User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
নারীর মুক্তি, তার স্বাধীনতা, তার ভোটাধিকার, সর্বোপরি তার ব্যক্তিসত্তার স্বীকৃতিগত অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং এই লক্ষ্য সাধনে নারীর মন ও মানসে সচেতনতা সৃষ্টির ইতিহাসে যে চারটি বই পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে উইনিফ্রেড হল্টবির উইমেন অ্যান্ড আ চেঞ্জিং সিভিলাইজেশন (১৯৩৪)। সেই মূল্যবান বইটিরই বাংলা অনুবাদ আমরা নারী এবং ক্রমপরিবর্তিত সভ্যতা শিরোনামে পেয়েছি মোবাশ্বেরা খানমের প্রভূত পরিশ্রম ও মেধার কল্যাণে। হল্টবির অন্য দুটি পূর্বসূরি বই হচ্ছে মেরি ওলস্টোনক্রাফটের ভিন্ডিকেশন অব রাইটস অব উইমেন এবং জন স্টুয়ার্ট মিলের সাবজেকশন অব উইমেন। তার পরেই হল্টবির উইমেন অ্যান্ড আ চেঞ্জিং সিভিলাইজেশন। এদের উত্তরসূরি বই হচ্ছে সিমোন দ্য বোভোয়ারের দ্য সেকেন্ড সেক্স। মেরির বইটির ৭৭ বছর পর প্রকাশিত হয়েছিল স্টুয়ার্ট মিলের বইটি। মিলের বইটির ৮০ বছর পর প্রকাশিত হয়েছিল হল্টবির বইটি এবং হল্টবির বইটির ১৫ বছর পর প্রকাশিত হয়েছিল সিমোন দ্য বোভোয়ারের বইটি। মোবাশ্বেরা বলছেন, ‘এক অর্থে ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত (উইমেন অ্যান্ড আ চেঞ্জিং সিভিলাইজেশন) এই বইটিকে ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত সিমন দ্য বুভেয়ারের কালজয়ী মননশীল গ্রন্থ দি সেকন্ডে সেক্স-এর একটি ভূমিকা হয়তো বলা যায়। বুভেয়ার তাঁর গ্রন্থে নারীর দৈহিক, নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের বিবরণের সাথে সাথে মিশিয়েছেন দার্শনিকতা ও জীবনবোধের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত উপলব্ধি, যা তাঁকে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত করেছে যে “নারী হয়ে কেউ জন্মায় না, ধীরে ধীরে সে নারী হয়ে ওঠে”...।’ আর তাঁর উত্তরসূরি উইনিফ্রেড হল্টবি তাঁর এই আলোচ্য গ্রন্থে সভ্যতা ও ইতিহাসের নানা কালপর্বে নারীর অবস্থানকে তুলে ধরেছেন বস্তুনিষ্ঠভাবে। আলোচ্য বিষয়ের অনুকূলে পেশ করেছেন দৃষ্টান্তের পর দৃষ্টান্ত। নারীর অধস্তনতার, অর্থাৎ যেখানে সে শিকার বৈষম্য ও পীড়নের, গ্রিস কি মিসর, ইউরোপ কি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য কি ভারতবর্ষ—বিশ্বের বিস্তৃত ভূভাগে বসবাসী নারী সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন হল্টবি। দেখিয়েছেন চোখে আঙুল দিয়ে ধর্ম কালক্রমে কীভাবে হয়ে উঠেছে পীড়নসহায়ক, কীভাবে তা নারীর মানসিক বিকাশকে করেছে বাধাগ্রস্ত, তাকে করে ফেলা হয়েছে পুরুষতন্ত্রের এক অসহায় আর কিম্ভূত ক্রীড়নক। বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন নারীর আর্থ-সামাজিক স্তরবিন্যাসে তার সময় ও কালের প্রভাব ও চারিত্রকে। এই সুবাদেই এসেছে খ্রিষ্ট পূর্বাব্দকাল থেকে শুরু করে মধ্যযুগ, সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের পটভূমিতে নারীর অবস্থানের আলোচনা। উইনিফ্রেড হল্টবির এই গ্রন্থ যখন লেখা