User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কি সাবলীল! কি মায়া! কি নিদারুণ সত্য! ১০২ পেইজের কোথাও মনে হয় নি একটা লাইন এলোমেলো কিংবা অগোছালো। প্রতিটা লাইন গভীর এবং অর্থ বহন করে। দৈন্যতা ও নির্লিপ্ততা ফুটে উঠেছে প্রতিটা পেইজে। সূর্য দীঘল বাড়ির দিকে হাহাকার নিয়েই তাকিয়ে থাকতে হল শেষ পর্যন্ত। বাংলা ভাষাভাষী সকলের জন্য অবশ্য পাঠ্য।
Was this review helpful to you?
or
#আড্ডাখানায়_রকমারি #রিভিউ_২০২৩ বই: সূর্য দীঘল বাড়ি প্রারম্ভিক কথাঃ “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।” পেটের ক্ষুধা এমন এক তাড়না যা মানুষকে জীবনের বাস্তবতা শেখায়, কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করে তোলে। আবু ইসহাকের কালজয়ী উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’, যেখানে উঠে এসেছে দুর্ভিক্ষের কথা,ক্ষুধার বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধের কথা! গ্রামীণ জীবন, দরিদ্রতা, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার, সমাজকর্তাদের শোষণ-বঞ্চনার বিপরীতে এক নারীর সংগ্রামী মনোভাব, দৃঢ়তা, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের চিত্র সূক্ষ্মভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রেক্ষাপটঃ ১৯৪৩ সাল বা বাংলা ১৩৫০ সালে চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এই বাংলায়। দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা গ্রাস করে ফেলে সহজ সরল মানুষদের, বরণ করতে হয় ভাগ্যের নির্মম পরিণতি। কেউ অস্তিত্ব রক্ষায় প্রাণপণে লড়াই করে যায় দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে, আবার কেউবা কালস্রোতে বিলীন হয়ে যায় চিরদিনের জন্য। উপন্যাসটি চল্লিশ দশকের গ্রামীণ জীবনের আলোকে লেখা হয়েছে। দুর্ভিক্ষ পরবর্তী মানুষের জীবনযাপনের প্রতিচ্ছবি অঙ্কিত হয়েছে ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’-তে। কাহিনী সংক্ষেপঃ গ্রামের ঘর সাধারণত উত্তর-দক্ষিণ প্রসারী হয়ে থাকে। পূর্ব-পশ্চিম অর্থাৎ সূর্য উদয়াস্তলের দিক করে যে ঘর হয় তাকে বলা হয় ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। কথিত আছে এ ধরনের ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’-তে মানুষ টিকতে পারে না, এখানে থাকলে অশুভ শক্তির প্রভাবে বংশ নির্বংশ হয়ে যায়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র ‘জয়গুন’। জয়গুনের প্রথম স্বামী জব্বার মুন্সীর ঘরের এক ছেলে, নাম হাসু। জব্বার মুন্সীর মৃত্যুর পর জয়গুনের সাথে বিয়ে হয় করিম বক্সের। সেখানে রয়েছে মেয়ে মায়মুন ও শিশু পুত্র কাসু। কিন্তু আকালের সময় করিম কাসুকে নিজের কাছে রেখে, মেয়েসহ তাড়িয়ে দেয় জয়গুনকে। শহরের লঙ্গরখানায় গিয়ে প্রাণ বাঁচায় তারা। পরে জয়গুন ছেলে হাসু ও মেয়ে মায়মুনকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। তাদের সঙ্গী হয় মৃত ভাইয়ের সন্তান শফি ও তার মা। গ্রামে এসে আশ্রয় নেয় বাবার রেখে যাওয়া ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’-র ভিটেতে। যার সঙ্গে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা তালগাছ। এ সূর্য দীঘল বাড়িতে জিনের আছর আছে বলে গুজব বহকালের। বংশ নির্বংশ হওয়ার ভয় দেখাতে থাকে চারপাশের মানুষ। কিন্তু জয়গুন সহজে দমিত হয় না। কেননা, ভূতের ভয় পেয়ে স্থির হলে তো আর গরিবের পেট চলবে না! তাদের একমাত্র আশ্রয় যে এই সূর্য দীঘল বাড়ি। সূর্য দীঘল বাড়িকে কেন্দ্র করে গ্রামের ফকির ঝাড়-ফুক,তাবিজ করার জ্ঞান দেয়, জিনের আছর দূর করতে। এর বদলে সে চাল নেয়। এভাবে সে লোক ঠকিয়ে ধর্মের নামে ব্যবসা করে উপার্জন করে। জয়গুন মানুষের বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ নেয়। হাসু কুলিগিরি করে। কিন্তু এতে সংসারের দুরবস্থা কাটে না। তাই লালুর মায়ের কথায় বাড়তি আয়ের জন্য ময়মনসিংহ হতে চাল এনে বিক্রি করে। কিন্তু এতেই বাধে বিপত্তি। লোকচক্ষুর সামনে মেয়েমানুষ বেপর্দা হয়ে বাহিরে কাজ করবে, এতে ঘোরতর আপত্তি সবার! পেটের দায়ে জয়গুনের এহেন কাজে দোষ ধরে সকলে নানা কটুকথা বলতে আরম্ভ করে ঠিকই কিন্তু কেউ তার পরিবারের দিকে একমুঠো চাল পর্যন্ত এগিয়ে দেয় না, সংসারের অভাব ঘুচাতে সাহায্য করে না। এজন্য সে বুঝতে পারে, এ জীবনযুদ্ধটা তার একার, নিজ সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে একাই লড়ে যেতে হবে। আর তাই জয়গুন লোকমুখের কথায় কান দেয় না, কাজ করে যায় আপন গতিতে। এদিকে শিশুপুত্র কাসুর জন্য জয়গুনের মাতৃহৃদয় হাহাকার করে। কাসুকে তার মায়ের কাছে যেতে দেয় না করিম বক্স। তাই সে চুপি চুপি ছেলেকে দেখতে যায়, এটা-সেটা পাঠায়। করিম বক্স তা টের পেলে গালমন্দ শুনতে হয়। একসময় কাসু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে করিম বক্স। কিশোরী মায়মুনের হাঁস ডিম পাড়লে ইমাম সাহেবকে দিলে তা গ্রহণ করতে রাজি হয় না। কেননা জয়গুন নারী হয়ে বাহিরে পুরুষের সামনে কাজে বের হয়। তাই তাদের হাঁসের ডিম গ্রহণ করা ‘হারাম’ বলে আখ্যায়িত করে। কিছুদিন পর মায়মুনের বিয়ে ঠিক হয় সোলেমান খাঁর ছেলে ওসমানের সাথে, যার কিনা প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছে। কিন্তু তাতেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় মোড়ল গদু প্রধান। জয়গুনকে তাওবা করে কাজ ছেড়ে দিতে বলে, তবেই এ বিয়ে হবে বলে সাফ জানায়। মেয়ের কথা ভেবে সে তাওবা করে, কাজ না করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। মায়মুনের বিয়ে হয়ে যায়। জয়গুনের কাজ ছেড়ে দেওয়ায় সংসারে অভাব আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। কিছুদিন না যেতেই মায়মুনকেও শশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় জয়গুন আবার কাজ শুরু করে। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের কারণে গ্রামের হর্তাকর্তারা ক্ষিপ্ত হয়। গদু প্রধান জয়গুনকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। কাসু কি সুস্থ হয়? মায়মুনকে কেনই বা তাড়িয়ে দেওয়া হয় শশুরবাড়ি হতে? সূর্য দীঘল বাড়ি থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে কি ষড়যন্ত্র করে গদু? সূর্য দীঘল বাড়ি কি সত্যিই অশুভ নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনো কিছু আছে? জয়গুন ও তার পরিবার কি পারে স্রোতের বিপরীতে দৃঢ় হয়ে থাকতে নাকি মুখ থুবড়ে পড়ে সমাজের শোষকদের কাছে? মানবিক এ যুদ্ধে কি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে জয়গুন? জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। বই পর্যালোচনা ও পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ দুর্ভিক্ষের সময় কুসংস্কারের জালে, দারিদ্র্যের কষাঘাতে মানুষের জীবনকাল নিয়ে রচিত এ চিরায়ত উপন্যাস, ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। যেখানে গ্রামীণ জীবনের কুসংস্কারতাড়িত, দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। অশিক্ষিত হলেও জয়গুনের শিরদাঁড়া যেন অন্য সবার চেয়েও সোজা, সমুন্নত। যার উদরে ছিল না আহার, গায়ে ছিল না গোটা কাপড়। কিন্তু তাও জয়গুন থেমে থাকে নি। বহু প্রতিকূলতা পার করে সাহসী জয়গুনের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ, কুসংস্কার, শোষণ, ক্ষুধার তাড়নায় মানব জীবনের বীভৎস চিত্রকে মজবুত শব্দের গাথুঁনিতে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসে। লেখকের লেখনী ও বর্ণনা শক্তি কি প্রখর! উপন্যাসে তিনি ধর্মকে হেয় করেন নি। তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে আঘাত হেনেছেন ধর্মের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শোষণের বিরুদ্ধে। অঙ্কন করেছেন জয়গুনের মতো সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্র। সমাজের নিষ্ঠুরতা,শোষণের বিপরীতে স্বমহিমায় ধরা দিয়েছে ‘জয়গুন’ চরিত্রটি। উপন্যাসে নেই কোনো অতিরঞ্জিত বা অহেতুক বর্ণনা। বর্ণনাভঙ্গি সাবলীল, প্রাঞ্জল। কিন্তু অন্তর্নিহিত অর্থ কি সুগভীর! বইয়ের একেকটা উপমা,উক্তি যেন অন্তরে আঘাত করে। সত্যিই বাংলা সাহিত্যের নিটোল, নিখুঁত এক সার্থক উপন্যাস। বই হতে প্রিয় উদ্ধৃতি: ভাতের লড়াইয়ে হেরে যায় তারা। অতীতের কান্না চেপে, চোখের জল মুছে তারা আসে, কিন্তু মানুষের চেহারা নিয়ে নয়। শিরদাঁড়া বেঁকে গেছে, পেট গিয়ে মিশেছে পিঠের সাথে। … তবুও তারা ভাঙা মেরুদণ্ড নিয়ে সমাজ ও সভ্যতার মেরুদণ্ড সোজা করে ধরবার চেষ্টা করে। … পঞ্চাশের মন্বন্তরে হোঁচট খাওয়া দেশ আবার টলতে টলতে দাঁড়ায় লাঠি ভর দিয়ে। নিয়মের দুনিয়ায় অনেক অনিয়ম আছে। যেমন কর্ম তেমন ফল’ তাই সব সময়ে পাওয়া যায় না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা সারাদিনের কর্মফল বড় সামান্য। পরোপকার প্রায়ই বিফলে যায়। সে কর্মে যদিও ফল ফলে, তা তিতো, বিষাক্ত। এটা অনিয়ম বৈকি। ক্ষুধার অন্ন যার নেই, তার আবার কিসের পর্দা, কিসের কি? জয়গুন বুঝেছে, জীবন রক্ষা করাই ধর্মের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মূলমন্ত্র। জীবন রক্ষা করতে ধর্মের যেকোনো অপ-আক্রমনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সে প্রস্তুত। উদরের আগুন নেবাতে দোজগের আগুনে ঝাপ দিতেও তার কোনো ভয় নেই। “ না খাইয়া জানেরে কষ্ট দিলে খোদা ব্যাজার অয়। মরলে পরে খোদা জিগাইব, তোর আত-পাও দিছিলাম কিয়ের লেইগ্যা? আত দিছিলাম খাটবার লেইগ্যা, পাও দিছিলাম বিদ্যাশে গিয়া ট্যাকা রুজি করনের লেইগ্যা।” জীবন রক্ষা করাই ধর্মের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মূলমন্ত্র। বইবৃত্তান্তঃ বইয়ের নাম: সূর্য দীঘল বাড়ি লেখক: আবু ইসহাক মুদ্রিত মূল্য : ৳ ১৭৫ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১০ প্রকাশনী : নওরোজ সাহিত্য সম্ভার জনরা: ক্ল্যাসিক বা চিরায়ত উপন্যাস রিভিউ লেখায়ঃ ইসরাত জাহান সামিয়া বইছবিঃ ইসরাত জাহান সামিয়া
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া অন্যতম সেরা একটা বই
Was this review helpful to you?
