User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইটি অসাধারণ।
Was this review helpful to you?
or
আলহামদুলিল্লাহ
Was this review helpful to you?
or
Good Book and Good Service of Roomary
Was this review helpful to you?
or
সায়েন্স ফিকশন রচয়িতা ডগলাস এডামসের বিখ্যাত বই ’হিচককার্স গাইড টু গ্যালাক্সি’র চরিত্র কম্পিউটারের কাছে জানতে চেয়েছিল জীবন, মহাবিশ্ব এবং সবকিছুর পরম প্রশ্নের উত্তর।কম্পিউটার উত্তর দিয়েছিল, ‘৪২’। স্টিফেন হকিং ও লিওনার্ড ম্লোডিনো রচিত ''The Grand Design'' বা ''মহিমান্বিত নকশা'' বইয়ে মৌলিক সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন এবং দাবী করেছেন যে তাদের দেয়া উত্তর সেই কম্পিউটারের মতো ‘৪২’ হবে না। আমাদের কালের প্রখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ১৯৮৯ সালে লিখেছিলেন বেস্টসেলার 'A Brief History of Time'। সেই বইয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন কিভাবে এ মহাবিশ্ব এলো, কিভাবেই বা কাজ করছে সমস্ত সিস্টেম এবং মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতিই বা কী হতে পারে। কিন্তু আরো কিছু মৌলিক এবং গভীর প্রশ্ন রয়ে গিয়েছিল যা সেই বইয়ে উঠে আসেনি। সেসব প্রশ্নের জবার খোঁজার তাগিদেই হকিং এবং তাঁর সাথে পদার্থবিজ্ঞানী লিওনার্ড ম্লোডিনো ''মহিমান্বিত নকশা' বা ‘‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’’ বইটি লিখেছেন। কী সেই প্রশ্নাবলী যার উত্তর লেখকদ্বয় খুঁজতে চেয়েছেন? প্রশ্নগুলো হলোঃ • কেন কোনো কিছু থাকার বদলে কিছু বিদ্যমান? • কেন আমাদের অস্তিত্ব আছে? • কেন ঠিক এই ভৌত সূত্রগুলো আছ?কেন অন্য কোনো ভৌতসূত্র নেই? • মহাবিশ্বের কি একজন নির্মাতা বা সৃষ্টিকর্তা প্রয়োজন? নিঃসন্দেহে জটিল সব প্রশ্ন। এমন সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব আগে দর্শনশাস্ত্রের ঘাড়ে ন্যস্ত ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য প্রাযুক্তিক উন্নতি, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে অসাধারণ দক্ষতা এবং মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যায় পদার্থবিজ্ঞানের আকাশচুম্বী সাফল্যের সঙ্গে দর্শনশাস্ত্র তাল মেলাতে পারেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব এখন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরাই মাথায় তুলে নিয়েছেন। তারপরও লেখকদ্বয় যখন আলোচ্য গ্রন্থের একেবারে প্রথম পাতায় বলে বসেন ‘Philosophy is dead’, তখন নড়েচড়ে না বসে উপায় নেই। ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে এ মন্তব্য নিয়ে বিপুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে; হয়েছে পক্ষে বিপক্ষে না তর্ক-বিতর্ক। চিন্তাজাগানিয়া এই বইটি শুরু হয়েছে নান্দনিকভাবে তুলে ধরা প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞান-সাধনা দিয়ে যখন তৎকালীন দার্শনিকরা বুঝতে পারলেন যে প্রকৃতি এবং মহাবিশ্বকে দেবতাদের খেয়ালী কাজকর্ম দিয়ে ব্যাখ্যা না করে বরং যুক্তি এবং প্রমাণ দিয়ে আরো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এরপর মধ্যযুগে কোপার্নিকাস হয়ে বিভিন্ন মাইলফলক তুলে ধরার মধ্য দিয়ে এসে পৌঁচেছে আধুনিক বিজ্ঞানের জগতে। গোলমালটা লেগেছে তখনই। আমাদের মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য পদার্থবিজ্ঞানীদের প্রয়োজন হচ্ছে দু’টি ভিন্ন তত্ত্বের। আণবিক মাত্রায় বস্তুর