User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Kazi Sunzed Kabir

      24 Sep 2019 04:19 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইঃবৈকুন্ঠের উইল। লেখকঃশরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বুক রিভিউঃঅপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করে গেছেন। অতটা খ্যাতি অর্জন করতে না পারলেও 'বৈকুন্ঠের উইল' উপন্যাসটি পাঠক মহলে অনেক নাম কুড়িয়েছে। তিনি যে সমাজে বেড়ে উঠেছেন, ততকালীন সমাজের নানা দিক, কুসংস্কার, ধর্মীও গোঁড়ামি, জাতপাতের ভেদ, সমাজের নানা মূঢ়তা তাঁর উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। 'বৈকুন্ঠের উইল' উপন্যাসেটিতেও সমাজিক কিছু বিষয় উঠে আসলেও তা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। সে হিসেবে 'বৈকুন্ঠের উইল' উপন্যাসটি শরৎ সাহিত্যের অন্য উপন্যাসগুলো থেকে কিছুটা ভিন্নতা নিয়ে পাঠক মহলে উত্থাপিত হয়েছে। নামকরণ থেকে উপন্যাসটি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বৈকুন্ঠ মজুমদার নামক একজন মুদী দোকনীর মৃত্যুর আগে করে যাওয়া উইলটিকে মূল উপজীব্য করে উপন্যাসটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন শরৎচন্দ্র। উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র বৈকুন্ঠ মজুমদারের বড় ছেলে গোকুল। সততা, সরলতা, মা, ভাইয়ের প্রতি অপার ভালোবাসা, গোকুল চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ছোটবেলাতেই মাকে হারিয়েছে গোকুল, সেই হতে সৎ মায়ের কাছে মানুষ এই গোকুল। সৎ মাও অপার স্নেহে আপন মমতায় বুকে আগলে রেখেছে গোকুলকে, ভুলিয়ে দিয়েছে নিজের মায়ের অভাব। তাই সৎমাকেই নিজের সবচেয়ে আপন ভেবে এসেছে গোকুল। নিজের সৎ ভাই বিনোদকে ভালোবসেছে আপন সহদর রূপে। বৈকুন্ঠ মজুমদারের প্রথম ঘরের একমাত্র সন্তান গোকুল, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বিয়ে করেন ভবানীকে। বৈকুন্ঠের ঔরসে ভবানীর গর্ভে জন্ম হয় বিনোদের। বিনোদ ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় অনেক ভালো, কিন্তু গোকুল ঠিক ততটাই খারাপ। সে ঠিকমত ক্লাসেও উত্তীর্ণ হতে পারতো না। তাই একদিন বৈকুন্ঠ মজুমদার গোকলকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিজের মুদীখানায় নিয়ে গেলেন, ব্যবসায় দেখাশোনার জন্য। এর পেছনে গোকুলের লেখাপড়ার দৈন দশার থেকেও বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে গোকুলের সততা। কারণ ছেলেমেয়েরা যেখানে নকল করে ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, সেখানে হেড মাস্টারের নিষেধ মেনে সুযোগ পেয়েও পরীক্ষায় নকল করেনি গোকুল। আর বৈকুন্ঠ মজুমদারেরও বয়স হয়ে আসছিলো, তাই স্ত্রী ও ছোট ছেলের ভার, নিজের স্বপ্নের ব্যবসায় সবকিছুর দায়িত্ব তিনি কারও উপর চাপিয়ে