or
good book
Was this review helpful to you?
or
Good Book
Was this review helpful to you?
or
Very good book.
Was this review helpful to you?
or
Excellent ?
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
nice book
Was this review helpful to you?
or
সুন্দর
Was this review helpful to you?
or
Nice book
Was this review helpful to you?
or
nice
Was this review helpful to you?
or
অনেক ভালো
Was this review helpful to you?
or
best i ever read ....
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
গ্রামীন সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে,কুসংস্কার এবং ততকালীন রাজনৈতিক অবস্থা এবং জনজীবনে তার প্রভাব ও পরিলক্ষিত হয়েছে। সংগ্রামী জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে গ্রন্থটিতে।
Was this review helpful to you?
or
মননশীল একটি বই। সবার পড়া উচিত
Was this review helpful to you?
or
Excellent
Was this review helpful to you?
or
আজকে বইটা হাতে পাওয়া মাত্রই পেড়েছি।সত্যি অসাধারন।ডেলিভারি হয়েছে সুন্দর ভাবে।
Was this review helpful to you?
or
best
Was this review helpful to you?
or
৫০ এর দুর্ভিক্ষের চিত্র এই উপন্যাস পড়লেই কেবল ভালোমতো উপলব্ধি করা যায়
Was this review helpful to you?
or
Masterpiece
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ সুবহে সাদিকের ক্ষীণ ফর্সা রেখা মিলিয়ে গিয়ে ভোরের আলোর প্রথম আভা তখনই ফুটে ওঠে, সূর্য যখন আলস্য ভেঙে পুবাকাশে মাথা তুলে উঁকিঝুঁকি দেয়। তারপর দিনভর নিদাঘ দহনে ধরাধাম পুড়িয়ে অবিশ্রান্তভাবে সে এগুতে থাকে পশ্চিম দিকে। একসময় গোধুলির লালিমায় চারপাশ রাঙিয়ে দিয়ে রক্তাভ সূর্য টুপ করে ডুব দেয় পশ্চিমাকাশে। তার টিকিটিরও আর দেখা পাওয়া যায় না সমস্ত রাত। পুব থেকে পশ্চিমে সূর্যের এই যাত্রাপথ ধরে বানানো হয়েছে একটি বাড়ি। গ্রামের আর সকল বাড়ি থেকে এটি আলাদা। গ্রাম জুড়ে সব কটা বাড়িই উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। কেবল এ বাড়িটাই ব্যতিক্রম। সূর্যের মুখোমুখি পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বলে এর একটা বাহারি নামও আছে - সূর্য দীঘল বাড়ি। সূর্য-দীঘল বাড়ির নামখানা বাহারি হলে কী হবে, এই ধামের কিন্তু আবার বড়ই বদনাম! এ বাড়িতে যে থাকবে, সে-ই নাকি নির্বংশ হয়ে যাবে। জিন-ভুতের আসর আছে এখানে। রাতের বেলা তো দূর কি বাত, পারতপক্ষে দিনের বেলাতেও কেউ ও মুখো হয় না। বাংলা তেরোশ' পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষে এক মুঠো ভাতের সন্ধানে দেশগ্রামের মানুষ শহরের দিকে ছুটে চলে। লঙ্গরখানায় খিচুড়ির আশায় দিনভর বসে থেকে যখন কুটোকাটাও জোটে না, তখন তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তারা আবার ফিরে আসে গ্রামে। এমনই এক ফিরে আসা নারীর নাম জয়গুন। জয়গুনের বারো বছর বয়সী ছেলে হাসু আর দশ বছর বয়সী মেয়ে মায়মুন। সাথে আছে শফির মা আর শফি। জীবনযুদ্ধে সব ঘাটের জল চেখে দেখা এই দুই নারী শহরে যাওয়ার আগে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিল। এবার গ্রামে ফিরে বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত সূর্য-দীঘল বাড়িতে শেকড় গাড়ে। বাড়ির দোষ তাড়ানোর জন্য ফকিরকে পয়সা দিয়ে তাবিজ পুঁতে দেয় মাটিতে। চারটে তাবিজ যেন চারটে পাহারাদার। বছর বছর তাবিজ পাল্টাতে হবে - সে কথা আগেভাগেই জানিয়ে দেয় ফকির। পেটে ভাত জোটাতে হলে কাজ করা চাই। জয়গুন এর ওর বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। বিনে টিকিটে চোরের মতো ঘাপটি মেরে ট্রেনে করে শহরে গিয়ে সস্তা দরে চাল কিনে আনে। সেটা বিক্রি করে গাঁয়ের বাজারে। দুই বাজারে চালের দরে যা পার্থক্য, সেটিই তার মুনাফা। বারো বছর বয়সী হাসু স্টেশনে-জেটিতে কুলিগিরি করে, মোট বয়। দিন শেষে মা-ছেলের রোজগারে আধপেটা খেয়ে কোনোরকমে ধড়ে প্রাণখানা টিকে থাকে। গাঁয়ের মোল্লা সাহেব বাঁকা চোখে দেখেন জয়গুনকে। পর্দা না করা মেয়েমানুষ আর রাস্তার কুত্তীর মধ্যে তফাত নেই। জয়গুনের দান করা হাঁসের ডিম তাই ফিরে আসে মসজিদের দুয়ার থেকেই। দ্বিতীয় স্বামী করিম বকশের কাছে তালাক পাওয়ার পর নতুন করে বিয়ে করার ইচ্ছে মরে গিয়েছিল জয়গুনের। করিম বকশের ঘরে আছে তার পেটে ধরা আরেক ছেলে কাসু। কাসুর সাথে জয়গুনের দেখা হতে দেয় না করিম বকশ। কাসু জানে, তার মা মরে গেছে। দিন গড়ায়। মায়মুনার বিয়ে হয়। একসময় শুরু হয় ফি বছরের বন্যা, আবার কেটেও যায় সে দুর্গতি। ধীরে ধীরে বছর পাঁচেক কাটে। বাংলা তেরোশ পঞ্চান্ন সালে দেখা দেয় আরেক দুর্ভিক্ষ। ততদিনে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ব্রিটিশ খেদিয়ে আজাদ হয়েছে পাকিস্তান। তাতে অবশ্য এসব ছিন্নমূল মানুষের ভাগ্যের বেশি একটা পরিবর্তন হয়নি। রেশনের চিনি-কাপড় যদি ইউনিয়ন বোর্ডের লোকেরাউ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে নেয়, তাহলে পরিবর্তন হবে কী করে? সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়ে অনেক হিন্দুই দেশ ছেড়ে চলে যায়। যান না রমেশ ডাক্তার। মায়ের মাটি ছেড়ে কোথায় যাবেন? কাসুর অসুখে ডাক পড়ে রমেশ ডাক্তারের। তিনি চিকিৎসা চালিয়ে যান। একসময় সূর্য-দীঘল বাড়ি আবার তার ভয়াল ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে থাকে। জিন-ভুতেরা ফিরে আসে। ঘরের চালে ঢিল পড়ে। কখনো শব্দ হয় মধ্য রাতে, খড় খড় খড়! আবু ইসহাকের মাস্টারপিস সূর্য-দীঘল বাড়ি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ক্ল্যাসিক উপন্যাস। সেরা একশ উপন্যাসের তালিকা করলেও বোধহয় এটি আসবে নিঃসন্দেহে। এ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র সূর্য-দীঘল বাড়ি ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। হৃদয় আর্দ্র করার মতো একটি বই। ছোট ছোট বাক্য, সুন্দর এবং সংক্ষিপ্ত উপমা, চরিত্রগুলোকে মূর্ত করে তোলার অসামান্য দক্ষতা আর ক্রমেই জমে ওঠা কাহিনিবিন্যাসে সাজানো উপন্যাস সূর্য-দীঘল বাড়ি। যেখানে ফুটে উঠেছে দারিদ্র্যের কষ্ট, তালাকপ্রাপ্তা নারীর জীবনসংগ্রাম, ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি, ধর্মান্ধদের দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা, পুরুষের লালসা, মাকে কাছে পাবার জন্য ছোট্ট শিশুর বুক ভাঙা আকুতি। সেই সাথে এক দ্বন্দ্বে ভরপুর দুর্ভিক্ষের নিদারুণ দুঃসময়! বই: সূর্য দীঘল বাড়ি লেখা: আবু ইসহাক রেটিং: ১০/১০
Was this review helpful to you?
or
দারিদ্র্য,দূর্ভিক্ষ,কুসংস্কার,ধর্মীয় ভন্ডামি,সবশেষে বেঁচে থাকার আশা-আকাঙ্ক্ষা,সংগ্রাম সবকিছু মিলেছে সূর্য দীঘল বাড়িতে!
