User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আজ যে "মান" বাংলায় গদ্য লিখিত হয়, তার ভিত্তিটা নির্মিত হয়েছিল উনিশ শতকে। গড়ে দিয়েছিলেন কিছু অসাধারণ মানুষ। এই নির্মাণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল নির্মাতাদের সামাজিক অবস্থান। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর উনিশ শতকের বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ বইয়ে তাঁদের আটজনকে আলোচনার জন্য নিয়েছেনঃ রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, প্যারীচাঁদ মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ, ভূদেব মুখোপাধ্যায় এবং মীর মশাররফ হোসেন। এঁরা আক্ষরিক অর্থে অসাধারণ ছিলেন, কারণ হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষদের সাথেই এঁদের ছিল অনতিক্রম্য দূরত্বঃ ভাষিক ও সামাজিক উভয় অর্থেই। অর্থাৎ এঁরা অবস্থান করছিলেন সেই বৃত্তের বাইরে যাকে আমরা বলতে পারি জনসমাজ। সি.ই.চৌ তাঁর অসামান্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন এঁদের প্রায় সবাই ছিলেন ঔপনিবেশিক আধুনিকতাবাদ দ্বারা আচ্ছন্ন; যে আধুনিকতা উপনিবেশের মানুষকে মাটি থেকে ক্রমে দূরে সরিয়ে দেয়। প্রায় লিখতে হল, কারণ ক্ষণজন্মা কালীপ্রসন্ন সিংহ (যাঁর ছায়া রয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "সেই সময়" উপন্যাসের নবীনকুমার চরিত্রটির মধ্যে) ছিলেন অনন্য, এই অর্থে যে তিনিই এঁদের মধ্যে একমাত্র যিনি ধরতে পেরেছিলেন এই অন্তঃসারশূন্য আধুনিকতার স্বরূপ এবং তা অমর করে রেখে গেছেন 'হুতোম প্যাঁচার নকশা'-য়, যদিও প্রতিভায় বিদ্যাসাগর বা বঙ্কিমের সাথে কোনো তুলনাই হয় না তাঁর। রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের সমাজসংস্কার, বঙ্কিমের হিন্দুত্ব-আচ্ছন্ন জাতীয়তাবাদ, অক্ষয়কুমারের ধর্মনিরপেক্ষতা-বিজ্ঞানমনস্কতা, প্যাঁরীচাদের মুখের ভাষার কাছাকাছি উপন্যাসরচনা, ভূদেবের রক্ষণশীলতাঃ এই সব কিছুই মূলত ব্রিটিশ-পরিকল্পিত উপায়ে (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত) সৃষ্ট ও বিকশিত হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের পাটাতনের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরেছে; সামান্যতম প্রভাব ফেলেনি হিন্দু-মুসলমান বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে, চর্চিত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না! মীর অবশ্য মুসলমান জমিদারের নিষ্ঠুরতা নিয়ে লিখেছেন "জমিদার দর্পন" এবং সেখানে কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে মুসলমান সমাজের বাস্তবতা, কিন্তু সেই বই-ও অবশ্যম্ভাবীরূপে (মীরের উচ্চ সামাজিক অবস্থানের কারণে) শেষ হয়েছে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার প্রশস্তিতে। মনে রাখতে হবে, মীর দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পনের বিরোধিতা করেছিলেন, কারণ, মীরের মতে, নীল দর্পনে দীনবন্ধু মিত্র ভারতবাসীর প্রতি ইংরেজের যে "দেব ভাব, প্রজার প্রতি মায়া মমতা স্নেহ এবং ভালোবাসার ভাব" (!!!) আছে তা চোখে দেখেও প্রকাশ করতে পারেন নাই। উনিশ শতকের বাঙালী সমাজকে বোঝার জন্য; যে উনিশ সমাজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের একুশ শতকের সমাজের বাস্তব ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি; আমাদেরকে বাংলা গদ্যের ভিত্তিপ্রস্তুতকারীদের সামাজিক অবস্থানকে বুঝতে হবে, নইলে অন্ধভক্তি বা প্রত্যাখ্যানের প্রবণতা গ্রাস করতে পারে, যার কোনোটাই আমাদের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির জন্য মঙ্গলজনক নয় শেষ অবধি। সেই কাজে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর "উনিশ শতকের বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ" একটি অবশ্যপাঠ্য মূল্যবান গ্রন্থ।