User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন। মৃত্যু নিয়ে বই খুব কমই দেখা যায়।
Was this review helpful to you?
or
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়- আবহমানকাল ধরে এ জিজ্ঞাসা খুঁচিয়ে যাচ্ছে উত্তরসন্ধানীদের। কিন্তু উত্তর অধরা। পৃথিবী সৃষ্টি, মানবসভ্যতা বিকাশের পর থেকে অদ্যাবধি এর গ্রহণযোগ্য কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ রহস্যময়তার ভিতর দিয়েই এগোচ্ছে সময়। সময়ের পরিক্রমায় ভাবুক মানুষের জিজ্ঞাসা, কৌতূহল আরো বাড়ছে যেন। জীবজগতে একটি সত্য প্রতিষ্ঠিত- যার জন্ম আছে, তার মৃত্যু অবধারিত। ব্যত্যয় নেই। তবু থেমে থাকে না জিজ্ঞাসা, রহস্যানুসন্ধানী মন ঠিকই খুঁজে বের করতে চায় সোনার হরিণ। এ অমীমাংসিত রহস্য, ‘গোলমেলে ব্যাপার’ নিয়ে পুরো একটি বই-ই লিখে ফেলেছেন জার্মানপ্রবাসী লেখক আব্দুল্লাহ আল-হারুন- মৃত্যু : একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা। নাম থেকে অনুমেয়, বইটির অবয়ব তথা বিষয়বস্তু ও গঠনকাঠামো। বাংলা সাহিত্যে মৃত্যুবিষয়ক বই সম্ভবত এটিই প্রথম। সুতরাং এটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনা, সন্দেহ নেই। মানুষের চিরন্তন ভাবনাকে লেখক আরো উস্কে দিয়েছেন। মানুষ জন্মগ্রহণ করে, তার বয়স বাড়ে, এক সময় মারাও যায়। কেউ কেউ রোগে ভুগে, দুর্ঘটনায় কিংবা অন্য কোনো কারণে ‘সময়ের আগেই’ মৃত্যুবরণ করে। এই যে মৃত্যু, কেন মৃত্যু হয়? মৃত্যুর পর কী থাকে- বেহেস্ত-দোজখ, স্বর্গ-নরক নাকি অন্য কিছু? তারপর কী, পুনর্জন্ম? আত্মা কোথায় থাকে, কী করে তখন? এরকম নানা জিজ্ঞাসা দানা বেঁধে আছে। লেখক অবশ্য মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি, থেমে আছেন মৃত্যু, জীবনাবসান পর্যন্ত। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে মৃত্যু-ব্যবচ্ছেদে নেমেছেন। তাঁর এই জিজ্ঞাসা তৈরি হওয়ার পিছনে ভূমিকা রেখেছে হজপিস হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা। জার্মানিতে হজপিস হিসেবে লেখক কয়েক শ মৃত্যুপথযাত্রীকে সঙ্গ দিয়েছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাদের। দেখতে দেখতে মৃত্যু হয়ে পড়েছে তার কাছে ‘ডালভাত’। হজপিস হচ্ছে মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিকে সঙ্গদান, উজ্জীবিতকরণ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষই শেষ বয়সে এসে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। তাদের পাশে স্নেহ-ভালোবাসার ছায়া হয়ে কেউ থাকে না। জীবনসায়াহ্নে এসে তারা মুখোমুখি হোন দুঃসহ একাকিত্বের। এ চরম অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অপো করেন মৃত্যুর...। কেউ বেছে নেন স্বেচ্ছামৃত্যু আবার কেউ আবার মৃত্যুকে এতো বেশি ভয় পান যে পারলে মৃত্যুর অস্তিত্বই বিলোপ করে দেন! কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব হয় না, মৃত্যু ঠিকই নিজ দায়িত্ব পালন করে যায়। নীরবে