User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মাহবুবুল হক, বাংলা বানান নিয়ে গবেষণা করেন। সন্নিষ্ঠ গবেষণায় তিনি দুরূহ এক কাজ সম্পাদন করেছেন। নজরুল তারিখ অভিধান নামের বইটি বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় নজরুলের ব্যক্তিজীবন ও কর্ম নিয়ে অজস্র বই প্রকাশিত হলেও এ ধরনের বই নেই। মাহবুবুল হক এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বইটির সূচিপত্র হলো—ভূমিকা; নজরুলের জীবন ও কর্ম, রচনা ও প্রকাশনা; রচনাপঞ্জি; নির্ঘণ্ট। যেকোনো ব্যক্তিত্বের তারিখ অভিধান রচনা করা দুঃসাধ্য একটি কাজ। ব্যক্তিত্ব যদি হন নজরুল, তাহলে তা আরও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। কেননা তাঁর জীবন বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বিচিত্রতায় ভাস্বর। বহুমুখী প্রতিভার বিরলপ্রজ এক সাহিত্যিক ছিলেন তিনি। বোহেমিয়ান জীবনে ছিলেন অভ্যস্ত। সংগ্রহ, সংরক্ষণের কোনো প্রয়াস ছিল না তাঁর। তাঁকে নিয়ে কিংবদন্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গালগল্পও প্রচুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অথচ তাঁর জীবন ও কর্মকে দিন, মাস, সনের হিসাবে সুচারুরূপে গ্রন্থবদ্ধ করেছেন মাহবুবুল হক। এ কাজ যে কতটা শ্রমসাপেক্ষ, তা বইটির নিবিড় পাঠেই কেবল উপলব্ধি করা সম্ভব। গবেষক নানাভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। কখনো কখনো একই বিষয়ের একাধিক দিন, তারিখ এসেছে—সে ক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় যেটিকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন, সেটিকে গ্রহণ করেছেন। গবেষকের মতে, ‘নজরুলের জীবনপঞ্জি রচনার ক্ষেত্রে তারিখ সমস্যা একটা বড় সমস্যা। এ ব্যাপারে সংশয় ও বিভ্রান্তি অনেক। যেমন, নজরুলের জন্মতারিখ নিয়ে দীর্ঘদিন আমরা সংশয়াচ্ছন্ন থেকেছি। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে অনেক।’ এসব বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মতামত প্রদান, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা নজরুলকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আগামী দিনের গবেষকদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সন-তারিখের আলোকে এই বই পাঠ করতে করতে আমরা নজরুলের জীবন ও কর্মের একটা নির্যাস খুঁজে পাই। যাপিত জীবনে কেমন ছিলেন নজরুল আর কেমন ছিল তাঁর সময়কাল, তাঁকে ঘিরে ভেতরে-বাইরে যে বৃত্ত ও বলয় গড়ে উঠেছিল, তার স্বরূপই বা কেমন ছিল—এসবের অনেক কিছু আমরা জানার সুযোগ পাই এই বইয়ে। নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুর দিন-তারিখ দিয়ে শুরু ও শেষ হয়েছে এই বই। বইটিতে বেশ কিছু ছবিও সংযোজন করেছেন গবেষক, যা বইটির প্রামাণ্যরূপকে আরও বেশি গ্রহণীয় ও বাস্তবসম্মত করেছে। ‘অসুস্থ প্রমীলা দেবীর শয্যাপার্শ্বে বসে থাকতেন সম্বিতহারা কবি।’—এই ছবি আমাদের বারবার স্পর্শ করে। ‘কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানীতে। ছবিতে দাঁড়িয়ে ধীরেন দাস, নজরুল, আঙ্গুরবালা, তুলসী লাহিড়ী, রাসবিহারী শীল। বসে: ভগবত ব্যানার্জি’—এই ছবি আমাদের অবহিত করে সংগীতাঙ্গনে নজরলের ঋদ্ধ পদচারণ সম্পর্কে। নজরুল তারিখ অভিধান পাখির দৃষ্টি দিয়ে নজরুলের জীবন ও কর্মকে দেখেছে, যা বইটিকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে। নজরুল-সম্পর্কিত অন্যান্য বই যেকোনো একটি বিষয়কেন্দ্রিক, যা নজরুলের সামগ্রিকতা ধারণ করে না। এই বই তার বৈশিষ্ট্যগুণে সেই সীমাবদ্ধতার গণ্ডি পেরিয়ে বিশিষ্টতায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে নজরুলের প্রায় সমগ্র দিকই নির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়ে উঠেছে। যেমন: সেপ্টেম্বর ১৯২৮-এ লেখা হয়েছে—নজরুলের স্বকণ্ঠে প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। তা ছিল ‘নারী’ কবিতার আবৃত্তি। রেকর্ডিং হয় ১৯২৮ সালের জুন-জুলাইয়ে। একই সঙ্গে রেকর্ডে কে মল্লিকের কণ্ঠে ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’ ও ‘আমায় চোখ ইশারায় ডাক দিল কে’ মুক্তি পায় (রেকর্ড নম্বর পি ১১৫২০)। জুন ১৯৬৯-এ আবার পুনঃপ্রকাশিত হয় (রেকর্ড নম্বর এন ৮৩৩১৫)। এভাবে এই বই নজরুলবিষয়ক একটি আকর গ্রন্থের যাবতীয় দিক ধারণ করেছে, যা নজরুল ও তাঁর সময়কে নিয়ে আগ্রহী যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি আবশ্যক ও প্রশংসাযোগ্য গবেষণা কর্মের মহিমা ও মর্যাদায় উত্তীর্ণ হওয়ার দাবি রাখে।