User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শিশ্ন সভ্যতার চিহ্ন আজ সর্বত্র প্রকট পন্যে,কসভোর গণহত্যার ধর্ষকামী সৈন্যের কস্টিউমে বিবিসি'র মনোমুগ্ধকর গাড়ির মডেল হেডলাইটে ঝলসে ওঠা য়ুরোপীয় নারীর নিতম্বে। টুথপেস্টের আঙ্গিকে জঙ্গল সভ্যতার ভোর,সেও শিশ্নের স্পার্ম উদগীরণ গতরাত যুবতীর সাবান ধোয়া বিজ্ঞাপনে দেখেছি শিশ্ন ক্যামেরায় তোলা জল সর্পিনী স্নান শত শিশ্নে ঠাসা বেস্ট সেলার্সের পাতা তথ্য প্রবাহের ভেতর শিশ্নের গোপন আস্ফালন। এদিকে,ব্যাপ্ত আকাশ জুড়ে-রাত্রির নক্ষত্র ফোটা আমাদের ভূখন্ড গুলি ধর্ষন শয্যা সে সকল স্থান থেকে গোঙানির শব্দ ওঠে ভূমিজ মানুষের এসে দিগন্তে সূর্য ডোবার আগে প্রাচীন যুদ্ধের ঘন্টাধ্বনি, ঘষে মেজে নেই পথে চলতে হবে অন্ধকারের ভেতর ( শিশ্নসভ্যতা, সেলিম আল দীন) জাবিতে পড়া ছোটভাই আকাশ না বললে হয়তো এই বইটা এবং এই ইতিহাস সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। ৯৮ এ জাবির এক ছাত্রলীগ নেতা ক্যাম্পাসে ১০০ ধর্ষণ করে কেক কাটা,মিষ্টি বিতরণসহ নানাভাবে উর্যাপন করেছিলো। সে ছিলো তৎকালীন জাবির ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন মানিক। তার নামই হয়ে গিয়েছিলো সেঞ্চুরী মানিক। এই ধর্ষণগুলোর প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের আগস্ট - সেপ্টেম্বর মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত ধর্ষণবিরােধী আন্দোলন ছিল দেশে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে সংগঠিত এবং জোরালাে প্রতিবাদ । ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে সাধারণ ছাত্র ঐক্যের স্লোগান প্রতিধ্বনিত হয়েছিল সারাদেশে । সমাজের সচেতন মানুষ , সুশীল সমাজ , প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে সাধারণ ছাত্রঐক্যের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছিল ধর্ষকদের ন্যূনতম হলেও শাস্তি দিতে । ২ ই আগস্ট প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলাের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিছিল নিয়ে মুখােমুখি দাড়াল ভয়ংকর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ধর্ষকদের । সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠি , কণ্ঠে প্রতিবাদী স্লোগান , বুকে সাহস । সেই মিছিল ঢুকে পড়ল ধর্ষকদের দখলে রাখা তিনটি ছাত্র হলে । মিছিলের তীব্র উত্তাপে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ফেলে ধর্ষকরা পালিয়ে গেল । ক্যাম্পাস ধর্ষর্কমুক্ত হল । সেই ঐতিহাসিক ধর্ষণবিরােধী আন্দোলনের সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়েই ‘ গনি আদমের ক্যাম্পাস'। আমরা গল্পের শুরুতে দেখি হোস্টেলের প্রথম দিন-ই গনি আদম হালকা পাতলা চেহারার এক ছাত্রদল নেতার হাতে থাপ্পড় খায়। ইনিই সেই কুখ্যাত হিটলার ভাই যিনি গল্পের পুরোটা জুড়ে আছে। এরপর ক্লাসেও তার নাকাল হবার ঘটনায় মনে হতেই পারে গনি আদম একজন সহজ-সরল হাবাগোবা মানুষ। কিন্তু কিছুটা পরেই গল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তরুণ আবিষ্কার গনি আদম মোটেই হাবাগোবা মানুষ নয়! আপাত দৃষ্টিতে আনস্মার্ট গনি আদম ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হতে থাকে,সবাই তাকে দলে টানতে চায় । মজার ব্যাপার গনি আদম কোনো