User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
it's a nice book
Was this review helpful to you?
or
অনেক ভালো একটা বই।একজন মানুষ জীবনের কত চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে সফল হয়েছে এটা তারই প্রতিচ্ছবি।
Was this review helpful to you?
or
excellent! inspiring real life experience
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ। অসাধারণ। অসাধারণ।
Was this review helpful to you?
or
এই বইটি পড়তে পড়তে একটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করছিলাম। তা হলো, হুমায়ূন আহমেদ-এর মা ছাড়াও আমাদের মা'রা যদি ডায়রি লেখতো এবং তা যদি বই আকারে প্রকাশ করা হতো, তাহলে কি অনন্যসাধারণ, বিষণ খারাপ লাগা আর ভালো লাগার মিশ্রণে এক সুন্দর বইয়ে পরিণত হতো! কারণ, মা হলো এমন একজন যিনি সারাজীবন অতিবাহিত করে sacrifice করতে করতে। তারা ডায়েরি লিখলে হয়তো এসব কষ্টের কথা চলে আসতো এবং তাদের মনের ভেতরের লুকানো কথাগুলো আমাদের পড়ার সুযোগ হতো ----------------------- হুমায়ূন, জাফর ইকবাল, আহসান হাবিব এই তিন রত্মের মা-এর স্মৃতিচারণমূলক বই হলো এটি... আমার এই পরিবার দেখে অবাক লাগতো যে, এক পরিবারে দেশবরেণ্য, প্রতিভাবান তিন ভাই! তাই পড়া শুরু করা এদের মা'এর লেখা বইটি... বইটিতে আয়েশা ফয়েজ আত্ম-গল্প শুরু তার বিয়ে থেকে। তার বিয়ে হয় এক বেকার বালকের সাথে, তারপর হুমায়ূনের বাবার পুলিশে চাকরি পাওয়া, তাদের প্রথম ছেলে হুমায়ূনের জন্ম, সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গাতে বদলি এবং ঐসব জায়গাতে বসবাসের অভিজ্ঞতা, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের টানাপুড়ান এবং কষ্ট, উনার শহীদ স্বামীটা স্বাধীন হওয়ার পরে যথাযথ সম্মান না পাওয়াতে তার ক্ষোভ.... এমন নিজ জীবনের বিভিন্ন ঘটনা উনি লিখেছেন। এখানে ছিল হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের এবং রসিকতার মিশেল.... হুমায়ূন, জাফরদের লেখা যে তাদের রক্তে আছে সেটার প্রমাণ হলো তাদের মা-এর লেখা। পড়লেই বুঝবেন কতটা পাখা হাতের লেখা! মনে হবে উনি আরো গল্প, উপন্যাস লিখেছেন... বেশ ভাল লেগেছে উনার লেখা ❣ হুমায়ূন হওয়ার আগে তাদের পরিবারের মানুষের যে কুসংস্কার তা উনি লিখেছেন বেশ রসিকতার সাথে! উনি যে কুসংস্কার পছন্দ করেন না তাও বলেছেন অকপটে... উনার লেখার অনেক স্থানেই উনার সাহস দেখে অবাক হতে হয়েছে!! বইটি পড়লেই বুঝবেন কতটা উন্নত আর উচ্চ মানসিকতার মহিলা ছিলেন ইনি! খুব ই ভাল লেগেছে এই বরেণ্য জননীর নিজ হাতে লেখা বইটি
Was this review helpful to you?
or
বইটার রিভিউ নাইবা করলাম। সব বইএর রিভিউ লিখা যায় না। একটা অবশ্য অবশ্য পাঠ্য! পড়তে পড়তে প্রায়ই চোখ ভিজে উঠলে অবাক হবার কিছু নেই। বরং, সেটাই খুব স্বাভাবিক :)
Was this review helpful to you?
or
এ এক মর্মস্পর্শী আখ্যান। এই গ্রন্থে আয়েশা ফয়েজ লিখেছেন কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের নির্মমতার শিকার হয় তাঁর স্বামী ফয়জুর রহমান । কারা ফয়জুর রহমানকে হত্যার নির্দেশ দেন, কবে এবং কীভাবে হত্যা করা হয় তাঁকে, কোথায় জানাজা হয় তাঁর - সব কাহিনির পূর্বাপর তুলে ধরেছেন আয়েশা ফয়েজ। তাই এই গ্রন্থ সত্যিই এক নির্মমতার আখ্যান ; এক অকালবিধবা নারীর মর্মস্পর্শী আখ্যান।
Was this review helpful to you?
or
অতীতে বিশেষ করে ৭১ সনের দেশ কেমন ছিলো তা আমরা বলতে পারব না। তবে এই বইয়ে তার কিছুটা দেওয়া আছে, তাতে কিছুটা আঁচ করা যেতে পারে। লেখার ধরনও ভালো।
Was this review helpful to you?
or
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ছয়টি সন্তানকে নিয়ে এক স্বামী হারানো নারীর জীবন সংগ্রামের গল্প রয়েছে বইটিতে। তার তিন সন্তানকে আমরা চিনি সুপ্রতিষ্ঠিত ও জননন্দিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তাঁরা হলেন-হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব। তারা বলেন, তাদের মা সেই দুর্দিনে তাদের আগলে না রাখলে তারা ভেসে যেতেন।সেই সংগ্রামী নারী ছোটবেলায় কেমন ছিলেন, কেমন ছিল তার সংসার জীবন, তার সংগ্রামের দিনগুলি সেসব কথাই তিনি তুলে ধরেছেন তার এই আত্নজীবনীতে। যেকোনো মানুষের কাছেই প্রেরণাদায়ক বই হতে পারব এটি। আমার কাছে এটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই।
Was this review helpful to you?
or
আয়েশা ফয়েজ, প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহ্মেদ, জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, কার্টুনিষ্ট আহসান হাবীব এববগ আরাে তিন কন্যাসন্তানের রত্নগর্ভা মা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ফয়েজুর রহমানের স্ত্রী। তাঁর স্মৃতিকথা শুধু একজন শহীদের স্ত্রীর বা লেখকের মায়ের স্মৃতিকথাই নয়, এক সংগ্রামী নারীর স্মৃতিকথাও|পড়ে ভালাে লাগার মত এক বই।
Was this review helpful to you?
