User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
গবেষক ও ঐতিহাসিক বাবার সুযোগ্য উত্তরসূরি আহমেদ আমিন চৌধুরী একের পর ভিন্নধারার কাজ করে চমকে দিচ্ছেন বোদ্ধা পাঠকদের। তাঁর এ কর্মপ্রয়াসে বুদ্ধিজীবীর শ্রেণির প্রতিনিধিরাও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হচ্ছেন। যে পথের পথিক হয়েছেন জনাব আমিন, যে পথ উন্মুক্ত করতে চাচ্ছেন সকলের জন্য, সে পথে সচরাচর অন্যরা যায় না। পথ নির্মাণ তো আরো পরের কথা। নতুন-পথ-বিমুখতার কারণও খুব সহজেই অনুমেয়Ñএ ধরনের ‘নিরস’ কাজে অর্থপ্রাপ্তির যোগ যেমন নেই, নেই সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের মওকাও। আমাদের অনেক লেখকই ‘পরিশ্রমবিমুখ’। বাজার মাত করা যেনতেন কিছু একটা লিখে ছেড়ে দিয়েই দায়িত্ব সারতে চান তারা। বলাবাহুল্য, এমন লেখকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রচলিত ধারার সহস্র লেখকের ভিড়ে একজন অনুসন্ধিৎসু গবেষক ও আঞ্চলিক ভাষাপ্রেমী আহমেদ আমিন চৌধুরীর আবির্ভাব উৎসাহব্যঞ্জক ও আশা জাগানিয়া। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র মূলত ভাষা, আঞ্চলিক ভাষা। এ কর্মধারাবাহিকতার অন্যতম নিদর্শন চট্টগ্রামী ভাষার অভিধান ও লোকাচার। ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি সংস্কৃতির পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ আর অসীম ভালোবাসায় সঙ্কীর্ণ-নির্জন-বন্ধুর পথের পথিক হয়ে এগিয়ে চলা এ লেখকের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা, আগ্রহ ও গবেষণা। আঞ্চলিক ভাষার আকর গ্রন্থ হিসেবে এ পর্যন্ত পাঠকদের উপহার দিয়েছেন- চট্টগ্রামী বাংলার শব্দসম্ভার, সিলেটি আঞ্চলিক ভাষার অভিধান ও সর্বশেষ আলোচ্য এ বই। অবশ্য বইটি চট্টগ্রামী ভাষার শব্দসম্ভার বইটির পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ। প্রকাশক পাল্টেছে, ধরনও। দীর্ঘ সময় পর একই কাজ নতুনভাবে করলে তাতে প্রচুর পরিবর্তন আসে। কারণ বহমান সময় মানুষকে ঋদ্ধ করে। সেই প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার ছাপ পড়ে কাজের ক্ষেত্রে। প্রাজ্ঞতার সর্বশেষ নির্যাসটুকু নিয়ে এ পরিশ্রমী লেখক প্রয়াসী হয়েছে তাঁর সৃষ্টিকে নিখুঁত করে তোলার। সেই নতুনতর সৃষ্টি, প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে সুশৃঙ্খলভাবে উঠে এসেছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ও লোকাচার। যেমন- শব্দের প্রমিত রূপ, প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা, গ্রাম্য ছড়া, সংস্কার, শতকিয়া পঠন পদ্ধতি ইত্যাদি। বর্ণাক্রমিকভাবে (অ থেকে হ) তুলে ধরেছেন আঞ্চলিক শব্দ। শব্দের অর্থ প্রমিত বাংলায় তুলে দিয়েছেন, অনেকটা শব্দার্থ আকারে। শব্দার্থের পাশাপাশি প্রবাদ-প্রবচনও বর্ণানুক্রমিকভাবে স্থান পেয়েছে। একটা প্রবচন এমন- অতি চতুর্র ভাত নাই অতি সোন্দরীর নেক নাই। এর অর্থ : খুব চালাক লোকের ভাত নাই আবার খুব সুন্দরী মেয়ের স্বামী খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য। আরেকটা প্রবাদ- আগে গেইলে বাঘে খায় পিছে গেইলে সোনার দলা পায়। ভাব সম্প্রসারণ করলে অর্থটা দাঁড়ায় : কোনো কাজেই তাড়াহুড়া করা ঠিক না। ধীরে-সুস্থে করা কাজের জন্য সবসময় শুভ ফল অপেক্ষা করে। এসব প্রবাদ-প্রবচনে যেমন অনুপম রস ঝরে পড়ে, ঠিক তেমনি যাপিতজীবনের নানা সমস্যা-অসঙ্গতিও উঠে আসে সহজাতভাবে। এগুলো ভাষার অমূল্য সম্পদ। এ লোকসাহিত্য আপামর জনসাধারণের দৃষ্টির আড়ালে, অবহেলায় পড়ে থাকে। এগুলো খ্যাতিমান কোনো লেখকের রচনা হলে, শুদ্ধ বাংলায় প্রকাশ করা গেলে হয়তো মুখে মুখে ফিরতো। স্বদেশ-বিদেশ সীমারেখা ডিঙিয়ে উঁকি দিতো নতুন দিগন্তে। কিন্তু যেহেতু