User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নটি কীভাবে দেখছে, তা জানা জরুরি। যদি তারা মনে করে, বহুদিন আগে ঘটে যাওয়া প্রসঙ্গটিকে এখন আর টানাহেঁচড়া করা কেন, যা ঘটে গেছে, তা তো গেছেই—এখন সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে সবাই মিলে দেশ গড়ার কাজে হাত দিলেই তো হয়—তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটি আর জরুরি কোনো বিষয় হয়ে দাঁড়ানোর ভিত খুঁজে পাবে না। আর যদি তারা মনে করে, জাতির ওপর এত বছর ধরে যে কলঙ্ক চেপে বসে আছে, তা থেকে মুক্ত হতে হবে, তাহলেই কেবল প্রশ্নটি দাঁড়াতে পারবে শক্ত ভিতের ওপর। আর এ জন্য কিছু তথ্য জানা জরুরি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, তাঁরা জানেন কী বীভত্সতার সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল দেশের সাধারণ মানুষদের। প্রায় প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ হারিয়ে গেছেন বা প্রতিটি পরিবারই এই যুদ্ধের ক্ষত বহন করে চলেছে। তাই তাঁরা জানেন মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ হয়েছে তাঁর বিচার হওয়া প্রয়োজন। যুদ্ধের মাঠে মৃত্যুর উত্সব হয়। প্রতিপক্ষ খুন করে প্রতিপক্ষকে। যুদ্ধের এটাই বর্বর নিয়ম। কিন্তু সেটা অস্ত্র হাতে যারা যুদ্ধ করছে, তাদের ব্যাপার। নিরীহ জনগণকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলে তাকে আর যুদ্ধের মাঠে হানাহানি বলা যায় না, বলতে হয়, ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড। যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে কোনো গোষ্ঠী, দলকে হত্যা করাটাই যুদ্ধাপরাধ। শুধু বাঙালি পরিচয়ের কারণেই সাধারণ বাঙালিদের হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার বিচার না হলে কি সত্যিই আমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব? হত্যাকারীদের পাশে বসিয়ে আমরা বাংলার জল-হাওয়া-প্রকৃতির কাছে সমর্পিত হব? কোনো দেশই যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল, কসবো, রুয়ান্ডা, বসনিয়া, পূর্ব তিমুর ইত্যাদি নাম আমাদের মনে আশা জাগায়। আমরা তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, সে বিশ্বাস রাখতে পারি। ডা. এম এ হাসান যে বইটি লিখেছেন, তাতে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গটি এসেছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য বইটির ৩২ পৃষ্ঠা থেকে একটি অংশ তুলে দিতে চাই: যুদ্ধাপরাধ আইন সেই সমস্ত অপরাধকে বিবেচনায় আনে যা কিনা যুদ্ধকালীন সংঘটিত হয়। এতে আক্রমণকারী ও তার সহায়ক শক্তি জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে, যুদ্ধ ও সংঘাতে প্রযোজ্য আইনের সীমা অতিক্রম করলে তা যুদ্ধাপরাধ বলে পরিগণিত হয়। উদাহরণস্বরূপ—উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা বা বেসামরিক ব্যক্তিবর্গকে আক্রমণ করে যুদ্ধ সংঘটিত করা বৈধ নয়। শত্রুর দেহ খণ্ড-বিখণ্ডকরণ, তাকে বন্দী করে নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, সাধারণের সম্পত্তি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ—সবই অবৈধ। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতালসহ প্রতিরক্ষাহীন স্থান ও স্থাপনার ওপর আঘাতও যুদ্ধাপরাধ। এমনকি লক্ষ্যবস্তুর বাইরে সীমাহীন আঘাতের মাধ্যমে ধ্বংস, হত্যা ও শারীরিক ক্ষতিসাধনও যুদ্ধাপরাধ (যেমন, জগন্নাথ হল হত্যাকাণ্ড)। অন্যায়ভাবে আটকিয়ে অথবা পরিকল্পিতভাবে কষ্ট ও দুর্ভোগ সৃষ্টিও যুদ্ধাপরাধ। জেলে হত্যা ও নারী নির্যাতনও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধ। এটা মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ। এই ঘটনাগুলো ঘটেছে একাত্তরে। ঘটিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা। সে সময়কার পত্রপত্রিকা ঘাটলেই প্রকাশ পাবে, কারা পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছিল, কারা খুন-ধর্ষণ করেছিল, কারা এই অন্যায় আচরণে ইন্ধন দিয়েছিল। বইটিতে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে একটি অধ্যায় আছে, যা পড়লে একাত্তরে ঘটে যাওয়া বর্বরতা প্রগাঢ়ভাবে বোঝা যাবে। সেখানে কিছু উদাহরণ পাঠে চোখে জল আসে। ‘বিচার ও সম্ভাবনা’ নামে একটি অধ্যায়ে পরিষ্কারভাবে প্রমাণ হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে ম্যান্ডেট আছে। যুদ্ধাপরাধ কখনো তামাদি হয় না। আরেকটি অধ্যায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক জনমতটিও জানা যাবে। বিচারকাজটি শুধু আবেগ দিয়ে হবে না। রাষ্ট্রের ঘাড়ে অনেক বড় দায়িত্ব বর্তায়। অপরাধকর্মের স্থানগুলো চিহ্নিত করতে হবে; বিজ্ঞানভিত্তিক ডকুমেন্টেশন করতে হবে; কে কাকে কীভাবে, কী উদ্দেশ্যে হত্যা, গুম বা অপহরণ করেছে সে বিষয়গুলো পরিষ্কার হতে হবে। অপরাধী ও অপরাধের শিকারের পরিচয়সংক্রান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। নিহত ব্যক্তির হাড়গোড় শনাক্ত করতে হবে। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ এবং গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল হবে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে রেডিও, টেলিভিশন, ওয়্যারলেস ও সংবাদপত্রে প্রদত্ত উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে বিচারকাজে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম অ্যাক্ট ১৯/৭৩ বিচার শুরুর ব্যাপারে হতে পারে একটি বড় হাতিয়ার। ডা. হাসান বইটি লিখতে গিয়ে অনেক প্রমাণ হাজির করেছেন। সেগুলো যুদ্ধাপরাধ নিয়ে জানার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।