or
এই বইটি যিনি লিখেছেন তিনি হলেন একজন রত্নগর্ভা।আমাদের সবার পরিচিত হুমায়ুন আহমেদ,মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবিবের মা তিনি। আয়েশা ফয়েজ যখন তার ছেলে জাফর ইকবালের সাথে দেখা করতে আমেরিকা গিয়েছিলেন তখন তিনি এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি লেখেন।কিন্তু তখন তিনি কখনোই ভাবেন নাই যে এটা বই হিসেবে ছাপা হবে। এই বইয়ে তিনি তার বিয়ে,তার ছেলে মেয়েদের জন্ম, বেড়ে ওঠা নিয়ে অনেক ঘটনা লিখেছেন। ১৯৭১ সালে তাদের জীবনে যে অনেক বড় ঝড় নেমে আসে তার বর্ণনা দিয়েছেন। ৭১ পরবর্তী একজন স্বামী হারা নারীর সংগ্রামের কথা তার স্মৃতিচারণ থেকে উঠে এসেছে।
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ উপন্যাস-জীবন যে রকম ঔপন্যাসিক-আয়েশা ফয়েজ প্রকাশনী- সময় ঔপন্যাসিক তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতকে যখন আন্তরিক এবং শৈল্পিকভাবে উপন্যাসে তুলে ধরেন তখন সেটি হয়ে ওঠে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস I "জীবন যে রকম" আয়েশা ফয়েজ এঁর আত্মজীবনীমূলক সহজ-সাবলীল-প্রাণবন্ত উপন্যাস I তিনি একাধারে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী এবং রত্নগর্ভা জননী I উপন্যাসে তিনি তাঁর বিবাহ-পরবর্তী জীবন থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী তুলে ধরেছেন I কাহিনির সূত্রপাত সেই ১৯৪৪ এর প্রেক্ষাপট হতে Iযে যুগে বিয়ের পর বছর না ঘুরতেই আসতো সন্তান Iঅথচ আয়েশা ফয়েজ চারটি বছর ধরে সন্তান না হবার প্রাচীন কিছু কুসংস্কার ,মানুষের কানাকানি সহ্য করে গেছেন সলজ্জ ঘোমটা টেনে Iপরবর্তীতে তিনি সন্তানসম্ভবা হলে সেকালের মানুষজনের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রকাশগুলো আমাদের আনন্দিত এবং মুগ্ধ করে তোলে ,সবকিছুকে ছাপিয়ে খুব সুন্দর করে তিনি সমসাময়িক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন Iএকে একে তার জীবন আলো করে জন্ম নিয়েছে ছয়টি সন্তান I জাফর ইকবাল স্যার প্রসঙ্গে মায়ের স্মৃতি-চারণমূলক লেখা পড়ে আনন্দিত হয়েছি - " বড় দুজন জন্ম থেকেই দুরন্ত, সে তুলনায় ইকবাল খুবই শান্ত Iআমার ধারণা ছিল দুজন চালাক চতুর বাচ্চার পর সে হয়তো একটু বোকাই বের হয়েছে Iকথাবার্তা বিশেষ বলেনা I বড় দুজনকে যখন জোর করে পড়াতে বসাই,সে কাছে চুপ করে বসে থেকে দেখে Iএকদিন দেখি সে নিজেও বই নিয়ে বসেছে ,ভাবলাম বুঝি পড়ার ভান করবে Iহঠাৎ দেখি ভান নয় ,সত্যিই পড়ে যাচ্ছে !তাকে তখনও কোন অক্ষরজ্ঞান দেয়া হয়নি Iনিজে নিজে পড়া শিখে গেছে I একবার কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম - "কী রে ,তুই কথা বলিস না কেন ?" চার বছরের বাচ্চা গম্ভীর হয়ে বললো - "বেশি কথা বলে কী লাভ ?" শুনে তার আব্বার সে কি হাসি ! " পৃষ্ঠা - ৩৫ আবার প্রচন্ড শূন্যতা উপলব্ধি করেছি একাত্তরের যুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে তাঁর স্বামী ফয়েজুর রহমান এঁর শহীদ হবার বর্ণনা পড়ে Iআরো ব্যথিত হয়েছি যখন জেনেছি নিয়তির পরিহাসে নিরুপায় হয়ে তাঁর পিতার শান্তিবাহিনীতে যোগ দেবার ঘটনা এবং মুক্তিবাহিনীর হাতে পিতা এবং ছোট ভাইয়ের মৃত্যু I স্বামীর পুলিশ-বাহিনীতে চাকরিসূত্রে তাদের ছিল বদলির জীবন I সংসার জীবনে তাদেরকে বিচিত্র জায়গায় বসবাস করতে হয়েছে Iবিবাহিত জীবনের পরে দুজনের ছোট্ট সংসার শুরু হয় সিলেটে ,দীর্ঘদিন পর সেখান থেকে জগদল নামক দিনাজপুরের উত্তর সীমান্তে , সেখান থেকে পচাগড় , পচাগড় থেকে রাঙামাটি,সেখান থেকে সিলেট, সিলেট থেকে বান্দরবান,বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম , এরপর বগুড়া , বগুড়া থেকে কুমিল্লা ,কুমিল্লা থেকে পিরোজপুর এবং এই পিরোজপুরে যাওয়া-ই ছিল মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার ভাগ্যের কালো অধ্যায় Iবাকিটুকু না হয় উহ্য রাখি পাঠকদের জন্য I তিনি উপন্যাসে কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছেন : [১] বাংলদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যারা অস্ত্র তুলে ধরেছিল তারা ছিল পুলিশ বাহিনী Iরক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে কত অসংখ্য পুলিশ শহীদ হয়েছিলো তার নিখুঁত হিসাব কি কোথাও আছে ? [২] ধর্মকে এরকম ক্ষুদ্র গন্ডি থেকে বের করে আনার আগে এই ধর্মের কাছে আমরা কী চাইতে পারি ? [৩] ধর্মের নামে মানুষের দুঃখ-কষ্টকে পুঁজি করে যারা ব্যবসা করে খোদা কি তাদের ক্ষমা করবেন ? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর ছয় সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ঢাকায় অনিশ্চিত জীবন শুরু করেন এবং প্রচন্ড ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তার নতুন জীবন শুরু হয় ১৯/৭ বাবর রোডের বাসায় I পরিশেষে বলবো আমাদের গর্ব , অহংকার,কালজয়ী কথা-সাহিত্যিক , প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের জন্মদাত্রীর দৃষ্টিকোণে উঠে আসা তাদের পরিবারিক উপকথা,জন্ম থেকে প্রতিষ্ঠিত হবার কাল অবধি অগণিত বিচিত্র ঘটনা এমনভাবে উঠে এসেছে যা পাঠককে সম্মোহিত করে রাখতে বাধ্য I তিনি হুমায়ূন আহমেদের জননী বলে নন , তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি এবং অকপট সরলতার কারণেই উপন্যাসটি পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে সক্ষম Iযাদের পিতা-মাতার রক্তেই মিশে আছে লেখার নেশা এবং শক্তি , তাঁরা তো আমাদের উপহার দিবেন-ই হুমায়ূন আহমেদ , মুহম্মদ জাফর ইকবাল , আহসান হাবীব এঁর মতো রত্ন I বাংলার মাটিতে আমরা সৌভাগ্য নিয়ে এসেছি I ভালো থাকুক আমার দেশ , আমার দেশের মানুষ , প্রতিটা প্রিয় মুখ হোক হাস্যোজ্জ্বল I
Was this review helpful to you?