নিঃশব্দে। একমাত্র এখানেই মানুষের কোনো বাহাদুরি বা জারিজুরি খাটে না! বিগত তিন দশক ধরে জার্মানিতে হজপিস প্রথা প্রচলিত। হজপিসের কার্যক্রমকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে অবদান রেখেছে সে-দেশের বিভিন্ন মিডিয়া। ধনী-গরিব, ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষকে সেবা দিচ্ছে হজপিস। এমনকি সে মানুষটি যদি ভয়ঙ্কর কোনো অপরাধীও হয়। জনসেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানের সুদ কর্মীদের উপর ভরসা করে অনেক মৃত্যুপথযাত্রীরা নিশ্চিন্তে পাড়ি জমান পরপারে...। বইটিকে ৪ পর্বে বিভক্ত করা হয়েছেÑজন্ম ও মৃত্যু, মুমূর্ষু ও মৃত্যুর সংজ্ঞা, মৃত্যুসঙ্গ, মৃত্যুসঙ্গ, মৃত্যুর দোরগোড়ায়। প্রথম পর্বে আলোচিত হয়েছে জন্ম-মৃত্যুর নানা দিক, জন্ম-মৃত্যুর ওপর ধর্মের নানা প্রভাব, সমাজ-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে। হিন্দু ধর্মের কথিত যে জন্মান্তর প্রথা তাও লেখকের কলম এড়ায়নি- হিন্দু ধর্মে জন্মান্তরের কথা বলা হয়েছে। বর্ণ প্রথাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই পুনর্জন্ম থিয়োরিটি খুবই কার্যকর। এতে করে নিম্নবর্গের অচ্ছুৎ হিন্দুরা বিভিন্ন সামাজিক নির্যাতন, অসম আচরণ, অবর্ণনীয় দারিদ্র্য, সীমিত সুযোগসুবিধা ও সামাজিক অত্যাচারকে নিজেদের আগের জন্মের কর্মফল মনে করে বর্তমান জীবনের দুঃখদুর্দশাকে বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নেন। বর্ণহিন্দুদের সেবা শুশ্রুষা, মলবাহক, জুতা সেলাই আর শ্মশানবন্ধু হয়ে এ জীবনে বিনা প্রতিবাদে, মুখ বুজে ভালো (!) কাজ করে পরবর্তী জীবনে উচ্চ বর্ণের হিন্দু হয়ে জন্মাবার সৌভাগ্য অর্জন করার স্বপ্ন দেখে! (পৃ. ১৩) মৃত্যু নিয়ে মনুষ্যসৃষ্ট যে ‘নিয়ম’ এবং রাজনীতি তার উৎকট প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিককালে, আমাদের দেশে। এক শ্রেণির বিপথগামী মানুষ নিজেদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে বেছে নিয়েছে অপরিণত বুদ্ধির কিছু কিশোর-তরুণকে। সুকৌশলে এদের মগজ ধোলাই করে বোঝানো হয়েছে- ধর্মের পথে ‘শহীদ’ হলে পরকালে রয়েছে অনন্ত শান্তির জান্নাত; ‘সামান্য’ একটু ত্যাগের বিনিময়ে যেটাতে প্রবেশ একদম ফ্রি! এই ফ্রি জান্নাত-লোভে জঙ্গিরা সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। এ প্রবণতা এখনও বিদ্যমান। মৃত্যুভয়কে উপো করে বেহেস্ত লাভের যে অভিলাষ- তা মৃত্যুর আরেক রূপ। এটাকে মৃত্যুর বিপরীত রূপ হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। কথায় বলে, কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। এমনকি মৃত্যুও। মৃত্যুর রাজনীতিকরণ হয়ে আসছে অনেক আগ থেকেই। প্রাচীনকালে হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথা চালু ছিলো। স্বামী অকালে বা স্ত্রীর আগে মারা গেলে স্ত্রীকে সহমরণ বেছে নিতে হতো। কারণ একটাই, নিজের ‘সতী’ পরিচয়টাকে সমুন্নত রাখা! সমাজসংস্কারকের আন্দোলনের ফলে এ অমানবিক প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি লেখক, গবেষক, কবি, মরমি সাধকদের ভাবনার অন্ত ছিলো না। রবীন্দ্রনাথ, হাসন রাজা, লালন, খলিল জিবরান, রাইনার মারিয়া রিলকে প্রমুখ নানামুখী ভাবনা রেখে গেছেন। কারো কারো ভাবনা হয়ে পড়েছে দ্বিমুখী তথা পরস্পরবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের উচ্চারণে নানা সময়ে, নানাভাবে ধরা দিয়েছে মৃত্যু- যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আজি হতে শতবর্ষ পরে, মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে; মরমি সাধক হাসন রাজা প্রদীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন- লোকে বলে বলেরে ঘরবাড়ি ভালা না আমার...। লালন শাহ’র খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়- এ উচ্চারণ আজও সর্বজনীন। খাঁচার পাখিকে কিছুতেই ধরা যায় না। পোষ মানানো যায় না। কতজনের আরো কত রকম ভাবনা- তার কি ইয়ত্তা আছে! খলিল জিবরানের জবানীতে ধরা পড়েছে খ্রিস্টান সাধু সেন্ট অগাস্টিন’র মৃত্যুভাবনা- ‘মৃত্যু শুরু হয় তখনি, যখন মানুষ জন্ম নেয়। বেঁচে থাকা মানেই মৃত্যুর সাথে বসবাস। জীবনকে যে গ্রহণ করে তাকে অবশ্যই মৃত্যুকেও স্বীকার করতে হবে। জন্ম নেবার জন্য আবশ্যিক ও একমাত্র পূর্বশর্তটিই হলো মৃত্যুবরণ। আমরা জন্ম নেবার পর থেকেই মুহূর্ত মৃত্যু তার দখলি স্বত্বের কথাটি আমাদের জানায়। দুঃখের বিষয়- এ মহাসত্যটি এড়িয়ে গিয়ে আমরা প্রায় সারাজীবনই অজ্ঞানতার ভান করি।’ (পৃ. ৩১) প্রায় প্রতিটি মানুষই সারাজীবন এমন কিছু কথা বয়ে বেড়ায় যা কাউকে বলতে পারে না। মৃত্যুকালে কাছের কোনো মানুষ কিংবা অনেক সময় বাইরের কারো কাছে দীর্ঘদিন বয়ে বেড়ানো গোপন কথাটি বলে ‘ভারমুক্ত’ হয়। কিন্তু বাংলাদেশে মৃত্যুপথযাত্রীরা এ সুযোগ পায় না বললেই চলে। চারপাশে এতো বেশি আত্মীয়-পরিজন, তারা মৃত্যুপথযাত্রীকে ধর্মীয় নানা আচার-আচরণ পালন করাতে ব্যস্ত থাকে। ফলে মৃত্যুপথযাত্রী যেন সময়ের আগেই মারা যায়! অন্যদিকে বিদেশে হজপিস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লেখকের সৌভাগ্য হয়েছে এমনই কিছু গভীর গোপন কথা শোনার। বলার অপো রাখে না, এসব ‘গূঢ়’ কথা চমকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশেও যদি আত্মীয়-পরিজনের আবেগের বাড়াবাড়ি, ‘ধর্মরীতি’ কিছুটা শিথিল করা যায় তাহলে মৃত্যুপথযাত্রীর মুখ থেকে শোনা যেতো গুরুত্বপূর্ণ কিংবা আপাত গুরুত্বহীন কিছু কথা। ‘কিনিক্যাল ডেড’ তথা আপাত-মৃত্যুবরণকারী কিছু লোকের অভিজ্ঞতা ভাবনা উদ্রেককারী। মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা মানুষদের কেউ কেউ ‘সেখানকার’ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় কেউ নিজেকে অন্ধকার সুড়ঙ্গ পেরোতে দেখেন, কেউবা আবিষ্কার করেন আলোকমূর্তি, আবার কেউ কেউ শরীরের বাইরে গিয়ে নিজের শায়িত শরীর দেখতে পান- এরকম আরো কতজনের কত অভিজ্ঞতা। অব্যাখ্যেয় এসব বিষয় ডাক্তারদের কাছে যেমন রহস্যাবৃত