদ এবং মুঘল বাদশাহ হুমায়ূনের সাথে সাক্ষাৎ করতে চান তাহলে এই উপন্যাসটা আপনাকে জায়গামতো নিয়ে যাবে।হারিয়ে যাবেন সেই সময়কার মুঘল রাজ্যে,নেশায় পড়ে যাবেন।মনে হবে যেন,উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় এক ধরণের মাদক মেশানো আছে।যেই মাদকের নেশা আপনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। বাদশাহ নামদারের কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের হাত ধরে। একজন হুমায়ূনের বিভিন্ন রকম চরিত্রের সাথে আপনার পরিচয় ঘটবে।মানুষ হিসেবে বাদশাহ হুমায়ূন ছিলেন প্রচন্ড রকমের খেয়ালি। সবসময় নিজের ইচ্ছার ওপর চলতেন।যেমনটা আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রেও।উপন্যাসটা পড়তে পড়তে আমি দুই হুমায়ূনের আশ্চর্য রকমের মিল খুজে পেয়েছি বারেবার। এতবড় একটা সম্রাজ্যের অধিকারী হয়েও তিনি মেতে থাকতেন তার নিজস্ব উন্মাদনায়,নিজস্ব নেশায়।লিখতেন কবিতা,আঁকতেন ছবি।মুঘল চিত্রকলার সূচনা হয় তার হাত ধরেই।পাখপাখালি, রান্নাবান্না, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি ছিল তার শিশুসুলভ আগ্রহ আর কৌতুহল।আমি যেটা বলবো,তার চরিত্রের সবচেয়ে দূর্বল দিকটি ছিল তার উদারতা,তার ক্ষমাশীলতা। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না।মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ।তার চিরশত্রু শের শাহ ,যিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন, তাঁরও নির্দেশ ছিল, “সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না” কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “ তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” আশ্চর্য রকমের নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ ছিল সম্রাটের জীবন।যেটা পড়লে আপনি সম্রাটের নেশায় আসক্ত হবেন,হুমায়ূনকে ভালোবাসতে বাধ্য হবেন, তাঁর দু:খে কষ্ট পাবেন, তাঁর খুশিতে আনন্দিত হবেন, তাঁর বিজয়ে উল্লাস করবেন, তাঁর পরাজয়ে হতাশ হবেন। গায়ের রোম শিউরে উঠবে বারেবার,হতে বাধ্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,এই খেয়ালী সম্রাট তাহলে রাজ্য কিভাবে চালাতেন?সেটা জানতে হলে আমাদেরকে পরিচিত হতে হবে,মুঘল রাজ্যের খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র,সম্রাটের সার্বক্ষণিক সহচর।সহচর বলা বোধ হয় ঠিক হবে না,বাদশাহ নিজেই তাকে বন্ধু বলে ঘোষণা দিয়েছেন,তিনি বৈরাম খাঁ। একজন সম্রাটের যেসকল গুণ থাকার দরকার তার সবটুকুই এই লোকটার মধ্যে ছিল।হয়তোবা একটু বেশী পরিমাণেই ছিল। মুঘল রাজত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তার অবদান কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। অসাধারণ বিচক্ষণতা, রণকৌশল, ইচ্ছাশক্তিতে পরিপূর্ণ এই মানুষ ডুবে যাওয়া সম্রাট হুমায়ূনকে তীরে তুলে এনেছেন বারেবার।ছায়ার মতো ছিলেন সম্রাটের পাশে। যেই মুঘল রাজ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য যার এত সংগ্রাম।সেই রাজ্যেরই এক সম্রাটের পাঠানো গুপ্তচরের হাতে নিহত হন এই সেনাপতি। ইতিহাস আমার খুব আগ্রহের একটি বিষয়। ইতিহাসের বই তেমন পড়া হয় নি।যেগুলো পড়েছি বেশীরভাগই ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। বইগুলােতে বর্ণনা অনেক বেশী ছিল। কিন্তু বাদশাহ নামদার পড়ার সময়,চরিত্রগুলাে যেন দিয়ে বইয়ের পাতা থেকে বের হয়ে আসছিল,আসলে স্যারের লেখা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস মানেই অন্যকিছু,একেবারে আলাদা একটা জিনিশ। মুঘলদের ইতিহাসের অন্ধকার ও আলােকিত দিকগুলো এত পরিষ্কার,এত সূক্ষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে ,মনে হবে ঘটনাগুলাে সব চােখের সামনেই ঘটছে এবং আপনি নিজে সেই জায়গায় উপস্থিত আছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা উপন্যাস।যারা বাদশাহ নামদারের নেশায় আসক্ত হন নি,তারা একটি পবিত্র নেশা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
এই বইটিতে মূলত আলোচনা করা হয়েছে বাদশাহ হুমায়ূনকে নিয়ে। তার চরিত্রের বিচিত্র সব দিক। অবাক হয়ে যাবেন যে তিনি খেয়ালের বশে এমন সব কাণ্ড করতেন যে স্বাভাবিক মানুষ এসব দেখলে থ হতে বাধ্য। একজন মানুষের উপকারের প্রেক্ষাপটে তাকে অর্ধেক দিনের জন্য সম্রাট করা হয়! তার ভাই তাকে একাধিকবার হত্যা করতে চায়। তবে ধরা পড়ে যায়। তবুও তাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। মূলত সিংহাসনে বসার পর থেকে শেষ বয়স পর্যন্ত নানা চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে গেছে তার সারাটি জীবন। সিংহাসন হারিয়েছেন একাধিকবার। তবুও ফিরে পেয়েছেন কিছু মানুষের কল্যানে। যাদের কল্যানে পেয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন বৈরম খা। আসলে সত্য বলতে কি, আমার কাছে এই বইয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল চরিত্র মনে হয়েছে এই বৈরম খা কে। এত চতুর, বুদ্ধিমান, খাস সেবক, আর রনকৌশল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বীর জগতে বারবার জন্মায় না। তার প্রভুভক্তের একটা উদাহরন দেই, একবার রাজ্য হারিয়ে যখন হুমায়ূন পারস্যের রাজার রাজদরবারে উপস্থিত। তখন সেই রাজার এক প্রস্তাব সে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্ত সেই রাজার এক কথার প্রেক্ষাপটে বলে দেয়, "আমার মহান সম্রাট যদি সেখানে মাথা ন্যাড়া হয়ে উপস্থিত হন তবে আমি তা ই করব!" হুমায়ূনের ছেলে আকবর যখন তাকে বিনা কারনে অবসরে মক্কায় চলে যেতে বললেন তিনি নির্দ্বিধায় তা মেনে চলে গেলেন। অথচ তখন ইচ্ছে করলেই তিনি একটা রাজদ্রোহ করতে পারতেন কারন রাজ্যের সকল সৈন্য ছিল তার অনুগত আর তিনিই ছিলেন প্রধান কিন্ত তা না করেই স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। অন্যরকম একটা ফ্লেভার আছে বইটিতে ।পড়ে দেখতে পারেন
Was this review helpful to you?
or
টানা ৭ বছর পর একটা বই আমার প্রিয় বইয়ের কাতারের প্রথম স্থান দ্বৈতভাবে দখল করে নিয়েছে আজ। বাদশাহ নামদার! এটি হুমায়ূন আহমেদের এমন একটি বই যা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়া যাবেনা আর এক বসায় পড়ার মত নেশাময় একটি বই। সবচেয়ে বড় কথা হল এই বইয়ের ফিনিশিং এ যে কোন মানুষই স্তব্দ হতে বাধ্য। এই বইটিতে মূলত আলোচনা করা হয়েছে বাদশাহ হুমায়ূনকে নিয়ে। তার চরিত্রের বিচিত্র সব দিক। অবাক হয়ে যাবেন যে তিনি খেয়ালের বশে এমন সব কাণ্ড করতেন যে স্বাভাবিক মানুষ এসব দেখলে থ হতে বাধ্য। একজন মানুষের উপকারের প্রেক্ষাপটে তাকে অর্ধেক দিনের জন্য সম্রাট করা হয়! তার ভাই তাকে একাধিকবার হত্যা করতে চায়। তবে ধরা পড়ে যায়। তবুও তাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। মূলত সিংহাসনে বসার পর থেকে শেষ বয়স পর্যন্ত নানা চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে গেছে তার সারাটি জীবন। সিংহাসন হারিয়েছেন একাধিকবার। তবুও ফিরে পেয়েছেন কিছু মানুষের কল্যানে। যাদের কল্যানে পেয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন বৈরম খা। আসলে সত্য বলতে কি, আমার কাছে এই বইয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল চরিত্র মনে হয়েছে এই বৈরম খা কে। এত চতুর, বুদ্ধিমান, খাস সেবক, আর রনকৌশল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বীর জগতে বারবার জন্মায় না। তার প্রভুভক্তের একটা উদাহরন দেই, একবার রাজ্য হারিয়ে যখন হুমায়ূন পারস্যের রাজার রাজদরবারে উপস্থিত। তখন সেই রাজার এক প্রস্তাব সে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্ত সেই রাজার এক কথার প্রেক্ষাপটে বলে দেয়, "আমার মহান সম্রাট যদি সেখানে মাথা ন্যাড়া হয়ে উপস্থিত হন তবে আমি তা ই করব!" হুমায়ূনের ছেলে আকবর যখন তাকে বিনা কারনে অবসরে মক্কায় চলে যেতে বললেন তিনি নির্দ্বিধায় তা মেনে চলে গেলেন। অথচ তখন ইচ্ছে করলেই তিনি একটা রাজদ্রোহ করতে পারতেন কারন রাজ্যের সকল সৈন্য ছিল তার অনুগত আর তিনিই ছিলেন প্রধান কিন্ত তা না করেই স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। অথচ তার জিবন-যৌবন সব ই ব্যয় করেছেন এই মোঘল পিতা আর পুত্রের পেছনে। তার পিতার করুন মুহূর্তে ছিলেন নির্ভীক ছায়া হয়ে অথচ এই মানুষটিকেই আকবর হত্যা করে বিনা দোষে বিনা কারনে!