জীবনের শেষ কটাদিন শান্তিতে কাটাতে চাইছিলেন। হঠাৎই অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন বৈকুন্ঠ মজুমদার। তাই নিজের এত কষ্টে গড়া ব্যবসায়, সম্পত্তি নিয়ে তিনি সঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই স্ত্রীর পরামর্শে গোকুলকে সবকিছু উইল করে দিয়ে যান তিনি। যদিও এর ফলে ভবানীর আপন সন্তান বিনোদ এর ভাগে কিছুই পড়ে না, সবকিছুর মালিক হয়ে যায় সৎ ছেলে গোকুল। তাই নিজের সন্তানের জন্য মায়ের যে চিন্তা, তা স্বভাবতই চলে আসে ভবানীর মনে। অবশ্য এর বাইরে কিছু করারও সুযোগ ছিলো না, কারণ বিনোদ মদ, নারী এগুলো নিয়েই পড়ে ছিলো। তাই স্বামীর এতদিনের বিষয় সম্পত্তি রক্ষার জন্য এ কঠিন সিদ্ধান্ত তাকে নিতেই হয়। এদিকে সম্পত্তি উইল করে দিয়েই মারা যান বৈকুন্ঠ মজুমদার। এর ফলে সকল সম্পত্তির মালিক হয়ে যায় গোকুল। এ নিয়ে এলাকায় একটা কানাকানি পড়ে যায়। সবাই বলতে থাকে গোকুল ছোট ভাইকে ফাঁকি দিয়ে সব হাতিয়ে নিচ্ছে। এর কোন কিছুই মূলত সত্য নয়, বরং বিনোদই ভাইকে সব সময় চাপ দিয়ে টাকা নিতে থাকে। স্বামীর টাকা অন্য কেউ নিয়ে যাক, তা হয়তো কোন বাঙালী স্ত্রী মেনে নেয় না। তাই এ ব্যাপারটিও মেনে নিতে পারেনি গোকুলের স্ত্রী মনোরমা। তাই নানাভাবে গোকুলকে বুঝাতে থাকে মনোরমা। কিন্তু গোকুল ছোট ভাইকে এতটাই ভালোবাসে যে, সে তার স্ত্রীর কোন কথাই কানে নেয় না। কিন্তু মনোরমা সারাক্ষণ কানের কাছে বিষয়টি নিয়ে গোকুলকে বিরক্ত করতে থাকে, তাই গোকুল না পেরে ভাইকে সম্পত্তির একটুও ভাগ দেবে না বলতে থাকে। এমনকি মায়ের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে। যদিও এর কিছুই গোকুলের মনের কথা নয়। স্ত্রীর উপর রাগ করে সে এ কথাগুলো বলে। কারণ রেগে গেলে তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে। যদিও গোকুল মুখে বলে যে, সে বিনোদকে বাড়ি ঢুকতে দেবে। কিন্তু গোপনে গোপনে ভাইয়ের আসার খবর সবসময়ই নিতে থাকে। যা চোখ এড়ায় না গোকুলের বাবার আমলের কর্মচারী চক্রবর্তী মশাইয়ের। অবশেষে একদিন বিনোদ বাড়ি আসে, তখন নানাভাবে ভাইয়ের খোঁজ খবর নিতে থাকে গোকুল। কখন সে এলো, কি খেলো এসব নানা খবর। এ উপন্যাসে আমরা নির্লিপ্ত ও সব কিছু মুখ বজে সয়ে যাওয়া এক অমায়িক চরিত্র দেখতে পাই ভবানীর মধ্যে। যিনি ছেলের বউয়ের নানা কটুক্তি সহ্য করে গেছেন মুখ বুজে। একসময় গোকুলের শ্বশুর মনোরমার অনুরোধে সব দেখাশোনার জন্য গোকুলদের বাড়ি আসেন। তিনি এসেই পুরোনো কর্মচারী চক্রবর্তী মশাইকে ছাটাই করে দেন। পরে অবশ্য ভবানীর আদেশে তাকে বহাল করা হয় এবং সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেওয়া হয়। অবশ্য এসবের কিছুই জানতে পারেনা ভবানী। যে তার আদেশ মানতে চক্রবর্তী মশাইকেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করেছে গোকুল। একসময় মনোরমা