তেমনি ভুক্তভোগীরাও দ্বন্দ্বে থাকে; হাস্যাস্পদ হওয়ার ভয়ে এসব অভিজ্ঞতা কারো সাথে শেয়ার করে না। যদিও এ রহস্যময়তা ভেদ করতে ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু অধ্যাবধি কোনো সমাধান ধরা দেয়নি। এখনো আবিষ্কৃত হয়নি মৃত্যুর স্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা। চিরায়ত মৃত্যুকে লেখক এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন- মৃত্যুর হাজারটা ব্যাখ্যার (ধর্মীয় বা নিরপে) অধিকাংশের মধ্যে একটা সত্য পাওয়া যায়। পৃথিবীতে দেহত্যাগের সাথে সাথে চিরতরে এখানকার ‘পার্থিব জীবনে’র সমাপ্তি ঘটে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপর? আত্মা যে অবিনশ্বর, অয় তা সবাই স্বীকার করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম, ঘোর নাস্তিকেরা। তারা জীবনকে শুধু ‘বায়োলজিক্যাল-সংজ্ঞায়’ জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যেই সবকিছু সীমাবদ্ধ রাখেন। কিন্তু আত্মার বিনাশ নেই, এটা অনেক বড় বড় নাস্তিক বৈজ্ঞানিকরাও মানেন। তাহলে দেহ ছেড়ে ওই ‘অচিন পাখি’ কোথায় গেল? ইসলাম ধর্মেও পরকাল, আখেরাত, শেষ বিচারের কথা বলা হয়েছে। অন্য বড় ধর্মগুলিতেও ‘মৃত্যুর পরে জীবন’ সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত। (পৃ. ২১) মানুষ সবচেয়ে ভয় পায় কীসে? এ প্রশ্ন করা হলে ‘মৃত্যু’ই ভোট পাবে সবচেয়ে বেশি। অমরত্বের আকাক্সা মানুষের চিরন্তন প্রবৃত্তি। এ প্রবৃত্তিবলেই প্রাচীন মিশরে রাজাদের মরদেহ কবর না দিয়ে মমি করে রাখা হয়েছে। ‘পুনর্জন্ম’ হলে যেন তারা সহজে উঠে দাঁড়াতে পারেন। অমরত্বের আকাক্সায় সারা পৃথিবীতে শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ কী না করেছে, তার কি ইয়ত্তা আছে! সহজভাবে মৃত্যুকে দেখতে পারে এমন মানুষ কমই। সেই কম মানুষের একজন অস্ট্রিয়ান প্রয়াত কবি রাইনার মারিয়া রিলকে। তিনি অবলীলায় উচ্চারণ করেছেন- প্রভু, সবাইকে তার নিজের একক মৃত্যুটি দাও/জীবনের পথ বেয়ে যেন সে মরণের ঠিকানায় পৌঁছে যায়/তার নিজের প্রেম, মূল্যবোধ আর সংকটের হাত ধরে। এ বইয়ের লেখক আব্দুল্লাহ আল-হারুনও মৃত্যুকে সহজভাবে দেখার লোক। নইলে এমন কঠিন বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে, সে গবেষণার লিখিত রূপ মানুষের হাতে পৌঁছাতে সম হতেন না। গতানুগতিক বইয়ের ভিড়ে এ বই ব্যতিক্রম- সন্দেহ নেই। বইটি লেখক, পাঠক, গবেষক, অনুসন্ধিৎসু- সব শ্রেণির মানুষের চিন্তার খোরাক জোগাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনন্য এ বই উপহার দেয়ার জন্য লেখক ও উৎস প্রকাশন উভয়ই ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকারী। মৃত্যু : একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা : আব্দুল্লাহ আল-হারুন প্রকাশক : উৎস প্রকাশন প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১১ প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা পৃষ্ঠা ১২৮, দাম ২০০