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মোঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জা- কে নিয়ে। যিনি পিতার দিক থেকে তৈমুরের পঞ্চম অধস্তন এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের পঞ্চদশ পুরুষ। খেয়ালী সম্রাট হুমায়ূন সর্বশ্রেষ্ঠ মোঘল সম্রাট আকবরের জম্মদাতা। জীবনের অধিকাংশ সময়ই যার কাটাতে হয়েছে শের খা (শের শাহ) নামক এক আফগান বীরের তাড়া খেয়ে। হুমায়ুন খেয়ালীপনা করে যেমন রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে। তেমনি তিনি সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের কিশোরী হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন। এবং তাকে বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!! পরে এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আরেক সম্রাট আকবর দ্যা গ্রেট। এই খেয়ালী সম্রাট হুমায়ুনই স্বল্প অপরাধে যেমন কাউকে দিয়ে দিতেন মৃত্যুদন্ড। তেমনি গানে মুগ্ধ হয়ে গায়িকার সমওজনের স্বর্ন্মুদ্রাও দিয়ে দিতেন। একবার শের খা’র তাড়া খেয়ে নদীতে লাফ দিলে এক ভিসতিওয়ালার সাহায্য তার জীবন বাচে। পরে এই ভিসতিওয়ালাকে একদিনের (মুলত অর্ধেক দিন) জন্য দিল্লির সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন সম্রাট হুমায়ুন। অবশ্যই পরে এজন্য হুমায়ুনের ভ্রাতা মির্জা কামরানের হাতে জীবনও দিতে হয়েছে ভিসতিওয়ালাকে। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না। মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরে। বইয়ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় স্ত্রী হামিদা বানু এই সম্রাটকে বলছেন, ‘আপনি দুর্বল সম্রাট; কিন্তু অত্যন্ত সবল একজন কবি।’ ৭৩ পৃষ্ঠায় তার চিরশত্রু শের শাহ যিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন। তাঁরও নির্দেশ ছিল সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” আমাকে যে চরিত্রটা সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ করেছে সেটা হল বৈরাম খাঁ। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার প্রগাড় নিষ্ঠা চোখে পড়বার মতো। হুমায়ূনের মেয়ে আকিকা বেগমের কথাও ঘুরেফিরে এসেছে। এছাড়াও বইয়ে বেশ কিছু চরিত্র আমরা পাবো। এর মাঝে বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্কর। সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জা। হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি (যিনি পানি সরবরাহ করেন) জওহরকে। আগ্রা দখল করা শের শা। হুমায়ূনের বোন গুলবদন। উদার পারস্য সম্রাট শাহ তামাম্পা সহ আরো বেশ কিছু চরিত্রই পাঠকদের মুগ্ধ করবে। মুগ্ধ করার মত আরো আছে হুমায়ুন ও কামরান মির্জার চমৎকার কিছু শের। এর মাঝে একটা – "হর মুসিবৎকো দিয়া এক তবুসুমসে জবাব ইসতরাহ গরদিসে দৌড়োকে রুলায়া হ্যায় ম্যায়নে।" অর্থঃ দুর্দিন ভেবেছিল সে আমাকে কাঁদাবে। উলটো হাসিমুখে আমি তাকে কাঁদিয়েছি। বইয়ের শেষের দিকে এসে জানা যাবে শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। যিনি হাজারো উত্থান- পতনে সম্রাটের সাথে থেকে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন এই বৈরাম খাঁ। তবে তার করুণ মৃত্যুকে অবিচারই বলা যায়। কারন সিংহাসনে বসেই সম্রাট আকবর বৈরাম খাঁ কে মক্কায় পাঠিয়ে দিতে চাইলেন। এবং আকবরের পাঠানো গুপঘাতকেরা বৈরাম খাঁ কে পথেই হত্যা করে। পৃথিবীর ইহিহাসে আকবরের পরিচয় আকবর দ্যা গ্রেট। কিন্তু বৈরাম খাঁ’র এমন করুন পরিনতি গ্রেট আকবরের কাছ থেকে আশা করা যায়না। তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার। শেষ করছি হুমায়ূনের বিদ্রোহী ভ্রাতা মির্জা কামরানের লেখা একটা কবিতা দিয়ে - “রাজ্য হলো এমন এক রুপবতী তরুনী যার ঠোঁটে চুমু খেতে হলে সুতীক্ষ্ণ তরবারির প্রয়োজন।”
Was this review helpful to you?
or
তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াত যেটা জওহর আফতাবচী লিখেছেন সেটার গোছানো একটা গল্পরুপ বলা যায়। যদিও জওহর আফতাবচির বর্ননা বলতে গেলে অসাধারণ। হুমায়ূন আহমেদ বরাবরের মতোই আরো রসালো করেছেন এটিকে। এককথায় বলতে গেলে সহজ এবং সরলিকরণ যাকে বলে। ঘটনা সবারই জানা তারপরও সাসপেন্স একটা ভাব আছে। ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
বইঃ বাদশাহ নামদার লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অন্যতম একটি সেরা লেখা এই বইটি। এই বইটিতে শুধুই ইতিহাস লেখা হয়েছে তাই নয় ইতিহাসের সঙ্গে অনেক সত্যতা প্রকাশিত হয়েছে। বইটা যতক্ষণ পড়ছিলাম কেন জানি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, ঘোর থেকে বের হলাম বইটা পড়া শেষ হওয়ার পর। হুমায়ুন স্যার মোঘল সম্রাট বাবর হুমায়ুন আকবর এর ঘটনা লিখেছেন এই বইয়ে। তার এই লিখার মধ্যে শিক্ষনীয় অনেক কিছু আছে। ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, ঈমানদার রাজপুরুষ হওয়া, নিজের ধর্মকে সম্মান করা সবই আছে এই লিখায়। মোঘল সম্রাট হুমায়ুন বেচে থাকলে লেখককে পাল্লায় পরিমাপ করে সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিতেন বলে আমার বিশ্বাস, এছাড়া নিজের নামের সাথে মিল থাকায় এক দিনের সম্রাট নিয়োজিত করতেন বলেও মনে হয় ???? ব্যাক্তিগত অভিমতঃ ১০/১০
Was this review helpful to you?
or
EXCELLENT
Was this review helpful to you?
or
মোঘল সম্রাট হুমায়ুন এর জীবন ইতিহাস জানতে চাইলে এটি অত্যন্ত ভালো বই
Was this review helpful to you?
or
মোঘল সম্রাট হুমায়ুন কে নিয়ে লেখক হুমায়ুন আহমেদ কেন এই বই লিখলেন তার কয়েকটা সম্ভাব্য কারন তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন বইয়ের প্রথমেই, ভূমিকাতে। এর মধ্যে, নিজের নামের সাথে মিল থাকা, ছোটকালে পাঠ্যবইয়ে মোঘল ইতিহাস পড়তে গিয়ে হুমায়ূন এর বারে বারে হেরে যাওয়া, চিতোর রাণী কর্তৃক হুমায়ূনকে রাখি পাঠানোর কবিতা পড়া ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন। উপন্যাসটি লিখতে অনেক বই পত্র পড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু বইয়ের শেষে কোন রেফারেন্স দেননি এ কারণে যে এটা কোন গবেষণা প্ত্র না, একটা উপন্যাসমাত্র। আবার এই উপন্যাস লিখতে তাকে কোন আলাদা রঙ ব্যবহার করতে হয়নি, কারণ সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন বহু বর্ণের মানুষ, নাটকীয় সব ঘটনায় তার জীবন ছিল পূর্ণ। বইটি শুরু হয়েছে প্রথম মোঘল সম্রাট বাবরের সাথে হুমায়ূনের সম্পর্ক নিয়ে। হুমায়ূন মীর্জাকে পাঠানো হয়েছিল আগ্রা দূর্গে, ইব্রাহিম লোদীর কোষাগার দখল নিতে। তিনি সেখান থেকে ফিরে আসলে বাবরকে কোহিনুর উপহার দেন। বাবর খুশি হয়ে সেটি আবার হুমায়ূনকেই ফিরিয়ে দেন। কিন্তু রহস্যময় হুমায়ূন তার পরের দিনই তার পিতার দিল্লীর কোষাগার দখল করে রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান। বাবর কঠিন শাস্তির চিন্তা করলেও তার স্ত্রীর দয়ায় পরে তা বাতিল করেন। যদিও তিনি বলেন যে সম্রাটের কোন পুত্র থাকে না, স্ত্রী থাকে না, থাকে শুধু তরবারী। কিছুদিন পরে হুমায়ুন দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে পিতা বাবর সেই কালান্তর রোগ নিজে ধারন করে মারা যান, ক্ষমতাতে আসেন হুমায়ূন। বইটিতে লেখক মূলত বাদশাহ হুমায়ূন এর খামখেয়ালীপনা, উদার মানষিকতা, পিতার আদেশ পালনকারী, তার ভাইদের প্রতি অসম্ভব বিশ্বাস ও ভালবাসা প্রকাশ ইত্যাদি গুনাবলী ফুটিয়ে তুলেছেন। বাদশাহ কবিতা লিখতেন, দরবারে শুনাতেন, শুনে সবাইকে বলতে হতো মারহাবা। এমনকি তিনি তার শত্রূদেরকেও কবিতা লিখে পাঠাতেন। ঐতিহাসিক উপন্যাস হলেও পড়ার সময় মনে হবে কোন রহস্য রোমাঞ্চকর কোন উপন্যাস। মনে হবে লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার নিজের চরিত্রের সাথে মিল বের করতে চেয়েছেন বাদশাহ হুমায়ূনের চরিত্রে। জোসনা দেখা, ছবি আঁকা, খামখেয়ালীপনা করা, পুকুরে বসে পদ্মফুল দেখা ইত্যাদি বিষয়গুলো লেখক অনেক সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিস্তারিত রিভিঊঃ https://web.facebook.com/groups/pathshala.center/?post_id=2991681687554818
Was this review helpful to you?
