User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একবার এই জনপদে এক আশ্চর্য শরৎ এসেছিল। সেই শরৎ, আলোকিত শুভ্র শরৎ রোগমুক্তি ঘটিয়েছিল এক কবির।কবি অসুখে পড়বার জন্য কবিতা লেখেন এবং অসুখ নিরাময়ের জন্য পান করেন কবিতা।অতএব সেই পরাবাস্তব শরতে, কবি পান করেছিলেন,মুক্ত করেছিলেন, ভেসে ও ভাসিয়েছিলেন কয়েকটি কবিতা। ভারবাহী,জড়,রুগ্ন,সমন্বয়কামী, উদ্দেশ্যবাদী কবিতা নয়। ওই কবিতাগুলো স্বচ্ছ,নির্ভার,প্রবহ, সতেজ সজাগ, সংযোগকামী কবিতা।কবির স্বগত সংলাপে-“শরতের নীল আকাশ, ফুলে ওঠা শাদা মেঘ,নিস্তাপ বাতাস,রূপোর মত শাদা রৌদ্রজ্জ্বল দিন- এইসব কবিতার লাইনে লাইনে রঙ ধরিয়েছে, এই কবিতাগুলো আনন্দ ও আশাকে রৌদ্রালোকের মত পান করেছে, এর রাত্রিগুলোও জোৎস্না খচিত।” তবে কি কবিতাগুলো হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে উৎসারিত? রোম্যান্টিকতার মখমল আবরণের সহজ সম্ভার? যেহেতু আবদুল মান্নান সৈয়্দ আচ্ছন্ন রোম্যান্টিক নন, বরং জটিল সমকালমুখী প্রাজ্ঞ আধুনিক, তাই তার কবিতাগুলি যা গ্রন্থিত হয়েছে “মাছ সিরিজ” নামক দুই মলাটের সবুজের ভিতর, তা হঠাৎ আবেগে প্রস্তুতকৃত রসায়ন নয়, বরং অভিজ্ঞতায় উৎসারিত,ধ্যানী,দৃঢ় জটিল সৌন্দর্য্যে বর্ণিল। “মাছ সিরিজ” গ্রন্থ হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৪ সালে; আবদুল মান্নান সৈয়দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের প্রায় বিশ বছর পর।এই বিশ বছরে তিনি আরো কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। “মাছ সিরিজ” এর কবিতাগুলো থেকে আলাদা তো বটেই,কোন কোন ক্ষেত্রে অভিনব। এটি একই সাথে বিস্ময় ও আনন্দের যে বিশ বছর পরেও কোন কবি লিখছেন পূর্বের থেকে অভিনব কবিতা, নিজেকে গড়ে তুলছেন নতুন জল ও হাওয়ায়, হয়ে উঠছেন নিরুপম গীতিময়। “মাছ সিরিজ” সৈয়দের কবিতা হিসেবেই নতুনতর তা নয়, সমগ্র আধুনিক বাংলা কবিতার প্রেক্ষিতে, বিশেষত বাংলাদেশের সাপেক্ষে যা পঞ্চাশের দশকে উত্থিত হয় এবং ষাটের দশকে উৎকর্ষিত হয়ে ঘরে তুলেছিল অভূতপূর্ব ফসল, সেই বিবেচনায় এটিকে আলাদা কাব্যগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করতে খুব প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় না।“মাছ সিরিজ” এর সমস্ত কবিতা জুড়েই রাজত্ব কছে চিত্র্কল্প, বাসা বেঁধে আছে গীতিময়তা এবং নিবিড় সংহত হয়ে আছে প্রতীকী ব্যঞ্জনায়। এই কবিতাগুলো মূখ্যত প্রতীকি কবিতা,তীব্রভাবে সংরক্ত অস্তিত্বমুখী কবিতা। এমন নয় যে শুধু মান্নান সৈয়দই লিখেছেন প্রতীকী ব্যঞ্জনায় মূর্ত কবিতা, আধুনিকতাবাদী বাংলা কবিতার বিকাশের প্রথম সম্রাটদের একজন, জীবনানন্দ দাশের কবিতায় রয়েছে তার আদিম স্ফূরন, বাংলাদেশে পরবর্তীতে পঞ্চাশের দশকে শহীদ কাদরী ও শামসুর রাহমানের কবিতায় যার অনেকখানি উপস্থিতি, এবং যা প্রভূতরূপে চর্চিত হয়েছে ষাটের দশকে সিকদার আমিনুল হক ও আরো কয়েকজনের কাব্যকীর্তিতে।