Our User Product Reviews

বিদীর্ন সমাজের বীক্ষণের দর্পণে বিম্বিত অসহায়ত্বের মর্মগাথা ও বেদনাবোধের এক অনুপম জীবনালেখ্যের দুর্লভ চিত্রায়ন গৃহদাহ উপন্যাসটি। কঠিন কঠোর গদ্যময় ধূলিমলিন অপাংক্তেয় জীবনের গল্প উপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সূক্ষ্ণ তুলিতে অভিব্যঞ্জিত হয়েছে গভীর দরদে ও মরমে। আপাত দৃষ্টিতে উপন্যাসটি শুরু হয়েছে বলে মনে হলেও আস্তে আস্তে তা বাস্তব জীবনের নানা প্রাসঙ্গিকতায় প্রস্ফুটিত হতে শুরু করে।প্রিয় বন্ধু মহিমের জন্য সুরেশের পাগলামি পর্যায়ের ভালোবাসাই প্রথম দিকে চালিয়ে নিয়ে যায় উপন্যাসটিকে। মহিম ও অচলার ভালবাসা কোথা থেকে, কিভাবে শুরু হয়েছিলো তা লেখক প্রায় অস্পষ্ট রাখলেও এই ভালবাসার তলদেশ যে কতটা গভীর তা তিনি পরবর্তীতে প্রমাণ করে দিয়েছেন। যেখানে বাধ সাধে অচলার প্রতি সুরেশের মুগ্ধতা। ভালবাসা, প্রেম, বিরহ ও বাসনা কামনা বিরংসার দোলাচালে এখানকার নরনারীর জীবন আবর্তিত। ঘটনার এক পর্যায়ে নাটকীয়ভাবে অচলা ও মহিমের মিলন, নানা ঘাত প্রতিঘাতে মহিম ও অচলার সম্পর্কের টানাপোড়ন এবং এই কপোত কপোতীর জীবনে মূর্তিমান আতঙ্কের মতো সুরেশের অনুপ্রবেশ এবং তা সত্ত্বেও মহিম ও অচলার হৃদয় কল্পরসে জারিত রসায়নের অমৃতে সিঞ্চিত হয়ে পাঠক যখন মনে করবেন এই বুঝি হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের মিলন ঘটলো তখনই ঘটনায় আসে এক অপ্রত্যাশিত মোড়। যা মুহূর্তেই ওলোটপালট করে দেয় সবকিছু। অচলা চরিত্রটি যেন বাঙালি নারীর এক মূর্ত প্রতীক। যে নারী তার হৃদয়াবেগ কখনো বুঝতে পারেনি, এমনকি দারিদ্রের সাথে তার ভালবাসাকে গুলিয়ে ফেলেছে কিন্তু তারপরও প্রিয়জনের প্রতি তার ভালবাসা এতটুকুও কমেনি বরং হৃদয়ের পরতে পরতে বাঁচিয়ে রাখা সেই ভালবাসা তার চার দেয়ালের পৃথিবীতে বিরহের স্নায়ুছেঁড়া আর্তিতে অশ্রুময় হয়ে উঠেছে। আর কি অচলা কখনো ফিরে পাবে তার মহিমকে? মহিমকে হৃদয়ে বাঁচিয়ে রেখে সে কেমন করে মেনে নেবে এই জীবনকে? কোথায় অচলা কোথায় মহিম আর কোথায়ই বা সুরেশ? এসবই কি নিয়তি নির্ধারিত নাকি পরোক্ষে কেউ পুরো ব্যাপারটিকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো? এভাবেই সময়ের সবেগ প্রবাহে গৃহদাহ হয়ে ইঠেছে আশা ও আশাভঙ্গের এক অনবদ্য ভাষাচিত্র।