Was this review helpful to you?
or
স্পয়লার এলার্ট আবু ইসহাকের অমর সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস সূর্য-দীঘল বাড়ি। পূর্ব-পশ্চিম সূর্য উদয়াস্তের দিক করা বাড়িকে বলা হয় সূর্য-দীঘল বাড়ি। গ্রামঅঞ্চলে একটা কথা প্রচলিত আছে যে সব বাড়ি সূর্য-দীঘল হয়ে থাকে সে সব বাড়ির বাসিন্দাদের বংশ রক্ষা হয়না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালের যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল সেই সময়কার গ্রাম বাংলার সামাজিক ব্যবস্থা এবং এক পরিবারের কথা বলা হয়েছে এই উপন্যাসে। উপন্যাসের মূল চরিত্র "জয়গুন", যে ছেলে হাসু আর মেয়ে মায়মুন সাথে নিয়ে তিন বেলা খাবারের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে শহরে যায়, সেখানে হার মেনে আবার গ্রামে ফিরে এসে "সূর্য দীঘল বাড়ী" ঠাই নেয়। যদিও সে জানত এই বাড়ির বাসিন্দারা নির্বংশ হয় । সেখানে সে এবং তার ভাবী মাথা গোজার জন্য দুটি ঘর তুলে থাকতে থাকে। জয়গুন আর হাসু দুজন মিলে দুবেলা আহারের জন্য টাকা অর্জন করে এবং মায়মুন বাড়িতে থেকে রান্নাবান্নার সব কাজ চালায়। তার ছেলের বয়স কম হলেও অতটুক বয়সেই মায়ের কষ্ট বুঝে সে কুলির কাজ করে টাকা আনে, নিজের চাইতেও বেশী ওজনের মাল- পত্র মাথায় বয়ে বেড়ায় সে। জয়গুন স্বামী পরিত্যক্ত নারী, তার এক সন্তান কাসু থাকে করিম বখশ নামক তার দ্বিতীয় স্বামীর কাছে । সেই সন্তানের প্রতি তার টান যেন কিছুতেই কমে না । এসবের মাঝে সে তার মেয়ের বিয়ে দেয় কিন্তু মেয়ের কপালেও যেন সুখ সয় না । গ্রামের ক্ষমতাশীল লোকদের নজরে পড়ে জয়গুন প্রথম থেকেই কিন্তু দিনে দিনে এসন যখন সহ্যের সীমানা অতিক্রম করে ঠিক তখনই এক রাতে এই বাড়িতে আবার ভূতের অত্যাচার শুরু হয় । তারপর জয়গুন আবার তার সন্তানদের নিয়ে নতুন করে বাঁচার জন্য অচেনা পথে পা বাড়ায়। বইটিতে কিছু আঞ্চলিক শব্দ থাকলেও অর্থ বুঝতে কোন সমস্যা হয় না। এছাড়াও বইয়ের শেষে আঞ্চলিক শব্দের অর্থ দেয়া আছে।
Was this review helpful to you?
or
ফরিদপুর হতে
Was this review helpful to you?
or
বইটি অত্যান্ত ভালো এবং যোগ্যতা সম্পন্ন, জানার আগ্রহে এবং নিজেকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে, বইটি গ্রহন করতে পারেন, পরের বইটি প্রকাশ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আশা করি আপনারা সবাই বইটি গ্রহন করবেন এবং পড়বেন। আর আপনার পছন্দ হলে রিভিউ এবং রেটিং দিতে ভুলবেন না কিন্তু। কারণ এই বইটি বর্তমান সময়ে যথাযথ যুক্তিসম্পন্ন,সেরা, যুগোপযোগী।বই হলো হলো আমাদের একমাত্র বন্ধু, যে পৃথিবীতে সবাই ছেড়ে চলে গেলেও, বই একমাত্র পাশে থাকে। তাই বেশী বেশী বই পড়ুন, রিভিও এবং রেটিং দিয়ে অন্যকে বই পড়তে আগ্রহী করুন। অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো রিভিউি পড়ার জন্যে।
Was this review helpful to you?
or
"সূর্য দীঘল বাড়ী" অনেক পুরানো বাংলা মুভি দেখে খুবই ভালো লেগেছিলো। কিন্তু যখন বই পড়লাম তখন দেখলাম লেখক বই র মধ্যে আরো সুন্দর করে বর্ণনা করেছে। বই টি অসহায় মায়ের বাচ্চাদের নিয়ে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার গল্প।সমাজ কতৃক নারীর প্রতি যে অত্যাচার করা হয় তা সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে। আমি বই টি পরে মুগ্ধ হয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৭ এর দেশভাগ, নবগঠিত পাকিস্তান নিয়ে বাংলার মানুষের আশাভঙ্গ, গ্রামীণ সমাজের কুসংস্কার, মোড়ল শ্রেণির মানুষের ষড়যন্ত্র, চলচাতুরী, ভন্ডামী, দুর্বলের উপর অত্যাচার, দুর্নীতি, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতন্ত্রের নির্যাতন ও ধনীর শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট গ্রামীণ বাংলাদেশের এক নারীর জীবন সংগ্রামের অনবদ্য দলিল ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। সেই দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করেই জয়গুন,শফির মা, মায়মুনা, হাসু,কাসু দের জীবন। "জয়গুন " এই নারী চরিত্র কে কেন্দ্র করেই ঘুরেছে উপন্যাসটির কক্ষপথ। হাসু, কাসু,মায়মুন তার সন্তান; শফির মা সম্পর্কে তার ভাই পত্নী। অভাবের কারনে একসময় শহরে গমন করে যখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় তখন ফিরে আসে গ্রামে রহস্যঘন সূর্য দীঘল বাড়ি তে। তারপর শুরু হয় সংগ্রাম।এই কুসংস্কার ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে শোষণ চালায় মোড়লশ্রেণীর মানুষ তা তুলে ধরা হয়। সমাজে দরিদ্র নারী দ্বিমুখী নির্যাতনের শিকার। দরিদ্র বলে এবং নারী বলে তার ওপর চলে ক্রমাগত নিপীড়ণ। তবু এই নিপীড়ণকে পায়ে দলে এগিয়ে যায় জয়গুন। সর্বোপরি গ্রামীণ নারীর জীবন সংগ্রাম ও প্রতিবাদী চেতনা কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত হয়। এবং এই ছবিটি ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। গ্রামের অভিশপ্ত বাড়ি বলে পরিচিত সূর্য দীঘল বাড়ি। শহরে টিকতে না পেরে দুটি ছেলেমেয়ের হাত ধরে আবার গ্রামে ফিরে আসে জয়গুন। সঙ্গে ফিরে আসে তার ভাবী ও মৃত ভাইয়ের ছেলে শফী। এই বাড়িতে এবং বাড়ির আশেপাশে নাকি অনেকেই ভূত দেখেছে। ইতিপূর্বে যারা এই বাড়িতে থেকেছে, তারা সবাই নির্বংশ হয়েছে, এমন নানান কথা আমলে না নিয়ে এখানে বসবাস শুরু করে তারা। শেষ পর্যন্ত তারা ফকির নামধারী জোবেদ আলীর দ্বারা পুরো বাড়ি বন্ধ দেওয়ায়। লেখক আবু ইসহাকের এই বইটা কতখানি সফল সেটা বইয়ের ছবিতে উল্লেখিত পুরস্কারের তালিকা আর দেশী বিদেশী স্বীকৃতি দেখলে আমরা দেখতে পারি। জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে উপন্যাসের আভা পাওয়া যাবে এই বইটিতে । সূর্যদীঘল বাড়ি দুর্ভিক্ষের থাবা, অভাব আর জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি অন্ধবিশ্বাস, সামাজিক প্রথা এবং কুসংস্কারের গল্প। এই উপন্যাস টি কোন রুপকথার গল্প নই এটি বাস্তব জীবনের ঘটে যাওয়া অনেক গ্রামিন মানুষের সাথে মিলে যাবে।বইটাকে খানিকটা অতিপ্রাকৃত বলে মনে হলেও এটা নিতান্তই তৎকালীন (১৯৪৭) গ্রামীণ সমাজের প্রতিচ্ছবি। সূর্য দীঘল বাড়ি উপন্যাসটি ভালোলাগা আর ভালোবাসা দুই মিলিয়েই আছে
Was this review helpful to you?
or
আবু ইসহাক" শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার শিরঙ্গল গ্রামে তার জন্ম। একটু গর্বিত ভাবেই বলছি আমার জন্মও শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানায়। তবে আমি লজ্জিত। আমি প্রায় শতাধিক বই পড়েছি অথচ কাল অবধিও পড়া হয়নি নিজের জেলার লেখকের বিখ্যাত গ্রন্থ। তবে লজ্জা ঘুচালাম আজকে পড়ে শেষ করে। এবং প্রতিক্রিয়া শুধুই মুগ্ধতায় শেষ।সময়ের প্রেক্ষাপটে কি ভীষণ শক্তিশালী আচরণ উঠে এসেছে বইটিতে।সব কিছু ছাপিয়ে মানুষের চিরন্তন সংগ্রামের গল্প। গল্পের প্রেক্ষাপট ১৩৫০ এর দুর্ভিক্ষের। আমি প্রথম দুর্ভিক্ষকে কাল্পনিক ভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলাম বিভূতিভূষণের "অশনি সংকেত" উপন্যাসে। যেখানে এক মুঠো ভাতের জন্য মানুষের বিবেকের সব সীমারেখা পার হয়ে যায় । অশনি সংকেত বিশুদ্ধ ক্ষুধার গল্প। কিন্তু আবু ইসহাকের সূর্যদীঘল বাড়ি দুর্ভিক্ষের থাবা, অভাব আর জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি অন্ধ বিশ্বাস, সামাজিক প্রথা এবং কুসংস্কারের গল্প। দুর্ভিক্ষ একটি সচ্ছল, স্বপ্নবাজ পরিবারকে নি:স্ব করে দেয়। যার ঘানি টানতে টানতে হয় কয়েক প্রজন্মকে। সদ্য শৈশব পেরোনো রাসুর সারাদিন মোঠ বয়ে, নির্মাণ শ্রমিক হয়ে কাজ করে পরিবারের মুখে অন্ন জুটানোর যুদ্ধ আমাদেরকে সেই সত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। অন্যদিকে সমাজ ওর মা জয়গুনের মুখে অন্ন তুলে দিতে রাজি নয় কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে গৃহে বন্দী থাকার আদেশ দেয়। এজন্য জয়গুন যখন আবার বাইরে গিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন লেখক বলেছেন, "উদরের আগুন নিবাতে দোজগের আগুনে ঝাপ দিতেও তার ভয় নেই।" দুর্ভিক্ষ আর কুসংস্কার, একদিকে হায়না আর অন্যদিকে রক্তচোষা জোঁক। একদিকে আগুন, অন্যদিকে খাদ। তার মাঝে বেচে থাকা একদল মানুষের গল্প হলো ★সূর্য দীঘল বাড়ি★। পুনশ্চ: দুর্ভিক্ষ এক ভয়ানক শব্দ। বাস্তব জীবনে কখনও প্রত্যক্ষ না করলেও কাল্পনিক ভাবে যতবার প্রত্যক্ষ করেছি ততবারই উপলব্ধি করেছি ভাতের মর্মতা। উফফফফ এক থাল ভাতের জন্য এত হাহাকার। Just অসহ্যনীয়
Was this review helpful to you?
