User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
দিন কয়েক আগে হকার এসে ঈদসংখ্যার মতো দেখতে একটা বই দিয়ে গেল। প্রথম আলো কিশোর নববর্ষ সংখ্যা ১৪১৯। পড়ার জন্য নতুন কিছু পেয়ে মনটা খুশিতে ভরে উঠল ছেলেবেলার মত। ছেলেবেলায় হকার ‘কিশোর বাংলা’ দিয়ে যেত। মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়তাম। সেই আনন্দময় স্মৃতি স্মরণ করে আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কিশোর নববর্ষ সংখ্যার সূচিপত্র পড়ে দেখে খুশির মাত্রা গেল বেড়ে । কী নেই এতে। উপন্যাস, ভৌতিক উপন্যাস, গল্প, রম্য গল্প, রহস্য গল্প, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, বিশেষ রচনা, ছড়া, কার্টুন, ছড়াটুন, প্রকৃতি, ম্যাজিক। তাই বলছিলাম ২৫৬ পৃষ্ঠার দুই মলাটের ভিতর কী নেই। সংখ্যাটি সম্পাদনা করেছেন আনিসুল হক। ২৫৬ পৃষ্ঠা ভরিয়ে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন বোঝা গেল। সেই সঙ্গে চমৎকার একটি সম্পাদকীয়ও লিখেছেন তিনি। বিখ্যাত বাংলাদেশি প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের শিল্প-সাহিত্য, নাটক, সংগীত আর মানুষের মর্ম বুঝতে পারতে হবে। ... কাজেই শুধু পরীক্ষার পড়া পড়লে চলবে না, অন্য সব আনন্দের খবরও রাখতে হবে। প্রথম আলো তাই তোমাদের দিল এই আনন্দের সন্ধান।’ শামসুজ্জামান খান- এর লেখার নাম ‘আমাদের প্রাণের উৎসব।’ লেখাটি বাংলা নববর্ষ নিয়ে। বাঙালির জীবনে নববর্ষ কীভাবে মিশে আছে এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরে সেই উৎসবটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটই লেখার বিষয়বস্তু। আর পয়লা বৈশাখ যে ক্রমেই এক সুবৃহৎ অসাম্প্রদায়িক মৈত্রীর বন্ধনে রূপ নিচ্ছে তারও ইঙ্গিত রয়েছে নিবন্ধটিতে। হুমায়ূন আহমেদ শৈশবের স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন । বরারবরের মতোই তুমুল লিখেছেন। হুমায়ূন আহমেদ তীক্ষ্ম স্মৃতিশক্তির অধিকারী । আসলে স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ম না হলে লেখক হওয়া যায় না। অনেকেরই স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ম; তবে লেখার জন্য ছেলেবেলার স্মৃতি মনের মধ্যে লালন করতে হয়, এবং সেই স্মৃতি প্রকাশ করতে কঠোর সাধনা করতে হয়। এই তিন মিলেই হুমায়ূন আহমেদ। ‘বৈশাখে প্রকৃতির রং’ মোকারম হোসেন- এর একটি অনবদ্য রচনা। হৃদয়গ্রাহী ভাষায় বৈশাখ মাসের ফুলফলের রঙের বর্ণনা করেছেন এই বিশিষ্ট নিসর্গবিদ। এভাবে- ‘আমাদের চারপাশে যখন জারুল, সোনালু আর কাঠগোলাপের ফুলগুলি ফুটতে শুরু করে তখন টুকটুকে লাল রঙের কোনো ফুল থাকে না। প্রকৃতিতে সেই লাল রঙের শূন্যতা দূর করতেই আসে কৃষ্ণচূড়া ফুল।’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর উপন্যাসের নাম ‘মানিক-রতন এবং কুংফু গাড়ি।’ শিরোনাম শুনেই বোঝা যায় কী মজার একটা লেখা। আসলেই তাই। উপন্যাসটা কবি মানিক এবং বৈজ্ঞানিক রতন -এর মজার মজার কান্ডকারখানা । গল্পটা অবশ্য বলছি না। আমি শুধু বলব মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন ব্যস্ত মানুষ। তিনি এত লেখার সময় পান কখন! অধ্যাপক আনিসুজ্জামান রবীন্দ্রনাথের কবিতার ওপর ছোট একখানি নিবন্ধ লিখেছেন। দু পাতার ছোট লেখা, অথচ অসম্ভব প্রাণর্স্পশী। কোরানত্যা দ্যাশাতেলপ্যারো কোকো-র সমুদ্র অভিযান নিয়ে লেখা ‘ভিভা লা বাংলাদেশ" লেখাটিও অনবদ্য। সমুদ্র অভিযান ছাড়াও মুসা ইব্রাহীম এর পর্বত অভিযান এবং তারেক অণু-র মেরু অভিযানও ঠাঁই পেয়েছে কিশোর নববর্ষ সংখ্যায়। কবি বেলাল চৌধুরীর গল্পের নাম ‘তাঁর সময়ের আগে।’ গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। কাজেই আমাদের এই বিদগ্ধ কবিটি এবার গল্পকার হয়ে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় আলো ফেলেছেন। কিশোর নববর্ষ সংখ্যায় মেহেদী হক- এর লেখা এবং আরাফাত করিম- এর আঁকা কমিকস ও আছে। তবে আজকাল আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কমিকস তেমন পড়া হয়ে ওঠে না। ছেলেবেলায় এই জিনিসটা জন্য অধীর হয়ে থাকতাম। কমিকস ছাড়াও আছে সাদাত- এর কার্টুন ‘টমাটো’। সংখ্যাটিতে অন্য যাদের কার্টুন এবং কমিকস রয়েছে তারা হলেন আহসান হাবীব, শাহরিয়ার, তারিকুল ইসলাম শান্ত এবং আরও অনেকে ... ‘দেখা হবে কবরে’-এই শিরোনামে একটি ভৌতিক উপন্যাস লিখেছেন শেখ আবদুল হাকিম। নামটাই কেমন গা ছমছমে। পড়তে বসলেও তেমন মনে হয়। শেখ আবদুল হাকিম রহস্য-রোমাঞ্চ বিষয়ে অভিজ্ঞ লেখক। তিনি পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার কলাকৌশল জানেন। এই উপন্যাসেও সেই নজীর রয়েছে। কিশোর নববর্ষ সংখ্যাটি বিচিত্র সব লেখার উপকরণে ঠাসা। যেমন, ‘জুলফি -কাহিনি’ নামে একটি রম্য-গল্প লিখেছেন আহসান হাবীব। কে না জানে রম্যগল্প লেখা কেমন শক্ত। অথচ আহসান হাবীব কী সহজেই না উতরে গেলেন! বিখ্যাত মানুষদের ছেলেবেলা কিশোর নববর্ষ সংখ্যাটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। বিল গেটস -এর ছেলেবেলার ওপর এক পাতার ছোট লেখাটি লিখেছেন পল্লব মোহাইমেন। শৈশব -এর কাহিনি থেকে ষ্টিভ জবসও বাদ পড়েন নি; তাঁকে নিয়ে লিখেছেন নাইর ইকবাল। আরও যাদের ছেলেবেলা রয়েছে তারা হলেন আফজাল হোসেন, তিশা এবং শচীন তেন্ডুলকার। দুরন্ত শৈশব পর্যায়ে জানা যাবে ক্রিকেটার মাশরাফি, সাকিব এবং মুশফিক এর ছেলেবেলার মজার ঘটনা। আসলেই মজার। যেমন সাকিব- এর বাবা চাইতেন না যে তাঁর ছেলে ক্রিকেট খেলুক। তিনি রাগ করে সাকিব- এর ব্যাট কেটে ফেলতেন! রফিকুন নবী মনে করেন ... কার্টুন আর ছড়া মিলিয়ে হয় ছড়াটুন। তাই লিখেছেন আমাদের প্রিয় রফিকুন নবী। ‘ডেঙ্গা-মশা’ শিরোনামে ছড়াটির চারটে লাইন তুলে ধারার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছি না। যেই করলাম ঠাস এক নিমিষে পুন-পুনানি গুন-গুনানি নাশ! কিশোর নববর্ষ সংখ্যায় আরও ছড়া লিখেছেন আল মাহমুদ, আমীরুল ইসলাম, ফারুক নওয়াজ, আলম তালুকদার, টোকন ঠাকুর, দীপংকর চক্রবর্তী, সারওয়ার-উল-আলম। কবি বেলাল চৌধুরী ছাড়াও কিশোর নববর্ষ সংখ্যায় গল্প লিখেছেন আন্দালিব রাশদী, সেলিম হোসেন, খসরু চৌধুরী, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, এবং ধ্রুব এষ। রহস্য গল্প লিখেছেন মশিউল আলম। ‘রহস্যের দ্বীপ’ নামে একখানি কিশোর রোমাঞ্চ উপন্যাস লিখেছেন রকিব হাসান। আমরা জানি কিশোর অ্যাডভেঞ্চার লেখায় রকিব হাসান সিদ্ধহস্ত। এবারও সেই প্রমাণ পেলাম। পাঠককে চেনা-অচেনা এক উত্তেজনাকর জগতে নিয়ে যেতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সে যাই হোক। আনিসুল হকও একটি উপন্যাস লিখেছেন। সেই উপন্যাসের নাম: ‘একাত্তরের একদল দুষ্টু ছেলে’। প্রেক্ষাপট, বোঝাই যায়, বাঙালির গৌরবময় সেই অগ্নিঝরা ক’টি মাস। উপন্যাসটিতে আনিসুল হক ঘটনা এবং দৃশ্যপটের এমন বর্ণনা দিয়েছেন যেন বই পড়ছি না হলে বসে সিনেমা দেখছি। ইফতেখার মাহমুদ লিখেছেন,‘চিড়িয়াখানার অন্দরে’। বোঝাই যায় লেখাটি কী নিয়ে। এখানে একটা কথা বলে রাখি। কিশোর নববর্ষ সংখ্যাটি কিন্তু নিউজপ্রিন্টে ছাপানো। তবে ছবি ঝরঝরেই ঠেকবে। বাঘ ও গন্ডারের ছবিগুলি ঝকঝকে এসেছে। কালি লেপটে যায়নি। সবশেষে বলব। কিশোর নববর্ষ সংখ্যাটির দাম দেখে আমার চক্ষু ছানাবড়া। মাত্র ৫০ টাকা! সুতরাং এক কথায় প্রথম আলো কিশোর নববর্ষ সংখ্যা ১৪১৯: ২৫৬ পৃষ্ঠার একটা জমজমাট বই। কম্পিউটারে মুখ গুঁজে বসে থাকা কিশোর-কিশোরীরা বইটি হাতে তুলে নেবে কিনা এখন দেখার বিষয় সেটাই।