User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসম কর্মকুশলতায় বিজ্ঞানের কঠিন থেকে কঠিনতর বিষয়কে সাধারণ মানুষের জন্য শব্দযোজনায় ও চিৎপ্রকর্ষতায় যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র বসাক। সৃষ্টিশীল আলোকিত মানুষ তৈরিতে মানুষের সুকুমার বৃত্তি ও সুপ্ত সম্ভাবনার উন্মেষ ঘটাতে অপরিহার্য 'বিজ্ঞান'কে সহজভাবে যে কোন মানুষের বোধগম্য করার জন্য প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র বসাকের অন্যান্য বইগুলোর মতো এই বইটিও একমেবাদ্বিতীয়াম। আত্মপলব্ধি, আত্মজাগরণ ও বোধোদয়ের বহুমুখী বিকাশের জন্যই সৃষ্টির উষালগ্ন থেকে মানুষ তার জীবন জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছে বিজ্ঞান থেকে। তাই লেখক বলেছেন "আমাদের আলোচনায় আমরাও অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে গোয়েন্দাগিরির মতো করেই সৌরজগতের জন্মরহস্য খুঁজব। জানিয়ে রাখা ভাল আমাদের এই পৃথিবীও কিন্তু সৌরজগতের অন্যতম গ্রহ, তাই সৌরজগতের জন্ম রহস্য উদ্ধার করতে পারলে বেচারা পৃথিবীর জন্মের ব্যাপারটাও জানতে পারবো।" প্রথম কিভাবে শুরু হয়েছিলো সৌরজগতের জন্মরহস্য উন্মোচনের চেষ্টা তা নিয়ে জমজমাট 'ঘটনার শুরু' থেকেই শুরু হবে আমাদের সৌরজগত যাত্রা। বইটির এই পর্যায়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সৌরজগতের বিশাল রহস্য ঘনীভূত হতে শুরু হবে এখানে। সৌরজগতের উৎপত্তির ব্যাপারে প্রথম উদ্যোক্তা জর্জ বুফোঁ কি বলেছিলেন পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে? কিন্তু তার মাত্র কয়েক বছর পরেই যে দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট একেবারে অন্যরকম এক তত্ত্ব দিলেন। লেখকের মতে "সৌরজগত নিয়ে যে দুই মতবাদ তার একটিকে বিপর্যয়বাদী মতবাদ এবং অন্যটিকে বিবর্তনবাদী মতবাদ বলা হয়।" তবে কে ঠিক কে ভুল? ১৮৬০ সালে ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল অংক কষে একটি তত্ত্বকে প্রায় পরিত্যক্ত করে দিলেন। কিন্তু ধোপে টিকলো না আরেকটি তত্ত্বও। তাই সৌরজগত সৃষ্টির রহস্য রহস্যই থেকে গেল। "পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে,গ্রহগুলি যা দিয়ে তৈরি তা কখনও সূর্য বা অন্য কোনও নক্ষত্রের অংশ ছিল না। তবে প্রশ্ন রয়ে গেল-সূর্য এবং গ্রহগুলি কি এক সঙ্গে তৈরি হয়েছে না কি সূর্য আগে গ্রহগুলি অনেক পরে?" এভাবে বহু তত্ত্বের সবই আস্তে আস্তে বাতিল হতে থাকে। অবশেষে বিবর্তনবাদের আলোকে সৌরজগতের সৃষ্টি রহস্যের একটা রূপরেখা তৈরি হলো। এবং পরিশেষে সৌরজগতের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচিত হলো। সুবিশাল গবেষণা ও বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ ফলাফলকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। লেখক এত জটিল বিষয় ব্যাখ্যা করার সময়েও মজা করতে ছাড়েননি "এতসব টানাপড়েনের কথায় ছোটদের মাথায় হয়তো টানাপড়েন শুরু হয়ে গেছে।" "সৌরজগতের মূল কেন্দ্র হচ্ছে সূর্য। সূর্য় ও গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে যদি একটি পরিবার হয় তাহলে সেই পরিবারের অভিভাবক বা কর্তা হলো সূর্য। " বইটি পড়তে পড়তে নিজেকে সৌর পরিবারের সদস্য