or
সূর্য দীঘল বাড়ী- নামটি শুনে মনে হবে রং তুলিতে আঁকা নান্দনিক সৌন্দর্যের একটি বাড়ির বর্ণনা। বাংলাদেশের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম সূর্য দীঘল বাড়ী। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত আবু ইসহাকের লেখা কালজয়ী উপন্যাস সূর্য দীঘল বাড়ীর অবলম্বনে ১৯৭৯ সালে মসিহ উদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী যৌথভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
Was this review helpful to you?
or
সমসাময়িক সমাজকে তুলে ধরেছে যে বইগুলো তার মধ্যে একটি হলো : সূর্য দীঘল বাড়ি।
Was this review helpful to you?
or
মনে রাখার মতো একটি উপন্যাস অবশ্য কিছু আঞ্চলিক ভাষার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোও মনে রাখার মতো।
Was this review helpful to you?
or
ঔপন্যাসিক আবু ইসহাকের লেখনী বরাবরই মুগ্ধ করে এসেছে আমাকে। সূর্য দীঘল বাড়িটিও ব্যতিক্রম নয়। লেখনী যেমন সুন্দর, সেই সাথে সুন্দর উপন্যাসের কাহিনি। এক কথায় চমৎকার একটি উপন্যাস। মানুষের জীবনের চিত্র তিনি এত সুন্দর করে এঁকেছেন যা বিস্ময়াভিভূত করে। উপন্যাসটা এক অসাধারণ মায়া দিয়ে মাখা। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে পড়ার সময়। ❤ ❤ ❤ ❤ ❤ ❤ ❤ ❤ ❤
Was this review helpful to you?
or
অভাবের তাড়নায় শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা জয়গুনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে গল্পের মূল কাহিনী। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে না খেতে পেরে মারা যায় অনেক মানুষ। জয়গুন দুই মুঠো খেয়ে জীবন ধারণ করার জন্যই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে এসে উঠে পরিত্যক্ত পৈত্রিক ভিটা সূর্য দীঘল বাড়িতে। সাধারণত পশ্চিম- পূর্ব দিকে মুখ করা বাড়িকে সূর্য দীঘল বাড়ি বলে। গ্রামে সূর্য দীঘল বাড়ি নিয়ে একটা কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে এই বাড়িতে বসবাস করলে কেউ ঠিকে থাকতে পারে না।কিন্তু জয়গুনের অন্য কোন উপায় না থাকায় তাকে এই বাড়িতেই উঠতে হয়। গ্রামের মানুষ কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিল জয়গুনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এই বাড়ি হতে আসা বিপদ আপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য জয়গুন এক পীরের মাধ্যমে বাড়িকে মন্ত্র বলে বাধিয়ে রাখে। স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুনের এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই তার সংসার। তার ছেলে হাসু যে টাকা উপার্জন করত তা দিয়ে সংসার চলত না বলে সংসারের হাল তাকেও ধরতে হয়েছিল। জয়গুন ঢাকা থেকে চাল কিনে এনে ময়মনসিংহে বিক্রি করত। কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা জয়গুনের এই অবাদ চলাচলকে কেউই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিত না। তৎকালীন সময়ে মেয়েরা বাইরে কাজ করছে তা তো কল্পনাতেও চিন্তা করা যেত না। কিন্তু জয়গুন জীবনের তাগিদেই এই প্রথা ভেঙ্গেছে। স্বাধীনতার ফল মুষ্টিমেয় কিছু লোকেই ভোগ করে।দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে পারে না। স্বাধীনতা বলতে তাদের কাছে শুধু ক্ষমতার হাত বদল ব্যতীত অন্য কিছুই নয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগে মানুষের ধারণা ছিল দেশ ভাগ হয়ে গেলে তারা দিনে দুই বেলা খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারবে, তাদের জীবন যাপনের পদ্ধতি সহজ হবে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের পরে ঘটে উল্টো ঘটনা। আগের চেয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম দিগুন হারে বেড়ে যায়। সমাজের আর একটা শ্রেণি ধর্মটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। গ্রামের ধর্ম বিশ্বাসী সহজ সরল মানুষের এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে নিজের ফায়দা উসুল করেছে। তৎকালীন সময়ে নারীদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের কোন আত্ম মর্যাদা ছিল। প্রায় এক প্রকার বন্দি দশায় জীবন পার করতে হতো। কিন্তু লেখক জয়গুনের মাধ্যমে এই প্রথার অবসান ঘটিয়েছে। নারীরাও যে পুরুষের পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে পারে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। ব্যক্তিগত মতামত : ১৯৪০ এর দশকের পরবর্তী সময়ের সমাজ ব্যবস্থা এতটা জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন এক কথায় অসাধারণ। এই উপন্যাসটি পাঠ করে সহজেই জানা যায় তৎকালীন সময়ে সমাজ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন , ধর্মেকে কিভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, নারীদের শোচনীয় অবস্থা।
Was this review helpful to you?
or
Wonderful. Unexpectedly spectacular!
Was this review helpful to you?
or
সূর্য দীঘল বাড়ী সিনেমাটা আগে দেখেছি। এক কথায় বাংলা সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম সেরা সিনেমা। তাই স্বভাবতই উপন্যাসটিও না পড়ে পারলাম না। সিনেমার মতই উপন্যাসটাও দুর্দান্ত। উপন্যাসের শেষটায় যে দার্শনিক দিক অত্যন্ত সহজভাবে এসেছে তা হৃদয়ে দাগ কাঁটার মত বটে। চরিত্রগুলোও বাস্তব এবং শক্তিশালী। সূর্য দীঘল বাড়ী যেন বাংলার একটা সময়কালকে ধারন করে আছে।
Was this review helpful to you?
or
'সূর্য দীঘল বাড়ি' লেখক- আবু ইসহাক। ‘জোঁক’ গল্পের সার্থক গল্পকার আবু ইসহাক উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্যকর্ম রেখে গেছেন বাংলা সাহিত্যে বলার অপেক্ষা রাখে না। তার প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ একটি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীবনাখ্য। পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ নদ-নদী জলাভূমি-কৃষি ক্ষেতের পটভূমিকায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, তার মধ্যে রক্তচক্ষু বের করা কতিপয় মানুষ নামের চারপায়া জানোয়ার, কিভাবে দিনের পর দিন বছর শতাব্দী যাবৎ ধর্মীয় ভণ্ডামিতে আবদ্ধ করে রেখেছে আমাদের, তার প্রতিচ্ছবি তার সাহিত্যকর্মে তার মেধা মননে আমরা প্রত্যক্ষ করি। উপন্যাসের গতিপ্রকৃতি দেখে বিশ্বাস হবে, আবু ইসহাক খুব কাছ থেকে সমাজের এই পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ এবং অনগ্রসর নিুবৃত্তকে বড় বেশি মমতা মাখিয়ে তার উপন্যাসে স্থান করে দিয়েছেন।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ সূর্য দীঘল বাড়ি লেখকঃ আবু ইসহাক ভাষাঃ বাংলা ঘরনাঃ চিরায়ত উপন্যাস ব্যক্তিগত অনুযোগ (রেটিং): ৪.৮/৫ “সূর্য দীঘল বাড়ী মানুষের হাত লেগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। জয়গুন ও শফির মা আজেবাজে গাছ-গাছড়া বিক্রি করে টাকার আমদানী করে। তাতে অন্ধকার বাড়ীটায় আলোর আমদানীও হয় বেশ। নিজেদের ঝাড়ের বাঁশ কেটে খুঁটি হয়। খড়ের চালা ও পাটখড়ির বেড়া নিয়ে দু’ভিটের দু’খানা ঘর ওঠে। ঘর নয় ঠিক-ঝুপড়ি। রোদ-বৃষ্টি ঠেকানোর আদিম ব্যবস্থা।” এতোটা নিখুঁত বর্ণনা, এতোটা শৈল্পিক ছবিরূপ এবং মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগুতে থাকা মানব জীবনের উত্থান-পতনের সাক্ষ্যপ্রমাণ লেখা আছে এই বইতে। দারিদ্র্যতা, দুর্ভিক্ষ আর অস্তিত্ব সংকটে থাকা গ্রামীণ মানুষের গল্পগুলো তুলে ধরেছেন লেখক। বইটি শুরু হয়...... বাংলা সাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলোর একটি আবু ইসহাকের সূর্য-দীঘল বাড়ি। এটি ছিল লেখকের প্রথম উপন্যাস। ১৯৪৮ সালে এই উপন্যাসটি লেখা শেষ হলেও প্রকাশিত হতে সময় নেয় প্রায় ৬/৭ বছর। