User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Awasome
Was this review helpful to you?
or
১৯৪৭ সালের ২রা আগষ্ট। আমি আমার মাতামহের বাড়ি ছিলাম। এখানে মুসলিম কম, গ্রামে ব্রাক্ষ্মণের সংখ্যাই বেশী। গ্রামের পাশেই শরবন। আমি ও শাঁদা এখানে গোপনে দেখা করতাম। আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই,বাবা-মায়ের ইচ্ছায়। তবুও আমি আর শাঁদা একে অপরকে ভালবাসতাম। আমরা জানি এ দেখাই আমাদের শেষ দেখা। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বসেছিলাম আমি আর শাঁদা। এ সময় শাঁদার বড়ভাই তোফায়েলের গলা শুনতে পেলাম; জানলাম মুসলমানরা হিন্দু জওয়ানদের হত্যার ব্রত নিয়েছে। সত্যি সত্যিই আমাদের রক্তে হাত রাঙালো মুসলিমরা। আমি বেঁচে গেলাম শাঁদার জন্য। শাঁদা তোফায়েলের বন্ধু আফতাবকে বিয়ে করবে কথা দেয়ায়, আমকে নিরাপদে লাহোরে পৌঁছে দিল তোফায়েল, তীব্র ঘৃনার সাথে। লাহোরে আমি আশ্রয় নিলাম আমার দশ বছরের পুরনো বন্ধুর মিয়া বাড়িতে। কিন্তু অন্য বন্ধুদের বিশ্বাসঘাতকতায় আমাকে পালাতে হল সেখান থেকে। মিয়ার দুই বাচ্চাকে জিম্মি রেখে আমার জীবন চাইল মুসলিম বন্ধুরা। মিয়া আমাকে গ্রামের বাড়ীর টিকিট কেটে ট্রেনে তুলে দিল। গ্রামে আমার দাদা, বাবা, বৌ, ছেলেমেয়ে সবই আছে। আমি তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম এ গ্রাম আর নিরাপদ নয়, কিন্তু দাদজী আমার কোন কথাই শুনতে চাইলেন না। ভোররাতে হামলা হল, আমি আখক্ষেতে লাফিয়ে পড়লাম; ভীত খরগোশের মত কাঁপছি আমি, ওখানে লুকিয়ে রইলাম তিনরাত। ঘরে ফিরে দেখলাম সব লন্ডভন্ড, দাদাজী মরে পড়ে আছেন, কোথাও জীবীত কেউ নেই। শুধু আমাদের পোষা কুকুর রুমী আমকে স্বাগত জানাল। বাঁচার একটাই রাস্তা দেখলাম আমি। যদি গুরুদ্বার করতার সাহেবে গিয়ে পৌঁছতে পারি। আখের ক্ষেতে লুকিয়ে দেখলাম অস্ত্রধারী একদল মুসলিম হিন্দু শরনার্থীদের আক্রমন করল। প্লাটফর্মের চারধারে হিন্দু ও শিখদের লাশ পড়ে আছে। আর এই বিভৎসতার মধ্যে দেখালাম মহাজন বুলাকী শা কে। রাতের আন্ধকারে সে মৃত দেহের অর্থ আর অলংকার লুঠ করছিল। ……আরও সামনে এগোলাম আমি। পায়ে ঠেললাম বাঁচার জন্য এক বৃদ্ধের করুন আকূতি; লাথি মেরে নর্দমায় ফেলে দিলাম তাকে। শুধু কেঁউ কেঁউ করে প্রতিবাদ জানাল রুমী। এক মহিলার কাতর আর্তনাদেও তাকে খুন করে যন্ত্রনার হাত হতে পালিয়ে এলাম আমি। এরপর মিশে গেলাম এক কাফেলার সাথে। এখানে ছিল এক হিন্দু জমিদার লহনা সিং আর তার স্ত্রী। আর ছিল এক অপূর্ব রূপসী তরুনী যমুনা। আবার আক্রমন এল। স্ত্রীর হাতের বালা ভেঙ্গে ফেলে সেই আক্রমন ঠেকাতে গিয়ে প্রান দিল অহনা সিং। আর হারিয়ে গেল যমুনা। আমাকেও আক্রমন করল ওরা,আমি পাকিস্তানের ঘোর সমর্থক পরিচয় দিয়ে রেহাই পেলাম। গুরুদ্ধারের কাছে, ইরাবতী নদীর তীরে এসে পড়লাম আমি। দেখলাম বিশ্বাসী শিখ দম্পতি মরে পড়ে আছে গুরুদুয়ার সামনে। আমি চিন্তা করছিলাম কিভাবে নদী পার হওয়া যায়। নদীর পাড়ে হিন্দু শরনার্থীর ঢল। পুলের ওপর দিয়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি। মুসলিমরা ওঁৎ পেতে রয়েছে শিকারের অপেক্ষায়। আমি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আর আমার বিশ্বস্ত সঙ্গী রুমী সেও আমার পিছনে পিছনে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বোকা, অবোধ জানোয়ার কোথাকার। নদীতে ডুবে মারা গেল রুমী, শেষ হল ইতিহাসের আর এক অধ্যায়। আমি মৃতপ্রায় অবস্থায় নদীর ওপাড়ে পৌঁছালাম। দেখলাম আমার স্ত্রী, বাবা ও পরিবারের অনেকে আগেই চলে এসেছে। কিন্তু আমার বোনটাকে ওরা ধরে নিয়ে গেছে। আর আমার বড় আদরের সন্তান মুন্না; মুন্নাকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি চিৎকার করে বললাম, কেউ আমাকে একটা ছুরি দিতে পার, একটা ছুরি ! … শিগগীরই আমি প্রতিশোধে উন্মত্ত একদল লোকের সাথে ভীড়ে গেলাম। তারা একটা মুসলিম মেয়ের সম্ভ্রমহানী করছিল। আমি তার কাতর আর্তনাদ শুনে পালালাম। আমি পুলে উঠলাম, ইংরেজ সৈনিক পুল নিয়ন্ত্রন করছিল। আমার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে মুসলিম মোহাজেরের দল। পরিচয় হল পার্বতীর সাথে, তার প্রেমিক ইমতিয়াজকে হিন্দুরা মেরে ফেলেছে, কারন সে মুসলিম। আমি পার্বতীকে নিয়ে আসার চেষ্টা করলাম, সে এল না। আমিও ফিরে এলাম, দল বদলেছি তা আমার মনেই হল না। মনে হল এরাও সেই একই দল, একই মানুষ, একই ভয়ে সন্ত্রস্ত। রাতে শাঁদাকে দেখলাম; দেখলাম আমাদের সেই প্রিয় শরবনে আগুন লেগেছে। সে চিৎকার করে ছুটছে-জঙ্গল জ্বলছে। ভোরে আমি গনহত্যার স্থানে গেলাম। সেখানে আর্মি পাহারা দিচ্ছে। দেখলাম এখনও জীবীত আছে এক শিশু। তাকে, সেই মুসলিম বাচ্চাটিকে আমি বুকে তুলে নিলাম। পিছনে সৈনিকটি টি আমাকে লক্ষ্য করে রাইফেলের গুলি ছুড়ল। আমি থামলাম না। আমার বুকে তখন নতুন আশা। এই শিশুটিকে বুকে নিয়ে লড়ব আমি; নতুন পৃথিবীর আকাংখায়। নদীর পাড়ে তখন নতুন সূর্য উঠেছে। আমি সেই দিকে এগিয়ে চললাম, আমি জানি সেখানে সূর্য কোন দিনও ডুববে না। লেখক পরিচিতিঃ কৃষণ চন্দর (১৯১৪-১৯৭৭) উর্দু ভাষার বিখ্যাত লেখক। তাঁর বিশটির মতো উপন্যাস, চৌরাশিটির মতো ছোট গল্প রয়েছে। তাঁর সাহিত্য কর্মের বেশীরভাগই বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কৃষন চন্দর দেশ বিভাগের উপর লেখা তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘গাদ্দার’ তাকে মহাকলের শক্তিশালী লেখকদের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মূলত দেশ বিভাগ এবং হিন্দু মুসলমান ভয়াবহ দাঙ্গার উপর লেখা মর্মস্পর্শী উপন্যাস ‘গাদ্দার’ কৃষণ চন্দর এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য নিদর্শন। নিজের জন্মভূমি ছাড়ার যন্ত্রণা তিনি কোন দিনই ভুলতে পারেননি। একবার তিনি তার লেখায় বলেছিলেন, ‘ লাহোরেই আমি জন্মেছি, সেখানে পড়াশুনা করেছি, আমার সাহিত্য জীবনের শুরু সেখানেই। সেখানেই আমি পরিচিতি লাভ করেছি। লাহোরকে ভোলা আমার জন্য কঠিন। লাহোর আমার হৃদয়ে জ্বলে রত্নের মত; আমার আত্নার সৌরভের সাথেই তা তুলনীয়।‘ কাল উত্তীর্ণ কৃষণ চন্দরের মৃত্যু যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদের মৃত্যুর সাথে তুলনীয়। লেখার টেবিলে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭৭ সালে মহান এই লেখক ভারতের মুম্বাইতে পরলোক গমন করেন। তাঁর নতুন উপন্যাসের মাত্র একটি লাইন লিখেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। লেখকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘গাদ্দার’ এর বুক রিভিউ আর্ট ইন লাইফস্টাইলের পাঠকদের সাথে শেয়ার করা হলো এবং অনুরোধ রইল মূল বইটি পড়ার জন্য।