or
আমরা মোঘল ইতিহাসের খুব স্বল্প অংশই জানি। যেটুকুও বা জানি, তার অধিকাংশই নেতিবাচক। তাদের উদারতাগুলো কেন জানি কম প্রকাশিত। সম্রাট বাবরের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিলো ইব্রাহীম লোদী। পানিপথের যুদ্ধে তিনি বাবর বাহিনীর হাতে নিহত হন। ইব্রাহীম লোদীর মাকে বন্দী করে আনেন বাবরের সৈন্যরা। বাবর বন্দীনিকে মুক্ত করে দেন। তাকে নিজের মায়ের মর্যাদা দেন। রাজপ্রাসাদে সম্রাটের মায়ের যে ক্ষমতা এবং মর্যাদা সেটাও তাকে দেওয়া হয়। ক্ষমতা এবং সুযোগ পেয়েই ইব্রাহীম লোদীর মা সম্রাট বাবরকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিষ পান করান। ভাগ্যক্রমে বিষক্রিয়া থেকে বাবর সেরে উঠেন। বিষ প্রদানকারী ইব্রাহীম লোদীর মাকে তিনি নিঃশর্তে ক্ষমা করে দেন। মোঘল সম্রাটদের এই ইতিহাস নিয়ে নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর পড়াশোনা করেন। সকল সম্রাটদের মধ্যে থেকে তিনি তার মিতা সম্রাট হুমায়ূন মির্জাকে নিয়ে লিখেন তাঁর অসাধারণ ঐতিহাসিক উপন্যাস "বাদশাহ নামদার।" এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে মোঘল সাম্রাজ্যের নানান ইতিহাস। আলো এবং অন্ধকারের দিক। মোঘল পরিবারের শিল্প- সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসার অসাধারণ সব উপমা। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, তিনি কোথাও গল্পের প্রয়োজনেও ইতিহাস বিকৃতি ঘটাননি। প্রকৃত ঘটনাই তিনি তুলে ধরেছেন মাত্র। তবে তার লেখার অসাধারণ ক্ষমতা গুণে পাঠকের একবারও মনে হবে না যে, এটি ইতিহাস গ্রন্থ। বরং কল্পণার সাগরে ভেসে ভেসে, এটাকে হুমায়ূনীয় উপন্যাসই মনে হবে। আমি বার বার এই বইটি পড়তে চাই। আমার পড়া সেরা বইয়ের তালিকায় এটি যুক্ত হলো।
Was this review helpful to you?
or
? বাদশাহ নামদার : হুমায়ূনের আয়নায় বহুবর্ণের এক সম্রাটকে দেখা ? হুমায়ূন আহমেদ ইতিহাস বিবৃত বা পুনর্লিখন করেন না, ইতিহাসের আশ্রয়ে গল্প বলেন। গল্প বলার ঢঙ একেবারেই নিজের মতো। ইতিহাসের চরিত্রগুলোকে গল্পের ভেতরে এনে আনকোরা এক ভূবন গড়ে তোলেন। পড়তে গিয়ে তাই ঘোরের মধ্যে চলে যেতে হয়। বারবার প্রশ্ন জাগে, এটা সত্যিই ইতিহাসের কাহিনি তো? গল্প বলার আশ্চর্য ক্ষমতার জন্যই হুমায়ূন আহমেদের বই আনন্দের উপকরণ হয়ে ওঠে। ইতিহাসের খটোমটো ঘটনাগুলোকেও তিনি পরম মমতায় পাঠকের সামনে তুলে আনেন। তাঁর ঐতিহাসিক কাহিনি-নির্ভর বই পড়লেই বোঝা যায়, লেখকের প্রধান লক্ষ গল্প বলা। পাঠককে গল্পের রসে ভিজিয়ে রাখা। ‘বাদশাহ নামদার’ বইতেও হুমায়ূন আহমেদ একই ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাদশাহ নামদার' উপন্যাসের কাহিনী মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জাকে নিয়ে রচিত। কাহিনীর শুরু ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে। বাদশাহ বাবর আদরের পুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে বড্ড চিন্তিত। পুত্র হুমায়ুন সাম্রাজ্যের পরবর্তী অধিপতি, অথচ এ ব্যাপারে সে পুরাপুরি উদাসীন। তাঁর ব্যস্ততা রংতুলি ও পদ্য নিয়ে। প্রকৃতির মাঝেই তাঁর সব সুখ। ওই সময়কালেই হুমায়ূন মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায়। বাদশাহ বাবর নিজের প্রাণের বিনিময়ে খোদার কাছে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চান। প্রার্থনা কবুল হয়। পুত্রের কালান্তক ব্যাধি শরীরে ধারন করে পঞ্চাশ বছর বয়সে সম্রাটের মৃত্যু হয়। তার তিন দিন পর হুমায়ূন মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আসীন হন। সম্রাট হুমায়ূন রাজকর্মে অতটা মনোযোগী ছিলেন না। তিনি ডুবে থাকতেন নিজের জগতে। এই সুযোগে তাঁর ছোট ভাই কামরান মীর্জা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন। জীবনের অধিকাংশ সময়ই হুমায়ূনকে কাটাতে হয়েছে শের খা (শের শাহ) নামক এক আফগান বীরের তাড়া খেয়ে। হুমায়ূন রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে। সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের কিশোরী হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন এবং তাকে বিয়েতে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন! পরে এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আরেক সম্রাট আকবর (দ্যা গ্রেট আকবর)! বাদশাহ হুমায়ূনের সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে হলেও কোথাও যেন লেখক হুমায়ূনের চরিত্রের সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায়। হুমায়ূন মীর্জার ছিলেন বহু বর্ণের একজন সম্রাট। কবি, চিত্রকর, সংগীতরসিক হুমায়ূন ছিলেন অদ্ভুত রকমের খেয়ালী। এই খেয়ালী সম্রাট স্বল্প অপরাধে যেমন কাউকে দিতেন মৃত্যুদণ্ড, তেমনি গুরুতর অপরাধও ক্ষমা করে দিতেন অতি সামান্য কারণে। এটাকেই সম্রাটের দর্বলতা হিসেবে দেখতেন তাঁর প্রতিপক্ষরা। তিনি চিত্রকলা, যাদুবিদ্যা সম্পর্কে প্রবল আগ্রহী ছিলেন। এমনকি যুদ্ধকালীন সময়েও তাকে এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। তাঁর আমুদে ও ভাগ্যে বিশ্বাসী স্বভাবের কারণে বাদশাহী চরিত্রের সঙ্গে মেলানো যায় না। হুমায়ূনের হৃদয় ছিলো ভালোবাসায় পূর্ণ। এতটাই কৃতজ্ঞ ছিলেন যে, রাস্তার ফকিরকে অর্ধদিনের সম্রাট বানিয়েছিলেন নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য। চরম বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও ভাই মীর্জা কামরানকে বারবার ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। তাঁর পরম শত্রুও তাকে মন থেকে ভালোবাসত। চিরশত্রু শের শাহ যিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন, তাঁরও নির্দেশ ছিল সম্রাট হুমায়ূনকে কোনো অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।’ বইতে আরেকটি চরিত্রের প্রতি লেখকের বিশেষ আগ্রহ চোখে পড়েছে। তিনি হুমায়ূনের সেনাপতি বৈরাম খাঁ। সম্রাটের প্রতি তাঁর ছিল প্রগাড় নিষ্ঠা। সাম্রাজ্য রক্ষায় বৈরামই ছিলেন সম্রাটের প্রধান অস্ত্র। বিচক্ষণ বৈরাম ছায়ার মতো সম্রাটকে আগলে রেখেছেন, তাঁর কারণেই হুমায়ূন অনেকবার প্রাণে বেঁচে গেছেন। তার বীরত্ব, সাহসিকতা আর সম্রাটের প্রতি ভালোবাসা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ‘বাদশাহ নামদার’ হুমায়ূন আহমেদের অসামান্য সৃষ্টিগুলোর অন্যতম। তিনি মোঘল সাম্রাজ্যের এমন এক চরিত্রকে বেছে নিয়েছেন যিনি শাসক হিসেবে নয়; বরং একজন কবি, চিত্রকর এবং প্রেমিক হিসেবে নিজেকে ভাবতেই বেশি পছন্দ করতেন। লেখক এই চরিত্রের ভেতরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে এমন সব দিকে আলো ফেলেছেন যা সাধারণত নন-ফিকশনে দেখা যায় না। সম্রাটকে আবার সাম্রজ্যে ফিরিয়ে এনে তবেই থামিয়েছেন কলম। যেন শেষবেলায় পাঠকের মন সুখানুভূতিতে আর্দ্র হয়। উপন্যাস পড়ে মনে হয়েছে, হুমায়নরা আসলেই পরাজিত হতে চান না- তা সে সম্রাট হুমায়ূন হোন কিংবা লেখক হুমায়ূন!
Was this review helpful to you?
or
মোগল সম্রাট হুমায়ূনের নাম আমরা সবাই শুনেছি । তিনি বাবরের পুত্র , আকবরের পিতা। বিভিন্ন অলৌকিক আর রহস্যময় ঘটনায় বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল তার জীবন। তাঁর এই জীবনের পথচলা সম্পর্কে জানতে অব্যশই পড়তে হবে 'বাদশাহ নামদার' এই বইটিতে হুমায়ূন আহমেদ পাঁচশো বছরের পুরনো ইতিহাস, মোগল সংস্কৃতি, তৎকালিন হিন্দুস্থানী কুসংস্কার এর পাশাপাশি হুমায়ূয়েন পত্নী- প্রণয়, বৈরাম খাঁ( প্রধান সেনাপতি), শেরশাহ, ইরানের শাহ তামাস্প সহ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জীবনের ইতিহাস ফুটে তুলেছেন।
Was this review helpful to you?