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর পর চারদিকে সাড়া ফেলে দেয় এই সূর্য-দীঘল বাড়ি। পরবর্তীতে এই বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করে। বাংলাদেশের সাহিত্যজগতের একটি কালজয়ী উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি।’ দেশ বিভাগের সময় ১৯৪৭ সালের আগে পরে। নানা চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে মাথা গোঁজার ঠায় পেতে জয়গুন তার ছেলে হাসু আর মায়মুন, তার ভাইবউ শফির মা আর শফি ফিরে আসে গ্রামে। মাথা গোঁজে সূর্য দীঘল বাড়িতে। সামাজিক কুসংস্কার আর বিধি-বাধা নিয়মে শিখিয়ে দেওয়া হয়, পূর্ব-পশ্চিমদিকে মুখ করা বাড়িগুলো সবসময় বহন করে চলে অভিশাপ। বংশ নির্বংশ হবার অভিশাপ। অগত্যা দুই নারী বাধ্য হয় বিশাল একাকী তাল গাছের নিচে একটু মাথা গোঁজার ঠায় করে নিতে। খাবার মুখে তোলার জন্য জীবন হয় কষ্টের, পরিশ্রমের, বেদনার। গাড়িতে, ট্রেনে করে দূর-দূরান্ত পাড়ি দেয় এক সের চালের জন্য। সেখানে হাসু কুলিগিরি করে, মায়মুন ঘর সংসার দেখে। জব্বর মুন্সীর স্ত্রী হিসেবে জয়গুনের রাস্তায় খাবারের খোঁজে নামা কেউ ভালো দেখেনা। কিন্তু সে নিরুপায়। তার দ্বিতীয় স্বামী করিম বখশ, ছেলে কাসুকে রেখে মায়মুন আর আরেক কন্যা সহ বের করে দেয়। কোলের মেয়েটি খাবারের অভাবে মারা যায়। দিন এর পর দিন কাসু কে না দেখা মা কাসু কে দেখতে অস্থির হয়ে থাকে। জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে ইট কাঠের শহরে দুই সন্তান নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল জয়গুন। কিন্তু যান্ত্রিক শহরও দিতে পারেনি ভাতের নিশ্চয়তা, তাই আরো অনেকের মত জয়গুনকেও ফিরে আসতে হয় তার নিজ গ্রামে। ততদিনে সহায় সম্বলহীন জয়গুনের মাথা গোজার ঠাইটুকুও হারিয়ে গেছে পঞ্চাশের মনন্তরে। বাসস্থান বলতে আছে নাবালক ভাইপো শফির সাথে অংশীদারের এক চিলতে ছাড়া ভিটে। ঝোপজঙ্গলে ছাওয়া সেই পরিত্যাক্ত ভিটেতেই দুটি ঘর তুলে নতুন করে সংসার পেতে নেয় অসহায় দুই নারী, জয়গুন ও শফির মা। কিন্তু এ যে সূর্য-দীঘল বাড়ি!! নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া বলতে গেলে অনেকটা হতচকিয়ে যাবো! এক অদ্ভূত কাহিনীকল্পে সাজানো হয়েছে পুরো উপন্যাসটিকে। ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র উপন্যাসের সময়কালে আরোহন করে গত শতাব্দীর বুর্জোয়াদের হটকারিতা আর প্রান্তিক মানুষের জীবন যন্ত্রণা খুব সহজে বুঝতে পারা যাবে। ঘটনার ঘনঘটা নেই, খুব সহজ ভাষায়, নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তৎকালিন ঘটনা প্রবাহ, জীবন-জীবিকা, প্রকৃতি আর মানুষের সরলতা ও পৈশাচিকতাকে। সূর্য-দীঘল বাড়ি নিয়ে চালু আছে বহু ভীতিকর কাহিনী, তাই সন্তানদের অমঙ্গলের আশঙ্কায় কেঁপে উঠে দুই মায়ের মন। জোবেদ আলী ফকিরের তাবিজ তাদের সেই আশঙ্কা দূর করে, শুরু হয় সূর্য-দীঘল বাড়িতে তাদের দিনযাপন। কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাস এ মোড়া এই উপন্যাস। এভাবে চলে জয়গুন এর জীবন। দেশ বিভাগ হলে ভেবেছিল তার ক্ষুধার কষ্ট চলে যাবে, যায় না। কেন? সত্যিকার অর্থে কি অভিশপ্ত এই ‘সূর্য দীঘল বাড়ী?’ উদ্দ্যম সাহিত্যিক আবু ইসহাকের ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ পাঠকদের হৃদয়ে এক মননশীল জগত গড়ে তুলবো, পাঠকদের পড়ার সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি......
Was this review helpful to you?
or
একটি বাড়ির নাম। তৎকালীন নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা গ্রামে এটির অবস্থান। ঢাকা শহরের কাছেই গ্রামটি। কিন্তু শহরের কাছাকাছি হলেও এখানকার গ্রামবাসীরা ডুবে আছে কুসংস্কারে। তাদের ধারণা যারাই এই বাড়িতে থাকবে তাদেরই কোনো না কোনো ক্ষতি হবে। এখানে ভূতদের বসবাস আছে তাই এমনটি হয়। গ্রামের কুসংস্কারগুলো চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এই বইয়ে।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যে এমন খুব কম লেখক আছেন যাদের প্রথম সাহিত্যকর্ম খ্যাতি অর্জন করেছে। আবু ইসহাক সেই কম সংখ্যক লোকদের একজন হতে পেরেছিলেন সূর্য দীঘল বাড়ি উপন্যাসটি লিখে। তার এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৭ এর দেশভাগ, নবগঠিত পাকিস্তান নিয়ে বাংলার মানুষের আশাভঙ্গ, গ্রামীণ সমাজের কুসংস্কার, মোড়ল শ্রেণির মানুষের ষড়যন্ত্র, সর্বোপরি গ্রামীণ নারীর জীবন সংগ্রাম ও প্রতিবাদী চেতনা। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র জয়গুন। জয়গুন হলো তাদের একজন যারা ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে কোন রকম প্রাণে বেঁচে ছিল। জয়গুনের প্রথম স্বামী জব্বার মুন্সী মারা যাওয়ার পর করিম বকশ নামে এক কৃষকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দুর্ভিক্ষের সময় করিম রকশ তাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। খাবারের আশায় জয়গুন শহরে ছুটে যায়। কিন্তু সেখান থেকে তাকে নিরাশ হয়ে গ্রামেই ফিরতে হয়। জয়গুন গ্রামে ফিরে এসে আশ্রয় নেয় তালগাছের ভিটা বলে পরিচিত তার বাবার রেখে যাওয়া সূর্যদীঘল বাড়িতে। তার সঙ্গে আসে তার প্রথম পক্ষের ছেলে হাসু্, দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে মায়মুন এবং তার ভাইয়ের বউ শফীর মা। তাদের সেই বাড়িটি ছিল পূর্ব-পশ্চিম মূখী। তাই এই বাড়িকে বলা হয় সূর্য দীঘল বাড়ি। এই বাড়ি গুলোকে অপয়া হিসেবে দেখা হতো। এ বাড়িতে বাস করা মানেই নির্বংশ হয়ে যাওয়া। কিন্তু জয়গুনের আর অন্য কোথাও গিয়ে বাস করার উপায় ছিলনা। এই বাড়িই ছিল তার একমাত্র সম্বল। তাই ভূতপ্রেতের উপদ্রব ও বংশনাশ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় জয়গুন গ্রামের সুবিধাবাদী ধর্মব্যবসায়ী জোবেদ আলীর দ্বারস্থ হয়। তথাকথিত ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে জোবেদ আলী সেই কথিত অপয়া বাড়ির চারদিক বন্ধন করে। ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে তথাকথিত ভূতের উপদ্রব কমলে্ও জোবেদ আলীর ছিল অন্য ইচ্ছ। সে জয়গুনের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। জীবিকার তাগিদে জয়গুন বাড়ির বাইরে কাজ করতে ছুটে। ময়মনসিংহ থেকে সস্তায় চাল কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতো সে। কিন্তু তার একার উপার্জন দিয়ে তাদেন সংসার চলতো না। তাই তার ছেলেকে নিতে হয় কুলির কাজ। তবে লাইনের কুলিদের মতো নম্বরধারী নয় বলে ছেলে হাসু স্টিমারঘাটে নির্বিঘ্নে কুলির কাজ করতে পারে না। তাই তাকে বেছে নিতে হয় বিকল্প পথ। গভীর নদী সাঁতরে স্টিমারে চড়ে যাত্রীদের বোঝা ধরতে হয় নম্বরধারী কুলিদের চেয়ে কম ভাড়ায়। জয়গুনের বাড়ির বাইরে কাজ করা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না মাত্তবর সমাজ। তাকে বাধতে চায় ধর্মের শৃঙ্খলে বার বার তার ব্যর্থ হয়। মেয়ের বিয়েতে তাকে বাধ্য করা হয় ত্ওবা করতে। মেয়ের ভবিষ্যৎ-জীবনের কথা ভেবে মিথ্যে অপবাদ গায়ে মেখে হার স্বীকার করে নিতে হয় তাকে।কিন্তু কেউ তাকে বলে দেয়না কি ভাবে তার সংসার চালাবে। এভাবে দিনের পর দিন ঘরে বসে থেকে তাদের না খেয়ে থাকতে হয় প্রায় সময়। অবশেষে সে ক্ষুধার কাছে হার মেনে যায়। বেরিয়ে যায় আবার কাজের খোঁজে। এর পরের বেড়ে যায় ভূতের উপদ্রব। রাতের আঁধারে তথাকথিত ভূত গদু প্রধান ্ও তার দল ধরা পরে করিম বকসের কাছে। সেই গদুপ্রধান যে জয়গুনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাক্ষিত হয়েছিল। গদুপ্রধান করিম বকসকে গলা চেপে হত্যা করে, সেই সত্য আর প্রকাশ হতে দেয়নি। এরপর জয়গুনকে ছাড়তে হয় সেই গ্রাম। আবু ইসহাক এই উপন্যাসের মাধ্যমে ততকালীন সমাজের অসঙ্গতি গুলো তুলে ধরেছেন। ধর্ম ব্যবসায়ী এবং সমাজের মোড়োলরা ধর্মকে ব্যবহার করতো নিজের স্বার্থ হাসিল করতে
Was this review helpful to you?