হচ্ছে, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় আসন্ন। ফলে তিনি নারীমুক্তির রক্ষাকবচস্বরূপ আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে। ফ্যাসিবাদের উৎকট ও বীভৎস রূপই তাঁকে সমাজতন্ত্র অভিমুখীন করেছিল, যে সমাজতন্ত্র নিজেই তার মৃত্যু ডেকে এনেছিল বিশ শতকের আটের দশকের মধ্যভাগে ওই ব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিকতার দাপটের কারণেই। অবশ্য এই দুঃখজনক পরিণতি প্রত্যক্ষ করার বহু আগেই তাঁর মৃত্যু (১৯৩৫) হয়েছিল। উইনিফ্রেড হল্টবি তাঁর গ্রন্থের পরিশেষে সিদ্ধান্ত টানছেন এই বলে, যেখানে তাঁর আশাবাদটি ব্যক্ত হচ্ছে এভাবে, ‘আমি মনে করি আমাদের দাবির পেছনের আসল কারণটি হচ্ছে সব নারী ও পুরুষকে একই সমতলের ক্লান্তিকর একঘেয়ে ব্যবস্থায় নামিয়ে আনা নয়; বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সামনে বৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ ভান্ডারকে মুক্ত করে দেওয়া। আমরা এখনো নিজেদের প্রকৃতি সম্পর্কে ভীষণ অজ্ঞ। আমরা ঠিক জানি না যাকে আমরা “মেয়েলি বৈশিষ্ট্য” বলে বর্ণনা করি, তার মধ্যে কতটা “পুরুষালি” স্বভাবের, কতটা “পুরুষত্ব” উভয় লিঙ্গেই বিদ্যমান। আমাদের ঝামেলাগুলো কখনো কখনো উদভ্রান্তের মতো সীমারেখা মানে না, যদিও আমরা উগ্র বিশ্বাসের সঙ্গে তাত্ত্বিকভাবে কথা বলি ও শাস্তি দিই। আমরা জানিও না যে “স্বাভাবিক” যৌন সম্পর্ক কি হোমো, বাই, অথবা বিপরীত লৈঙ্গিক (হেটেরোসেক্সুয়াল) কি না। আমরা সাধারণীকরণ করেই তৃপ্ত, তা অনেক সময় এমন সব সত্যকে মানিয়ে নেয় যা সহ্য করাই কষ্টকর। কিন্তু যা বর্ণনাতীত কষ্ট দেয়, দুর্দশা বয়ে আনে তা হচ্ছে আমাদের রূঢ় ও দ্রুত প্রয়াসের সঙ্গে সংগতি মেলাতে না পারা। ‘এটা সম্ভব হবে আরও প্রাজ্ঞ একটি পৃথিবীতে আরও সতর্ক হয়ে হাঁটার মধ্য দিয়ে।...এমন একটি পৃথিবীতে আমরা হয়তো এমন বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাব যা আজ স্বপ্নেরও অতীত। একটি সামাজিক সংহতি খুঁজে পাব যা পূর্বসংস্কার, দুঃখ, কষ্ট, ভয় ও বিতৃষ্ণার কারণে কল্পনাতীত মনে হয়েছিল। সুখ ও তৃপ্তির এমন পৃথিবীর আভাস দেন কেবল কবি ও মহামানবেরা। অন্তত আমরা এখন নিশ্চিত জানি যে সাম্যের আদর্শটি আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাবে।’ মোট চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই গ্রন্থের উপশিরোনামগুলো হচ্ছে ‘মোটেই মানবিক নয়’, ‘মানবতার স্বীকৃতি’, ‘ক্রান্তিকালের সমস্যা’ ও ‘অগ্র-পশ্চাৎ’। যাঁরা নারীর মুক্তির আন্তরিক ভাবনায় ভাবিত, যাঁরা নারীসমাজের অগ্রযাত্রার অভিযাত্রী ও সহযোদ্ধা, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য অবশ্যপাঠ্য এই গ্রন্থ। মোবাশ্বেরা খানম বিখ্যাত এই গ্রন্থের অনুবাদ করে, আমার মতে, এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন। তাঁর ‘প্রসঙ্গ: অনুবাদ’ শিরোনামের ভূমিকাটিও সুলিখিত। তাঁকে অভিনন্দন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভূমিকা এই গ্রন্থের পাঠে উৎসাহ-জাগানিয়া ভূমিকা রেখেছে।