এমন কি মান্নান সৈয়দ নিজ অস্তিত্ব ও চেতনার সহদররূপে অঙ্কিত করেছেন যে মাছের চিত্রকল্প, সেটাও বহুপূর্বেই লিপিবদ্ধ হতে দেখি বুদ্ধদেব বসুর “মাছ ধরা” নামক স্থির নীরব কবিতায়।কিন্তু এসব সত্ত্বেও, মান্নান সৈয়দের “মাছ সিরিজ” ব্যাতিক্রম। পূর্বোক্ত কবিতা অধিকাংশ সময়ে প্রতীকী অস্তিত্ব বিপন্ন, ভারী, বিষন্ন, শীতার্ত , বরফময়। সমকালীন সময়ের দন্দ্ব, জটাজটিল মানস, নিঃসঙ্গ হতাশার পঙক্তিমালা। সেখানে সৈয়দ শোনালেন সহজ গান, সহজ তবে তা সরল নয়, সংক্ষিপ্ত কিন্তু ক্ষুদ্র নয় , ঋজু অথচ পলকা নয়।কবি বহুদিন পর যেন খুলে দিলেন মায়াবী জানালা, পান করলেন অনেকখানি আলোক ও নীলিমা, শার্টে খচিত করে নিলেন রূপালী রাত্রির কোরাস। “মাছ সিরিজ” এর কবিতাগুলি আঘাত, গতি ও আবেগে চারপাশকে ব্যস্ত করে তোলে না চারপাশকে গুঞ্জরিত করে তাকায় নিজের প্রাচীন গভীরে, নিজের অভ্যন্তরের বিপুল ঐশ্বর্য্যময় খনিজে আবৃত হয়ে অনুভব করে মন্দ্রিত রহস্য। মাছ সিরিজ এর কবিতাগুলি খুব দীর্ঘ নয় কোনটিই। সবমিলে ২৬টি কবিতা আছে সেখানে। “মাছ” নাম্নী প্রথম কবিতাতেই আমরা প্রত্যক্ষ করি আদিম মাছের জন্ম “শহর ঘুমিয়ে আছে মধ্যরাত্রি। তারাভরা বিশাল আকাশ। দর্পনের মধ্য থেকে শুধু একটি উজ্জ্বল মাছ বেরিয়ে এসেছে শব্দহীন” -(মাছ) অস্তিত্বের কি দীপ্র সহজ প্রকাশ। “দর্পনের মধ্য থেকে” বেরিয়ে আসা এই শব্দহীন মাছ যে নিজেরই অস্তিত্বের নিঃশব্দ জাগরন তা অনায়াসেই ব্যক্ত হয়ে গেল।দর্পনের ভেতর থেকে,বস্তুত নিজেরই প্রতিরূপ থেকে জন্ম নিল আদি মাছ।তারপর?শব্দের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে সাংগীতিক কবি জানিয়ে দেন মাছের প্রগমন সংবাদ। “ওকে শুধু দেখছে আমার চোখ। নিঃশব্দে বলছে চোখঃ মাছ,তুমি হারুনার রশিদ, নিশিপোশাকে বেরিয়ে ঘুরেছ শহরময়- প্রাসাদে ও কূঁড়েঘরে। দেখেছ শূন্য জুড়ে তারাদের চাকা ঘুরে যায় মাছ তুমি চলেছ কোথায়?” -(মাছ) কবির চোখই শুধু দেখতে পাচ্ছে মাছেদের।কারন স্ব-অস্তিত্ব নিজের কাছেই প্রতিভাত হবে। আর কারো কাছে নয়।মাছেদের এই ভ্রমনও আর কিছু নয়, কবি’র সঞ্চরণশীল অস্তিত্বের পথপরিক্রমা। পরবর্তী কয়েকটি কবিতায়- “পাঁচ লাইন”,“ছয় লাইন”, “পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ”, “মধ্যরাতে বৃষ্টি”,ইত্যাদি কবিতাগুলোয় জলতরঙ্গের মত আমাদের কানে বাজে মাছেদের অপূর্ব প্রগমন,ছড়িয়ে পড়া নৈঃশব্দের উজ্জ্বল সঞ্চালন।