User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সত্যি ঘটনা অবলম্বনে কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এই বইটিতে এক সাধারণ গ্রামের কিশোরীর বড় হয়ে ওঠা এবং দেশের স্বাধীনতার জন্যে অতুলনীয় আত্মত্যাগের কথা বর্ণিত হয়েছে। উপন্যাসের ভাষা খুবই প্রাঞ্জল এবং ঘটনা প্রবাহ পাঠকের মনে অপরিসীম আবেগ সৃষ্টি করবে।
Was this review helpful to you?
or
Boi ta peya khub excited chilam...Ak kothai oshadharon akta boi
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ।
Was this review helpful to you?
or
This novel is truly magical! One can easily get in to the leading character “Boori” which is written beautifully and realistically. Some may find their nostalgic childhood memories, memories of first love. By the tragic deaths of near and dears ones, the oppression of those Pakistani monster soldiers and by the final sacrifice of Boori, makes it impossible to hold the tears of eyes.
Was this review helpful to you?
or
??
Was this review helpful to you?
or
one of the best book
Was this review helpful to you?
or
The history of the Liberation War of Bangladesh can be found in how many wars can outline the tragedy of losing a relative. One such story is Selina Hussein's Shark River Grenade.This novel, written on the truth of Jessore's Kaliganj, will touch you, will shake your patriotism, bow your head in respect and bring tears to your eyes in distress. The last two pages of the story of immersing your child while saving the two freedom fighters are sure to make you cry.Water is free from the eyes of the freedom fighters, but for them, our tears certainly do not waste. Hundreds of Bangla mothers and sisters have written stories about the sacrifices they have left.The last few words, a woman named Budi, who has sacrificed her hubba-kala-kala boy to save the two freedom fighters hidden in her room, is difficult to hold back tears after reading these stories. "Rice. You are my treasure. I had a thorn in my chest with you. Today I have lifted that thorn in your blood." The mother of the baby immersed in her will cry out of you.
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস হাঙ্গর নদী গ্রেনেড এর কেন্দ্রীয় চরিত্র বুড়ি। সময়ের প্রয়োজনে বদলে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।কখনো কখনো সাধারন মানুষও হয়ে উঠে অসাধারন।তেমনি গল্পের বুড়ি। কৈশোরে যে ছিলো প্রচন্ড চঞ্চল,কৌতূহলী,উচ্ছল।সে ছিল অন্যান্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা।কিন্তু নাম নিয়ে বুড়ির খুব আক্ষেপ হয়।এমন নাম কারও হয় নাকি?কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পা রাখে বুড়ি। অসুস্থ বাবার মৃত্যু হানা দেয় দরিদ্র পরিবারে।ফল স্বরুপ দুই বাচ্চার বাবা বিপত্নীক গফুরের সাথে তার বিয়ে হলো।সেই চঞ্চল বুড়ি এইবার মা হয়ে ওঠে।কিন্তু তাতে বুড়ি সন্তুষ্ট না,তার নিজের গর্ভের সন্তান চাই।গফুর সিদ্ধ পুরুষ কেষ্যা বাবার দরবারে যায়।গফুর বলে বিশ্বাসটাই আসল।সেই বিশ্বাসেই জন্ম নেয় বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রইস।কিন্তু তাতে কি, মায়ের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলোনা।এর মধ্যে দেশে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। সলিম, কলিমও যুদ্ধে যায়।সারাজীবন পরাধীন থাকা বুড়িও চায় স্বাধীন হতে।তাইতো তার বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া দুই মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে নিজের সন্তানকে তুলে দেয় পাকহানাদার বাহিনীর হাতে।নিজের মাতৃত্বকে খুন করে সে দেশকে আগলেছে।বুড়ি কেবল একা রইসের মা না সে হয়ে উঠেছে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা।হাঙ্গর নদী গ্রেনেড কেবল একটা উপন্যাস আর বুড়ি সেই উপন্যাসের চরিত্র নয়।স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এমন হাজারো বুড়ি তাদের সন্তানদের হারিয়েছে। তার কোনো ঘটনা হয়ত আমরা জানি, কোনটা জানি না।
Was this review helpful to you?