or
বাংলা ১৩৫০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পঞ্চাশের আকাল নামে যে দুর্ভিক্ষ হযেছিল তাতে প্রাণ হারায় বহু লক্ষ দরিদ্র মানুষ। যারা কোনমতো শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বেঁচে থাকতে পেরেছিল তদেরই একজন আকালের সময় স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইদের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন একখণ্ড জমিতে ঘর ওঠায় যা অপয়া ভিটা বলে পরিচিত ছিল। জীবনের যুদ্ধে যখন সে প্রাণপণে লড়ছে তখন তার প্রতি দৃষ্টি পড়ে গাঁয়ের মোড়লের। দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। সে কারো প্রস্তাবেই সায় দেয় না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাৎ ঘটে এবং মোড়ল তার প্রতিযোগীকে হত্যা করে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে। এই কাহিনীর বিচিত্রতার মধ্যে মূল বিষয় একটিই; তা হচ্ছে কুসংস্কার, সম্পদ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, সামাজিক বিধি-নিষেধ, এমনকি জাতীয়তাবোধ-এসব কিছুকেই কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবী ক্ষুধার্ত মানুষের ক্রমাগত শোষন।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা ১৩৫০ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে 'পঞ্চাশের আকাল' নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাতে বহু লক্ষ দরিদ্র মানুষ প্রাণ হারায়। যারা কোনমতে শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বাঁচতে পেরেছিল তাদেরই একজন একালের সময় স্বামী পরিত্যক্ত জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন এক খন্ড জমিতে ঘর তৈরী করে যেটি অপয়া ভিটে বলে পরিচিতি ছিল। জীবনের যুদ্ধে যখন সে প্রাণপণ লড়ছে তখন তার প্রতি গায়ের মোড়লের দৃষ্টি পড়ে। দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। সে কারো প্রস্তাবেই সায় দেয় না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাত ঘটে এবং মোড়ল তার প্রতিযোগীকে হত্যা করে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে। --এই কাহিনীর বিচিত্রতার মধ্যে মূল বিষয় একটিই; তা হচ্ছে কুসংস্কার, সম্পদ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, সামাজিক বাধা-নিষেধ, এমনকি জাতীয়তাবোধ- এ সব কিছুকেই কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবী ক্ষুধার্ত মানুষকে ক্রমাগত শোষণ।উপন্যাসের শেষাংশ খুবই হৃদয় বিদারক
Was this review helpful to you?
or
বইঃসূর্য দীঘল বাড়ি লেখকঃ আবু ইসহাক প্রথম প্রকাশঃ১৯৫৫ প্রকাশকঃনওরোজ সাহিত্য সম্ভার মূল্যঃ ১০৬টা ধরণঃ চিরায়িত বাংলার উপন্যাস সময় টা দেশ বিভাগের। ১৯৪৭ সালের আগে পরে।নানা চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে মাথা গোঁজার ঠায় পেতে জয়গুন তার ছেলে হাসু আর মায়মুন, তার ভাইবউ শফির মা আর শফি ফিরে আসে গ্রামে। মাথা গোঁজে সূর্য দীঘল বাড়িতে। পূর্ব-পশ্চিমদিকে মুখ করা এই বাড়িগুলো বহন করে চলে অভিশাপ। বংশ নির্বংশ হবার অভিশাপ। নিরুপায় এই দুই নারী বাধ্য হয় বিশাল একাকী তাল গাছের নিচে একটু মাথা গোঁজার ঠায় করে নিতে। খাবার মুখে তোলার জন্য কি জীবন এদের। গাড়িতে, ট্রেনে করে দূর-দূরান্ত পাড়ি দেয় এক সের চালের জন্য। হাসু কুলিগিরি করে মায়মুন ঘর সংসার দেখে। জব্বর মুন্সীর স্ত্রী হিসেবে জয়গুনের রাস্তায় খাবারের খোঁজে নামা কেউ ভালো দেখেনা। কিন্তু সে নিরুপায়। তার দ্বিতীয় স্বামী করিম বখশ, ছেলে কাসু কে রেখে মায়মুন আর আরেক কন্যা সহ বের করে দেয়। কোলের মেয়েটি খাবারের অভাবে মারা যায়। দিন এর পর দিন কাসু কে না দেখা মা কাসু কে দেখতে অস্থির হয়ে থাকে। এসবের মাঝেই এই অপয়া বাড়ি বন্ধ করে এক ফকির এসে।বার বার বছর বছর। একক পেতলের কলসী দেবার কথা ছিল। দেয়া হয়ে ওঠেনা। যাদের এক বেলা খাবার জোটে না,তারা পেতলের কলসি জোগান কি দেবে?? আবার ফকিরের কুৎসিত ইংগিত এ সাড়া না দেয়ায় আর বাড়ী বন্ধ করে না ফকির। এ মুখো আর হয়নি। সূর্য দীঘল বাড়ী থেকে দূরে থেকেও কাসু মরতে বসে।কাসু বাঁঁচবে?? সূর্য দীঘল বাড়ীর অভিশাপ কাটিয়ে জয়গুন কি টিকে থাকতে পারবে?? পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বই এর নাম আরো আগে জানা সেই স্কুলে থাকার সময়, জোঁক গল্প পড়ার সময়। কলেজ উঠে পড়েছিলাম। কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাস এ মোড়া এই উপন্যাস। এভাবেই চলে জয়গুন এর জীবন। দেশ বিভাগ হলে ভেবেছিল তার ক্ষুধার কষ্ট চলে যাবে, যায় না। কেন?? আসলেই কি অভিশপ্ত সূর্য দীঘল বাড়ী??? সূর্য দীঘল নামটা পারসোনালি আমার খুব প্রিয়।কিন্তু এটা যে অভিশাপ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
Was this review helpful to you?
or
Love the story. Splendid!
Was this review helpful to you?
or
কোন বই পড়া শুরু করলে মনে হয় কখন শেষ হবে। কিন্তু সূর্য দীঘল বাড়ী যখন পড়া শুরু করি তখন মনে হচ্ছিলো বইটি যেন শেষ না হয়। বইটি শেষ করে ২ দিন নতুন কোন বই পড়া শুরু করতে পারিনি কারন তার রেষ কাটতে ২ দিন লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
"সূর্য দীঘল বাড়ী" নামক টাইমমেশিনে আরোহন করে গত শতাব্দীর বুর্জোয়াদের হটকারিতা আর প্রান্তিক মানুষের জীবন যন্ত্রণা খুব সহজে বুঝতে চাইলে বইটি পড়তে পারেন যে কেউ। ঘটনার ঘনঘটা নেই, সাহিত্যিক দেখাননি সিনেমামাটিক কারিশমা। খুব সহজ ভাষায়, নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তৎকালিন ঘটনা প্রবাহ, জীবন-জীবিকা, প্রকৃতি আর মানুষের সরলতা ও পৈশাচিকতাকে। উইকিপিডিয়া থেকে কাহিনী সংক্ষেপঃবাংলা ১৯৫০ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভুক্ত ভারতের বাংলায় ব্যাবসাসীদের কারসাজিতে 'পঞ্চাশের আকাল' নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তটে বহু লক্ষ দরিদ্র মানুষ প্রাণ হারায়। যারা কোনমতে শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বাঁচতে পেরেছিল তাদেরই একজন একালের সময় স্বামী পরিত্যক্ত জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর গোরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন এক খন্ড জমিতে ঘর তৈরী করে যেটির অপয়া ভিতে বলে পরিচিতি ছিল। জীবনের যুদ্ধে যখন সে প্রানপন লড়ছে তখর তর প্রতি গায়ের মরলের দৃষ্টি পড়ে। দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। সে কারো প্রস্তাবেই সে দেয় না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাত ঘটে এবং মরল তার প্রতিযোগীকে হত্যা করে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়্গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে। --এই কাহিনীর বিচিত্রতার মধ্যে মূল বিষয় একটিই; তা হচ্ছে কুসংস্কার, সম্পদ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, সামাজিক বাধা-নিষেধ, এমনকি জাতীয়তাবোধ- এ সব কিছুকেই কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবি ক্ষুধর্তো মানুষকে ক্রমাগত শোষণ।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত একটি উপন্যাস। পড়ে খুব ভালো লেগেছে । অবশ্য মুভিটাও দেখেছি
Was this review helpful to you?
or
নামকরণের কারণ: পূর্ব-পশ্চিম প্রসারী বাড়ির নাম সূর্যদীঘল বাড়ি( যা অমঙ্গলজনক বলে প্রচলিত)। উপন্যাসটি সেই বাড়িতে বসবাসকারী চরিত্রগুলো দ্বারা নির্মিত। কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ধর্মব্যবসায়ী দ্বারা নিপীড়িত আর দুর্ভিক্ষপীড়িত এক সংগ্রামী নারী চরিত্রের গল্প এটি। এখানে জয়গুন দুর্ভিক্ষের কাছে নত না হয়ে উপার্জনের পথ ধরে। হাসুর মোট বহন করার মাধ্যমে জীবন সংগ্রাম আর মায়মুনের মতো নারীদের তৎকালীন শ্বশুর বাড়িতে অবজ্ঞার করুণ চিত্র নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। কাসুর প্রতি জয়গুনের ভালোবাসা চিরায়ত মায়েরই ভালোবাসা। উপন্যাসের খুরশীদ মোল্লার রিলিফের চিনি চুরির ঘটনার মাধ্যমে লেখক আবু ইসহাক তখনকার যে লোভী ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের মুখোশ উম্মোচন করেছেন তা আজকের সমাজেও প্রতীয়মান। আর সব শেষে গেদু প্রধানের হাতে করিম বকসের মৃত্যু ভূতের কাণ্ড হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে, তাদের সূর্য দীঘল বাড়িতে বাসস্থানের অবসান ঘটে।যার মধ্য দিয়েই উপন্যাসের সমাপ্তি।
Was this review helpful to you?