or
বই রিভিউঃ জীবন যে রকমঃ আয়েশা ফয়েজ তিনি বই লিখেছেন কাজেই তার সবচে বড় পরিচয় তিনি একজন লেখিকা। তবে আর আরেকটি বড় পরিচয় তিনি হুমায়ন আহমেদ এর মা। আরী একটি পরিচয় তিনি মুক্তিযুদ্ধে একজন শহীদের স্ত্রী। বইটি মুলত লেখিকার আত্মজীবনী। নিজের জীবনের বিয়ের ঘটনা থেকে শুরু করেছেন। সময় টা ১৯৪৪। সময়ের সাথে মানুষের চিন্তা, দর্শন আর সমাজ কিভাবে পরিবর্তন হয় সেটা বুঝার জন্য এই বইটি পড়া যেতে পারে। একটা ছোট উদাহরন দেয়া যাক। তখন যৌথ পরিবারে স্বামী স্ত্রী দিনের বেলা কথা বলবে এটা ছিল স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ। স্বামী চাকরি পাবার রেজাল্ট পেয়ে দিনের বেলা স্ত্রীকে জানালেন। লেখিকার বর্ণনায়, ”তখন দিনের বেলা ঘরের ভিতর বউদের সাথে কথা বলা অকল্পনীয় ব্যাপার। সে সেসবের তোয়াক্কা না করে আমাকে খুজে বের করে বলল, ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম মনে আছে? আজ রেজাল্ট হলো, আমি একটা চাকরি পেয়েছি।“ ব্যক্তি জীবনের এরকম বেশ কিছু অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। সন্তান দের জন্ম নিয়ে স্মৃতি চারন করেছেন। বইটি গত হয়ে যাওয়া সময় কে আমাদের সামনে তুলে ধরে। একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী, স্বল্প আয়ে কষ্ট করে চলা, বিভিন্ন দুর্গম স্থানে বদলী এবং বিচিত্র জীবন অভিজ্ঞতা, বেশ কয়েকজন সন্তান নিয়ে এক মুখরিত পরিবার সব মিলে হয়ত এটি একটি আটপৌরে কাহিনী হতে পারত। কিন্তু বইটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। জীবনের এই সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, যে যুদ্ধে তার স্বামীকে পাকিস্তানী মিলিটারীরা গুলি করে মেরে ফেলেছে। তিনি ছেলে মেয়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কোথাও মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা সহ আশ্রয় পেয়েছেন , কেউ আবার নিজের বিপদ এড়াতে বাচ্চা কাচ্চা সহ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। নিজের জীবন বাজী রেখে কিভাবে যুদ্ধের মধ্যেই কিভাবে বিভিন্নজনের (যাদের মাঝে পুলিশ, মিলিটারী এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আছেন) সাথে দেখা করেছেন/করার চেষ্টা করেছেন স্বামীর খোজ পাবার জন্য তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “কাজলের আব্বাকে মে মাসের পাঁচ তারিখ বিকেল পাঁচটায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিল। সবাই সেটা জানত, আমাকে সামনাসামনি বলার কারো সাহস হয়নি।“ স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি পিরোজপুর গিয়ে স্বামীর দেহাবশেষ তুলে পোষ্ট মর্টেম করিয়েছেন, শহীদের মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা করেছেন এবং স্বাক্ষী প্রমাণ যোগাড় করে স্বামী হত্যার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তার বর্ণনা পাওয়া যায়। যে মামলা নিয়ে অগ্রগতি হয়নি। এই স্মৃতিটি লিখেছেন লজ্জা নামে শিরোনাম দিয়ে। তার বর্ণনায় “অনেক যত্ন করে খুনের কেসটা দাঁড় করানো হয়েছিল। যারা দেখেছে তাদের স্বাক্ষী প্রমাণ। যারা কবর দিয়েছে তাদের সাক্ষী প্রমাণ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সবকিছু। প্রধান আসামী ব্রিগেডিয়ার আতিক রশীদ। সাথে মেজর এজাজ।“ যুদ্ধ পরবর্তী সরকারের কাছে কি ধরনের আচরন পেয়েছেন তার কিছু বর্ণ্না পাওয়া যায়, যা বর্তমান চেতনার বাজারে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন দেশে একজন শহীদের স্ত্রী বাড়ি পাবার একজন একজন মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে যান। লেখিকার বর্ণনায়, “দীর্ঘ সময় পর মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা হলো, আমাদের দেখে একেবারে ক্ষেপে গেলেন, বললেন, পেয়েছেন কি আপনারা? প্রত্যেকদিন সকালে এসে বসে থাকেন?