or
সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’। কাহিনীটি যেমন সত্য, তেমন বেদনাদায়ক। একজন মায়ের দৃঢ়তা ও সাহসিকতার গল্প এটি। লেখক একজন মুক্তিযোদ্ধার বিবৃতিতে উপন্যাসটি রচনা করেন, যিনি ওই মাকে নিজ চোখে দেখেছেন। যশোরের কালীগঞ্জে, হলদিগাঁয়ে দুই ছেলের জনক গফুরের দ্বিতীয় স্ত্রী বুড়ি। মা মরা সলীম ও কলীমকে মাতৃস্নেহে বড় করেন তিনি। তাঁর গর্ভেও জন্ম নেয় এক পুত্রসন্তান রইস। সে সন্তানের মুখে কোনো দিন মা ডাক শোনা হয়নি তাঁর। রইস ছিলেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। যুদ্ধ শুরু হলে সলীম যুদ্ধে যোগ দেন আর কলীম বাড়ি দেখভালের জন্য রয়ে যান। গ্রামের রাজাকাররা জানিয়ে দেয়, সলীম একজন মুক্তিযোদ্ধা। সলীমকে না পেয়ে কলীমকে নির্যাতন করে বুড়ির সামনেই হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। এর পরপরই দুই মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে বুড়ির বাড়িতে আশ্রয় নেন। হানাদার বাহিনী যখন তাদের খোঁজে বাড়িতে আসে, বুড়ি তখন পড়ে যায় এক কঠিন পরীক্ষায়। একদিকে নাড়িছেঁড়া প্রতিবন্ধী রইস, অন্যদিকে দুই মুক্তিযোদ্ধা। তারপর কী হয়,তা জানতে হলে পড়তে হবে জনপ্রিয় এই উপন্যাসটি।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_ডিসেম্বর উপন্যাস: হাঙর নদী গ্রেনেড লেখকঃসেলিনা হোসেন ধরনঃ মুক্তিযুদ্ধ প্রকাশনীঃঅনন্যা মুল্যঃ১৫০ টাকা মুল চরিত্র:বুড়ি কাহিনী সংক্ষেপ: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতগুলো উপন্যাস লেখা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি গল্প হলো এই হাঙর নদীর গ্রেনেড। মুল চরিত্রে বুড়ি শব্দ টা দেখে হয়তো মনে হতে পারে এটা কোন বয়স্ক ব্যাক্তির জীবনের গল্প। কিন্তু আসলে সেটা সত্যি না। বুড়ি হচ্ছে গ্রামে বেড়ে ওঠা এক কিশোরীর নাম যার কিনা এই নাম পছন্দ না হলেও তাকে এই নামে ডাকতে ডাকতে, একসময় অপছন্দের নামটাই স্থায়ী হয়ে গেছে। সে গ্রামে বাস করা খুবই দুরন্ত মেয়ে, যার সারাদিন কাটে দস্যিপনা করে। এই মাঠ থেকে ঐ মাঠে, রেললাইনের ধারে, পাড়ায় পাড়ায় একা ঘুরে বেড়িয়ে যার দিন দিব্যি কেটে যায়। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একসময় দিন শেষে মাস তারপর বছর ঘুরে বুড়ির বয়স বাড়তে থাকে। গ্রামে সাধারনত মেয়ের বয়স বাড়লে আশেপাশের লোকজনের চোখে পড়তে থাকে সেই মেয়ে। তাই বুড়ির ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হলোনা। তাই কিছুদিনের মধ্যেই তার বিয়ে সম্পন্ন হলো আপন চাচাতো ভাই গফুরের সাথে। তবে বুড়ি ছিলো গফুরের ২য় বউ। ১ম বউ মারা যায় তাই আগের ঘরের ২ টা ছেলে আর নতুন বউ বুড়িকে নিয়ে শুরু হয় গফুরের নতুন জীবন। যতোই দিন যায় ততই গফুর বুঝতে পারে সে প্রথম বউ এর থেকে বুড়ি কে বেশী ভালোবাসে। সে মনে করো আগের কথা,কম বয়সে যখন তার সংসারের প্রতি কোন মায়া ছিলোনা এমনকি ছেলে হওয়ার পরেও অতো গুরুত্ব দেয়নি সংসারে কিন্তু বুড়ির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সে সবসময় বুড়িকে খুশি করার জন্য ওর মনের উপর কোন জোর করেনা। কিন্তু তারপরও গফুরের মনে অজানা এক আতঙ্ক ভর করে, সে বুঝি বুড়িকে বুঝতে পারেনা। কিন্তু আসলে বুড়ি সবসময়ই ব্যাতিক্রম,কঠিন মনের, সংসার জীবনের মায়া তাকে অতোটা টানেনা তাই তার কারো প্রতি নালিশ নেই। যেভাবে রাখা হয়েছে সেভাবেই থাকে সে কিন্তু মাঝে মাঝে বুড়ি উদাস হয়ে দুর আকাশে তাকিয়ে থাকে আর এই উদাসীনতা গফুরের কষ্টের কারন। এভাবে তাদের সংসার জীবন এগোতে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুড়ি অনুভব করে, তার একটা সন্তান প্রয়োজন।বুড়ি বুঝতে পারে,নারীর টান বলে একটা কথা আছে নিজের সন্তানের উপরে আর কোন সুখ নেই। কিন্তু অনেক প্রতীক্ষার পরেও সে কোন সন্তান আসার আভাষ পায়না। পরে অনেক অপেক্ষার পরে তার কোল জুড়ে আসে তার একমাত্র ছেলে সন্তান। এই সন্তান কে নিয়ে বুড়ির মায়া মমতার শেষ নাই। সারাক্ষণ যত্নে রাখে। কিন্তু সুখ হয়তো বেশীদিন কপালে থাকেনা তাই বুড়ির ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হলোনা। কিছুদিন পরেই বাচ্চার মধ্যে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলো বুড়ি। আস্তে আস্তে সে বুঝতে পারলো তার আদরের সন্তান আর দশটা বাচ্চার মতো স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠছেনা, অবশেষে বুঝতে পারে বুড়ি,ছেলে বোবা হয়েছে তাই কোনকিছুতেই বাচ্চার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। এদিকে গফুরের বয়স বাড়ার জন্য অসুখ এসে ভর করাই একসময় সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। তাই বুড়ির জীবনটা হঠাৎ করেই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এরপর