ভাবতে ভালই লাগে। সূর্যগ্রহণ নিয়ে কৌতুহলী মানুষের কৌতুহলও মিটবে এখানে। "পাথফাইন্ডার"। মঙ্গল গ্রহের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এই মহাকাশযানের মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করার ঘটনা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ সাফল্য। সৌরজগত নিয়ে পড়ার সময় অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সৌরকলঙ্ক কি? সৌরকলঙ্কগুলি কালো দেখায় কেন? বইয়ের এই অংশে সৌরকলঙ্ক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে জানা যাবে। প্রথম কোন নভোযান সৌরমন্ডলের দূরতম গ্রহের সন্ধানে গিয়েছিলো? কবেই বা গিয়েছিলো? কি ছিল এর অভীষ্ট লক্ষ্য? এভাবেই ভয়েজার-২ এর উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে তার গতিপথ, চারটি সর্ববৃহৎ গ্রহ অভিযানের অসাধারণ সাফল্যের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যাবে এখানে। লেখকের ভাষায়,"ইউরেনাস ও নেপচুন সূর্য থেকে এত দূরে যে এদের পর্যবেক্ষণ করার কোনও প্রকল্প পূর্বে নেয়া সম্ভব হয়নি। এই প্রথম ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ এবং এদের উপগ্রহ সম্পর্কে তথ্য ও বিশ্বস্ত আলোকচিত্র সংগৃহীত হল যা জ্যোতির্বিদগণের এক অমূল্য সম্পদ।" ভয়েজার-২ মহাকাশযানে কোন মানুষ ছিল না। নিয়ন্ত্রণের জন্য ছিল ছয়টি কম্পিউটার। এত সতর্ক ও নিপুণ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিভ্রাট এসেছিলো এবং সমাধানও পাওয়া গিয়েছিলো সহজেই। ১৭৮১ সালে ইউরেনাস আবিষ্কৃত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গণনা করে বের করলেন ইউরেনাসকে কখন কোথায় কবে দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেল হিসাব মত সবকিছু ঘটছে না। "মাঝে মাঝে ইউরেনাস তার নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকছে। বিচ্যুতির পরিমাণ খুব বেশি নয় আবার অবহেলারও নয়। কেন এমনটি হচ্ছে, তার কারণ তাঁরা বের করতে পারলেন না।" আশ্চর্যজনকভাবে এই ত্রুটি বিচ্যুতির হিসাবেই ধরা পড়ে নেপচুন। তাই লেখক বলেছেন,"নেপচুন ধরা পড়েছিলো দৃষ্টিতে নয় বুদ্ধিতে।" বিগ ব্যাং এর নাম শোনেননি এরকম মানুষ পাওয়া মুশকিল। কিন্তু বিগ ব্যাং তত্ত্বের সমালোচনা করা হয়েছে কিংবা তার প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্বগুলো আলোচনা করা হয়েছে এরকম খুব কম বইতেই পাওয়া যায়। বিগ ব্যাং তত্ত্ব, এর সমস্যা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্বগুলো আলোচনা করা হয়েছে এখানে। অন্যগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী নয় এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি নিয়ে এই পর্যন্ত সাইন্স ফিকশনও লেখা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু কেউ যদি সত্যিটা জানতে চান তাহলে পড়তে হবে এই বইটি। পরিশেষে দ্ব্যর্থহীন ভাষার বলা যায়, মনের সমস্ত সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে জীবনকে আলোকাভিসারী বা মণিময় অলঙ্কারে বিভূষিত করে তোলার জন্য বিজ্ঞানচর্চা আবশ্যক। তাই বিজ্ঞানের বই মানেই সুখপাঠ্য নয়-এই ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এখনই।