দলের হয়ে কাজ করে না। ইতিমধ্যে দেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে, তার জেরে ক্যাম্পাসেও ঘটে উলটপালট। কিন্তু গনি আদম তার জায়গায় অনড় । ছাত্রলীগ,ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন সবাই তাকে সমঝে চলে। হিটলার ফিরে আসে ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে । ইতিমধ্যে গনি আদম শিবিরের দুই ক্যাডারকে একাই খালি হাতে পিটিয়ে 'গুরু আদম ' নামে পরিচিতি পায় ক্যাম্পাসে। এছাড়া আমিনবাজার ট্রাক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত বিক্ষোভে হুট করে নেতা বনে যায় গনি আদম। এই নেতার কোনো দল নেই, সাধারণ ছাত্র -ছাত্রীই তার কর্মী। এসবের মধ্যেই লেখক গল্পের ছলে তুলে ধরেন জাবির ভিসি, প্রোভিসি , প্রক্টর, শিক্ষক নেতা, ছাত্রনেতাদের ভেতরের কংকালসার নৈতিকতা। উঠে আসতে থাকে শিক্ষক - ছাত্রনেতাদের গলায় গলায় ভাব আর টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার দখল রাজনীতির কদর্য বিষয়গুলি। ভেসে উঠে নির্মম সব তথ্য যা হবার কথা ছিলো না কখনো। ক্ষমতার লড়াইয়ে মাঠ দখল রাখার পাল্টাপাল্টি রাজনীতির মারপ্যাচ প্রতি পদে অবাক করে পাঠককে। আর আড়ালে আবডালে ভেসে বেড়াতে থাকে ধর্ষণের খবর। একদিন ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে শিক্ষার্থীর দল। বলা বাহুল্য এর কেন্দ্রে থাকে গনি আদম। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে সূচনা করে আন্দোলনের। শুরু হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হবার গল্প, এতে যোগ দেয় ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীরাও। একসময় সিন্ডিকেট ও জাবি প্রশাসন বাধ্য হয় দোষীদের নামমাত্র শাস্তি দিতে। কিন্তু ধর্ষকেরা কি ভয় পায়? বন্ধ হয় ধর্ষণ? আড়ালে আবডালে কতো মধ্যবিত্ত পরিবারে ধর্ষিতার দীর্ঘশ্বাস হাওয়ায় মিশে যায়। আমাদের সমাজে, মগজে সর্বত্র ধর্ষণ আর ধর্ষিতা কারণ এই সভ্যতা শিশ্নসভ্যতা। লেখক রাশেদ মেহেদী এই ধর্ষকবিরোধী আন্দোলনের একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ছিলেন। তিনি এমনভাবে গনি আদম ও এই আন্দোলনটিকে বর্ণনা করেছেন তাতে এই বইটি ডকুমেন্টারি হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এছাড়া গল্পের ফাঁকে ছবিগুলোর ব্যবহার এই বইটির মাহাত্ম্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলন সম্পর্কে জানার জন্য এই বইটি হয়তো হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য দলিল। লেখক একের পর এক ধারাবাহিকতায় ৯৫ থেকে ৯৯ এর ক্যাম্পাস রাজনীতির ধারা বর্ণনা দিয়ে গেছেন ' গনি আদমের ক্যাম্পাস' বইটিতে। এই সুবিশাল আন্দোলনের অন্যতম এক দলিল বলা যায় এই বইটিকে। লেখক শুধু নামগুলো পাল্টে দিয়েছেন। ওপেন সিক্রেট সেঞ্চুরি মানিকের নাম যেমন গল্পে হয়েছে সেঞ্চুরি হিটলার তেমনি গনি আদম চরিত্রটির আসল নাম আবু জাঈদ আজীজ যা লেখক ভূমিকাতেই বলে নিয়েছেন। তেমনি ঘটনাপ্রবাহে বোঝা যায় গল্পের সাংবাদিক তরুণ ই আমাদের 'গনি আদমের ক্যাম্পাস' বইটির লেখক রাশেদ মেহেদী। কাল্পনিক নামের পাশাপাশি এসেছে অনেক চরিত্র স্বনামেও রয়েছে এই উপন্যাসে। কবি সুনীল সাইফুল্লাহও রয়েছেন চেতনায়। এছাড়া সেলিম আল দীন, আনু মোহাম্মদ, শামসুর রাহমান সহ অনেক প্রখ্যাত শিক্ষক, শিক্ষাবিদ রয়েছেন স্বনামে। লেখক