User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Md Alamin

      04 Sep 2024 04:44 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      not bad

      By Md. Safin Al-Jubair

      18 Mar 2024 05:45 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধুকে চেনার সহজ উপায়

      By Songlap

      11 May 2023 06:01 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Nice book

      By Shohag

      25 Feb 2023 04:22 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Good Book!

      By Saad Khan

      21 Mar 2022 02:10 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Thatsc Amazing

      By Shaief Salauddin

      15 Feb 2022 03:34 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Excellent Service.

      By Tapon Kumar Biswas

      07 Dec 2021 07:51 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Bhalo chilo

      By Najmus Shakib

      25 Nov 2021 12:33 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      অনবদ্য

      By NAFIUR RAHMAN SHUVO

      18 Oct 2021 02:11 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      শেখ মুজিবের লেখনী একজন সাহিত্যিকের সমতূল্য। অসমাপ্ত আত্নজীবনী গ্রন্থে উনি নিজের ছেলেবেলা থেকে বড় হওয়া, পরিবারের কথা, ছাত্র আন্দোলন- সংগ্রাম সহ নানা অজানা ঘটনার উল্লেখ করেছেন। এগুলো তো গেল জ্ঞানার্জনের জন্য তবে বর্তমানে এমন কোনো চাকরির পরীক্ষা নেই যেখানে এই বই হতে প্রশ্ন করা হয়না। তাই পরীক্ষার আগে কারও নোট দেখার চেয়ে একবার সময় থাকতে পড়ে নিন, তাহলে সাহিত্য গ্রন্থ পড়ার স্বাদের সাথে পরীক্ষার প্রস্তুতিও হয়ে যাবে। আসুন বই পড়ি, মনের পরিধি বৃদ্ধি করি একই সাথে যোগ্য বাঙালি এবং বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে আত্নপ্রকাশ করি।ধন্যবাদ সকল পাঠক ভাই/বোনদের কে...

      By kanak mahmud

      15 Oct 2021 12:22 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      good

      By Susmoy Debnath

      13 Sep 2021 01:35 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Incredible Book!

      By Amartya Swapnil Prionta

      01 Sep 2021 01:47 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      Pora ucit.

      By Salma Huney

      31 Aug 2021 09:39 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইয়ের নামঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী। লেখকের নামঃ শেখ মুজিবুর রহমান। প্রকাশনীঃ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। প্রকাশকঃমহিউদ্দিন আহমেদ। প্রথম প্রকাশঃ ১৮ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠাঃ ৩৩০(আত্মজীবনী ২২৮) মূল্যঃ ২২০ টাকা ISBN: 9789845061957 হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শৈশব,কৈশর,শিক্ষাজীবন, নিজ গ্রাম,দেশপ্রেম,সফলতা,রাজনীতি ও ভাষা আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে দীর্ঘ এক জীবন কাহিনী রচিত হয়েছে তাঁর "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইতে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস,ত্যাগ,তিতিক্ষা,সহকর্মীদের কথা তিনি এতে উল্লেখ করেছেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এক নেতার বাস্তব গল্প প্রস্ফুটিত হয়েছে এই বইটিতে। মূলত দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, পূর্ব বাংলার রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন বইটির মূল উপজীব্য। কাহিনী সংক্ষেপঃ "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইটির কাহিনী যখন শুরু হয় তখন গোপালগঞ্জ ফরিদপুর জেলার একটি মহকুমা। ফরিদপুরের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের,১৭ ই মার্চ শেখ মুজিব জন্ম গ্রহণ করেন। অন্য দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের মতোই তাঁরও জীবন শুরু হয়। ১৯৪১ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরিক্ষা দেন। জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে,একাধিকবার স্কুল পাল্টেছিলেন তিনি। স্কুলে থাকাকালীন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর শুরু হয় ধীরেধীরে তাঁর সাধারণ একজন ছাত্র হতে মুসলিম লীগের এক সাধারণ কর্মী এবং আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ার গল্প। বাবার সাথে দেখা হলেই চলতো রাজনীতি নিয়ে কথোপকথন আর বৃটিশদের শেকড় হতে মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে সেসময় তিনি অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। কিন্তু নিজের নেতার সাথে আপোষ করেননি তিনি। বইটির ২৯ পৃষ্ঠার একটি খন্ড বাক্যে তা সুস্পষ্ট তুলে ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের উদাহরণ ছিলেন। যিনি রাজনীতিকে কেন্দ্র করে জেল খাটেন বারবার। ১৯৫২ সালে রাজবন্দীদের কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদে সহকর্মী মহিউদ্দিন সহ অনশন ধর্মঘট করেন কারাগারে বসে । দীর্ঘ সময় ধরে পরিবার ও সন্তানদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এক স্বামী, এক বাবার মধ্যকার হাহাকার ফুটে উঠে "অসমাপ্ত আত্মজীবনীর" বায়ান্নর দিনগুলি" নামক অংশটিতে। অবশেষে মুক্তি পেয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে আসার স্মৃতির হৃদয়স্পর্শী বিবরণও পরিস্ফুট হয়েছে সংকলিত অংশে। বইটির কিছু অনন্য উক্তিঃ   তাঁর জীবনীগ্রন্থের প্রারম্ভের দ্বিতীয় ও তৃতীয় লাইনে- ★'আমার সহধর্মিণী একদিন জেল গেটে বলল, ‘বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবন কাহিনী’ (পৃঃ ১)। ★‘পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে (পৃঃ ৪৭)।’  ★‘পাকিস্তান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল (পৃঃ ৭৫)।’ ★'নেতারা যদি নেতৃত্ব দিতে ভুল করে,জনগণকে তার খেসারত দিতে হয়'(পৃঃ ৭৯) ★দুর্নীতি বেড়ে গেছে, খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে (পৃঃ ১২৬)।’ ★‘ছেলেমেয়েদের জন্য যেন একটু বেশি মায়া হয়ে উঠেছিল। ওদের ছেড়ে যেতে মন চায় না, তবু তো যেতে হবে (পৃঃ ১৬৪)।’  ★‘এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ার মানুষের ওপর শোষণ বন্ধ হতে পারে না (পৃঃ ২৩৪)।’ বইটি কেন পড়বোঃ *বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বইটি থেকে ভাষা আন্দোলন তথা বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। *বাঙালির জাতীয়তাবাদ চেতনার দৃঢ় পরিচয় পাবে। *বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের মতার্দশ সম্পর্কে জানতে ও নিজ জীবনে অনুশীলন করতে পারবে। *বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার মানসিক দৃঢ়তা ও সাহসকে বুকে সঞ্চয় করে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম তেজি হয়ে উঠবে। দেশমাতৃকার জন্য নিজকে বিসর্জন দিতে পিছপা হবে না। *সর্বোপরি, বঙ্গবন্ধুে কর্মচঞ্চল জীবন,রাজনীতির অনন্য উদাহরণ ও তাঁকে জানার অনন্য মাধ্যম এই বইটি। কিছু কথাঃ ১৯৬৭ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ থাকাবস্থায় "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইটি রচনা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। বইটি যেমন শুরু হয়েছে ত্যাগ,তিতিক্ষা,সংগ্রাম আর আনন্দ অশ্রু দিয়ে ঠিক তেমনি শেষ হয়েছে কিছুটা অতৃপ্তি দিয়ে। যেমনি বইটির নামকরণ-"অসমাপ্ত আত্মজীবনী"। কোনো পরিকল্পনা,উপসংহার ছাড়াই হুট করে শেষ হয় গোপালগঞ্জের সেই ডানপিটে কিশোরের জীবন ইতিহাস। অজানা থেকে যায় তাঁর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্প। বইটির শুরুতে লেখা শেখ হাসিনার ভূমিকা আর বিভিন্ন অংশ জুড়ে শেখ মুজিবের পাণ্ডুলিপির টুকরো অংশের ছবি বইটিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। বইটি বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দলীল। এটি ইংরেজি, জাপানিজ, আরবী, ফারসি,রুশ সহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ব্যক্তিগত অভিমতঃ বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি কিন্তু তাঁর "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইটির মাধ্যমে প্রাণবন্ত আর স্বাধীনচেতা সংগ্রামী একটি আত্মাকে উপলব্ধি করেছি। যেন সে মানুষটির তর্জনী নাড়িয়ে দারাজ কন্ঠে বিদ্রোহী চেতনার স্বপ্নবার্তা কানে বাজে। রিভিউ লেখকঃ উম্মে হানি রাবি

      By JAMAL UDDIN

      31 Aug 2021 07:11 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      #sorone_mohanayok_book_review_2021 “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” কেবল বইই নয়, বইয়ের আদলে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতির এক মহান নেতার অনবদ্য স্মৃতিগাঁথা। আর এই বইটিই মহান এই নেতাকে বাঙালির স্মৃতিতে ধরে রেখেছে স্থির সেলুলয়েডে। বইয়ের কাহিনী যখন শুরু হয়, গোপালগঞ্জ তখনো জেলা হয়নি। ফরিদপুর জেলার একটি মহকুমা। তারই অন্তর্ভুক্ত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। অতীতে শেখ বংশের বেশ নামডাক থাকলেও শেখ মুজিব যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন বংশের সেই জৌলুস আর আগের মতো নেই। অন্য দশজন মধ্যবিত্তের মতোই জীবন শুরু হয়। শেখ মুজিবুর রহমান মেট্রিক পরীক্ষা দেন ১৯৪১ সালে। কিন্তু তার আগেই জীবনে কত চড়াই-উৎরাই, কত বাধা বিপত্তি! স্থানীয় স্কুলে পড়া শুরু করার পর একাধিকবার স্কুল থেকে ছিটকে পড়েছেন। আবার শুরু করেছেন নতুন করে। স্কুলে থাকতেই জড়িয়ে যান রাজনীতির সাথে। তখন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেতে হয় জেলে। সাত দিনের জেল খাটেন। জীবনের প্রথম জেল। পরবর্তীতে এই জেলে তাঁকে বহুবার যেতে হয়েছে। ফলে সংখ্যাটাও আর সাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। মেট্রিক পাশের পর পুরোদমে রাজনীতিতে যোগ দেন। মিছিল, মিটিং আর বক্তৃতা ছাড়া কোনোদিকে নজর নেই। তখন লক্ষ্য একটাই- যে করেই হোক পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই। ১৯৪৩ সালে দেখা দিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। মা মরে রাস্তায় পড়ে আছে, ছোট বাচ্চা সেই মরা মায়ের দুধ খাচ্ছে। কেউ কেউ পেটের দায়ে নিজের ছেলেমেয়েকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ চিৎকার করছে-“মা, বাঁচাও। কিছু খেতে দাও, মরে তো গেলাম, একটু ফেন দাও।” বলতে বলতে সেখানেই পড়ে মরে যাচ্ছে। ভয়াবহ সেসব দৃশ্য দেখে আর ঠিক থাকতে পারলেন না মাটির মানুষ শেখ মুজিব। ঝাঁপিয়ে পড়লেন দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায়। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ১৯৪৭ সালে করা হলো পাকিস্তান। কিন্তু একি! পাকিস্তান হবার সাথে সাথেই শুরু হলো ষড়যন্ত্রের নতুন রাজনীতি। দাসত্বের শৃঙ্খলে চক্রাকারে ঘুরতে লাগল হতভাগা বাঙালির দল। আবার শুরু হলো চড়াই-উৎরাই। দুর্গম পথচলা, জেলখাটা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অনলে একে অন্যকে পুড়িয়ে ছারখার করার পাঁয়তারা। সামনে এসে দাঁড়াল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। পূর্ব বাংলার মানুষ ততদিনে বুঝে গেছে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে না পারলে দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পরতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি। কিন্তু তাতে কী? সেখানে থেকেই দিয়ে গেলেন একের পর এক নির্দেশনা। আন্দোলন হলো, মিছিল-মিটিং হলো, গুলি হলো, তাতে তাজা প্রাণও ঝরল; এরপরই না মাতৃভাষা বাংলা হলো। কিন্তু সংগ্রাম থেমে থাকেনি। বরং আরো ঝেঁকে বসেছে। এরপর একে একে সামনে এসেছে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান এবং সবশেষে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার ইতিহাস। প্রতিটি ঘটনাই বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনাই আবির্ভূত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে। তিনিই ছিলেন কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ভেবেছিলেন সংগ্রাম বুঝি এবার শেষ হবে। কিন্তু হলো না। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যে বাংলাদেশকে পেলেন সে এক অন্য বাংলাদেশ। যেন এক ধ্বংসস্তূপ। চারিদিকে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা আর অপুষ্টি। কিন্তু যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি কি আর পিছু হঠবেন? বাংলার আপামর জনগণকে নিয়ে শুরু করলেন নতুন এক সংগ্রামের। স্বপ্ন তখন একটাই- একটা সোনার বাংলা। “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” মধুমতি তীরের জনপদ থেকে উঠে আসা এক মানুষের গল্প, সফল এক রাষ্ট্রনায়কের আত্মজীবনী। আত্মজীবনী হলেও লেখকের কলমের আঁচড়ে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়ের নানান প্রেক্ষাপট। তাই এটি শুধু একটি আত্মজীবনীই নয়, বাঙালি জাতির বিশাল এক ইতিহাসও বটে। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বইটির লেখা শুরু করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বইটিতে বর্ণিত হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শৈশব থেকে যৌবনের শুরুর দিককার কথা। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বংশপরিচয়, শৈশব, শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশভাগের পর থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতির সংক্ষিপ্ত খতিয়ান এই বইটি। ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন বিষয়গুলো উঠে এসেছে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনায়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দেখতে পাওয়া যায় কাগজের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন। আছে তাঁর কারাজীবন, পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সবসময় পাশে ছিলেন যে মানুষটা তিনি ফজিলাতুন্নেসা। সমকালীন বৃহত্তর জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বইটি একটি অমূল্য সম্পদ। আন্দোলন আর সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতাদের পরিচয়ই বইটিতে পাওয়া যায়। ঘুরে ফিরেই এসেছে ভাসানী, ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দীর নাম। বইটি পড়ে ব্যক্তি মুজিবকে অনেকখানি উদ্ধার করা সম্ভব। মাঠের রাজনীতিতে যারা ব্যর্থ তাদের পদাঙ্ক তিনি অনুসরণ করতেন না। তিনি কাজ করতেন, ভুল হলে স্বীকার করতেন, সংশোধনের চেষ্টা করতেন। বইটিতে অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর পাবেন। কেন কংগ্রেস থেকে মুসলিম লীগ? কেন তা থেকে আওয়ামীলীগ? কেনই বা বাদ দেওয়া হলো মুসলিম শব্দটি? তবে বইটি শেষ হয়েছে কিছুটা অতৃপ্তি দিয়ে। এর কারণ আসলে নামেই বুঝা যায়-অসমাপ্ত আত্মজীবনী। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, উপসংহার ছাড়া, লেখকের অসমাপ্ত জীবনের মতোই একেবারে হুট করে শেষ হয়ে গেল। গোপালগঞ্জের ডানপিটে সাহসী কিশোর শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠার আভাস কেবল বইটিতে আছে। কিন্তু সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পের প্রায় সবটাই অজানা রয়ে গেল। স্তম্ভিত হতে হয় বঙ্গবন্ধুর লেখনীর ধার দেখে। মাঠে ময়দানে ছুটে বেড়ানো মানুষটির কলমের ভাষা কতই না সাবলীল! শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে, ভাষা আর রূপকের কারুকার্যে মন ভোলানো লেখা তাঁর ছিল না। তবু মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। সহজ বাক্য, হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা সহজ ভাষা। একজন দক্ষ ঔপন্যাসিকের মতো বর্ণনা করে গেছেন সব; যেখানে ইতিহাস আর একজন মহামানুষের জীবন এক হয়ে গেছে। বইটির শুরুতে শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা এবং বইয়ের বিভিন্ন অংশে জুড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির টুকরো ছবিগুলো বইটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল এই বই। অসাধারণ তথ্যে সমৃদ্ধ প্রতিটি পাতা। বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, জাপানি, আররি, ফারসি, অসমীয়া, রুশসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে তাঁকে উপলব্ধি করেছি। পড়ার সময় মনে হয়েছে আলগোছে মহান মানুষটি যেন চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তর্জনী নাড়িয়ে দরাজ কন্ঠে বলে গেছেন জীবনের কথা। কানের কাছে ধ্বনিত হয়েছে সেই বজ্রকন্ঠ- জয় বাংলা। বইঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান প্রচ্ছদঃ সমর মজুমদার প্রকাশনীঃ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড পৃষ্ঠাঃ ৩২৯ মূল্যঃ ২২০ টাকা। রিভিউকারীঃ মোঃ জামাল উদ্দিন

      By Himadri Sharma

      21 Aug 2021 10:53 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #sorone_mohanayok_book_review_2021 বুক রিভিউ :-(০২) ?বই:- অসমাপ্ত আত্মজীবনী ✒️লেখক:- শেখ মুজিবুর রহমান ♂️জনরা:- রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ♂️প্রকাশনা:- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ♂️ব্যক্তিগত রেটিং:-[১০/১০]? 〰️রিভিউ করছি:- Himadri Sharma সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে সাহসী সংগ্রামের কথা, দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, বারংবার বিনাদোষে কারাগারে নিক্ষেপিত হওয়ার বেদনা, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার কথা, নিগ্রহ-নিপীড়ন এর সাগরে ভাসতে ভাসতে তীরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীনতার দিকে দুহাত বাড়ানোর কথা। মহান এই কিংবদন্তি জন্মেছিলেন বলেই আজ আমরা বাঙালি হতে পেরেছি। তিনি সামনে থেকে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন বলেই আজ আমাদের দেশে স্বাধীনতার সুবাতাস বইছে। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সুবাদে আজ আমরা বিশ্ব মঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, আমি একটি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক। ?? অসমাপ্ত আত্মজীবনী! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। বইটি বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্ত্রী রেণুর অনুরোধে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বসে লিখা শুরু করেছিলেন। এই বইটিতে মূলত ১৯৩৪-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সময়কালের ঘটনাপ্রবাহ জায়গা পেয়েছে। প্রতিটি ঘটনাপুঞ্জ এতটা নিরেট যে এর কোথাও যেন এতটুকুও ফাঁকফোকর নেই। সাবলীল ভাষা ও সহজবোধ্য উপস্থাপন-দুইয়ে মিলে গ্রন্থটি আমার কাছে মনে হয়েছে অনবদ্য এক আখ্যান। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে চারটি খাতা খুবই জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় খুঁজে পান, যা ছিল মূলত ১৯৬৭ সালে কারাবন্দী থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর লিখে রাখা বাঙালির ইতিহাসের কিছু অপ্রকাশিত দলিল। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ২০১২ সালে এসে বঙ্গবন্ধুর লেখা সেই দলিলপত্রগুলো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নামে প্রকাশিত হয়। অদম্য এক বালকের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্পই মূলত উঠে এসেছে অসমাপ্ত আত্মজীবনী-তে। বালকটি তাঁর নৈপুর্ণ্য-দক্ষতা দ্বারা জয় করে নিয়েছিলেন হাজারো অসহায়-নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত বাঙালির হৃদয়। হয়ে ওঠেন ধনী-গরিব সকলের বন্ধু, জাতীর বন্ধু, দেশের বন্ধু, প্রিয় বঙ্গবন্ধু! বইটিতে লেখকের কারাজীবনের গল্পই প্রাধান্য পেয়েছে। আর পাবেই বা না কেন? তিনি যে তাঁর জীবনের বিশাল একটা সময় (পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরের ১২ বছরই) কাটিয়েছেন জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কারাজীবনের পাশাপাশি তাঁর পরিবারের লোকের কথা উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি, সহধর্মিণীর কথা বর্ণিত হয়েছে বইয়ে। এছাড়াও লেখকের শৈশব, সামাজিক-রাজনৈতিক নানান কর্মকান্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতা কেন্দ্রিক প্রাদেশিক মসুলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ সহ বেশকিছু বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে এই বইয়ে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সব অতিমানবীয় ঘটনাগুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে। বইটির বিশেষ দিক ছিল বইয়ের শুরুতে ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার লেখা। এছাড়া বইয়ের বিভিন্ন অংশে শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতের লেখা টুকরো ছবিগুলোর সংযুক্তিকরণ পাঠককে লেখকের জীবনের আরো কাছাকাছি নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য এই প্রজন্মের হয়নি ঠিকই, কিন্তু এই গ্রন্থটি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর একাগ্রতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, দেশপ্রেম, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, স্থির লক্ষ্য সহ ব্যক্তি মুজিবকে চেনাবে। তারা অনেকটাই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন, কিভাবে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সাহসী নেতা একটি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। বইয়ের যে প্যারা পড়তে যেয়ে আমি খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম, ❝ একদিন সকালে আমি আর রেণু বিছানার পাশে বসে গল্প করছিলাম। হাচু আর কামাল তখন নিচে বসে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে দিয়ে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। ওদিকে কামাল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি!’ ছেলের এমন কথায় বাবা কিছুটা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। ছেলেটার জন্মলগ্ন থেকেই তাঁকে জেলে যেতে হয়ে বারংবার। পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল কামাল। ❞ বঙ্গবন্ধু বলতেন—“ আমার প্রাণপ্রিয় বস্তুর চেয়ে আমার দেশের স্বাধীনতা বড়। আমার হাসির চেয়ে আমার দেশের সব মানুষের হাসি বড়।” ? এই গ্রন্থটি বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা আমার নেই, আর কখনো হবেও না। তবুও নিজের উপলব্ধির জায়গা থেকে এতটুকুই বলতে পারি, একজন বাঙালি হিসেবে এই কীর্তিমানের জীবনের ছোট-বড় সকল ঘটনাপ্রবাহ আমাদের জানা উচিত। তাই এই জীবনীগ্রন্থটি যেকোনো মূল্যেই বাঙালিদের কাছে শ্রেষ্ঠ একটি গ্রন্থ হয়ে থাকবে আজন্মকাল। বইতে হাসি, বইতে বাঁচি।❣️ #happyreading

      By Mist zahura Mist zahura khatun

      21 Aug 2021 11:17 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়াবারাকাতহু ?বইয়ের পরিচিতিঃ বই: অসমাপ্ত আত্নজীবনী লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড রিভিউ লেখক :সাব্বির আরাফাত ?ভৃমিকা: “থালা-বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল।” —বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশই কেটেছে কারাগারে।বঙ্গবন্ধু! স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে লিখলে লেখার যেন শেষই হবে না।বঙ্গবন্ধু আত্মবিশ্বাসের উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু মানে প্রশংসার ঝুড়ি। ?কিছু কথা -বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—“চিন্তা করিও না।জীবনের বহু ঈদ এই কারাগারে আমাকে কাটাতে হয়েছে।আরও কত হবে ঠিক নেই! তবে কোনো আঘাতেই আমাকে বাঁকাতে পারবে না।খোদা সহায় আছে।” এটি ছিল ঈদের সময় বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি।তার এই উক্তি দ্বারা বোঝা যায় অমন কঠিন সময় তার আত্মবিশ্বাস গলে পড়েনি বরং দৃঢ় থেকে দৃঢ়তম হয়ে রূপান্তর ঘটেছে । শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণ প্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অস্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। ?️বইটি পড়ে যে বিষয় গুলো জানতে পারবেন- ১)বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট। ২ লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ৩) দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি। ৪)দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি। পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন। ৫)ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন। ৬)আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে । ৭)লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন । ৮)একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। ৯)"অসমাপ্ত আত্মজীবনী" গ্রন্থে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাঙালীজাতিরভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাগ্রচিত্ততা, তাঁর রাষ্ট্রভাবনা, ইতিহাস চেতনা, নেতৃত্ব, নেতৃত্বের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ, কারাস্মৃতি। ১০)পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে প্রভেদ ও বৈষম্য, ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও সংগঠন বিস্তার ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণিত হলেও, ?একটা বিষয় আমাকে বেশ চমকিত করেছে, আর তা হচ্ছে তাঁর শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে গনচীন ভ্রমন। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীন শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। মাও সেতুং-এর দেশ নয়াচীনে তিনি চীনা মানুষের শিক্ষা, আচার, দেশপ্রেম আর দেশ গড়ার একাগ্রতা দেখে অভিভূত হন, এমনকি পশ্চিমা ব্লেন্ডও তিনি পাননা সেখানে 'সেভ' করতে, যেহেতু চীনারা দেশেপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমা ব্লেডের পরিবর্তে শেভ করেন নিজ দেশের খুর দিয়ে। ?অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই টি কেন পড়বেন?- এই বইটি পড়ে জানতে পারবেন কেন বঙ্গবন্ধুর নামে এত উপাধি দেওয়া হয়েছে।কেন তাকে বঙ্গের বন্ধু বলা হয়।তার দৃষ্টিকোণে মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিল।তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল।এছাড়াও চীনের মানুষদের দেশপ্রেম সম্পর্কে জানবেন। এই দেশপ্রেমের কারণেই হয়তো তাদের রাষ্ট্র এত উন্নত।যারা রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চায় তাদের অবশ্যই এই বইটি পড়া।সেসময়কার রাজনীতি সম্পর্কে জানবেন।লেখক এই বইয়ের মাধ্যমে সেই সময় তার সাথে ঘটে যাওয়া সব বিষয় লিখে রেখেছেন।এটি একটি অসাধারণ বই।আমরা বাঙালি আমাদের তো এই বই সম্পর্কে জানতেই হবে, কেননা কোন বিদেশি লোক যদি কখনো জানতে চায় তোমার দেশের জাতিরপিতা সম্পর্কে কিছু বলো তখন যেন আমরা অপারগতার জন্য লজ্জায় মাথা নিঁচু না করি। ?বই কোথা থেকে কিনবেন-এখন ঘরে বসেই রকমারি. কমে বই অর্ডার করা যায়।তাই আর দেরি না করে অর্ডার দিয়ে ফেলুন রকমারি তে। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়াবারাকাতহু ?বইয়ের পরিচিতিঃ বই: অসমাপ্ত আত্নজীবনী লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড রিভিউ লেখক :সাব্বির আরাফাত ?ভৃমিকা: “থালা-বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল।” —বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশই কেটেছে কারাগারে।বঙ্গবন্ধু! স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে লিখলে লেখার যেন শেষই হবে না।বঙ্গবন্ধু আত্মবিশ্বাসের উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু মানে প্রশংসার ঝুড়ি। ?কিছু কথা -বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—“চিন্তা করিও না।জীবনের বহু ঈদ এই কারাগারে আমাকে কাটাতে হয়েছে।আরও কত হবে ঠিক নেই! তবে কোনো আঘাতেই আমাকে বাঁকাতে পারবে না।খোদা সহায় আছে।” এটি ছিল ঈদের সময় বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি।তার এই উক্তি দ্বারা বোঝা যায় অমন কঠিন সময় তার আত্মবিশ্বাস গলে পড়েনি বরং দৃঢ় থেকে দৃঢ়তম হয়ে রূপান্তর ঘটেছে । শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণ প্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অস্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। ?বইটি পড়ে যে বিষয় গুলো জানতে পারবেন- ১)বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট। ২ লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ৩) দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি। ৪)দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি। পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন। ৫)ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন। ৬)আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে । ৭)লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন । ৮)একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। ৯)"অসমাপ্ত আত্মজীবনী" গ্রন্থে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাঙালীজাতিরভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাগ্রচিত্ততা, তাঁর রাষ্ট্রভাবনা, ইতিহাস চেতনা, নেতৃত্ব, নেতৃত্বের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ, কারাস্মৃতি। ১০)পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে প্রভেদ ও বৈষম্য, ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও সংগঠন বিস্তার ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণিত হলেও, ?একটা বিষয় আমাকে বেশ চমকিত করেছে, আর তা হচ্ছে তাঁর শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে গনচীন ভ্রমন। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীন শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। মাও সেতুং-এর দেশ নয়াচীনে তিনি চীনা মানুষের শিক্ষা, আচার, দেশপ্রেম আর দেশ গড়ার একাগ্রতা দেখে অভিভূত হন, এমনকি পশ্চিমা ব্লেন্ডও তিনি পাননা সেখানে 'সেভ' করতে, যেহেতু চীনারা দেশেপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমা ব্লেডের পরিবর্তে শেভ করেন নিজ দেশের খুর দিয়ে। ?অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই টি কেন পড়বেন?- এই বইটি পড়ে জানতে পারবেন কেন বঙ্গবন্ধুর নামে এত উপাধি দেওয়া হয়েছে।কেন তাকে বঙ্গের বন্ধু বলা হয়।তার দৃষ্টিকোণে মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিল।তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল।এছাড়াও চীনের মানুষদের দেশপ্রেম সম্পর্কে জানবেন। এই দেশপ্রেমের কারণেই হয়তো তাদের রাষ্ট্র এত উন্নত।যারা রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চায় তাদের অবশ্যই এই বইটি পড়া।সেসময়কার রাজনীতি সম্পর্কে জানবেন।লেখক এই বইয়ের মাধ্যমে সেই সময় তার সাথে ঘটে যাওয়া সব বিষয় লিখে রেখেছেন।এটি একটি অসাধারণ বই।আমরা বাঙালি আমাদের তো এই বই সম্পর্কে জানতেই হবে, কেননা কোন বিদেশি ভদ্র লোক যদি কখনো জানতে চায় তোমার দেশের জাতিরপিতা সম্পর্কে কিছু বলো তখন যেন আমরা অপারগতার জন্য লজ্জায় মাথা নিঁচু না করি। ?আরো একটি কথা_ এই বইটির ভৃমিকা লিখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সাব জেলে থাকাকালীন সময় বইটির ভৃমিকা লেখেন।পরর্বতীতে বই টি প্রকাশ করেন।আর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হলে শুধু এই একটি বই পড়লে হবে না জানার শেষ নাই। ?বই কোথা থেকে কিনবেন-এখন ঘরে বসেই রকমারি. কমে বই অর্ডার করা যায়।তাই আর দেরি না করে অর্ডার দিয়ে ফেলুন রকমারি তে। #sorone_mohanayok_book_review_2021

