User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Mehedi Manik

      16 Dec 2019 02:17 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      শাকের "উত্তম পুরুষ" উপন্যাসের প্রধান চরিত্রে। উপন্যাসের নামের মতোই উপন্যাসটি বিবৃত হয়েছে উত্তম পুরুষে- শাকেরের ভাষ্যে। শাকের এমন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে যখন বাংলা দুর্ভিক্ষ ও দাঙ্গায় ভারাক্রান্ত। দেশভাগের ক্ষণিক কাল আগের প্রেক্ষাপটে বিবৃত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের এক মুসলিম ছেলের মুখে। মুসলিম শব্দটা এখানে উঠে এসেছে কারণ তখন হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে শাকেরের বাস। শাকেরের সঙ্গে অধিকাংশ হিন্দু বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব থাকলেও শাকের বুঝতে পারতো সংখ্যালঘুর প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠের একটা অবজ্ঞা ও বিদ্বেষমূলক ভাব বেরিয়ে আসতো। এমনটা দেখা যায় ডিকে অর্থাৎ দিলীপ কুমার ও সলিলের কথাবার্তায়। এছাড়া আরো দেখা যায়- পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ একটা কাঠামো। এ কাঠামোতেই শাকেরের সাথে পরিচয় সেলিনার। সেলিনা হলো শাকেরের বন্ধু মুশতাকের বড় বোন। সেলিনা ও শাকেরের মধ্যেই উপন্যাসের মূল চমক ও নাটকীয় অংশটুকু ঘটে যায়। ছোট্ট উপন্যাস। জানতে হলে সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন। আর হ্যাঁ এই উপন্যাসটির একটি ঐতিহাসিক মূল্যও রয়েছে। কারণ এটি দেশভাগের সময়কার হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের একটি খন্ড চিত্রকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।

      By Amirul Abedin Akash

      09 Nov 2019 03:42 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ছোটবেলাকার সময়টা ছিলো অদ্ভুত। মধ্যবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো স্বভাবগত দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়নি। সেই পাড়ার মাঠ তখন খুব একটা দূর্লভ কিছু না। বরং পাড়ার মাঠে গেলে কোন বল কার, কে মাঠের কোন জায়গা থেকে বল লাথি দিচ্ছে, কার দিকেই বা দিচ্ছে সেই হিসেব থাকতোনা৷ এর মাঝে একটু বেখেয়ালি বড়লোক বন্ধু থাকতো, যারা খুবই আপডেটেড আর টিপটপ থাকতে ভালোবাসতো। সেই বন্ধুকে পুরোপুরি যেমন মেনে নেয়া যেতোনা আবার এড়িয়ে যাওয়াও সহজ ছিলোনা। . কথা হচ্ছিলো রশীদ করিমের 'উত্তম পুরুষ' উপন্যাসটি নিয়ে৷ বহুদিন ধরে বইটার নাম মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। একে ত নামটা দারুন, তার উপর উত্তম পুরুষে লেখা গল্পগুলোকে আমি নিজেকে নায়কের আসনে বসিয়ে দিতে পারি। উত্তম পুরুষে লিখা গল্পগুলো অনেকটা নিজেকে ছিড়েখুড়ে