ক্যাম্পাস ও সিন্ডিকেট রাজনীতিতে জড়িত শিক্ষকদের নামগুলো ছদ্মনামে রেখেছেন যেটি বেশ চোখে লাগে। আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়েছেন যে শিক্ষকেরা তাদের নাম যেহেতু স্বনামে এসেছে,সেহেতু ধর্ষক সমর্থক শিক্ষকদের নামগুলোও স্বনামে আসা উচিত বলে মনে পড়ি। কারণ, এরা সমাজের ভাইরাস। এই আন্দোলনের ফলও বলে অভিযুক্ত শিক্ষকেরা কোনো শাস্তির সম্মুখীন হোন নি। পরে ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮ ও ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন হয়। পাঠক সমাবেশের বই মানেই আমরা বুঝি আকাশছোঁয়া দাম কিন্তু বাংলাদেশে বই জগতে বেস্ট কোয়ালিটি। তবু ১৮০ পেজের একটি বইয়ের মলাটমূল্য ৫৫০/= অনেকটাই বেশি হয়ে যায়। তবু এই বইটার ক্ষেত্রে তা গায়ে লাগতো না। কিন্তু, বইটিতে অসংখ্য বানান ভুল, প্যারাগ্রাফগুলোর উল্টাপাল্টা 69, সম্পাদনার অভাবটি চোখে লাগে বেশ। লেখনীতে আরেকটু সময় দিলে খুবই ভালো হতো। এই বইটি বেশ আন্ডাররেটেড বই যা হবার কথা ছিলো না। অন্তত উপন্যাস হিসাবে না পড়ে আন্দোলনটি জানার জন্য হলেও এই বইটি পড়া উচিত। এই আন্দোলন সারাদেশের অনুপ্রেরণা, সকল পাবলিক ক্যাম্পাসের অনুপ্রেরণা। এই আন্দোলন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন বলে পরিচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নির্যাতন কখনোই কমে নি বরং দিন দিন বেড়ে চলছে। ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েরাও রক্ষা পায় না এর থেকে। প্রতিদিন পত্রিকা উল্টালে চোখে ভেসে উঠে ধর্ষণের খবর। ৯৮ এর আন্দোলনে জাবি অভিযুক্তদের নামমাত্র শাস্তির ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয় নি, তাদের নামে মামলা হয় নি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রবল বাধার মুখে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ধর্ষকবাহিনীকে অস্ত্রপাতি ফেলেই ক্যাম্পাস ছেড়ে পালাতে হয়েছিলো তারপর অনেক দিন জাবিতে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকে। তারপরো ৯৮ এর জাবির এই আন্দোলন আমাদের নতুন করে আশা জাগায়। জাবির এই আন্দোলন এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলো। ধর্ষিতার পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় সেখানে যেখানে ধর্ষিতাকে নয় ধর্ষককেই নিতে হবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার দায়। এই রীতিটাই আইন হতে পারে আমাদের দেশে। পতন হউক শিশ্নসভ্যতার। || নামঃ গনি আদমের ক্যাম্পাস || (১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস) লেখকঃ রাশেদ মেহেদী প্রকাশনীঃ পাঠক সমাবেশ প্রকাশকালঃ ২০১২ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮১ মলাটমূল্যঃ ৫৫০/= * আন্দোলন চলাকালীন সেলিম আল দীন 'শিশ্নসভ্যতা' নামে এই কবিতা লিখেন যেটির অংশ বিশেষ লেখক এইবইয়ে তুলে দিয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