      By Irfan Ahmed Shohan

      19 Aug 2021 08:25 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      নামঃ সোহান আহমেদ শ্রেণীঃএকাদশ কলেজঃকাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজ মোবাইলঃ০১৯৩২৫৭২৬৭৪ সেগমেন্টঃবুক রিভিউ ▪️বইয়ের নাম : অসমাপ্ত আত্মজীবনী ▪️সম্পাদক : শামসুজ্জামান খান ▪️লেখক : শেখ মুজিবুর রহমান ▪️প্রচ্ছদ শিল্পী : সমর মজুমদার ▪️দেশ : বাংলাদেশ ▪️ভাষা : বাংলা ▪️বিষয় : ইতিহাস, রাজনীতি ▪️ধরন : আত্মজীবনী ▪️প্রকাশক : দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ▪️প্রকাশনার তারিখ : ১৮ই জুন, ২০১২ ▪️পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৩৩০ (আত্মজীবনী ২৮৮) ▪️আইএসবিএন : ৯৭৮৯৮৪৫০৬০৫৯২ অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ : নিরপেক্ষতার মৌলিক দলিল। ‘তিনি কখনো আপোস করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ।’ তাঁর সম্পর্কে এমনই মত পোষণ করেছেন তাঁর সুযোগ্যা কন্যা। পিতা শেখ লুৎফর রহমানের সততা ও সচেতনতার বাণীকে মর্মে ধারণ করে পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর সর্বংসহা সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছার ‘বসেই তো আছ , লেখ তোমার জীবনের কাহিনী’ এই অনুরোধে যিনি বলেছিলেন ‘…এমন কি করেছি যা লেখা যায়!…নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ ¯স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।’ তিনিই রচনা করেছেন অসাধারণ এক জীবনী সাহিত্য ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)। এ শুধু একটি আত্মজীবনী নয় বাঙালী জাতির ইতিহাসের একিটি অসাধারণ সাহিত্যিক প্রকাশও বটে। ১৯৬৭ সালে রচিত হলেও বইটি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ সময় পর (২০০০-২০১২) এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী একটি অসাধারণ জীবনীসাহিত্য হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়। সাধারণ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থগুলোতে নিজের মহিমা প্রচারের ও নিজ কৃতিত্বকে তুলে ধরার যে সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় এই গ্রন্থটি তা থেকে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম ধারায় রচিত। একজন অসাধারণ নিরপেক্ষ প্রকৃত দেশপ্রেমিকের হাতেই এ অনন্য সাহিত্যের নির্মাণ সম্ভব। এ বই যে পড়বে নিরপেক্ষতার পরাকাষ্ঠায় তাকে স্বীকার করতেই হবে এর অনন্যতা। এ যেন জীবনী গ্রন্থ নয়, বইটি পড়লে কখনো মনে হবে একটি অসাধারণ গল্পের বই, কখনো মনে হবে বাংলার ইতিহাস যেন কোন সাহিত্যিক সাবলীল ভাষায় নিজের মত করে বয়ান করছেন যার কোথাও কোন পক্ষপাতিত্ব নেই, নেই কিছু লুকোবার প্রয়াস। ১৯৩৪ থেকে শুরু করে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার আলোকপাত রয়েছে বইটিতে। গ্রন্থের শুরুটা ঠিক উপন্যাসের মত। গ্রামের শেখ বংশের একটি ছেলে বর্ণনা দিচ্ছে তার বংশের, তারপর মাত্র ১২বছরে বাল্য বিবাহের কাহিনিও বলে গেছে অবলীলায়। ১৯৩৬ সালে এই বালকটি প্রথম রাজনীতিতে পা রেখেছিল সুভাষ বসুর ভক্ত হয়ে। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে। তাঁকেই লেখক সব সময় আদর্শের স্থানে রেখেছিলেন। বয়স খুব কম হলেও ছেলেটির সাহস ছিল প্রচণ্ড, বন্ধুকে রক্ষায় যে বলতে পারতো-‘ওকে ছেড়ে দিতে হবে, নইলে কেড়ে নেব’। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই প্রথম জেল খাটতে হয় তাঁকে। বাবার সততা ও নিষ্ঠার আদর্শকে সারাজীবন মান্য করে গেছে ছেলেটি। অসাধারণ সব সংগ্রামে পার করেছে ১৯৪৩, ১৯৪৭, ১৯৫২,১৯৭১। মানুষের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রমে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত। মানুষের জন্য, দেশের জন্য তিনি ঘুমিয়েছেন চাকরদের কামরায়, থেকেছেন বেকার হোস্টেলে অর্ধাহারে অনাহারে। তবুও হাল ছাড়েন নি কোনোভাবে।। সাম্প্রদায়িকতা তিনি পছন্দ করতেন না মোটেও, বরং হিন্দু-মুসলিম সকলকে এক করতে ছিলেন বদ্ধপরিকর। কোটারির বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন তিনি। তোষামোদি করতে মোটেও পছন্দ করতেন না, পছন্দ করতেন না আপোষ করতেও। অসীম সাহসীকতায় তাই সোহরাওয়ার্দীকেও তিনি বলতে পেরেছিলেন-‘আপোস করার কোন অধিকার আপনার নাই। আমরা খাজাদের সাথে আপোষ করবো না।’ বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে ঠিক যেন অর্ধশত বছর আগের কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাত্রা করছি আমরা। ঘটনাপুঞ্জ এমনি নিরেট যে এর কোথাও কোন ফাঁক নেই, দম ফেলার অবসর নেই। অসাধরণ বয়ান ভঙ্গি আর সাবলীল উপস্থাপন, তরতর করে টেনে নিয়ে চলে একেবারে গ্রন্থের শেষ পর্যন্ত। এ গ্রন্থের পরতে পরতে চমক আর সরলতা, বন্ধুত্ব আর সততা, ত্যাগ আর সংগ্রামের নজির। সাথে রয়েছে বিদেশ ভ্রমণের চাঞ্চল্যকর বর্ণণা যা এনে দেয় অসাধারণ ভ্রমণ গ্রন্থের স্বাদ। শুধু দেশের রাজনীতির আগাগোড়া বর্ণনাই নয় এতে তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর মনোভাবও, একজন সুদক্ষ ঔপন্যাসিক যেমন করে নিজের মতকে মিলিয়ে দেন লেখার সাথে ঠিক তেমনি। অনেক ক্ষেত্রে করেছেন উপযুক্ত তুলনাও- ‘এরা শিল্পকারখানা বানানোর জন্যই শুধু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায় করে। আমাদের দেশে সেই সময় কোরিয়ার যুদ্ধের ফল¯^রূপ যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল তার অধিকাংশই ব্যয় হল জাপানি পুতুল, আর শৌখিন দ্রব্য কিনতে। দৃষ্টিভঙ্গির কত তফাৎ আমাদের সরকার আর চীন সরকারের মধ্যে।’ এই অসাধারণ উপলব্ধি অনেক আগেই করতে পেরেছিলেন তিনি যা আজও আমরা অনেক ক্ষেত্রেই করতে শিখিনি। দেশকে এই মহান পুরুষ প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। নেতার অহংকার তাঁর ছিল না বলেই তিনি বলতে পারতেন-‘কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগনের আছে।’ একজন নিরপেক্ষ আদর্শ নেতার মুখেই এ বচন শোভা পায়। ১৯৫৫ পর্যন্ত তিনি লিখতে পেরেছিলেন এক অসাধারণ ইতিহাস এরপর আরো অনেক চড়াই উৎরাই তিনি পার করছেন কিন্তু সময়ের অভাবে তা লিপিবদ্ধ করার সুযোগ তাঁর ঘটেনি, ফলে তাঁর ও এদেশের জাতীর জীবনের অমূল্য ইতিহাস অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ই একটি উপযুক্ত শিরোনাম। জীবন মানেই সাহিত্য। তবে সব রচনা সাহিত্যের মানদণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। অসাধারণ আত্মজীবনীও উন্নত সাহিত্যের মর্যাদা পেতে পারে যদি তা হয় সহজ অথচ মর্মস্পর্শি, সাধারণ হয়েও অসাধারণ। যদি তা হয় বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র অনুরূপ। সত্যিই এ এক অমূল্য, অসাধারণ গ্রন্থ। যে কোটারি আর দুর্নীতির দায়ে আমরা আজ কলঙ্কিত, যে তোষামুদে রাজনীতির ফাঁদে আমরা আজ জর্জরিত তা কোনদিন কাম্য ছিল না তাঁর। কোটারি আর পক্ষপাতহীন সমাজ চেয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সকল ধর্মের, সকল সম্প্রদায়ের মানুষের যাদের তিনি ভাই বলে জানতেন। রাজনীতিকেও এত নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বয়ান করা কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল। এই গ্রন্থটিতে তাঁর প্রতিটি বিবৃতি সেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিরই পরিচায়ক। তিনি প্রকৃত অর্থে কোন দলের নন, নন বিশেষ কোন শ্রেণীর। তিনি সারা বাংলার মানুষের, তিনি দল মত নির্বিশেষে সবার যার স্পষ্ট নজির তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। একজন আদর্শ দেশনায়ক, আদর্শ দেশপ্রেমীকের চিহ্ন বহন করে চলেছে এই ছোট্ট গ্রন্থটি। আমাদের তরুণ সমাজ ও ভবিষ্যৎ কাণ্ডারীদের জন্য এটি কেবল একটি অনুসরণীয় আদর্শই নয় ইতিহাসের প্রতীকও। নয় শুুধু সংগ্রামী জীবনের একটি উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত, এটি নিরপেক্ষতার মৌলিক দলিলও।

      By Arafat Haq Biswass

      28 Aug 2021 07:52 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      #sorone_mohanayok_book_review_2021 বই:-অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখক:-শেখ মুজিবুর রহমান রিভিউ:-আরাফাত হক বিশ্বাস আত্মজীবনী মানে নিজের ঢোলটা বেশি পেটানো। নিজেকে ফুটিয়া তোলা। নিজের ভালো দিকগুলা সবার সামনে তুলে বলা, ‘এই হইলাম আমি’। সবকিছুর উর্ধ্বে আমিই ছিলাম। আমি হইলাম আসল হিরো। তবে সত্যি কথা বলতে হইলো, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু হিরো নন। হিরো হইলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। অধিকাংশ অধ্যায় জুড়েই সোহরাওয়ার্দীর কথাই বলতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তার রাজনৈতিক জীবনে শহীদ সাহেবের প্রভাব যে কতটা স্পষ্ট তা বইটি পড়লেই ঝকঝক হয়ে উঠবে। আত্মজীবনীর শুরুতেই তিনি বলে ফেলেন, ‘…ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।…’ শহীদ সাহেবের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ফুটে ওঠে এই লাইনগুলোর মধ্যে দিয়েই। বইয়ে নিজ পরিবারের পরিচয়পর্ব থেকে শুরু করে শহীদ সাহেবের সঙ্গে পরিচয় পর্বটিও স্পষ্ট উল্লেখ করেছে বঙ্গবন্ধু। শহীদ সাহেবের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ১৯৩৮ সালে। একসঙ্গে দুই নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ আসেন। সেখানেই পরিচয় পর্ব দিয়ে রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র শেখ মুজিবুর রহমানের যাত্রা শুরু। এরপর সেই কলেজ ছাত্র ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। পাকিস্তান আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা স্পষ্ট। সেসময়কার মুসলমানদের একমাত্র দাবি ছিল ‘পাকিস্তান’ নামে আলাদা রাষ্ট্র। আর সেই দাবী প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা তার ছিল তা তিনি খুব সহজেই বলে গেছেন। এমনকি সেখানেও শহীদ সাহেবের ভূমিকার স্পষ্ট বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু। তবে এসব বর্ণনা তার নিজের ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই ধরে নিতে হবে। আত্মজীবনী গ্রন্থখানি সম্পাদনা কাজে জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। একইসঙ্গে বইটির ভূমিকা লিখেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ভূমিকাটি তিনি লিখেছেন জেলে থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালে। এ নিয়ে আমার একখানা মতামত হলো, নেতারা সবসময় জেলে বসেই লেখতে পছন্দ করেন। নিজের মতো করে সময় পান। যা তারা লেখালেখিতে হয়তো ব্যয় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিকার এক জায়গায় বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে একান্ত নিরিবিলি সময়ে তিনি লিখেছেন।’ বলাই যায়, বঙ্গবন্ধুও আত্মজীবনী লেখেছেন কারাবন্দি থাকা অবস্থায়। যাইহোক, যে কথা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী গ্রন্থে বহুবার চৌধুরী সাহেবের প্রসঙ্গ এসেছে। এই চৌধুরী সাহেব হলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। সম্পাদনার ভালো দিকটি হলো, সম্পাদক চাইলে বইয়ে এই বিতর্কিত লোকটির চরিত্র ম্যানুপুলেশন করতে পারতেন। কিন্তু সেটা হয় নাই। বরং স্বচ্ছভাবেই চৌধুরী সাহেবের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন তার কথা প্রথম আসে ‘অল বেঙ্গল মুসলিম ছাত্রলীগ’- এর সভাপতি ওয়াসেক সাহেবের সূত্র ধরে। এই ওয়াসেক সাহেবের সঙ্গে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সব সময় বিরোধ লেগে থাকতো। ওয়াসেক সাহেব একচেটিয়ে রাজনীতি করতে চাইতেন। তাই তার সঙ্গে বিরোধ। একবার এক গন্ডগোলে চৌধুরী সাহেবের দলকে বঙ্গবন্ধু সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদেও অংশ নেন। এমনকি চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে ভারত ঘুরার বর্ণনাও আছে বইটিতে। চৌধুরী সাহেব যে পুরানো ধনী সেটিও বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর বর্ণনায়। তবে চৌধুরী সাহেব সম্পর্কে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, ‘চৌধুরী সাহেব খুবই স্বার্থপর হয়ে ওঠেন এবং একগুঁয়েমি করতেন, সেজন্য যারা তাকে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পরে তারা সকলেই তাঁকে ত্যাগ করেন।’ রাজনৈতিক কুটচাল, পার্টি ম্যানুপুল্যাশন, টাকার খেলা, দল বদলানো, মানুষের নতুন চেহারা উন্মোচন এসবই পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে। সঙ্গে আছে দূর্ভিক্ষ এবং হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটও উঠে আসে বইয়ে। শুধু তাই নয়, কলকাতা ও সিলেট নিয়ে যে রাজনীতি ব্রিটিশরা করেছে সে বর্ণনাও আছে। কলকাতাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী না করে ভারতের সীমানায় দিয়ে দেওয়াটা হঠকারিতার সামিল বলেই বোঝা যায়। অন্যদিকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কথাও তিনি বলেছেন। সেখানেও মূল নায়ক সোহরাওয়ার্দী। বঙ্গবন্ধু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে জনাব সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কারণ, বাংলাদেশ ভাগ হলেও যতটুকু আমরা পাই, তাতেই সিন্ধু, পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের মিলিতভাবে লোকসংখ্যার চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা বেশি। সোহরাওয়ার্দীর ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ রাজনৈতিক জ্ঞান, বিচক্ষণতা ও কর্মক্ষমতা অনেককেই বিচলিত করে তুলেছিল। কারণ, ভবিষ্যতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন এবং বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না।’ শুধু রাজনীতি কিংবা নিজের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ বাদেও কখনও কখনও বঙ্গবন্ধুর ভেতরের কবি সত্ত্বাও জেগে উঠতে দেখা গেছে এ গ্রন্থে। তাজমহলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভেতরের রোমান্টিকতার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালী রঙ আমাশে ছুটে আসছে। মনে হল, তাজের যেন আর একটা নতুন রূপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা ফেলে দিয়ে নতুন রূপ ধারণ করেছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারব না।’ প্রতিটি মানুষের মনে কবি বাস করে। কথাটি হয়ত ঠিক। অপরূপ মায়া ও রোমান্স উঠে এসেছে লাইনগুলোতে। যাইহোক, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তিরও বেশ প্রশংসা করতে হয়। প্রতিটি মানুষের নাম। এমনকি কখনও কখনও সময়ও উল্লেখ করেছেন। প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তিনি বর্ণনা করেছেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ। যে গ্রন্থখানি লেখেছেন একজন নেতা। নেতার লেখায় রাজনীতি উঠে আসাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সাহিত্যবোধ্যারা তাকে সাহিত্যিকের মর্যাদায় দিয়ে ফেলছেন। যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। বঙ্গবন্ধু একজন নেতা। বাংলাদেশ স্বাধীকার আন্দোলনের প্রধান নেতা। এবং তার রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী একজন নেতার বেড়ে ওঠার গল্প। তার রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবনার মিশেলে বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে এ গ্রন্থে। ভাষা ঝরঝরে। বাক্য সাধারণ। শব্দ নির্বাচনে সাদামাটা। কোনো সাহিত্য করার জন্য এ জীবনী তিনি লেখতে বসেননি। নেহায়েত বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং স্ত্রী রেণুর অনুরোধে নিজের জীবন লেখতে বসেছিলেন কারাবন্দী অবস্থায়। যা আজ আমাদের সামনে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ হাজির হয়েছে। অতএব আমার এ লেখাও একটি অসমাপ্ত রিভিউ হিসেবেই আপনারা নিতে পারেন। এটি কোনো ন্যারেটিভ রিভিউ নয়। নিছক সাদামাটা একটা রিভিউ।

      By Muminul Islam

      05 Aug 2021 09:13 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      কোয়ালিটি খুব ভাল ছিল

      By Mirza Fahim Abdullah

      03 Aug 2021 07:24 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ১৫ আগস্ট বাঙ্গালি জাতির শোক দিবস। এই দিনটিতে কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ইতিহাস মানে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। তার জীবন ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। এই মহান মানুষটি জীবনে যাই করেছেন তার সবই দেশের জন্য করেছেন। তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ছিল দেশের সার্থে। তার জন্ম না হলে আজ আমরা স্বাধীনতা পেতাম না।

      By Km Mustafa

      30 May 2021 08:20 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ডিলাক্সে অর্ডার করলাম প্রথমবারের মতো শুনলাম, তাই অর্ডার করে ফেললাম। যাদের ডিলাক্সে আছে তারা কাইন্ডলি জানাবেন এ'টার পেইজগুলো'র কোয়ালিটি কেমন হবে বা কি'রকম হবে এ'টার প্রিন্টিং কোয়ালিটি? প্লীজ কাইন্ডলি কেউ জানাবেন!

      By Muhtasim Illtimas Fuad

      18 May 2021 07:06 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      Very nice Very nice and good books thanks রকমারি and books seller

      By Md. Aminul Islam

      01 Apr 2021 10:21 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      Wonderful historical book.

      By Saqib

      25 Mar 2021 12:53 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      good

      By Arpon Saha

      17 Mar 2021 08:03 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      এই বইটি অনেকটা তথ্যবহুল।

      By Nokib Mahmud

      18 Dec 2020 10:25 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Vao

      By Bayezid Islam

      17 Jul 2020 11:48 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      খুবই ভালো বই তবে ডিলাক্স এডিশন নেওয়ার প্রয়োজন দেখি না

      By Ansarul Islam

      17 Jun 2020 01:11 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Good to read.

      By Md. Al mehedi hasan.

      23 May 2020 01:40 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      What a book!

      By Salim Solaiman

      20 Apr 2020 02:52 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ইতিহাসের আকর এই গ্রন্থে লেখক শুরুতে তার নিজের জন্ম , বেড়ে ওঠা আর বংশ পরিচয় নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করলেও , পরবর্তীতে এই বইয়ের মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে এই উপমহাদেশের এবং আরো বিশেষ করে বলতে গেলে , ১৯৪৭ সনে জন্ম নেয়া একটি উদ্ভট রাষ্ট্র পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের রাজনীতির হালাখাতায় । প্রবল আগ্রহে লেখক, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির নেতৃত্বে কর্মী হিসাবে রাতদিন খেটে মুসলিম লীগ নামের যে দলটি তিনি তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো করে, যার পেছনে একটাই উদ্দীপনা ছিল তাঁর , আর তা হলো দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যতোটা না তার চেয়ে বেশী , শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি স্বতন্ত্র দেশ সৃষ্টি করা , যা গনমানুষের আকাংখা পূরণ করবে । আর সে দেশটির ব্যাপ্তি হবে আসাম ও কোলকাতা নিয়ে পরিপূর্ণ বাংলা । যা কিনা অবশেষে হয়নি , হীনমন্য সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ আর সুযোগসন্ধানী ক্ষমতালোভী মুসলিমলীগারদের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রের কারণে । যা নিয়ে তিনি তুমুল হতাশা প্রকাশ করেছেন বারংবার । তবে ঠিক কারা এই ষড়যন্ত্রের কুশীলব সে ব্যাপারে কারো নাম তিনি উল্লেখ করেননি, যেহেতু একজন মাঠ পর্যায়ের কর্মী হিসাবে অতো উপর মহলের ষড়যন্ত্রের কথা তার জানার কথাও না। আর এতেই প্রমানিত লেখকের তার লেখায় সততার প্রতি নীতিনিষ্ঠ থাকার ব্যাপারটি । পাকিস্তান হওয়ার পর হতাশ লেখক দেখতে পান কি করে মুসলিম লীগ বৃটিশদের পা চাটা জমিদার খান বাহাদুর, খান সাহেবেদের পকেটে চলে গেল ! ব্রাত্য হয়ে গেলন একসময়ের একনিষ্ঠ মুসলিম লিগের কর্মীরা তো অবশ্যই এমন কি খোদ হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি স্বয়ং । ফলে সংসদ সদস্য হয়েই এমনকি তার আগেই, ঐ খান সাহেব আর খান বাহাদুরেরা লিপ্ত হয়ে পড়লেন টাকার বিনিময়ে নিজেদের বিক্রির করার খেলায় । লাইসেন্স পারমিটের ব্যবসায় । জনগণের আশা আকাংখার তো কোন আর খোঁজই থাকলো না । ফলে লেখক আবারো নব উদ্যমে ঝাপিয়ে পড়লেন নতুন দল আওয়ামী লিগের সৃষ্টি করার কাজে । আর এ করতে গিয়ে বেশ কবারই গেলেন জেলে । মজার ঘটনা ছত্রলিগের জন্ম যে আওয়ামী লিগের আগেই হয়েছে , তাও জেনেছি আমি এই বই পড়ে । এই বইয়ের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের নানান খুঁটিনাটি বিষয়ের কথা যার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন লেখক , যা আগে আমি জানতাম না । এই অংশে বারবারই তিনি জোর দিয়ে বলেছেন বাংলা কে রাষ্ট্র ভাষা করার গুরুত্বের কথা , সাথে বর্ননা করেছেন ঐ আন্দোলনকে বেগবান করার নিজ ও অন্যান্যদের ভুমিকার কথা । চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ৫৪র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জিতে মন্ত্রী হওয়ার পর পরই আবার পুনরায় তাঁর জেলবাসের মাধ্যমে শেষ হওয়া এই বইয়ের পরতে পরতে মিশে আছে , সর্বক্ষন সাধারন মানুষের কাছাকাছি থেকে, তাদের সুখ দুঃখ বুঝে লেখকের একজন প্রকৃত জননেতা হয়ে উঠার কাহিনী । সেই জনগণের কাতারে আছেন যেমন ধান কাটা দাওয়ালেরা , আছেন মাঝি , মুদি দোকানি , গ্রামের নারী , কয়েদিরা এমনকি জেলে বা থানায় তাঁকে পাহারার দায়িত্বে থাকা সিপাহিরা । উল্লেখ করেছেন তিনি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক নেতার কথা ও তাদের ভুমিকার কথা । একদিকে যেমন বারবারই তিনি তাঁর দ্বিধাহীন আনুগত্য প্রকাশ করেছেন হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির প্রতি , তেমনি জিন্নাহর প্রতিও প্রকাশ করেছেন তাঁর আস্থার কথা । ভাসানি আর আতাউর রহমানের দোদুল্যমানতার কথা যেমন বলেছেন তেমনি বলেছেন সালাম খানদের ষড়যন্ত্রের কথা । বলেছেন শেষ বয়সে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মতো জাঁদরেল নেতার , অসহায় ভাবে কিছু দলছুট চরম সুযোগসন্ধানী মুসলিম লিগারদের হাতের পুতুল হয়ে যুক্তফ্রন্তকে গুবলেট করার কথাও আর তাঁর স্বজনপ্রীতির কথা । নিজে একনিষ্ঠ মুসলমান হওয়া সত্বেও তাঁর অসাম্প্রদায়িক আর মানিবক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে এই অঞ্চলে ঘটে যাওয়া প্রায় সব কটি দাঙ্গাকেই সামনে থেকে মোকাবিলা করে তা থামানোর তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্ঠায় । ঘুরেফিরে অনেকবারই বলেছেন তিনি ষড়যন্ত্র আর হত্যার রাজনীতির প্রতি তাঁর ঘৃনার কথা, অনাস্থার কথা । বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক কর্মীর তো অবশ্যই , এমনকি ইতিহাসনিষ্ঠ রাজনৈতিকভাবে সচেতন যে কোন জনের অবশ্য পাঠ্য এই বই । বংগবন্ধুর বাকি দুটো বইয়ের মতোই এই বইটির প্রচ্ছদও তেমন নজরকাড়া নয় ।

      By মেহেদী সুমন

      21 Dec 2019 07:43 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      ধন্যবাদ ! ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত হতে সহায়তা করার জন্য।

      By S. M. Hasnain Iqbal

      12 Dec 2019 04:03 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      তৎকালীন সময়ের ইতিহাস এই বইয়ে। বই পড়ার নেশা আছে ঠিকই, কিন্তু কোন রাজনৈতিক আত্মজীবনীমূলক বই আমার জীবনে এটাই প্রথম। প্রথমটাতেই বাজিমাত। ধন্যবাদ রকমারি ডট কম কে...

