User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
‘নদী তুমি দীর্ঘ অতি, নদী জীবন ঘাটে ঘাটে রাখিয়াছো অমূল্য রতন।’ গানে গানে চমকিত হওয়ার মতো চিরন্তন এক সত্য উপস্থাপিত হয়েছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে আবহমান বাংলার প্রাণভোমরা হলো নদীনদী কথা বলে, জীবনানন্দ দাশের ভাষায় ‘নদী তুমি কোন কথা কও ?’ নদী ও মানুষে একাত্ম হলেই বোধ করি জানা যায় সেই কথা। উত্তর প্রজন্মের কবি সৈয়দ শামসুল হক-এর জলেশ্বরীর দিনপত্রী যার অনুপম উদাহরণ। কুড়িগ্রামের এক নদীর বিশ্বভ্রমণের নির্মোহ কথন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতার চেনাধারা থেকে ব্যতিক্রম। জনয়িতা যেহেতু সাহিত্যিক, সব্যসাচিরূপে পরিগণিত। করোটি যাঁর সাংবাদিকসুলভ সহজাত দৃষ্টি, কৌতূহল, জিজ্ঞাসা ও বিশ্লেষণপ্রবণতায় ঋদ্ধ। সৃজনকর্ম তাই সাহিত্য-সাংবাদিকতার যুগপৎ রসায়নে উদ্ভাসিত। নিজস্ব ভাষা বোধ, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার রঙে রাঙায়িত। জলেশ্বরী দিনপত্রীতে প্রাক কথা কিংবা ভূমিকা কোনটিই নেই। ফ্ল্যাপেও নেই বিজ্ঞাপিত শব্দরাজি। লেখার নামকরণ-শিরোনামও অনুল্লেখ্য। সন-তারিখ নেই। সূত্র, টীকা, পাদটীকারও দেখা মেলে না। শুধু রয়েছে ক্রমমান। পাঠ আকর্ষণ ও আনন্দকে সহায়ক করতে এসব থাকা প্রয়োজন ছিল। বানান বিভ্রাটের যত্রতত্র উপস্থিতি পীড়াদায়ক, যা এড়ানো অনিবার্য ছিল। জলেশ্বরী বাংলাদেশকে ভালবেসে দিনপত্রীতে বিশ্বভ্রমণ করেছে। গুরু সদয় দত্ত যেমন বলেছেন: ‘বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ।’ শিকড় বাংলার মাটিতে রেখে লেখক ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন চষে বেড়িয়েছেন। প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে গিয়েছেন। বিষয়, কত রকমের উপস্থাপনে ঋদ্ধ হতে পারে ভাষার জাদুকরি খেলায়, শব্দের নিপাট বুননে সাধারণ প্রসঙ্গও কীভাবে অসাধারণ হয়ে ওঠে, তার দৃষ্টান্ত হলো জলেশ্বরীর দিনপত্রী। নদী যেমন মাঠ-ঘাট-পাহাড়-জনপদ পেরিয়ে সমুদ্রে একীভূত হয়। অপার আনন্দ ও কল্যাণব্রতে বিশ্বমাঝে ছড়িয়ে দেয়। জলেশ্বরীর দিনপত্রীও একই সত্যের ফানুস উড়িয়েছে। ‘ব্যক্তি’ হযে ওঠার কথা বলেছেন। ‘পেইন্টার’ কিংবা ‘রাইটার’ হওয়া-না হওয়ার শানে নজুল বয়ান করেছেন। সদ্যপ্রয়াত চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার কথা বলেছেন। কবি আবুল হোসেন বলেছেন। ১৫ আগস্ট ও বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছেন। এভাবে শুধু দেশ নয়, হাতের মুঠোয় ধারণ করেছেন পুরো বিশ্ব। যার মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, গুস্তাভ ফ্লবেয়ার, জালালউদ্দিন রুমি, শামসুর রাহমান, তলস্তয়, যুধিষ্ঠির, সাইয়িদ আতিকুল্লাহ, সত্যেন সেন প্রমুখ ব্যত্ত্বিও চরিত্রেরা। সৈয়দ শামসুল হকও উন্মোচিত হয়েছেন এই বইয়ে। কথা বলেছেন তাঁর নাটক, উপন্যাস, কবিতাসহ বিবিধ বিষয়ে। যাতে প্রতিভাত হয়েছে সৃজন যন্ত্রণা ও আনন্দের নির্মোহ নির্যাস। জলেশ্বরী দিনপত্রী বিশ্বভ্রমণের অপার আনন্দ ও অভিজ্ঞতায় স্নাত হওয়ার অভাবিত হওয়ার কৌশল বলে দেয়। রং-বেরঙের ঝাঁপি ও তার ভেতরের রসদ, মণি-মাণিক্যকে চেনাজানার সুযোগ করে দেয়, যার স্বত্বাধিকারী হলেন সৈয়দ শামসুল হক। যিনি নানাভাবে সমৃদ্ধ করছেন আমাদের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনকে। সব্যসাচী এই সৃজন কারিগরের সৃষ্ট সম্ভারে জলেশ্বরীর দিনপত্রী আরও একটি মাত্রা যোগ করেছে, যা অভিনব ও চেতনা উদ্দীপক।