সকালে ঘুম থেকে উঠেই আর কত বিধবার মুখ দেখব?” পরবর্তীতে অবশ্য কাজলের বাবার এক কালের বিশেষ বন্ধু একজন জয়েন্ট সেক্রেটারীর সাহায্যে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির এলটমেন্ট পেয়েছিলেন। সে বাড়ি থেকেও তাকে সপরিবার বের করে দেয় তখনকার রক্ষীবাহিনী। সকালে তিনি পুলিশের সাহায্য চাইতে যান। “ভোর হতেই আমি বের হলাম। পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলাম। তারা বলল, আমরা গোলামীর পোশাক পরে বসে আছি! রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা কি করব?” আহমদ ছফার প্রচেষ্টায় গণকন্ঠ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে প্রেক্ষিতে রক্ষীবাহিনী প্রধান উনার সাথে যোগাযোগ করে একটি সমাধান করে দেন। উনার নামে বরাদ্দকৃত দোতলা বাসার নিচ তলা দেন রক্ষীবাহিনির একজন মেজর সুবেদারকে যিনি তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন, দোতলায় উনাদের থাকতে দেয়া হয়। বইটি সুখপাঠ্য। আর ঐতিহাসিক প্রক্ষাপটের কারনে বইটি পড়লে মনে হবে আপনি টাইম ট্রাভেল করে ফিরে গেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সময়ে। বইটির প্রকাশক সময় প্রকাশনি। রকমারী থেকে অন লাইনে কিনতে পারবেন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বই_পোকা_রিভিও_প্রতিযোগিতা বই পরিচিতি বইয়ের নাম-জীবন যে রকম। বইয়ের ধরন-ডায়েরী/আত্মজীবনী/স্মৃতিচারণ। লেখিকা-আয়েশা ফয়েজ। প্রকাশক-ফরিদ আহমেদ। প্রকাশনা-সময় প্রকাশন। প্রচ্ছদ-ধ্রুব এষ। মুদ্রিত মূল্য-১২৫ টাকা মাত্র। পৃষ্ঠা সংখ্যা-১১২ একটি ডায়েরীতে কি লিখা থাকে?একটি ডায়েরীতে একজন ব্যক্তির জীবনটাই-কালি কলমে লিখা থাকে।সেই জীবনের সুখ-দুঃখ,পাওয়া-না পাওয়া,আনন্দ-বেদনার একটা কাব্য হয়ে ওঠে ডায়েরীটি।শুধু সেই জীবন টিই নয়,সেই জীবনের সাথে জড়িত অসংখ্য মানুষের কথা,হাজারো স্মৃতি লিপিবদ্ধ হয় ডায়েরীতে। "জীবন যে রকম"-এমনি একটা ডায়েরী। "রত্নগর্ভা"মা আয়েশা ফয়েজ কে,কে না চেনেন?গল্পের জাদুকর,বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র,প্রবাদ পুরুষ হুমায়ূন আহমেদ,বিজ্ঞানী ও স্বনাম ধন্য লেখক জাফর ইকবাল স্যার,সবার প্রিয় কার্টুনিস্ট ও লেখক আহসান হাবীবের জননী তিঁনি। "তুমি আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দিব"-নেপোলিয়নের কথাটি যুগ যুগ ধরে সত্য। শিক্ষিত মা আয়েশা ফয়েজ তাঁর সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করেছেন। কিন্তু কিভাবে? হ্যা,পাহাড় সম দুঃখ-কষ্ট,ব্যাথা-বেদনা নিজের বুকে সয়ে,অসীম ধৈর্য্য, আর ত্যাগ স্বীকার করে নিজ সন্তানদের লালন পালন করেছেন।অভাব-অনটনের মধ্যে,নানামুখী অসুবিধা,বাঁধা-বিপত্তি কে সিংসীর সাহস আর ইস্পাতের ন্যায় দৃঢ় মনশক্তি নিয়ে মোকাবিলা করেই না তিঁনি আজ সমাদৃত হয়েছেন "রত্নগর্ভা"মা হিসেবে। পুলিশ অফিসার স্বামী শহীদ ফয়জুর রহমানের সাথে বিয়ে হয় তাঁর।সিলেট,জগদল,পঞ্চগড়,রাঙামাটি,চট্টগ্রাম,বগুড়া,কুমিল্লা,পিরোজপুরে স্বামীর সাথে থেকেছেন।১৯৭১ সালে স্বামী ফয়জুর রহমানকে পিশাচের মত নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা। তারপর?? হ্যা,স্বামীহীন অসহায়,অবলা মা টির জীবনে তারপর অনাকাঙ্খিত ঝড় নেমে আসে।অনিশ্চিত,শঙ্কাপূর্ন,ভয়াবহ একটা জীবন শুরু হয় তাঁর।ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে তিঁনি সহায়-সম্বলহীন,যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এখানে-ওখানে ঘুরে বেরিয়েছেন।হতাশ হননি কখনো।সিংহীর মত তেজী ছিলেন তিঁনি।হাজারো বিপদে বুকে আগলে রেখেছেন কলিজার টুকরা সন্তানদেরকে।মানুষের মত মানুষ করেছেন। সেসব কাহিনী ই তাঁর হাত দিয়ে লিখা হয়েছে বইটিতে। ১৯৯১ সালে মায়ের লেখা ডাইরী গুলো তাঁর ছেলেমেয়েরা ছাপানোর উদ্দ্যোগ নেন। বইটিতে মা আয়েশা ফয়েজের জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি আরো আছে তাঁর ছেলেমেয়েদের শৈশব,কৈশোরের অজানা অনেক কিছুই।যা জানতে পেরে সবারই ভাল লাগবে আশাকরি। আরেকটু কথা-বইটি পড়ার সময় কেন জানি অনেক করে মমতা অনুভব করলাম।খেয়াল করলাম গলাটা ধরে আসছে।চোখটাও ভিজে যাচ্ছে।বিশেষ করে যখন হুমায়ূন আহমেদ জন্ম নিলেন তখন।আহা!যে মানুষটি নেই আজ।কিন্তু তাঁর লেখাগুলোতে নিজের ভেতরের সমস্ত জগতটিকে দেখতে পাই।আর যখন,আয়েশা ফয়েজ বিশ বছর পর স্বামীকে মনে করে বলছিলেন,"এই যে দেখো,দেখো।চিনতে পারছো,এই যে তোমার বড় ছেলে কাজল।যে আজ হুমায়ূন আহমেদ নামে কত বড় সাহিত্যিক হয়েছে!" শুভকামনা সকলের জন্য।অসম্ভব সুন্দর সহজ ভাষায় প্রাণ চঞ্চল সাহিত্যরস সমৃদ্ধ ডায়েরী এটি।উঁনার লেখার হাত ছিল মানতেই হবে।আর এজন্যই আমরা হুমায়ূন আহমেদ,জাফর ইকবাল এর মত লেখক হয়তো পেয়েছি। হ্যাপি রিডিং। #রকমারি_লিঙ্ক https://www.rokomari.com/book/3975/জীবন-যে-রকম