ও তার বাবা নিমাই রায়ের নানা কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে বিনোদকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ভবানী। গোকুল অবশ্য এর কিছুই জানেনা, সে ভাবে ভবানী তাকে সৎ ছেলে মনে করে। তাই আপন ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ভবানীও ভাবে গোকুল সবকিছু জেনেও চুপ করে আছে। শেষমেশ চক্রবর্তীর কথাতে বিনোদ ও ভবানীর ভুল ভাঙে। বিনোদ বুঝতে পারে গোকুল তাকে কত ভালোবাসে। উপন্যাসের শেষে আমরা দেখতে পাই নানা ভুলবোঝাবুঝির শেষে কিভাবে ভালোবাসা জয়লাভ করে।

      By Munir Uddin Shamim

      07 Jul 2014 12:08 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আর মাত্র দু’বছর পরেই ‘বৈকুন্ঠের উইল’ শতবর্ষী হবে। বলা বাহুল্য, এটা শরৎচন্দ্রের লেখা উপন্যাস। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৬ সালে। একটি উপন্যাস, একটি লেখা, শতবছর ধরে টিকে আছে, একটি জাতির সাহিত্যের, ভাষার ইতিহাসে। বইটি এখনও প্রকাশকরা প্রকাশ করে, ক্রেতারা কিনে, পাঠকরা পড়ে, এবং ধারণা করা যায়, আরও অনেক অনেক দিন ধরে, নতুন নতুন পাঠকরা পড়তে থাকবে। উপন্যাসটি। উপন্যাসের চরিত্রগুলি নিয়ে ভাববে, যেমন এ মুহূর্তে আমি ভাবছি। উপন্যাসের চরিত্ররা বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। একজন লেখক এবং তাঁর উপন্যাসের স্বার্থকতা বিচার্যের আর কি অন্যকোন সূচকের দরকার পড়ে? সম্ভবত না। সাহিত্যের শৈল্পিক ব্যাকরণ নিয়ে যারা ভাবেন, সমালোচনা সাহিত্য যাঁদের বিচরণক্ষেত্র, তাঁদের জন্য বিষয়টি হয়তো আলাদা। একটি উপন্যাস শতবছর টিকে আছে। এ-টিকে থাকার ঘটনা-ই একটা বিশাল বিশ্ময়। অন্তত আমার মতো যারা সাহিত্যের নগন্যপাঠক, তাঁদের কাছে। ‘বৎসর পাঁচ-ছয় পূর্বে বাবুগঞ্জের বৈকুণ্ঠ মজুমদারের মুদির দোকান যখন অনেক প্রকার ঝড়ঝাপটা সহ্য করিয়াও টিকিয়া গেল, তখন অনেকেই বিশ্ময় প্রকাশ করিল’। লেখক যেমন এ-রকম গণবিশ্ময়ের বর্ণনা দিয়ে উপন্যাসটি শুরু করেছেন ঠিক আমি নিজেও উপন্যাসটি একশ’ বছর টিকে থাকার ঘটনায় একটা বিশ্ময় নিয়েই পড়তে শুরু করি। উপন্যাসিক হিসেবে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধানব্যক্তিত্ব শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর শক্তি আঁচ করার চেষ্টা করি। এবং মনে মনে এ-রকম একটা অনুসিদ্ধান্ত টানতে বাধ্য হই যে, একজন লেখক, তাঁর সৃষ্টি-শতবছর ধরে টিকে আছে, এটাই তাঁর বড় শক্তি। সাহিত্যের শৈল্পিক ব্যাকরণের বিবেচনা পরে। বলতে দ্বিধা নেই, ‘বৈকুণ্ঠের উইল’ আহামরি কোন উপন্যাস নয়। অন্তত কাহিনীর দিক থেকে। খুবই সাদামাটা গল্প। প্রায় একশ’ বছর আগের গ্রাম-বাংলার আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় লেখা। কিন্তু গল্পটা এ-যুগেও অপরিচিত নয়। একটি দরিদ্র পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, ক্ষুদেব্যবসার বদৌলতে আর্থনীতিক-সামাজিক উত্তরণ, পরিবারের পুঞ্জিভূত সম্পদ এর মালিকানা, ভাগাভাগি নিয়ে সৎমা, ভাইদের মধ্যে সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্ধ, নানা কুটচাল, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল, এবং শেষপর্যন্ত যাবতীয় দ্বন্ধের অবসান-উত্তর দু’ভাইয়ের মিলন। মোটাদাগে এটাই কাহিনী। স্পষ্টতই উপন্যাসটি বিয়োগান্তক নয়; মিলনাত্বক। মূলধারার বাংলা চলচ্চিত্র দেখার অভ্যাস যাদের আছে, তারা নিশ্চয় এ-রকম বা কাছাকাছি কাহিনীর অসংখ্য ছবি উপভোগ করেছেন। কিন্তু এ সাদামাটা কাহিনীর সাথে পরিচিত হতে হতে পাঠক পরিচিত হবেন সেকালের গ্রামীণ দারিদ্র্য, প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ, নারী-পুরুষ সম্পর্ক, এ-বিষয়গুলির সাথে। উপন্যাসটিতে আমরা বৈকুণ্ঠের লেখাপড়ার বিষয়ে কিছু জানতে পারি না। কিন্তু এটা জেনে যাই যে, বৈকুণ্ঠ দরিদ্র, সৎ এবং পরিশ্রমী। সে তার সততা, নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম দিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করে। তার দোকানটি শুধু পরিবারের টিকে থাকার অবলম্বন হয়ে উঠে না, এটি বৈকুণ্ঠের পরিবারের সামাজিক মর্যাদাও তৈরি করে। অর্থনৈতিক সক্ষমতা আনে। ফলে বৈকুণ্ঠের পক্ষে তার মেধাবী ছোট ছেলেটিকে কলকাতায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো সম্ভব হয়। সমাজতাত্ত্বিকদিক থেকে এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো গ্রাম ও শহরের মধ্যে সুযোগ-সুবিধাগত বঞ্চনার দিকটি। টাকা থাকলেও গ্রামে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই। তার জন্য শহরে যাওয়ার দরকার পড়ে। এ-শহর পক্ষপাত সেকালে যেমন সত্য ছিল, আজও সেটি সত্য। সেকালে গ্রামগুলো যেমন প্রান্তিক ছিল, আজও প্রান্তিকই রয়ে গেছে। পার্থক্যটা হয়তো মাত্রাগত। বৈকুণ্ঠের ছোট ছেলে বিনোদ। এ চরিত্রটির মধ্যদিয়ে আমরা এও জেনে যাই যে, উচ্চশিক্ষা ব্যক্তির সামাজিক গতিশীলতা তৈরি করে। স্বাধীনতাও দেয়। এ গতিশীলতা ও স্বাধীনতা ব্যক্তির মধ্যে আবার সামাজিক বিচ্যুতিও তৈরি করে। এ ধারণা শরৎচন্দ্রের কালেও প্রচলিত ছিল। আমরা দেখতে পাই, বৈকুণ্ঠের মেধাবী ছেলে বিনোদ কলকাতায় পড়তে যায়। কিন্তু সে শুধু পড়ালেখা করে না। নিষিদ্ধ পল্লীতেও যায়। মদ খায়। তাকে নিয়ে এ ধরনের গল্প-আলাপ পরিবারে, সমাজের মানুষজনদের মধ্যে চলে। গ্রাম ও পরিবারের সদস্য, এমনকি খোদ তার মায়ের মধ্যেও একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। আর পাঠক হিসেবে আমরা সেকালের নাগরিক উপ-সংস্কৃতির একটা পরিচয়ও পেয়ে যাই। আবার সম্পদ শুধু সামাজিক-অর্থনৈতিক গতিশীলতা ও মর্যাদা তৈরি করে না। সম্পদ ব্যক্তির মধ্যে একটা মনোজগতও তৈরি করে। সে মনোজগতটা সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বান্ধিক হয়ে ওঠে। সম্পদপ্রাপ্তি বা দখলে রাখার লোভ ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বিচ্ছিন্নতাবোধেরও জন্ম দেয়। উপন্যাসের কাহিনী বিন্যাসে আমরা বৈকুণ্ঠের বড়ছেলে গোকুলের মধ্যে এ-রকম একটি মনস্তত্ত্ব তৈরি হতে দেখি। যেটি তৈরিতে আবার তার স্ত্রী, শশুর পরিবার এবং সুযোগসন্ধানী প্রতিবেশিরা ভূমিকা রাখে। এ সময় গোকুল তার মা, এবং ভাইয়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সম্পদকেন্দ্রিক পারিবারিক দ্বন্ধ ও পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা গ্রামবাংলার আর্থ-সামাজিক জীবনের একটি চিরায়ত অনুষঙ্গ। শরৎচন্দ্র সে চিরায়ত অনুষঙ্গটা চিত্রিত করেছেন খুব সুচারুভাবে। এখন একটু দেখা যাক ‘বৈকুণ্ঠের উইল’-এর নারীরা কেমন? এক কথায় সবাই প্রচন্ড দুর্বল। ক্ষমতার দিক থেকে, সিদ্ধান্তগ্রহণের দিক থেকে। সামাজিক গতিশীলতার দিক থেকেও। কারণ সেকালের নারীদের সবল হওয়ার মতো আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ছিল না। উপন্যাসটির প্রধান নারী চরিত্র বৈকুণ্ঠের স্ত্রী। সামাজিক প্রত্যাশা হচ্ছে নারী হবে স্নেহশীলা, মমতাময়ী। বৈকুণ্ঠের স্ত্রীও তাই। আবার নারী শুধু স্নেহশীলা হয় না, কুটনামীতেও সিদ্ধহস্ত-এটাও নারী সম্পর্কে প্রচলিত একটি সামাজিক প্রতিরূপ। বৈকুণ্ঠের উইল-এ আমরা নারীর এ সামাজিক প্রতিরূপেরও দেখা পাই। শরৎ চন্দ্রের কল্যানে। উপন্যাসে পুরুষ চরিত্রের বিপরীতে নারীদের অল্পবিস্তর যে ক্ষমতা চর্চা দেখতে পাই, সেটি তাদের নিজস্ব ক্ষমতা নয়; পুরুষচরিত্রের সাথে সম্পর্কিত। যাকে বলা যায় স্যাটেলাইট ক্ষমতা সম্পর্ক, যেখানে নারীরা নিজের আলোয় নয়, অন্যের আলোয় মানে পুরুষ চরিত্রদ্বারা তারা ক্ষমতায়িত। কিন্তু সেটি সাময়িক। প্রকৃত অর্থে তারা সবাই ক্ষমতাহীন। অর্থাৎ নারীর প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রতিরূপই পুননির্মিত হয়েছে উপন্যাসটিতে। তবে একটা বিনির্মাণের প্রচেষ্টাও চোখে পড়ে। সেটি গতানুগতিক পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাকাঠামোর ভেতরে থেকেই। বৈকুণ্ঠের স্ত্রী গোকুলের সৎ মা। আর সৎ মা সম্পর্কে প্রচলিত সামাজিক ধারণা হচ্ছে তারা অন্যপক্ষের সন্তানের প্রতি সদয় আচরণ করেন না। বরং নিপীড়ন-নির্যাতনের নানা প্রকরণ প্রয়োগ করেন অথবা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা বৈকুণ্ঠের স্ত্রীকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখতে পাই। তবে ব্যতিক্রম উপস্থাপন নারীর প্রচলিত সামাজিক ইমেজকে ভাঙ্গে না। শরৎচন্দ্রের নারীরা স্নেহশীলা-মমতাময়ী প্রতিরূপের ভেতরেই আটকে থাকে। দ্বন্ধ সামাজিক জীবনেরই অনুষঙ্গ। তবু সামাজিক মানুষ দ্বন্ধটাকে নয়; দ্বন্ধের অবসানই প্রাধান্য দেয়। ধারণা করা যায়, শরৎ চন্দ্রের সময়ে গল্প-উপন্যাসে পাঠক পারিবারিক দ্বন্ধে বিয়োগান্তক নয়, শেষ পর্যন্ত মিলনাত্বক পরিণতিই কামনা করতেন। ‘বৈকুণ্ঠের উইল’-এ বৈকুণ্ঠের দু’ ছেলে গোকুল আর বিনোদ এর মধ্যে আমরা শেষপর্যন্ত মিলনই প্রত্যক্ষ করি। উপন্যাসটির শতবছর পূর্তির প্রাক্কালে বাংলাসাহিত্যের এ মহান সৃষ্টিশীল মানুষটির প্রতি, শরৎচন্দ্রের প্রতি বিনীত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