বিশ্লেষন করার মত। যাহোক, রশীদ করিমের প্রথম উপন্যাস 'উত্তম পুরুষ'। উত্তম পুরুষকে খুবই উচুমানের উপন্যাস বলে বিশ্লেষকরা রায় দিতে নাই পারেন। কিন্তু আঙ্গিক এবং গল্প বলার ভঙ্গি যে মজলিশি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ত পুরো গল্পটা আর কি বলব? গল্পের নায়ক শাকের যার জবানীতে আমরা তার সাদামাটা জীবনের বর্ননা দেখবো। সেই শাকেরের বন্ধু মুশতাক যার পরিবার কিনা উচ্চবিত্ত৷ মুশতাকের এই পরিবারকে ঘিরেই শাকেরের জীবনের অনেকটা আবর্তিত হবে৷ আর এই আবর্তনটাই এই উপন্যাসের মুল অনুষঙ্গ। হয়ত প্রথম দেখাতে এবং পুরো উপন্যাস পড়ার মধ্যবর্তী সময়টাতে এই বিষয়টা পুরোপুরি চোখে পরবে না। কিন্তু সেলিনার (মুশতাকের বোন) সাথে শাকেরের যে ভাসমান সম্পর্ক তার রেশটা শেষ পর্যন্ত আমাদের কিছুটা উত্তেজনায় রেখে দেয়। তবে এই উপন্যাসটি অনেকটা আত্নবিশ্লেষন করার ভূমিকা পালন করে। শাকের নিজেকে, তার চারপাশের বর্ননা এমনকি পারিবারিক বর্ননার মাধ্যমে বরং বারবার নিজের অবস্থানকে বিচার করতে চায়। হয়ত একজন পাঠক গল্পের তাগিদে পড়লে বিষয়টা লক্ষ্য করবেনই না। তবে এটুকু সত্য, আমার তাই মনে হয়েছে। শাকেরের বাল্যজীবনের বর্ননাটি অবশ্যই হৃদয়স্পর্শী। কারন সেই সময়ের স্ট্রাগলের বর্ননার সময় লেখক যে টেকনিক অবলম্বন করেছেন সেখানে যেন একদম নিজের মনের সবিস্তার ঘটনা আর আবেগকে প্রকাশ করে দিচ্ছে। কিন্তু একটু বড় হতেই শাকের একটু চাপা হয়ে যায়। তখন লেখক বর্ননার সময় তার মনের আবেগ, ক্ষোভগুলোর বর্ননা দিচ্ছিলেন না। এই জিনিসটা আমি লক্ষ্য করেছি। যেন একজন মানুষ যখন নিজের জীবনের গল্প বলে চলেছেন তখন সবিস্তারে বাল্যকালের মিঠেকড়া অনুভূতির বর্ননা করতেই পারেন, কিন্তু বয়স হওয়ার সাথে সাথেই পরিনত এবং নিজেকে চাপা রাখার প্রবনতাটুকু পাঠকের চোখ এড়াবে না৷ আমি এখন পড়লে উপন্যাসটিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করি। জানি কাজটা সহজ না এবং ভুল হতেও পারে। এই উপন্যাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মানুষদের ড্যামকেয়ার ভাব এবং তরুনদের মধ্যকার চাপা স্বভাবটুকুর বর্ননা আছে। আছে সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মীয় গোড়ামি। অর্থাভাব, সামাজিক অসঙ্গতি এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন, যুক্তি, রাষ্ট্রের অর্থবহতা একইসাথে প্রেম নানা বিষয় তুলে এসেছে। তবে শাকের কিভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বা এর পক্ষে তার অবস্থান লেখক অসবিস্তারে বর্ননা করেন নি। যেন এই বিশ্বাস তার বহুদিনের। এই বিশ্বাসকে সে আকড়ে ধরতে চায়। তার যুক্তিতে সেটা খুবই আকর্ষনীয় মনে হয়। উত্তম পুরুষ আমার পড়া অন্যতম ভালো একটি উপন্যাস৷ পুরো উপন্যাসটিই সুখপাঠ্য। আয়তন বেশি না। মাত্র ১৩০ পৃষ্ঠা৷ কিন্তু দারুন।