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুন গৃহিণী বলতে সবসময় আমরা "সাধারণ একজন গৃহিণী" বলেই অভ্যস্ত। গৃহিণীরাও যে অসাধারণ, আমরা তা প্রকাশ করি না। এমনই একজন অসাধারণ গৃহিণী "আয়েশা ফয়েজ"। তবে নিজের পরিচয় থেকে তিনি তাঁর সন্তানদের পরিচয়েই বেশি পরিচিত। তিন পুত্র বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব এবং তিন কন্যা শেফালী, শিখা, মনি - এর জননী হলেন মোহনগঞ্জের আয়েশা ফয়েজ। তাঁর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনীর কাছে নিহত শহীদ ফয়জুর রহমান। " জীবন যে রকম" বই মূলত আয়েশা ফয়েজের স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ। লেখিকার বিয়ের পরবর্তী জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার সন্নিবেশে এই লেখা। হুমায়ুন আহমেদ ও মুহাম্মদ জাফর ইকবালের আত্মজীবনীমূলক বইগুলো যদি আপনার পড়া থাকে, তবে এই বইয়ের বেশিরভাগ গল্পই আগে থেকে আপনার জানা। বইয়ের শুরুটা লেখিকার বিবাহ পরবর্তী জীবন থেকে। আয়েশা ফয়েজ তার জীবনের বিচ্ছিন্ন গল্পগুলো দিয়ে বইটি শুরু করেছেন। যেই লেখাগুলি সত্যি বলতে অনেকাংশে বাহুল্য। একটির সাথে আগের গল্পের তেমন সংযোগ নেই, আবার এমন কিছু গল্পের উপস্থিতি - যেগুলোর বইয়ে তেমন প্রয়োজনও নেই। লেখিকার সন্তানদের গল্প, স্বামীর পুলিশে চাকরির জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলীর বিবরণ, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের টিকে থাকার সংগ্রাম এবং শেষমেশ লেখিকার কিছু আক্ষেপ, অভিযোগের কথা। বইয়ে লেখিকার কিছু আক্ষেপ হৃদয়ে নাড়া দেওয়ার মত। লেখাগুলি ১৯৯১ সালের দিকে লেখা। তবে প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে এবং তখন বইটি বেশ সাড়াও ফেলে দেয়। কারণ বইয়ের লেখক স্বয়ং বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ হুমায়ুন আহমেদের মা। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বইয়ের ১৩টি মুদ্রণ প্রকাশিত হয়ে গেছে। বইয়ের পান্ডুলিপিগুলো লেখার সময় জাফর ইকবাল কিংবা আহসান হাবীব তখনো বিখ্যাত নন। তবে হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য জগতে বেশ আলোচিত নাম। তাই বইয়ের বেশিরভাগ জায়গায় হুমায়ুন আহমেদ সংশ্লিস্ট গল্পই প্রাধান্য পেয়েছে। আবার বৃহৎ এক অংশ জুড়ে রয়েছে লেখিকার স্বামী শহীদ ফয়জুর রহমানের কথা। স্বামীর মৃত্যুর পর আয়েশা ফয়েজ যেভাবে এই বিশাল পরিবারের হাল ধরে রাখার চেস্টা করেছেন, তা সত্যি প্রশংসাযোগ্য। বিভিন্ন বইয়ের অনেক জায়গাতেই হুমায়ুন আহমেদ স্বীকার করেছেন, "মা তখন পরিবারের হাল না ধরলে, আমরা সবাই তখন ভেসে যেতাম।" সেই জীবন সংগ্রামের বিচ্ছিন্ন কিছু গল্প রয়েছে এই বইটিতে। বইটি পড়ে হয়ত শহীদ পরিবারটির জীবন সংগ্রামের কিছু ধারণা পাওয়া যাবে। প্রিয় লেখকদের ছোটবেলার কিছু নতুন গল্প জানা যাবে। তবে বইটি পূর্ন নয়। গল্পগুলো, কাহিনীগুলো আরো পুর্ণাংশে আসতে পারতো। তা হয় নি৷ সবগুলো গল্প বা ঘটনাই বিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই বিস্তারিত ঘটনা না বলে, পরবর্তী ঘটনায় চলে গেছেন লেখিকা। অসাধারণ এই জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি উপন্যাস হয়ত লেখে ফেলা যেত। তবে আয়েশা ফয়েজ পেশাদার লেখক নন। তিনি হয়ত শুধুই বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনারই উল্লেখ করতে চেয়েছেন বইয়ে। তবে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে বইটি ইনকম্পলিট এবং ছাড়া ছাড়া মনে হয়েছে। আয়েশা ফয়েজের বাবা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনীর হাতে তিনি মারা যান। লেখিকা সে ঘটনার জন্য বইয়ে নিজের বাবাকে ডিফেন্ড করার পুরো চেস্টা করেছেন। যা দৃস্টিকটু এবং এটি বরং লেখিকার অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। "জোছনা ও জননীর গল্প" বইয়ের অন্যতম প্রধান চরিত্র, 'ইরতাজউদ্দিন' এর মাধ্যমেও হুমায়ুন আহমেদ তাঁর নানাকে ডিফেন্ড করার চেস্টা করেছেন সম্ভবত। লেখিকা বইয়ের একাংশে বলেছেন, "এর মাঝে কাজলকে (হুমায়ুন আহমেদকে) একবার মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, প্রচন্ড অত্যাচার করেছে, তবে প্রানে মারে নি।" এরকম কোনো ঘটনার উল্লেখ হুমায়ুন আহমেদের কোনো বইয়ে আমি পাই নি। এই বইয়েও লেখিকা এতটুকু বলে, আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। হুমায়ুন আহমেদ এবং জাফর ইকবালের স্মৃতিচারণমূলক লেখাগুলি পড়ে থাকলে, "জীবন যে রকম" বইটির গল্পগুলি অধিকাংশই জানার কথা। তবে যারা আগ্রহী, আরো নতুন কিছু গল্প জানার আশা এবং একজন "অসাধারণ" নারীর দৃস্টিকোণ থেকে পুরো বিষয়টি দেখতে চাইলে পড়ে দেখতে পারেন "জীবন যে রকম"। বইটি ২০০৮ সালে " সময় প্রকাশন" থেকে প্রকাশিত হয়। ১১২ পেজের বইটির মুদ্রিত মূল্য ১৬০টাকা।
Was this review helpful to you?