এই কবিতাগুলোয় আঙ্গিকের আনন্দ আছে, তবে ভাষায় চাপিয়ে দেয়া বাহাদুরি নেই, অস্তিত্বের মতই সেটা নির্ভার, অনুভবের মতই আনন্দময়।“পাঁচ লাইন” ও “ছয় লাইন” কবিতায় কবি যথাক্রমে পাঁচ ও ছয়টি বাক্য ব্যবহার করে কবি নতুন ধরনের নীরিক্ষন করেছেন।শব্দ ও বাক্যের পুনরাবৃত্তিতে কবিতাগুলো গীতিময়,জনহীন বিরান প্রান্তরে অচেনা দূরের নীলাভ পাহাড় থেকে ভেসে আসে এমন নিঃশব্দ গান।কয়েকটি পঙক্তি উদ্ধৃত করা যাকঃ “শরীরের মাছগুলি আজ ভেসে গিয়েছে রহস্যে অসংখ্য পোস্টকার্ড আজ পড়ে আছে রাজপথে-পথে। শরীরের মাছগুলি আজ ভেসে গিয়েছে রহস্যে দীর্ঘ হচ্ছে স্ট্রিটগুলি- দীর্ঘ ও জটিল, ছায়াময়” -(পাঁচ লাইন) “শরতের মাছগুলি আজ ভেসে পড়েছে আকাশে নীল শূন্য, জিন্দাবাদ!গোপন বসন্ত,জিন্দাবাদ! শরতের মাছগুলি শূন্যের সমুদ্র থেকে আসে। নীল মেঘ জিন্দাবাদ! শাদা মেঘদল, জিন্দাবাদ!” -(ছয় লাইন) “পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ ঝর্ণা থেকে নেমে এসেছিল। এখন রহস্যময় জলে খেলা করে অবিরল। .......................................... পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ জলের রহস্য ভেদ করে এখন একাকী এক শব্দহীন সমুদ্রে চলেছে” -(পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ) “অঝর বৃষ্টিতে, রানি, ভেসে গেছে তোমার আনন। ইন্দ্রিয়ের মাছগুলি খলবল করে বেড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য, তোমার জলে। মধ্যরাতে স্বপ্নের মতন। যখন বৃষ্টি এলো,তালা দেওয়া অফিসে-অফিসে তখন অজস্র মাছ খেলা করে স্বপ্নের ভিতরে। উড়ন্ত ঘোড়ার মত মনে পড়ে তখন তোমাকে।” -(মধ্যরাতে বৃষ্টি) “উড়ন্ত ঘোড়ার মত” এই উপমায় ধ্বনিত এক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সুর।নিজের নিবিড় গোপন অনুভবে মিশ্রিত হয় “তোমাকে” মনে পড়ার ইন্দ্রজাল। কিন্তু মাছেদের এই বর্ণিল প্রগমন, অস্তিত্বের অন্তহীন প্রসারনের এই উৎসবই শেষ কথা নয়।কবি শুধু পরিযায়ী নন, তিনি উপলব্ধিশীল, বিশ্লেষনোম্মুখ। এখানেই রোম্যান্টিকের সাথে পার্থক্য আধুনিকের। আধুনিক কবি চেতনাকে সংহত করেন, তাতে নিমগ্ন হতে চান জীবাশ্মের মত নির্মোহ সতর্কতায়।