      By Dolon howlader

      18 Nov 2019 03:14 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      অামার কাছে এই বইটির তিনটি কপি রয়েছে।বিভিন্ন স্থানে পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছি।বইটি যত বারই পড়েছি ততবারই ভালো লেগেছে। বইটির অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে।অাশা করি সামনের দিনে অাবার বইটি পাবো। সবাইকে বইটি কেনার জন্য সবাইকে সাজেস্ট করছি।

      By Mayesha Chowdhury

      28 Oct 2019 10:45 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিতে লেখক অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সমগ্র জীবনের স্পষ্ট চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন| তার শৈশব ,কৈশোর,ছাত্রজীবনের নানা স্মৃতি,সংগ্রামময় জীবন এমনকি জননেতা থেকে দেশনেতা তথা জাতির পিতা হয়ে ওঠার এক সাহসী সত্যিকে তিনি জাতির নিকট তুলে ধরেন |যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থের সমাপ্তি তিনি টেনে যেতে পারেন নি|বইটির প্রতিটি লাইন একজন মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে সক্ষম|দেশের জন্য মানুষ যে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে এই বইটি তার বাস্তব প্রমাণ|আর এই অসমপ্ততার কারণেই এই বইটির নাম হলো অসমাপ্ত আত্মজীবনী|

      By Taufiq Mohammed

      19 Oct 2019 02:01 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্খবন্ধুর অসাধারণ সাহিত্যিক ভাষা পড়ে যে কেউ মুগ্ধ হবে । এই বইয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ফুটে ওঠেছে , তেমনি ফুটে ওঠেছে তৎকালীন রাজনৈতিক ,ও সামাজিক ও আরো অনেক কিছু । অসাধারণ সাহিত্যিক ভাষা পড়ে যে কেউ মুগ্ধ হবে । এই বইয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ফুটে ওঠেছে , তেমনি ফুটে ওঠেছে তৎকালীন রাজনৈতিক ,ও সামাজিক ও আরো অনেক কিছু । বঙ্খবন্ধুর অসাধারণ সাহিত্যিক ভাষা পড়ে যে কেউ মুগ্ধ হবে । এই বইয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ফুটে ওঠেছে , তেমনি ফুটে ওঠেছে তৎকালীন রাজনৈতিক ,ও সামাজিক ও আরো অনেক কিছু । বঙ্খবন্ধুর অসাধারণ সাহিত্যিক ভাষা পড়ে যে কেউ মুগ্ধ হবে । এই বইয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ফুটে ওঠেছে , তেমনি ফুটে ওঠেছে তৎকালীন রাজনৈতিক ,ও সামাজিক ও আরো অনেক কিছু । বঙ্খবন্ধুর অসাধারণ সাহিত্যিক ভাষা পড়ে যে কেউ মুগ্ধ হবে । এই বইয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ফুটে ওঠেছে , তেমনি ফুটে ওঠেছে তৎকালীন রাজনৈতিক ,ও সামাজিক ও আরো অনেক কিছু । বঙ্খবন্ধুর অসাধারণ সাহিত্যিক ভাষা পড়ে যে কেউ মুগ্ধ হবে । এই বইয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ফুটে ওঠেছে , তেমনি ফুটে ওঠেছে তৎকালীন রাজনৈতিক ,ও সামাজিক ও আরো অনেক কিছু ।

      By Mahmud Hasan

      14 Oct 2019 10:15 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইয়ের নাম – অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখক – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃষ্ঠা – ৩৩০ প্রকাশনী- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড মুদ্রিত মূল্য - ৫২৫ গ্রামের দুরন্ত কিশোর হতে মুসলিম লীগের এক সাধারণ কর্মী হয়ে উঠা , আবার এই সাধারণ কর্মী থেকেই বিখ্যাত নেতা হয়ে উঠা । হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান কে আমরা সকলেই চিনলে বা জানলেও তার এই মহান নেতা হওয়ার পিছনের কাহিনী বলতে গেলে আমরা কেউই জানিনা । অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বর্ণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কৈশোর , বর্ণিত হয়েছে সফলতার গল্প ,বর্ণিত হয়েছে তার দেশপ্রেম , তার উদারতা । এতে বর্ণিত হয়েছে মনোবল ভেঙে না যাওয়া এক তরুণের গল্প , বারবার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও এক ত্যাগী নেতার বেঁচে থাকার গল্প । এছাড়াও বইটিতে লেখক ব্যক্ত করেছেন তার সহকর্মীদের কথা , তার পরিবারের কথা , তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কথা যা বইটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায় । পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস জানতে , দেশের গল্প ,দেশের ভালোবাসার গল্প জানতে এখুনি পড়ে ফেলতে পারেন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি ।

      By Shadin Pranto

      02 Oct 2019 12:24 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      জাতির পিতাকে নিয়ে গবেষণা বিষয়ক গ্রন্থের চে' অন্ধ স্তুতি গ্রন্থেই বাজার সয়লাপ। বিভিন্ন ধান্দাবাজ নিজেদের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই লিখছে৷ অথচ তাঁকে জানতে, তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বুঝতে, তাঁর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে অবহিত হতে বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা পড়ার বিকল্প নেই, হতে পারে না। যেকোনো বাঙালির উচিত বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পাঠ করা। তাতে অবিভক্ত ভারতের রাজনীতির পাশাপাশি বাংলার রাজনীতির অন্ধিসন্ধি বাইরে জানা যাবে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠার পেছনের গল্প।

      By Mohammad Maruf Ali

      28 Feb 2020 01:22 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানতে হলে এই বইটি পড়তে হবে।

      By Kazi Sunzed Kabir

      04 Sep 2019 01:13 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      বুক রিভিউঃ বইঃঅসমাপ্ত আত্মজীবনী। লেখকঃশেখ মুজিবুর রহমান। রিভিউঃবাংলাদেশের রাজনীতিতে যার অবদান চিরস্মরণীয়, শুধু রাজনীতি কেন বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে যিনি রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তাঁর সারাজীবন শুধু জনসাধারণের কথাই ভেবে গিয়েছেন। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর আত্মজীবনী শেষ করে যেতে পারেননি। তাই তাঁর এ অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তাঁর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আমাদের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। যা হোক যতটুকুও আমরা তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে জানতে পারি, সেখানে তাঁর বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, কৈশোর, স্কুল ও কলেজের জীবন পাশাপাশি তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগের পর হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তানদের থেকে দূরে নিরাপত্তা বন্দী হিসেবে বিনা বিচারে তাঁর জেল জীবন। স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছার উৎসাহেই জেলে বসে তিনি তাঁর এ আত্মজীবনী লেখা শুধু করেন। তিনি তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি যখন জন্মেছিলেন তখন আর তাদের বংশীয় জৌলুস তেমন ছিলোনা বললেই চলে। ১৯৩৬ সালে তিনি গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন। তখন থেকেই তিনি চশমা পরিধান করা শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বগুণ ফুটে ওঠে। স্কুল কলেজের নানা আয়োজনে তিনিই প্রায় সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও পাকিস্তান সৃষ্টিতে তিনি রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই পাকিস্তানের কারাগারেই তাকে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে বিনা বিচারে কাটাতে হয়েছে বহু বছর। পরিবার থেকে দূরে থেকে একজন রাজনৈতিক বন্দীর জীবন যে কতটা দূর্বিসহ হতে পারে তা এখানে ফুটে উঠেছে খুবই মর্মান্তিক ভাবে। ছেলে-মেয়েরা শৈশবে বাবাকে না পেলে তাদের অনুভূতি কেমন বা সন্তানদের শৈশবের সময় সন্তানদের পাশে না থাকলে একজন পিতার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে সে বিষয়টিও আমাদের পীড়া দেয়। একজন মানুষ যিনি তাঁর দেশের কথা ভেবেছেন আজীবন, সে দেশ থেকেই যখন কপালে জুটে বিড়ম্বনা, তখন মানুষটির মনের অবস্থা আমরা এখানে দেখতে পাই। রাজনৈতিক জীবনে তিনি অনেকের দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে যার কথা না বললেই নয়, তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এছাড়াও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক অন্যতম। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তাঁর ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান ও চীন ভ্রমণ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এছাড়াও আছে কেন্দ্রীয় মুসলিন লীগ সরকারের অপশাসন, যুক্তফ্রন্ট পূর্ব-বাংলায় জয়ী হওয়া সত্ত্বেও তারা ক্ষমতা যুক্তফ্রন্টের হাতে তুলে দেয়নি। বরং তারা মন্ত্রী পরিষদকে বরখাস্ত করে, শেখ মুজিব সহ আরও অনেক মন্ত্রীকে মিথ্যে অভিযোগে জেলে বন্দী করে রাখে। শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন শুধু দেশের কথাই ভেবেছেন, আর এজন্য তাকে জীবনের অনেকটা সময় পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তানদের থেকে দূরে জেলে বসে কাটাতে হয়েছে। তবে তাঁর পিতা এবং স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা সারাজীবনই তাকে উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন।

      By Ahmed Supto

      24 Apr 2019 05:13 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      কিছু গল্প আছে যার ধারা পাঠককে বইয়ের ভেতর টেনে নিয়ে যায়। যে বইটি সম্পর্কে বলতে চলছি তা এমনি একটি গল্প যার ধারা আপনাকে মোহিত করবে। হৃদয়ের কোণে লুকিয়ে থাকা মুক্ত সত্তাকে নাড়া দেবে, নিঃশব্দে বলে যাবে অনেক কিছু ।

      By Md. Saiful Islam Sohel

      17 Aug 2018 07:59 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৪ পর্ব:৪ বইয়ের নাম:অসমাপ্ত অাত্মজীবনী লেখক:শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম প্রকাশ:জুন ২০১২ প্রচ্ছদ:সমরেশ মজুমদার বইয়ের পৃষ্টা:৩৩০ মুদ্রণমূল্য:২২০টাকা অালোচনা:শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে অাকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়।খাতাগুলি অতি পুরানো,পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায় অস্পষ্ট।মূল্যবান সেই খাতাগুলিে পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত অাত্মজীবণী,যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন,কিন্তু তিনি শেষ করতে পারেন নি।জেল-জুলুম,নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে,রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ,সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে অাত্মজীবণী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও,এই বইটি তার স্বাক্ষর বহন করছে। বইটিতে অাত্মজীবণী লেখার প্রেক্ষাপটে,লেখকের বংশ পরিচয়,জন্ম,শৈশব,স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড,দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা,দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি,দেশবিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি,কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন,ভাষা অান্দোলন,ছাত্রলীগ ও অাওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা,যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন,অাদমজীর দাঙ্গা,পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে।অাছে লেখকের কারাজীবন,পিতা-মাতা,সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বসংসহা সহধর্মিণীর কথা,যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন।একইসঙ্গে লেখকের চীন,ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তাঁর অাত্নজীবণী লিখেছেন।সে লেখা তাঁর ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া,পরিবারের কথা,ছাত্রজীবনের অান্দোলন,সংগ্রামসহ তাঁর জীবনের অনেক অজানা ঘটনা জানার সুযোগ এনে দেবে।তাঁর বিশাল রাজনৈতিক জীবনের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই গ্রন্থে তাঁর লেখণীর ভাষায় অামরা পাই।তিনি যা দেখেছেন,উপলব্ধি করেছেন এবং রাজনৈতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন সবই সরল সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন।তাঁর এই সংগ্রাম,অধ্যবসায় ও অাত্নত্যাগের মহিমা থেকে যে সত্য জানা যাবে তা অাগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।ইতিহাস বিকৃতির কবলে পড়ে যারা বিভ্রান্ত হয়েছেন তাদের সত্য ইতিহাস জানার সুযোগ করে দেবে।গবেষক ও ইতিহাসবিদদের কাছে এই গ্রন্থ মূল্যবান তথ্য ও সত্য তুলে ধরবে। পাঠ প্রতিক্রিয়া: একজন মহাপুরুষের জীবনী জানলাম,প্রতিক্রিয়া ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল।শুধু এইটুকু বলবো বইটির পাতায় পাতায় রয়েছে অাদর্শ ও দেশপ্রেমের বাস্তবিক কথন।যা যেকোনো নাগরিককে শক্তিশালী নেতৃত্ব বিকাশে সহায়ক করবে।বইটির পড়ার জার্নিটা বাধাহীন ছিলো,অনায়াসে পড়ে ফেলেছি।অামার কাছে ভালোই লেগেছে 'বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত অাত্মজীবনী'। রিভিউ লিখেছেনঃ যায়েদ আল মাহমুদ

      By Rahman Ferdinand

      26 Aug 2017 04:37 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিচরিত্র একটি অখণ্ড সংগ্রামের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র প্রকাশ এ জন্য ঐতিহাসিক তাৎপর্যে অর্থবহ হয়ে উঠেছে। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' ৩৩০ পৃষ্ঠার গ্রন্থ। তবে আত্মজীবনী অংশ ২৮৮ পৃষ্ঠায় শেষ হয়েছে; বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার পরে মূল প্রসঙ্গের অবতারণা-অর্থাৎ আত্মজীবনীর সূচনা। ২৮৯ পৃষ্ঠা থেকে শুরু হয়েছে টীকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পরিচয় (১৯৫৫-১৯৭৫); আরো আছে জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকা ও নির্ঘণ্ট। গ্রন্থটি প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ও আনুষঙ্গিক তথ্য বিবৃত করা হয়েছে ফ্ল্যাপে। একটি অংশ স্মরণীয়-'২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলো অতি পুরনো, পাতাগুলো জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলো পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার স্বাক্ষর বহন করে।' এ গ্রন্থে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তাঁর জীবনী লিখেছেন। তবে অনুপুঙ্খ বর্ণনায় উপস্থাপিত হয়েছে অনেক বিষয়। আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশপরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশ ভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আরো আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সব দুঃসময়ে অবিচলভাবে পাশে ছিলেন। একই সঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'কে কারা-সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র রূপ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়। কারণ লেখক শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ কয়েদির মতো জেলহাজতে বন্দি ছিলেন। সে সময় তিনি এটি রচনা করেছেন। তা ছাড়া গ্রন্থটিতে ব্যক্তির 'কারাজীবনের অন্তরালের ঘটনা, জেলখানার রীতিনীতি, শাসনপ্রণালি, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সেখানকার অন্যান্য বন্দি ও কর্মচারীর' সব কিছু উন্মোচিত হয়েছে। বলা যায়, কারা-সাহিত্য কারাগারের ভেতরের চিত্র তুলে ধরে। তবে বন্দিশালা সব সময়ই লেখকের জন্য একটি সংকীর্ণ পরিসর। তাঁর স্বাধীনতা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও সমঝোতার সুযোগ সেখানে সংকুচিত। যদিও অবারিত তাঁর কল্পনার আঙিনা। এ জন্য এই কারা-সাহিত্যকর্মটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভাষ্যে পরিণত হয়েছে। গ্রন্থটি বাস্তব রাজনীতির বহুকৌণিক পাঠের জন্যও মূল্যবান। রাজনীতি করতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যা ও সংকটময় পথপরিক্রমণ করতে হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি লিখেছেন, 'রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তাঁর আত্মীয়স্বজন, ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ, তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।' একই সঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও আদর্শ। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আচরণের সমালোচনা করার সময় কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ছাত্রদের কর্মকাণ্ডকেও তিনি একটি মন্তব্যে স্পষ্ট করেছেন। 'দু-চারজন কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ছাত্র ছিল, যারা সরকারকে পছন্দ করত না। কিন্তু তারা এমন সব আদর্শ প্রচার করতে চেষ্টা করত, যা তখনকার সাধারণ ছাত্র ও জনসাধারণ শুনলে ক্ষেপে যেত।' (পৃ ১০৯) এমনকি 'পাকিস্তান টাইমস' অফিসে মিয়া সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছিলেন পাকিস্তানের দুশমন হিসেবে, সেই সংবাদও জানিয়েছেন লেখক। (পৃ. ১৪১) তবে এসব সত্ত্বেও জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি সাহসের সঙ্গে; পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন দৃঢ়চিত্তে। কারাগারে বন্দি লেখকের স্মৃতি গ্রন্থটিতে ঘুরেফিরে এসেছে। বঙ্গবন্ধু নিজেই ঐতিহাসিক চরিত্র। তাঁর আত্মজীবনী এ জন্য নানা তথ্যের আকর। তবে রাজনৈতিক ইতিহাসের মলাট ছেড়ে এই যশস্বী ও বর্ণময় চরিত্রের নিভৃত মনের অনেক সংবাদ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে গ্রন্থটির সাবলীল ভাষার বর্ণনায়। সমকালীন বৃহত্তর জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' একটি অমূল্য সম্পদ। তা ছাড়া গ্রন্থটিতে বর্ণিত ঐতিহাসিক কালানুক্রমিক ঘটনাধারা মনে রাখলে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র ঐতিহাসিক গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব। বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মহাকালিক ইতিহাসের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। (তথ্য ও লিখা সংগ্রহীত)

      By Ferdusi rumi

      22 Aug 2017 03:46 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম- অসমাপ্ত আত্মজীবনী জনরা- আত্মজীবনী লেখক- শেখ মুজিবর রহমান পৃষ্ঠা-৩২৯ মূল্য-৬৫০ শেখ মুজিবর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি। রাজনীতিতে প্রবেশের অনেক গুলো দিন কেটে যাওয়ার পর, অনেক বন্ধুরা এমন কি সহধর্মিনী পর্যন্ত শেখ মুজিবকে বলতে লাগলেন, এ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা গুলো লিখে রাখতে। সেই উৎসাহে তিনি কলম ধরেছিলেন একসময়। কিন্তু শেষ করতে পারেন। তবে এই অসমাপ্ত লেখা গুলোও ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যূত্থানে মৃত্যুবরণ করার পর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০০৪ সালে হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে শেখ মুজিবের লেখা চারটি খাতা আসে। অনেকদিন আগের লেখা খাতা এবং সেগুলো ছিলো অনেক পুরানো, পাতাগুলি ছেড়াছেড়া প্রায়। অনেকগুলো লেখাও অস্পষ্ট। এই গুলো তিনি লিখেছিলেন ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তিনি তখন জেলখানায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। খাতাগুলো পড়ার পর বুঝতে পারা গেলো এগুলো তিনি আত্মজীবনী লিখতেই শুরু করেছিলেন। যেহেতু শেষ পর্যন্ত লিখতে পারেন নি তাই আত্মজীবনীটা অসমাপ্ত রয়ে গেলো। এই খাতাগুলো বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী রূপে প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। বই আলোচনাঃ পুরো বইটিতে তিনি তার এই আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে তাঁর পূর্বপুরুষদের বংশ পরিচয় ও তাদের বিভিন্ন কাহিনী, তারপর নিজের জন্মের কাহিনী, দুরন্ত শৈশব, প্রথম স্কুলে যাওয়া, স্কুল কালীন স্মৃতিময় দিনগুলো, স্কুল ছেড়ে কলেজের গন্ডিতে প্রবেশ, কলেজ শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি রাজনীতিতে প্রবেশ, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন প্রকৃতিক দূর্যোগ-দুর্ভিক্ষ, রাজনৈতিক আন্দোলন সমূহ, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, সে সময়ের কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি কর্মকান্ড সম্পর্কিত বর্ণনা, দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার বিভিন্ন রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের শাসনের নামে শোষণ, বাঙালির মাতৃভাষায় হস্তক্ষেপ, ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি, এরপর রাজনীতিতে ছাত্রলীগ ও মুসলীম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন, তারপর মুসলিম বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ গঠন। দাবী আদায়ে সোচ্চার হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন, নির্বাচনে অংশ গ্রহন এবং নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের মতো রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বিবরণ। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের সকল বিষয়ে বৈষম্যমূলক শাসনের বিস্তৃত বিবরণ, এমন কি নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। এর বাইরেও যা আছে তা হলো, রাজনীতির জন্য নিজের ত্যাগ তিতিক্ষার বিবরণ। বিভিন্ন সময়ে বিনা কারনে কারাবরন। শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অকারন কারাভোগ। এসবের জন্য নিজের পরিবার থেকে দূরে থাকার বিভিন্ন খারাপ সময় গুলোর বর্ণনা। পিতা-মাতা, ছেলে মেয়ে এমনকি সবকাজে উৎসাহ আর প্রেরণার উৎস সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসার কথাও বলেছেন। ব্যক্তিগত মতামতঃ একজন জাতির পিতার আত্মজীবনী এরকই হওয়ার কথা যতোটা পেয়েছি। আফসোস শুধু এতোটুকইযে এটা অসমাপ্ত হিসেবে পেয়েছি। পড়ার শেষে মনে হয়েছে আরো কেন লেখেন নি তিন। এটা মূলত তাঁর রাজনীতি জীবনে প্রবেশের শুরুর সময় টুকুর বর্ণনা। যার ব্যপ্তিকাল হয়েছে১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত। তাই শুধু মাত্র সূচনা টুকু পাওয়া যায়। মধ্য আর অন্ত বিহীন। যেটুকু আছে একজন জাতির পিতা হিসেবে তার পরিচয় পাওয়া হয়ে যায়। তার সততা, সংগ্রামী মনোভাব, নিজের প্রতি আস্থা সবকিছুই তাকে অনন্য করে তুলেছে। সেই ছাত্রজীনে সৈয়দ সোহরাওয়ার্দীর ভক্ত হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকে আর একবারো পিছনে তাকান নি। ঝড় ঝঞ্জা ভয় সব কিছু পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন। এবং হয়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু। একটি স্বাধীনদেশের স্থপতি। যার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" এই বইটি ইংরেজি, উর্দু, জাপানি,চীনা, আরবি, ফরাসি ও হিন্দী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। https://www.rokomari.com/book/31623/অসমাপ্ত-আত্মজীবনী-(ডিলাক্স)(রকমারি-বেস্টসেলার-#-৮)

      By Shawon Shafi

      13 Aug 2017 10:15 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বাংলার ইতিহাসে এক অবিসংবাদিত নাম, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তাঁর নিজ হাতে লেখা আত্মজীবনী “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”। ৬০ এর দশকের শেষের দিকে , খুব অস্থির এক সময় চলছিল, বঙ্গবন্ধু মাথায় মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে ঘুরছেন। যেকোন সময় আততায়ীর হাতে শহীদ হতে পারেন। এর মাঝেই এই অসমাপ্ত জীবনীটা লেখা শুরু করেছিলেন ১৯৬৭ সালে তিনি যখন ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী ছিলেন। এরপর পান্ডুলিপিটা অনেকদিন তাঁর বাসভবন ৩২ নাম্বার বাড়িতে আলমারির উপর ছিল। ৭২ এর শেষে আবার পাকিস্তান জেল থেকে বাড়িতে ফিরে আসলেন। তখনো পান্ডুলিপিটা সেখানে ছিল। ৭৫ এ মর্মান্তিকভাবে সপরিবারে নিহত হলেন। এরপর থেকে আর পাণ্ডুলিপিটারও হদিস পাওয়া যায়নি। আকস্মিকভাবে সেই পান্ডুলিপি আবার ফিরে আসে ২০০৪ সালে। বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসে পৌঁছল। আর আমরা পেলাম বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। বিতর্কিত অনেক ইতিহাসের সত্য বর্ননা পাওয়া যায়। এই বইতে পাওয়া যাবে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বাংলাদেশ তথা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বর্ননা। এমন একজন মানুষের থেকে এসব কথা জানা যাবে, যার মত এত কাছ থেকে খুব কম সংখ্যক মানুষেরই সুযোগ হয়েছে ঐ অস্থির সময়গুলোকে, তখনকার রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহকে এত কাছ থেকে দেখার। এখানে শুধু রাজনীতি, রাষ্ট্র নিয়ে লেখা নেই। লেখা আছে ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর কথা, তাঁর শৈশব। কিভাবে বেড়ে উঠলেন, কৈশরের কথা, যৌবনের কথা। এরপর তারপর বিয়ের কথা। একদিন জেলের মাঝে হঠাত খবর পেলেন তাঁর বিয়ে হয়েছে, স্ত্রীর নাম ফজিলাতুন্নেছা। সর্বোপরি একটি পরিবারের কথা, একটি দেশের কথা। আমি মনে করে, প্রত্যেকটা বাঙালির, বাংলাদেশীর উচিত রাজনৈতিক মতাদর্শ ভুলে গিয়ে একবার হলেও এই বইটি পড়া।

      By Sk Maruf Hasan Rinku

      15 May 2016 03:16 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      It's a great book.

      By Shahjahan Ahamed Saju

      30 Apr 2016 01:05 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Very helpful

      By nazia ferdoush

      18 Aug 2015 11:26 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ : নিরপেক্ষতার মৌলিক দলিল ‘তিনি কখনো আপোস করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ।’ তাঁর সম্পর্কে এমনই মত পোষণ করেছেন তাঁর সুযোগ্যা কন্যা। পিতা শেখ লুৎফর রহমানের সততা ও সচেতনতার বাণীকে মর্মে ধারণ করে পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর সর্বংসহা সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছার ‘বসেই তো আছ , লেখ তোমার জীবনের কাহিনী’ এই অনুরোধে যিনি বলেছিলেন ‘...এমন কি করেছি যা লেখা যায়!...নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ ¯স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।’ তিনিই রচনা করেছেন অসাধারণ এক জীবনী সাহিত্য ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)। এ শুধু একটি আত্মজীবনী নয় বাঙালী জাতির ইতিহাসের একিটি অসাধারণ সাহিত্যিক প্রকাশও বটে। ১৯৬৭ সালে রচিত হলেও বইটি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ সময় পর (২০০০-২০১২) এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী একটি অসাধারণ জীবনীসাহিত্য হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়। সাধারণ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থগুলোতে নিজের মহিমা প্রচারের ও নিজ কৃতিত্বকে তুলে ধরার যে সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় এই গ্রন্থটি তা থেকে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম ধারায় রচিত। একজন অসাধারণ নিরপেক্ষ প্রকৃত দেশপ্রেমিকের হাতেই এ অনন্য সাহিত্যের নির্মাণ সম্ভব। এ বই যে পড়বে নিরপেক্ষতার পরাকাষ্ঠায় তাকে ¯স্বীকার করতেই হবে এর অনন্যতা। এ যেন জীবনী গ্রন্থ নয়, বইটি পড়লে কখনো মনে হবে একটি অসাধারণ গল্পের বই, কখনো মনে হবে বাংলার ইতিহাস যেন কোন সাহিত্যিক সাবলীল ভাষায় নিজের মত করে বয়ান করছেন যার কোথাও কোন পক্ষপাতিত্ব নেই, নেই কিছু লুকোবার প্রয়াস। ১৯৩৪ থেকে শুরু করে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার আলোকপাত রয়েছে বইটিতে। গ্রন্থের শুরুটা ঠিক উপন্যাসের মত। গ্রামের শেখ বংশের একটি ছেলে বর্ণনা দিচ্ছে তার বংশের, তারপর মাত্র ১২বছরে বাল্য বিবাহের কাহিনিও বলে গেছে অবলীলায়। ১৯৩৬ সালে এই বালকটি প্রথম রাজনীতিতে পা রেখেছিল সুভাষ বসুর ভক্ত হয়ে। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে। তাঁকেই লেখক সব সময় আদর্শের স্থানে রেখেছিলেন। বয়স খুব কম হলেও ছেলেটির সাহস ছিল প্রচণ্ড, বন্ধুকে রক্ষায় যে বলতে পারতো-‘ওকে ছেড়ে দিতে হবে, নইলে কেড়ে নেব’। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই প্রথম জেল খাটতে হয় তাঁকে। বাবার সততা ও নিষ্ঠার আদর্শকে সারাজীবন মান্য করে গেছে ছেলেটি। অসাধারণ সব সংগ্রামে পার করেছে ১৯৪৩, ১৯৪৭, ১৯৫২,১৯৭১। মানুষের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রমে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত। মানুষের জন্য, দেশের জন্য তিনি ঘুমিয়েছেন চাকরদের কামরায়, থেকেছেন বেকার হোস্টেলে অর্ধাহারে অনাহারে। তবুও হাল ছাড়েন নি কোনোভাবে।। সাম্প্রদায়িকতা তিনি পছন্দ করতেন না মোটেও, বরং হিন্দু-মুসলিম সকলকে এক করতে ছিলেন বদ্ধপরিকর। কোটারির বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন তিনি। তোষামোদি করতে মোটেও পছন্দ করতেন না, পছন্দ করতেন না আপোষ করতেও। অসীম সাহসীকতায় তাই সোহরাওয়ার্দীকেও তিনি বলতে পেরেছিলেন-‘আপোস করার কোন অধিকার আপনার নাই। আমরা খাজাদের সাথে আপোষ করবো না।’ বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে ঠিক যেন অর্ধশত বছর আগের কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাত্রা করছি আমরা। ঘটনাপুঞ্জ এমনি নিরেট যে এর কোথাও কোন ফাঁক নেই, দম ফেলার অবসর নেই। অসাধরণ বয়ান ভঙ্গি আর সাবলীল উপস্থাপন, তরতর করে টেনে নিয়ে চলে একেবারে গ্রন্থের শেষ পর্যন্ত। এ গ্রন্থের পরতে পরতে চমক আর সরলতা, বন্ধুত্ব আর সততা, ত্যাগ আর সংগ্রামের নজির। সাথে রয়েছে বিদেশ ভ্রমণের চাঞ্চল্যকর বর্ণণা যা এনে দেয় অসাধারণ ভ্রমণ গ্রন্থের স্বাদ। শুধু দেশের রাজনীতির আগাগোড়া বর্ণনাই নয় এতে তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর মনোভাবও, একজন সুদক্ষ ঔপন্যাসিক যেমন করে নিজের মতকে মিলিয়ে দেন লেখার সাথে ঠিক তেমনি। অনেক ক্ষেত্রে করেছেন উপযুক্ত তুলনাও- ‘এরা শিল্পকারখানা বানানোর জন্যই শুধু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায় করে। আমাদের দেশে সেই সময় কোরিয়ার যুদ্ধের ফল¯^রূপ যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল তার অধিকাংশই ব্যয় হল জাপানি পুতুল, আর শৌখিন দ্রব্য কিনতে। দৃষ্টিভঙ্গির কত তফাৎ আমাদের সরকার আর চীন সরকারের মধ্যে।’ এই অসাধারণ উপলব্ধি অনেক আগেই করতে পেরেছিলেন তিনি যা আজও আমরা অনেক ক্ষেত্রেই করতে শিখিনি। দেশকে এই মহান পুরুষ প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। নেতার অহংকার তাঁর ছিল না বলেই তিনি বলতে পারতেন-‘কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগনের আছে।’ একজন নিরপেক্ষ আদর্শ নেতার মুখেই এ বচন শোভা পায়। ১৯৫৫ পর্যন্ত তিনি লিখতে পেরেছিলেন এক অসাধারণ ইতিহাস এরপর আরো অনেক চড়াই উৎরাই তিনি পার করছেন কিন্তু সময়ের অভাবে তা লিপিবদ্ধ করার সুযোগ তাঁর ঘটেনি, ফলে তাঁর ও এদেশের জাতীর জীবনের অমূল্য ইতিহাস অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ই একটি উপযুক্ত শিরোনাম। জীবন মানেই সাহিত্য। তবে সব রচনা সাহিত্যের মানদণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। অসাধারণ আত্মজীবনীও উন্নত সাহিত্যের মর্যাদা পেতে পারে যদি তা হয় সহজ অথচ মর্মস্পর্শি, সাধারণ হয়েও অসাধারণ। যদি তা হয় বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র অনুরূপ। সত্যিই এ এক অমূল্য, অসাধারণ গ্রন্থ। যে কোটারি আর দুর্নীতির দায়ে আমরা আজ কলঙ্কিত, যে তোষামুদে রাজনীতির ফাঁদে আমরা আজ জর্জরিত তা কোনদিন কাম্য ছিল না তাঁর। কোটারি আর পক্ষপাতহীন সমাজ চেয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সকল ধর্মের, সকল সম্প্রদায়ের মানুষের যাদের তিনি ভাই বলে জানতেন। রাজনীতিকেও এত নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বয়ান করা কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল। এই গ্রন্থটিতে তাঁর প্রতিটি বিবৃতি সেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিরই পরিচায়ক। তিনি প্রকৃত অর্থে কোন দলের নন, নন বিশেষ কোন শ্রেণীর। তিনি সারা বাংলার মানুষের, তিনি দল মত নির্বিশেষে সবার যার স্পষ্ট নজির তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। একজন আদর্শ দেশনায়ক, আদর্শ দেশপ্রেমীকের চিহ্ন বহন করে চলেছে এই ছোট্ট গ্রন্থটি। আমাদের তরুণ সমাজ ও ভবিষ্যৎ কাণ্ডারীদের জন্য এটি কেবল একটি অনুসরণীয় আদর্শই নয় ইতিহাসের প্রতীকও। নয় শুুধু সংগ্রামী জীবনের একটি উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত, এটি নিরপেক্ষতার মৌলিক দলিলও বটে। -নাজিয়া ফেরদৌস বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