or
ছোট্ট বালিকা যখন ফরজুর রহমানের বধূ হিসেবে আসেন,তখন আদরের কমতি ছিল না।কিন্তু চার বছরেও সন্তান না হওয়ায় সবার মুখ কালো।অবশেষে করুণাময়ের দয়া হলো,জন্ম নিলো ফুটফুটে এক রাজপুত্র।বাবা ফয়জুর রহমানের শখ ছিলো মেয়ের,কিন্তু ছেলের মুখ দেখেই ওসব ভুলে গেলেন,আত্মহারা হলেন খুশিতে ।বাচ্চার নাম রাখা হলো কাজল।জন্মের নবমদিনে নাকি ভাগ্য লেখা হয়,তাই শুরু হলো নানান তোড়জোড় ।শুনুন আয়েশা ফয়েজের মুখেই "রাত বারোটায় আমি জেগে আছি।ভাগ্য লিখছে ফেরেশতারা।আহা,ভালো কিছু যেন লিখে দ্যায় আমার সোনার কপালে।" মায়ের এই প্রার্থনা বিফলে যায় নি, তাঁর সোনার কপালে ভালো কিছুই লেখা হয়েছিল!!ছোট্ট কাজলকে এদেশের মানুষ এখন হুমায়ুন আহমেদ নামে চেনে!! গোটা বইতেই সারা জীবনের টুকরো টুকরো ছবিকে আয়েশা ফয়েজ এঁকেছেন পরম মমতা দিয়ে, দরদ দিয়ে ।আছে জাফর ইকবাল, আহসান হাবীবসহ ছয়টা সন্তানের কথা,আছে শৌখিন,খেয়ালি এক পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমানের কথা,একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে পিতাহারা ,আশ্রয় হারা ছয় সন্তান নিয়ে অসহায় এক মায়ের ছুটে বেড়ানোর কথা।আছে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদারদের নৃশংসতার কথা,বিপদের দিনে ভুলে যাওয়া আত্মীয়দের কথা।আবার বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো লেখিকাকে মা বলে সম্বোধন করা কারী সাহেবকেও লেখিকা ভুলে যান নি । মুক্তিযুদ্ধে ফয়জুর রহমান মৃত্যুর পর আমরা লেখিকার অন্য রূপ দেখতে পাই।পেনশনের কটা টাকার জন্য এক শহীদ পরিবারের ভোগান্তি দেখে যেমনি লজ্জা পেতে হয়,তেমনি লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে যখন সরকারের দেওয়া বাড়ি থেকেও এই পরিবারটিকে উচ্ছেদ করা হয়।কিন্তু একজন মানুষ তখনও নির্বিকার, তিনি আয়েশা ফয়েজ।ঐ অবস্থাতেও তিনি তাঁর মৃত স্বামীর বিচার,যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি লিখেছেন!!ভাবা যায়, অসহায় অবস্থায় একাজ করতে কতখানি দৃঢ় হতে হয়েছিল তাকে??এই পাহাড়সম দৃঢ়তার বলেই উনি হয়তো আঁধার শেষে আলোর দেখা পেয়েছিলেন,সন্তানদের করতে পেরেছিলেন আকাশের উজ্জ্বলতর নক্ষত্র!! বইটা পড়তে শুরু করার আগে আমার দৃষ্টিতে আয়েশা ফয়েজ ছিলেন শুধুমাত্র একজন রত্নগর্ভা মা,একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী।কিন্তু বইটা শেষ করার পর,আমার কাছে আয়েশা ফয়েজ মানে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বামী হারা,সম্বলহীন কঠিন জীবনযুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে লড়াই করা হাজার হাজার মায়ের এক উজ্জ্বলতম প্রতিনিধি!!
Was this review helpful to you?