“মাছ ধরা” কবিতায় আমরা পেয়ে যাই অস্তিত্বের শিকার কৌশলঃ- “এক ফোঁটা শব্দ করো না, শুধু হও মগ্ন, প্রাকৃতিক স্থির হও প্রতিচ্ছবি যেন মুখ দেখা যায় স্থির। বিশুদ্ধ দর্পনে ফোট নগ্ন-নারী, রৌদ্র ও বাতাস সর্বকোলাহলমুক্ত ফাৎনায় লক্ষ রাখো স্থির” -(মাছ ধরা) কিংবা জাল কবিতায়ঃ- “ছুঁড়েছি নিঃশব্দ জাল মাছের তদন্তে ভোর রাত্রি থেকে ঠাঁয় পানির ভিতরে। ছুঁড়েছি আচ্ছন্ন জাল স্বপ্নের তদন্তে। লাল-নীল মাছগুলি কলরোল করে” -(জাল) কিন্তু অস্তিত্বের এই অনুসন্ধান সহজ নয়। দূরন্ত গোপনচারিণী রমণীর মত সে কৌশলী। কেবলই সে গমনোম্মুখঃ- “বললাম হে হৃদয়! চলো যাই পরোক্ষে ঐখানে জীবনের আশ্চর্য মহল। সর্বকোলাহল্মুক্ত নিথর দুপুর একটি ফুলের মত ফুটে আছে ছুপে। মাছগুলি ভেসে যায়- দুরন্ত পিচ্ছিল মুহূর্তের চেয়ে দ্রুত কূট মাছগুলি যতবার ধরতে চাই ততবার মাছ হাত ফশকে চলে যায় পালায় বসন্তে।” -(চলো যাই পরোক্ষে) কিন্তু এই অভিজ্ঞতায় কবি দমে যান না। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কারন এই অনুসন্ধান, স্পর্শের প্রচেষ্টাই জীবন।উদ্দেশ্যহীনতার উদ্দেশ্য।অতএবঃ- “ব্যর্থ হল আমাদের কোঁচগুলি চাঁদ গেল মেঘের ভিতরে। কালো রাত্রিভোর তবু অবিরল চেষ্টা করে যাব।” -(মাছ মারা) অস্তিত্বের এইসব খেলার ভিতর ডুবে থেকে মান্নান সৈয়দ ফেরেন হয়ত জীবনে।অপসৃয়মান আলো ও অন্ধকার থেকে তিনি প্রকাশিত হন,কয়েকটি কবিতায় তাকে পাই শব্দমুখী আলোকিত ও দৃশ্যমান।“জিন্দাবাদ” “কল্পনা” “তুলকালাম জ্বর ছেড়ে যাবার পর” “বাহুবন্ধন উরুবন্ধন” “শরৎকাল” “টেরাকোটা ১৯৮২” এই কবিতাসূহ অনেক বেশী শব্দ,দৃশ্য ও পরিপার্শ্বময়।কবি জানেন, স্বীকার করে নেন অস্তিত্ব,চেতনা,পরিক্রমন এসবই সত্য কিন্তু চিরন্তন নয়। সব শেষে আমাদের প্রবাহ থামে। গভীর,ধুসর,কোমল,করুণ মহাকাল রোমশ বেড়ালের মত এসে দাঁড়ায়। অস্তিত্বের সমস্ত রাস্তাই চলে যায় “আশ্চর্য্ রাস্তায়”। “কবুতর ছিঁড়েখুঁড়ে তছনছ করছে বিড়াল। (বিড়াল কোথায় থাকো-পৃথিবীর নিঃশব্দ শয়তান?) চুকচুক শব্দ করে দুধ টেনে নিচ্ছে বিড়াল। শব্দহীন আসে।যায়।অনিবার্য।অনাক্রমণীয়” -(বিড়াল) অথবা রাস্তা কবিতায় অবধারিত বাক্যগুচ্ছঃ- “রাস্তা তুমি গিয়েছ কোথায়? -আমি গেছি কবরে,শ্মশানে। রাস্তা, তুমি কোথায় মিশেছ? -মিশে গেছি সন্ধ্যার আকাশে। রাস্তা, তুমি চলেছ কোথায়? - আমি যাচ্ছি আশ্চর্য রাস্তায়।।” -(রাস্তা) বর্ণ,শব্দ ও দৃশ্যময়তার অনুপম মিশ্রনে সৈয়দের লিখিত “শব্দ” ও “ভোর” কবিতাদুটো অশ্বত্থ গাছের মত ঐশ্বর্যময়। শব্দের মধ্যে জন্ম নেয় দৃশ্য, দৃশ্যকে অনুভব হয় শব্দে ওই কবিতা তাই শব্দদৃশ্যময়।বিশেষত “ভোর” কবিতাটি অসামান্য বর্ণিল কবিতা। বর্ণের সঙ্গে ধ্বনির,ধ্বনির সঙ্গে আলোর, আলোর সঙ্গে দৃশ্যের, দৃশ্যের সঙ্গে বস্তুর সম্মিলনে এক মহর্ষি অভিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা পাই এই কবিতাটিতে।