Our User Product Reviews

Very nice book.

nice

ব্যক্তিগতভাবে আমার কেন যেন মনে হয় মেয়েদের অবস্থা কখনোই ভালো ছিল না। আর সেক্ষেত্রেও, 'অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর' :p এই বইটি উনিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতবর্ষের মুসলিম নারীদের 'অবরোধ-প্রথা'র চিত্র তুলে ধরে। আগা-গোড়া পড়তে হবে, উৎসর্গলিপি থেকে একেবারে পাদটীকা পর্যন্ত। একবিংশ শতাব্দীতে বসে, বইটি পড়লে মনে হয় যেন রুপকথার গল্প পড়ছি। ঘটনাগুলো কল্পনার সীমা অতিক্রম করে যায়, মানুষ এমনও হয়? সেই সমাজেরই একজন 'নারী' হয়ে বেগম রোকেয়া কতটা চিন্তাশীল লেখনী রেখে গেছেন আমাদের জন্য। বোধ উপলব্ধি তো আছেই, এরও বাইরে দ্যুতি ছড়িয়েছে তাঁর অসাধারণ উপমা আর রূপকের ব্যবহার। ভ্রাতা ও ভগিনীগণ! আ মাস্ট রিড!

নারী শিক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে এই নারীর পরিচয় পাই সেই স্কুলে থাকতেই। কিন্তু ভাগ্যের ফের এই যে তাঁর সমন্ধে ভালো করে জানতে, বুঝতে কেটে গেলো অনেক সময়। বেগম রোকেয়া সাখায়ত হোসেন এর কথা বলছি! তাঁর লেখনীর তেজ কত দীপ্তময় তা তাঁর লেখা না পড়লে জানা সম্ভব নয়, কাউকে বোঝানোও সম্ভব না। তিনি সমাজের অন্ধ বিশ্বাসকে এমন করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন সেই সময়ে যা অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি বর্গ চিন্তাও করেন নি। নিজের ভিতরে নারী সমাজের দুঃখ দুর্দশা দেখে দেখে মর্মাহত প্রতিবাদ করার ভাষা খুঁজে পান লেখার মধ্য দিয়ে। সাহসী সেই পদক্ষেপগুলি অন্যতম এই বই "অবরোধবাসিনী"! ইসলামের দোহাই দিয়ে নারীকে দাবিয়ে রাখার সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গির তারই প্রতিবাদ যেন এই বই, পর্দা প্রথা শুধু যে মুসলিম নারীদের মধ্যেই প্রচলিত তা কিন্তু নয়। বরং অনেক হিন্দু নারীদেরও এই পর্দা প্রথা মেনে আসতে হচ্ছে যুগের পর যুগ। এই পর্দা প্রথা ও ইসলামের কঠিন অনুশাসনে নারীকে কত অসুবিধা ও নির্মমতার শিকার হতে হয়েছে তা ব্যক্ত হয়েছে ই বইটির মধ্য দিয়ে। এই বইটির ইদ্দেশ্যে ইসলামের পর্দা প্রথা বা অনুশাসনের সমালোচনা নয় বরং কট্টরপন্থি মৌলবাদীদের প্রতি কিছু ঘটনার উল্লেখ যাতে তারা বুঝতে পারে তাদের অনমনীয়তার ফলে কত হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটতে পারে। এই কট্টরপন্থি যে শুধু পুরুষতান্ত্রিক তা কিন্তু নয় বরং অনেক নারীরাও এই ক্ষেত্রে সমান তালে এগিয়ে থেকেছে! সেই সমস্ত কিছু গল্পের সমাবেশ এই বই!

ভালো বই

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের 'অবরোধ-বাসিনী' বইটির নাম আপনারা সাবাই শুনেছেন। কিন্তু অনেকেই পড়েননি। বইটি তে তিনি তৎকালীন সমাজের নারীদের অবস্থা তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন। বইটির উৎসর্গলিপির কিছু অংশ আমি আপানাদের সাথে শেয়ার করছি। 'আমার স্নেহময়ী জননী অবরোধ প্রথার অত্যন্ত পক্ষপাতিনী ছিলেন। এ স্থলে আমার শৈশবের একটি ঘটনা মনে পড়িল। সে সময় কলিকাতা হইতে রঙ্গপুর যাতায়াত করিবার সময় সারা ঘাটে ষ্টীমার যোগে নদী পার হইতে হইত। একবার আমরা কলিকাতা আসিতেছিলাম; আমার কনিষ্ঠা ভগিনীর বয়স তখন মাত্র দুই বৎসর ছিল। সে এবং আমি আম্মাজানের সহিত পাল্কীতে, বন্দী হইলাম। সেই পাল্কী ষ্টীমার ডেকে রাখিয়া আমাদিগকে নদী পার করান হইল। তখন গ্রীষ্মকাল ছিল - বানাতের ওয়াড় ঘেরা রুদ্ধ পাল্কীর ভিতর আমার শিশু ভগিনী 'হোয়া-হোয়া' করিয়া কান্না জুড়িয়া দিল। আম্মাজান প্রানপনে তাহাকে চুপ করাইতে চেষ্টা করিতেছিলেন। কিন্তু পাল্কীর নিকট উপবিষ্ট কোন আল্লাহ্‌র বান্দাই ক্রন্দনরতা শিশুকে পাল্কী হইতে বাহির করা প্রয়োজন বোধ করে নাই। ভক্তির নিদর্শনস্বরূপ এই পুস্তকখানি তাঁহার পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করিলাম' উপরের লেখা হতে আপনি সেই সময়ের সমাজ সম্পর্কে ধারণা পাবেন। বইটি আপনার তালিকায় যোগ করুন ।