or
সূর্য দীঘল বাড়ি উপন্যাসটিতে তৎকালীন সমাজের চিত্র খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছি। আমি সাধারণত কোন জনপ্রিয় বই ছাড়া পড়িনা। এই বইটার জনপ্রিয়তা দেখেই আমি পড়তে গিয়েছিলাম কিন্তু মন থেকে বলছি আসলে বই টা খুবই সুন্দর। যদিও প্রথমদিকে আমিও জনপ্রিয়তা দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলাম কিন্তু বইটি পড়ার পরে আমার সেই ভুল ভেঙেছে। বইটিতে অবশ্য কিছু আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো সাধারণত বরিশাল নোয়াখালী অঞ্চলের লোকদের হয়তো খুব একটা অসুবিধা হবে না। তাররপরও আমার খুব একটা অসুবিধা হয় নি তারপরে আরো সহজ হলো বইয়ের শেষে দেখি যেসকল আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর আবার দেওয়া হয়েছে। এটা দেখে আরো বেশি ভালো লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃনিষিদ্ধ লেবানন লেখকঃসৈয়দ শামসুল হক পাবলিকেশন্সঃঅন্যান্য মূল্যঃ১২০ টাকা সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান‘ উপন্যাসটি নিয়ে রিভিউ লেখার ইচ্ছে অনেক দিনের। সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শক্তিমান একজন লেখক এবং তার লেখা অসংখ্য বইয়ের মধ্যে নিষিদ্ধ লোবান বইটি অন্যতম। যারা তার এই বইটি পড়েছেন, প্রায় সবাই বলেছেন অসম্ভব ভাল একটি বই। বইটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বেশি ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তখন কোন জাত-পাত ছিল না, হিন্দু-মুসলমান ছিল না, সবাই সবাইকে সাহায্য করেছে প্রানের মায়া ত্যাগ করে। অনেক হিন্দু পরিবারকেও আশ্রয় দিয়ে ছিল কট্টর মুসলমান পরিবার। পাকিস্থানী হানাদাররা কতটা ভয়ন্কর ছিল এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষদের বিশেষ করে হিন্দুদের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন ছিল তার পরিষ্কার বর্ননা আছে বইটিতে।যুদ্ধের ভয়াবহতার বাস্তব প্রতিচ্ছবি যেন এ উপন্যাস। বাঙালি জাতি কতটা ত্যাগের সহিত এবং কতটা নির্যাতিত হয়েছে তার উল্লেখ এ বইয়ে পাওয়া যায়। চোখ দিয়ে পানি চলে আসে বইটি পড়ার সময়। অসাধারণ একটি উপন্যাস। সবার অন্তত একবার হলেও পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
সূর্য-দীঘল বাড়ি বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী উপন্যাস। লেখক চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের ততকালীন সময়ের প্রচলিত কুসংস্কার ও তার আরোপকারীদের। এবং প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ যে কোন সংস্কার গুড়ো করতে পারে তা হোক তা সু অথবা কু। আসলে মানুষের অন্ধ বিশ্বাসই মানুষের সবচে বড় বাধা। একজন মা শুধু দুমুঠো ভাতের জন্য ছেলেকে পাঠায় শহরে আবার নাড়িছেঁড়া ধনের মায়া ও চিন্তাও খামচে ধরে ক্ষনে ক্ষনে। উপন্যাসটি পড়া শেষ আমার একটা প্রশ্ন খুব পীড়া দিচ্ছিল যে, আদোও কি আমরা সেই সূর্যদীঘল বাড়ির প্রেক্ষাপট থেকে বের হতে পেড়েছি?
Was this review helpful to you?
or
বইঃসূর্য দীঘল বাড়ি লেখকঃ আবু ইসহাক প্রথম প্রকাশঃ১৯৫৫ প্রকাশকঃনওরোজ সাহিত্য সম্ভার মূল্যঃ ১০৬৳ ধরণঃ চিরায়িত বাংলার উপন্যাস কাহিনীঃ সময় টা দেশ বিভাগের। ১৯৪৭ সালের আগে পরে।নানা চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে মাথা গোঁজার ঠায় পেতে জয়গুন তার ছেলে হাসু আর মায়মুন, তার ভাইবউ শফির মা আর শফি ফিরে আসে গ্রামে। মাথা গোঁজে সূর্য দীঘল বাড়িতে। পূর্ব-পশ্চিমদিকে মুখ করা এই বাড়িগুলো বহন করে চলে অভিশাপ। বংশ নির্বংশ হবার অভিশাপ। নিরুপায় এই দুই নারী বাধ্য হয় বিশাল একাকী তাল গাছের নিচে একটু মাথা গোঁজার ঠায় করে নিতে। খাবার মুখে তোলার জন্য কি জীবন এদের। গাড়িতে, ট্রেনে করে দূর-দূরান্ত পাড়ি দেয় এক সের চালের জন্য। হাসু কুলিগিরি করে মায়মুন ঘর সংসার দেখে। জব্বর মুন্সীর স্ত্রী হিসেবে জয়গুনের রাস্তায় খাবারের খোঁজে নামা কেউ ভালো দেখেনা। কিন্তু সে নিরুপায়। তার দ্বিতীয় স্বামী করিম বখশ, ছেলে কাসু কে রেখে মায়মুন আর আরেক কন্যা সহ বের করে দেয়। কোলের মেয়েটি খাবারের অভাবে মারা যায়। দিন এর পর দিন কাসু কে না দেখা মা কাসু কে দেখতে অস্থির হয়ে থাকে। এসবের মাঝেই এই অপয়া বাড়ি বন্ধ করে এক ফকির এসে।বার বার বছর বছর। একক পেতলের কলসী দেবার কথা ছিল। দেয়া হয়ে ওঠেনা। যাদের এক বেলা খাবার জোটে না,তারা পেতলের কলসি জোগান কি দেবে?? আবার ফকিরের কুৎসিত ইংগিত এ সাড়া না দেয়ায় আর বাড়ী বন্ধ করে না ফকির। এ মুখো আর হয়নি। সূর্য দীঘল বাড়ী থেকে দূরে থেকেও কাসু মরতে বসে।কাসু বাঁঁচবে?? সূর্য দীঘল বাড়ীর অভিশাপ কাটিয়ে জয়গুন কি টিকে থাকতে পারবে?? পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ বই এর নাম আরো আগে জানা সেই স্কুলে থাকার সময়, জোঁক গল্প পড়ার সময়। কলেজ উঠে পড়েছিলাম। কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাস এ মোড়া এই উপন্যাস। এভাবেই চলে জয়গুন এর জীবন। দেশ বিভাগ হলে ভেবেছিল তার ক্ষুধার কষ্ট চলে যাবে, যায় না। কেন?? আসলেই কি অভিশপ্ত সূর্য দীঘল বাড়ী??? সূর্য দীঘল নামটা পারসোনালি আমার খুব প্রিয়।কিন্তু এটা যে অভিশাপ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। রেটিং ঃ৫/৫ রকমারি ঃhttps://www.rokomari.com/book/29704/সূর্য-দীঘল-বাড়ী(বাংলা-একাডেমী-পুরষ্কার-১৯৬২-৬৩)
Was this review helpful to you?
or
'নওরোজ সাহিত্য সম্ভার' এর বইগুলোর প্রোডাকশন কোয়ালিটি খুবই বাজে। তাদের অন্তত কিছু না হলেও বাংলার ক্লাসিক বইগুলোতে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি বা ভালো কোয়ালিটি ইনশিওর করা উচিৎ। পেজ কোয়ালিটি তুলনামূলক ভালো হলেও বাইন্ডিং এবং হার্ডকোভার কোনটিই মানসম্মত নয়। (বইটি খুবই ভাল। বইটির জন্য ৫ স্টার)
Was this review helpful to you?
or
কথিত আছে, পূর্ব-পশ্চিম প্রসারী বাড়ি অশুভ; এই বাড়ির বাসিন্দাদের বংশ রক্ষা হয়না। পূর্ব-পশ্চিম সূর্য উদয়াস্তের দিক হওয়ার এ ধরনের বাড়িকে বলা হয় সূর্য-দীঘল বাড়ি। এরকমই এক বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে এ উপন্যাসের কাহিনী। জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে ইট কাঠের শহরে দুই সন্তান নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল জয়গুন। কিন্তু যান্ত্রিক শহরও দিতে পারেনি ভাতের নিশ্চয়তা, তাই আরো অনেকের মত জয়গুনকেও ফিরে আসতে হয় তার নিজ গ্রামে। ততদিনে সহায় সম্বলহীন জয়গুনের মাথা গোজার ঠাইটুকুও হারিয়ে গেছে পঞ্চাশের মনন্তরে। বাসস্থান বলতে আছে নাবালক ভাইপো শফির সাথে অংশীদারের এক চিলতে ছাড়া ভিটে। ঝোপজঙ্গলে ছাওয়া সেই পরিত্যাক্ত ভিটেতেই দুটি ঘর তুলে নতুন করে সংসার পেতে নেয় অসহায় দুই নারী, জয়গুন ও শফির মা। কিন্তু এ যে সূর্য-দীঘল বাড়ি!!! সূর্য-দীঘল বাড়ি নিয়ে চালু আছে বহু ভীতিকর কাহিনী, তাই সন্তানদের অমঙ্গলের আশঙ্কায় কেঁপে উঠে দুই মায়ের মন। জোবেদ আলী ফকিরের তাবিজ তাদের সেই আশঙ্কা দূর করে, শুরু হয় সূর্য-দীঘল বাড়িতে তাদের দিনযাপন। চার সন্তানের মধ্যে হাসু আর মায়মুনই এখন জয়গুনের সুখদুঃখের সাথী। দারিদ্র্যের কাছ থেকে এই কচি বয়সেই তারা অর্জন করে নিয়েছে পরিশ্রম আর সংযমের শিক্ষা। হাসুর ছোট্ট কাঁধ মায়ের সাথে ভাগ করে নেয় জীবিকানির্বাহের ভারী বোঝা। আর দশ বছরের অপুষ্ট রোগা ময়মুন তার শীর্ণ দুই হাতে সামলে নেয় গৃহস্থালির সিংহভাগ কাজ। এদিকে জয়গুনের আরেক সন্তান কাসু করিম বক্সের নজরদারির দৃঢ় বন্ধনে বড় হতে থাকে তার সৎমার সংসারে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সাথে পাল্লা দিয়ে মায়মুনের বিয়ে, কাসুর শূন্যতা, সমাজপতিদের নির্দেশ, করিম বক্সের চোখ রাঙ্গানি, গদু প্রধানের প্রস্তাব যখন দিশাহারা করে দেয় জয়গুনকে, ঠিক সেই সময়টাতেই ক্ষেপে উঠে সূর্য-দীঘল বাড়ির ভূত; এক অমাবশ্যার রাতে কাচের টুকরার মত ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায় জয়গুনের সব মনোবল, শুরু হয় এক নতুন আশ্রয়ের খোঁজ। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ গ্রামবাংলার আবহে রচিত এ উপন্যাসটি আমার অসম্ভব ভাললাগার একটি উপন্যাস। দুঃখ-কষ্টে পীড়িত অসহায় মানুষগুলোর প্রতিচ্ছবি এত সুস্পষ্টভাবে এখানে ফুটে উঠেছে যে তাদের দুদর্শার উত্তাপ খুব সহজেই স্পর্শ করেছে পাঠকের মন। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে শেষের চমকটা, যার জন্য আমি আদৌ প্রস্তুত ছিলাম না। বই পরিচিতিঃ বাংলা সাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলোর একটি আবু ইসহাকের সূর্য-দীঘল বাড়ি। এটি ছিল লেখকের প্রথম উপন্যাস। ১৯৪৮ সালে এই উপন্যাসটি লেখা শেষ হলেও প্রকাশিত হতে সময় নেয় প্রায় ৬/৭ বছর। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই চারদিকে সাড়া ফেলে দেয় এই সূর্য-দীঘল বাড়ি। পরবর্তীতে এই বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করে। লেখক পরিচিতিঃ আবু ইসহাকের জন্ম ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর, তৎকালীন মাদারিপুর জেলার শিরঙ্গল গ্রামে। তিনি ১৯৪২ সালে স্কলারশিপ নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন, আর গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত থেকে ১৯৮৪ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি মরণের কোলে ঢলে পড়েন বাংলা সাহিত্যের এই কীর্তিমান লেখক।
Was this review helpful to you?