এ সাহিত্যের কোনো লিখিত ও সহজবোধ্য রূপ নেই, নেই লিখিত রূপ দিয়ে গণমানুষের সামনে আনার প্রচেষ্টাও; তাই পড়ে আছে দৃষ্টির আড়ালে। ছাই-ভস্ম তুল্যে। আহমেদ আমিন চৌধুরীর মতো আরো গবেষক, আঞ্চলিক ভাষাপ্রেমিকরা এগিয়ে এলে এদেশের লোকসাহিত্যের রতœভা-ার যথার্থ অর্থে বিকশিত হতে পারতো। বাংলাদেশও স্বদেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে নিজেদের অনন্য সম্পদ উপস্থাপনের সুযোগ পেতো। সব অঞ্চলেই কমবেশি মানুষের মুখে মুখে রচিত হয় ছড়া। পর্যায়ক্রমে, সময়ের বিবর্তনে সে ছড়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভাষাভাষীদের মধ্যে। এ বইয়ে ঠাঁই পেয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টি আঞ্চলিক ভাষার ছড়া। একটি এমন- মাইয়েলা রে মাইয়েলা আয় বেয়াগুন করি কেলা উগ্যা মাইয়া বই খারজে কি রঙের খেলা। উঠ ভইন উঠ চৌগর পানি মোচ উগ্যা সালাম ঘর ঘোঁড়া দিয়ে বস মনখুলি এইবার মনর কথা কঅস। ছড়াটির শুদ্ধরূপ- মেয়েরা রে মেয়েরা আয় সবাই করি খেলা একটা মেয়ে বসে খেলছে কি রঙ্গের খেলা। ওঠ বোন ওঠ চোখের পানি মোছ একটা সালাম কর ঘুরে ফিরে বস মন খুলে এবার মনের কথা বল। সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ ধাঁধা। ছোটবেলায় ধাঁধা নিয়ে মাথা খাটায়নি এমন লোক নেই বললেই চলে। চট্টগ্রাম অঞ্চল ধাঁধার দিক দিয়েও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ধাঁধার উদাহরণ- অক্ট দন্ত ভিতরে খ-, উরে নাই ভিতরে চাবী প্রমিত রূপ- আট দাঁত ভিতরে খাদ উপরে নাই ভিতরে চাবি। এ ধাঁধার অর্থ ছাতা। ছাতার আটটা শিক-অংশ থাকে এবং খোলার চাবিটা ভিতরেই থাকে। আরেকটি ধাঁধা- আইসতে ন আন, আইয়ারে পাইয়ু আবার হারাইলে জনমর লাই হারামু। প্রমিত রূপ- আসতে (জন্মের সময়) আনিনি, এসে পাবো হারালে জšে§র মতো হারাবো। ধাঁধাটির অর্থ : দাঁত। মানুষ যখন জš§গ্রহণ করে দাঁত ছাড়াই করে। ধীরে ধীরে তার দাঁত ওঠে। কিন্তু এই দাঁত যখন পড়ে যায়, তখন আর পাওয়া যায় না। প্রবচন রয়েছে ২০০০টি। প্রবাদ-প্রবচন সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নাই। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দর্শনঋদ্ধ নির্যাস প্রকাশ পায় প্রবচনে। মানুষের জীবনযাপনের যে অভিজ্ঞতা, অন্তর্দৃষ্টি তা-ই মূর্ত হয় প্রবচনে। প্রবচন এক অর্থে দিকনির্দেশকও। একটা প্রবচন পড়া যাক- অতি ভক্তি যার চোর্র লৈক্কন তার। অর্থাৎ অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। আরেকটি প্রবচন- আশ্বিনত রাঁধি কাতিত খায় যে বর মাগে, এই বর পায়। অর্থ : আশ্বিন মাসে রেধে কার্তিক মাসে খায়। তখন যা কিছু চায় সব পায়। বইটির প্রাঞ্জল ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক মনসুর মুসা, পাঠপ্রতিক্রিয়া স্থান পেয়েছে ড. তসিকুল ইসলাম, বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম-এর; আহমেদ আমিন চৌধুরীর দুইবারের দুইটি ভূমিকা সন্নিবেশকরণে এ বইয়ের গুরুত্ব ও চরিত্র বুঝতে সহায়তা করবে। চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতি, নানাভাবে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন লেখক। তাঁর পরিমিতি বোধ ও নির্বাচনে সতর্কতা বইটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যম-িত। উত্তরপুরুষের কাছে বর্তমানের সৎ লেখকের যে দায়, তা পূরণে শতভাগ আন্তরিক এ লেখক। তাঁর এই বই শুধু চট্টগ্রামবাসী, চট্টগ্রামী ভাষাভাষীরাই তো সব অঞ্চলের সব শ্রেণির মানুষের পাঠ্য। গবেষক ও ভাষাপ্রেমিকদের জন্যও বইটি দরকারি। চট্টগ্রামী ভাষার অভিধান ও লোকাচার আহমেদ আমিন চৌধুরী প্রকাশক : গতিধারা প্রচ্ছদ : সিকদার আবুল বাশার প্রকাশকাল : আগস্ট ২০০৯ পৃষ্ঠা : ৩৬৮, দাম : ৩৫০ টাকা