      By Mahmudur Rahman

      28 Sep 2018 02:42 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      যিনি বলেন, তিনিই উত্তম পুরুষ। ব্যকরণের সংজ্ঞা বলে বলে, বক্তার নাম উত্তম পুরুষ। কিন্তু বক্তা কি বলেন? গল্প। রশীদ করিম এখানে গল্প বলেছেন নিজ জবানীতে। দেশভাগ পূর্ব সময়ে কলকাতায় বসবাসকারী এক নিম্নমধ্যবিত্ত মুসলমান বালকের গল্প। সব ক'টা বিষয়ই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। শাকের নামে চরিত্রটি নিজ মুখে নিজের গল্প বলে। যে কিনা যাদুকরী ফুটবল খেলোয়াড় আর ফুটবল থেকেই গল্পের শুরু। শাকেরের বাবা সরকারী চাকুরে, সাব ডেপুটি। কিন্তু তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কেননা পিতার পদটি সম্মানের হলেও মাইনেটা অতি স্বল্প। শাকেরের মাকে তাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হয় না, কেননা থালে সব সময় শাকেরও জোগাড় থাকে না। সেই বালক বয়স থেকেই শাকের জানে, জীবনটা তার সহজ না। তাই মুশতাক যতোই শাকেরকে স্বাভাবিক বন্ধু বানাতে চেষ্টা করুক, শাকের সহজ হতে পারে না। মুশতাকের বোন সেলিনা, তা আরও হতে দেয় না। কিশোর থেকে যুবক হয়ে উঠতে থাকা শাকেরের আত্মসম্মান, পৌরুষ, সবখানে সেলিনার নির্মম আক্রমন। এমনকি সেলিনার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার দিকটা জানার পরও। ওদিকে বিভাগ-পূর্ব কলকাতায় একটা মুসলিম কিশোরের জীবন কেমন? যদিও তার বেশিরভাগ বন্ধু হিন্দু, এবং তাদের কারও জন্য নিবেদিত, তবু বন্ধুর বাড়িতে তার ভাত কিংবা পানি খাওয়া বারন। হয়তো বন্ধু পরিবারটির চরম দারিদ্র্যে শাকেরই সহায়, তবু তাকে সরে সরে থাকতে হয়। এবং সময়ের সাথে যুবক শাকের যদিও মুসলিম লীগের ঘোর সমর্থক হয়, কিন্তু বন্ধুত্ত্বে তার খাদ জমেনি। ভাষা এবং গল্পের নির্মানে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন রশীদ করিম। শাকেরের বাল্য, কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পনের সেই জটিল ঘুর্ণাবর্তের ছবি এঁকেছেন তিনি। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে সমাজ, সময়, সম্পর্কের নানান আখ্যান। কিন্তু, কিছু চরিত্রের কোন প্রয়োজন ছিল না। কেন এবং কী কারনে তাতের সৃষ্টি, তা লেখক ভালো জানেন। তবে এটা কী লেখকের নিজের গল্প? হওয়া প্রয়োজন নেই। নিজের গল্প না হলেও উত্তম পুরুষে বয়ান করা যায়। যে গল্প, গল্পের চরিত্রের নিজের সে গল্পের বয়ান উত্তম পুরুষে হওয়াই উচিত।

      By Ovi