      By Zinat Sultana

      23 Mar 2013 10:25 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বাংলা কথা সাহিত্যের কিংবদন্তি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহুদর্শী শিল্পীমানস ও সমাজ বীক্ষণের বিচিত্র চিত্র অঙ্কিত হয়েছে ‘বৈকুন্ঠের উইল’ উপন্যাসের ক্যানভাসে। কালচক্রের পালাবদলের খেলায় বিচিত্র পসার সাজায় প্রকৃতি। রং বদলায় মানুষের চিন্তা চেতনায়। জীবনের অনিরুদ্ধ অভিযাত্রায় কখনো বিজয়ী আবার কখনো বিজিত বৈকুন্ঠ মজুমদার যে প্রবল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গোকুলের হাতে তার সমস্ত সম্পতি তুলে দিয়েছিলেন কালের পরিক্রমায় সেই বিশ্বাসে গোকুল নাকি নিয়তি কে ফাটল ধরালো তা পাঠকই ভাল বলতে পারবেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গোকুলের সৎ মা ভবানী সকল প্রত্যাশিতকে অপ্রত্যাশিত করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন বারবার। এই উপন্যাসের অনেকটা নিশ্চুপ চরিত্র হয়েও তিনি নানা ঘাত, প্রতিঘাত, সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। ‘গোকুল’ এই উপন্যাসের এক বিচিত্র চরিত্র। চরম সততা, মা-বাবা-ছোট ভাইয়ের প্রতি পরম ভালবাসাই গোকুল চরিত্রের মূল চালিকাশক্তি। লেখাপড়ায় ব্যর্থ গোকুল কথা বার্তায় অশিক্ষিত হলেও তার সুবিশাল হৃদয়ের নিষ্পাপ ভালবাসা পাঠক হৃদয়কে বারবার বিচলিত করে। অথচ তার চরিত্রের এই বিপরীতমুখী দ্বন্দ্ব অনেক প্রিয়জনের কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। এই বাংলার একটি গ্রামের বিভিন্ন চরিত্রের বাস্তব ভূমিকা এবং তাদের মানসিক গঠন অনেককালের পরিচিত রূপ-বর্ণ-ছন্দ সৃষ্টি করেছে। যেখানে কখনো কখনো প্রতারণার নীলনক্সায় স্বার্থসিদ্ধির পাঁয়তারা চলে। উপন্যাসের এক পর্যায়ে দ্বন্দ্ব সংঘাতের নানা চিত্র দেখে মনে হয় গোকুল কি সত্যিই আবার ফিরে পাবে সবকিছু? কিন্তু কিভাবে? দিন দিন তার অসহ্য পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া আচরণ মা আর ছোট ভাইকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে য়ে? কি আছে বৈকুন্ঠ মজুমদারের উইলে? যা ঠিক করে দেবে সবকিছু? মমতার ফল্গুধারা, বান্ধবতার উজ্জ্বলতা, জগতে অমর-অক্ষয়-আসনে অসীন করে গোকুলের মতো সাধারণ মানুষকে। পুঁথিগত জ্ঞান ছাড়াই পুণ্যের, ভালবাসার জয় কি হবে এখানে?

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!