User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
তথ্যবহুল।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা অক্টোবর রিভিউ-৬ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলেই প্রসঙ্গান্তরে চলে আসে সেই সময়ে জাতিসংঘের ভূমিকা কি ছিল। সেই বিচারে আশফাক হোসেনের নিষ্ঠ গবেষণাকর্মের ফসল ' মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জন্ম ও জাতিসংঘ ' শিরোনামের এই বই সত্যিই গুরুত্ববহ দলিলবিশেষ। ' বিষয় নির্বাচন ও গবেষণা পদ্ধতি' শীর্ষক ১ম অধ্যায় থেকেই বইটি মনোযোগ আকর্ষণ করতে থাকে। লেখক জানাচ্ছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘের ভূমিকা বিষয়ে মোট ৪ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোতে জাতিসংঘের প্রকৃত ভূমিকাগত চিত্র ও চরিত্র তুলে ধরা হয় নি। বইগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের জুলাই থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে। ঠিক এরই পরিণতিতে লেখকের এই বিস্তারিত গবেষণা গ্রন্থের রচনা, যাতে তুলে ধরা হয়েছে নিরপেক্ষে দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘের প্রকৃত চিত্রটি। ২য় অধ্যায়ে ' অভ্যন্তরীণ উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে যে স্বাধীন রাষ্ট্রের অভুদয় ঘটে' তা তুলে ধরা হয়েছে।তুলে ধরা হয়েছে তার স্বীকৃতর সমস্যাগুলো। ৩য় অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে জাতিসংঘের সম্পৃত্তির মাধ্যমে একাত্তরে ভারতে আশ্রিত এক কোটি শরণার্থীর মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়টি। ৪র্থ অধ্যায়টি ব্যাতিক্রম অধ্যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে প্রকাশ্যে আলোচনা না হলেও গোপন কূটনীতি চলেছে পুরোমাত্রায়। নিক্সন প্রশাসনের মুখ্য কুশীলব হেনরি কিসিঞ্জার ' আপন পছন্দসই ' একটি সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সর্ম্পক বজায় রেখে চলেন মুজিবনগর সরকারের দক্ষিণপন্থী অংশের নেতা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে। এ অধ্যায়ে আছে তার বিস্তারিত বিবরণ। ৫ম অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে মুজিবনগর সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে পরোক্ষভাবে সংঘটিত যোগাযোগের বিষয়টি। এটি দীর্ঘ অধ্যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল থেকে বেশকিছু পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এ বইয়ের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের চলমান ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের ভূমিকা সর্ম্পকে ওইসব পত্রিকার মতামত। ৭ম অধ্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ ড়াষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস যে কী গভীর নাটকীতায় ঠাসা ছিল এ অধ্যায়ের প্রতিটি উপ- অধ্যায়ের পাঠ তার জ্বলন্ত প্রমান। পরিশ্রমী, একাগ্র ও অখন্ড মনোযোগের অধিকারী গবেষক আশফাক হোসেন এ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে কম আলোচিত একটি অধ্যায়কে লোকচক্ষুর অন্তরাল থেকে আলোয় এনেছেন। তাঁকে অভিনন্দন। ভবিষ্যৎ এও তাঁর কাছ থেকে এমন কম আলোচিত বিষয় নিয়ে লেখা আশা করি। #বইয়ের নাম- মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জন্ম ও জাতিসংঘ লেখক : আশফাক হোসেন প্রকাশক : প্রথমা
Was this review helpful to you?