      By Mutasim Uddin

      16 Aug 2015 12:15 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির আবেদন বহুমাত্রিক। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি আত্মজৈবনিক বই হয়ে থাকেনি, হয়ে উঠেছে ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৪-৫৫ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের বিশেষত পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের অনবদ্য, নিরপেক্ষ, নির্মোহ দলিল; একজন হৃদয়বান নেতার এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোকে গভীরভাবে অনুধাবন করে সেসব সমাধানের সংগ্রামের অসাধারণ আখ্যান; টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক দুরন্ত কিশোরের সারা বাংলার মানুষের প্রতিনিধি হয়ে ওঠার এক অন্তরঙ্গ গল্প। বইটির ভাষারীতি অত্যন্ত সহজ, সুন্দর এবং সাবলীল, অনেকটাই শেখ মুজিবুর রহমানের মুখের ভাষার কাছাকাছি। অসাধারণ চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা লেখকের জীবনের গল্প যে কোন রোমাঞ্চ উপন্যাসকেও হার মানায়। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির পরিক্রমা মূলত দুইটি প্রধান কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত। ধারা দুটো হল লেখকের রাজনৈতিক জীবন এবং লেখকের ব্যক্তিগত জীবন। বইটির আঙ্গিক, ধরন এবং বই সংশ্লিষ্ট বিতর্ক সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক আলোচনার পূর্বে বিষয়বস্তুর এই দুই অলিন্দ – লেখকের রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির সাথে প্রথম প্রত্যক্ষ সংস্রব ঘটে ১৯৩৮ সালে । যদিও তখনও তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় নি। সে বারে তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এবং শ্রমমন্ত্রী শহীদ সাহেব গোপালগঞ্জে এসেছিলেন একটি সভা উপলক্ষে। সেখানেই প্রথম মিশন স্কুলে শহীদ সাহেবের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের কথা হয়। পরবর্তীতে এই পরিচয়ের সূত্র ধরে লেখক শহীদ সাহেবকে নিয়মিত চিঠি লেখা শুরু করেন এবং ১৯৩৯ সালে কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে শহীদ সাহেবের সাথে দেখা করেন। এবং সেখান থেকে ফিরে এসেই গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্র লীগ গঠন করেন এবং তিনি তাঁর সম্পাদক হন। এভাবেই শুরু হয় লেখকের রাজনৈতিক জীবন। লেখকের রাজনৈতিক জীবনের বিস্তৃত বর্ণনা এই আলোচনায় বাহুল্য। তবে রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে দুর্ভিক্ষ এবং তারপর বিহার ও কলকাতার দাঙ্গায় লেখকের সক্রিয় ভূমিকার কথা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য । বিশেষত ’৪৬ এর দাঙ্গার সময় লেখক নিজে কলকাতায় ছিলেন বলে সে সময়ের কলকাতার দাঙ্গার বিবরণ বেশ বিস্তৃতভাবে এসেছে এই বইয়ে। শেখ মুজিবুর রহমান সে সময়ে দিনরাতের ব্যবধান ভুলে গিয়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে কাজ করে গিয়েছেন। দাঙ্গাক্রান্ত প্রতিটি আর্ত মানুষের জন্যে লেখকের যে আর্দ্র আবেগ, তাদের সহায়তার জন্যে প্রতিনিয়ত নিজের জীবন বিপন্ন করে যেই সংগ্রাম, তাদের অমঙ্গল আশঙ্কায় যে ব্যক্তিগত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তা অবশ্যই স্মরণীয় এবং শিক্ষণীয়। দাঙ্গার পরপরই দেশভাগের প্রসঙ্গ এই অঞ্চলের রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার নির্ধারণী নিয়ামক হয়ে ওঠে এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। দেশভাগের প্রাক্কালে পাকিস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন তার সাথে অবশ্যই পাঠক একাত্মতা অনুভব করবেন। সে সময় লেখক দেশভাগের জন্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত পড়াশোনাও মুলতবি রেখেছিলেন। এ ব্যাপারে লেখকের যুক্তি ছিল খুবই পরিষ্কার, একটি নিজস্ব দেশই যদি না পাওয়া যায় তাহলে পড়াশোনা করে কী লাভ? অবশেষে সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত পাকিস্তান পাওয়া গেল। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারলেন, স্বাধীন দেশে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা অধরাই থেকে যাচ্ছে। দেশভাগের পরেও শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক গুরু শহীদ সাহেব পশ্চিম বাংলার সাধারণ, নিপীড়িত মানুষদের কথা চিন্তা করে সেখানেই থেকে গেলেন। এদিকে নাজিমুদ্দীন নেতা নির্বাচিত হয়েই ঢাকায় চলে এলেন এবং মুসলিম লীগে শুরু হল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কাল। এই সময়ে শেখ মুজিব তাঁর অবস্থান থেকে সব সময়ই অন্যায়ের যথাসাধ্য প্রতিবাদ করেছেন, কথা বলেছেন নিপীড়িত মানুষের হয়ে। সে সব বর্ণনা অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে এই বইয়ে উঠে এসেছে। আরও এসেছে ’৪৮ সালে বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রথম যেই আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে তার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীদের নায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনের কথা, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কথা, আদমজীর দাঙ্গার কথা; আর এ সবই লেখক বর্ণনা করেছেন তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে। শেখ মুজিবুর রহমান সবসময়ই সাধারণ জনগণের জন্যে রাজনীতি করতেন। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ছিল সর্বজনগ্রাহ্য কারণ সেগুলো ছিল সহজবোধ্য। তিনি কমিউনিস্ট নেতাদেরে প্রায়ই বলতেন, আমার জনগণ যদি নাই বুঝতে পারে তাহলে আদর্শের উড়োজাহাজ চালিয়ে কী লাভ? জনগণের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি এ সময়কালে বহুবার আটক হয়েছেন, জেল খেটেছেন। তাঁর যৌবনের একটা বড় অংশই কেটে গিয়েছে জেলে জেলে। তবে এ নিয়ে তাঁর কখনো কোন আক্ষেপ ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমানের এই বহুমুখী রাজনৈতিক জীবনই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের মূল আলোচ্য এবং প্রাণশক্তি। ব্যক্তিমানুষের প্রবণতাকে কখনোই তার কর্মকাণ্ড থেকে আলাদা করা যায় না। সেজন্যেই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির সূক্ষ্ম পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, শেখ মুজিবুর রহমানের সমস্ত কার্যক্রমই শেষ বিচারে তাঁর কিছু আজন্ম প্রবণতার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। দুরন্তপনা, রাগ, গণমানুষের প্রতি ভালোবাসা, ন্যায়পরায়ণতা, দৃঢ়চেতা মনোভাব, নায্য দাবি আদায়ে অনমনীয়তা এই প্রবণতাগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য। বইয়ের শুরুতে লেখক তাঁর পারিবারিক ইতিহাস বেশ আড়ম্বরের সাথেই বিধৃত করেছেন। সেই বর্ণনা থেকেই আমরা জানতে পারি লেখকের বংশ ছিল অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত। তারপর আসে শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশোরের দুরন্তপনার আখ্যান। পুকুরে দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটা, মাঠে ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকা বা যে কোন জায়গায় হঠাৎ করেই মারপিট শুরু করে দেয়ার গল্প। তবে এই দুরন্তপনার মধ্যেও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, লেখক তাঁর জীবনের শুরুর দিনগুলো থেকেই কখনও কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। অন্যায়, অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। তারপর আসে লেখকের কলকাতার কলেজ জীবনের কথা। সেখানে ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়েই তাঁর রাজনীতির সাথে প্রথম সংযোগ ঘটে। আমরা দেখতে পাই শেখ মুজিবুর রহমান তার বাবার কাছে থেকে টাকাপয়সা এনে বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজে ব্যয় করছেন। আবার কখনো লেখকের অর্ধাঙ্গিনী রেণু তাঁর জন্যে সংসারের খরচ থেকে বাঁচিয়ে টাকা জমিয়ে রাখছেন। পরে তিনি কলকাতা থেকে এলে সে টাকা তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন। লেখকের কাজের প্রতি পরিবারের সমর্থন সবসময়ই এমন অকুণ্ঠ ছিল। এরকম পারিবারিক পরিবেশের প্রেক্ষাপট অবশ্যই লেখকের রাজনৈতিক জীবনের সফলতার অন্যতম নিয়ামক ছিল। লেখক রাজনীতির কারণে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাও অনুসরণীয়। লেখক অধিকাংশ সময়েই জেলে থাকতেন বা রাজনৈতিক কাজে এতই ব্যস্ত থাকতেন যে তাঁর সন্তানদেরও ঠিকমত সময় দিতে পারতেন না। আরেকটি বিষয় এখানে অবশ্যই উল্লেখ্য, তা হল লেখকের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার বাইরেও অন্যান্য পড়াশোনা করার অদম্য আগ্রহ। বিশেষত ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর বিস্তর পড়াশোনা ছিল। এই পড়াশোনাই তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের স্বচ্ছতা তৈরি করেছিল। এছাড়াও শেখ মুজিবুর রহমানের একটি অসাধারণ শিল্পমন ছিল। তিনি যখন তাঁর দিল্লী এবং আগ্রার তাজমহল ভ্রমণের বর্ণনা করেন তখন তাঁর সেই শিল্প রসবোধ খুবই প্রকটভাবে ফুটে ওঠে। এছাড়া তিনি বইয়ের আরেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, একবার নৌকায় বসে আব্বাসউদ্দিনের কণ্ঠে ভাটিয়ালি গান শোনার পর তাঁর মনে হয়েছিল, এই গান না শুনলে জীবনের অনেকটা অংশই অপূর্ণ থেকে যেত। এইসব বর্ণনাও তাঁর শিল্প সমঝদারির পরিচয় বহন করে। আসলে এইসব ঘটনা থেকেই অনুধাবন করা যায় তিনি কতটা পরিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন, যে হৃদয় দিয়ে সাত কোটি মানুষকে সমানভাবে ভালোবাসা যায়। সার্বিক বিবেচনায় আমার কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের চেয়েও ব্যক্তিগত জীবনাখ্যান বেশি চিত্তাকর্ষক মনে হয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটিতে অনেক রাজনৈতিক এবং কিছু অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এসেছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, লেখকের রাজনৈতিক পিতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মুহম্মদ আলী জিন্নাহ প্রমুখ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যাকে লেখক শহীদ সাহেব বলে সম্বোধন করতেন তাঁর প্রতি লেখক প্রায় পুরো বইজুড়েই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন। তথাপি আমরা দেখেছি, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ সাহেবের অবস্থানকে সমর্থন করতে পারেননি সেখানে সরাসরি দ্বিমত পোষণ করেছেন। এটা লেখকের আপোষহীন মনোভাবেরই পরিচায়ক। এবং সে সব ঘটনা লেখক ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ে বর্ণনাও করেছেন। একই মানুষকে কষ্টিপাথরের নিচে ফেলে সূক্ষ্ম পর্যালোচনা করে তার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলোকে বের করে আনা এবং সেগুলো বলিষ্ঠভাবে উল্লেখ করা লেখনীর নিরপেক্ষতার ব্যাপারেই ইঙ্গিত করে। এই নিরপেক্ষতাই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি লেখকের দার্শনিক সত্ত্বার পরিচয়ও বহন করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলী বা বিষয় সম্পর্কে লেখকের যে সূক্ষ্ম, নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি তা সত্যিই চিন্তা উদ্রেককারী। লেখক এই বইটি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর স্ত্রীর অনুরোধে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেন। যদিও তিনি প্রথমে সংশয়ে ছিলেন তাঁর আসলেই লেখার মত ক্ষমতা বা ভাষাজ্ঞান আছে কিনা এবং তাঁর জীবন সংগ্রামের গল্প পাঠকদের কাছে কোন গুরুত্ব বহন করে কিনা, তবে এই বই পাঠের পরে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় তাঁর লেখনীও মনোহরী, পাঠককে ধরে রাখার মতন। তবে আরেকটা কথাও স্বীকার করতে হবে, শেখ মুজিবুর রহমানের বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্পই পাঠককে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি হাত থেকে নামিয়ে রাখার সুযোগ দেয় না। আর এই বইটির ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্বও এখন প্রশ্নাতীত। বইটি কিছুটা আত্মকথা, কিছুটা ডায়েরী এবং কিছুটা ঘটনাপঞ্জির ধরনে লেখা। বইয়ের শুরুতে শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা এবং বইয়ের বিভিন্ন অংশে জুড়ে দেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লেখা পান্ডুলিপির টুকরো ছবি বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর যে সমস্ত বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, বইটি আসলেই শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা কিনা? যদি তাই হয় তাহলে বইটি এতদিন পড়ে প্রকাশিত হল কেন? আসলে এই বিষয়ে আলোচনাই বাহুল্য, তবুও দুটো কথা জানানো আবশ্যক মনে করছি। আমার ধারণা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বইটি না পড়েই সমালোচনা করা হয়েছে। কারণ, বইটি প্রকাশে কেন কালবিলম্ব হয়েছে তা বইয়ের ভূমিকাতেই শেখ হাসিনা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছেন। আর বইটি পড়ে বিবেচনা করলে এ সকল প্রশ্ন ওঠারই কথা না। কারণ, বইটির ভাষা এবং শব্দচয়ন শেখ মুজিবুর রহমানের মুখের ভাষার খুব কাছাকাছি। অন্য কারও পক্ষেই এই ভাষায় লেখা সম্ভব না। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ‘৩৮ থেকে শুরু করে ’৫৫ সাল পর্যন্ত সময়কালের এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নির্ভরযোগ্য দর্পণ। এই বইটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের অনেক অজানা রহস্যের দ্বার উন্মোচন যেমন হয়েছে তেমন পাঠকদের ব্যক্তি মুজিবকেও নতুনভাবে চেনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রতিটি শিক্ষিত, প্রাপ্তবয়স্ক বাঙালির জন্যে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি অবশ্যপাঠ্য।

      By Suman Sarkar

      12 Aug 2015 10:20 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধু মানে বাংলার বন্ধু । আমার জাতীর পিতা ছাড়া আর কতজন পরিপূর্ণভাবে এই বাংলার বন্ধু হতে পেরেছে তা আমার জানা নেই । বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা হয়তো সম্ভব নয় , কিন্তু হতে পারার যেই চেষ্টাটুকু দরকার সেটাই তো আমরা কেউ করি না বা করতে চাই না । আমরা সবাই আমাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য এত বেশীই ব্যাস্থ যে দেশ তো দূরের কথা , দশকে নিয়েই ভাবতে নারাজ । প্রথমেই বলে রাখা ভালো , বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে লেখা বা আলোচনা করার সামান্য জ্ঞান টুকুও হয়তো আমি আজও আহরন করতে পারি নাই । কারন তিনি এমন একজন মানুষ তাকে নিজে সারাজীবন গবেষণা করলেও হয়তো তাঁর জীবন দর্শন , আদর্শ , দেশপ্রেম , মহানুভবতা , ব্যক্তিত্ব সর্বোপরি নেতৃত্ব সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা পাওয়া সম্ভব নয় । ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কালে এক ভাষণে তিনি কবিগুরুর একটি কবিতার কয়েকটি লাইন চয়ন করেছিলেন " সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী , রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ কর নি " । সেদিন তিনি কবিগুরুর সেই পঙতি দ্বয়ের বিপরীতে বলেছিলেন "কবিগুরু আজ তোমার কথা আমার বাঙ্গালী মিথ্যা প্রমান করেছে । আজ আমার বাঙ্গালী মানুষ হয়েছে । বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের কাছে প্রমান করেছে ,তারা বীরের জাতি। তারা নিজেদের অধিকার অর্জন করে মানুষের মত বাঁচতে জানে ।" বঙ্গবন্ধুর ওইদিনের কথাটি হয়তো , তখন সত্য ছিল । তিনি মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন , সংগ্রাম করেছেন সোনার বাংলা গড়ার জন্য ,এবং তিনি আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীন , সার্বভৌম বাংলাদেশ । কিন্তু স্বাধীনতার ৪৪ তম বছরে এসে আজ আমরা যখন নিজেরা নিজেদের অস্তিত্ব ধূলিসাৎ করার কাজে ব্যস্থ , যেখানে কিছু পাকি প্রেতাত্মা আজও পাক হানাদারদের মত নিরীহ , নিরঅপরাধ , নিরস্র মানুষের হত্যার কাজে লিপ্ত ,তখন আর কোথায় মানুষ হলাম আমরা , কোথায় বঙ্গবন্ধুর সেই লালিত সোনার বাংলা ?যেখানে আমাদের প্রতিটি কর্ম, আড্ডা, চিন্তা, চেতনায় সবকিছুতেই সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় থাকবে , সেখানে এসব কি করছি আমরা ? সোনার বাংলা গড়া তো দূরের কথা , সোনার বাংলাকে কলুষিত করার কাজে সদা ব্যস্ত আমরা । বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রতিটি কথায় "আমার দেশ , আমার ভাইয়েরা , আমার জনগন " ব্যবহার করতেন । কতটুকু ভালবাসলে , কতটুকু অধিকার থাকলে তিনি তা বলতেন !আমরা কি সোনার বাংলাকে , বাংলার মানুষকে বঙ্গবন্ধুর মত আমার মনে করতে পারি না ? আমরা যদি বাংলা এবং বাংলাদেশ সম্পর্কিত সব কিছুই আমার বা আমাদের মনে করি তাহলে হয়তো আমরাও পারবো বঙ্গবন্ধুর মত সোনার বাংলাকে ভালবাসতে । তিনি তাঁর বাবার বলা একটি কথা " Sincerity is the purpose , honesty is the purpose " সারাজীবন মনে রেখে কাজ করে গেছেন । আমরাও যদি এই কথাটি মনে রেখে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে পারি তাহলে আমরাও সোনার বাংলা গড়ায় অবদান রাখতে পারবো । বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রতিটি পরতে পরতে মিশে রয়েছে তাঁর দেশের প্রতি অনবদ্ধ প্রেম , মিশে রয়েছে তাঁর জীবনের আদর্শ ও দর্শন , রয়েছে তাঁর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের ইতিহাস । বইটি শুধু একজন নেতা হওয়ার জন্যই নয় বরং একজন পরিপূর্ণ আদর্শবান মানুষ হওয়ার জন্য বেশী প্রয়োজন ।

      By HASAN

      11 Aug 2015 11:01 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী। এর মধ্যে বলা হয়েছে শেখ মুজিবের অসমাপ্ত দিনগুলো ফেলে পৃথিবী থেকে খুব তাড়াতাড়ি অামাদের দেশকে পাক হানাদার বাহিনীদের হাত থেকে রক্ষা করে বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে। তিনি ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা ও কলকাতা লেখাপড়া করেন। তার পর তিনি রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগ এ যোগ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি শাহাদতবরণ করেন। অামরা তার মৃত্যুতে শোকাহত।

      By moniruzzaman Kabir

      11 Aug 2015 05:29 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কমান্ডার মো. সামসুদ্দিন।তাঁকে পানিপথের যোদ্ধা বললে ভুল হবে না।ব্যাপারটির ব্যাখ্যা দিলে স্পষ্ঠ বুঝা যাবে।তিনি যে এলাকাটিতে যুদ্ধ করেছেন এলাকাটির ভূ-প্রকৃতি সামান্য নিচু ধরনের অর্থাৎ বছরের একটি সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। এলাকাটি ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম।তাঁর জন্ম এ অঞ্চলের রছুল্লাবাদ গ্রামে।এ অঞ্চলের কৃষি পরিবেশটাও সারাদেশ থেকে ভিন্ন।এখানে এপ্রিল মাসে সামান্য বৃষ্টিতে মাটিতে জোঁ আসলে হাইট্টা(প্রকৃত উচ্চারণ ষাইট্টা,যা আউশ মৌসুমের ধান)ও আমন ধান(গভীর পানির)মিশ্রণ করে জমিতে বোনা হয়।জুনের শেষ থেকে জুলাইর প্রথম দিকে জমি থেকে পাঁকা হাইট্টার শীষগুলো কেটে আনা হয়।অন্যদিকে একই জমির আমন ধানগুলি পানির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।বর্ষা মৌসুমে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় শুধু বাড়িগুলো ছাড়া।পানিতে ভাসমান বাড়িগুলো এক একটি দ্বীপ বলে মনে হবে।এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাবার একমাত্র বাহন নৌকা।প্রত্যেক গৃহস্থের একটি করে নৌকা থাকে।পাক বাহিনীর সরব উপস্থিতি ছিল এ অঞ্চলেও।পাকিস্থান সেনাবাহিনীর প্লাটুনগুলো আশ্রয় গাড়ত গ্রামের স্কুল, কলেজের ভবনগুলোতে।সামসুদ্দিন চাচা ও তার সহযোদ্ধারা ভারতের ত্রিপুরা থেকে টেনিং নিয়ে নেমে পড়লেন গেরিলা যুদ্ধে।সময়টা শরৎকাল।প্রকৃতি শান্ত নিরব শুধু দক্ষিণা হাওয়া শু শু করে বইছে।নিকষ কালো ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডিঙ্গি নৌকায় বসে মামসুদ্দিন চাচা ও তার ছয় থেকে সাতজন সহযোদ্ধা মিলে একটি পাকিস্থানি ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেবার প্ল্যান করছেন।পাকিস্থানিরা একটি ক্যাম্প গড়েছে রছুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের হাইস্কুলে।হাইস্কুলটির তিন পাশেই থৈ থৈ পানি।একে তো বর্ষাকাল তার উপর সাঁপ জোঁকের ভয়।অন্যদিকে পাকিস্থানীদের পানি ভীতির কথা আমরা জানি।রাত তখন দুটো কি তিনটে, দুটি এলএমজি ও কিছু গ্রেনেড নিয়ে শামসুদ্দিন চাচা ও নৌকার মাঝি আলি আকবর সহ অন্যরা স্বচ্ছ পানিতে ধানী জমি মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন লক্ষ্যবস্তুর দিকে।গভীর রাত্রের সেই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ১০-১৫ জন সদস্য মারা যায়।সামসুদ্দিন চাচা হারান বাম হাতটি। এই গল্পটি শামসুদ্দিন চাচার জবানিতে শুনা বঙ্গবন্ধু পাঠচক্রে।ও হ্যাঁ,আপনাদেরকে তো এতক্ষনে পরিচয়ই করে দেওয়া হয়নি বঙ্গবন্ধু পাঠচক্রের সাথে।নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে শামসুদ্দিন চাচা তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু পাঠচক্র।গ্রামে গ্রামে ঘুরে তরুণদের যোগাড় করে দু মাস অন্তর অন্তর স্কুলের মাঠের এক কোণে মাদুরে বসে চলে এ পাঠচক্রের আয়োজন।গত বছরের রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের মোল্লা গ্রামের পাঠচক্রের প্রধান আলোচক হিসেবে দাওয়াত করা হলো কৃষিবিজ্ঞানী কবিরকে।আমি মনিরুজ্জামান কবির। বয়স ২৯।চিন্তায় পড়ে গেলাম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অসমাপ্ত আত্মজীবনী ছাড়া তো তেমন কিছু পড়া হয়নি।তাছাড়া পাঠচক্রকের সদস্যরা যেহেতু ১০ থেকে ২২ বছরের ছেলেমেয়ে। তাই আমি তাদের সাইকোলজি নিয়ে স্টাডি করি। শিশুরা গল্প পছন্দ করে।যথারীতি বিকেলের নরম আলোয় অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে আমি বললাম আমি বক্তৃতার ঢঙে কিছু শিখাব না।শিখানোটা হবে টু ওয়ে কমিউনিকেশন।ব্যাপারটি এমন হবে বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে যা জানতে চায় প্রশ্ন করবে আমি আর শামসুদ্দিন চাচা উত্তর দিব। সেইসাথে বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে তাদেরকে গল্প শোনাব।আমিও তাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু জানব।আমি দেখলাম বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক কিছু জানে।যেমন,বঙ্গবন্ধু নামটি কিভাবে হল,জন্মস্থান, তারিখ, ৬ দফা, ৭ মার্চের ভাষণ প্রভৃতি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাক নাম ছিল খোকা। খোকা কিন্ত ছোটকালে দুর্দান্ত ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন।মিশনারী স্কুলের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন।পুরো ফরিদপুরে তার দল স্কুল চ্যাম্পিয়ান।খোকার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারী ছিলেন।তিনি ভাল ফুটবল খেলতে পারতেন সেইসাথে ফুটবলপ্রেমীও ছিলেন।প্রায়ই বাপ আর বেটার(ছেলের) টিমের মধ্যে ফুটবল খেলা হতো।বেশিরভাগ সময়ই খেলা ড্র হতো নয়তো খোকার টিম জয়লাভ করতো।একবার হলো কি জান?একটি টুনার্মেন্টের ফাইনাল ম্যাচ উপলক্ষ্যে পুরো সাজ সাজ রব।অফিসার্স ক্লাবের অনেক টাকা পয়সা।তাই তারা হায়ার করে ভাল ভাল খেলোয়াড় নিয়ে এসেছে।অন্যদিকে খোকার টিমের তো আর টাকা পয়সা নেই।তারা সকলেই তোমাদের মত বয়সেরই। হায়ার করা ফুটবল টিমের সাথে বঙ্গবন্ধুর টিমের তুমুল প্রতিদ্বন্বীতা হল।শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর টিম এক গোলে পরাজিত হলো।গল্প বলতে বলতে সূয পশ্চিম দিকে লাল দিগন্ত রেখা বরাবর মিশে গেল। লেখক: মীর মো. মনিরুজ্জামান কবির, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট,গাজীপুর-১৭০১।

