User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভারতবর্ষে আদিবাসীবিষয়ক নৃতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হওয়ার প্রথম পর্যায়ে তাদের ‘ট্রাইব’ বলা হতো। ঊনবিংশ শতকের ইংরেজ নৃবিজ্ঞানীরা অনুন্নত ও জ্ঞাতি-সম্পর্কীয় জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে রোমান ‘ট্রাইবুয়া’ (ট্রাইবুয়া>ট্রাইবাস্>ট্রাইব) শব্দটি ব্যবহার করেন। তখন ভারতীয় সরকারি কাগজপত্রে অনুন্নত এই জনগোষ্ঠীগুলোকে ‘ট্রাইব’, সেমিহিন্দুইজড অ্যাব্রোজিন হিসেবে দেখানো হয়। ‘আদিবাসী’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃতি থেকে। ‘আদি’ অর্থ ‘মূল’ এবং ‘বাসী’ অর্থ ‘অধিবাসী’। সুতরাং আদিবাসী কথাটির অর্থ দাঁড়ায় ‘দেশীয় লোক’। বিশ শতকের শেষ দিকে আদিবাসী শব্দের নতুন পরিভাষা যোগ হয় ‘নৃগোষ্ঠী’ নামে। বাংলাদেশে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রায় ২৬ লাখ মানুষের বসবাস। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অধিকারী নৃগোষ্ঠীগুলোর নাট্যসাহিত্য নিয়ে আফসার আহমদের বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী নাট্য বইটি। বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে চাকমা, মারমা, মুরং, হাজং, তঞ্চঙ্গা, খাসিয়া, সাঁওতাল, গারো, ত্রিপুরা, ওঁরাও, রাখাইন, মণিপুরি প্রভৃতি। গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার অনুসারে গারোরা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘মান্দি’। অন্যদিকে ‘ম্রো’ অর্থ মানুষ। সাঁওতালরা তাদের পরিচয় দেয় ‘হড়’—অর্থাত্ মানুষ হিসেবে। বোঝা যায়, নৃগোষ্ঠীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মানবিক মর্যাদা রয়েছে। তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অলিখিত, মৌখিক ইতিহাস পরিবার-পরম্পরায় জনসমাজে বিধৃত। নিয়ত সংগ্রামী নৃগোষ্ঠীগুলোর রয়েছে উত্কৃষ্ট নাট্যগীতি এবং নৃত্য। মূলত জীবনঘনিষ্ঠ আচার-উত্সব উপলক্ষে তাদের নাট্যের আয়োজন হয়। প্রকৃতি থেকে তারা শেখে জীবনের পাঠ। উত্সবে, অনুষ্ঠানে, বেদনা ও আনন্দে তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় গান। পার্বণে-উত্সবে নারী-পুরুষ উভয়ের পদবিক্ষেপে নান্দনিক ঐকতান ঘটে নৃত্যের ভঙ্গিমায়। তারা ধরে রাখে দীর্ঘকালের মূল্যবোধ। তাদের আবাসন, স্থানান্তর, নিজস্ব উত্পাদনব্যবস্থা, ভূমিবণ্টনে আঘাত এসেছে বারবার। বারবার রূঢ় বস্তুজগতের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে তারা। তার পরও তারা নিজস্ব সুরে-ছন্দে-ভঙ্গিতে ধারণ করেছে জীবনের বহুবর্ণিল চিত্র। তার একটি হলো নাটক। নৃগোষ্ঠী নাটকের ব্যাখ্যায় লেখক বলেছেন—‘নৃত্যগীত ও বাচিক অভিনয়সংবলিত পরিবেশনামূলক যে নাট্যনিদর্শনে একটি নৃগোষ্ঠীর কৃত্যমূলক সামাজিক ও ধর্মীয় উপাচার, উত্সবাদি, উপকথা, লোককথা, ইতিহাস কিংবা প্রণয়মূলক আখ্যান প্রভৃতি ওই নৃগোষ্ঠীর আদি অকৃত্রিম নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে, তাকে নৃগোষ্ঠী নাট্য বলা যায়।’ প্রতিটি নৃগোষ্ঠী নাট্যের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। অনন্য তাদের পরিবেশনাশৈলী। বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী নাট্য বইটি ভূমিকাসহ মোট নয়টি অধ্যায়ে বিন্যাস করা হয়েছে। নৃগোষ্ঠী নাট্য: চাকমা গেংখুলী গীদ, চাকমা গেংখুলী গীদ: রাধামন-ধনপুদি, চাকমা গেংখুলী গীদ: সান্দবীর বারমাসী, বারমাসী: বাঙলা ও চাকমা আখ্যান কাব্য, চাকমা গেংখুলী গীদের পরিবেশনারীতি ও কৃত্য, নৃগোষ্ঠী নাট্য: মারমা জ্যা, মারমা জ্যা: অলংনাবাহ, মা চ ক্যান ও সাবায়াহ্, মারমা জ্যা: পরিবেশনারীতি ও কৃত্য। লেখকের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের প্রধান নৃগোষ্ঠীগুলোর নাট্যকৃতির বিবিধ প্রবণতা ও কৃত্যমূলক নাট্যসৃষ্টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ। এ দেশের পাহাড়ে ও সমতলে বসবাসরত চাকমা, মারমা, গারো, হাজং, মণিপুরি প্রভৃতি জনজাতির নাট্য ও নৃত্য-গীত বিশ্লেষণ করা হয়েছে এ বইয়ে। নৃগোষ্ঠীগুলোর ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা ও নাট্য পরিবেশনারীতির আলোকে বাংলা লোকনাট্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এই তুলনার জন্য উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, নৃগোষ্ঠীর আদি পুরাণ আর নিজের দেখা নানা রকম অভিনয় পদ্ধতি থেকে। লেখক দীর্ঘদিন মাঠপর্যায়ে অবস্থান করে কেবল তথ্য জড়ো করেননি, তার বিশ্লেষণও করেছেন। এ বইয়ে মধ্যযুগের বাংলা লোকনাট্যের মৌখিক রীতির সঙ্গে নৃগোষ্ঠীর নাট্যপুরাণের সম্পর্ক নির্ণিত হয়েছে। অন্যত্র রয়েছে তথ্যসমূহের বাস্তবিক পর্যবেক্ষণ। বইটি প্রকৃতপক্ষে নৃগোষ্ঠী নাট্যকলার প্রামাণ্য ইতিহাস। এই ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিত অনেক বড়। এখানে নাটকের পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে। গ্রন্থের পরিশিষ্টে সংযোজিত হয়েছে খাগড়াছড়ির দিঘিনালা উপজেলায় মাঠপর্যায়ে সংগৃহীত গুণধন চাকমা কর্তৃক আসরে পরিবেশিত রাধামন-ধনপুদি পালা, বান্দরবানের প্রংওয়া গ্রামের জ্যা দলের মা চ ক্যান পালার মূল পাঠ, হাজং নৃগোষ্ঠী নাট্য মহিষাসুরবধ। উল্লিখিত নাট্য আখ্যানের কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ, গঠনশৈলী ও পরিবেশনারীতির অনুপুঙ্খ আলোচনা করা হয়েছে। এসব নাট্য আখ্যান নিয়ে ইতিপূর্বে কোনো পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হয়নি। বর্তমান গ্রন্থ সে অভাব পূরণ করবে।