or
দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ আঃর অস্তিত্বের সংকটে গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনে একই সাথে যেভাবে পরিবার, মাতৃত্ব, ভালোবাসার বিষয়গুলোও যে প্রধান হয়ে ওঠে তারই মিথষ্ক্রিয়া ঘটেছে এই উপন্যাসে।
Was this review helpful to you?
or
#Rokomari_Book_Club_Review_Competition #রকমারি_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২১ বইয়ের নাম:সূর্য- দীঘল বাড়ী লেখক: আবু ইসহাক রিভিউ করছি : রুফাইদা তাসফিয়াত ফিজা ক্যাটাগরি:উপন্যাস আবু ইসহাকের রচিত উপন্যাস 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' কে বাংলা সাহিত্যের এক মাস্টারপিস বললে কথাটা মোটেই অতিরঞ্জিত হয় না।কারণ দীর্ঘকাল ধরে পারিপার্শ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে সংগ্রামরত এক নারীকে লেখক এ উপন্যাসে মহিমান্বিত করে তুলেছেন। উপন্যাসটিতে ১৯৪৭ এর সময়কালীন গ্রাম্য এলাকার কথা প্রকাশ পায়,যদিও ১৯৪৩ সালের সেই দূর্ভিক্ষের (পঞ্চাশের মন্বন্তর) রেশ ধরে উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র জয়গুন সেই দূর্ভিক্ষে দিশেহারা হয়েই গ্রাম ছেড়ে দুমুঠো অন্নের সন্ধানে ছেলেমেয়েকে নিয়ে শহরে পা বাড়িয়েছিল।তার স্বামী ছিল, জলজ্যান্ত পুরুষ করিম বকশ।কিন্তু লেখকের ভাষ্যে, সে বিনা দোষে জয়গুনকে তালাক দেয়।দুর্নামের ভয়ে জয়গুন কিছুদিন ঘরে বসে থাকলেও খাদ্যাভাবে কোলের খুকি মারা যাওয়ায় বাকি সন্তানদের বাঁচাতে লোকনিন্দা উপেক্ষা করে সে শহরের পথ ধরে। শহরের রূঢ় বাস্তবতার আঘাত গায়ে সয়ে জয়গুন শেষ পর্যন্ত গ্রামেই ফিরে আসে। ছেলেকে কুলির কাজে লাগিয়ে দেয়,নিজেও অন্য এলাকা থেকে চাল এনে বিক্রি করে সংসার চালাতে থাকে।তার সঙ্গী হয় তার বিধবা ভাজ,(ভাবী)শফির মা ও তার ছেলে।তাদের সকলের ঠাঁই হয় গ্রামের পরিত্যক্ত সূর্য- দীঘল বাড়ীতে।গ্রামের মুরুব্বিদের মতে,পূর্ব-পশ্চিম প্রসারী সূর্য-দীঘম বাড়ী অকল্যাণকর, এখানে বাস করলে বংশ লোপ পায়।এক ফকিরের 'ধুলাপড়া'র আশ্রয় নিয়ে জয়গুন ও শফির মা সেই বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। গল্প এগিয়ে চলে গ্রামীণ সমাজের অববাহিকায়। দরিদ্র তালাকপ্রাপ্তা নারী বলে জয়গুনের উপর একের পর এক বিধিনিষেধের বেড়াজাল নেমে আসতে থাকে।স্বামীর ঘরে রেখে আসা ছোট্ট কাসুর উপর থেকেও অধিকার হারায় সে। দশ বছর বয়সী মেয়ে মায়মুনের বিয়ের স্বার্থে 'তওবা' করে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করা হয় তাকে।মায়মুনের কপালেও সংসারের সুখ জোটেনি,বিয়ের অল্প কয়দিন পরেই তাকে সূর্য দীঘল বাড়িতে ফিরে আসতে হয়।সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে জয়গুন আবার বের হলে গ্রামের নেতৃস্থানীয় গদু প্রধান বিভীষিকাময় করে তোলে তাদের জীবন। জয়গুনের স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও সে তাতে কর্ণপাত করেনি। গদু প্রধানের চক্রান্তে করিম বকশের মৃত্যু ও অজানার উদ্দেশ্যে জয়গুনদের রওয়ানা দেয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় উপন্যাসের কাহিনী। উপন্যাসের ভাষা বিচারে লেখক যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। খাঁটি আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ের সামনে কাহিনীকে জীবন্ত করে তুলেছেন। সহজবোধ্য বর্ণনায় সেকালের সামাজিক কাঠামোকে প্রতীকায়িত করেছেন। উপন্যাসটিতে লেখক আসলে তৎকালীন গ্রামীণ সমাজের গোঁড়ামি,ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের প্রতি আলোকপাত করেছেন।একই ধারাবাহিকতায় এসেছে জয়গুন তথা গ্রামীণ দরিদ্র নারীর সন্তানবাৎসল্য ও আত্মসম্মানের প্রসঙ্গ।জয়গুন দরিদ্র হতে পারে,কিন্তু সে আর কোনো পুরুষকে বিয়ে করে তার হাতে নিজের সম্মান রক্ষার ভার দিতে চায় না। সমকালীন সমাজের পুরুষতন্ত্রমনা মাতব্বরদের প্রতি কী চমৎকার কটাক্ষ!একই সাথে সে জবাব দিয়েছে তাকে ঘরে আটকে রাখতে চাওয়া গদু প্রধানকেও।পাঠক প্রশ্ন তুলতেই পারেন,তাহলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জয়গুন ভিটেমাটি ছাড়ল কেন?উত্তরটা লুকিয়ে রয়েছে নারী চরিত্রের মধ্যেই,ছেলেমেয়ের অমঙ্গল হবে যে! আরেকটি বিষয়ে কথা না বললেই নয়।তখনকার সমাজে বিদ্যমান মধ্যস্বত্বভোগী,সোজা বাংলায় 'দালাল' দের যে চিত্র লেখক 'খুরশীদ মোল্লা' চরিত্রের মধ্য দিয়ে এঁকেছেন,তা অত্যন্ত বাস্তব।নবপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতিতে পূর্ব বাংলায় এমনিতেই খাদ্যসঙ্কট প্রবল,অন্যদিকে এই দালাল শ্রেণির আধিপত্যের কারণে সৃষ্ট নানাবিধ অভাবে গ্রামের দরিদ্র, মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাভিশ্বাস উঠেছিল। যাহোক, আর বেশি বলতে চাই না।পাঠক,আপনি ইতোমধ্যেই যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।সম্পূর্ণ লেখাটা পড়ার জন্য আপনাকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।একই সাথে অনুরোধ করছি, 'সূর্য -দীঘল বাড়ী' থেকে অন্তত একবার হলেও ঘুরে আসুন।বইটি আপনাকে নিয়ে যাবে সেই পঞ্চাশের দশকে। আমাদের আবহমানকালের গ্রামের অতীতের দৃশ্য দেখতে ততটা মন্দ লাগবে না আপনার,এই নিশ্চয়তা দিয়ে শেষ করছি।
Was this review helpful to you?
or
নিঃসন্দেহে "সূর্য দীঘল বাড়ী" আবু ইসহাকের একটি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।তার এই রচনায় খুব সুন্দর ভাবে সমাজের নিম্ন বিত্তদের জীবন সংগ্রাম, মোড়ল কর্তৃক গরীব শোষণ, সমাজের কুসংস্কার, জনসাধারণের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, আপর দিকে ধর্ম কে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর প্রতারণা, সস্তায় চাল পাওয়ার আশায় দেশের স্বাধীনতা কামনা করা, সমাজে মেয়েদের প্রতি একপ্রকার অবজ্ঞা, মানবিক সম্পর্কের চাহিদা, তাকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।বাংলা সাহিত্যের এই শ্রেষ্ঠ কর্ম সকল সাহিত্য পাঠকের অবশ্যই পাঠ করা উচিত।
Was this review helpful to you?
or
এটি বাংলা সাহিত্যের একটি উপন্যাস যেটি নিয়ে একটি পুরষ্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, এমন একটা মনোভাব নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু উপন্যাসটি পড়া শুরু করার পর আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এতটা মুগ্ধতা আমি আশা করিনি। বইটির ভাষা সহজ। অনেক উপন্যাসে দেখা যায় কোন বর্ণনা দেবার সময় একটা দীর্ঘসুত্রিতা চলে আসে, অনেক দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর একটা বর্ণনা পড়তে হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, বর্ণনা এত ছোট থাকে, দৃশ্যটা পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে না। কিন্তু এই উপন্যাসটির ক্ষেত্রে এমন কোন অভিযোগ আমি করতে পারিনি। প্রতিটি বর্ণনা আমার কাছে খুব নিখুঁত মনে হয়েছে, না খুব বড় না খুব ছোট। জটিল কোন কাহিনী নয়, গ্রাম বাংলার কাহিনী, অভাব অভিযোগ আছে, মানবিক সম্পর্কের জটিলতা আছে, কুসংস্কার আছে, ষড়যন্ত্র আছে, বেঁচে থাকার লড়াই আছে। সূর্য দীঘল বাড়ির নাম কেন সূর্য দীঘল বাড়ি সেই ইতিহাসটিও কৌতুহলোদ্দীপক। উপন্যাসের কলেবর হয়তো ছোট, কিন্তু মনে রাখার মত একটি উপন্যাস। বাংলাদেশের সাহিত্যে এত সুন্দর এবং মানসম্পন্ন উপন্যাসের সংখ্যা খুব বেশি না। আবু ইসহাক সারা জীবনে তিনটি উপন্যাস লিখেছেন। এটি নি:সন্দেহে তার সেরা লেখা। আমরা সবসময় শুনে এসেছি, আমাদের, মানে বাংলাদেশীদের শেকড় হচ্ছে গ্রাম। এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, বাংলাদেশের লেখকেরা সেই গ্রামবাংলার গল্পই সবচেয়ে সুন্দরভাবে বলতে পারেন। সূর্যদীঘল বাড়ি, পদ্মার পলি দ্বীপ, লালসালু, সংশপ্তক এর সবই গ্রামবাংলার মানুষের জীবনের গল্প। আমি মনে করি এই উপন্যাস যে কোন বাংলা সাহিত্যের পাঠকের পড়া উচিত। সবাইকেই আমি এই উপন্যাসটি পড়তে অনুরোধ করব।