সে তার আগের ঘরের ২ ছেলে সলিম কলিম আর নিজের ছেলে রইস কে নিয়ে দিন কাটাতে থাকে। সলিম বড় হওয়ার সাথে সাথে সংসারের দ্বায়িত্ব নিজে বুঝে নেই। একসময় বুড়ি সলিমকে তাগিদ দেয় বিয়ে করে বউ আনার জন্য এবং সলিম মায়ের কথায় প্রথমে রাজি না হলেও পরে মত দেয় বিয়ের জন্য। হঠাৎ দেশের অবস্থা খারাপ হতে থাকে, চারপাশে গুন্ঞ্জন চলে অধিকার আদায়ের জন্য,দেশে যুদ্ধ শুরু হবে। বুড়ির মনে অজানা আতঙ্ক ভর করে। তারপর যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় বুড়ির বড় ছেলে সলিম সিদ্ধান্ত নেয় যুদ্ধে যাবে, কলিম কে সম্পুর্ণ পরিবারের দ্বায়িত্ব দিয়ে চলে যায় সে যুদ্ধে। কলিম কি তার দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবে??? নাকি হায়েনাদের হাতে তার জীবন দিতে হবে?? এমন সময় গ্রামের মানুষগুলো নিজ নিজ ভিটে মাটি ছেড়ে পালাচ্ছে, বুড়ি কে অনেকবার বলার পরেও সে তার নিজের ভিটে বাড়িতেই থেকে যায়। আশেপাশের যুবকরাও মুক্তি বাহিনী তে যোগ দিয়েছে। তারপরেই হঠাৎ একদিন দুই মুক্তি এসে বুড়ির বাড়িতে আশ্রয় গ্রহন করে পাকিস্তানিদের তাড়া খেয়ে। ওদের আশ্রয় দেয়ার পরপরই পাকিস্তানিরা বুড়ির ঘরের দরজা ধাক্কাতে থাকে। কি করবে এখন বুড়ি?? নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য মুক্তিদের পাকি র হাতে তুলে দিবে?? নাকি অন্য কোন চমৎকার দৃশ্য অপেক্ষা করছে?? আর সলীম কি আদৌ যুদ্ধ শেষে ফিরতে পারবে?? এই উত্তর গুলো পেতে আপনাকে পড়তে হবে বইটি।। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ বৃহস্পতিবার রাতে বইটা হাতে নিয়েছি পড়ার জন্য, একটার পর একটা ঘটনা আমাকে পাতার পর পাতা পড়িয়ে নিয়ে গেছে, তারপর হঠাৎ করেই বইটা শেষ হয়ে গেলো। আমার চোখে তখন পানি। এতোবড় আত্নত্যাগ ও কি মানুষ করতে পারে??? তারপর যখন রুমমেটদের থেকে শুনি বইটি নাকি সত্যি ঘটনার অবলম্বনে লেখা। তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। যশোর এর কোন এক গ্রামে নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় এরকম ই আত্নত্যাগ করেছিলো কোন দুঃখিনী মা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়া আমার মনে দাগ কাটা,আনিসুল হকের মা উপন্যাসের পরে এখন নতুন করে যোগ হলো সেলিনা হোসেনের "হাঙর নদী গ্রেনেড"।।। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
হলদি গাঁয়ের মেয়ে বুড়ি. বাবা মায়ের বারো সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে সে. তাই বাবা নাম রাখেন বুড়ি. কিন্তু এ নাম মোটেই পছন্দ না বুড়ির. অনেক কান্নাকাটি করেও নাম পরিবর্তন করাতে পারেনি বুড়ি. বন জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো, গাছে চড়ে তেতুল খাওয়ায় আনন্দ পায় বুড়ি. রেলগাড়ির শব্দে ছুটে হারিয়ে যাওয়ার শখ হয় তার. বুড়ির চঞ্চলতার যেন শেষ নেই. মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই বুড়ির মায়ের. এমন দস্যি মেয়েকে বিয়ে করবে কে? বিয়ে দিলেই বা এ সংসার করবে কি করে? বুড়ির বাবা মারা যাওয়ার পর তাকে বিপত্নীক চাচাতো ভাই গফুরের সাথে. গফুরের দুই ছেলে সলীম ও কলীমকে মায়ের মতোই আদর দেয় বুড়ি. তবুও এক. শূন্যতা বয়ে বেড়াতে থাকে সে. নিজের সন্তান চাই তার. অনেক আশার পর তার কোলজুড়ে আসে এক ছেলে. নাম রাখে রইস. কিন্তু রইস বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী. মারা যায় গফুর বুড়িকে তিন ছেলের সাথে ফেলে রেখে. এদের নিয়েই চলতে থাকে বুড়ির জীবন. এর মধ্যেই শুরু হতে থাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ. হলদি গাঁয়ের রং পরিবর্তন হতে দেখে বুড়ি. কি হতে যাচ্ছে দেশে? কি হবে দেশের মানুষের? কি হবে বুড়ির? *************** ছোটবেলা থেকে বিজয়ের মাস আসলেই টিভিতে "হাঙর নদী গ্রেনেড" নামের চলচিত্রটি দেখতাম. খুব মনযোগ সহকারে দেখতাম. আস্তে আস্তে প্রিয় বাংলা চলচিত্রগুলোর একটি হয়ে যায় এটি. বইটি পড়ার পর যেন সে ভালোলাগাটা ভালোবাসায় পরিনত হলো. বুড়ি এক অসাধারন চরিত্র. সময়ের সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন হয়ে যাওয়াটা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন সেলিনা হোসেন. ছোট থেকে বৃদ্ধ হতে দেখা বুড়ির সাথে পাঠক যেন কয়েক দশক পাড়ি জমায়. মেয়ে, স্ত্রী ও মা থেকে বঙ্গমাতায় পরিনত হতে দেখা যায় বুড়িকে. নিজ সন্তানকে দেশের জন্য বন্দুকের গুলির নিচে বিছিয়ে দেওয়া এক মা বুড়ি. বইটি পড়ার সময় হারিয়ে গিয়েছিলাম ২০১৭ সাল থেকে. চলে গিয়েছিলাম বুড়ির সময়ে. পাড়ি জমিয়েছি তার সাথে. তার সাথে হেসেছি, রাগ হয়েছি এবং কেদেঁছি. এতটাই বাস্তবপূর্ন বর্নণা বইটিতে. আর রইস! সে তো এক স্বাধীনতার নাম. সবমিলিয়ে অসাধারন একটি বই.
