User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এটা কি দুই ক্ষন্ড
Was this review helpful to you?
or
‘উনিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের চিন্তা ও চেতনার ধারা’ গ্রন্থ পর্যালোচনা গ্রন্থাকার: ড. ওয়াকিল আহমদ প্রকাশক: বাংলা একাডেমী, ঢাকা। প্রথম প্রকাশঃ বৈশাখ ১৩৯০/ এপ্রিল ১৯৮৩ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৬৮০ ১৮৫৭ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলার মুসলমান কবি-সাহিত্যিক ও চিস্তানায়ক সাহিত্যক্ষেত্রে ও সমাজকর্মে যে ভূমিকা রেখেছেন তা আলোচ্য গ্রন্থে বিস্তৃতভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে। এ কারণে এ গ্রন্থের পর্যালোচনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। মূলত এটি ডি.লিট. অভিসন্দর্ভ। লেখক ‘বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য রচনায় সমকালীন চিন্তার স্বরূপ(১৮৫৭-১৯০৫) শিরোনামে অভিসন্দর্ভটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন এবং ১৯৮০ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রী লাভ করেন। গ্রন্থটির বৈশিষ্ট্য: গ্রন্থটি একাটি নিরিক্ষাধর্মী ইতিহাস গ্রন্থ। এর প্রতিটি বিষয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক উপাত্ত,তথ্য ও ঘটনা। সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের কর্ম, মত, দর্শন ও তাঁদের জীবনী এবং কো্ন কো্ন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিষয় আলোচিত হয়েছে। ।এর মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিস্কার চিত্র ফুটে উঠেছে। সমাজ পরিবর্তনে যেসব উপাদান ভূমিকা রাখে তা এ গ্রন্থে সুবিন্নস্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সমকালীন বাঙালি মুসলমান যারা দুই বাংলার অধিবাসী ছিলেন তাদের মানষ, চিন্তার ধারা , বিশ্বাস , সংস্কৃতি, আচার ,মূল্যবোধ, সাহিত্যদর্শন, সমাজ চিন্তা, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে এবং এ গ্রন্থে সংখ্যাগড়িষ্ঠ হিন্দুদের সাথে তৎকালীন মুসলমানদের চিন্তাধারার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আঙ্গীক বিবেচনায় এটি প্রবন্ধগ্রন্থ। প্রকাশভঙ্গী গদ্য চলিত রীতিতে। তবে উদাহরণ হিসেবে অজস্র কবিতা এসেছে। সহজ, সাবলিল, অধুনিক ও প্রচলিত শব্দচয়ন পাঠকের জন্য গ্রন্থটি সহজবোধ্য করে তুলেছে। বিষয়বস্তু উপস্থাপনায় সাফল্য: বিষয়বস্তু যাই হোকনা কেন লেখকের উপস্থাপনার দক্ষতায় কঠিন বিষয়ও পাঠকের কাছে খুব সহজে ধরা দেয় আবার দুর্বল উপস্থাপনায় খুব সহজ বিষয়ও পাঠকের কাছে কঠিন ও দুর্বোদ্ধ মনে হয় । তাই কোন গ্রন্থ পযালোচনায় বিষয়বন্তু উপস্থাপনায় সাফল্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ড. ওয়াকিল আহমদ একজন প্রথিতযশা লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক । তার লিখনী, বিষয়বস্তু নির্বাচন, বিন্যাস ও উপস্থাপনায় সাফল্য ও স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। অলোচ্য গ্রন্থের বিষয়বস্তু ব্যাপক,বিস্তৃত ও জটিল হলেও সাবলীল প্রকাশগুণে সহজ ও চেনাজানা মনে হয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব হতে শুরু করে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ পর্যন্ত সময়কালে বাংলার মুসলমানদের চিন্তা ও চেতনার গতিপ্রবাহ এই গ্রন্থে উপস্থাপন করা হয়েছে যা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ । তবুও লেখক পাঠককে সহজে ও সাধারণ ভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। অধ্যায়ে বিষয়বস্তু নির্বাচন ও ধারাবাহিকতা অত্যন্ত যুক্তিসংগত । অধ্যায়ের শিরোনাম পাঠককে আকৃষ্ট করে । প্রতিটি অধ্যায়কে আবার উপ অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে । এতে পাঠকের হাতে সময় কম থাকলেও তার আগ্রহের বিষয় সহজেই বেছে নিতে পারেন । লেখক যেমন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি ও গবেষকের কথা মাথায় রেখেছেন তেমনি