or
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের যুদ্ধ ছিল না। পাকিস্তানিরা প্রথম দিকে সারা বিশ্বের কাছে তাদের ‘অভ্যন্তরীণ’ ব্যাপার হিসেবে এটিকে জাহির করতে চাইলেও প্রকৃত সত্যটি ছিল অন্য রকম। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান—তিনটি দেশই সক্রিয়ভাবে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা তাদের নৃশংস গণহত্যার খবর বিশ্ববাসীর কাছে আড়াল করে রাখতে পারেনি। যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীব্যাপী। পৃথিবীর বৃহৎ পরাশক্তিগুলো দুই দিকে বিভক্ত হয়ে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে এ যুদ্ধে। অনেক দেশই তখন চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। এমনকি খোদ ভারতের একটি মহল বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে ভারতবর্ষের স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পশ্চিমবঙ্গেও অনুরূপ ব্যাপার ঘটতে পারে; তাছাড়া কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুর মতো জায়গাগুলোতে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। কিন্তু সেটি কেবল ভারতের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশের ভাবনা হয়ে ছিল। ভারতের সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিল। মুক্তিযুদ্ধ মূলত দুটি জায়গা থেকে চলছিল, প্রথম যুদ্ধটি ছিল দেশের অভ্যন্তরে, আর দ্বিতীয়টি মুজিবনগর সরকার কর্তৃক দেশের বাইরে থেকে কূটনৈতিক যুদ্ধ। বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জন্ম ও জাতিসংঘ বইটিতে প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের প্রাক্কালে জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র সে সময় কী ভূমিকা নিয়েছিল, তার রূপরেখা রয়েছে বইটিতে। ২০০২ সালে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও জাতিসংঘ। কিন্তু বইটি এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। বাংলা একাডেমীর বইটির পরিবর্ধিত ও সংশোধিত বইটিই হলো আমাদের বর্তমান আলোচ্য বই। একটি অধ্যায় এখানে সংযোজিত হয়েছে এবং একাধিক অধ্যায় পুনর্লিখন করা হয়েছে। এটি মূলত একটি গবেষণা গ্রন্থ। আগে এ বিষয়ে এমন পূর্ণাঙ্গ পুস্তক রচিত না হওয়ার কারণেই বর্তমান বইয়ের পরিকল্পনা করেন লেখক এবং নানা দলিলপত্র, বইপুস্তক থেকে এ গ্রন্থের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে নানা সেমিনার, আলোচনা ও বৈঠকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, লেখক তার একটি জবাবও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বইটিতে। জাতিসংঘের সাংগঠনিক কাঠামো, বিশেষ করে ভেটো প্রদানক্ষমতা কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে এটি নানা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না। তবু বিশ্ব রাজনীতিতে এ সংগঠনটির ভূমিকা নেহাত কম নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিসমূহ এবং জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি লাখ খানেক দলিলপত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেসব দলিলের মধ্য থেকে এযাবৎ অবমুক্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলিলের বিশ্লেষণের মাধ্যমে জাতিসংঘের ভূমিকার একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। বইটির প্রথম অধ্যায়ে গবেষণার বিষয় নির্বাচন ও তার পদ্ধতি সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দেওয়া হয়েছে। অখণ্ড পাকিস্তানে বাংলাদেশ একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হলেও বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র। উপরন্তু তারা ’৭১ সালের ২৫ মার্চ পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু করে। সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ আর তখন বাঙালিদের সামনে খোলা ছিল না। বর্তমান বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচনে চারটি বইয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার কোনোটিতেই বিষয়টি বিস্তারিত ও নিরপেক্ষভাবে ধরা দেয়নি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এখানে দেখানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কেন সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রাম নয়, কেন এটি ‘জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম’। তৃতীয় অধ্যায়ে শরণার্থী ইস্যুতে জাতিসংঘ, তার নানা সংস্থা, বৃহৎ শক্তি ও ভারতের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে নানা দিকের কূটনৈতিক কার্যক্রম ও জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া। মুজিবনগর সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যকার ঘটনাবলি বর্ণনা করা হয়েছে পঞ্চম অধ্যায়ে। সরকারের সেন্সরের বাইরে থাকা পত্রপত্রিকার দৃষ্টিতে জাতিসংঘের রূপটি তুলে ধরা হয়েছে ষষ্ঠ অধ্যায়ে। সপ্তম অধ্যায়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ ইস্যুতে বিতর্কের বিস্তারিত বলা হয়েছে। খুবই শ্রমসাধ্য এ বইটিতে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে। আগ্রহী পাঠকের কাছে বইটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।