      By Fahim

      11 Aug 2015 11:32 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করলে সাথে সাথেই একজন মানুষের নাম উচ্চারিত হয়।তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।জীবনের অনেকটা সময় তিনি জেল হাজতে কাটিয়েছেন।আর এই সময়ের মাঝে কাগজের পাতায় লিখে গেছে কিছু অমর রচনা।এই লেখাগুলোকে একত্রিত করেই "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" নামক বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি শুধুমাত্র একটি আত্মজীবনীমূলক বই নয়।বইটির ভিতরের লেখাগুলো আমাদের ইতিহাসের অন্যতম একটি দলিল।বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত উঠে এসেছে এই বইটিতে।শৈশবের নানা স্মৃতি,স্কুল- কলেজের পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অবতরণ,রাজনৈতিক জীবনের সূচনা এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙ্গালির নানা আন্দোলনের পিছনের গল্প নিপুন সৌন্দর্যের সাথে তুলে ধরেছে তিনি। সংগ্রামী জীবনের বিশ্বস্ত সঙ্গিনী বেগম মুজিবের অতুলনীয় দিকগুলি আমরা দেখতে পাবো তাঁর লেখনীতে।কত দৃঢ়তার সাথে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সংসার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলে রেখেছিলেন তিনি তা এই বইটি পড়লে আমরা বুঝতে পারি। খুব সহজ এবং সাবলিলভাবে তিনি নিজের জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো লিখে গেছেন এই রচনায়।তাঁকে বলা হতো রাজনীতির কবি, ৭ মার্চের ভাষণে যিনি রচনা করে গেছেন ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা।তাঁর লেখনী আমাদের স্বপ্ন দেখায়,স্বপ্ন দেখায় আমাদের দেশটা তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে। বইটি আমাদের তরুন সমাজের জন্য অবশ্য পাঠ্য।দেশের জন্য একজন মানুষ যে তাঁর জীবনের সকল কিছু ত্যাগ করতে পারে তা এই বই পড়লে জানা যাবে।আমরা সকলেই বইটি পড়বো আশা করি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই।কিন্তু তাঁর কীর্তি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে।

      By Md Shariful Islam

      09 Feb 2021 09:51 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমি মনে করি, এক জন বাঙ্গালী হিসেবে সবাইকে এই বই পড়তে হবে।

      By Md. Masum

      02 Jan 2020 03:52 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসমাপ্ত আত্মজীবনী হলো বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী।অসমাপ্ত আত্মজীবনীঃ শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। ২০১২ সালের জুনে এ বইটি প্রকাশিত হয়।এ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

      By Saion Ahmed Rafa

      28 Sep 2019 02:20 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লে এবং সেভাবে রাজনীতি করলে আমরা একটা অনন্য সুন্দর দেশ পাবো। আফসোস, বঙ্গবন্ধুর নাম অনেকে মুখে নিলেও তার মত চিন্তা, রাজনীতি করা লোক এখন নাই বললেই চলে। বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে নিয়ে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করলে তা বঙ্গবন্ধুকে অপমানের শামিল। আমাদের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কারো মত বিরোধ থাকা ঠিক নয়। এই নেতা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে নিজের জীবনকে ত্যাগ স্বীকার করে ৪৬৮২ দিন জেল খেটেছেন পাকিস্তানের জুলুম ও অত্যাচার থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে।অবশেষে দিয়েছেন আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে না তারা বাংলাদেশকে স্বীকার করে না আমার বঙ্গবন্ধুর মত মানুষ চাই। Asif Siddique 8 months ago অসাধারণ,মহান একজন নেতা ছিলেন এই মানুষটি,মৃত্যুর এতো বছর পরও আজ পর্যন্ত একটাকার দুর্নিতির কলংক চরম শত্রুরা ও যাকে লাগাতে পারেনি।অসাধারণ মানুষ হয়ে ও কতো সাধারণ চলাফেরা করতেন।কি উদার চিনতা চেতনার অধিকারী একজন মানুষ ছিলেন,মানুষ কে মানুষ মনে করার,মানুষকে আপন করে নেওয়ার কি অসাধারণ গুণ নিয়ে এই মানুষটার জন্ম।বাঘের মতো গর্জন, সাগরের মতো উদার মানুষটাকে আমরা দিতে পারিনি তার প্রাপ্য সম্মান, জাতি হিসেবে তার ঋণ কি আমরা কোনদিন শোধ করতে পারবো?তার বিদেহী আত্মার অভিশাপ হয়তো জাতি হিসেবে আমাদের সারাটাজীবন নীরবে বয়ে যেতে হবে।যদি পারো তবে ক্ষমা করো হে মহান।তুমি রবে নীরবে, নিভৃতে।মৃত্যুর ও অনেক উপরে তুমি, ঐ দূর আকাশে জল জল করে জলতে থাকবে তুমি যতদিন রবে প্দ্মা,মেঘনা,গৌরি বহমান।অমোচনীয় কালি দিয়ে লিখা তোমার নাম,শত চেষ্টায় ও যা মোছা যায়নি, যাবে ও না কোনদিন।তুমি স্বপ্ন দেখেছো আমাদের সুখী দেখতে আমরা স্বপ্ন দেখি তোমাকে জান্নাতে দেখার।ভালো থেকো হে মহান।দেখা হবে কোন একদিন নিশ্চয়ই।

      By MD EMON

      09 Sep 2019 09:37 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      শেখ মুজিবের লেখা আতমজীবনী পডতে গিযে যে মাঝে-মধযেই হাই উঠবে সেটা ধরেই নিযেছিলাম। তিনিতো আর সৈযদ মুজতবা আলীর মতো রসিক লেখক ছিলেন না, ছিলেন রাজনীতিবিদ। ৫০ বছর আগে তাঁর লেখা বইতে সাধু ভাষার পাশাপাশি ঐতিহাসিক কাহিনীর নিরস বরণণা পাবো - এর বেশি আশা ছিলো না। তবুও পডা শুরু করেছি উনি শেখ মুজিব বলেই, তাঁর আতমোপলবধির খোঁজে।

      By Nira jahan

      18 Aug 2017 07:26 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারিরিভিউপ্রতিযোগিতা বই-অসমাপ্ত আত্মজীবনী(ডিলাক্স) লেখক-শেখ মুজিবর রহমান মূল্য-৬৫০ ঘরনা-জীবনী ও স্মৃতিকথা পৃষ্ঠা-৩২৯ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড "একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর 'আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, "হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।" আমি আর রেণু দু'জনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, "আমি তো তোমারও আব্বা।" কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।" একজন পিতার ঔরশজাত সন্তান। সে তার নিজের বাবাকে চিনতে পারছে না! ভাবা যায়? বিনা কারনে তার এই কারাভোগের দিনগুলো মুজিব আর তার পরিবার মিলে যেভাবে পার করেছিলেন, আমাদের পক্ষে কখনো সেই অনুভূতি গুলো বুঝতে পারা সম্ভব নয়। কোনদিন না। আমি যেদিন প্রথম জানলাম শেখ মুজিবের একটা জীবনী প্রকাশিত হয়েছে, যদিও তা পূর্ণাঙ্গ নয়।তবুও চোখ চকচক করছিলো। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানুষটাকে এতো পছন্দ করি। এতো বেশি! আমি তা কখনই প্রকাশ করতে পারবো না । তার কারণও হয়তো অনেক যা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতা থেকে তাকে একটু একটু করে জেনেছি ঠিকি। তবে অপূর্ণতাও কম ছিলো না। সেটা আংশিক পুরণ করবার জন্যই বোধহয় এই বই সাহায্য করেছে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অনেক অন্বেষণের পর হঠাৎ করে ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখহাসিনা তার পিতার চারটে আত্মজীবনী লেখার খাতা পান। এগুলো পাওয়ার পিছনেও আছে বিশাল ইতিহাস। যদিও সেগুলো পুরোনো কিন্তু সেগুলো পড়ে বুঝা গিয়েছিলো এগুলো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। এগুলো তিনি লিখেছিলেন ১৯৬৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালীন সময়। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে তিনি লেখা শুরু করেন।এরপর লিখে যান পরিবার, দেশ, দেশের মানুষ সব কিছু। ১৯৫৫ সালে এসে লেখাটা থেমে যায়। আর আগায়নি। হয়তো এগিয়ে যেতো আরো অনেক খানি । আমরা হয়তো আরো অনেক না জানা কাহিনী জানতে পারতাম। কিন্তু আমাদের বঞ্চিত করেছে কতিপয় স্বার্থলোভী, পাষান্ড লোকগুলো। বাঁচতে দেয় নি তাকে। মেরে ফেলেছিলো ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্য শেখ হাসিনা। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শুধু একটি আত্মজীবনী নয় বাঙালী জাতির জন্য এক বিশাল ইতিহাসও বটে। একে জীবনী সাহিত্যও বলা চলে। অন্যান্য সাধারণ আত্মজীবনীমূলক রচনা গুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে রয়েছে ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৪-৫৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের নিরপেক্ষ তথ্য এবং বিশ্লেষন। অসাধারণ ভাষারীতি অত্যন্ত সহজ, সুন্দর এবং সাবলীল। আত্মজীবনী হলেও পড়ার সময় মনে হবে কল্পনিক কোন গল্প শুনছি বোধহয়। এর শুরটা হয় একবারে সহজভাবে মুজিবের বংশের পরিচয় দিয়ে। এরপর শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো। গ্রামের আর পাঁচটা কিশোর ছেলের মতো দুরন্তপনার কান্ডকাহিনীর মাঝেও স্পষ্ট হয় মুজিবের আপোষহীন চরিত্র। যে কখনও কোন অন্যায় এর সাথে আপোষ করেনি। চলতে থাকে তার জীবনের গল্পবলা। তার বিয়ের গল্প। কলকাতা কলেজের গল্প। রাজনীতি প্রবেশের গল্প। রাজনীতিতে সক্রিয় হবার ফলে পরিবার পরজনদের থেকে দূরে থাকার গল্প। সময় অসময়ের গল্প। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে হার্ট দুর্বল হওয়া, দুই বছর পর চোখের অসুখ গ্লুকমায় আক্রান্ত হয়ে চশমা নেয়ার সহ কৈশরেই হিন্দু সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শেখ মুজিব প্রথম জেলে যান। রাজনৈতিক জীবনে আপোসহীন ও নির্লোভী চরিত্রের জন্য তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।১৯৩৬ সালে সুভাষ বসুর অনুকরনে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও , সক্রিয় হন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে। বংশ পরিচয়ের পর সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয়ের অংশটাও তিনি বর্ণনা করেছেন। একেকটি গল্পের সাথে আরেকটি গল্প তিনি এমন ভাবে জুড়ে দিয়েছেন, তাতে কোন ফাঁক নেই প্রতিটা পৃষ্ঠা সমান আকর্ষনীয়। প্রতিটা পৃষ্ঠায় চমক। একটা মানুষ এতো সারল্য এতোটা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের হতে পারে! আছে তার সততা, ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা। একজন দক্ষ ঔপন্যাসিকের মতো বর্ণনা করে গেছেন, যেখানে ইতিহাস আর একজন মহামানবের জীবনী এক হয়ে গেছে। একটা থেকে অন্যটা আলাদা করবার কোন জো নেই। আছে অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর। অনেক সমালোচনা । নিজের এবং রাজনৈতিক প্রতিটা ব্যক্তি বর্গের। দলের বিভিন্ন কাহিনী। কেন কংগ্রেস থেকে মুসলিম লীগ? কেন মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলীম লীগ? কেন আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম বাদ হলো? যে পাকিস্তান গড়ার জন্য এতো কিছু। সেই পাকিস্তান হওয়ার পর তাকে কেনই বা সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করতে হয়েছে? তাছাড়া আত্মজীবনীটি লেখার প্রেক্ষাপট, তার জন্ম-বংশ পরিচয়, শৈশব, স্কুল-কলেজের শিক্ষাজীবন, তার সংগ্রাম, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে তার কর্মকাণ্ড, কলকাতায় হিন্দু মসলিম দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, ৪৭ দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, তাঁর অংশগ্রহণ, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তানের বিমাতা সুলভ আচরণ। ষড়যন্ত্রের এবং এসব বিষয়ে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। তাছাড়া এরই ফাঁকে ফাঁকে তার সহধর্মিনী এবং পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। তিনি কেন জাতির পিতা। কেনইবা তাকে জাতির স্থপতি বলা হয়, তার পরিচয় মিলবে পৃষ্ঠার বইটাতে। না, তিনি সেটা দাবী করেন নি নিজের সততা সংগ্রাম দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র তিনিই হতে পারেন একটি জাতির যোগ্য নেতা। এই মলাটবন্দী বইটাকে শুধু মাত্র জীবনী ভাবলে ভুল হবে। কেননা এটা একটা জাতির সূচনা লগ্নের ইতিহাস।

      By mahamud hasan

      02 Oct 2016 01:04 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      ```একজন কর্মীর দিনলিপি এটি। একজন একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক এর জীবনী এটি। একজন রাজনৈতিক কর্মী যেভাবে হয়ে উঠেন মহীরুহ তার পেছনের কাহিনী এটি। যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য দিনরাত্রি এক করে ফেললেন তারা তার কিইবা প্রতিদান দিয়েছেন পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ তার একটি দলিল হলো অসমাপ্ত আত্মজীবনী। এটি কেবলই মাত্র যে শুধু একটি দিনলিপি তা কিন্তু মোটেও নয় ওইসময়কার সামাজিক অবস্থা বিশেষ করে রাজনৈতিক অবস্থাটা খুব ভালো করে বর্ণনা আছে বইতে। বাঙালি সম্পর্কেও বঙ্গবন্ধুর উপলদ্ধি ছিলো চমৎকার বইয়ে জাতীর চারিত্রিক দিক সম্পর্কে বর্ণনা দিতে যেয়ে বলেছিলেন আমাদের বাঙালিদের দুটো দিক আছে একটি হলো আমরা মুসলমান, আরেকটি হলো আমরা বাঙালি। বাঙালি পরশ্রীকাতর এবং বিশ্বাসঘাতকতা রয়েছে রক্তের ভেতর। এতবছর পর আসলে আমরাও উপলদ্ধি করি কি সহজগম্য করেই না সত্য বলে দিলেন তিনি! অবশ্য এ জাতীর চরিত্র ভালো করে জানেন বলেই তো হতে পেরেছেন জাতীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ? পাকিস্তান তো হলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে পাকিস্তান হলো বাঙ্গালীরা কি সেই উদ্দেশ্যে সফল ছিলো? সে সময়ের বর্ণনাও নিখুঁত ভাবে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন ও এর পরবর্তী কার্যক্রম এ কিভাবে যুক্ত ছিলেন লেখক তা বাঙ্গালী হিসেবে অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিৎ আমাদের। বইটি পড়তে পড়তে আমি শুধু এই ভাবি কিভাবে সম্ভব একজন মানুষের পক্ষে এত কষ্ট এত খাটাখাটি করা? কত্তটুকু প্যাশন রাজনীতির উপরে এবং দেশের ভালোবাসা থাকলে সম্ভব? তবে বইয়ের টিকা অংশে একটি ভুল আছে বইয়ের টিকা অংশে বলা আছে যে আগের সব মহকুমাই বর্তমানে জেলা কিন্তু আগের মহকুমা ঈশ্বরদী এখনো জেলা হয়নাই( এইটা অবশ্যই লেখকের ভূল না �� এডিটরের ভূল! �� ) আর বইয়ের ডিলাক্স কপির ক্ষেত্রে বলা যায় এই বইটি অতি উন্নত কাগজে বানানো। বইয়ে হাত দিলেই মসৃণ আবরণ টের পাওয়া যায়। যা পড়ার মুডটাই চেইঞ্জ করে দেয়। আর লেখক এই আত্মজীবনী লেখে ১৯৬৬-৬৯ সালে তাও জেলে বসে আর বইটায় বর্ণনা করা হয়েছে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত। খুবই আগ্রহ জন্মে যে কি হতো তার ভাষ্য ৭১ ও তার আগে পরের সময় নিয়ে? বইটি পড়ার শেষে লেখকের যাপিত জীবনের কষ্ট পরবর্তী অংশ জানার জন্য এক অনাকাঙ্ক্ষিত আগ্রহ সৃষ্টি না হয়ে পারেই না।

      By liza akter shorna

      21 Aug 2015 11:29 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      জাতির পিতা সমন্ধে ছোটবেলা হতেই অল্পবিস্তর জানা ছিল।কিছুটা পাঠ্য বইয়ের কল্যানে,কিছুটা বড়দের মুখে শুনে। 'অসমাপ্ত আত্নজীবনী' বইটা যখন হাতে আসল তখন বইটার প্রতি বাড়তি আগ্রহ জন্মালো।কারণ এ যে খোদ -জাতির পিতার লেখা! একনিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে শুরু করলাম।ধীরে ধীরে জানতে পারলামএক মহান নেতার উঠে আসার কথা,তাঁর পারিবারিক ইতিহাস,রাজনীতির হাতেখড়ি। সেই সাথে উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলী -উপমহাদেশ বিভাজন,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,পাকিস্তান সৃষ্টিও তৎকালীন রাজনীতির পেছনের ঘটনা ও ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। মুসলিম লীগের ইতিহাস,ছাত্রলীগ এর গোরাপত্তনএসব কথা ও লেখা আছে এ বইটিতে। এখানে একটি কথা উল্লেখযোগ্য-আজকের যে ছাত্রলীগ তা বঙ্গবন্ধুর একান্ত পরিশ্রমের ফসল। যা উনি গড়ে তুলেছিলেন তার ছাত্রাবস্থাতে।এ বইতে সে কথাও উনি নিজ হাতে লিখেছেন। উঠে এসেছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,মাওলানা ভাষাণী,ইয়াংজং বাহাদুর,বিখ্যাত কর্মী নুরুদ্দীন,এম এ আজিজ,জহুর আহমদ চৌধুরী,আবুল হাশেম ও আরও অজানা নেতা কর্মীদের কথা। খুব অবাক লাগতে লাগল,যখন পড়তে শুরু করলাম তাঁর জেল জীবনের নির্যাতনের কথা,পাকিস্তানের শাষকগোষ্ঠীর শোষনের কথা।শোষকের বিরুদ্ধে এক সৈনিকের লড়াই চালিয়ে যাবার কথা। জিন্নাহ সমন্ধে একটি ভূল ভারণা ছিল।সেটা ভেঙ্গে গেল। সেই সময় পাকিস্তানের দল মত নির্বিশেষে সকলেই মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কে ভালোবাসতো। একটি শ্রেণী জিন্নাহ কে উষ্কানী দেয়। তিনি পূর্ব বাংলার প্রকৃত অবস্থা জানতেন না।যেজন্য -উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা বলেছিলেন। পরে তিনি তার ভুল ধরতে পেরেছিলেন। আরও একটি ঘটনা-ব্রিটিশ সরকার দেশবিভাজনের সময়ই নাকি বাংলাদেশের অংশটিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা দিতে চেয়েছিল। রাজনৈতিক মারপ্যাচে যা পরে আর হয়নি। এসবই অকাট্য দলিল।যেহেতু বঙ্গবন্ধু নিজের আত্নজীবনীতে লিখেছিলেন,সেহেতু মিথ্যে হবার সম্ভাবনা একেবারেই কম। বইতে এছাড়াও রয়েছে তাঁর চীন,ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান সফরের বর্ণনা। ৪৭,৪৯,৫২,৫৪,৫৬ সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের প্রয়োজন ছিল এমন এক নেতার যে কিনা তাদের এগিয়ে যাবার পথ দেখাবে।বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন সেই পথের দিশারী।ফলত,তাঁর জীবনে বহু বাঁধাবিপত্তি নেমে আশে।বারংবার ভোগ করতে হয় কারাজীবের দুঃসহ অভিজ্ঞতা।প্রিয়তমা পত্নী,সন্তান ও পরিজনকে দেখার জন্যে গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে আসার অভিজ্ঞতা। রাজনীতিতো অনেকেই করে।কিন্তু এরকম নিঃস্বার্থভাবে,পরিবার পরিজনের কথা না ভেবে শুধু দেশের কথা ভেবে কজন লড়াই চালিয়ে যেতে পারে? জনগনও তাঁকে অকৃত্তিম ভালোবাসতো।তাঁর নিজ এলাকার লোকজন ভালোবেসে তাঁকে ভাইজান বলে ডাকত।যা বইতে তিনি সগর্বে উল্লেখ করেছেন। কি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব! তাঁর সাহসীকতা,সদা নির্ভীকতা,রাজনৈতিক জীবনে আপোষহীনতার পরিচয় পাই বইটির পরতে পরতে। এই বইটি এমন একজন মানুষের লেখা,এমন একজন মানুষ যিনি ছিলেন তাঁর স্বপ্নের সমানই বড়। বইয়ের ঘটনাবলী ১৯২০-১৯৫৫ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার।৭৫' এ ঘাতকদের হাতে অকালে প্রাণ হারানো এক মহান নেতার অসমাপ্ত কাহিনী।তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনী! লিজা আক্তার স্বর্ণা

      By Hasan Mahamud

      21 Aug 2015 05:01 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শুধু একটি আত্মজীবনী নয় বাঙালী জাতির ইতিহাসের একটি অসাধারণ সাহিত্যিক প্রকাশও বটে। এক কথায় একে একটি অসাধারণ জীবনীসাহিত্য বলা চলে। সাধারণ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থগুলোতে নিজের মহিমা প্রচারের ও নিজ কৃতিত্বকে তুলে ধরার যে সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় এই গ্রন্থটি তা থেকে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম ধারায় রচিত। একজন অসাধারণ নিরপেক্ষ প্রকৃত দেশপ্রেমিকের হাতেই এ অনন্য সাহিত্যের নির্মাণ সম্ভব। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। যদিও পান্ডুলিপিটি ১৯৬৭ সালে রচিত হয়। এতে ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৪-৫৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের অনবদ্য, নিরপেক্ষ তথ্য এবং বিশ্লেশণ পাওয়া যায়। বইটির ভাষারীতি অত্যন্ত সহজ, সুন্দর এবং সাবলীল, অনেকটাই শেখ মুজিবুর রহমানের মুখের ভাষার কাছাকাছি। বইটির শুরু হয়েছে অনেকটা সরল স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে। উপন্যাসের মত। গ্রামের একটি ছেলে বর্ণনা দিচ্ছে তার বংশের, তারপর আসে শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশোরের দুরন্তপনার আখ্যান। পুকুরে দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটা, মাঠে ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকা বা যে কোন জায়গায় হঠাৎ করেই মারপিট শুরু করে দেয়ার গল্প। তবে এই দুরন্তপনার মধ্যেও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, লেখক তাঁর জীবনের শুরুর দিনগুলো থেকেই কখনও কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। অন্যায়, অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। কাহিনীর ধারাবাহিকতায় এগিয়ে গেছে অসাধারণ চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা লেখক তথা বঙ্গবন্ধুর জীবনের গল্প নিয়ে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে একে জীবনী গ্রন্থ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু বইটি পাঠে এগিয়ে যেতে যেতে পাঠকের কখনো মনে হবে একটি অসাধারণ গল্পের বই, কখনো মনে হবে বাংলার ইতিহাস যেন কোন সাহিত্যিক সাবলীল ভাষায় নিজের মত করে বয়ান করছেন; যার কোথাও কোন পক্ষপাতিত্ব নেই, নেই কিছু লুকোবার প্রয়াস। মাত্র ১২ বছরে বাল্য বিবাহের কাহিনিও বলে গেছে অবলীলায়। তারপর আসে লেখকের কলকাতার কলেজ জীবনের কথা। সেখানে ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়েই তাঁর রাজনীতির সাথে প্রথম সংযোগ ঘটে। আমরা দেখতে পাই শেখ মুজিবুর রহমান তার বাবার কাছে থেকে টাকাপয়সা এনে বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজে ব্যয় করছেন। আবার কখনো লেখকের অর্ধাঙ্গিনী সংসারের খরচ থেকে বাঁচিয়ে টাকা জমিয়ে রাখছেন। পরে তিনি কলকাতা থেকে এলে সে টাকা তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন। লেখকের কাজের প্রতি পরিবারের সমর্থন সবসময়ই এমন অকুণ্ঠ ছিল। ১৯৩৬ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম রাজনীতিতে পা রেখেছিল সুভাষ বসুর ভক্ত হয়ে। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে। তাঁকেই লেখক সব সময় আদর্শের স্থানে রেখেছিলেন। বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে ঠিক যেন অর্ধশত বছর আগের কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাত্রা করছি আমরা। ঘটনাপুঞ্জ এমনি নিরেট যে এর কোথাও কোন ফাঁক নেই, দম ফেলার অবসর নেই। বইটির পরতে পরতে চমক আর সরলতা, বন্ধুত্ব আর সততা, ত্যাগ আর সংগ্রামের নজির। সাথে রয়েছে বিদেশ ভ্রমণের চাঞ্চল্যকর বর্ণণা। এতে পাঠক ভ্রমনকাহিনীর স্বাদও পাওয়া যায় এই বইতে। একজন সুদক্ষ ঔপন্যাসিকের মতো বঙ্গবন্ধু নিজের মতকে মিলিয়েছেন লেখার সাথে। যা বইটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। বঙ্গবন্ধু কেন জাতির জাতির স্থপতি তা বইটি পাঠের মাধ্যমে জানা যাবে। উপলদ্ধি করা যাবে বঙ্গবন্ধুর বিশালত্বকে। বঙ্গবন্ধুর জীবন-সংগ্রাম শুধুই একজন রাজনীতিবিদের জীবন-সংগ্রাম নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি জাতির ঐতিহাসিক নানা পর্যায়ের ইতিহাস। তাই বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, অসামান্য দলিল। একজন রাজনীতিবিদের জীবন-চরিত যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর জীবনধর্মী লেখার মাধ্যমে গ্রন্থটিতে রাজনীতি ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে গণমানুষের কথাই। অসামান্য হৃদয়বত্তার বহির্প্রকাশ ঘটেছে এই বইয়ে। শুধু রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বা বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ নয়, সাধারণ মানুষের কথাও সমগুরুত্বে এ বইয়ে স্থান পেয়েছে। রাজনীতি ছাপিয়ে গণ-মানুষের কথাই বাক্সময় হয়েছে যেমন তাঁর জীবনে, তেমনি এই অসামান্য আত্মকথায়। বাংলাদেশে আর্দশ ছাত্র রাজনীতির প্রতিষ্ঠাতা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান। তাই আদর্শ ছাত্ররাজনীতি করতে হলেও শিক্ষার্থীদের বইটি পাঠ আবশ্যক। এটি শুধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী নয়, অসমাপ্ত জীবনের কথামালাও বটে। শেখ মুজিবের সংগ্রামী জীবন ও কর্মের একটি ছাপচিত্র এই আত্মজীবনী। অকপট আত্মসমালোচনা এই আত্মজীবনীর প্রামাণ্যতা বৃদ্ধি করেছে। মানুষের প্রতি নিরঙ্কুশ ভালবাসার প্রমাণ এই বইয়ের সর্বত্র ব্যাপ্ত। নিজের সবলতা-দুর্বলতা উভয়ই বঙ্গবন্ধু এই বইয়ে তুলে ধরেছেন। আজন্ম সংগ্রামী মানুষটির অবয়ব এ বইটি পাঠের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে। রাষ্ট্র-দল ও রাজনীতির উর্ধে মানুষ শেখ মুজিব এই আত্মজীবনীতে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর এ আত্মজীবনীতে বিধৃত আছে। অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে লিপিবদ্ধ আছে বাংলার সমাজ-রাজনীতির ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি এতে। অকপটে আত্মসমালোচনা এ আত্মজীবনীর প্রামাণ্যতা বৃদ্ধি করেছে। বইটিতে আছে অকপট সত্য। বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীতে নিজের দোষ-ত্রুটির কথা অকপটে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ বইয়ে বেশ কয়েকবার বলেছেন, তিনি একরোখা ছিলেন এবং এ জন্য তিনি কৈশোর ও যৌবনে দলবল নিয়ে মারামারি ও লাঠালাঠি করেছেন। মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ ভালোবাসার প্রমাণ এই বইয়ের সর্বত্র ব্যাপ্ত। একজন আদর্শ দেশনায়ক, আদর্শ দেশপ্রেমীকের চিহ্ন বহন করে চলেছে বইটি। আমাদের তরুণ সমাজ ও ভবিষ্যৎ কাণ্ডারীদের জন্য এটি কেবল একটি অনুসরণীয় আদর্শই নয় ইতিহাসের প্রতীকও। এটি নিরপেক্ষতার মৌলিক দলিলও বটে। জীবন মানেই সাহিত্য। তবে সব রচনা সাহিত্যের মানদণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। অসাধারণ আত্মজীবনীও উন্নত সাহিত্যের মর্যাদা পেতে পারে যদি তা হয় সহজ অথচ মর্মস্পর্শি, সাধারণ হয়েও অসাধারণ। যদি তা হয় বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র অনুরূপ। ১৯৫৫ পর্যন্ত তিনি লিখতে পেরেছিলেন এক অসাধারণ ইতিহাস এরপর আরো অনেক চড়াই উৎরাই তিনি পার করছেন কিন্তু সময়ের অভাবে তা লিপিবদ্ধ করার সুযোগ তাঁর ঘটেনি, ফলে তাঁর ও এদেশের জাতীর জীবনের অমূল্য ইতিহাস অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ই একটি উপযুক্ত শিরোনাম। হাসান মাহামুদ নিজস্ব প্রতিবেদক, রাইজিংবিডি ডটকম

      By Md. Raseduzzaman Ron

      21 Aug 2015 04:34 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সাদামাটা মহামানব বিশ্ববিখ্যাত চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস(খ্রিঃ পূঃ ৫৫১-৪৯৭ অব্দ) বলেছিলেন, “Learning without thought is meaningless ; thought without learning is dangerous.” সুতরাং কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে তাঁর চিন্তাধারা নিয়ে কথা বলা উচিৎ নয় বরং তা বিপদজনক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সৃষ্ট মিথ্যা প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে নিঃসন্দেহে এই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একটা প্রচন্ড চপেটাঘাৎ! বন্ধুবান্ধবেরা বলে, “তোমার জীবনী লেখ।” সহকর্মীরা বলে, “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, “বসেই তো আছো, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম, “লিখতে যে পারি না; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।” পৃষ্ঠা নং-১ খুব সাদামাটা জীবন যাপন করতেন বলেই তাঁর কথাও ছিল অতি সাধারণ। কিন্তু হৃদয় দিয়ে কথা বলতেন বলেই অতি সাধারণ কথাও হতো হৃদয়গ্রাহী। তাঁর খেরোখাতায় অসাধারণত্ব খুঁজতে এলে ভুল করবেন। তিনি যেভাবে শুরু করেছেন, এমনি সাবলীলভাবে এগিয়েছে দিনপঞ্জি। যা ভূমিকা হিসাবে অনবদ্য! আমার এক বন্ধু সুন্দর ছবি আঁকতে পারতো, তার আঁকা চমৎকার সব ছবি দেখে জিজ্ঞাসিলাম, তুই কেমন করে এতো সুন্দর ছবি আঁকিস? বলেছিল, ‘আগে একটা দৃশ্যমান বা অদৃশ্য আউট লাইন সৃষ্টি করে, তাঁর উপরে আঁকতে থাকি।’ তার উত্তর শুনেও আমার বিস্ময়মাখা চেহারায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। প্রায় এক যুগ পর শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নামক বইটি প্রকাশিত হবার পর আমার সেই শিল্পী বন্ধুর কথাটা বুঝতে বুঝতে পেরেছি। কারণ, ২০০০সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস খুঁজে ফিরছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে বা কিছু কিছু খুঁজেই পাইনি। যেমনঃ ১। কেনো ভারত ভাগ করতে হলো ২। বাংলা ও পাঞ্জাব আলাদা রাষ্ট্র হলোনা কেনো ৩। বাংলাদেশকে কেনো বহুদুরের পাকিস্তানের সাথে রাখতে হলো ৪। যাদের সাথে আমাদের কিছুই মেলেনা, তাদের সাথে কেনো যুক্ত হলাম ৫। এই ভাগ কী ইচ্ছাকৃত, কোলকাতা কেনো পেলামনা তবে সবচেয়ে বেশি ভুগেছি কত সাল থেকে বা কোন সময় থেকে ইতিহাস জানা শুরু করলে, বাংলাদেশের কতিপয় চাটুকার শিক্ষিত লোকের সৃষ্ট ইতিহাস ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের রচিত মিথ্যা বুলির ফাঁস থেকে মূল ইতিহাসকে আলাদা করতে পারবো। অনেকেই বলেছেন, ১৮৮৫সালে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে পড়ে আসতে হবে। আমি তাই করেছি। কিন্তু কেনো ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়ার পরও মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ধর্মের কথা ভুলে যায় শাসক দল, কেনো একই ধর্মের মানুষের উপর অন্যায়ভাবে সব কিছু চাপিয়ে দেয়া শুরু করলো, কারা এর জন্য দায়ী? এই উত্তরগুলো কোনো বইয়ে একসাথে পাওয়া অসম্ভব ছিল। ফলে নবীন বা নতুন শুরু করেছে এমন পাঠকদের ভুল-ভাল অনেক ঐতিহাসিক মিথ্যাকে সত্য বলে মেনে নিতে হয়েছে। এই বইয়ে সেই উত্তরগুলো তিনি খুব সুন্দর করে গল্পের আকারে বলেছেন। তাই তাঁকে শুধু পলিটিক্যাল মায়োস্ত্রো বলেই থামতে ইচ্ছে করছেনা, তিনি একাধারে ছিলেন সুন্দর কথক! “নাজিমুদ্দীন সাহেব নেতা নির্বাচিত হয়েই ঘোষণা করলেন, ঢাকা রাজধানী হবে এবং তিনি দলবলসহ ঢাকায় চলে গেলেন। একবার চিন্তাও করলেন না, পশ্চিম বাংলার হতভাগা মুসলমানদের কথা। এমনকি আমরা যে সমস্ত জিনিসপত্র কলকাতা থেকে ভাগ করে আনব তার দিকেও ভ্রুক্ষেপ করলেন না। ফলে যা আমাদের প্রাপ্য ছিল তাও পেলাম না। সরকারি কর্মচারীরা গোলমাল করে কিছু কিছু মালপত্র স্টিমার ও ট্রেনে তুলেতে পেরেছিলেন, তাই সম্বল হল। কলকাতা বসে যদি ভাগ বাটোয়ারা করা হত তাহলে কোনো জিনিসের অভাব হত না। ‘মিশন উইথ মাউন্টব্যাটেন’ বইটা পড়লে দেখা যাবে, ইংরেজরা তখনও কলকাতা বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ হিন্দু-মুসলমান উভয়পক্ষই তখনও মারমুখী অবস্থানেই আছে। কিন্তু নাজিমুদ্দীনের ঘোষনা ইংরেজদের চিন্তামুক্ত করে দেয়। গোলমালের আশংকা না থাকার ফলে মাউন্টব্যাটেন সুযোগ পেয়ে যশোর জেলায় সংখ্যাগুরু মুসলমান অধ্যুষিত বনগাঁ জংশন কেটে দিলেন। নদীয়ায় মুসলমান বেশি হওয়া সত্বেও কৃষ্ণ নগর রানাঘাট জংশন ওদের দিয়ে দিলেন। মুসলিম জনসংখ্যা বেশি, তবুও মুর্শিদাবাদ ওদের দিয়ে দেন। মালদহে হিন্দু-মুসলিম সমান-সমান, তা ইন্ডিয়ার ভাগে দেন। দিনাজপুরে মুসলমান বেশি। কিন্তু দিনাজপুরের বালুরঘাট কেটে দিলেন। যাতে জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং এবং আসামের সাথে যোগাযোগ করা সহজ হয়।” পৃষ্ঠা নং-৭৮ একটু পূর্বে গেলেই জানতে পারবেন। কিভাবে ষড়যন্ত্রের মাঝে সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে ক্ষমতাচ্যুত করে নাজিমুদ্দীনকে ক্ষমতায় আনা হয়। এতে ভূস্বামী ও বৃটিশ খেতাব প্রাপ্ত রায় বাহাদুর-খান বাহাদুরদের হাতে চলে যায় কোমল ও শক্ত প্রকৃতির সৃষ্ট পাকিস্তান নামক অসম্ভব এক দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা। সেই শুরু, জিন্নাহ সাহেব বেঁচে থাকা অবস্থায় এই ষড়যন্ত্র প্রকাশ না পেলেও, তাঁর মৃত্যুর পর আর রক্ষা হয়নি। এরপর ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে ফেলতে গিয়ে শাসক চক্র আমলাতান্ত্রিকতার জালে আটকা পড়ে...শুরু হয় শোষকের হাত থেকে মুক্তির আন্দোলন। “এই সময় সরকার কর্তৃক ‘কর্ডন’ প্রথার জন্য খাদ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল কয়েকটি জেলায় বিশেষ করে ফরিদপুর, কুমিল্লা ও ঢাকার মানুষেরা বরিশাল ও খুলনা জেলার ধানের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সরকার এক জেলার ধান অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দেয়।” পৃষ্ঠা নং-১০৩ “এই সময় আরেকটি অত্যাচার মহামারীর মত শুরু হয়েছিল। ‘জিন্নাহ ফান্ড’ নামে সরকার একটি ফান্ড খোলে, যে যা পারবে তাই দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু সরকারী দলের লোকেরা জোর খাটাতে থাকে।” পৃষ্ঠা নং-১০৫ “২১শে ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ, উৎকন্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম, রাতে সিপাহিরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। রেডিওর খবর। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছিল, ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’, ‘বাঙ্গালীদের শোষন করা চলবেনা’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’, ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই,” পৃষ্ঠা নং-২০৩ এভাবে বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সকল প্রকার জন-গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। জেল-জুলুম ছিল নিত্ত-নৈমিত্তিক বিষয়। তাছাড়া মাঝেমাঝে অধিকার আদায়ের জন্য অনশনে যেতেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন সচেষ্ট। “আব্বা, মা, রেণু, হাচিনা ও কামালকে নিয়ে হাজির। এক বছর পর সকলের সাথে দেখা হলো। হাচিনা আমার গলা ধরল আর ছাড়তে চায়না। কামাল আমার দিকে চেয়ে আছে, আমাকে চেনেও না আর বুঝতেও পারেনা, আমি কে?” পৃষ্ঠা নং-১৮৩ “গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর করতে যেয়ে এই এক মাসে শরীর আমার একদম ভেঙ্গে গিয়েছে। চোখের অবস্থা খারাপ। পেটের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। বুকে ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেছি। রেণু আমাকে সাবধান করে বল, “ভুলে যেওনা, তুমি হার্টের অসুখে ভুগেছিলে এবং চক্ষু অপারেশন হয়েছিল।” পৃষ্ঠা নং-১৮৫ “একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, “হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।” আমি আর রেণু দু’জনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, “আমি তো তোমারও আব্বা।” কামাল আমার কাছে আসতে চাইতো না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম। এখন আর ও সহ্য করতে পারছেনা। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়।” পৃষ্ঠা নং-২০৯ এই ঘটনাটা পড়ার সময় অজান্তেই চোখ জলে ভরে উঠেছিল। আহারে রাখাল রাজা...! কত ত্যাগ আর কষ্টে এনেছো আমাদের জন্য মুক্তির পথ। আমরা সে পথে হেঁটে যাই নিরন্তর, তোমাকেই করি দোষারোপ। এমন পারিবারিক-রাজনৈতিক অনেক অজানা ঘটনার সমষ্টি এই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। যার বর্ণনা নেপথ্য নায়কের মুখ থেকেই জানা যায়। তাছাড়া এই বই থেকে তাঁর বাল্য জীবন, শিক্ষা জীবন, পারিবারিক ঐতিহ্য, তৎকালীন সামাজিক বন্ধন, মানুষের জীবন চরিত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের এক সাথে বসবাসের ইতিহাস, রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু সোহরাওয়ার্দি সাহেবের সংস্পর্শে আসার ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। আবার হাশিম সাহেবের রাজনৈতিক ক্লাসের ছাত্র, মওলানা আকরাম খাঁ, ভাসানী, নাজিমুদ্দীন প্রমূখ সম-সাময়িক রাজনৈতিক নেতাদের চারিত্রিক বিশ্লেষণের জন্যও বইটি অতুলনীয়। তাই ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী পাঠকদের জন্য এই বই অবশ্যই পাঠ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এদেশের কিছু মানুষ স্বার্থের কারণে পূজো করার ভান করলেও চক্রান্তকারীরা সবসময় তাঁকে কাছের মানুষদের কাছে খারাপ করে তোলার কাজে সেই প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিল। আরো অনেক দূর্লভ ছবি যোগ করা যেতো, বইয়ের টীকাগুলো যদি পৃষ্ঠার নিচে দেয়া হতো আমাদের মত নবীন পাঠকগণ বেশ উপকৃত হতেন। তবুও তাঁর মত মহীরুহের কিছু অজানা কাহিনী আমরা জানতে পেরেছি এজন্য অবশ্যই দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অকুন্ঠ প্রশংসার পাওয়ার যোগ্য, তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এছাড়া এই গ্রন্থ প্রকাশের সাথে জড়িত সকলকে কৃতজ্ঞতা মিশ্রিত ভালবাসা।

      By Rashedul Islam Sumon

      20 Aug 2015 04:17 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      ছোটকাল থেকেই বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনতাম। এক কথায় বলতে গেলে বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধু ভক্ত। বাবার সামনে কেউ বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে কথা বললে উনি সেটার পাল্টা জবাব দিয়ে ছারতেন।কাজেই ছোটকাল থেকেই নেতা বলতে বঙ্গবন্ধুকেই চিনতাম। আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরিবার হবার কারনে বুঝ হবার পর থেকেই আওয়ামী সমরথক হয়ে যাই। ২০০০ সালের দিকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হই। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানার আগ্রহ ভেতরে ভেতরে কাজ করতো। ইন্টারনেট পাবার পর থেকে অনলাইনে মাঝে মাঝে ঘেঁটে ঘুঁটে অনেক তথ্য বের করে পড়তাম। কিন্তু সেগুলু যথেষ্ট ছিলোনা। যতোই পড়তাম ততোই জানার আগ্রহ হতো। হটাত শুনলাম ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে থাকা অবস্থায় আমার নেতা শেখ মুজিবুর রহমান লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু আর শেষ করতে পারেননি। আর এই অসমাপ্ত লেখাগুলু নিয়েই প্রকাশ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী নামক বইটি। বইটি পড়ে উনার জন্ম পরিচয়,ছাত্র জীবন,সামাজিক,রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। সেইসাথে তৎকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী যেমন দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ। রাজনিতি এবং দেশের জন্য একটা মানুষ কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারে এই মহা মূল্যবান বইটি না পড়লে সেটা উপলব্ধি করা যাবেনা। তাই আমি মনে করি প্রত্যেক বাঙ্গালীর এবং রাজনীতিবিদদের এই বইটি পড়া উচিৎ। তার থেকে বেশি প্রয়োজন যারা রাজনীতিতে আগ্রহী তাদের জন্য এই বইটি সকলকে তৎকালীন ইতিহাস জানতে সহায়ক হবে এবং প্রেরণা জোগাবে। এই বইটি পরেই সবাই জানতে পারবে কিভাবে সাধারন পরিবারের শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন...

      By Parvej Talukder

      18 Aug 2015 02:41 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমার জীবনে যতগুলো বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লাম তার মধ্যে এ বইটা একমাত্র বই যা পাঠ করার পর মনে হচ্ছে তার জীবন সম্পর্কে তিনি নিজে আমার সমানে বসে বর্নণা দিচ্ছেন। এটা সম্ভব হয়েছে সম্ভবত তিনি কারাগৃহে নিজের মনের আসল অভিব্যক্তি প্রকাশ করার জন্য। সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি যারা এটি সংকলনের কাজ করেছেন। প্রশংসা করছি গণতন্ত্রের মানস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে, যার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে এরকম একটি জ্ঞানগভির কাজ সম্পাদন করা। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হলে সবার কাছে অনুরোধ করবো এ বইটি পড়ার জন্য। ধন্যবাদ সবাইকে।

      By Javed Hussan

      18 Aug 2015 09:23 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      হাজার বছরের সেরা বঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রচিত গ্রন্থ “অসমাপ্ত আত্নজীবনী” এর রিভিউ লেখার জন্য গত কয়েক দিন যাবত বইটি পড়ছি। যদিও এর আগে এক বার বইটি পড়ে ছিলাম । বইটি পড়ে রিভিউ লিখতে বসে, বুজতে পারছি না । কিভাবে কি লিখব । কেননা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এক জন বিশ্বনেতা এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জনক । এত বড় এক জন নেতার লেখা আত্নজীবনী রিভিউ করা আমার মত এক জন সাধারণ মানুষের জন্য অতি কঠিন ব্যাপার । তবে এই বইটি আমাদের মত নতুন প্রজম্মের জন্য একটি গাইড লাইন । অস্মাপ্ত আত্নজীবনীতে ফুটে উটেছে এক জন সফল রাস্ট্র নায়কের গল্প । যিনি অতি সাধারণ হতে হয়েছেন অসাধারণ ।মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ার চঞ্ছল, খেলাধুলা আর গান পাগল ছেলেটি ১৯৩৪ সালে ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন । বেরিবেরি রোগে হার্ট দুর্বল হয়ে যায় । ২ বছর কস্ট করলেন বঙ্গবন্ধু । ১৯৩৬ সালে চোখের সমস্যা । গ্লূকোমা নামের রোগ হয়ে ছিল বঙ্গবন্ধুর। অসুস্থতায় বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে নিয়ে গেছে সোনালী দিন গুলো । বন্ধবন্ধু লিখছেন, “ চোখের চিকিৎসার পর মাদারীপুরে ফিরে এলাম, কোন কাজ নেই । লেখাপড়া নেই, খেলাধুলা নেই”। বঙ্গবন্ধুর জীবনের এই পর্যায় ছিল সাদা মাটা । এত কিছুর পরও, এই সাধারণ ছেলেটি হয়ে উঠেন এক জন অসাধারণ মানুষে তার মানব প্রেম আর মানব কল্যাণের জন্য। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “ মা বাচাও, কিছু খেতে দাও, মরে তো গেলাম, আর পারি না । একটু ফেন দাও । এই কথা বলতে বলতে ঐ বাড়ির দুয়ারের কাছেই পড়ে মরে গেছে। আমরা কি করব? হোস্টেলে যা বাঁচে দুপুরে ও রাতে বুভুক্ষুদের বসিয়ে ভাগ করে দেই, কিন্তু কি হবে এতে? এই সময় শহীদ সাহেব লঙ্গরখানা খোলার হুকুম দিলেন। আমি লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় যাপিয়ে পড়লাম”। যিনি পড়ালেখা রেখে মানুষের কল্যাণে কাজ করেন । তিনি অবশ্যই এক জন অসাধারণ মানুষ। গণতন্তের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোরাওয়াদীর অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন জাতির জনক। জাতির জনকের বাবা’র একটি উপদেশ হয়ত জাতির জনকের জীবন পাল্টে দিয়েছে । সেই উপদেশ হয়ত শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির জনকে পরিণত করেছে । বঙ্গবন্ধুর বাবা বলেছিলেন, Sincerity of purpose and honesty of purpose থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না। মুলত এই কথাটিই বঙ্গবন্ধুকে অন্যায় আর অসত্য এর সাথে আপষ না করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি যাদের নেতা মেনে কর্মী হিসাবে কাজ করেছেন, তারা এক দিন পাকিস্তানি শাসকগোস্টীর সাথে হাত মিলিয়ে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের স্বার্থকে করেছেন ধূলিসাৎ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হাল ছাড়েন নি । এগিয়ে গেছেন একাই । তিনি লিখেছেন , “অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনদিন এক সাথে হয়ে দেশের কোন কাজে নামতে নেই। তাতে দেশ সেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয় । পাকিস্তান প্রতিস্টার জন্য বঙ্গবন্ধু অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিস্টা হওয়ার পর তিনি হতাশ হন । বঙ্গবন্ধুর আত্ন জীবনীতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু একের পর এক জেলে খাটছেন।বঙ্গবন্ধুই সমগ্র বিশ্বের এক মাত্র নেতা যিনি এত বেশি বার জেলে যেতে হয়েছে । অসুস্থ শরীল নিয়ে তিনি কারাগারে মাতৃ ভাষা বাংলার জন্য করেছেন অনশন । মরণের খুব কাছে গিয়েছেন অনেক বার বঙ্গবন্ধু । তার এই সব কিছু ছিল বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষের জন্য । ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তে নবাব সিরাজউদ্দোলা যে স্বাধীনতার সূর্য হারিয়েছেন । বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে সেই অস্ত যাওয়া সূর্য উদয়ের পথে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষকে ।বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্লোভ ও উদার মানসিকতার মানুষ । তিনি মন্ত্রিত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতেন না । যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয় লাভ করলে, শেরে বাংলা ফজলুল হক বঙ্গবন্ধুকে মন্ত্রীসভা নিতে চায় নি । অপর দিকে হোসেন শহীদ সোওয়ারদী বঙ্গবন্ধুকে নিবেন । যার ফলে ফজলুল হক ও শহীদ সোওরাদীর মধ্যে সমস্যা হয় । তখন বঙ্গবন্ধু সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসলেন। তিনি বললেন, " আমাকে নিয়ে গোলমাল করার প্রয়োজন নেই । আমি মন্ত্রী হতে চাই না ।" কত বড় ত্যাগের মানসিকতা । এই উক্তি শুধু মহান নেতারাই করতে পারেন । বঙ্গবন্ধু যে এভারেস্ট সমান মহান নেতা, সেটা তো আমরা ফিদেল কাস্ট্রোর উক্তি থেকে জানি । এই রকম মহান নেতার প্রতি রয়েছে আমার বিন্রম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চির দিন আমাদের মাজে বেঁচে থাকবেন ।

      By Shawkat Ali Khan Hiron

      17 Aug 2015 08:25 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমাদের সবকিছু যেন অসমাপ্ত থেকে যায়- সুকান্তের কবি জীবন, নজরুলের সংগীত ও কবি জীবন, জহির রায়হান ও তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র জীবন, তেমনি থেকে গিয়েছে পৃথিবীর রাজনীতির কবি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আত্নজীবনী। জীবনের চেয়েও আত্নজীবনী হয়েছে আরও সংক্ষিপ্ত ও খন্ডিত। আমরা হয়তো পেতাম ‘এ লং ওয়াক টু ফ্রিডম’, উইংস অব ফায়ার’, ‘এ ডক্টর ইন দ্যা হাউস’ আথবা ‘অডাসিটি অব হোপ’ এর মত আত্নজীবনী। কিন্তু আমরা পেয়েছি ১৯৭৫ পরবর্তী পথ হাড়িয়ে ফেলা অসমাপ্ত বাংলাদেশের মতই ‘অসমাপ্ত আত্নজীবনী’। সত্যিই আমরা বড় দুর্ভাগা জাতি। জাতীর পিতা-বঙ্গবন্ধু ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ আর ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই বলেই বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই তাঁর কর্মময়জীবন, আর ইতিহাস গ্রন্থ তাঁর আত্নজীবনী। তাঁর ব্যক্তিগত কাজ-কথা-চিন্তা-পরিকল্পনা-স্বপ্ন-প্রত্যাশা এমনকি সংসার কোন কিছুই শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি, থাকার সুযোগ নেই বা ছিল না বলেই তাঁর সব কিছুই হয়ে উঠেছে মানবজাতী-দেশ-রাষ্ট্র আর একটি স্বাধীন ভূখণ্ড বিণির্মানের জীবন্ত ইতিহাস। তাঁর পেছনে পেছনে চলেছে আমাদের অস্তিত্বের ইতিহাস। রকেট যেমন সাদা পথরেখা ফেলে আকাশে পথ চলতে থাকে, তিনি তেমনি ইতিহাসের পথরেখা তৈরি করে করে সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের মধ্যদিয়ে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ গন্তবের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়েছেন। একান্ত ব্যক্তিগত-শৈশব-বংশপরিচয় বা বিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া সাধারণ ঘটনা ইত্যাদি বর্ণনা করতে গিয়ে এপিজে আবদুল কালাম ‘ইউংস অব ফায়ার’এ যেমন বলেছিলেন ‘অবশ্য পরে আমি বুঝতে পারি এগুলো আসলে প্রাসঙ্গিক ... সামাজিক আধেয়র মধ্যে তা নিহিত, তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না’- এধরনের বৈশ্বিক উপলব্ধি আমরা ‘অসমাপ্ত আত্নজীবনী’ তেও দেখতে পাই। ছোট ছোট ঘটনা দিয়ে তাইতো তিনি শুরু করেছেন তাঁর শেকড়ের খবর দিয়ে । মনে হয়েছে এ যেন অ্যালেক্স হ্যালির ‘রুটস্’। সহজ সরল সাবলীল ভাষায় রচিত এ গ্রন্থ পাঠে সহজ থেকে ক্রমাগত জটিল রাজনৈতিক ডামাডোলের ঠিকানা পেতে থাকি। একজন সাধারণ যুবক স্থানীয়ভাবে রাজনীতির সংস্পর্শে এসে কীভাবে ধীরে ধীরে রাজনীতির মূল ধারায় মিশে যেতে থাকে এখানে তার নির্মোহ বয়ান। তিনি যে কাজের সাথে সরাসরি ছিলেন সেটিরই বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই উঠে এসেছে রাজনীতির মূল স্রতধারার গতিবিধি-ধরন-আদর্শ আর গন্তত্যের ঠিকানা, উঠে এসেছে গ্রামীণ জীবনে রাজনীতির প্রভাব এবং গরিব দুখী মানুষের জীবনে কিভাবে ছাঁপ ফেলতে পারে রাজনীতি। একারণেই হয়তো তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন গণমানুষের মুখপাত্র। সময়ের প্রবাহে কীভাবে নেতৃত্ব হাত বদল হয়-হতে থাকে। কেনো হাত বদল হয়, নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থা কীভাবে একজন সাধারণকে অসাধারণ করে তোলে, কীভাবে প্রবীণ রাজনীতিকের স্নেহে তৈরি হতে থাকে একজন উদিয়মান রাজনীতির কবি যে হবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি- এসব প্রশ্নের নিরপেক্ষ উত্তর উপস্থাপিত হয়েছে এই মহানগ্রন্থে। এই জীবনী লিখতেও তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন অনেকের অনুরোধে। তার মানে তিনি যা করেছেন কেবলি সকলের কল্যাণে-চাহিদায়-প্রয়োজনে, এমনিক তার আত্নজীবনী রচনার মত কাজটিও। এ এমন এক গ্রন্থ যেখানে রাজনীতি করার কারণে বাড়িভারা না পাওয়ার মত সামাজিক বেদনা ও বঞ্চনার ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এরকম রাজনীতির পাশাপাশি অসংখ্য পারিবারিক, সামাজিক গোষ্ঠিগত, আবেগিক, পারিপার্শিক, এমনকি প্রাকৃতিক অনুসঙ্গ উঠে এসেছে একজন সফল রাজনীতিকের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্য দিয়ে যা গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-মনন-দূরদর্শীতা সৃষ্টিকরতে সহায়ক। রাজনীতির কোন স্তরই যে সহজভাবে এগোয় না বা কোন সফলতাই বাধা-বিপত্তি-ষড়যন্ত্র-আর্ন্তকোন্দল-রেশারেশি ছাড়া অর্জন হয় না তা এই গ্রন্থের পড়তে পড়েতে ছড়িয়ে আছে। সবকিছুর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একাগ্রতা, একমুখীতা, স্থির লক্ষ্যের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার যে গতি তা নিবিড়ভাবে সত্য বয়ানে তিনি তুলে ধরেছেন- একজন প্রজ্ঞাবান লেখকের দক্ষতায়। তবুও এ লিখনী তার ৭ ই মার্চের কালজয়ী বক্তৃতাকে ছাঁপিয়ে যেতে পারেনি। তার বক্তৃতা যেমন সকল সেরা উপাদানের সমন্বয়ে হয়ে উঠেছে এক অমর কবিতা-সংগীত-বাণী আর অমিত শক্তির উৎস, এই আত্নজীবনীর ভাষার গাঁথুনি, শব্দ চয়ন, ধারাবাহিকতা ইত্যদিতে সফল হলেও ততটা আলোর ঝলকানি নেই। তবুও বাংলা ভাষায় লিখিত আত্নজীবনীর ঝুড়িতে এটি অনন্য গোলাপ। এই অসমাপ্ত আত্নজীবনীকে তুলনা করা যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের ‘আদর্শ একক’ যার সাথে তুলনা করে কেবল অন্যান্য ইতিহাসগ্রন্থের মূল্যায়ন হতে পারে। এ গ্রন্থ পড়তে পড়েত মনে হয়েছে ‘ আবুল মনসুর আহমদ এর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চার বাছর’ বা সম্প্রতি লিখিত আনিসু্ল হকের ‘যারা ভোর এনেছিল’ ও ‘উষার দূয়ারে’ গ্রন্থের কথা। বিশেষ করে শেষ দুটো গ্রন্থে লেখক অসমাপ্ত আত্নজীবনীর আশ্রয় নিয়েছেন যা সত্যাশ্রয়ী অনবদ্য উপন্যাস বিণির্মানে সহায়তা করেছে। কিন্তু প্রথমোক্তটি সেভাবে রচিত না হলেও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্নজীবনীর পরের জীবনের অনেক কথা এখানে পাওয়া যায়। আমরা হয়তো জিতে যেতে পারতাম তাঁর পূর্ণাঙ্গ আত্নজীবনী হাতে পেলে। তবে সম্পাদকবৃন্দ তাঁর বাকী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলেধরে গ্রন্থের উপযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকশত গুণ। এটি একজন নবীন পাঠকের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম এবং তাঁর জীবনী নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা ও গবেষণা করতে উৎসাহিত করবে। নির্ঘন্ট একটি গ্রন্থকে গবেষণা কাজে সহজে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। তাই এ ধরনের কষ্টসাধ্য কাজগুলোর জন্য সম্পাদক প্রসংশার পাত্র। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক সকল আইন যেমন বাতিল হয়ে যায় তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে ‘অসমাপ্ত আত্নজীবনী’ র সাথে সংঘির্ষক সকল তথ্য-ইতিহাস বাতিল হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক, কারণ এর লেখকতো ঘটনারই নায়ক, যে ঘটনাই আমাদের জন্য ইতিহাস, তিনিতো ইতিহাসের নির্মাতা ও নিকটতম দূরত্ব থেকে দেখছেন এবং ইতিহাসের মধ্যে থেকেই লিখেছেন। এ গ্রন্থ তাই ইতিহাসের কষ্টিপাথর।