সাধারণ পাঠকের কথা বিবেচনায় রেখেছে সন্দেহ নেই। এটি ইতিহাস গ্রন্থ হলেও অজস্র উদ্বৃতি, কবিতা ও ভাষাশৈলী যে কোন পাঠককে সাহিত্য রসে তৃপ্ত করে । অজস্র পাদটিকা ঘটনাকে বিশ্বস্ত করে তুলেছে। বিষয়বস্তু পর্যালোচনা: প্রথম আধ্যায়ের ‘পটভূমিকা’য় বাংলার মুসলমান সমাজের গঠন রূপ ও গতিপ্রকৃতিসম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করার জন্য আলোচনা সমাজের গোরাপত্তন থেকে লেখক শুরুকরেছেন। এখানে বাঙালি-মুসলমান-মুসলমান বাঙালির ক্রমবিকাশ এবং সমাজে আধুনিকতার পত্তন বর্ণিত হয়েছে। উনবিংশ শতাব্দির যুগধর্মের বৈশিষ্ট্য ও সেই সুত্রে সমাজের অবস্থা ও সমাজ মানসের রূপ রূপান্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অলোচ্য সময়ের পূর্বের চিত্র পাঠকের সামনে তুলেধরা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের দুটি অংশে- ‘ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব’ এবং সভা সমিতি’। যুগের পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে কবি সাহিত্যিক ব্যতিত আর যেসব চিস্তা নায়ক সমাজ কর্মি ব্যক্তিগত ভাবে সমাজ গঠনে অংশ নিয়েছিলেন সে সব গণ্যমান্য ব্যক্তির জীবন ও কর্মধারা নিয়ে প্রথম অংশ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যৌথভাবে ঐ কর্মে জড়িত ছিলেন সেসবের ধারাবাহিক বিবরণ নিয়ে দ্বিতীয় অংশ রচিত হয়েছে । মুসলমান জমিদার ও নব্যশিক্ষিত ব্যক্তিদের নামের শিরোনামে তাদের অবদান, কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও সমাজের প্রতি তাদের প্রতিশ্রতি ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। এ অধ্যায়ের দ্বিতীয় অংশে সভাসমিতি শিরোনামে মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত নানাশ্রেণীর সভা-সংঘ-ক্লাব-সমিতি-আঞ্জুমান এর নেতৃত্বদান ও কর্মকান্ড বিধৃত হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়েরও দুটি অংশ- ‘সাহিত্য ও সাহিত্যিক’ও ‘পত্র পত্রিকা’ । এইপর্বে মুসলমান সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । এখানে ‘প্রধান’ ও ‘অপ্রধান’ এরূপ দুটি উপবিভাগ করে সকল সাহিত্যিক ও তাদের সব রচনা একত্রে বিবেচনায় এনে আলোচিত হয়েছে । যেমন মীর মশারর হোসেন, কায়কোবাদ, রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন , কাজী ইমদাদুল হক এর মত প্রধান লেখকদের আলোচনায় এসেছে ব্যাপকভাবে। সমকালীন চিন্তার স্বরূপ শিরোনামে চতুর্থ অধ্যায়টি এই গ্রন্থের সবচেয়ে সারবাহী অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবিদার । ‘ধর্ম’, ‘সমাজ’, ‘শিক্ষা’, ও ‘ভাষা ও সাহিত্য’ এই চারটি ধারায় সাজিয়ে শিল্প-সাহিত্য রচনায় ও অন্যান্য কর্মে বাঙালি মুসলমানের যেসব চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা প্রকাশিত হয়েছে , সেসব কার্যকারণ সূত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং মুসলিম মানষের সামগ্রিক গতি প্রকৃতির স্বরূপ নিরূপণ করা হয়েছে। উপসংহারে টানা হয়েছে গোটা গ্রন্থের সারাংশ । মুসলমান বাঙালির ক্রমবিকাশ-উত্তরণ-উন্নয়ন-অগ্রগতি-রূপান্তরের ইতিবৃত্ত সংক্ষেপে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থের উপযোগিতা: গ্রন্থ বেঁচে থাকে তার প্রয়োজনীয়তার ওপর । মানুষের কল্যাণে ও প্রয়োজন সাধনে কতটুকু কার্যকর ও উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারে তার ওপর নির্ভর করে গ্রন্থের উপযোগিতা। এ বিবেচনায় বাঙালি মুসলমান ও তার ক্রমবিকাশের ধারা জানতে হলে ও অনুধাবন করতে হলে আলোচ্য গ্রন্থটি অবশ্য পাঠ্য। বাংলাদেশে যে সুদীর্ঘকাল যাবত বাঙালি মুসলমান বসবাস করে আসছে সেই ইতিহাসের একটি অংশ ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের ঘটনাপ্রবাহ, চেতনা ইত্যাদি বিশেষ করে মুসলমানদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক- সাহিত্যিক মূল্যবোধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ গ্রন্থ পাঠে পূর্ণতা আসবে। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে , গবেষণা কাজে, সমাজবিজ্ঞানী, জ্ঞানপিপাসু , আনুসন্ধীৎসু পাঠককে তৃপ্ত করতে এমন গ্রন্থ বাংলা ভাষায় খুব বেশী রচিত হয়নি। বিশেষকরে ইতিহস-সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক, সাহিত্য শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয় শিক্ষকদের জ্ঞানের পরিধি ও প্রয়োজন মিটাতে গ্রন্থটি সমর্থ । দিন যত অতিবাহিত হবে, উনিশ শতক যত দূরে যাবে এ গ্রন্থ ততই মূল্যবান হবে, প্রয়োজনীয় হবে- মুসলমান মানষ বুঝতে সহায়ক হবে । গ্রন্থ পর্যলোচনা: উনিশ শতক বাঙালি মুসলমানদের জন্য আত্নচেতনার সময় বলে বিবেচনা করা যায় । এ সময় বাঙলার মুসলিম সমাজ নানা ভাবদ্বন্দ্ব ও আন্দোলনের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হয়েছে। সমাজ সচেতনতা যেমন বেড়েছে আবার জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটেছে। জাতীয়তাবোধ ক্রমাগত সংহত হয়েছে। বাংলায় মুসলমানদের আগমনণ ঘটার সাথে ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসার ঘটতে থাকে। শাসন ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায় । কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে যে পরাজয় সংঘটিত হয় তা মুসলমানদের হতাশ করে । ফলে প্রায় একশ বছর জাতীয়তাবোধ চেতনা এলোমেলো পথে প্রবাহিত হয় । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ থেকে মুসলিম মানষে এক ধরণের প্রতিষ্ঠালাভের আকাঙ্খা সৃষ্টি হয় । এ চেতনাকে এগিয়ে নিতে তৎকালীন লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, ধর্মনেতা, বক্তা কখন এককভাবে, কখন যৌথভাবে সমাজ শিক্ষা, ধর্ম, ভাষা সাহিত্য ও রাজনীতি প্রধানত এই পাঁচটি ধারায় তাদের চিন্তা ও চেতনাকে নিয়োজিত করেছিলেন- যা অত্র গ্রন্থে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়েছে। গোটা গ্রন্থের মূল বক্তব্য, আলোচনার সারবস্তু, মোটাদাগেসিদ্ধান্ত ইত্যাদি আত্যন্ত সংক্ষেপে ছোটছোট প্যারায় উপসংহারে আলোচিত হয়েছে। লেখ এখানে তার চূড়ান্ত বক্তব্য তুলে ধরেছেন । পাঠক চাইলে সহজেই উপসংহার পাঠ করে একটি প্রাথমিক ধারণা লাভ করতে পারবেন। গ্রন্থ সমালোচনা: গ্রন্থটি অত্যন্ত উচুঁ মানের । লিখনি ও বর্ণনার ধারা গতানুগতিক হলেও লেখব মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে উনিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের চিন্তা ও চেতনার ধারা গ্রন্থাটি রচিত বলে এর পড়তে পড়তে উদ্ধৃতি ও তথ্যের উৎস উল্লেখ করা হয়েছে। যা সাধারণ পাঠকের ধৈর্যচ্যূতির কারণ হতে পারে । আকার বিবেচনায় একটু বড় । ফলে পাঠককে আনেক সময় নিয়ে পড়তে হয় । একটি বড় আকারের পরিশিষ্ট সংযুক্ত করা হয়েছে যা হয়তো গবেষকের নিকট মূল্যবান হলেও সাধারণ পাঠকের জন্য তেমন গুরুত্ব বহন করেনা। যে সময়কে এ গ্রস্থে ধরা হয়েছে সেই সময়ের মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে যে বিভেদ , দূরত্ব, দ্বন্দ্ব ও চেতনাগত পার্থক্য ছিল তা বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে। এ ক্ষেত্রে লেখক আরও স্পষ্ট করতে পারতে। উপসংহার: বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ যে সকল উপাদানের উপর ভিত্তিকরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বাঙালি মুসলমান জাতীয়তাবাদ থেকে উৎসারিত। এই গ্রন্থে আলোচিত সময়ে এ জাতীয়তাবাদ দানা বাধতে শুরু করে ক্রমান্বয়ে মুসলিম নবজাগরণের সূচনা করে । এ গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে উনিশ শতকের মুসলমান সমাজ-সংস্কৃতি- সাহিত্যও সাহিত্যিক প্রসঙ্গে একটি স্পষ্ট ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছি । এই গ্রন্থের পর্যালোচনা করতে যে সময় ব্যায় করা প্রয়োজন ছিল তা সঙ্গত কারণেই দেয়া সম্ভব হয়নি । তদূপরি এ কাজটি করতে গিয়ে যেভাবে গ্রন্থটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হয়েছে তা জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মুক্ত করেছে ।