জানেন কী? উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৮ সালে দীর্ঘ ৪২ দিনব্যাপী আন্দোলনের ও পূর্বাপর পটভূমিতে রচিত রাশেদ মেহেদীর এই উপন্যাস 'গনি আদমের ক্যাম্পাস'। ধর্ষণের প্রসঙ্গ আসলেই একটি নাম চলে আসে। নামটি হলো 'সেঞ্চুরি মানিক' ওরফে জসীমউদ্দিন মানিক, এই মহাশয় আওয়ামী লীগের প্রথম আমলে (১৯৯৬-২০০১) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে হঠাৎ হলে ( তার হল ছিল আফম কামালউদ্দিন হল) মিষ্টি বিতরণ করা হলো। জানা গেল, 'ভাই' সেঞ্চুরি করেছেন। মানিক ভাই তো ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলেন না। তাহলে সেঞ্চুরি কীভাবে করলেন? তখন মানিক ভাই জানালেন, ' শতশত নারী আমাকে আই লাভ ইউ বলেছে। ' কিন্তু এর সত্যতা নিয়ে ক্যাম্পাসে অনেকেই সন্দিহান ছিল। উপরন্তু একাধিক যৌন নিপীড়নের খবর তখন ক্যাম্পাসের আকাশে বাতাসে উঠে বেড়াচ্ছে। অতএব, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসীমউদ্দিন মানিক কীসে 'সেঞ্চুরি' করেছে তা অনেকেই আন্দাজ করে ফেলল। ছাত্রঐক্যের ব্যানারে গড়ে উঠলো দুর্বার আন্দোলন। মূলত সাধারণ ছাত্রঐক্যের প্লাটফর্মে আন্দোলন হলেও নারী শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব সাড়া এতে দেখা যায়। একটা ঘটনা বললেই বুঝবেন। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান করছে হাজারের বেশি নারী শিক্ষার্থী। ভেতরে চলছে সিন্ডিকেট মিটিং। এই মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত হবে শাস্তির ব্যাপারে। ওদিকে সেঞ্চুরি মানিক এবং ছাত্রলীগ পজিশন নিয়ে আছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে৷ তৎকালীন ভিসি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত না জানিয়ে দুপুরবেলা বাইরে চলে যেতে চান৷ উপস্থিত নারী শিক্ষার্থীরা তাকে অনুরোধ করেন সিন্ডিকেটের মিটিং শেষ করে, সিদ্ধান্ত হওয়ার পর যাওয়ার জন্য। কিন্তু ভিসি শিক্ষার্থীদের গায়ের ওপর দিয়েই হেঁটে চলে গিয়েছিলেন! যাহোক, এই উপন্যাস পড়তে গিয়ে বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে পাঠক সমাবেশ। এটি দেশের নামি প্রকাশনীর একটি৷ কিন্তু ব্যাপক বানান ভুল, বাক্য এলোমেলো হয়ে যাওয়া, একজনের নামের বদলে অন্যজনের নাম প্রভৃতির মতো সম্পাদনায় অদক্ষতা দেখে খুবই বিরক্ত লেগেছে। রাশেদ মেহেদী'র লেখা নিয়ে বলি। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি এবং ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করার সুবাদে মূল ঘটনার অনেককিছুই তিনি জানতেন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যক্ষদর্শীও বটে৷ তাই সবকিছু দেখেছেন, জেনেছেন বলেই তার লেখার কনটেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার কথা। অথচ গোলটা তিনি এখানেই বাঁধিয়েছেন। ঘটনার শুরু জনৈক প্রথম বর্ষের ছাত্র গনি আদমের ক্যাম্পাসে আগমনের মধ্য দিয়ে৷ সাবেক ছাত্রমৈত্রী করা সাহসী ছেলে সে। এরপর ছাত্রদল ক্যাডার হিটলার ( সেঞ্চুরি মানিকের আদলে গড়া) কীভাবে ক্ষমতার পালাবদলে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হলো। কী তরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্ররাজনীতিকে কলুষিত করেছে তার আদ্যাপান্ত জানার সুযোগ আছে। গনি আদম ও তার বন্ধু তরুণের মাধ্যমে পুরো কাহিনি এগিয়েছে। গল্প বলার ক্ষমতায় একটি গড়পড়তা গল্পও বেশ জমে যায়। কিন্তু যিনি বলবার সহজাত ক্ষমতা নিয়ে জন্মাননি, তিনি সব উপাদান থাকবার পরেও পাঠককে আগ্রহী করে তুলতে পারেন না৷ রাশেদ মেহেদীও জমাতে পারেননি৷ বেশি পেঁচিয়ে ফেলেছেন৷ বিশেষত, উপন্যাসের চরিত্রায়নের দুর্বলতা যে কারো চোখে পড়বে।
Was this review helpful to you?