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ : হাঙর নদী গ্রেনেড
Was this review helpful to you?
or
Everyone should read this book because we could use what this book teaches now.
Was this review helpful to you?
or
"হাঙর নদী গ্রেনেড" বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত একটি বাংলা ভাষার উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ সন্তানহারা মায়ের প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১ সালে সন্তানহারা মা বুড়ীর কান্না আমাদেরকে বারবার মনে করিয়ে দিবে এক সাগর রক্তে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা। মনে থাকবে সেই হাঙ্গরদের কথা, যারা আমাদের নদীতে আমাদেরই নির্বিচারে হত্যা করেছিল। সেই গ্রেনেড তুল্য ছেলেরা, যারা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমাদের জন্য রেখে গেছে স্বাধীনতা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা নামঃহাঙর নদী গ্রেণেড লেখিকাঃসেলিনা হোসেন প্রকাশনাঃঅনন্যা মূল্যঃ১৫০৳ ভূমিকাঃ কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের অন্যতম জনপ্রিয় ও হৃদয়গ্রাহী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস "হাঙর নদী গ্রেণেড"।এক সহজ সরল গ্রাম্য সাধারণ মেয়ের বড় হয়ে ওঠা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের গল্প বিস্তৃত করে এই উপন্যাসটি। কাহিনী সংক্ষেপঃ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট গড়ে ওঠে বুড়ি নামের চরিত্রকে কেন্দ্র করে।বারো ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বেভোগা মেয়েটি যেন এক মুক্ত বিহঙ্গ।গ্রামজুড়ে ঘুরে বেড়ানো,রেললাইনের ধারে বসে থাকা,ট্রেনের শব্দে মন আনচান করা,সংসার থেকে বিচ্ছিন্নতা মেয়েটির এই সব বৈশিষ্ট্যই যেন স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি।কিন্তু কোথায় সেই স্বাধীনতা?বড় ভাইয়ের চাপে পড়ে বুড়ি নামের কিশোরী মেয়েটি বাধ্য হয় তার চেয়ে বয়সে অনেক বড় দুই সন্তানের বিপত্নীক জনক গফুরের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে।এই বিয়েই যেন পরাধীনতা,বুড়ির পায়ে পড়িয়ে দেওয়া শিকল। বিয়ের পর সেই কিশোরী বুড়ি যেন সত্যিই বুড়ি হয়ে যায়।সংসার সামলানোর মাঝে ছুটে যেতে চায় অজানা কোনো দেশে।গফুর অনেক খুঁজেও বুড়ির মনের তল পায় না। কিন্তু একসময় নিয়তির ভাঙা গড়ার খেলায় বুড়ির কোল জুড়ে আসে তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে রইস।রইসের এই প্রতিবদ্ধকতার মাধ্যমেই লেখিকা হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন পাকিস্তানির স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে মুক ও বধির হয়ে যাওয়াকে। কালের খেয়ায় গফুরের মৃত্যু,বুড়ির সৎ দুই ছেলে সলীম,কলিমের বড় হওয়া,সলীমের বউ রমিজাকে ঘরে আনা,রমিজার ছেলে হওয়া এবং ৭ই মার্চে স্বাধীনতার ডাক..সবকিছুই যেন চলতে থাকে।একটা পরিবার বদলে যেতে থাকে। সলিল যুদ্ধে যায়,পাকবাহিনী এসে কলীমকে হত্যা করে।এই মৃত্যু বুড়িকে বদলে দেয়,বুড়ির মধ্যে কিসের যেন দামামা বেজে উঠে। হঠাৎ একরাতে প্রতিবেশী রমজানের মুক্তিযোদ্ধা ছেলে হাফিজ আর কাদের বুড়ির কাছে আশ্রয় চায়।তখনই বুড়ির বাড়ি হানাদার বাহিনী ঘিরে ফেলে,বুড়ির মনের মধ্যে জেগে উঠে এই ছেলেদের তার যেকোন কিছুর বিনিময়ে বাঁচাতেই হবে।তাই সেই দুরন্ত কিশোরী থেকে প্রৌঢ়া হয়ে উঠা বুড়ি অস্ত্র তুলে দেয় তার অনেক সাধনার ফসল রইসের হাতে।পাকবাহিনী রইসকেই মুক্তিযোদ্ধা মনে করে হত্যা করে,আর গ্রামের সাধারণ পুত্রহারা নারী হয়ে উঠে সকলের অসাধারণ জননী। উপন্যাসে জলিল,নীতা,রমিজা,রাজাকার মনসুর সহ আরো কিছু পার্শ্ব চরিত্র আছে যারা উপন্যাসে সমান অংশীদার হয়ে উঠেছে। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ লেখিকা মুক্তিযুদ্ধকে মূল কাহিনী না রেখে একজন নারীর,মায়ের ঐ সময়ের মানসিকতা বা ছোট থেকে বড় হওয়াকেই মূল কাহিনী হিসেবে রেখেছেন।তাই এটি আমার মতে পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস না।তবে বুড়ি চরিত্রের চিত্রণ বা ছোট বেলার কিছু করে দেখানোর স্পৃহা যেভাবে উপন্যাসে ব্যক্ত হয়েছে এবং উপন্যাসের শেষে এসে যেভাবে তা বলিদানের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে তাতেই যেন ফুটে উঠেছে ১৯৭১ সালে লাখো নারীর আত্মত্যাগ।সত্যিই যেন এক নদী হাঙরের জন্য একটি গ্রেণেডই যথেষ্ট। রেটিং:৩.৫/৫
Was this review helpful to you?
