User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মহি মুহাম্মদ ছোটদের জন্য লেখেন তিনি। লেখেন ছড়া, কিশোর কবিতা। গঠনমূলক লেখাও তাঁর কাছ থেকে এসেছে। শিশুসাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন প্রবন্ধ। তাঁর ছড়ায় কিশোর মনের আনন্দ সহজেই খুঁজে নেওয়া যায়। ছোটদের আনন্দের পাশাপাশি তাঁর লেখায় চিন্তার খোরাক থাকে। শুধু বিনোদন দিয়ে মন কাড়েন না। থাকে ভাবনার বিষয়। 'ধ্রুব এষ যে ভূতের ছবি এঁকেছিলেন'_এ গল্পের বইটি এবারের বই মেলায় প্রকাশিত। বইটির লেখক জুলফিকার শাহাদাৎ। মাত্র সাতটি গল্প দিয়ে এ বইটি সাজানো হয়েছে। এ বইটির চমৎকার প্রচ্ছদ এঁকেছেন মাসুক হেলাল। গল্পগুলো হলো_ 'ধ্রুব এষ যে ভূতের ছবি এঁকেছিলেন,' 'রংধনুর গান শেখা', 'রহস্যময় লোকটা', 'সোনার নোলক,' 'গোলাপ ও একটি টুনটুনি পাখি,' 'রঙধনু, মেঘ ও বৃষ্টি' ও 'রঙধনুর ঈদ'। গল্পগুলোর বিষয় একেবারে ছোটদের উপযোগী। তবে বড়রাও এর পাঠক হতে পারবেন। সেই মজাটাও গল্পগুলোর মধ্যে আছে। ছোট ছোট বাক্যের মধ্যে দিয়ে লেখক তাঁর বর্ণনার প্রসাদগুণ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তার গল্পগুলোর পরিসরও খুব বেশি নয়, মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিট। পুরোগ্রন্থে শব্দ সংখ্যা বড়জোর চার হাজার দুশো। লেখক গল্পগুলোর চরিত্রের মধ্যে কিছু খ্যাতিমান ব্যক্তির আগমন ঘটিয়েছেন। চরিত্রগুলোর মধ্যে আছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, মঈনুল আহসান সাবের, ফেরদৌসী রহমান, হাশেম খান, মাসুক হেলাল ও ধ্রুব এষ। গল্পের ছলে এ নামগুলো ছোটদের মনে গেঁথে দেওয়াই যেন লেখকের উদ্দেশ্য। গ্রন্থের প্রথম গল্প_ 'ধ্রুব এষ যে ভূতের ছবি এঁকেছিলেন'। গল্পটি খুবই চমৎকার। তার মধ্যে প্রথমেই আছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান। গল্পে এই শিল্পীর কাছে এসেছে মঙমঙ নামে একটি ছেলে। সে ভূত। এসেছে সে ভূতপুর থেকে। 'ভূতপুর' হলো খ্যাতিমান শিল্পী ও সাহিত্যিক ধ্রুব এষের একটি মজার বই। সেখানে ধ্রুব একটি ভূতের ছবি এঁকেছিলেন। ভূত ছেলেটির নাম ছিল মঙমঙ। এই সেই মঙমঙ। যেহেতু হাশেম খান ধ্রুবর শিক্ষক তাই তাঁর কাছেই মঙমঙ ধ্রুবর বিরুদ্ধে বিচার চাইতে এসেছে। মঙমঙের অভিযোগ ধ্রুব অাঁকার সময় তার একটি চোখ কানা আর নাকটি লম্বা করে দিয়েছে, ফলে ভূতপুরে তার মান-সম্মান আর থাকছে না। তাই হাশেম খান ধ্রুবকে ডেকে পাঠালেন। ধ্রুব এলে হাশেম খান মঙমঙের অভিযোগটি তুলে ধরেন। ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে ধ্রুব বলেন, 'স্যার আমার কোনো দোষ নেই। আমি তার চোখ কান সবই সুন্দর করে দিয়েছিলাম, কিন্তু ছাপাখানায়_ হাশেম খান আর কথা না বাড়িয়ে মঙমঙকে বলেন, মঙমঙ, তুমি কি কিছু বুঝতে পেরেছ? মঙমঙ জ্ঞানীর মতো মাথা দোলায়, দুলিয়ে বলে, জি্ব স্যার, কিছুটা বুঝেছি! অতঃপর হাশেম খান মঙমঙের সঙ্গে ধ্রুব এষের হাত মিলিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা আগামীকাল ছাপাখানায় যাব।' 'রঙধনুর গান শেখা' গল্পে এক কিশোরীর ইচ্ছে ব্যক্ত হয়েছে। এ গল্পে ফেরদৌসী রহমান খালামণি হয়ে এসেছেন। বিটিভির জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান 'এসো গান শিখি'। এখানে গান শেখান বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী আব্বাসউদ্দিন তনয়া ফেরদৌসী রহমান। রঙধনু টিভি দেখে খালামণির কাছে গান শেখার বায়না ধরেছে। তা নিয়েই গল্পের কাহিনী এগিয়ে গেছে। 'রহস্যময় লোকটা' গল্পে রহস্যময় লোকটা হচ্ছে আদুভাই। আদুভাইয়ের কাহিনী কারো অজানা নয়। আদুভাইকে নিয়ে গল্পকার ছোটদের উপযোগী মজার গল্প ফেঁদেছেন। তবে গল্পের শিরোনাম আদুভাই হলে আরো ভালো হতো। 'সোনার নোলক' গল্পে আল মাহমুদ তাঁর মায়ের হারিয়ে যাওয়া সোনার নোলক খুঁজছেন। আর এ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, ফররুখ আহমদ, শামসুর রাহমানের মতো কবিরা চরিত্র হয়েছেন। 'গোলাপ ও একটি টুনটুনি পাখি' গল্পে গোলাপ ও টুনটুনির মজার সংলাপ আছে। এর মধ্যে দিয়ে গল্পকার ছোটদের আকৃষ্ট করতে চেয়েছেন। ছোটদের অনেক রকম ভাবনা থাকে। থাকে অনেক কল্পনা। সে সব কল্পনা কখনো পাখা মেলে আকাশে কখনো মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। এ গল্পে মেঘের সঙ্গে ছোট্ট মেয়ে রঙধনুর ভাবনা একাকার হয়ে আছে। ছোটদের অনেক জিজ্ঞাসা থাকে। থাকে কৌতূহল। যেসব শিশু শহরে জন্মগ্রহণ করেছে গ্রাম সম্পর্কে তাদের নানা কৌতূহল। জোনাক পোকা, পাখি, জ্যান্ত মাছ, শাপলা, পুকুর আর নানা ধরনের খেলা তো আছেই। এ জন্য শহর থেকে আসা অনেক শিশুই ভালোবেসে ফেলে গ্রামকে। ফিরে যেতে চায় না খাঁচায় ঘেরা জীবনে। এমনই এক ঘটনা নিয়ে গল্পটি রচিত হয়েছে। গল্পটির নাম 'রঙধনুর ঈদ'। এটিই এ গ্রন্থের শেষ গল্প। জুলফিকারের গদ্য সুখপাঠ্য। ছোটদের আকৃষ্ট করার জন্য তার গল্পে বাক্যের বুনট লক্ষণীয়। চমৎকার ভাষায় রচিত হয়েছে এ বইটি। বইপাঠে ছোটরা বেজায় আনন্দ পাবে। কারণ গল্পকার ছোটদের মজা পাওয়ার বিষয়টির দিকে কড়া নজরদারি করেছেন।