or
পাঠক সমাবেশের বই মানেই আমরা বুঝি আকাশছোঁয়া দাম কিন্তু বাংলাদেশে বই জগতে বেস্ট কোয়ালিটি। তবু ১৮০ পেজের একটি বইয়ের মলাটমূল্য ৫৫০/= অনেকটাই বেশি হয়ে যায়। তবু এই বইটার ক্ষেত্রে তা গায়ে লাগতো না। কিন্তু, বইটিতে অসংখ্য বানান ভুল, প্যারাগ্রাফগুলোর উল্টাপাল্টা ছয় নয়, সম্পাদনার অভাবটি চোখে লাগে বেশ। লেখনীতে আরেকটু সময় দিলে খুবই ভালো হতো।
Was this review helpful to you?
or
(১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লেখা। ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ধর্ষক-সন্ত্রাসীদের হটিয়ে দিয়ে দখলদারিত্বমুক্ত ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৮ সালের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের কারণেই তা সম্ভব হয়েছিল। আজও সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা এই দিনটিকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে পালন করে থাকে।) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রথম যে উপন্যাসটি লেখা হয় সেটি গাভীবৃত্তান্ত, আহমদ ছফার লেখা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আলোচিত আরেকটি উপন্যাস লেখেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। কিন্তু এই উপন্যাস দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে যতটা না বিস্তৃত করে দেখাতে পেরেছে, তার চেয়ে বেশি প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তার চরিত্র। মহব্বত আলীর একদিন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা এই উপন্যাসেও দেখান হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ধর্ষণ। দেখানো হয় ছাত্র-ছাত্রীদের এর বিরুদ্ধে আন্দোলন। কিন্তু তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহব্বত আলী । কিন্তু আমি রাশেদ মেহেদীর গনি আদমের ক্যাম্পাস পড়ে উপন্যাস হিসেবে এটি ব্যর্থ না সফল, শিল্পের জায়গা থেকে এটি ব্যর্থ না সফল তা না দেখে একজন সংবেদশীল ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে শেষ বর্ষ অবধি যে ধরনের বাধার সম্মুখিন হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাঠামোর যে পরিচয় ভেসে ওঠে তার কাছে তার বেশ জোরাল উপস্থাপনই পেয়েছি এখানে। এর একটি বড় কারণ বোধহয় আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং উপন্যাসের ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত। সে কারণেই এই উপন্যাসটি আমার ভেতরে বেশকিছু প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পেরেছে খুব দ্রুত। জাপানে একসময় ইতিহাস নিয়ে লেখা উপন্যাস বেশ জনপ্রিয় ছিল। অবশ্য সে সব উপন্যাসে অনেক ভালগার থাকতে হত। কিন্তু এই উপন্যাসও ইতিহাস নিয়ে লেখা, সে ইতিহাস আবার খুব দূরেরও নয় মানে এই ইতিহাসের বেশ কিছু অংশের সাক্ষী আমিও। ঠিক এই কারণেই ভিতরে ভিতরে প্রতিক্রিয়াটা একটু বেশিই। কিন্তু আমি এই লেখায় এইসব অজস্র প্রতিক্রিয়া আনতে চাই না, শুধু যে বিষয়গুলো একেবারে শুরু থেকেই বলার ইচ্ছা তৈরি করেছে তাই এখানে বলব। ১. I love power. But it is as an artist that I love it. I love it as a musician loves his violin, to draw out its sounds and chords and