or
বইটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয় এ লেখা হয়েছে। অনেকজনার কাছেই শুনেছি বইটি ভালো এবং এটার একটি মুভিও আছে। আশা কড়ছি বইটি ভালো হবে।
Was this review helpful to you?
or
ঙর নদী গ্রেনেড মুক্তিযুদ্ধের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। ঘটনাটি ঘটেছিল যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামে। ঘটনাটি যিনি জেনে এসেছিলেন এবং সেই যোদ্ধা নারীকেও দেখে এসেছিলেন, তিনি ছিলেন আমার শিক্ষক। রাজশাহী মহিলা কলেজে অধ্যাপনার সময় আমি তার ছাত্রী ছিলাম। তার নাম অধ্যাপক আবদুল হাফিজ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন রণক্ষেত্রে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। বিজয় দিবসের দিন সকাল ১০টা নাগাদ তিনি ঢাকায় আমার সায়েন্স ল্যাবরেটরির কলোনির বাসায় এসেছিলেন। বেশিক্ষণ বসেননি তিনি। তিনি শুধু বলেছিলেন, একটি ঘটনার কথা বলতে এসেছি তোমাকে। এটা নিয়ে গল্প লিখবে। ১৯৭২ সালে গল্পাকারে ঘটনাটি লিখি। সমকালীন টেরেডাকটিল নামে তরুণদের একটি পত্রিকায় গল্পটি ছাপা হয়েছিল। পরে ১৯৭৪ সালে গল্পটিকে উপন্যাস আকারে লিখি। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র একজন যোদ্ধা নারী বুড়ি। যে দেশের মুক্তির জন্য দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের সন্তানকে পাকসেনাদের হাতে তুলে দেয়। কারণ যুদ্ধে এতোকিছু হচ্ছে তার কিছু করার নেই। একজন গ্রামীণ নারীর বোধটা এখানে কাজ করেছে। এই বুড়ি দুই সন্তানের জনক গফুরের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। সতিনের সন্তানদের উপেক্ষা না করে মাতৃস্নেহে বড় করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার সৎ ছেলে সলীম কলীম জল্পনাকল্পনা করে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবে। সলীম আর পাশের বাড়ির জলিল ভোররাতে সীমান্ত পার হয়ে যাবে। আর কলীম থাকবে পরিবারের দেখাশোনার জন্য। সলীম চলে যাওয়ার দুদিন পরে স্টেশনে যাওয়ার বড় রাস্তা দিয়ে মিলিটারিরা আসে হলদি গাঁয়ে। নদীর ধারে মিলিটারি ক্যাম্প করে। বুড়ি স্টেশনে যাওয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। কলীমের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয় ও। কারণ ওর বড় ভাই যে মুক্তিযুদ্ধে গেছে গ্রামের মনসুর মেম্বার সে খবর মিলিটারির কাছে পৌঁছে দেয়। মিলিটারিরা তাই সারা গাঁয়ে সলীমকে খুঁজে বেড়ায়। সলীমকে না পেয়ে ওরা কলীমকে ধরে নিয়ে যায়। মিলিটারির অমানুষিক নির্যাতনের পরও কলীমের মুখ দিয়ে সলীমের কোনো খবর বের হয়নি। ব্যর্থ হয়ে মিলিটারিরা কলীমের হাত দুটো পিছমোড়া করে বেঁধে বুড়ির সামনের এনে দাঁড় করায়। মা মরা যে ছেলেকে বুড়ি মাতৃস্নেহে বড় করে তুলেছে সেই বুড়ি দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণ শক্তিতে নিজেকে শক্ত করে রাখে। হায়েনাদের সামনে তার মাতৃ আবেগ প্রকাশ করে না। সারা ঘর তছনছ করেও যখন মিলিটারিরা মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো আলামত খুঁজে পায় না তখন তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ক্ষতবিক্ষত কলীমের অসহায়ত্ব দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না বুড়ি। তার নিজের জীবনের বিনিময়ে কলীমকে ছেড়ে দেয়ার মিনতি করে সে। সন্তানের জন্য মিলিটারির পা ধরতেও কুণ্ঠাবোধ করে না সে। কিন্তু মায়ের আর্তনাদ ভেদ করে মিলিটারির রাইফেলের গুলি কলীমের বুক চিরে বেরিয়ে যায়। এর কয়েক দিন পরই বুড়ির কাছ থেকে পাশের বাড়ির কাদের আর হাফিজ বিদায় নিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। মিলিটারিদের সন্দেহ হওয়া মাত্র তারা ওদের বাবা রমজান আলীকে ধরে নিয়ে যায়। বুড়ির