or
বইটি পড়ে মন ভীষণ আর্দ্র হয়ে আছে। সব কিছু কেমন ভিজ্যুয়ালাইজ হয়ে উঠছে। ...... এটি একটি আত্মজীবনীমূলক লেখা। লেখিকা বাঙলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ, প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ-এর মা আয়েশা ফয়েজ। যিনি একাধারে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বিধবা এবং রত্নগর্ভা জননী। সকলেরই জানা, তারপরও বলার লোভ সামলাতে পারছিনা। তার তিনটি পুত্রই স্ব স্ব ক্ষেত্রে দ্যুতি ছড়িয়েছেন, ..............হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল এবং আহসান হাবীব তাঁরা কেউ কারো পরিপূরক নন। এই বইয়ে লেখিকা লিখেছেন তার বিবাহ পরবর্তী জীবন থেকে সাল ১৯৯১ পর্যন্ত। মূলত: তার দ্বিতীয় পুত্র জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী ইয়াসমিনের উৎসাহেই ১৯৯১ সালে নিউ জার্সিতে অবস্থান কালে তিনি রচনা করেছিলেন তার আত্মকথা। যা বহু বছর পরেছিল সেভাবেই। ২০০৮ সালে পুত্রকণ্যাদের আগ্রহেই তা বই আকারে প্রকাশিত হয়ে পাঠকের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেয় সময় প্রকাশন এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ওই একই বছরে এই বইটির সাতটি মুদ্রন প্রকাশিত হয়। অত্যন্ত সহজ সরল সাবলীল ভাষায় তিনি বলে গেছেন তার কথা। কোথায় অত্যুক্তি মনে হয়নি। বৈচিত্রময় ঘটনাবহুল জীবন উনার কলমে ফুটে উঠেছে অত্যন্ত নিঁপুনতার সাথে। মনেই হয় না কোন নতুন লেখিকার লেখা! উনার জীবনটা সত্যিই ভীষন বৈচিত্রময়। উনি দেখেছেন ভারত-পাকিস্তান কে আলাদা হতে। আবার পাড়ি দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাময় অধ্যায়। আর যুদ্ধপরবর্তী কঠিন জীবন সংগ্রাম। উনি অল্প কথায় ফুটিয়ে তুলেছেন তার ছয়জন ছেলে-মেয়ে কে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে এবং পক্ষপাতদুষ্টু না হয়ে। যা একজন মায়ের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য। মুক্তিযুদ্ধে উনার স্বামী ফয়েজ আহমেদ-এর শহীদ হওয়ার কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু যে কথা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং বোধ করি উনার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক আরেকটি অধ্যায় তা হল মুক্তিবাহিনীর হাতে উনার পিতা এবং ছোট ভাইয়ের হত্যা! তাছাড়া ১৯৭২ সালে তিনি তার স্বামীর হত্যার বিচারের জন্য একটি ফৌজদারি মামলাও করেন, যা আজো বিচারের মুখ দেখেনি, সেটির ব্যাপারেও তিনি অত্যন্ত আশাবাদী ছিলেন। উনি উনার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই পাকিস্তান থেকে সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের (তৎকালীন পাক আর্মি যারা এদেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন) ফেরত এনে এ দেশের মাটিতে তাদের বিচার ব্যবস্থা গ্রহন করবে। উনার লৌহ দৃঢ় মনোবল সত্যিই যে কোন মানুষের জন্য এক অনবদ্য উদাহরণ। এক কথায়, বইটিতে লেখিকা আয়েশা ফয়েজের যে দৃঢ়চেতা মনোবল-এর দেখা পাওয়া যায় তা যে কোন মানুষের জন্যই অনুকরণীয় একটি গুণ।
Was this review helpful to you?
or
জীবন যে রকম - আয়েশা ফয়েজ হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল এবং আহসান হাবীব তিন জনপ্রিয় লেখকের গর্বিত জননী। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও হুমায়ুন আহমেদ এর মা রত্নগর্ভা আয়েশা ফয়েজ এর লেখা জীবন যে রকম বইটি। বইটির প্রচ্ছদ যথাযথ। বাংলার অল্পবয়স্কা একজন মায়ের সাদাকালো ছবি বইটির প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছে। তিনি তাকিয়ে আছেন, মনে হচ্ছে তিনি এ জাতিকে কিছু একটা প্রশ্ন করে বসবেন। প্রচ্ছদ উল্টালেই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর মাকে নিয়ে লিখলেন কয়েক কলম। মাকে নিয়ে লিখতে লিখতে জাফর ইকবাল বলে ফেললেন ১৯৭১ সালের সে দিনগুলোর কথা। মুখবন্ধে আয়শা ফয়েজ লিখলেন, ১৯৯১ সালে তিনি গিয়েছিলেন আমেরিকায় মেজো ছেলে ইকবালের বাসায়। ঠিক সেখানে বসে অনেকটা খেয়ালের বশে লিখে ফেললেন জীবন যে রকম বইয়ের পান্ডুলিপি। দেশ সেরা সন্তানদের মায়ের সে লেখাগুলো পরবর্তীতে ছাপার অক্ষরে বের হলো বই হয়ে। মা হয়েও এই বইটি প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়ায় আয়েশা ফয়েজ তাঁর পুত্র মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলেন না। আত্নজীবনীর শুরুতেই তিনি ১৯৪৪ সালের একজন বেকার ছেলের গল্প দিয়ে শুরু করলেন। ঠিকই মনে রেখেছেন ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারীর আট তারিখে একজন বেকার ছেলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বেকার লোকটির নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজুর রহমান। নতুন বউ হিসেবে নতুন পরিবারের দায়িত্ব্য, কর্তব্য কিভাবে পালন করলেন সবই উঠে এসেছে এই বইটিতে। গ্রামের চলমান কুসংস্কার নিয়ে সেসময়ের অনেক কথা জীবন্ত হয়ে উঠে এসেছে এই বইটিতে। আরও কিছু পৃষ্ঠা উল্টালেই পাঠক খুজে পাবেন নতুন মা হওয়ার একটি খবর। আয়েশা ফয়েজ মা হয়েছেন। যে শিশুটি এখন আমাদের হুমায়ুন আহমেদ। পোয়াতি মানুষের ভাইটামিন খাওয়ার ঘটনাটি সত্যিই হাস্যরসে ভরপুর। সে যুগে মুরুববীরা বিশ্বাস করতো পোয়াতি মানুষদের ভাইটামিন খাওয়ানো নিষেদ। ভূতের ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়া দেবার ঘটনাও সত্যিই কৌতুকময়। বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে এই ঘটনাটি এখনই ঘটলো বুঝি। এরপরের গল্পগুলোতে উঠে এসছে নেত্রোকনার মোহন গন্জ এর হুমায়ুন আহমেদ এর নানার বাড়ির কিছু ঘটনা। আজমীর শরীফের ফুল নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর উল্লেখ করার মতো। এতো নাটকীয় ঘটনার পর যে ছেলেটির জন্ম হলো তাঁর নাম রাখা হলো কাজল। সেই কাজল হলো আমাদের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ। সেই কাজলের আসল নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান। কাজলের দাদা ও দাদী এই নামটি রেখেছিলেন। কিন্তু কাজলের বাবা ফয়জুর রহমান এই নামটি গ্রহন করেননি। তিনি নাম বদলে রাখলেন হুমায়ুন আহমেদ। তারপর একে একে উঠে এসেছে হুমায়ুন আহমেদ শৈশবের দুরন্তপনা, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো। হুমায়ুন আহমেদ এর বোন শেফুকে নিয়েও তিনি লিখতে ভুলে যাননি। বর্ননায় এসেছে ইকবাল, শাহীন এবং শিখুকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। ইকবাল কে নিয়ে নিয়ে লিখেছেন ছোটবেলা থেকেই ইকবাল ছিল পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী কিন্তু কাজল দুষ্ট প্রকৃতির। মনিকে নিয়ে লেখাগুলোর ভেতরে রয়েছে আদর মাখানো কিছু উক্তি। যেমন মনি কথা বলতে পারে না কিন্তু সত্যিই সে ছিল মিষ্টি স্বভাবের একটি মেয়ে। তারপর ফয়েজুর রহমান এর বদলির চাকরী কারনে আয়েশা ফয়েজ ঘুরেছেন সিলেট, পচাগড়, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্রগ্রাম, বগুড়া, কুমিল্লা এবং অবশেষে ফিরোজপুর। ১২ নভেম্বর ১৯৭০ সাল থেকে উঠে এসেছে সেসময়ের রাজনীতির বিখ্যাত পুরুষদের কথা। শেখ মুজিব, ভাসানী, ইয়াহিয়াসহ অনেকের কথা তিনি অকপটে বলে গেছেন।
Was this review helpful to you?