      By sadia sharmin

      13 Aug 2015 10:47 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির রূপকার।আর তাঁর রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ সৃষ্টির এক অমূল্য দলিল ও ইতিহাসগ্রন্থ।এটি শুধু একটি বই ই নয় এটি হচ্ছে একজন সাধারন মুজিব আর গোপালগঞ্জ বাসীর প্রিয় মিয়াভাই এর অসাধারন নেতা আর বঙ্গবন্ধু হওয়ার কাহিনী।এটি শুধু একটি বই ই নয় এটি হচ্ছে অবিভক্ত বাংলা থেকে বহু চরাই উৎরাই পেরিয়ে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পেছনের কাহিনী। স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালিন সময়ে তিনি বইটি রচনা করেন কিন্তু সমাপ্ত করতে পারেন নি।ছোটবেলার দুরন্ত শেখ মুজিবুর রহমান এর শৈশবে অসুস্থতার কারনে তিনি তাঁর সমসাময়িকদের থেকে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তিনি গ্লুকোমায় আক্রান্ত হলে তাঁর চোখ অপারেশন করানো হয়। অপারেশন পরবর্তী সময়ে তাঁর লেখাপড়ায় কিছু সময়ের জন্য বিরতি পড়ে। তখন তিনি তাঁর অঢেল সময় স্বদেশী আন্দোলনের সভায় যাওয়া আসা করে ব্যয় করতেন এবং এখান থেকেই তাঁর নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসের প্রতি শ্রদ্ধা ও রাজনীতির প্রতি আকর্ষণের সৃষ্টি হয়। কৈশোরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুপ্রেরণা থেকে রাজনীতির প্রতি অনুরাগ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহন এবং পরবর্তীতে তরুন মুজিবের কলকাতায় আগমন, ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি এবং বেকার হোস্টেলে থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন।শেখ মুজিবুর রহমান মূলত গোপালগঞ্জে কৈশোরেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করলেও তাঁর রাজনৈতিক জীবন আসলে পূর্ণতা পায় কলকাতা যাওয়ার পরেই ।সেখানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য লাভ এবং মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে ভারত বিভাগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ব্যাপ্তি এবং পরিপক্কতা ঘটে।ইংরেজ আমলে হিন্দু মুসলমানদের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার বিষদ ব্যাখ্যাও তিনি করেছেন। বইটি শুধু তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সাথে পরিচয়ই করিয়ে দেয় না বরং সেই সময়কার ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষীও বহন করে।১৯৩৯ এর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক অবস্থা, ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ ,১৯৪৭ এর দেশভাগ এবং সেই সময়ে ঘটে যাওয়া হিন্দু মুসলিম দের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,১৯৪৮ এ বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে আন্দোলন ,মুসলিম লীগের প্রতারনা, পাকিস্তান সরকারের অপশাসন, আওয়ামী লীগের সৃষ্টি ,১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন,১৯৫৩ তে যুক্তফ্রন্ট গঠনের পেছনের কথা, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনে জয়লাভ,১৫০ মোগল টুলীর আওয়ামী লীগের অফিস থেকে শুরু করে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলে কাটানো দুর্বিষহ দিন,দিনের পর দিন পরিবারের সাথে দেখা না করতে পারা একজন পিতা, স্বামী ও সন্তানের যন্ত্রণার কথা এই সব কিছুই বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় থরে বিথরে সাজান রয়েছে যেন একটু একটু করে বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখা এক মহানায়কের স্বপ্ন পূরণের একটি বাস্তব ও সফল চিত্রনাট্য ।বঙ্গবন্ধুর খুব বেশি সামর্থ্য ছিল না তারপরেও তিনি তাঁর অতি অল্প সামর্থ্যের মধ্যে ভ্রমণ করেছেন দিল্লি,আগ্রা, পাকিস্তানের লাহোর ,পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ,চীনের হংকং, পিকিং, নানকিং, সাংহাই, হ্যাংচো প্রভৃতি।তাঁর বর্ণনায় জোস্ন্যার আলোয় ঝলমল করা তাজমহলের রূপের প্রশংসা অথবা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পরে স্বাধীন হওয়া চীনের উন্নয়ন ও পরিবর্তন এর চিত্র পাঠক মনে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি করে। অসম্ভব সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি তাঁর মনের কথামালা লিখে গেছেন।কারো প্রতি কৃতজ্ঞ থাকলে তিনি যেমন কৃতজ্ঞতা জানাতে কার্পণ্য করেন নি তেমনি কাউকে পছন্দ না করলে,কেউ অসৎ কাজ করলে তার সমালোচনা করতেও তিনি কুণ্ঠা বোধ করেন নি।বন্ধুর মত বাবা আর সর্বংসহা স্ত্রী,এই দুইজন তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সাহস জুগিয়ে গেছেন আর নাম না জানা বহু মানুষের ভালবাসা ও স্নেহের কথা তিনি লিখে গেছেন গভীর মমতায়।তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী বঙ্গবন্ধু রচিত এই বই পাঠককুলকে বিস্মিত ও আবেগাপ্লুত করতে বাধ্য। যেন বইয়ের প্রতিটি পাতায় লিখে রাখা একটু একটু করে বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রতিটি ইতিহাস, প্রতিটি ঘটনা চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ধরা দিতে থাকবে আর তারপর নামের সার্থকতা বজায় রেখে হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যাবে এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী আর রেখে যা্বে অসমাপ্ত তৃষ্ণার এক অনুভূতি ।বঙ্গবন্ধু বইটি অসমাপ্ত রেখে যেন আমাদের বঞ্চিত করে গেলেন। সাদিয়া শারমিন

      By Sabidin Ibrahim

      13 Aug 2015 12:38 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      When Sheikh Mujibur Rahman was young, his father gave him one insightful advice—“If you have sincerity of a purpose and honesty of purpose, you will never be defeated in life”.Throughout his life, he never diverted from that course. And that made all the difference, helped him become an astute and compassionate leader and the greatest son of this soil, whowas destined to lead the nation to freedom. Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman is not merely a name but an inspiration to millions of youths of Bangladesh and the world as well. Many of us want to know how the man, whom Newsweek magazine once described as the poet of politics, mastered the nitty-gritty of politics and acquainted himself with different state-operating mechanisms. Reading between the lines of The Unfinished Memoirs of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, one might get some clues about it. As he states in the book (page 33): “Those among us who were young or were students or were progressive-minded took up these points and began to speak out on them. (Abul Hashim led the intellectual body at the beginning of Pakistan and Sheikh Mujib was very close to him along with Huseyn Shaheed Suhrawardy). We needed to realise Pakistan and it was important to spell out what kind of economic and political framework Pakistan would have once it was created. Mr Hashim (Abul Hashim) would spend hours indoctrinating us on these issues. He would come to Dhaka for a few days at a time and would sit down with party workers to discuss these issues. He would also spend a lot of time in the Calcutta Muslim League office for similar meetings. He would always keep in touch with party workers. I accompanied him to many such meetings.” The above-mentioned excerpt is a fine example of his growing up with the masterminds of that time. One famous advice of Hazrat Ali ®, who was one of the four Khalifas of Islam, is – “If you want to be a leader, serve others.” Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman is the finest example of a serving leader. What great sacrifices he made in his beginning years! How passionately he worked and how lovingly he served people! Sheikh Mujib’s account of his journey to Delhi, Lahore and some other places makes revealing reading. One of the finest passages in The Unfinished Memoirs is the description of the Tajmahal. He visited this site for the first time while he was in Delhi as a Muslim League delegate at a conference. In his words: “It was so lovely! Even as I write this account twenty-one years later, the Taj’s beauty overwhelms me; I’ll never forget his loveliness”. The descriptions of some other places he visited as well are brilliant and enthralling. Those parts of this book where he wrote about many places can be used as a perfect example of a travelogue. How interesting and enjoyable to read these chapters as if we are also travelling with him! In this book he has also depicted how Muslims as a minority were ignored during the British rule. That is why Muslims had to struggle for their own land and Pakistan was the result of it. The same thing happened with us in the time of Pakistan. Though Bangalees were greater in number, the Pakistani junta, as a weak, fickle minority, deprived us of our very basic rights. We came away from Pakistan and established our own country after a bloody struggle. To make this independence and the sacrifices of the millions meaningful, we should take care of the rights of people irrespective of caste, colour, politics, religion and race. Let’s everyone become the petal of a beautiful flower called Bangladesh. In this unfinished memoir we will get a pathetic and heart-breaking description of Hindu-Muslim riots. And the role Bangabandhu played at that time shows us what a tireless worker he was. In the time of riots Bangabandhu would often load the rice and start pulling the cart to supply food to the refugee shelters. In one chapter, he wrote on the left leaning student organizations and their weaknesses: “There were a few left-leaning students who disliked the government. But the kind of ideas they tried to propagate offended the general students and the public. I used to tell them, ‘While ordinary people still like to walk, you all tend to have your heads in the clouds and fly. They do not understand your language and will not accompany you in your flights. You should only give the public as much food for thought as they can digest’. This made these communists speak out against me but they failed to attract the student world in any way.” Here we will see a mark of wisdom from a politician in his beginnings as a leader. Where the Left and the communists failed, Sheikh Mujib succeeded. He could understand every pulse of his people and could give them ‘as much food for thought as they can digest’. At last I want to say The Unfinished Memoirs is one of the greatest and finest inclusions in the history of Bangladesh. It is really a worthier experience to get some information, tales and insights from the very person who would later become the hero of tales, history and would be revered as the father of a nation. At the same it is a matter of shame that it is the best book on Sheikh Mujibur Rahman and had to be written by the person himself. We talk a lot and endlessly expound on ‘the spirit of liberation’ and get emotional. There are so many lovers of Bangabandhu but few workers who would volunteer to research on the liberation war and Sheikh Mujibur Rahman as a person and statesman. There are some books and works on this but they are not enough. Maybe in future we will have some.However, let’s show our profound respect and tribute to the person who wrote this for us. We should also be grateful to Professor Fakrul Alam for doing this great task of translating it into English and making it available to the world audience. It is a book which should be included in the syllabi of schools and colleges. It can be easily included in a course on political personalities in the Political Science department; ‘Literature in Translation’ and ‘Bangladesh Studies’ courses in the English department; in Bangla and of course in the History department. In brief, The Unfinished Memoirs is the diary of an young boy slowly but steadily joining politics, the growing up of that young boy and his turning into an active, dedicated and hard working worker; and from worker to leader. Forty years after the assassination of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, the best tribute we can offer him is to begin working unitedly to make Bangladesh free of poverty, hunger, corruption and communalism. Sabidin Ibrahim Central Coordinator Bangladesh Study Forum (BDSF) mail: [email protected]

      By nnn

      30 Nov 2014 02:04 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      An email has been sent to your inbox with your account details Your RatingWrite Review অসমাপ্ত আত্মজীবনী (ডিলাক্স) শেখ মুজিবুর রহমান 40 Ratings | 13 Reviews Price: Tk. 650.0 Tk. 520.0 Discount: Tk. 130.0 ( 20.0 % ) Only 50 Taka Delivery Cost on any amount of purchases Pay Cash on Delivery all around Bangladesh Get it in 2-5 working days Subject: রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব Publisher: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড(ইউ পি এল) Availability: Available at publisher's endReport Incorrect Information Book Summary ২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি তাঁর দল আওয়ামী লীগকে ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী করেন। তাঁর এই অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম প্রেক্ষাপট রচনা করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” ঐ সংগ্রামের জন্য তিনি জনগণকে “যা কিছু আছে তাই নিয়ে” প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। তাঁরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন হলে শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি বীরের বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বাঙালির অবিসম্বাদিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান জীবদ্দশায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি শাহাদতবরণ করেন।

      By Al Sahriar Hridoy

      01 May 2014 01:10 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান এবং অবিসংবাদিত নেতৃত্ব স্বীকার করেন না- এমন কোন বাংলাদেশী নেই, থাকতে পারেনা বলেই আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং তার পূর্বের প্রেক্ষাপট বিশেষতঃসাতচল্লিশের দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহ দিন,বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন,চুয়ান্নর নির্বাচন,ছেষট্টির ছয়দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান,সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, সর্বত্রই— সক্রিয়,অভিভাবকসুলভ নেতৃত্ব লাভের সৌভাগ্য বাঙ্গালির হয়েছে। কেমন ছিল সেসব দিনগুলো? কিভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন? সেসব দিনে, সংকটে,আন্দোলনে কিভাবে নেতৃত্ব দিতেন,নীতিনির্ধারণ করতেন সব বিবরণই বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লিপিবদ্ধ আছে এ বইয়ে, বিশেষত চুয়ান্ন পর্যন্ত পাবেন বিস্তৃত বিবরণ,বাকিটা আছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন(৫৫-৭৫) অধ্যায়ে। বঙ্গবন্ধুর এই অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। বইটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন, আত্মজীবনীটি লেখার প্রেক্ষাপট, বঙ্গবন্ধুর জন্ম, পিতামাতা,বংশ পরিচয়, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবন,সংগ্রাম,সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড,কলকাতার হিন্দু মসলিম দাঙ্গা,দুর্ভিক্ষ, সাতচল্লিশের দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি,তাঁর অংশগ্রহণ, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে, জানতে পারবেন তার সহধর্মিনী এবং পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও। ফ্ল্যাপে রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ জীবনী সংক্ষেপে অথচ প্রয়োজনীয় তথ্যে সমৃদ্ধ। বাইরের ফ্ল্যাপে তাঁর নিজস্ব বর্ণনার একটি অংশ— "একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম।হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝেমাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, 'হাচু আফা,হাচু আফা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।' আমি আর রেণু দুজনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, 'আমি তো তোমারও আব্বা' কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই , তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস।রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বগ জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।" তাছাড়া, এ বইয়ের বিশেষ কিছু সুবিধা হলো- বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কর্মকান্ডের কিছু দুর্লভ ছবি, রয়েছে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা, জীবনবৃত্তান্তমূলক টিকায় পাবেন সমসাময়িক রাজনৈতিক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের পরিচিতি- যা সমৃদ্ধ করবে আপনার জানার জগৎকে।

      By Irfan Chowdhury

      21 Apr 2014 05:11 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      We get a concise view of the then political, social & economical view through those lively words by him.

      By mohammadn noman

      05 Jan 2014 03:36 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি তাঁর দল আওয়ামী লীগকে ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী করেন। তাঁর এই অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম প্রেক্ষাপট রচনা করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” ঐ সংগ্রামের জন্য তিনি জনগণকে “যা কিছু আছে তাই নিয়ে” প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। তাঁরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন হলে শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি বীরের বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বাঙালির অবিসম্বাদিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান জীবদ্দশায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি শাহাদতবরণ করেন।

      By rizvi

      01 Jun 2013 06:50 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      this book has depicted our national father in the real manner

      By ফাহিম অসমান

      22 Oct 2019 02:11 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইটি যতবার পড়ি তত বার পড়তে ইচ্ছে করে।।

      By মাদিহা মৌ

      06 Oct 2016 07:19 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      ফ্ল্যাপ থেকে: একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর 'আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, "হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।" আমি আর রেণু দু'জনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, "আমি তো তোমারও আব্বা।" কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।" . পাঠপ্রতিক্রিয়া ইং্রেজ শাসন আমলে, ভাষা আন্দোলনের সময়, স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলা ঠিক কী অবস্থায় ছিল তা জানার প্রচন্ড আগ্রহ। সেইজন্য এমন ইতিহাস পড়তে হবে যেটা নিরপেক্ষ লেখকের লেখা। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে নিরপেক্ষ লিখিয়ে আর কয়জন পাওয়া যাবে? তাই হাতে পাওয়া মাত্র বইটা পড়তে শুরু করেছি। . ইতিহাস আমার সবসময়ই প্রিয়। সাধারণ বইয়ের সাথে এর তুলনা করে বলতে গেলে বলা যায়, সাধারণ বই পড়া হয় কেবলই আনন্দ পাওয়ার জন্য। আর ইতিহাস? ইতিহাস পড়ে জানা যাবে অতীতের ঘটে যাওয়া সত্যি কাহিনি। . কজন জানি আমরা, ইং্রেজ শাসনামলে একসময়ের সমৃদ্ধ বাংলা কেবল দুর্ভিক্ষে জর্জরিত ছিল? আর সেসময়ে দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য বাহন পর্যন্ত ছিল না। কারণ সমস্ত ট্রেন দখল করে রেখেছিল, ইংরেজ-জাপান যুদ্ধের অস্ত্র! সমস্ত খাবার চলে যেত যুদ্ধে লিপ্ত সৈনিকদের রেশন হিসেবে! হাজারে হাজারে কালা আদমি না খেয়ে মরলে কার কী এসে যায়? . দেশ ভাগের আগেই যখন বার বার পাকিস্তানের নাজিম উদ্দিনের সাথে শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দির সাথে বনিবনা হচ্ছিল না (পাকিস্তানিদের সাথে বাঙালিদের), এমনকি শেরে বাংলাকে মুসলিম লীগ থেকে বের করে দিয়েছে পর্যন্ত - তাহলে বাঙালিরা কেন পাকিস্তান হওয়ার জন্য আন্দোলন করলো? তখনই কি বোঝা যায়নি, পাকিদের সাথে আমাদের বনবে না? অবশ্যই গিয়েছিলো। তখন যদি বাংলাদেশ আলাদা হবার জন্যই আন্দোলন করতো! তখনই বাংলাদেশ আলাদা হয়ে গেলে চব্বিশটা বছর পাকিদের কাছে আমাদের শোষিত হতে হত না। একাত্তরে দেশটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত হত না। ত্রিশ লাখ মানুষ মারা যেত না। আমাদের দেশের সূর্য সন্তানগুলি হারিয়ে যেত না। . রাজনীতি যে কতটা খারাপ আগেই জানতাম, এই বই পড়ে ভালোমত উপলব্ধি করেছি। অযথা একনিষ্ঠ আর সৎ নেতাকর্মীদের বিনা বিচারে জেলে আটকে রাখা, তাদের অকথ্য নির্যাতন করে মাথা তুলে দাঁড়াবার ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া, এমনকি মেরে ফেলা! ষড়যন্ত্র মূলক রাজনীতি ছাড়া আর কোন রাজনীতি কি নাই? সুস্থ রাজনীতি কি কেবল বই পুস্তকে ছাপার অক্ষরেই থাকে? . মুদ্রার একপিঠ দেখে কখনো সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ না। সুনিলের প্রথম আলো পড়ে ভেবেছিলাম, কেন বঙ্গভঙ্গ হল? মুসলিমরা কেন বঙ্গভঙ্গ চেয়েছে? কেন তারা কার্যোদ্ধারের জন্য অস্থায়ী মসজিদ বানিয়ে, ওটা ভাঙ্গাকে ইস্যু করে দাঙ্গা (হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা - সুনীলের প্রথম আলো থেকে) বাঁধিয়েছে? বাংলা তো একসাথে থাকলেই ভালো হত। কিন্তু এখন জানি। দোষ কেবল মুসলিমদেরই ছিলো না। হিন্দুদেরও ছিল। সত্যি বলতে কী, বঙ্গভঙ্গ না হলে এদেশের মানুষ আজীবন সুবিধাবঞ্চিতদের কাতারেই পড়ে থাকতো। . খুব আফসোস হচ্ছে। কেন এটা অসমাপ্ত। কেবল '৫৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনী লিখেছিলেন। যদি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত লিখে যেতেন, আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটা নিরেট আর নিরপেক্ষ ইতিহাস পেতাম। আর পেতাম বিশ্বাসঘাতকদের পরিচয়। . বই আলোচনার বাইরে হলেও একটা কথা না বলে পারছি না। এই বইটা আমার নিজের বই নয়। ক্লাসে গিয়ে দেখি ক্যাম্পাসে বইমেলা হচ্ছে। এক ফ্রেন্ড ওখান থেকে কিনেছে বইটা। সাথে সাথে আমি ওর কাছ থেকে চেয়ে নিই। সদ্য কেনা বইটা ও আমার হাতে দিয়ে বলল, "যতদিন সময় লাগে, পড় তুই বইটা। এই বইয়ের প্রত্যেকটা পাতা মুখস্থ করা উচিৎ।" এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে ছেলেটা জামা'আতি ইসলামের কট্টর সমর্থক। তার এই মন্তব্যই প্রমাণ করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটা কখনোই কেবলমাত্র একটা নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই নাম বাংলাদেশের প্রতিটা ধুলিকণার প্রতিনিধিত্ব করে। দলীয় মতবিরোধ বাংলাদেশীদের মধ্যে থাকবেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই সকল তর্কবিতর্কের ঊর্ধ্বে। তাঁর মত একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক নেতা বাংলায় আর আসেনি। ভবিষ্যতেও আসবে কিনা, জানা নেই। . বই পরিচিতি বইঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার পৃষ্ঠা: ৩২৯ মূল্য: ২২০ (পেপারব্যাক) প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রকাশকাল: জুন ২০১২ রেটিংঃ এই বই রেটিং করার দুঃসাহস আমার নাই। এটা রেটিংয়ের ঊর্ধ্বে।

      By Surovi Shobnom

      02 Oct 2016 09:29 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      "মানুষেরে ধোকা দিতে আমি পারব না" চোখের পানি ফেলে এই প্রতিজ্ঞা যিনি করেছিলেন, বাংলার মানুষের জন্য যিনি অর্ধেক জীবন জেলে পার করে দিয়েছেন বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে কিশোর শেখ মুজিবুর রহমান যখন ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠছেন তখনি সমাপ্তি হল অসামপ্ত আত্মজীবনী। লেখাটির প্রথমেই বলেন 'ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।…’ শহীদ সাহেবের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ফুটে ওঠে এই লাইনগুলোর মধ্যে দিয়েই। আত্মজীবনীতে পরিবারের পরিচয়পর্ব থেকে শুরু করে শহীদ সাহেবের সঙ্গে পরিচয় পর্বটিও স্পষ্ট উল্লেখ করেছে বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু সেই কলেজ ছাত্র অবস্থায় ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার নিজের মতের প্রতি ছিলো আত্মবিশ্বাস। এক সভার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেন,"তিনি আনোয়ার সাহেবকে একটা পদ দিতে বলেন। আমি বঅঅললাম কখনওই হতে পারেনা। সে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কোটারী করেছে,ভালো কর্মীদের জায়গা দেয়না,কোনো হিসাব নিকাশ ঠিকমত দাখিল করেনা।শহীদ সাহেব আমাকে বললেন 'who ar you? you are nobody Then why u have invited me? you have no right to insult me. I'll prove that I'm somebody. Thank you,sir.I'll never come to you again. অবাক হয়ে ভাবি কতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকলে একজন কিশোর রাজনীতিবিদ একজন সর্বোচ্চ নেতার সামনে নিজের মতামত এভাবে প্রকাশ করতে পারে। বইটিতে পাকিস্তান আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা স্পষ্ট। সেসময়কার মুসলমানদের একমাত্র দাবি ছিল ‘পাকিস্তান’ নামে আলাদা রাষ্ট্র। আর সেই দাবী প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা তার ছিল তা তিনি খুব সহজেই বলে গেছেন। এমনকি সেখানেও শহীদ সাহেবের ভূমিকার স্পষ্ট বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু। তবে এসব বর্ণনা তার নিজের ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই ধরে নিতে হবে। আত্মজীবনী গ্রন্থখানি সম্পাদনা কাজে জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। একইসঙ্গে বইটির ভূমিকা লিখেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিকার এক জায়গায় বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে একান্ত নিরিবিলি সময়ে তিনি লিখেছেন।’ বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী গ্রন্থে বহুবার চৌধুরী সাহেবের প্রসঙ্গ এসেছে। এই চৌধুরী সাহেব হলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। তার কথা প্রথম আসে ‘অল বেঙ্গল মুসলিম ছাত্রলীগ’- এর সভাপতি ওয়াসেক সাহেবের সূত্র ধরে। এই ওয়াসেক সাহেবের সঙ্গে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সব সময় বিরোধ লেগে থাকতো। ওয়াসেক সাহেব একচেটিয়ে রাজনীতি করতে চাইতেন। তাই তার সঙ্গে বিরোধ। একবার এক গন্ডগোলে চৌধুরী সাহেবের দলকে বঙ্গবন্ধু সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদেও অংশ নেন। এমনকি চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে ভারত ঘুরার বর্ণনাও আছে বইটিতে। তবে চৌধুরী সাহেব সম্পর্কে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, ‘চৌধুরী সাহেব খুবই স্বার্থপর হয়ে ওঠেন এবং একগুঁয়েমি করতেন, সেজন্য যারা তাকে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পরে তারা সকলেই তাঁকে ত্যাগ করেন।’ রাজনৈতিক কুটচাল, পার্টি ম্যানুপুল্যাশন, টাকার খেলা, দল বদলানো, মানুষের নতুন চেহারা উন্মোচন এসবই পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে। সঙ্গে আছে দূর্ভিক্ষ এবং হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটও উঠে আসে বইয়ে। শুধু তাই নয়, কলকাতা ও সিলেট নিয়ে যে রাজনীতি ব্রিটিশরা করেছে সে বর্ণনাও আছে। কলকাতাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী না করে ভারতের সীমানায় দিয়ে দেওয়াটা হঠকারিতার সামিল বলেই বোঝা যায়। অন্যদিকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কথাও তিনি বলেছেন। সেখানেও মূল নায়ক সোহরাওয়ার্দী। শুধু রাজনীতি কিংবা নিজের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ বাদেও কখনও কখনও বঙ্গবন্ধুর ভেতরের কবি সত্ত্বাও জেগে উঠতে দেখা গেছে এ গ্রন্থে। তাজমহলে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালী রঙ আমাশে ছুটে আসছে। মনে হল, তাজের যেন আর একটা নতুন রূপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা ফেলে দিয়ে নতুন রূপ ধারণ করেছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারব না।’ বঙ্গবন্ধু একজন নেতা। বাংলাদেশ স্বাধীকার আন্দোলনের প্রধান নেতা। এবং তার রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী একজন নেতার বেড়ে ওঠার গল্প। তার রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবনার মিশেলে বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে এ গ্রন্থে। কোন সাহিত্য রচনার জন্য এই গ্রন্থ নয় নেহায়েত বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং স্ত্রী রেণুর অনুরোধে নিজের জীবন লেখতে বসেছিলেন কারাবন্দী অবস্থায়। যা আজ আমাদের সামনে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ হাজির হয়েছে

