User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রিজিয়া রহমান ষাটের দশকের অন্যতম মহিলা কথাসাহিত্যিক। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে যে কজন মহিলা সাহিত্যিকের নাম করা যায়, রিজিয়া রহমান তাঁদের মধ্যে প্রতিভার অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর লেখা শুরু থেকেই বোদ্ধাপাঠক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি অনেক ছোটগল্প লিখেছেন। উপন্যাসের মতো তিনি গল্পেও চলমান জীবনের নানা সমস্যা ও টানাপোড়েনের কথা অত্যন্ত সংবেদনশীল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। তাই তাঁর গদ্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের চালচিত্র। তাঁর লেখায় জীবনবাস্তবতার নিষ্ঠুরতা আছে—আছে সমাজের মানুষের চোখে জীবনের কঠিন বাস্তবকে তুলে ধরার নিরলস প্রচেষ্টা। তাই তিনি সমাজের উঁচু থেকে নিচু মহলের যাপিত জীবনের কথা খোদাই করেছেন নিজস্ব এক ভাষার আধারে। চার দশকের গল্প গ্রন্থে মোট ১৭টি গল্প স্থান পেয়েছে। গল্প রচনার সময়কাল ১৯৭৬-২০১০ পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে এ দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ঘটেছে অনেক ঘটনা আর ভাঙন। মানুষকে পাড়ি দিতে হয়েছে অগণন চড়াই-উতরাই। উল্লিখিত সময়কাল গল্পের কাহিনি ও চরিত্রের ওপর করেছে নানামুখী আলোক্ষেপ। দু-একটি গল্পের ঘটনাস্থল দেশের বাইরে সংঘটিত হয়েছে। এসব গল্পে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের জীবনালেখ্য তুলে ধরা হয়েছে—গল্প দুটো হলো ‘সোনার হরিণ চাই’ ও ‘একটি কালো মেয়ের গল্প’। নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে এসে পাত্রপাত্রীরা কীভাবে জাতিগত বৈষম্যের শিকার হয়, গল্পগুলোয় তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার নিচে যে ভাঙন কাজ করে, সে ভাঙনে পারিবারিক জীবনও রেহাই পায় না। লোভ, লালসা, প্রতিপত্তি লাভ, স্বেচ্ছাচার যেন বাঙালি মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তকে গ্রাস করে ফেলে। আর তাই পারিবারিক জীবনও স্থির থাকে না। এ ভাঙনের সর্বনাশী তরঙ্গ সবেগে আঘাত করে পারিবারিক জীবনকে। নগরজীবনের যান্ত্রিকতা, হতাশা, ব্যর্থতার পাশে নীতিহীন, আদর্শহীন মানুষের জীবনে নেমে আসে উচ্চতাহীন অমানবিক প্রেম ও ভালোবাসা। ক্রমশ ওপরে ওঠার বাসনা মানুষের ভেতরে সৃষ্টি করে উন্মুক্ত অমানবিকতা। এই অমানবিক নগরের অমানবিক বাসনাবোধকেই চিত্রায়িত করেছেন কালসচেতন কথাশিল্পী রিজিয়া রহমান। গ্রন্থভুক্ত প্রথম গল্প ‘সোনার হরিণ চাই’। গল্পে অভিবাসীদের জীবনের নিঃসঙ্গতা ও নিরাপত্তাহীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে। ‘দূর্বা ঘাসের আকাশ’ গল্পে শরীফার বানানো মিথ্যা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এখানে ধনী আর দরিদ্রের সম্পর্কের আকাশ-পাতাল দূরত্বকে অঙ্কিত করা হয়েছে। ‘সামনে যুদ্ধ’, ‘হারকিউলিসের ভাঙন’, ‘প্যাট্রিয়া’, ‘কপালেরই দুঃখ’, ‘অন্ধকারে ফেরা’, ‘ছেঁড়া মশারি আর পুরনো মানুষ’, ‘অভিজাত’, ‘রাজা রাজা খেলা’ গল্পগুলোয় জীবনযুদ্ধের বাস্তব ছবি ফুটে উঠেছে। মধ্যবিত্তের স্বপ্ন আর নিম্নবিত্তের জীবনসংগ্রাম লেখিকা যেন তুলির ছোঁয়ায় এঁকেছেন। এভাবে সাংসারিক জীবনের স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নকে ভাষায়িত করেছেন অত্যন্ত সাদামাটা অথচ নিপুণভাবে। ‘নিঃসঙ্গ বসন্ত’, ‘গ্রহান্তর’, ‘বিন্দু এবং বৃত্ত’ ও ‘একটি কাক একজন কবি ও চেঙ্গিস খানের ঘোড়া’ গল্পগুলো উত্তম পুরুষে বয়ান করা লেখিকার জবানিতে। গভীর মনস্তাত্ত্বিক আর যাপিত জীবনের নিরুচ্চারিত ভাষার অবদমিত বহিঃপ্রকাশই যেন গল্পগুলোর প্রধান উৎসারণ। রিজিয়া রহমান মূলত একজন ঔপন্যাসিক। তাঁর শিলায় শিলায় আগুন, রক্তের অক্ষর, বং থেকে বাংলা, একাল চিরকাল প্রভৃতি উপন্যাস বাংলা কথাসাহিত্যে তাঁর স্থান নিঃসন্দেহে সুদৃঢ় করেছে। বিষয় বয়ানে আলোচ্যগ্রন্থের গল্পগুলো সংবেদনশীল, জীবনঘনিষ্ঠ ও আমাদের জীবনেরই চার দেয়ালের বিধিচিত্র অঙ্কিত। গল্পগুলো মনোজ্ঞ পাঠকদের আনন্দ দেবে সন্দেহাতীতভাবে। সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৯, ২০১১