or
চূড়ান্ত
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা ।। রিভিউ /জুলাই/১৬।। বইয়ের নাম:বাদশাহ নামদার লেখক:হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনী :অন্যপ্রকাশ পৃষ্ঠা:২৩১ মূল্য:৪০০ রকমারি:৩৪০ ছবি:গ্রুপ থেকে নেয়া "শোন, শোন মন দিয়া মোঘল কাহিনী পাইত্যা কান আছিল আকবর, বাবর, হুমায়ুন, শাজাহান!" --- লোক কবিতা তাকে ডাকা হয় বাদশাহ নামদার। এই মোঘল বাদশাহ্ নামদার আসলে কে? ইনি মোঘল সাম্রাজ্যের স্থপতিপুত্র। ব্যাধি আক্রান্ত ছেলেকে বাঁচাতে চমৎকার আত্মত্যাগ.... এ যে শাহী ঘরানা। যাহোক সিংহাসনে বসলেন আমাদের কাহিনীর নায়ক হুমায়ুন। কিন্তু বলে না মোঘল বিলাসিতা। এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে কেন! এই বাদশা একদিকে যেমন বিলাসী অন্যদিকে তেমনি রুচিবোধসম্পন্ন। বই প্রেমী, কবিতা আর জীবনযাত্রাততে বিলাস না করলেই না। কিন্তু এ বাদশাহ নামদারের ভাগ্য তার পক্ষে আজীবন ছিল না, মেঘের অন্ধকার বিষিয়ে দিল। তার অমায়িক মন, কোমল ব্যবহার তার ভাগ্যে দাগ ফেলেছে। শত্রুদের প্রতি তার ক্ষমাসুলভ আচরণ তার কাল হলো। বাদশা থেকে নেমে গেলেন সোজা পথে....তারপর? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া: বইটাতে ইতিহাস বলা হয়েছে সস্নেহে। ঠিক মাপকাঠি দিয়ে এর বিচার চলে না। বই পড়ে আপনি হুমায়ুনের প্রেমে পড়তেই পারেন। লেখক আর বাদশাহ্, দুই হুমায়ুনেরই... ভাষাটা অতি চমৎকার রেটিং __ ৪.৫/৫ রকমারি_লিঙ্ক https://www.rokomari.com/book/1171/বাদশাহ-নামদার
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা ।।১ম রিভিউ।। নাম:বাদশাহ নামদার লেখক:হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনী :অন্যপ্রকাশ পৃষ্ঠা:২৩১ মূল্য:৩৪০ আজ আমি তোমাদের একটা গল্প শোনাবো। সে অনেক অনেক কাল আগের কথা,পাঁচশ বছর পূর্বে তো হবেই। এক ছিলেন এক রাজা, শুধু রাজা? উহু, তিনি ছিলেন একজন মহান সম্রাট,সম্রাট বাবর,তৈমুরের বংশধর।হুম,ঠিক ধরেছ, আমি তোমাদের কে সেই ঐতিহাসিক মোঘল সাম্রাজ্যের কথা বলছি,তিনি একদিন তাঁর দশজন সঙ্গীর সাথে বসে পানাহার করছিলেন,তখন ই আবির্ভাব ঘটে আমার গল্পের মূল নায়ক "নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জা" এর।তিনি ছিলেন সম্রাট বাবরের বড় পুত্র।আমি আজ এই শাহজাদার গল্পই বলতে এসেছি যিনি পরে "বাদশাহ নামদার" খ্যাত হন এবং দিল্লীর 'সম্রাট হুমায়ূন' হিসেবে পুরো ভারতবর্ষ শাসন করেন। সেই সময়কার মোঘলদের শান-শওকত,শৌর্য-বীর্য,খানা-পিনা সম্পর্কে অনেক অজানা কাহিনীই বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে,পড়তে পড়তে হারিয়ে গিয়েছিলাম হুমায়ূনের রাজ্যে,তাঁর মহানুভবতা জনগণের প্রতি, স্নেহময়ী আচরণ তাঁর শত্রু ভাইদের প্রতি,তাঁর অনুরাগ বইয়ের প্রতি, শের(কবিতা) এর ও বিভিন্ন রন্ধনশৈলীর প্রতি সত্যিই অপূর্ব সুন্দর রূপে ফুটে উঠেছে। তাঁর সিংহাসন হারানোর মধ্যে চোখে পড়ে তাঁর কোমল হৃদয়ের,কিছু অক্ষমতা,আফিমের নেশায় বুদ হওয়ার মত ভুল ও ভাই কামরান ও আসকারী মীর্জাকে শাস্তি দিতে না পারার অসহায়তা। শেঁর শাহ ছিলেন হুমায়ূনের রাজ্যের প্রধান দুশমন,কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে তিনি এই কোমল মানুষটাকে খুবই পছন্দ করতেন। তাঁর প্রিয় মানুষদের মধ্যে এবং তাঁর জীবনে উল্লেখযোগ্য মানুষদের মধ্যে পড়ে তাঁর মেয়ে আকিকা,বোন গুলবদন,স্ত্রী হামিদা বানু,পুত্র শাহজাদা আকবর(যিনি পরে 'আকবর দ্য গ্রেট' হিসেবে পরিচিত হন), অবশ্যই প্রধান সেনাপতি বৈরাম খাঁ,জওহর আবতাবচি(পানি পান করাতেন)পারস্য সম্রাট শাহ্ তামাম্প যাকে হুমায়ূন বিখ্যাত কোহিনূর হীরা উপহার দেন, যার সহায়তায় তিনি আবার তাঁর হারানো রাজ্য ফিরে পান। "রাজা যায় রাজা আসে।প্রজাও যায়,নতুন প্রজা আসে। কিছুই টিকে থাকেনা।ক্ষুধার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে,তবে গল্প গিলতে পারেনা।গল্প থেকে যায়। বাদশা নামদারের কিছু গল্প শোনানো শেষ হল।" পাঠ-প্রতিক্রিয়া:বইটা আমার পছন্দের সেরা দশের তালিকায় আছে, বাদশা হুমায়ূন অমর হন তাঁর কীর্তির জন্য নয় শুধু, প্রজাদের প্রতি তাঁর ভালবাসার জন্যও।ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ইতিহাস পড়তে একদম ই আগ্রহী নই,তবে ঐতিহাসিক এই উপন্যাসটি আমি এক নিঃশ্বাসে পড়েছি,নিঃসন্দেহে এটি আমার মত যারা আছেন তাদের জন্য খুব ইন্টারেস্টিং হবে। আমি তো এখন পুরো মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস পড়তে ব্যগ্র হয়ে উঠেছি,যাই হোক আমার গল্প শোনা তো হলো, এবার বইটি পড়ে দেখুন,বাকি কাহিনী সেখান থেকেই জানতে পারবেন এবং অবশ্যই খুবই ভালো লাগবে। https://www.rokomari.com/book/1171/বাদশাহ-নামদার (# এটা আমার জীবনে লেখা প্রথম কোন বইয়ের রিভিউ,কোন ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি!!)
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাস “বাদশাহ নামদার” মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জাকে নিয়ে রচিত। “বাদশাহ নামদার” উপন্যাসটি নিয়ে আলীম আজিজ ও তৈমুর রেজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন আহমেদ বলেন--- প্রশ্ন: হঠাৎ করে কেন মনে এল হুমায়ূনকে নিয়ে লিখতে হবে?=== হুমায়ূন: ”আসলে আমার আকর্ষণ তাঁর খ্যাপা ধরনের জন্য। এই রকম একটা পাগল লোক। ভিস্তিওয়ালা তাঁর জীবন রক্ষা করেছে বলে আধাবেলার জন্য তাকে দিল্লির সিংহাসনে বসিয়ে দিলেন। এটা পাগলামি ছাড়া আর কী! তুমি তাকে টাকা-পয়সা দাও। একেবারে দিল্লির সিংহাসনে বসিয়ে দেওয়া—এটা কোনো কাজ হলো? তার মানে তুমি এত হেলাফেলা করে ভাবো? এইটা আমাকে খুবই সারপ্রাইজ করল। চিতোরের রানিকে সাহায্য করতে তিনি সব ফেলেফুলে ছুটলেন। এটাও সারপ্রাইজিং। তারপরে রক্তবর্ণ কাপড় পরে তিনি যে মানুষ হত্যা শুরু করলেন—এটা কিন্তু ইতিহাস থেকে নেওয়া। সেখানে একটা ছেলে এসে গান গাইল। গান শুনে মুগ্ধ হয়ে হুমায়ুন সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন। মোগল চিত্রকলার শুরুটা কিন্তু হুমায়ুনের হাতে। তাঁর আগে মোগল চিত্রকলা ছিল না। তিনি পারস্য থেকে চিত্রকর নিয়ে এলেন। ভারতে তিনিই প্রথম মানমন্দির তৈরি করেছেন। কেন? কারণ তিনি পারস্যে মানমন্দির দেখে আসছেন। তাঁর মৃত্যুও হয়েছে কিন্তু ওই মানমন্দিরের কারণে। সকালে ফজরের আজান হয়েছে। তিনি জানেন সকালে ফজরের আজানের সময় শুক্রগ্রহ মানে সন্ধ্যাতারাটা ওঠে। ওটা দেখার জন্য তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। পরনের কাপড়ে আটকে তিনি পড়ে যান। এ সব ঘটনা, একটা ক্যারেক্টার এত বিচিত্র হতে পারে? এত খেয়ালি হতে পারে। বৈরাম খাঁর কথা পড়েছ না?”
Was this review helpful to you?
or
আমরা অনেকেই বই পড়তে ভালোবাসি। রকমফের বই পড়ে থাকলেও ইতিহাস বিষয়ক পুস্তিকা সর্বদাই অনীহাপূর্ণ ঠেকেছে। তবে ইতিহাসকেও যে রসাত্মক রুপে রচনা করা যায় তার প্রমাণ হুমায়ূন আহমেদ-এর “বাদশাহ নামদার”। মোঘল সম্রাট বাদশাহ হুমায়ূন-এর জীবদ্দশার এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় নিয়ে রচিত বইটি পাঠক মহলে বেশ সারা ফেলে। এ যেন হুমায়ূন আহমেদের এক অনবদ্য কীর্তি। “বাদশাহ নামদার” পড়তে উৎসাহিত করছি আপনাদের। ইতিহাস প্রসিদ্ধ মোঘল সম্রাজ্জের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং তাঁদের জৈবনিক বৈচিত্র্য নিয়ে লেখা “বাদশাহ নামদার” যার মূল চরিত্র সম্রাট হুমায়ূন। মোঘল সম্রাট বাদশাহ হুমায়ূন যে বৈচিত্র্যময় চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তা লেখক খুব চমকপ্রদভাবে ব্যক্ত করেছেন। অনেক অজানা তথ্য এবং তৎকালীন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে পাঠকবৃন্দ স্বচ্ছ এক ধারণা পাবে। বইটির বিভিন্ন স্থানে বাদশাহ হুমায়ূন-এর ঘনিষ্ঠজনদের সাক্ষ্য আছে যা ঘটনাবলীর যথার্থতা প্রমাণ করে। সর্বোপরি “বাদশাহ নামদার” মোঘল ইতিহাসকে জনসম্মুখে গল্পের মতো উপস্থাপন করেছে।
Was this review helpful to you?