একটি ছোট কবিতায় এতটা সৌন্দর্য ধরা পড়ে,এতটা আলো,রঙ আর বিস্ময় জমা থাকে, তা অকল্পনীয়।বাংলা কবিতায় এই কবিতার সমরূপ কবিতা বিরল,সম্ভবত বিরলতম।পুরো কবিতাটি পড়া যাকঃ- “কালো জানালা হচ্ছে গাঢ় নীল। (উল্টে আছে গভীর রমণী) গাঢ় নীল থেকে মৃদুনীল। (শ্রোণীঃসোনার ডিশের মত) মৃদু-নীল গোলাপী আগুন। (স্বর্গের ফলের মত স্তন।) গোলাপী আগুন থেকে ভোর! (জ্বলে যাচ্ছে হিরে জহরত।) কালো জানলা হয়ে ওঠে শাদা। (আশ্চর্যে পৌছেছি আলিবাবা!)” -(ভোর) ভোর হচ্ছে, অর্থাৎ জন্ম হচ্ছে অভিজ্ঞতার, আদিম সচেতনতার,রঙ থেকে পরিবর্তন হচ্ছে রঙের,প্রতিটি রঙের সাথে প্রকাশ হচ্ছে একেকটি দৃশ্যের।অবশেষে কালো রঙ শাদা হয়ে ওঠার পর জন্ম হল বিস্ময়কর অভিজ্ঞানের,বিস্মিত আলীবাবার মত। শিল্পকলার “এক্সপ্রেশেনিজম” বা প্রকাশবাদীতার অসামান্য উদাহরন রঙের এই পরিবর্তন।মৃদু থেকে বর্ণিল, বর্ণিল থেকে গাঢ় ও আলোকিত হয়ে ওঠা, শূন্য থেকে পৌঁছানো বস্তুর অভিজ্ঞতায়। প্রেম ও হৃদয়মুখী কয়েকটি কবিতাও রয়েছে “মাছ সিরিজ”-এ। “লাবণ্য”, “চৈত্ররাতে”, “তুমি” এই জাতীয় কবিতাগুচ্ছ দিয়ে সমাপ্তি ঘটে বইয়ের। শেষ সমর্পন কি তবে প্রেমের কাছেই?অথবা এই সমর্পন আসলে অস্তিত্বের নিজেরই প্রতিভাস, আত্মাহুতিতেই অনুভব করে পতঙ্গ- জীবন মনোরম। “গ্রেবাজ পায়রার মত বসন্তের বাতাসে উড়েছ কোন চিহ্ন রাখোনি আকাশে,শুধু নিয়ে গেছ দূরে, দূর থেকে দূরতরে।উড়ে গেছে আমার হৃদয় তোমার পায়ের চিহ্ন খুঁজে, তোমার একটি স্বর” -(তুমি) অস্তিত্বই আনন্দের উৎস, মাছ সিরিজ সেই আনন্দের পরিক্রমা। খন্ড কবিতায় এ এক স্মরণীয় সংযোজন।ভালো কবিতাও অনেক সময় বার বার পাঠ যোগ্য হয় না। “মাছ সিরিজ” বহুবার পাঠযোগ্য কবিতা। এর সমস্তটা বোঝা যায় না, কিন্তু সমস্তটা জুড়েই আক্রান্ত হয়ে থাকে পাঠক। আধুনিক বাংলা কবিতায় এমন সৌন্দর্য ও প্রাঞ্জলতার মিশ্রন ঘটিয়ে আবদুল মান্নান সৈয়দ একটি উদাহরন তৈরি করেছেন নিঃসন্দেহে। এই কবিতার কাঠামোটি ভারী নয়, তবে ভরাট। ধ্বনি,স্বর,শব্দ ও বাক্যের উল্লেখ, পুনরুল্লেখ,অমিল ও সমিল ছন্দে, তীক্ষ্ণ,কোমল,রঙিন ও রাঙানো প্রতীক ও চিত্রকল্পে, এই কবিতাগ্রন্থ এক অসামান্য পাঠ। এটি আমাদের জীবনকে সহ্য করে থাকার বদলে অনুভব করার আশ্বাস যোগায়। এই বই বহুদিন দুষ্প্রাপ্য ছিল। শুদ্ধস্বর বইটি প্রকাশ করে চমৎকার একটি কর্ম সম্পাদন করেছে। শিবু কুমার শীলের প্রচ্ছদও অসামান্য। “মাছ সিরিজ”-এর সর্বশেষ চার পঙক্তিতেই রয়েছে এর সারকথা- “পাখশাটে নেমে গেছ রহস্যের অতল ভিতরে (চলে গেছে তারপর অবিরল সংখ্যাহীন দিন) যে রহস্য ঘিরে দেয় মৃত্যু আর জীবন পাহারা রহস্যকে কেন্দ্রে রেখে আমি অবিরাম ঘূর্ণ্যমান”