      11 Apr 2019 01:31 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      শাকেরের বয়স বেড়ে যায় কেউ তাকে স্কুলে ভর্তি করানোর কথা মাথায় আনে না।হঠাৎ করে যখন একদিন স্কুলে যাওয়া সৌভাগ্য হয় তখন ভর্তি হয় ক্লাশ সিক্সে।সেই থেকে ঘরের বাইরে জগত সম্পর্কে জানা শুরু।ফুটবল খেলার মাধ্যমে বন্ধুত্ব হয় ধনী মুশতাক ও সেলিনার সাথে।কিন্তু বন্ধু হওয়ার পর শাকের প্রথম বুঝতে পারে তারা কত গরীব। অর্থের অভাবে শেখর মেট্রিক পরীক্ষা দিতে পারছে না,শাকের ঠিকই সেটা খেয়াল করে টাকা জোগাড় করে আনে নিজে জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার বিক্রয় করে।বন্ধু সলিলের অর্থ খরচের বেহিসাবিপনা আর ধর্মের প্রতি উদারতার মধ্যেও শাকের তার মতলব টের পায়।চন্দ্রা হিন্দু শাকের মুসলিম হলেও যে বলে," আমার বিপদে তোমাকে ডাকলে সাড়া দিবে তো" এই আকুলতায় যে পরম নির্ভরতা তা শাকের বুঝে, রাখী বেঁধে ভাই বানানোতেই তা আরো দৃঢ় হয়।সেলিনা বয়সে ছোট শাকেরকে হঠাৎ প্রেমে পড়ার কথা বলা,পালিয়ে বিয়ে করার পরিকল্পনা করা,দেশের অসন্তোষজনক অবস্থা সবকিছুই শাকেরকে আয়নাতে একজন উত্তম পুরুষের চোহারা দেখায়। উপন্যাসের ভিতরে আপনি লেখকের অস্তিত্ব টের পাবেন।তিনি নিজেই চরিত্রকে বহন করে নিয়ে গেছে।মূল চরিত্র "শাকের" এর প্রতিটি গল্প বলায় আপনি লেখকের মনোভাবকে উপলব্ধি করতে পারবেন। শাকের মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের ছেলে।তার পরিবারে মা, বাবা ও তারা তিন ভাই।সব ভাই লেখাপড়া করে।পুরো উপন্যাসে রহস্যজনক চরিত্র শাকেরের মেজ ভাই।হঠাৎ সমাজের চাপে অত্যন্ত পড়ুয়া মেধাবী মেজ ভাইয়ের মধ্যে উন্মাদনা দেখা দেয়।কিন্তু সে যে মানসিক কষ্টে আছে, ধর্ম আর সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে সেই পুরোটাই উপন্যাসের রুপ। ধনীলোকের প্রদর্শন করা মানসিকতাও দেখা মিলে মুশতাক ও তার বোন সেলিনার মধ্যে।উপন্যাসে সেলিনা সুন্দরী, শিক্ষিতা,রুচিবান ধনী মুসলিম ঘরের মেয়ে।হিন্দু ছেলের প্রেমে পড়ে কিন্তু সে ছেলে তার সাথে যে প্রতারণা করে তার সবটুকু জানে একমাত্র শাকের।শাকের বয়সে ছোট তাও শাকেরের সাথে যে প্রেমের বন্ধনের ছবি ফুটে ওঠে তা শিহরিত হওয়ার মত। শাকেরের হিন্দু বন্ধু শেকর, সলিল এরা ছিল সমাজে অংশ।দেশভাগের ফলে সবার জীবনের পরিবর্তনই ছিল সমাজের বাস্তব চিত্র। শেকরের পরিবারের পরিবর্তন থেকে বুঝা যায়,অর্থ সকল অশান্তির মুক্তি নয়,বরং মানসিক শান্তির জন্য অর্থ নয়,দরকার নিজস্বতার মুক্তি। উপন্যাসের শাকের যে সত্যিই উত্তম পুরুষ সেজন্যই বোধ হয় নিহার ভাবীর সাথে এত সখ্যতা দেখানো হয়েছে।এতে শাকেরর প্রতি একটা উদার মানসিকতা তৈরি হয়। দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে দেশ ভাগ কলকাতা শহরের স্বল্প সংখ্যক মুসলিমের উপর যে প্রভাব ফেলে তা সুন্দর ফুটে উঠে। শুধু জাতীয়তাবোধই মানুষকে শ্রেণিবিন্যাস করে না,অর্থের মাধ্যমেও মানুষের শ্রেনীবিন্যাস হয়।অর্থের সাথে মানুষের চাওয়া পাওয়াগুলো কিভাবে পরিবর্তন হয় বা পূর্ণতা পায় শাকেরের মনস্তাত্ত্বিক উপস্থাপনে সেটা বুঝা যায়।