or
আপনি যদি খুব সহজেই,মুঘল রাজ্য,প্রাসাদ এবং মুঘল বাদশাহ হুমায়ূনের সাথে সাক্ষাৎ করতে চান তাহলে এই উপন্যাসটা আপনাকে জায়গামতো নিয়ে যাবে।হারিয়ে যাবেন সেই সময়কার মুঘল রাজ্যে,নেশায় পড়ে যাবেন।মনে হবে যেন,উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় এক ধরণের মাদক মেশানো আছে।যেই মাদকের নেশা আপনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। বাদশাহ নামদারের কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের হাত ধরে। একজন হুমায়ূনের বিভিন্ন রকম চরিত্রের সাথে আপনার পরিচয় ঘটবে।মানুষ হিসেবে বাদশাহ হুমায়ূন ছিলেন প্রচন্ড রকমের খেয়ালি। সবসময় নিজের ইচ্ছার ওপর চলতেন।যেমনটা আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রেও।উপন্যাসটা পড়তে পড়তে আমি দুই হুমায়ূনের আশ্চর্য রকমের মিল খুজে পেয়েছি বারেবার। এতবড় একটা সম্রাজ্যের অধিকারী হয়েও তিনি মেতে থাকতেন তার নিজস্ব উন্মাদনায়,নিজস্ব নেশায়।লিখতেন কবিতা,আঁকতেন ছবি।মুঘল চিত্রকলার সূচনা হয় তার হাত ধরেই।পাখপাখালি, রান্নাবান্না, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি ছিল তার শিশুসুলভ আগ্রহ আর কৌতুহল।আমি যেটা বলবো,তার চরিত্রের সবচেয়ে দূর্বল দিকটি ছিল তার উদারতা,তার ক্ষমাশীলতা। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না।মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ।তার চিরশত্রু শের শাহ ,যিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন, তাঁরও নির্দেশ ছিল, “সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না” কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “ তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” আশ্চর্য রকমের নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ ছিল সম্রাটের জীবন।যেটা পড়লে আপনি সম্রাটের নেশায় আসক্ত হবেন,হুমায়ূনকে ভালোবাসতে বাধ্য হবেন, তাঁর দু:খে কষ্ট পাবেন, তাঁর খুশিতে আনন্দিত হবেন, তাঁর বিজয়ে উল্লাস করবেন, তাঁর পরাজয়ে হতাশ হবেন। গায়ের রোম শিউরে উঠবে বারেবার,হতে বাধ্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,এই খেয়ালী সম্রাট তাহলে রাজ্য কিভাবে চালাতেন?সেটা জানতে হলে আমাদেরকে পরিচিত হতে হবে,মুঘল রাজ্যের খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র,সম্রাটের সার্বক্ষণিক সহচর।সহচর বলা বোধ হয় ঠিক হবে না,বাদশাহ নিজেই তাকে বন্ধু বলে ঘোষণা দিয়েছেন,তিনি বৈরাম খাঁ। একজন সম্রাটের যেসকল গুণ থাকার দরকার তার সবটুকুই এই লোকটার মধ্যে ছিল।হয়তোবা একটু বেশী পরিমাণেই ছিল। মুঘল রাজত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তার অবদান কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। অসাধারণ বিচক্ষণতা, রণকৌশল, ইচ্ছাশক্তিতে পরিপূর্ণ এই মানুষ ডুবে যাওয়া সম্রাট হুমায়ূনকে তীরে তুলে এনেছেন বারেবার।ছায়ার মতো ছিলেন সম্রাটের পাশে। যেই মুঘল রাজ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য যার এত সংগ্রাম।সেই রাজ্যেরই এক সম্রাটের পাঠানো গুপ্তচরের হাতে নিহত হন এই সেনাপতি। ইতিহাস আমার খুব আগ্রহের একটি বিষয়। ইতিহাসের বই তেমন পড়া হয় নি।যেগুলো পড়েছি বেশীরভাগই ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। বইগুলােতে বর্ণনা অনেক বেশী ছিল। কিন্তু বাদশাহ নামদার পড়ার সময়,চরিত্রগুলাে যেন দিয়ে বইয়ের পাতা থেকে বের হয়ে আসছিল,আসলে স্যারের লেখা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস মানেই অন্যকিছু,একেবারে আলাদা একটা জিনিশ। মুঘলদের ইতিহাসের অন্ধকার ও আলােকিত দিকগুলো এত পরিষ্কার,এত সূক্ষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে ,মনে হবে ঘটনাগুলাে সব চােখের সামনেই ঘটছে এবং আপনি নিজে সেই জায়গায় উপস্থিত আছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা উপন্যাস।যারা বাদশাহ নামদারের নেশায় আসক্ত হন নি,তারা একটি পবিত্র নেশা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামের মধ্যেই যেমন সরলতার একটা ভাব আছে, পুরো বইটা জুড়েও তেমনটাই পাওয়া যাবে। লেখক আর কেউ নন, আমাদের হুমায়ূন আহমেদ। বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মোঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জা- কে নিয়ে, যিনি পিতার দিক থেকে তৈমুরের পঞ্চম অধস্তন এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের পঞ্চদশ পুরুষ। বাদশাহ নামদার, স্বভাবতই ইতিহাসভিত্তিক বই, কিন্তু পাঠক হিসেবে বলতে পারি, পড়তে পড়তে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, গৎবাঁধা চিরাচরিত কোন ইতিহাসের বই পড়ছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সম্রাট হুমায়ূন চরিত্রটি লেখক হুমায়ূনের অন্যান্য চরিত্রের সাথে এতোই সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, পাঠক হিসেবে ভুলেই যেতে হয়, এ কোন সম্রাটের জীবনী, যিনি কিনা খেয়ালের বশে রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে, যিনি কিনা সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন,এবং বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!! এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আকবর দ্যা গ্রেট। সম্রাট হুমায়ূন চরিত্র যে কত বিচিত্র, তার জীবনে যে কত রঙ চড়ানো, তা এতদিন শুনেই এসেছিলাম, আজ তা লেখক হুমায়ূনের গুণে পড়া হল। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না, মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরে, ছিলেন কবি, তার চিরশত্রু শের শাহ , যিনি-ই হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন, তাঁরও নির্দেশ ছিল, “সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না” কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “ তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” সম্রাট হুমায়ূনের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা ছিল মানুষকে ভালবাসবার ক্ষমতা। “জাদুকরী ক্ষমতার হুমায়ূনের মতো মানুষরা যা কিছু হারায় সবই ফিরে পায়। মানুষের ভালোবাসার কারণে ফিরে পায়। ” আসলেই সম্রাট ফিরে পেয়েছিলেন তার হারানো সাম্রাজ্য, বজায় রেখেছিলেন মোঘল ঐতিহ্যও। হাজারো উত্থান- পতন, দেনা- পাওনা, হারানো- ফিরে পাওয়ার মাঝেও , হুমায়ূনের ছোট মেয়ে আকিকা বেগমের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। তার প্রতি সম্রাটের প্রগাড় ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার প্রগাড় নিষ্ঠা চোখে পড়বার মতো। এছাড়া আমরা পাবো বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্করকে, সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জাকে, হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি ( যিনি পানি সরবরাহ করেন) জওহরকে। শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন। তার করুণ মৃত্যুর কথা নাই বা বললাম, কিছুটা ট্র্যাজেডি পড়বার জন্যই না হয় রেখে দিলাম!! সবশেষে একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো, যা পাঠক হিসেবেই কৌতূহল, তা হল, বইটা পড়বার এক পর্যায়ে মনে হল, ঘটনাগুলো কি আসলেই এতো বেমানান?? নাকি লেখক হুমায়ূন তার কিংবা তার চরিত্রের জীবনের সাথে সম্রাট হুমায়ূনের মিল পেয়েছেন বিধায় এমন লেখায় আগ্রহী হলেন?? অথবা হাজারো ঘটনা থেকে সেগুলোই তুলে নিলেন যা তিনি চেয়েছেন?? আর সে জন্যই ভূমিকাতে এই লেখার পিছনের কোন কারণ শক্তভাবে উল্লেখ করেননি। লেখক, বইটি উৎসর্গও করেছেন তার ছোট ছেলে নিনিত হুমায়ূনকে, যেখানে বলেছেন- “ আমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে।…… এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।” বইটি শেষও হয়েছে সম্রাটের ছোট পুত্র আকবরকে দিয়ে, যে ১৪ বছর বয়সেই দিল্লীর মসনদে বসেছিল!! এটা হয়তো কাকতলীয় , কে বা জানে?? শেষ করছি হিন্দুস্থানের অধীশ্বর দিল্লীর সম্রাট শের শাহকে পাঠানো রাজ্যহারা হুমায়ূনের একটি শের দিয়ে- “যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায় কিন্তু তা পৃথক থাকে নিজে নিজেকে অন্যরূপে দেখা আশ্চর্যের ব্যাপার। এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ”
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামের মধ্যেই যেমন সরলতার একটা ভাব আছে, পুরো বইটা জুড়েও তেমনটাই পাওয়া যাবে। লেখক আর কেউ নন, আমাদের হুমায়ূন আহমেদ। বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মোঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জা- কে নিয়ে, যিনি পিতার দিক থেকে তৈমুরের পঞ্চম অধস্তন এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের পঞ্চদশ পুরুষ। স্বভাবতই ইতিহাসভিত্তিক বই, কিন্তু পাঠক হিসেবে বলতে পারি (সমালোচক নই, কেননা এখানো সেই পর্যায়ে পৌছাইনি) পড়তে পড়তে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, গৎবাঁধা চিরাচরিত কোন ইতিহাসের বই পড়ছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সম্রাট হুমায়ূন চরিত্রটি লেখক হুমায়ূনের অন্যান্য চরিত্রের সাথে এতোই সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, পাঠক হিসেবে ভুলেই যেতে হয়, এ কোন সম্রাটের জীবনী, যিনি কিনা খেয়ালের বশে রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে, যিনি কিনা সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন,এবং বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!! এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আকবর দ্যা গ্রেট। সম্রাট হুমায়ূন চরিত্র যে কত বিচিত্র, তার জীবনে যে কত রঙ চড়ানো, তা এতদিন শুনেই এসেছিলাম, আজ তা লেখক হুমায়ূনের গুণে পড়া হল। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না, মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরে, ছিলেন কবি, তার চিরশত্রু শের শাহ , যিনি-ই হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন, তাঁরও নির্দেশ ছিল, “সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না” কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “ তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” সম্রাট হুমায়ূনের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা ছিল মানুষকে ভালবাসবার ক্ষমতা। “জাদুকরী ক্ষমতার হুমায়ূনের মতো মানুষরা যা কিছু হারায় সবই ফিরে পায়। মানুষের ভালোবাসার কারণে ফিরে পায়। ” আসলেই সম্রাট ফিরে পেয়েছিলেন তার হারানো সাম্রাজ্য, বজায় রেখেছিলেন মোঘল ঐতিহ্যও। হাজারো উত্থান- পতন, দেনা- পাওনা, হারানো- ফিরে পাওয়ার মাঝেও , হুমায়ূনের ছোট মেয়ে আকিকা বেগমের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। তার প্রতি সম্রাটের প্রগাড় ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার প্রগাড় নিষ্ঠা চোখে পড়বার মতো। এছাড়া আমরা পাবো বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্করকে, সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জাকে, হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি ( যিনি পানি সরবরাহ করেন) জওহরকে। শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন। তার করুণ মৃত্যুর কথা নাই বা বললাম, কিছুটা ট্র্যাজেডি পড়বার জন্যই না হয় রেখে দিলাম!! সবশেষে একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো, যা পাঠক হিসেবেই কৌতূহল, তা হল, বইটা পড়বার এক পর্যায়ে মনে হল, ঘটনাগুলো কি আসলেই এতো বেমানান?? নাকি লেখক হুমায়ূন তার কিংবা তার চরিত্রের জীবনের সাথে সম্রাট হুমায়ূনের মিল পেয়েছেন বিধায় এমন লেখায় আগ্রহী হলেন?? অথবা হাজারো ঘটনা থেকে সেগুলোই তুলে নিলেন যা তিনি চেয়েছেন?? আর সে জন্যই ভূমিকাতে এই লেখার পিছনের কোন কারণ শক্তভাবে উল্লেখ করেননি। বইটি উৎসর্গও করেছেন তার ছোট ছেলে নিনিত হুমায়ূনকে, যেখানে বলেছেন- “ আমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে।…… এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।” বইটি শেষও হয়েছে সম্রাটের ছোট পুত্র আকবরকে দিয়ে, যে ১৪ বছর বয়সেই দিল্লীর মসনদে বসেছিল!! এটা হয়তো কাকতলীয় , কে বা জানে?? শেষ করছি হিন্দুস্থানের অধীশ্বর দিল্লীর সম্রাট শের শাহকে পাঠানো রাজ্যহারা হুমায়ূনের একটি শের দিয়ে- “ যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায় কিন্তু তা পৃথক থাকে নিজে নিজেকে অন্যরূপে দেখা আশ্চর্যের ব্যাপার। এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ। ”
Was this review helpful to you?