ধর্ম ব্যাখ্যার জন্য প্রয়োজন 'কোয়ান্টাম বলবিদ্যা', অন্যদিকে মহাকর্ষ থেকে শুরু করে সময় এবং স্থানের প্রকৃতি বোঝার জন্য দরকার আইনস্টাইনের 'থিওরি অব রিলেটিভিটি'। কিন্তু দু’টো তত্ত্বকে একত্রিত করতে গেলেই পুরো সিস্টেমটাই ধ্বসে পড়ে। অথচ মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যায় একটি সমন্বিত তত্ত্ব প্রয়োজন। আলবার্ট আইনস্টাইন এই সমন্বিত তত্ত্বের খোঁজের জীবনের শেষ ত্রিশটি বছর কাটিয়েও সফল হন নি। তবে আধুনিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান এ কাজে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বইটির তৃতীয় অধ্যায়ে বাস্তবতা নিয়ে একটি মনমুগ্ধকর আলোচনা আছে। গোলাকার কাঁচের পাত্রে রাখা গোল্ডফিশের ন্যায় আমরাও বিকৃত বাস্তবতার শিকার? আমরা কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারব যে আমাদের পর্যবেক্ষিত বাস্তবতাই সবচেয়ে বেশি বাস্তব?- এমন সব হতবুদ্ধিকর প্রশ্ন আধুনিক তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। জনপ্রিয় কিছু প্রশ্ন আছে যেমন, 'এমন কি হতে পারে না যে আমরা কম্পিউটারে সৃষ্ট কোনো চরিত্র?' কিংবা 'আমাদেরকে কি কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করছে?' । এমন সব প্রশ্নের জবাবে হকিং এবং ম্লোডিনো বলেন, ''মহাবিশ্বের কোনো একক কিংবা সুনির্দিষ্ট ইতিহাস নেই, বরং সম্ভাব্য সকল ইতিহাসই যুগপৎ থাকতে পারে।'' এর ফলে উঠে আসে 'মাল্টিভার্স' বা 'অনন্ত মহাবিশ্ব'র ধারণা। ''এম-তত্ত্ব'' ভবিষ্যতবানী করে যে আমরা যে মহাবিশ্বে বাস করি সেটাই শুধু একমাত্র মহাবিশ্ব নয়, বরং থাকতে পারে অসংখ্য মহাবিশ্ব যাদের নিজস্ব সূত্রাবলী সেসব মহাবিশ্বের প্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারে। অভিনব এ তত্ত্বের ফলে বোঝা যায় কেন আমাদের মহাবিশ্বে প্রাণেরর উদ্ভবের মতো ঘটনা ঘটেছে। এ তত্ত্ব আরো বলে যে অন্য মহাবিশ্বেও থাকতে পারে বুদ্ধিমান প্রাণী, যদি সকল প্যারামিটার প্রাণের উদ্ভবের পক্ষে যায়। হকিং ও ম্লোডিনো এ বইয়ে মহাবিশ্বের উদ্ভব নিয়ে চরম প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করেছেন। মহাবিশ্বের উদ্ভবের জন্য বহিরাগত কোনো সত্ত্বার উপস্থিতি প্রয়োজন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের স্বাভাবিক ভবিষ্যতবানী থেকেই বলা যায় যে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভব হতে পারে। নিঃসন্দেহে অভিনব হাইপোথিসিস, কিন্তু এর সত্যতা নিয়ে আরো বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন আছে। হয়ত ভবিষ্যত প্রজন্মের পদার্থবিজ্ঞানীরা আরো বিস্তৃত গবেষণার মাধ্যমে সমস্ত মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সচেষ্ট হবেন। বইটিতে টেকনিক্যাল টার্মের ব্যবহার কম রাখা হয়েছে যাতে সাধারণ পাঠকেরা এতে কামড় বসাতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য এই বই-পাঠ নিঃসন্দেহে একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতা দেবে। আর দর্শনে আগ্রহীদের জব্য রয়েছে চিন্তার খোরাক। অনুবাদ নিয়ে কিছু কথা বলতে হয়। বইয়ের অনুবাদক আশরাফ মাহমুদ বাংলা ব্লগজগতে একজন সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ঝরঝরে বাংলা ও সযত্ন অনুবাদ বইপাঠের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে। আর বইয়ের প্রোডাকশনও যথেষ্ঠ প্রশংসার দাবী রাখে। সব মিলিয়ে বইটি দারূণ একটি অভিজ্ঞতার নিশ্চয়তা দেয়। লেখক- সাজেদুল ওয়াহিদ নিটোল