      By লীনা দিলরুবা

      29 Apr 2012 04:41 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      গোর্কি বলেছিলেন, 'প্রত্যেক শিল্পীই রোম্যান্টিক কিন্তু সক্রিয় রোম্যান্টিক, নিস্ক্রিয় নয়'। আমাদের উত্তম পুরুষের লেখক রশীদ করীম তেমনই একজন সক্রিয় রোম্যান্টিক। মানুষ সম্পর্কে অপরিসীম উদরতা নিয়ে, ধর্ম-সমাজ-শ্রেণীগত চেতনা আর বৈষম্যকে মুছে দিয়ে রশীদ করীম নির্মান করেছেন এক অবিস্মরণীয় উপন্যাস- উত্তম পুরুষ! গল্পের স্পট কলকাতা। কলকাতা ছাড়িয়ে কাহিনী অন্যত্র খুব বেশী সীমা ছড়ায়নি। আমরা জানি রশীদ করীম কলকাতারই লোক। তাহলে কী তিনি 'উত্তম পুরুষে' নিজের গল্প বয়ান করেছেন! উপন্যাসের শুরুর দিকে পাঠকের এমত প্রশ্নের উত্তর লেখক তড়িঘড়িই দিয়ে দিয়েছেন (দেখুন কি কারিশম্যাটিক তাঁর ভাষা!); বলেছেন, ” আমি সবসময়েই উত্তম পুরুষ। কিন্তু কাহিনীকার স্বয়ং যখন ’আমি’- তখন তাঁকে অধমও হতে হয়। তা না হলে তাঁর নিজের মর্যাদা থাকে, কিন্তু সত্যের থাকে না।’ তাহলে কী এটি তাঁর-ই জীবন কাহিনী! কাহিনীকার এটি আর পরিস্কার করেন নি। একটি কথা বলে খানিকটা সত্যি আর খানিকটা ভ্রম রেখে শুরুটা এভাবে শেষ করেছেন, ’’কোনো ব্যক্তিকেই পুরোপুরি জানা বা বোঝা যায় না।’’ গল্পের নায়ক শাকের। সে মুসলমান। হ্যাঁ এটি বলে দিতেই হয় কারণ ধর্মের বাড়াবাড়িতে পড়ে শাকের পানিকে জল বলতে শিখলেও কলকাতার হিন্দুত্ববাদী সহপাঠীদের বাড়ির জল তার স্পর্শ করা নাজায়েজ হয়ে যায়। তবে দারুণ ব্যতিক্রমও কিছু দেখা যায়। সংখ্যালঘু পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র শাকের। তার বড় দুটি ভাই। শাকের যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথম স্কুলে ভর্তি হতে যায় ততদিনে শাকেরের বড় দুই ভাই উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে স্নাতকে পৌঁছে গিয়েছে। বাড়ির এই কনিষ্ঠ পুত্র পাঁচ ক্লাস বাদ দিয়ে ছয়-তে প্রথম স্কুলে ভর্তি হয় তার কারণ আর কিছুই নয়-অর্থ। শাকেরের দরিদ্র পরিবার শাকেরকে যখন স্কুলে পাঠাতে সক্ষম হয় ততদিনে শাকেরের ভেতর একরাশ ঘাত-প্রতিঘাত প্রবেশ করে এক বিবেচক শাকেরের জন্ম দিয়ে ফেলেছে। শাকের যেদিন প্রথম স্কুলে যায় সেই ঘটনাটি লেখক এত মনোরম ভাবে বর্ণনা করেন, তার ভাষাটি এত সুন্দর... " আম্মা দোয়া পড়ে মাথায় ফুঁ দিলেন।... সকলেই আজ আমাকে একটা বিশেষ চোখে দেখছেন। আজকের দিনটি খোদা যেন আমার জন্যই তৈরি করেছেন। কারো মুখে কথা নেই; কিন্তু সকলের চোখ দিয়েই এক অব্যক্ত আশীবর্চন ঝরে পড়ছে।" অথবা আকাশে ঈদের চাঁদ ওঠা প্রসঙ্গে... "আকাশটা একটু আগেই তারা তন্নতন্ন করে খুঁজেছে, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে দেখছে; আকাশের বুকে কোথায় কখন্ড মেঘ জমেছে, আকাশের গায়ে কোথায় কটা বাড়ি হেলান দিয়েছে, তাও তারা একটু আগে সমস্বরে বলে দিতে পারত। কিন্তু এখন? আকাশের মানচিত্রে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে।" স্কুলে প্রবেশের সাথে সাথে শাকেরের জীবনে প্রবেশ করে মুশফিক আর তার বড় বোন সেলিনা। প্রবেশ করে সলিল, শেখর, অনিমা, চন্দ্রা। মূলত মুশফিক এবং সেলিনা-ই শাকেরের নিস্তরঙ্গ জীবনটাকে নানাভাবে তরঙ্গায়িত করে। মুশফিক চমৎকার চটপটে একটি বালক আর তার বড় বোন সেলিনা প্রতি পদে শাকেরের দারিদ্রের জন্য তাকে অপদস্ত করে। শাকেরের ভেতর সেজন্য জন্য নেয় হীনমন্যতা। শাকের প্রতিজ্ঞা করে আর সেলিনার সাথে মিশবে না। কিন্তু এ যেন অমোঘ নিয়তি! সেলিনা কেবলই শাকেরকে টানে। শাকেররা বড় হতে থাকে। ক্লাস পেরিয়ে যেতে থাকে তরতর করে। সে পড়ালেখায় দারুণ মনোযোগী। মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চমাধ্যমিকে উঠে যায়। কিন্তু নানান টানাপোড়েনের মধ্যেই তার কাহিনী গড়িয়ে চলে। শাকের, মুশফিক, সেলিনা আর সেলিনার বান্ধবী অনিমা সহ ক্যারম খেলা আর আড্ডা-গল্পে আনন্দ-বিষণ্নতায় কাটে শারেকের বাইরের জীবন। আর ঘরে! ঘরে কোন সুসংবাদ নেই। শাকেরের কঠিন হৃদয়ের পিতা অন্যত্র বদলীর চাকরী করেন। মা আর দুটি ভাই সহ শাকেররা যে গরিবী হালে জীবন যাপন করে তা এতটাই মলিন যে শাকের তা নিয়ে সর্বক্ষণ বিব্রত থাকে। সে চায়না ধনী পরিবারের মুশফিক অনিমারা তার গরিব বাড়ি আর গরিব মা ’কে দর্শন করে। কারণ সেলিনা শাকেরের মা’কে দেখে মন্তব্য করেছিল, ইনি কী তার মা না কাজের ঝি! এই সেলিনা এক অদ্ভুত চরিত্র। সে শাকেরকে তার কামজ মায়ায় টানে আবার অন্য প্রেমিকের সাথে ঘুরে বেড়ায় যেখানে স্বাক্ষী থাকে স্বয়ং শারেক! লেখক সেলিনাকে এভাবে দেখান, ’সেলিনার পরনে পাতলা ফিনফিনে শাড়ী। অবগুন্ঠনের অছিলায় উন্মোচনের কৌশল সে জানে।’’ শারেক একদিকে সেলিনাকে ঘৃণা করে অন্যদিকে তাকে ভালওবাসে। তাই সেলিনার চরম প্রতারণা তার চরম বাউন্ডেলেপনায়-ও শারেক অসহায় থাকে কারণ সে সেলিনাকে ফেরাতে পারেনা! যেমন সেলিনা-ও। কিন্তু সেখানে প্রেম না অন্য কিছু তা পাঠক জানে গল্পের একদম শেষে। শাকেরের মোহগ্রস্থরূপটি দেখুন, ''মিনিট পনের পর সেলিনা বেরিয়ে এলো। ফিরোজা রঙের শাড়ি গায়ে, মুখে যৎসামান্য প্রসাধনের চিহ্ন; কিন্তু সেই অল্প বয়সেও, অথবা হয়তো বয়স অল্প বলেই মনে হলো, এত রূপ বুঝি আর কোথাও দেখি নি, কোথাও কখনো দেখবো না।" এদিকে শাকেরের চারপাশে ঘটছে আরো অসংখ্য ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে কালকাতা আক্রান্ত হয়। জিনিসপত্রের হাহাকার; চারপাশে অভাব আর অভাব। শারেকদের ক্লাসের ফার্ষ্টবয় শেখরকে পরীক্ষার ফি দিতে সাহায্য করে শারেক। শেখরের বোন চন্দ্রাকে তার বড় ভাল লাগে। কিন্তু জাতপাত আর ধরা-ছোয়ার