harmonies. -Napoleon Bonaparte ‘আমরা যে সংগঠন করি, সেই সংগঠন অন্তত একজন মননশীল মানুষ, মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। এখানে কেউ নেশাসক্ত হয় না, অস্ত্রেও প্রশিক্ষণ নেয় না, টেন্ডারবাজি করে না, জোর করে নিজের স্বার্থে কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেয় না। বরং নিজের ভিতরের শুভ শক্তিকে বুঝতে সাহায্য করে। --- --- গণি আদমের মনে হল, মৌমিতার খুব ভাল করে মুখস্ত করে রাখা আছে এসব কথা, সুযোগ বুঝে ছোটবেলায় মুখস্ত কবিতা বলার মত এক নিঃশ্বাসে ছেড়ে দেয়। এতণ মৌমিতা কি বলেছে তার সবটুকু কানে যায় নি তার। পৃষ্ঠা-১৯ আমার একটা কথা হচ্ছে, ছাত্র ইউনিয়ন সমাজতন্ত্রেও কোন সংগঠন নয়, উদার পুঁজিবাদী চিন্তার সংগঠন। পৃষ্ঠা -৩১ বাংলাদেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই বাম রাজনীতি এখনও রয়েছে। উপন্যাসের শুরুটা হয় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা সংবেদনশীল ছাত্রের প্রথম প্রথম কি কি ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় তা নিয়ে । বিশেষ করে রাজনৈতিক। এখানে দেখা যায় সে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের ছেলেদের কাছে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়। মৃদুভাবে এই দায়টা ছাত্র ইউনিয়ন বা ছাত্র ফ্রন্টও এড়াতে পারে না। কেননা একবার ছাত্র ইউনিয়ন তাকে সংগঠন করতে বলে, ঠিক ছাত্র ফ্রন্টও একই দাওয়াত দেয় অন্য সংগঠন কেন করা উচিত নয় তার আরেকটি যুক্তি দেখিয়ে। উপন্যাসে দেখা যায় এই সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছেলেটি বিরক্ত হয় আর তা অন্য একটি কারনেও যে সে আগে ছাত্র মৈত্রীর রাজনীতিতে জড়িত ছিল এবং তাই নয় তা ছিল একেবারে অস্ত্রের রাজনীতি। এখন আর এই চরিত্রটির অস্ত্রের রাজনীতিতে কোনও আস্থা নেই। উপন্যাসে এই রাজনৈতিক সমস্যাগুলো একেবারে যেখানে পপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা না হওয়াতে পরের অধ্যায়গুলোও বেশ সাবলীলভাবে পড়া গেল। ২. Marriage is for women the commonest mode of livelihood, and the total amount of undesired sex endured by women is probably greater in marriage than in prostitution. - Bertrand Russell পলি, তুমি কিন্তু এক্সট্রা ক্লাসের একটা আইডিয়া দিয়ে রেখ। বোছই তো, হুট করে একটা মেয়ে আমার সামনে বিব্রত হবে, এটা আমার ভাল লাগবে না।’ পলি কোন জবাব দেয় না। একটা ঠোঁটবাঁকা অর্থপূর্ণ হাসি দিয়ে চলে যায়। পৃষ্ঠা -৭০ সাবিহাকে চেয়ার থেকে টেনে তোলেন। এক ঝটকায় বুকের সঙ্গে গেঁথে নেন। কিছুক্ষণ পর সাবিহা টের পায়, তার শরীরের শক্তি ক্রমশ কমে আসছে। পুরো শরীর অবশের মত মনে হচ্ছে। কিছুণ পর সাবিহা নিজেকে একবারে ওজনহীন আবিষ্কার করে। মনে হয় শূন্যে ভাসছে। আরও কিছুক্ষণ পর নিজের অস্তিত্ব টের পায় টেবিলের ওপর আধশোয়া অবস্থায়। তার শরীরের ওপর অতিকায় ভুরিওয়ালা মি. হেনুর উদোম শরীর ক্রমাগত ওঠানামা করছে। পৃষ্ঠা -৭২ উপন্যাসের একটি অধ্যায়ে আমরা এমন একটি শিক্ষক চরিত্রের সাক্ষাৎ পাই, যে চরিত্রটিকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কথা হয়। ঠিক উপন্যাসে যখন এই চরিত্রটি হাজির হয় একেবারে যৌনকাজের বর্ণনা সমেত তখন আমরা নারীর