বুকের ভেতর আগুন জ্বলে। ওর কেবলই মনে হয়, যদি রমিজার মাছ কাটা বঁটিটা দিয়ে ওদের কচু কাটা করতে পারতো। তাহলে হয়তো একটু হলেও শান্তি পেতো। কাদের আর হাফিজের নেতৃত্বে মিলিটারি ক্যাম্পে আক্রমণ চালায় একদল মুক্তিযোদ্ধা। কয়েকজন পাকসেনাকে ওরা মেরে ফেলে। কিন্তু গুলি ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে কাদের আর হাফিজ প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে বুড়ির ঘরে আশ্রয় নেয়। মিলিটারিরা আক্রমণ করতে ওদের পেছন পেছন ছুটে আসে বুড়ির উঠানে। বীর যোদ্ধাদের বাঁচাতে বুড়ি জীবন-মৃত্যুর সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজের নাড়ি ছেঁড়া ধন প্রতিবন্ধী রইসকে ঘুম থেকে টেনে তুলে মিলিটারির সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এরপর গুলির শব্দ। রক্তের স্রোতে ভাসতে থাকে রইস। আদরের ছেলের এই করুণ মৃত্যুতে বুড়ির মনের ভেতরের কষ্ট বেরিয়ে আসে এভাবে ‘তুই আমাকে একদিনও মা বলে ডাকিসনি রইস। আমি জানি একটু পরে হলদি গাঁয়ের মাটি তোকে বুকে টেনে নেবে। তুই আর কোনো দিন মা বলে ডাকবি না। আমিও আর অপেক্ষায় থাকবো না। কৈশোরে, যৌবনে যে স্বপ্ন আমাকে তাড়িত করতো বার্ধক্যে যে স্বপ্ন আমি মুছে ফেলেছিলাম এখানেই তার শেষ। রইস তুই আমার কতো আদরের, কতো ভালোবাসার, কতো সাধনার ধন রে! তবু তোকে নিয়ে আমার বুকে কাঁটা ছিল। আজ আমি তোর রক্তে সে কাঁটা উপড়ে ফেললাম।’ … এই আর্তির মধ্য দিয়ে একজন বীর যোদ্ধা নারীর সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা নামঃহাঙর নদী গ্রেণেড লেখিকাঃসেলিনা হোসেন প্রকাশনাঃঅনন্যা মূল্যঃ১৫০৳ রিভিউ: উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বারো ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট,কিশোরী মেয়ে "বুড়ি।"দুরন্ত বুড়ির গ্রামজুড়ে ঘুরে বেড়ানো,রেললাইনের ধারে বসে থাকা,ট্রেনের শব্দে মন আনচান করা,সংসার থেকে বিচ্ছিন্নতা এই সব বৈশিষ্ট্যই যেন একটি দেশের স্বাধীনতার কড়া নাড়া।কিন্তু একদিন বড় ভাইয়ের চাপে পড়ে বুড়ি নামের কিশোরী মেয়েটি বাল্য বিবাহের স্বীকার হয়। বিয়ে হয় বিপত্নীক গফুরের সাথে। গফুরের আগের পক্ষের দুই সন্তান আছে। সলীম ও কলিম। বিয়ের সাথে সাথেই সে মা হয়ে যায় সলীল ও করিমের। বিয়ের অনেক বছর পরে বুড়ির কোল জুড়ে আসে তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে রইস।তাকে নিয়ে কেটে যায়বুড়ির সময়। সময়ের পরিক্রমায় গফুরের মৃত্যু,বুড়ির সৎ দুই ছেলেসলীম,কলিমের বড় হওয়া,সলীমের বউ রমিজাকে ঘরেআনা,রমিজার ছেলে হওয়া এবং ৭ই মার্চে স্বাধীনতারডাক..সবকিছুর মধ্য দিয়ে একটা সহজ সাধারণ গ্রামের পরিবার বদলে যেতে থাকে।এরমধ্যেই একদিন সলিল যুদ্ধে যায়,পাকবাহিনী এসে নির্মমভাবে কলীমকে হত্যা করে। এই মৃত্যু বুড়িকে বদলে দেয়,বুড়ির মধ্যে কিসের যেন দামামা বেজে উঠে। বড় ছেলে ফিরে আসবে কি আসবে কি না তার অনিশ্চয়তা, মেজ ছেলের খুন হয়ে যাওয়ার পরেও কেন বুড়ি তার নিজের অবুঝ ছোট সন্তানকেই ঠেলে দিলেন মৃত্যুর মুখে? ছোটবেলা থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা বুড়ি কিভাবে '৭১ এর সময়ে দেশের আনাচে কানাচে থাকা অন্য মানুষগুলোর প্রতীক হয়ে উঠে তাই লেখিকা ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর এই উপন্যাসে। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ অনেকের মনে হতে পারে, ঘটনাটা হয়তো সত্যি নয়, কিন্তু ঘটনা সত্যি, যে বুড়িকে উপজীব্য করে এ উপন্যাস লিখিত, তার নিবাস যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামে। আমার কাছে এ উপন্যাস ভালো লেগেছে। এর রেটিং 4.5/5 https://www.rokomari.com/book/3910/হাঙর-নদী-গ্রেনেড
Was this review helpful to you?