or
tanjila omi কর্তৃক লিখিত রিভিউটি উনার নিজের নয়। এটি আগেই প্রকাশিত হয়েছে অন্য জায়গায়। বেশিরভাগ বাক্য হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে অন্য একটি লেখা থেকে। প্রকৃত বই আলোচকঃ স্রোতস্বিনী প্রকাশকালঃ নভেম্বর 3, 2013 লিংকঃ http://tinyurl.com/lakawbq স্বভাবতই ইতিহাসভিত্তিক বই, কিন্তু পাঠক হিসেবে বলতে পারি (সমালোচক নই, কেননা এখানো সেই পর্যায়ে পৌছাইনি) পড়তে পড়তে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, গৎবাঁধা চিরাচরিত কোন ইতিহাসের বই পড়ছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সম্রাট হুমায়ূন চরিত্রটি লেখক হুমায়ূনের অন্যান্য চরিত্রের সাথে এতোই সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, পাঠক হিসেবে ভুলেই যেতে হয়, এ কোন সম্রাটের জীবনী, যিনি কিনা খেয়ালের বশে রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে, যিনি কিনা সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন,এবং বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!! এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আকবর দ্যা গ্রেট। সম্রাট হুমায়ূন চরিত্র যে কত বিচিত্র, তার জীবনে যে কত রঙ চড়ানো, তা এতদিন শুনেই এসেছিলাম, আজ তা লেখক হুমায়ূনের গুণে পড়া হল। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না, মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরে, ছিলেন কবি, তার চিরশত্রু শের শাহ , যিনি-ই হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন, তাঁরও নির্দেশ ছিল, “সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না” কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “ তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” সম্রাট হুমায়ূনের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা ছিল মানুষকে ভালবাসবার ক্ষমতা। “জাদুকরী ক্ষমতার হুমায়ূনের মতো মানুষরা যা কিছু হারায় সবই ফিরে পায়। মানুষের ভালোবাসার কারণে ফিরে পায়। ” আসলেই সম্রাট ফিরে পেয়েছিলেন তার হারানো সাম্রাজ্য, বজায় রেখেছিলেন মোঘল ঐতিহ্যও। হাজারো উত্থান- পতন, দেনা- পাওনা, হারানো- ফিরে পাওয়ার মাঝেও , হুমায়ূনের ছোট মেয়ে আকিকা বেগমের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। তার প্রতি সম্রাটের প্রগাড় ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার প্রগাড় নিষ্ঠা চোখে পড়বার মতো। এছাড়া আমরা পাবো বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্করকে, সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জাকে, হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি ( যিনি পানি সরবরাহ করেন) জওহরকে। শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন। তার করুণ মৃত্যুর কথা নাই বা বললাম, কিছুটা ট্র্যাজেডি পড়বার জন্যই না হয় রেখে দিলাম!! সবশেষে একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো, যা পাঠক হিসেবেই কৌতূহল, তা হল, বইটা পড়বার এক পর্যায়ে মনে হল, ঘটনাগুলো কি আসলেই এতো বেমানান?? নাকি লেখক হুমায়ূন তার কিংবা তার চরিত্রের জীবনের সাথে সম্রাট হুমায়ূনের মিল পেয়েছেন বিধায় এমন লেখায় আগ্রহী হলেন?? অথবা হাজারো ঘটনা থেকে সেগুলোই তুলে নিলেন যা তিনি চেয়েছেন?? আর সে জন্যই ভূমিকাতে এই লেখার পিছনের কোন কারণ শক্তভাবে উল্লেখ করেননি। বইটি উৎসর্গও করেছেন তার ছোট ছেলে নিনিত হুমায়ূনকে, যেখানে বলেছেন- “ আমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে।…… এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।” বইটি শেষও হয়েছে সম্রাটের ছোট পুত্র আকবরকে দিয়ে, যে ১৪ বছর বয়সেই দিল্লীর মসনদে বসেছিল!! এটা হয়তো কাকতলীয় , কে বা জানে?? শেষ করছি হিন্দুস্থানের অধীশ্বর দিল্লীর সম্রাট শের শাহকে পাঠানো রাজ্যহারা হুমায়ূনের একটি শের দিয়ে- “ যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায় কিন্তু তা পৃথক থাকে নিজে নিজেকে অন্যরূপে দেখা আশ্চর্যের ব্যাপার। এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ। ”
Was this review helpful to you?
or
বাদশাহ নামদার ইতিহাস আশ্রিত ফিকশন। ইতিহাসের কোনো চরিত্রকে নিয়ে, সরাসরি নিয়ে, এই প্রথম (এবং এই শেষ?) কোনো উপন্যাস রচনা করলেন হুমায়ূন আহমেদ। সেটা আবার হুমায়ূন মীর্জার মতো ‘বহু বর্ণে’র একজন সম্রাটকে নিয়ে। কবি, চিত্রকর, সংগীতরসিক, নেশাসক্ত, একসেনট্রিক এবং তীব্র আবেগপূর্ণ এই সম্রাটের চরিত্র। ‘রক্তের রঙের চেয়ে বৃক্ষের সবুজ রং কি কম সুন্দর?…’ গান শুনে মুগ্ধ হয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে দিতে পারেন ইনি, ক্ষমা করে দিতে পারেন নিজের রক্তপিপাসু ভাইকে, কথা দিয়েছিলেন বলে, আধা দিনের জন্য সম্রাটের আসনে বসাতে পারেন সামান্য এক ভিস্তিঅলাকে।বাদশাহ নামদার বইয়ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় স্ত্রী হামিদা বানু এই সম্রাটকে বলছেন, ‘আপনি দুর্বল সম্রাট; কিন্তু অত্যন্ত সবল একজন কবি।’ ৭৩ পৃষ্ঠায় শত্রু শের খাঁ (শের শাহ) বলছেন, ‘তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণ খণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্রও নেই।’ হুমায়ূন আহমেদের সম্রাট হুমায়ূন মূলত এই ‘মহান মানুষদের একজন।’ সম্রাট হয়েও রক্ত-মাংসের অসাধারণ একজন মানুষ। কাহিনিতে চরিত্র অসংখ্য। সম্রাট হুমায়ূন এবং তাঁর আত্মীয়-পরিজন, সেনাপতি বৈরাম খাঁ, জওহর আবতাবচি, শত্রু শের শাহ, হেরেমের বাদী আসহারি, আচার্য হরিশংকর, পারস্য-সম্রাট, অম্বা…। কাহিনির শাখা-প্রশাখারও শেষ নেই। মনে রাখতে হবে, এই কাহিনি বিশাল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অধ্যায়। সিদ্ধ না হলে নাড়াচাড়া দুরূহ। এ ধরনের ঐতিহাসিক কাহিনি নিয়ে যখন উপন্যাস লেখেন কোনো লেখক, কী করেন? পুনর্নির্মাণ করেন আখ্যানের, পুনর্জন্ম দেন প্রতিটি চরিত্রের। পুনর্জন্ম। এ না হলে হয় না। প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না কাহিনির। আর সময়। সময়কেও পল অনুপল ধরে আবার নির্মাণ করতে হয় লেখককে। দূর অতীতকাল পুনর্নির্মাণ। সামান্য বিচ্যুতি হলেও মুশকিল। আর, পিরিয়ড পিসের সম্রাট আকবরকে সুদর্শন হূতিক রোশন হলেও হয় না। সে সিনেমা হোক কিংবা সাহিত্যে। বিশ্বস্ততা অতীব জরুরি। বাদশাহ নামদার-এ হুমায়ূন আহমেদ এ ক্ষেত্রে পূর্ণমাত্রায় সতর্ক এবং বিশ্বস্ত। চরিত্র-চিত্রণ, কাহিনি বিন্যাসে। সেই সময়ের পুনর্নির্মাণে। তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে বাদশাহ নামদার এ জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। ‘রং চড়াতে’ হয়নি বলেছেন কিন্তু রঙের প্লেট তাঁর হাতে এবং আশ্চর্য পরিমিত তিনি। চমৎকার উদাহরণ হতে পারে, সতীদাহ প্রথার দৃশ্যটি কিংবা অম্বা, আকিকার মৃত্যু, কিংবা জোছনা রাতে পত্নী হামিদা বানুর সঙ্গে সম্রাট হুমায়ূনের কথোপকথনের বিষণ্ন দৃশ্য। মনে হবে লেখক স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন সব দৃশ্যে। ভাষা নিয়েও এই উপন্যাসে যথেষ্ট নিরীক্ষাপ্রবণ হুমায়ূন আহমেদ। আলাদা আদলের এক ভাষায় লিখেছেন, সচরাচর যে ভাষায় তিনি লেখেন না। এটা কাহিনির প্রয়োজনেই। এবং অব্যর্থ হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর ভাষা এমনিতেই মায়াবী। গাঁওগেরামের মানুষেরা যে রকম, বকুল ফুলের গাছবাহিত চৈত্রের আশ্চর্য হাওয়ার কথা বলেন, তেমনি একটা মায়া থাকে তাঁর ভাষায়। বাদশাহ নামদার-এও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে বাদশাহ নামদার-এর ভাষা একই সঙ্গে রুদ্ধশ্বাসও। থ্রিলারের মতো। ঘটনার পর ঘটনা এবং চরিত্রের পর চরিত্র আসছে, একটা কোথাও তাল লয় কাটেনি একটুও। লক্ষণীয় আরেকটা বিষয়। সম্রাট হুমায়ূনের মৃত্যুদৃশ্য। লেখক এর বিতংবর্ণনায় যাননি। ‘পরিশিষ্টে’র একটা বাক্যাংশ শুধু, ‘সম্রাটের মৃত্যুর পর…।’ বিশেষ তাৎপর্য মণ্ডিত এটাও। বোঝা যায় লেখক নিশ্চিত যে কতটুকু তিনি লিখবেন এবং কতটুকু না লিখবেন। সব মিলিয়ে বাদশাহ নামদার একটা মোগল মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ের মতো। সূক্ষ্ম, ডিটেইল। পরিমিত, পরিণত এবং দ্যুতিময়। বইয়ের ফ্ল্যাপে একটা শের আছে, ‘যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায় কিন্তু তা পৃথক থাকে নিজে নিজেকে অন্যরূপে দেখা আশ্চর্যের ব্যাপার। এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ।’ সম্রাট হুমায়ূনের লেখা শের এটা। সম্রাট না, কবি হুমায়ূন। কবি, চিত্রকর, শিল্পের সমঝদার, মূলত একজন মানুষের কাহিনিই বিধৃত বাদশাহ নামদার-এ। মানুষের জয় হোক। আফসোস বইটি প্রকাশের পর হুমায়ূন আহমেদ পত্রিকায় মুদ্রিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ ধরনের লেখা আর তিনি লিখবেন না! যাক। কিছু আফসোসও আসলে মধুর। আপাতত এই আফসোস বাদ দিয়ে, ‘আসুন, আমরা বাদশাহ নামদারের জগতে ঢুকে যাই। মোগল কায়দায় কুর্নিশ করে ঢুকতে হবে কিন্তু। নকিব বাদশাহর নাম ঘোষণা করছে— “আল সুলতান আল আজম ওয়াল…।” কুর্নিশ বাদশাহ নামদার-এর লেখককে।’