সম্ভ্রমহানি বা দুঃখবোধ এইসব বিষয়ের চাইতে পুলকিত হওয়ার বিষয়গুলোই বেশি টের পাই যেমন সিনেমাগুলোতে ধর্ষণদৃশ্য থাকতে হয় কারণ এতে দর্শক যতটা না দুঃখ পায়, তার চাইতে বেশি পুলক অনুভব করে। ধর্ষণের মতো বিষয় নিয়ে যে উপন্যাস সেইই উপন্যাসে এই অধ্যায়ের বর্ণনা উপন্যাসিকের একটা বড় দুর্বলতা বলেই চিহ্নিত করতে পারি। আবার একই সাথে সাহসও বলতে পারি এই কারণে যে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ ‘পবিত্র’ ‘শিক্ষক’ ‘বাবার মতো’ এইসব ধারণাও এই অধ্যায় পাল্টে দেবার জন্য যথেষ্ট। শেষের অধ্যায়গুলোতে দেখা যায় একজন ছাত্রকে সাজা দিতে প্রশাসন বাধ্য হলেও অনেক ছাত্র তো বটেই অভিযুক্ত শিক্ষকদেরও শাস্তি হয় না, কেবল তারা শিক্ষক, সম্মানিত এই বিশেষ সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাবলয়ের কারণে। ৩. I claim that rape exists any time sexual intercourse occurs when it has not been initiated by the woman, out of her own genuine affection and desire. -Robin Morgan ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের অর্জন এবং চেতনাকে আরও দৃঢ় করতে সাধারণ ছাত্র ঐক্যের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলল অশুচি নামের একটি সংগঠন। --- --- ‘ছাত্রী আন্দোলন’ শব্দটা নিয়ে বেশ কিছুদিন বিতর্ক চলল। সাধারণ ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে যে আন্দোলন তাকে শুধু ছাত্রী আন্দোলন বলা হবে কেন, তা নিয়ে প্রান্তিকের আড্ডায় বেশ আলোচনা জমল। কবি মামুন খোরশেদ যুক্তি দিলেন, এই নামকরণ আসলে আন্দোলনের নারীবাদী সংস্করণ। পৃষ্ঠা -১৬৫ বাংলাদেশের জাতীয় বা স্থানিক আন্দোলনের মতই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনগুলোও যে এনজিও বা শিক্ষকেরা যে ক্ষমতা কাঠামো দিয়ে ধর্ষণকে হালাল করে, সেই একই মতা কাঠামো আন্দোলনকারীদের ওপর নির্মাণের চেষ্টা চলে তাও এড়িয়ে যায় নি এই উপন্যাসে। বরং অনেক সাহসের সাথেই এসেছে নৃবিজ্ঞান বিভাগ ও তাদের বানানো সংঠনের নাম। ৪. A new sense of shared international responsibility is unmistakable in the voices of the United Nations and its agencies, and in the civil society of thousands of supra-national NGOs. - John Charles Polanyi তবে নির্বিকার গনি আদম। খুব ঠান্ডা গলায় সে বলল, প্রকাশনার নামকরণ যাই হোক, এর ভেতরে আছে সেগুলো তো সাধারণ ছাত্র ঐক্যের ইতিহাসই প্রমাণ করেছে। পৃষ্ঠা -১৬৫ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গনি আদম, যাকে শুরু থেকে শেষ অবধি মেধাবী-আর্দশবাদী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, তা একেবারেই প্রশ্নের মুখে পড়ে যখন এইসব আন্দোলনের এনজিওকরণের বিরুদ্ধে সে কোন কথা না বলে মেনে নেবার রুচি প্রকাশ করে। ৫. পণ্য সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে ব্যক্তিকেই নিজের নিজের জায়গা থেকে। এই স্পন্দন প্রথমে ব্যক্তির মধ্যে জাগবে পরে ব্যক্তি এটা সমষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে দেবে। ইনডিভিজুয়ালের প্রতিবাদটা ইউনিফায়েড প্রতিবাদে পরিণত হবে।