      By Tipu sultan

      20 Aug 2015 06:28 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক অনেক মন্তব্য করে! আমি তাদের বলি বইটি পড়লে আপনাদের সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। নতুন রূপে বঙ্গবন্ধু উঠে আসবে আপনাদের মাঝে। মনের মাঝে থাকবে না কোনো সন্দেহ। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, তার কাছে যুদ্ধের অনেক গল্প ও বঙ্গবন্ধুর অনেক গল্প শুনেছি। পড়ার সময় মনে হয়েছে যেন আমি সেখানে উপস্থিত তার সাথে আমিও আছি! ভাবতেই শরীরে কাটা দেয়। বইটি বিস্তারিত পরলে আপনাদের ধারণা পুরোটাই পালটে যাবে। এক কথায় বলতে গেলে, এতদিন বঙ্গুবন্ধু কে আমি আমার হৃদয়ের উপরে স্থান দিয়েছিলাম, এখন তাঁর স্থান ও মর্যাদা আমার মাথার উপরে। আমরা যা ভাবি তারো উপরে তিনি।

      By Tanzila

      09 May 2014 03:14 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধুর এই অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। কিভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন, কিভাবে নেতৃত্ব দিলেন বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের তার উল্লেখ এই বইয়ে নেই, এ বইটি বঙ্গবন্ধুর একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে ওঠার ইতিহাস।বইটি লেখা হয় জেলখানায় বসে, ৬০এর দশকের শেষের দিকে, এমন একটা সময়ে যখন শেখ মুজিব পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। এটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাজনীতিকে খুব কাছ থেকে দেখা একজন মানুষের বয়ান। সেই সময়ের পাকিস্তানের কথাই এখানে উঠে এসেছে, যখন একটা গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এর গড়ে ওঠার সমস্ত সম্ভাবনা ধীরে ধীরে মুছে দেওয়া হচ্ছিল। শেখ বোরহানউদ্দিন নামক এক ধার্মিক ও অভিজাত পুরুষ কর্তৃক শেখ বংশের গোড়াপত্তন এবং তৎকালীন হিন্দু জমিদার ও ইংরেজ শাসকদের মুসলমান বিরোধী তৎপরতার প্রভাবে এ বংশের প্রভাব প্রতিপত্তি হ্রাসের বিষয়টি দিয়ে আত্মজীবনী শুরু করেন। লেখক তাঁর পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহ একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। অন্যদিকে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পার্টির আন্দোলন, বহুল আকাঙ্ক্ষিত পাকিস্তান সৃষ্টি এবং আশাভঙ্গ অতঃপর নিরন্তর সংগ্রামের কথা ছবির ন্যায় তুলে ধরেছেন। তাঁর দীর্ঘ কন্টকাকীর্ণ সংগ্রামী জীবনের শুরু শিশুকাল থেকেই। তন্মধ্যে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বেরিবেরিতে আক্রান্ত হয়ে হার্ট দুর্বল হওয়া এবং দু বছর পরে চোখের অসুখ গ্লুকমায় আক্রান্ত হয়ে চশমা নেয়ার মত নিজের সাথে সংগ্রাম যেমন আছে, তেমনি আপসহীন ও নির্লোভী চরিত্রের জন্য বারবার কারাবরণ, শোষিত শ্রেণির পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং রাজনৈতিক স্বার্থে পরিবার পরিজন থেকে দূরে অবস্থানের মত ব্যাপারও আছে। ‘শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে’ এভাবেই তের বছর বয়সে শিশু রেনু কে বিবাহ করার কথা বর্ণনা করেন, যা তার সংগ্রামে অন্য এক বাস্তবতা এনে দেয়।৩২৯ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি পড়ার মধ্য দিয়ে লেখকের চারিত্রিক গুনাবলী ও রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এসবের অন্যতম হল তাঁর আপসহীন চরিত্র এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাব। যদ্বারা তিনি জেল শব্দটিকে নিজের নামের সমার্থক বানিয়েছেন। কৈশরেই হিন্দু সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শেখ মুজিব প্রথম জেলে যান। পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। ১৯৪৯ এ ভাসানী তাঁকে গ্রেফতার এড়িয়ে থাকতে বললে তিনি তার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে গ্রেফতার হন। বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনের মাসে লাগাতার অনশন করে মুক্তি পান। ১৯৫৪ সালে সরকার মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে বাসায় পুলিশ পাঠিয়েছেন শুনে তিনি নিজেই ম্যজিস্ট্রেটকে ফোন দিয়ে গ্রেফতার বইটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন, আত্মজীবনীটি লেখার প্রেক্ষাপট, বঙ্গবন্ধুর জন্ম, পিতামাতা,বংশ পরিচয়, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবন,সংগ্রাম,সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড,কলকাতার হিন্দু মসলিম দাঙ্গা,দুর্ভিক্ষ, সাতচল্লিশের দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি,তাঁর অংশগ্রহণ, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে, জানতে পারবেন তার সহধর্মিনী এবং পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও। বইটার ভূমিকা লিখে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর চমৎকার ভূমিকাটি এবং বইয়ে সংযোজিত ছবিগুলো বইটাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে

      By Jahan-E-Noor

      08 Apr 2013 03:40 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      কংগ্রেস থাকতে মুসলিম লীগ কেন? মুসলিম লীগ থাকতে আওয়ামী মুসলিম লীগ কেন? কোন পেক্ষাপটে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়? লাহোর প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের প্রবক্তা এ কে ফজলুল হক কেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন? অথবা পাকিস্তান আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী হয়েও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর লেখক কেন সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করেছেন? এসব ঘটনা প্রবাহের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মজীবনীতে প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়েছেন।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে ১৯৬৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি বইটি রচনা শুরু করেন। তাঁর স্মৃতিময় জীবনের প্রথমার্ধই অর্থাৎ ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত এ গ্রন্থের উপজীব্য। ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি প্রাপ্তি সম্পর্কে বলেন ‘মনে হচ্ছিল, আল্লাহর তরফ থেকে ঐশ্বরিক অভয়বানী এসে পৌছাল আমার হাতে’, যা এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্বই ফুটিয়ে তোলে। শেখ বোরহানউদ্দিন নামক এক ধার্মিক ও অভিজাত পুরুষ কর্তৃক শেখ বংশের গোড়াপত্তন এবং তৎকালীন হিন্দু জমিদার ও ইংরেজ শাসকদের মুসলমান বিরোধী তৎপরতার প্রভাবে এ বংশের প্রভাব প্রতিপত্তি হ্রাসের বিষয়টি দিয়ে আত্মজীবনী শুরু করেন। লেখক তাঁর পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহ একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। অন্যদিকে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পার্টির আন্দোলন, বহুল আকাঙ্ক্ষিত পাকিস্তান সৃষ্টি এবং আশাভঙ্গ অতঃপর নিরন্তর সংগ্রামের কথা ছবির ন্যায় তুলে ধরেছেন। তাঁর দীর্ঘ কন্টকাকীর্ণ সংগ্রামী জীবনের শুরু শিশুকাল থেকেই। তন্মধ্যে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বেরিবেরিতে আক্রান্ত হয়ে হার্ট দুর্বল হওয়া এবং দু বছর পরে চোখের অসুখ গ্লুকমায় আক্রান্ত হয়ে চশমা নেয়ার মত নিজের সাথে সংগ্রাম যেমন আছে, তেমনি আপসহীন ও নির্লোভী চরিত্রের জন্য বারবার কারাবরণ, শোষিত শ্রেণির পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং রাজনৈতিক স্বার্থে পরিবার পরিজন থেকে দূরে অবস্থানের মত ব্যাপারও আছে। ‘শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে’ এভাবেই তের বছর বয়সে শিশু রেনু কে বিবাহ করার কথা বর্ণনা করেন, যা তার সংগ্রামে অন্য এক বাস্তবতা এনে দেয়। নিজের মধ্যে লুক্কায়িত রাজনীতির বীজ শেরেবাংলা মন্ত্রিসভার শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে দ্রুত অংকুরোদগম হয়। ‘তোমাদের এখানে মুসলিম লীগ করা হয় নাই?’ সোহরাওয়ার্দীর এমন প্রশ্নের জবাবে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধু একধাপ এগিয়ে বলেন ‘কোন প্রতিষ্ঠান নাই, মুসলিম ছাত্রলীগও নাই’। এই শুরু। বাকী জীবন শুধু জেল-জুলুম আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ইতিহাস। জিন্নার ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ ঘোষণাকে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার নেতারা ভুল বোঝার ফলে ১৯৪৬ এর দাঙ্গা হয়েছে বলে লেখক উল্লেখ করেন। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী ব্যতিরেকে সংগ্রাম দিবস ঘোষণা এবং সোহরাওয়ার্দীর সরকারী ছুটি জারি এহেন ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করেছে বলে আবুল মনসুর আহমেদ ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ এ মত দেন। এর ফলশ্রুতিতে মুসলমানরা এক অবর্ণনীয় সাম্প্রদায়িক হামলার স্বীকার হয়। দাঙ্গার উত্তাপ নোয়াখালিতে সংক্রমিত হয়। যার প্রতিক্রিয়ায় বিহারেও ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। দাঙ্গায় হিন্দু-মুসলমানদের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান বইতে যত্নের সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। এসময় প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী ও লেখক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলকাতা ও বিহারের অসহায় মুসলমানদের রক্ষায় যে সাহসী ও দরদী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা উল্লেখযোগ্য। ইতোমধ্যে ভারত ভাগ হয়। জনমত ও সোহরাওয়ার্দীর নেগোসিয়েশন উপেক্ষা করে বাংলাকে ভাগ করে এবং আসামকে ছেড়ে দিয়ে ভারতের বিরাট ভূখণ্ডের দুই পাশে দুই ভিন্ন অংশ নিয়ে সৃষ্ট হয় পাকিস্তান। গভর্নর জেনারেল হতে না পারায় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের অসহযোগিতা এবং কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের দ্রুত ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতাকে বাংলা ভাগের কারন হিসেবে উল্লেখ করেন । এরপর শুধুই ষড়যন্ত্র ‘পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়।’ মূলত ১৯৪৬ সালের মুসলিম লীগের দিল্লী কনভেনশনে শেরেবাংলার লাহোর প্রস্তাবের ‘স্টেটস’ (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র) এর পরিবর্তে ‘স্টেট’ (অখণ্ড) রাষ্ট্র লেখার মাধ্যমেই এই ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করা হয়। নির্বাচিত হয়ে নাজিমুদ্দিন যখন সদলবলে পূর্বপাকিস্তানে ফিরে যায় তখন সোহরাওয়ার্দী দাঙ্গা থামাতে এবং কলকাতায় থেকে যাওয়া মুসলমানদের সাহস যোগাতে লেগে যান। লেখকও তাঁর সাথে থাকেন। পরে তিনি পূর্ববাংলায় ফিরে এসে, ‘কমিউনাল হারমনি’ রক্ষায় কাজ শুরু করেন। ভাষার প্রশ্নে শাসকগোষ্ঠীর নির্বুদ্ধিতা, শাসনতন্ত্র রচনায় বিলম্ব, পশ্চিম পাকিস্তানের ‘কোটারি’, সরকারে আমলাদের অংশগ্রহণ এবং বিরোধী দমন নীতি পূর্ব পাকিস্তানের জনগনকে ক্ষেপিয়ে তোলে। এ প্রেক্ষাপটে তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণার প্রতিবাদে ‘আমি মানিনা’ বলে প্রতিবাদ জানান। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নবেতনভোগী কর্মচারীদের আন্দোলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার সম্পর্কে বইতে বিশদ আলোচনা করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে ‘পূর্ববাংলা আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে নিরাপত্তা আইনে অন্তরীণ অবস্থায় লেখক এর জয়েন্ট সেক্রেটারি হন। সরকারের অবর্ণনীয় পীড়ন ও অগণতান্ত্রিক রোষানলের পাহাড়সম বাধা পেড়িয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ এগিয়ে চলে। ‘নিখিল আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও লেখকের মাথায় ছিল। এ বিষয়ে কথা বলতে ১৯৪৯ সালের শেষের পশ্চিম পাকিস্তানে সফরে এসে নানাবিধ প্রোগ্রাম করেন।যা থেকে বোঝা যায় যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা তখন পর্যন্ত লেখকের মাথায় ছিলনা। ১৯৫৩ সালের প্রথম কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু মুসলিম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দল গোছাতে আত্মনিয়োগ করেন। ভাসানীর মত তিনিও যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিরোধী ছিলেন। যুক্তফ্রন্ট গঠনকে তিনি মুসলিম লীগ খেদানো পলিটিসিয়ান এবং আওয়ামী লীগ কাউন্সিলরদের ক্ষমতা লিপ্সু অংশের চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। এমন সময়ে স্বায়ত্ত্বশাসন ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি সম্বলিত ২১ দফা রচনা করায় আবুল মনসুর আহমদের প্রশংসা করেন। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং পরবর্তীতে মন্ত্রিত্ব, নেতৃত্ব প্রভৃতি ইস্যুতে অন্তর্কলহ পাঠকের সামনে মেলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদের শপথের সময় আদমজি জুট মিলে সংগঠিত বাঙালী ও অবাঙালীর মধ্যকার দাঙ্গা কে যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখান। ষড়যন্ত্রের ধারবাহিকতায় মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে বঙ্গবন্ধু সহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনা তিনি এভাবে উল্লেখ করেছেন ‘এই দিন থেকেই বাঙ্গালির দুখের দিন শুরু হল।’ বাইরে থাকা নেতা-কর্মীদের নিরব থাকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন এ সময় আন্দোলন করতে পারলে পাকিস্তানরা এমন সাহস আর দেখাত না। জেল থেকে বের হয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতেও তার সংগ্রাম অব্যহত থাকে। এসব ঘটনা প্রবাহে সক্রিয় অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় একজন শেখ মুজিবুর রহমানের। প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিতে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের এই অধ্যায় পর্যন্ত উল্লেখ আছে। যদিও প্রকাশক তাঁর ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক জীবনের পরিচয়, টিকা, জীবনবৃত্তান্তমূলক টিকা এবং একটি নির্ঘণ্ট যুক্ত করে তাঁকে তরুনদের কাছে পূর্ণাঙ্গরূপে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে রচিত এ পাণ্ডুলিপি অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার হাতে পৌছে। প্রায় চার দশকের পুরানো, হলুদ হয়ে যাওয়া নরম পাতার পাণ্ডুলিপি থেকে লেখা উদ্ধারে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা যতেষ্ঠ কষ্ট করেছেন। বিশেষজ্ঞের সহায়তাও নিয়েছেন। শব্দ ও ভাষার সাবলীলতার খাতিরে লেখকের অবর্তমানে সম্পাদনা করেন। তাই গ্রন্থে লেখকের বক্তব্যের অবিকল প্রতিফলন নিশ্চিত করতে নানাবিধ সতর্কতা অবলম্বন করেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের স্বীকৃত প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএল। বাংলার পাশাপাশি একইদিনে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য আনফিনিশড মেমোয়ার্স’। ৩২৯ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি পড়ার মধ্য দিয়ে লেখকের চারিত্রিক গুনাবলী ও রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এসবের অন্যতম হল তাঁর আপসহীন চরিত্র এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাব। যদ্বারা তিনি জেল শব্দটিকে নিজের নামের সমার্থক বানিয়েছেন। কৈশরেই হিন্দু সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শেখ মুজিব প্রথম জেলে যান। পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। ১৯৪৯ এ ভাসানী তাঁকে গ্রেফতার এড়িয়ে থাকতে বললে তিনি তার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে গ্রেফতার হন। বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনের মাসে লাগাতার অনশন করে মুক্তি পান। ১৯৫৪ সালে সরকার মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে বাসায় পুলিশ পাঠিয়েছেন শুনে তিনি নিজেই ম্যজিস্ট্রেটকে ফোন দিয়ে গ্রেফতার হন। মুসলিম লীগে সংস্কারের ব্যাপারে তিনি চেষ্টা চালান। জমিদার, জোতদার ও খান বাহাদুরদের প্রতিক্রিয়াশীল দলের গণ্ডি থেকে মুসলিম লীগকে জনগনের প্রগতিবাদী প্রতিষ্ঠানে পরিণিত করতে তিনি চেষ্টা চালান। মুসলিম লীগের ‘কোটারি’, দলাদলি, আপোসকামী, ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে পাকিস্তান আন্দেলনের মূল দুর্বলতা এবং পাকিস্তান উত্তর সময়ের সবচে’ বড় সংকট হিসেবে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক বইতে তাঁর ইসলামপ্রিয়তা সম্পর্কে বেশ তথ্য পাওয়া যায়। ভাসানীর সাথে এক জেলে থাকার বর্ণনায় তিনি বলেন ‘মওলানা সাহেবের সাথে আমরা তিনজনই নামাজ পড়তাম। মওলানা সাহেব মাগরিবের নামাজের পরে কোরআন মজিদের অর্থ করে আমাদের বোঝাতেন। রোজই এটা আমাদের জন্য বাঁধা নিয়ম ছিল’। জেল জীবনের সময়-পার সম্পর্কে বলেন ‘আমি তখন নামাজ পড়তাম এবং কোরআন তেলাওয়াত করতাম রোজ। কোরআন শরীফের বাংলা তরজমাও কয়েক খন্ড ছিল আমার কাছে’। ১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে চীনে গিয়ে চীনের অর্থনীতি সহ সামগ্রিক উন্নতিতে অভিভূত হয়ে যান। এসময় তাদের স্বাধীনতার বছর ১৯৪৯ উল্লেখ করে ১৯৪৭ এ স্বাধীনতা পাওয়া পাকিস্তানের অধোগতির জন্য আফসোস করেন। রাজনীতিতে সোহরাওয়ার্দীকে আজীবন গুরু মানলেও তা অন্ধ অনুকরণ পর্যায়ে ছিলনা। ন্যায়-অন্যায় ও জাতীয় ইস্যুতে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বিরোধিতা করতেও দেখা গেছে। ১৯৪৬ এর নির্বাচনে নাজিমুদ্দিনের সাথে আপোসের প্রশ্নে শহীদ সাহেবের নমনীয় অবস্থান দেখে বলেছিলেন ‘আপোস করার কোন অধিকার আপনার নেই। আমরা খাজাদের সাথে আপোস করব না।’ আবার যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দেয়ার পর পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিত্ব নিলে জেলে বসে তিনি এর বিরোধিতা করেন। আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা, প্রতিপক্ষ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বস্তুনিষ্ঠ প্রশংসা ও সমালোচনা করেছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানের জন্ম এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বিমাতা সুলভ আচরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মাওলানা ভাসানী ও শেরেবাংলা ফজলুল হকের অবদানকে তুলে ধরার পাশাপাশি সময় সময় তাঁদের দুর্বল চিত্ত, দোদুল্যমান মনোভাব এবং যুক্তফ্রন্টে নেতৃত্ব দানে ব্যর্থ হওয়ার সমালোচনা করেছেন। অপরপক্ষে শহীদ সাহেবের উদার, ত্যাগী, অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্বকে বাহবা দিলেও তাঁর অতি উদারতাকে খাজা নাজিমুদ্দীন গংদের নেতৃত্বে আসার অন্যতম ‘সুযোগ’ হিসেবে দেখিয়েছেন (১৯৩৭ এর নির্বাচনে শহীদ সাহেবের সিটে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নাজিমুদ্দীন কে জেতানো হয়।) তাঁর মতে ‘উদারতা দরকার, কিন্তু নীচ অন্তঃকরণের ব্যক্তিদের সাথে উদরতা দেখালে ভবিষ্যতে ভালর চেয়ে মন্দই বেশি হয়।’ খান আতাউর রহমান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, ইয়ার মোহাম্মদ খান, ফজলুল কাদের চৌধুরী, শামছুল হক সাহেব, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ সহযোদ্ধাদের অবদান বইয়ের পৃষ্ঠায় বার বার এসেছে। কবি আল্লামা ইকবাল সম্পর্কে তিনি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। লাহোরে থাকা অবস্থায় একবার তার বাড়িতে গেলে বলেন, ‘কবি এখানে বসেই পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আল্লামা শুধু একজন কবি ছিলেন না, একজন দার্শনিকও ছিলেন। আমি প্রথমে তাঁর মাজার জিয়ারত করতে গেলাম এবং নিজকে ধন্য মনে করলাম’। স্বাধিকার আন্দোলনে মাওলানা আকরাম খা এর আজাদ, আবুল হিশামের মিল্লাত, আবুল মনসুর আহমদের ইত্তেহাদ, ভাসানীর উদ্যোগে মানিক মিয়ার ইত্তেফাক প্রভৃতি পত্রিকার অবস্থান এখানে জোরালো ভাবে চিত্রিত হয়েছে। আত্মজীবনী হিসেবে এখানে প্রসঙ্গের অবতারণা, আলোচনা, ও মূল্যায়ন সবকিছুতেই বস্তুনিষ্ঠতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। ইতিহাসের ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী সহ প্রত্যেকটি সচেতন মানুষের নিকট এ গ্রন্থের একটা অনন্য মর্যাদা থাকবে বলে আশা করা যায়।

      By mesbah uddin

      24 Mar 2013 06:07 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      প্রচুর পড়তেন তিনি। ছিলেন একজন সর্বভূক পাঠক। নিজ দেশেরই কিছু সেনাসদস্যের হাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সহ যে ভোরে তিনি নিহত হলেন তার ঠিক আগের রাতেও তিনি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পড়ছিলেন বার্নার্ড শ’র “মানব এবং অতিমানব” বইটি। তিনি কেবল পড়তেন-ই না, সমস্ত বিশ্বের নামজাদা সব লেখক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদদের মনের ভিতরে উচ্চ সম্মানের আসনে রাখতেন। ভালোবাসতেন বার্ট্রান্ড রাসেল, আব্রাহাম লিঙ্কন, উইন্সটন চার্চিল আর মহাত্মা গান্ধীর লেখা। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে গেলে আজ আমরা দেখে উঠি তাঁর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা গড়ে তুলতে কী বিপুল পড়াশোনা ছিল তাঁর! এটা আমাদের জন্য খুব আশ্চর্যের এবং দুর্ভাগ্যের হত, যদি আমরা আমাদের এই মহান নেতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতার কোন স্বহস্তে লিখিত দলিল না পেতাম। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি লেখা হয় জেলখানায় বসে, ৬০এর দশকের শেষের দিকে, এমন একটা সময়ে যখন শেখ মুজিব পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। আর এর সৌন্দর্য এখানেই যে, এটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাজনীতিকে খুব কাছ থেকে দেখা একজন মানুষের বয়ান। সেই সময়ের পাকিস্তানের কথাই এখানে উঠে এসেছে, যখন একটা গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এর গড়ে ওঠার সমস্ত সম্ভাবনা ধীরে ধীরে মুছে দেওয়া হচ্ছিল। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বইটির নামেই উল্লেখিত এটি বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ জীবনী নয়, বরং এর মাঝে আমরা আমাদের জাতির পিতার জীবনের একটি অংশই পাবো কেবল। কিভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন, কিভাবে নেতৃত্ব দিলেন বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের তার উল্লেখ এই বইয়ে নেই, এ বইটি বঙ্গবন্ধুর একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে ওঠার ইতিহাস। চল্লিশের দশকের শুরুতে অন্য অনেকের মতনই শেখ মুজিবুর রহমান সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগের সমর্থন দেন, যাদের রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রভাবে অনেকটা অবধারিতভাবে শেখ মুজিব জড়িয়ে পড়েন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে। অসমাপ্ত স্মৃতিকথায় শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দীর ছায়ায় তারঁ রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করেন, কীভাবে তখন শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিন্নতার জন্য মানুষ মানুষকে হত্যা করছিল। কলকাতা থেকে পাটনা গিয়ে দেখেন, সেখানেও একই অবস্থা। আমরা দেখতে পারি এত ঝড়-ঝঞ্ছা, রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই এত ধাক্কার পরও শেখ মুজিবের সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা এতটুকুও কমেনি কখনোই। ১৯৬৩ এর শেষদিকে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত বলা যায় তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত, প্রায় জেদী সোহরাওয়ার্দী অনুসারী যাই হোক, জিন্নাহর প্রতি শেখ মুজিবের শ্রদ্ধার নিদর্শন পেলেও, পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলি খানের প্রতি তাঁর মনোভাব ছিল প্রত্যাশিত। শেখ মুজিবের বুঝতে দেরী হয়নি এই উদ্ধত রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক বাস্তবতায় অজ্ঞতার কথা। ১৯৪৯ সালে, যে বছর কিছু অস্নতুষ্ট বাঙ্গালী মুসলিম লীগ নেতা আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠীত করেন, লিয়াকত ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগ কী, তা তিনি জানেনই না! সেই ১৯৪৯ সালেই শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিকের সূত্রপাত ঘটে, যেসব দিক পরবর্তী বছরগুলোতে তাঁর জীবনে অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে থাকবে। পুলিশ ক্রমাগত তাঁর পিছে লেগে থাকে; সরকার আওয়ামী মুসলিম লীগের উপর আরোপ করে কড়া বিধি-নিষেধ। এক পর্যায়ে পুলিশ যখন মাওলানা ভাসানী এবং শামসুল হকের উপর গ্রেপ্তারী পারোয়ানা জারি করে, ভাসানী মুজিবকে বলেন, পুলিশের কাছ থেকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে। তিনি শেখ মুজিবকে আরও বলেন লাহোরে গিয়ে সোহরাওয়ার্দীর সাথে আলাপে বসার জন্য। শেখ মুজিব মাত্র দুই রুপী সাথে নিয়ে লাহোরে যান, এবং গিয়ে দেখেন সোহরাওয়ার্দী সেখানে নেই, ফিরবেনও না আরও কিছু দিন। শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী ফিরলে মুজিব স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। তাঁর প্রিয় নেতা লাহোরের তীব্র শীতে কাঁপতে থাকা মুজিবকে গরম কাপড় দেন পরার জন্য। এরপর ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুজিব যুক্তফ্রন্টের হয়ে অংশ নেন। যুক্তফ্রন্ট নুরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ কে শোচনীয় ভাবে হারায়। যদিও যুক্তফ্রন্ট সরকার বেশীদিন ক্ষমাতায় থাকতে পারেনি। ঠিক যেদিন শেখ মুজিব কেবিনেটে যোগ দেন, ঠিক সেদিনই কেন্দ্রীয় সরকারের মদদে আদমজী জুট মিলে হত্যা করা কমপক্ষে পাঁচশ জন বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী কে। কিছুদিন পর বিশেষ আইন জারি করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা বাতিল করা হয়। কোন মন্ত্রী, এমনকী প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদে একটা কথা বললেন না। মন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র শেখ মুজিবই গ্রেপ্তার হন। এমনই, শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের অনেক খুঁটনাটির বর্ণনা সারা বইটি জুড়ে। আছে অসংখ্য মানুষের পরিচয়, মুজিবের প্রাথমিক রাজনৈতিক ভাবনা, সবকিছুই এক সুখপাঠ্য ভাষা ভঙ্গীতে। বইটা পড়ে শেষ করবার পরই যে কারো মনে হবে, যদি শেখ মুজিব তাঁর জীবনের পুরোটকুই লিখে যেতে পারতেন! সত্যিই এই মহান রাজনৈতিকের জীবনের তুলনায় বড় বেশী ক্ষুদ্রে এর আয়তন। তবু আমরা বটাতে পাই এই মহান নেতার এক তরুণ রাজনীতিবিদ থেকে একজন জাতীয়ে নেতা হয়ে ওঠার পিছনের গল্প, এটাই বা কম কী! বইটার ভূমিকা লিখে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর চমৎকার ভূমিকাটি এবং বইয়ে সংযোজিত ছবিগুলো বইটাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

      By Shuvro Chowdhury

      07 Jan 2013 09:38 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Ami banglali-der bolchi, Ai boi poro ... Nijer jat chino.

      By Md Sajjad Zahid

      17 Apr 2016 12:34 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বঙ্গবন্ধুকে চেনার সহজ উপায়।

      By F.M. Akash Khan

      02 Jul 2012 09:31 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমি এক জন নতু ইউজার, আপনাদের সাইটের কিন্তু, আমি আপনাদের সাইট থেকে এই বই টা পর পর ১০ অর্ডার করেছি এবং ১০ টা ই আমার পড়ার জন্য। ১০ টা কিনে যে আমি একা পড়েছি তা কিন্তু নয়। এ গুলোর কোন টি আমার ভাইকে দিয়েছি আবার কোনটি আমার ফ্রেন্ডকে দিয়েছি। বই টি পড়ে আমার মনে হলো বই টা অসম্বব ভালো।

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!