or
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আমরা থাকি এলিফ্যান্ট রোডে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির কলোনির ভেতরে মনীষা বিল্ডিংয়ে। মাত্র দুই দিন আগে এই বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছি ইপিআরটিসির লাল রঙের কোচ নিয়ে আলবদরের সদস্যরা ঢুকেছে কলোনির ভেতরে। ১৪ ডিসেম্বরের ভোর ছিল সেদিন। সকাল সাড়ে আটটা কি নয়টা হবে। তারা তুলে নিয়ে যায় সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে কর্মরত বিজ্ঞানী ড. আমিনউদ্দিন ও ড. সিদ্দিক আহমদকে। মাঝে এক দিন পার হয়েছে। এলিফ্যান্ট রোড থেকে আনন্দ উল্লাসের ধ্বনি ভেসে আসছে। চারদিক থেকে খবর আসছে যে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। সকাল ১০টা অথবা ১১টা হবে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে চারদিক। শুনতে পাচ্ছি রেসকোর্স ময়দানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। প্রবল উত্তেজনা অনুভব করি। যাব কি রেসকোর্স ময়দানে? আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের একজন হতে? ভাবলাম, যাওয়াই উচিত। যেমন গিয়েছিলাম ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে। সেদিন এলিফ্যান্ট রোড পুরোটা হেঁটে যেতে হয়েছিল। জনস্রোতের ভেতর রিকশায় ওঠারও সুযোগ ছিল না। আজও হয়তো সেভাবেই যেতে হবে। ঠিক আছে, যাবই। ভাবতে ভাবতে ঘরের দু-চারটা কাজ শেষ করে তৈরি হতে শুরু করি। বের হওয়ার আগেই বাড়িতে আসেন আমার খালাতো ভাই আবু ইউসুফ খান। দেখেই চমকে উঠি। শৈশব থেকে দেখা ইউসুফ ভাই তিনি নন। তাঁকে একজন অপরিচিত মানুষ মনে হলো। একমুখ দাড়ি, পিঠে রাইফেল, পরনে মুক্তিযুদ্ধের ইউনিফর্ম। এক রঙের খাকি মোটা কাপড়ের প্যান্ট-শার্ট। যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি পাকিস্তান এয়ারফোর্সে চাকরির সূত্রে ডেপুটেশনে সৌদি আরব ছিলেন। যুদ্ধের নয় মাসে তাঁর আর কোনো খবর পাইনি। আজ তিনি আমার সামনে মুক্তিযুদ্ধের এক সাহসী যোদ্ধা। তাঁকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলাম। আপনি যুদ্ধ করেছেন ইউসুফ ভাই? বললেন, সৌদি আরব থেকে লন্ডন হয়ে পালিয়ে আসি ভারতে। তারপর ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করি। তাহের ওই সেক্টরের কমান্ডার ছিল মিত্রবাহিনীর সঙ্গে আমরাই ঢাকায় ঢুকেছি। আমাকে যেতে হবে। তোমার বাসায় আর বসব না। দ্রুতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, অন্যরা কেমন আছেন? তাহের ভাই, আনোয়ার, বেলাল, ডলি, জলি— তিনি একমুহূর্ত থেমে বললেন, কামালপুর যুদ্ধে তাহের আহত হয়েছে। হাঁটুর কাছ থেকে বাঁ পা উড়ে গেছে। ও তুরা হাসপাতালে আছে। ওর খুব সাহস। সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। আমার চোখে পানি দেখে বললেন, কেঁদো না। আজ আমাদের আনন্দের দিন। দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার গৌরবে দুঃখ ভোলো। ইউসুফ ভাই চলে যান। আমি মন খারাপ করে বসে থাকি। শহীদ, মৃত্যু, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষয়ক্ষতির তাণ্ডব, স্বজনহারাদের বেদনা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ—এসবের বিনিময়ে স্বাধীনতা। আজীবন বুকের ভেতর লালন করতে হবে এর সবটুকু। পরক্ষণে চমকে উঠি। বুঝতে পারি, পাশাপাশি ক্রোধ জমা হয়ে থাকবে রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে, যারা মাত্র এক দিন আগে ঢুকেছে এই কলোনির ভেতরে। কোথায় নিয়ে গেল ওরা দুজন বিজ্ঞানীকে? সেই মুহূর্তে এর বেশি কিছু ভাবার সাধ্য ছিল না। আধা ঘণ্টার মধ্যে আসেন আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল হাফিজ। না, তিনি ইউসুফ ভাইয়ের মতো পিঠে রাইফেল নিয়ে আসেননি। বললেন, আমি রণক্ষেত্রে সাংবাদিকতা করেছি। বিভিন্ন রণক্ষেত্রে ঘুরেছি। একটু আগে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছি। আমরাই প্রথম দল। ভাবলাম, তোমাকে দেখে যাই। আর একটি সত্যি ঘটনার কথা বলব। তুমি এই ঘটনা নিয়ে গল্প লিখবে। আমি তাঁর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকি। তিনি বললেন, যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের ঘটনা। পাশের ঘরের দুটি ছেলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় একজন মাকে সালাম করে যায়। তিনি তাদের জন্য দোয়া করেন। কয়েক মাস পরে মুক্তিবাহিনীর দল পাকিস্তানি সেনাদের একটি ক্যাম্প আক্রমণ করে। ওই বাহিনীতে ছেলে দুজন ছিল। ওদের গোলাবারুদ কম থাকায় ওরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে পিছু হটে। পালাতে থাকে ওরা। খেয়াল করে পাকিস্তানি সেনারা ওদের ধরার জন্য তাড়া করে আসছে। ওরা সেই মায়ের ঘরে আশ্রয় নেয়। বলে, ‘চাচি, আমাদের বাঁচান।’ এর মধ্যে সেনারা এসে বিভিন্ন ঘরের দরজায় লাথি দিতে থাকে। সেই মা বুঝতে পারেন সমূহ বিপদ। তিনি মনে-প্রাণে স্বাধীনতা চান। তাই ঠিক করেন, যোদ্ধা ছেলেদের বাঁচাতে হবে। সেনারা তাঁর দরজায় লাথি দিলে তিনি নিজের ছেলেটিকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেন। তারা তাঁর বসতির উঠোনে ছেলেটিকে গুলি করে চলে যায়। দুজন মানুষের কাছ থেকে যুদ্ধের দুই রকম ঘটনা শোনার পর সেদিন আমি আর বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। বিমূঢ় হয়ে বসে ছিলাম। স্বাধীনতা এমনই কঠিন এবং মর্যাদার অর্জন। আমার দুই চোখ ভরে পানি আসে। নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়। ঘটনাটি আমি অসংখ্যবার ভেবেছি। কেমন করে একজন মা এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটালেন স্বাধীনতা লাভের জন্য! এক অলৌকিক মানুষ মনে হয় সেই মাকে। তিনি আমার প্রাণের অচিন পাখি হয়ে ওঠেন। ঘটনাটি ভেবে আমার শরীর হিম হয়ে গেল। আমি কল্পনায় পাখির ডানা ঝাপটানো টের পেতাম। তারপর নিজের মুখোমুখি হয়ে নিজেকে তৈরি করেছি। নিজেকে বলেছি, লিখতেই হবে। স্বাধীনতার জন্য রণক্ষেত্রে জীবন দেওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনা একই সমান্তরালে অবস্থান করে। ইতিহাসের এই সত্য লিখিত না হলে পরবর্তী প্রজন্ম হারাবে যুদ্ধের গৌরবগাথা। আমি এভাবে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করি। কিন্তু বললেই লেখা হয় না। মাস ছয়েক পেরিয়ে যায়। তখন আমি বাংলা একাডেমীতে চাকরি করি। একদিন আমার অফিসে আসেন দু-তিনজন তরুণ। তাঁদের নাম এখন আর মনে নেই। ওঁরা বললেন, আমরা সমকালীন টেরেডাকটিল নামের একটি পত্রিকা বের করব। আপনি গল্প দেবেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। গল্প তো আমার মাথার মধ্যে জমা হয়ে আছে। ছোট আকারের একটি গল্প লিখি। গল্পের নাম কী রেখেছিলাম সেটা আর মনে নেই। সমকালীন টেরেডাকটিল যাঁরা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁরা পত্রিকার কপি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন। প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কাছ থেকে জানতে পারি, তিনি আমার গল্পটি সিনেমা করা যায় বলে ভেবেছিলেন। এই খবরে আমি প্রবলভাবে উৎসাহিত হই। গল্পটি উপন্যাস করার জন্য লিখতে শুরু করি। সেই সময় বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা উত্তরাধিকার সম্পাদনা করতেন কবি রফিক আজাদ। তিনি বললেন, আপনার ছোট উপন্যাসটি আমাকে দিন। উত্তরাধিকার-এ ছাপব। আবার আমার খুশি হওয়ার পালা। মনোযোগ দিয়ে লেখা শেষ করে রফিক আজাদকে দিই। তিনি লেখা প্রেসে পাঠান। ছাপার কাজ শুরু হয়। তখন লেটার প্রেসে ছাপার কাজ হতো। আমি যত্ন করে প্রুফ দেখি। একদিন একাডেমীর মহাপরিচালক রফিক আজাদকে ডাকলেন। উত্তরাধিকার-এর বর্তমান সংখ্যায় কী লেখা যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলেন। সূচি দেখে তিনি রাগতস্বরে বললেন, সেলিনা বেগমের লেখা উপন্যাস? এ লেখা যাবে না। রফিক আজাদ বললেন, পত্রিকার এই অংশ তো ছাপা হয়ে গেছে। তিনি আরও রেগে বললেন, ছাপা হয়েছে তো কী হয়েছে? বাদ দিতে বলেছি, বাদ দেবেন। শেষ পর্যন্ত রফিক আজাদকে আমার উপন্যাস বাদ দিতে হলো। আমরা যারা পত্রিকা বিভাগে কাজ করতাম, তারা সবাই শুকনো মুখে ভাবলাম, এই উপন্যাসের সের দরে বিক্রি করার ব্যবস্থা হলো। কিন্তু আমি দমলাম না। একটি পত্রিকায় ছাপা না হলো তো কী হলো, আরেকটি পত্রিকায় হতে পারে। আমি সাপ্তাহিক বিচিত্রা অফিসে গেলাম। সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলো। সব শুনে তিনি বললেন, আপনার উপন্যাস আমি ছাপব। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছাপা হলো হাঙর নদী গ্রেনেড। ছোট আকারের উপন্যাসটি বই হিসেবে প্রকাশ করে মুক্তধারা। পরবর্তী মুদ্রণের সময় উপন্যাসটি পরিমার্জনা করে আবার লিখি। এবার আকারে খানিক বড় হয়। প্রতিবারই মনে হয় কিছু থেকে গেল। আবার হয়তো লিখতে হবে। ১৯৮৭ সালে উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন আবেদীন কাদের। প্রকাশ করে বাংলা একাডেমী। ইংরেজি নাম The Shark, The River and The Grenade. ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের কারণে বইটি দেশের সীমানা অতিক্রম করে। ২০০৫ সালে আমেরিকার শিকাগোতে ডকটন কম্যুনিটি কলেজে চার সেমিস্টার পড়িয়েছিলেন অধ্যাপক এমিলি ব্লক। তিনি বইটি নেট থেকে নামিয়েছিলেন। প্যারিসের সরবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাসকাল জিঙ্কও বইটি নেট থেকে নামিয়েছেন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় সাউথ এশিয়ার সাহিত্য। এভাবে এই বই নানা দেশে ভ্রমণ করেছে। ভারতের কেরালা রাজ্যে মালয়ালাম ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তার পরও লেখকের তৃষ্ণার বাইরে যেতে পারেনি বইটি। প্রথম প্রকাশের ৩৮ বছর পরে আমি আবার এই উপন্যাসের পরিমার্জনা করছি। জানি না লেখকের নিজের ভেতর থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ কথা কি না। উপন্যাস লেখার নেপথ্য কথা প্রতিটি উপন্যাসের জন্যই ভিন্ন। অন্তত আমার ক্ষেত্রে এটি সত্যি। এই উপন্যাসের খুদে পাঠক আট বছর বয়সী সুমাইয়া বুশরা ভোর। উপন্যাসটি পড়ার পরে ও আমাকে প্রশ্ন করেছিল, রইসের খবর কোথায়? আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভেবেছিলাম, শহীদদের খবর খোঁজার জন্য আমাকে কি আরেকবার উপন্যাসটি লিখতে হবে? ততটুকু আয়ু কি পাব?