ছুৎমার্গের জন্য তার হতে পারতো প্রেমটি আর হয়না। সেটি দখল করে শেখরদের অভাবে তলায়মান পরিবারকে সাহায্যকারী সলিল। যে ফেল করার জন্য তাদের সাথে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেনি। তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। একসময় পরিবারের জন্য শাকেরকে কলকাতা ছাড়তে হয়। ছাড়ার আগের রাতে সেলিনা শাকেরকে চরম অপদস্থ করে। কেন সেলিনা এমনটি করে শাকেরের তা অবোধ্য থেকে যায় কারণ এই সেলিনাই তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখিয়েছিল! শাকের কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যায় কিন্তু তার মন বসেনা। মায়ের সাথে পরামর্শ করে সে আবার কলকাতায় ফিরে আসে। কিন্তু এখানে সে কোথায় থাকবে! সে গিয়ে ওঠে ফুপাতো ভাইর বাসায় সেখানে তার ভাব হয়ে যায় ভাবী নিহারের সাথে। এখানেও আমরা আবিস্কার করি এক শরীরি প্রেমের আহবান! যেমনটি সেলিনা শাকেরকে দেখিয়েছিল। কিন্তু যখনই নিহারের দিকে শাকের হাত বাড়িয়ে দেয় তখনই নিহার তাকে অপমান করে ফিরে যায়! এর রহস্য কী! দুই রমনীইতো শাকেরকে আহবান জানিয়েছিল কাতরভাবে, একজনের ভেতর ছিল শঠতা আরেকজনের? পাঠক পরিস্কার হয় না। সেলিনা তাকে শেষে এসে জানায় শাকের সেলিনার সব গোপন পাপ জেনে গিয়েছিল বলে শাকেরকে সে সবার সামনে অপদস্থ করে যেন লোকে শাকেরের কথা বিশ্বাস না করে। শাকের এই দুই নারীর রহস্যময়তার বলি, শাকেরের জীবনে চন্দ্রার নিটোল ভালবাসা বুঝি কোনদিনই পাবার নয়। বলেছিলাম রশীদ করীমের লেখার ভাষাটি বড়ই মনোরম। বড়ই সুন্দর। যেমন সুন্দর তার দার্শনীক চিন্তা। শাকের সেলিনার টানাপোড়েনের কাহিনী বর্ণনায় লেখক শাকের এর বয়ানে বলেন, "দুশ্চরিত্রতা অত্যন্ত নিন্দনীয় সন্দেহ নেই ।তবু মানুষের শরীর যখন ভুল করে বা পাপ করে তাও সহ্য করা যায়। সহ্য হয় না মনের ভীরুতা, মনের শঠতা।" উত্তম পুরুষ কেমন উপন্যাস? বলতে হয় এটি প্রেম-কাম-উদারতা-বিপ্লব আর ভাঙনের উপন্যাস। দেশভাগের ঠিক আগে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের সামগ্রিক অবস্থা নিরুপণের উপন্যাস। দেশভাগের প্রেক্ষাপটে শ্রেণীগত বৈষম্য, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তের অন্দরমহলের ছবি ফুটিয়ে তোলার আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের, স্বাতন্ত্র্য ও সহজাত দক্ষতার পরিচয়বোধক উপন্যাস। প্রেমের মানবিক বোধ, প্রেমের উষ্ণতা, প্রেমের অমোঘ নিয়তি মিলন কিংবা বিচ্ছেদ উপন্যাসে বিরাজমান। আর কামের কলাকৌশলের এবং মানসিক আদান-প্রদানের তির্যক বা দীর্ঘ বিস্তৃত বর্ণনাভঙ্গি বাদ দিয়ে রশীদ করীম ব্যক্তি ও সামাজিক সংস্কারের কিংবা ব্যক্তি বা সামাজিক পরিবেশের সংঘর্ষকেই তুলে ধরেছেন। এটিই এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!