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ বাদশাহ নামদার। লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ। পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৩১ প্রকাশকঃ অন্যপ্রকাশ। ইতিহাস। সত্য ও অবিনশ্বর। ইতিহাস মানুষকে শিক্ষা দেয়। কিন্তু বিনিময়ে কিছুই নেয় না। দূর আকাশের তারার মতই ইতিহাস সর্বদা আপণ আলোয় ভাস্বর, দেদীপ্যমান। গভীর সমুদ্রে পথ হারানো জাহাজের নাবিককে যেমন দূরের তারকামণ্ডলী পথ দেখায়, তেমনি জীবন নামের অকূল পাথারে ভুল-ঠিক এর দিক নির্দেশনা দেয় ইতিহাস। জীবনে হতাশার ঘোর অন্ধকারে আশার আলো দেখায়। অতীতকে সাথে নিয়েই আমাদের পথ চলা। তাই অতীত সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা ভবিষ্যতের উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। অথচ এই ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা করতে আমাদের, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের ভয়ংকর রকমের আপত্তি। ধরা যাক কোন একটি বাচ্চা আইস্ক্রীম খাচ্ছে। এমন সময় আরেকটি বাচ্চা এসে তা থেকে ভাগ চাইলে বাচ্চাটির মুখের অবস্থা যেমন হয়, ইতিহাসের বই নিয়ে পড়তে বসতে হলে মুখটা তার চাইতেও যেন একটু বেশিই পানসে হয়ে যায়। কিন্তু এতে বোধ হয় তাদের খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবে না। ইতিহাস যে তাদের হাসি কেড়ে নেয়, এর অন্যতম মূল কারণ হল এর নীরস উপস্থাপন। অথচ একটু গল্পের ছলে, একটু সাহিত্যের রস মিশিয়ে পরিবেশন করা হলে সেটি শুধু উপাদেয়ই হয় না, সহজপাচ্য-ও হয় বইকি। তখন সহজেই ইতিহাস পাঠের মর্মোদ্ধার করা যায়। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ‘বাদশাহ নামদার’ বইটির মাধ্যমে এই কাজ টি-ই করতে চেয়েছেন। একটু ভুল বলে ফেললাম। করতে পেরেছেন বলেই আমার মনে হয়। বইটি মুঘল সম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট নাসিরুদ্দীন মুহম্মদ হুমায়ূন কে উপজীব্য করে লেখা। কিন্তু কেন লেখক হঠাৎ করে বাদশাহ হুমায়ূন এর পিছনে উঠে পড়ে লাগলেন? তাঁর নামের সাথে মিত্রতা দেখে? নাকি যুদ্ধে পরাজিত বাদশাহ হুমায়ূন কে কাছে না পেয়ে লেখকের স্কুলের সহপাঠীরা তাঁকেই হারু হুমায়ূন বলে খ্যাপাতেন বলে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে তাঁর মুখোমুখি হয়েছেন? লেখক নিজে অবশ্য এর একটা সদুত্তর দিয়েছেন। তাঁর মতে বাদশাহ হুমায়ূন এর জীবনটা এত বেশী রঙ্গিন, বর্ণাঢ্য ছিল, এত বেশী ক্ষণে ক্ষণে রঙ পালটাত যে উপন্যাস লিখতে গিয়ে তাতে আলাদা করে আর রঙ চড়ানোর দরকার পড়েনা। তাঁর জীবন সাহিত্যের প্রসাদগুণ এমনই ছিল। মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দীন মুহম্মদ বাবরের পুত্রস্নেহের কথা তো আমরা সবাই জানি। বইটিতেও তার বর্ণনা যথেষ্টই হৃদয়স্পর্শী। বাবরের জ্যেষ্ঠ সন্তান হওয়া সত্ত্বেও হুমায়ূন ছিলেন সাহিত্যমনা, কাব্যিক ভাবনা ও খামখেয়ালি চিন্তাভাবনায় পরিপূর্ণ। তা সত্ত্বেও বাবর তাঁর প্রতি বিশ্বাস হারাননি। বারবার তাঁকে বুকে টেনে নিয়েছেন। স্নেহের আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছেন। কিন্তু খেয়ালি হুমায়ূন তারপরও তাঁর ভাবের সাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য ঘরছাড়া হয়েছেন। অবশেষে যখন ঘরে ফিরলেন, তখন তিনি মৃতপ্রায়। এই সময় বাবর জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করলেন। তাঁর পুত্রের জীবন যে নিজের জীবনের চাইতেও মূল্যবান। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলেন নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন ভিক্ষা চেয়ে। পুত্রের রোগমুক্তি কামনা করলেন স্নেহময়ী পিতা। সৃষ্টিকর্তা তাঁর প্রার্থনা কবুল করলেন। এইভাবেই আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে পুত্রকে নবজীবন দানে্র ইন্তেজাম করলেন বাবর। এরপর হুমায়ূনের সিংহাসন লাভ, চিতরের রাণীর ভ্রাতৃতুল্য সম্মান লাভ এবং তাঁকে যুদ্ধে সাহায্যের জন্য অগ্রসর হওয়া, চিতরের রাণীর আত্মাহুতি, নিজে সুন্নি মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও শিয়া মুসলমান বংশের কন্যা হামিদা বানুর পাণিগ্রহণ, শের খানের( পরবর্তীতে শের শাহ্ উপাধি ধারণ) সাথে সংঘাত এবং পরাজয় বরণ, পরাজিত হুমায়ূনের সস্ত্রীক(হামিদা বানু) পলায়ন, প্রধান সেনাপতি বৈরাম খাঁর সততা ও প্রভুভক্তি, পলায়নরত অবস্থায় মহামতি আকবরের জন্ম এবং শিশুপুত্রকে হারানো, পারস্য সম্রাটের কাছে আশ্রয় গ্রহণ এবং তাঁর সাহায্যে প্রায় ১৫ বছর পরে সিংহাসন পুনরুদ্ধার- এসব কিছুই সাবলীল ভাষায় বর্ণীত হয়েছে বইটিতে। তখনকার দিনের রাজপরিবারের অলিখিত নিয়ম ছিল কোন এক ভাই সিংহাসনে বসলেই তিনি তাঁর ভাইদের হয় বন্দী অথবা হত্যা করতেন যেন ভাইয়েরা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। কিন্তু হুমায়ূন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এবং অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন। তিনি তাঁর ভাইদের সকল প্রকার বিরোধিতা ভুলে গিয়ে তাদের স্নেহের বাহুডোরে আবদ্ধ করেছিলেন। মুলত এটিই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ভাই কামরান মীর্জার বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই তাঁকে করুণ পরিণতি বরণ করে নিতে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কামরান শিশুপুত্র আকবরকে চুরি করলে এবং অপর ভাই হিন্দোল মীর্জাকে হত্যা করলে তিনি তাকে আর ক্ষমা করতে পারেননি। হুমায়ূনের শুধু ভ্রাতৃপ্রেমই বিখ্যাত ছিল না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সন্তানবৎসল। প্রথমা স্ত্রীর পক্ষের কন্যা আকিকা বেগমের জন্য তাঁর ছিল অপরিসীম স্নেহ। এমনকি সতীদাহ প্রথার শিকার হতে যাওয়া কিশোরী বিধবা অম্বাকে তিনি উদ্ধার করেন ও কন্যাস্নেহ দেন। হুমায়ূনের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য চারিত্রক বৈশিষ্ট্য ছিল সততা। তাঁর জীবন রক্ষাকারীকে(নাজিম ভিস্তিওয়ালা) দেওয়া ওয়াদা রক্ষার তাগিদে আধাবেলার জন্য সিংহাসনে বসিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বইটির সবচেয়ে করুণ অংশ হল হুমায়ূন এর মৃত্যু এবং সম্রাট আকবর কর্তৃক বিশ্বস্ত বৈরাম খাঁকে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে গুপ্তহত্যা। যে বৈরাম খাঁ বালক সম্রাট আকবরের অভিভাবকত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করলেন, মক্কায় নির্বাসনে যাওয়ার পথে সেই আকবরের পাঠানো ঘাতকের হাতেই তাঁর প্রাণ গেল। লেখক মহামতি আকবরের এমন পদক্ষেপের প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন- “ মোমবাতির শিখার ঠিক নিচেই থাকে অন্ধকার।” আশা করি বইটি সকলের ভাল লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
যেই ইতিহাসকে আমি দুই চোখে দেখতে পারতাম না বইটি পড়ে আমি সেই ইতিহাসের প্রেমে পড়ে গেলাম।অসাধারন একটি বই।পড়া শুরু করার পর আর থামতে পারিনি। এক বৈঠকে বই শেষ। তবে শেষে বৈরাম খাঁর মৃত্যু আমাকে কাঁদিয়ে দিয়েছে।এমন একজন মানুষের এমন করুন মৃত্যুইকি প্রাপ্য ছিল??????????????????