- সেলিম আল দীন কবিতা শেষ হওয়ার পর আরও উচ্চকিত হয় সেলিম আল দীনের কণ্ঠ। ‘ আমার ভেতরে এখন অনেক আগুন। তোরা কেউ টের পাস না। এই ক্যাম্পাসকে আমি দেখতে চেয়েছিলাম বাংলার সাংস্কৃতিক রাজধানী রূপে, মুক্তমঞ্চকে করতে চেয়েছিলাম বাংলা নাটকের তীর্থ বেদি। কিছুই হল না। তার বদলে এ ক্যাম্পাস এখন ধর্ষকদের নিরাপদ বিচরণভূমি। এও আমাকে দেখে যেতে হল।’ সেলিম আল দীন নামক একটি বিশেষ ইতিহাসের চরিত্র স্থান পায় এই উপন্যাসে। কিছু জায়গায় তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, কল্পনা-স্বপ্ন এসব আসলেও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের যেসব জায়গাগুলো এখানে আনা হয়েছে, তার কোথাও সেলিম আল দীনের ভূমিকা দেখা যায় না। ইতিহাস নির্ভর এই উপন্যাসে এই বিশেষ ইতিহাসের চরিত্রটি স্থান পেলেও তাকে কেবল এখানে স্বপ্ন দেখতেই দেখা যায়, বাস্তবায়নে নয়। যার ফলে পাঠকের কাছে এই আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এবং প্রশ্ন ওঠাটাও জরুরি। হয়তো বা লেখক তাই চেয়েছিলেন। ৬. Both burqas and sexualized ads are ugly. Taslima Nasrin ক্যাম্পাসে নতুন এক পরিবেশ। পুরোদমে চলছে ক্লাস,পরীক্ষা। মুক্তমঞ্চে নিয়মিতভাবে চলছে নাটক, গানের আসর, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। শত শত প্রেমিক জুটি দেখা যায় খেলার মাঠে, লাইব্রেরির সামনে, লেকের পাড়ে। পৃষ্ঠা -১৮০ উপন্যাসের শেষের দিকের কিছু বর্ণনায় আমি বিরক্ত হই, যেখানে দেখানো হচ্ছিল আন্দোলন সফল। এখন ক্যাম্পাসে পড়াশোনা যেমন হচ্ছে তেমনি শত শত প্রেমিক জুটি দেখা যায় খেলার মাঠে, লাইব্রেরির সামনে, লেকের পাড়ে। মনে হচ্ছিল শত শত প্রেমিক জুটি যেন স্বাভাবিকভাবে প্রেম করতে পারে, তার জন্য জান প্রাণ দিয়ে সবাই এই লড়াই-সংগ্রাম করেছে। বারবার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছিল শত শত প্রেমিক জুটির প্রেম করার সাথে সংস্কৃতিগত উন্নয়নের কি সম্পর্ক। ৭. I am too intelligent, too demanding, and too resourceful for anyone to be able to take charge of me entirely. No one knows me or loves me completely. I have only myself. - Simone de Beauvoir ঠিক এই সময়ে একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠেই খবর পায় গনি আদম মওলানা ভাসানী হলের কোনায় এক নারীর গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে। ---এসব লাশ দেখার পর গনি আদমের দৃষ্টিভ্রম হয়। ক্যাম্পাসে কোথাও দৃষ্টি একটু স্থির হলেই দেখে মাটি ফুঁড়ে বের হচ্ছে অসংখ্য নারীর মুণ্ডুবিহীন লাশ। - পৃষ্ঠা -১৮০ উপন্যাসের একেবারে শেষের দিকে এসে আমরা এমন এক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াই যে প্রশ্নটির কারণেই আমার উপন্যাসটিকে সফল হয়েছে বলতে ইচ্ছে করে। সত্যি একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একজন ছাত্রী লাঞ্চনা হতে দেব না বলে যে লড়াইটা করি, সেই ক্যাম্পাসেই একজন গার্মেন্ট কর্মীর লাঞ্চনা আমরা কত সহজেই পাশ কাটিয়ে যাই বা আমাদের এতে কোনও দাগও কাটে না। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গনি আদম রাতে তার সাথেই হাঁটতে দেখেন এইসব গার্মেন্ট কর্মী বা গ্রামের অজানা কোনও নারীর মুণ্ডুবিহীন লাশ। উপন্যাসে এই লাশ শুধু একজন গনি আদমই দেখেন, এর আগে তিনি হাঁটতে দেখেছিলেন কবি সুনীল সাইফুল্লার লাশও।