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস কাউকে টানে, কাউকে আবার টানে না। ইতিহাসের প্রতি সবসময় একটা প্রবল আগ্রহ ছিল এবং এখনও আছে। যেহেতু বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি সুতরাং আমার দেশের এবং পার্শ্ববর্তী দেশের ইতিহাস জানার আগ্রহই বেশী আমার। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সবসময় আমাকে একটু বেশীই টানে। ইতিহাসের বিভিন্ন বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার একটা সমস্যা হল যেহেতু বইগুলো সাধারনত বর্ণনামূলক হয়ে থাকে তাই মাঝে মাঝে একটু বিরক্তভাব এসে যায়। কিন্তু ইতিহাসকে যদি একটি উপন্যাসের মলাটের ভিতরে বন্দী করা যায় সেটা হয় সোনায় সোহাগা। আর ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখার ক্ষেত্রে আমাদের সময়ের সেরা বাঙ্গালী লেখক হুমায়ূন আহমেদের চেয়ে উত্তম আর কেউ হতে পারেন বলে আমি মনে করি না। 'বাদশাহ নামদার' উপন্যাসের কাহিনী মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জাকে নিয়ে রচিত। কাহিনী শুরু হয় ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে। বাদশাহ বাবর আদরের পুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে বড্ড চিন্তিত। পুত্র হুমায়ুন সাম্রাজ্য নিয়ে পুরাপুরি উদাসীন। সে ব্যস্ত থাকে তাঁর রংতুলি ও পদ্য নিয়ে। প্রকৃতির মাঝেই তাঁর প্রকৃত সুখ। ওই সময়কালেই একবার পুত্র হুমায়ূন মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায়। বাদশাহ বাবর নিজের প্রানের বিনিময়ে খোদার কাছে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন। পুত্রের কালান্তক ব্যাধি শরীরে ধারন করে পঞ্চাশ বছর বয়সে সম্রাটের মৃত্যু হয়। তার তিন দিন পর হুমায়ূন মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আসীন হন। সম্রাট হুমায়ূন রাজকর্মে অত মনোযোগী ছিলেন না। তিনি ডুবে থাকতেন নিজের জগতে। এই সুযোগে তাঁর ছোট ভাই কামরান মীর্জা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন। মুঘল সাম্রাজ্যের শত্রু শের খাঁ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খামখেয়ালী বাদশাহ সাম্রাজ্য রক্ষ্যায় সাথে পেলেন বিশ্বস্ত ও সাহসী সেনাপতি বৈরাম খাঁকে। সাম্রাজ্য দখল ও রক্ষ্যার এই অসামান্য উপাখ্যান চলতেই থাকল। এই কাহিনীতে চরিত্র অসংখ্য কিন্তু ভাবছেন মনে রাখতে কস্ট হবে। একদমই হবে না। কারন, লেখক এইসব ঐতিহাসিক চরিত্রকে কাগজের পাতায় পুনর্জন্ম দিয়েছেন তাঁর চিরাচরিত জাদুর ছোঁয়ায়। আর ভুলেও এই বই রাত ১১/১২ টায় পড়া শুরু করবেন না, কারন আপনি এই বই ছেড়ে শুতেই পারবেন না এবং পড়া শেষ হলেও ঘুম আসবেনা। মাথায় শুধুই চরিত্রগুলো ঘুরে বেড়াবে । বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদের অসামান্য সৃষ্টিগুলোর অন্যতম। এই ধরনের ঐতিহাসিক উপন্যাস উনি উনার জীবনযাত্রার শেষ প্রান্তে এসে লেখবেন তা হয়ত অনেকেই ভাবতে পারেনি। মুঘল সাম্রাজ্য নিয়ে যেকোনো ধরনের নন-ফিকশন লেখা হয়ত সহজ। কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্যের কোন এক সম্রাটকে নিয়ে এই স্তরের উপন্যাস লিখা আমার মতে কঠিন এক কাজ, যেহেতূ এর ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। তারপরও এই অসামান্য কাজ সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র উনার নাম হুমায়ূন আহমেদ বলেই, যার স্থান পাঠকের হৃদয়ে। বাদশাহ নামদার থেকে নেয়া আমার সবচেয়ে প্রিয় কয়েকটি পঙক্তি- অশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয় । যেমন বন্ধু নয় বায়ু, মেঘমালার । বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না । দু'জনেই থাকবে দু'জনের কাছে অদৃশ্য । দৃশ্যমান থাকবে তাঁদের ভালোবাসা ।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস আমি দু'চোখে দেখতে পারি না । আমি পড়ার সময় ইতিহাসকে সবসময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি । কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের বাদশাহ নামদার আমার ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে । বইটিকে প্রথমে আমার ভালো লেগেছে এর প্রচ্ছদ দেখে । কিন্তু বইটি যখন পড়া শেষ করেছি তখন মনে হয়েছে যেন একটু তাড়াতাড়ি শেষ হল । আমার মতো এমন অবস্থা হয়তো অনেকেরই হয়েছে । পড়া শেষে আমার আরও মনে হয়েছে যেন হুমায়ূন আহমেদকে বলি আপনি এরকম আরও বই লেখেন আমার মতো শিক্ষার্থীদের সুবিধা হবে । এই বইটার পড়ে আমি যেন বাদশাহ হুমায়ূনের ভিতর আমাদের শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে পাচ্ছিলাম । তিনি তো তার মতোই রহস্যময় ছিল । ধন্যবাদ হুমায়ূন আহমেদ আমাদের এরকম শ্রেষ্ঠ বই উপহার দেয়ার জন্য ।
Was this review helpful to you?
or
'বাদশাহ নামদার' উপন্যাসের কাহিনী মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ূন মীর্জাকে নিয়ে রচিত। কাহিনী শুরু হয় ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে। সম্রাট হুমায়ুন।ইতিহাসের এক বিচিত্র চরিত্র।স্ম্রাট হুমায়ূন রাজকর্মে অত মনোযোগী ছিলেন না। তিনি ডুবে থাকতেন নিজের জগতে।।।নিজের পিতার উপহার পাওার পরও বিদ্রোহ করা। নিজের এক তৃতীয়াংশ বয়সী মেয়ে কে বিয়ে করা ।খামখেয়ালি পনা।বিচিত্র বিষয়ে আগ্রহ। ভাইদের বিদ্রোহ, মানুষকে বিশ্বাস করা এই সবি সম্রাট হুমাউন কে অন্যান্য দের থেকে আলাদা করে তুলেছে।কবি, চিত্রকর, শিল্পের সমঝদার, মূলত একজন মানুষের কাহিনিই বিধৃত বাদশাহ নামদার-এ। কিন্তু লেখায় লেখকের নিজের প্রছন্ন ছায়া পড়েছে তার রচিত সম্রাট হুমায়ুন এর চরিত্রের উপর। অদ্ভুত সব বস্তু এর বর্ণনা রয়েছে।যেমন হিন্দুস্তানের জাদুকর।মোঘল স্ম্রাট দের খাবার এর তালিকা, দোতলা তাবু ইত্যাদি। ছোট মেয়ে আকিকা বেগমের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। তার প্রতি সম্রাটের প্রগাড় ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার অনুগত্য অ ভালোবাসা এর নিদ্রশ্ন ইতিহাসে আর দ্বিতীয় নেই। এছাড়া আমরা পাবো বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্করকে, সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জাকে, হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি জওহরকে।এই জওহর আফতাবচি এই স্ম্রাট হুমাউন এর জীবন কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন। শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন। বৈরাম খাঁ জিনি আকবর কে গড়ে তুলেছিলেন আকবর দা গ্রেট করে। বইটি শেষও হয়েছে সম্রাটের ছোট পুত্র আকবরকে দিয়ে, যে ১৪ বছর বয়সেই দিল্লীর মসনদে বসেছিল। সম্রাট হুমায়ুন এর রচিত শের... অশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয় । যেমন বন্ধু নয় বায়ু, মেঘমালার । বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না । দু'জনেই থাকবে দু'জনের কাছে অদৃশ্য । দৃশ্যমান থাকবে তাঁদের ভালোবাসা ।