or
আয়েশা ফয়েজ হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল এবং আহসান হাবীব তিন জনপ্রিয় লেখকের গর্বিত জননী। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও হুমায়ুন আহমেদ এর মা রত্নগর্ভা আয়েশা ফয়েজ এর লেখা জীবন যে রকম বইটি। বইটির প্রচ্ছদ যথাযথ। বাংলার অল্পবয়স্কা একজন মায়ের সাদাকালো ছবি বইটির প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছে। তিনি তাকিয়ে আছেন, মনে হচ্ছে তিনি এ জাতিকে কিছু একটা প্রশ্ন করে বসবেন। প্রচ্ছদ উল্টালেই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর মাকে নিয়ে লিখলেন কয়েক কলম। মাকে নিয়ে লিখতে লিখতে জাফর ইকবাল বলে ফেললেন ১৯৭১ সালের সে দিনগুলোর কথা। মুখবন্ধে আয়শা ফয়েজ লিখলেন, ১৯৯১ সালে তিনি গিয়েছিলেন আমেরিকায় মেজো ছেলে ইকবালের বাসায়। ঠিক সেখানে বসে অনেকটা খেয়ালের বশে লিখে ফেললেন জীবন যে রকম বইয়ের পান্ডুলিপি। দেশ সেরা সন্তানদের মায়ের সে লেখাগুলো পরবর্তীতে ছাপার অক্ষরে বের হলো বই হয়ে। মা হয়েও এই বইটি প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়ায় আয়েশা ফয়েজ তাঁর পুত্র মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলেন না। আত্নজীবনীর শুরুতেই তিনি ১৯৪৪ সালের একজন বেকার ছেলের গল্প দিয়ে শুরু করলেন। ঠিকই মনে রেখেছেন ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারীর আট তারিখে একজন বেকার ছেলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বেকার লোকটির নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজুর রহমান। নতুন বউ হিসেবে নতুন পরিবারের দায়িত্ব্য, কর্তব্য কিভাবে পালন করলেন সবই উঠে এসেছে এই বইটিতে। গ্রামের চলমান কুসংস্কার নিয়ে সেসময়ের অনেক কথা জীবন্ত হয়ে উঠে এসেছে এই বইটিতে। আরও কিছু পৃষ্ঠা উল্টালেই পাঠক খুজে পাবেন নতুন মা হওয়ার একটি খবর। আয়েশা ফয়েজ মা হয়েছেন। যে শিশুটি এখন আমাদের হুমায়ুন আহমেদ। পোয়াতি মানুষের ভাইটামিন খাওয়ার ঘটনাটি সত্যিই হাস্যরসে ভরপুর। সে যুগে মুরুববীরা বিশ্বাস করতো পোয়াতি মানুষদের ভাইটামিন খাওয়ানো নিষেদ। ভূতের ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়া দেবার ঘটনাও সত্যিই কৌতুকময়। বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে এই ঘটনাটি এখনই ঘটলো বুঝি। এরপরের গল্পগুলোতে উঠে এসছে নেত্রোকনার মোহন গন্জ এর হুমায়ুন আহমেদ এর নানার বাড়ির কিছু ঘটনা। আজমীর শরীফের ফুল নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর উল্লেখ করার মতো। এতো নাটকীয় ঘটনার পর যে ছেলেটির জন্ম হলো তাঁর নাম রাখা হলো কাজল। সেই কাজল হলো আমাদের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ। সেই কাজলের আসল নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান। কাজলের দাদা ও দাদী এই নামটি রেখেছিলেন। কিন্তু কাজলের বাবা ফয়জুর রহমান এই নামটি গ্রহন করেননি। তিনি নাম বদলে রাখলেন হুমায়ুন আহমেদ। তারপর একে একে উঠে এসেছে হুমায়ুন আহমেদ শৈশবের দুরন্তপনা, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো। হুমায়ুন আহমেদ এর বোন শেফুকে নিয়েও তিনি লিখতে ভুলে যাননি। বর্ননায় এসেছে ইকবাল, শাহীন এবং শিখুকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। ইকবাল কে নিয়ে নিয়ে লিখেছেন ছোটবেলা থেকেই ইকবাল ছিল পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী কিন্তু কাজল দুষ্ট প্রকৃতির। মনিকে নিয়ে লেখাগুলোর ভেতরে রয়েছে আদর মাখানো কিছু উক্তি। যেমন মনি কথা বলতে পারে না কিন্তু সত্যিই সে ছিল মিষ্টি স্বভাবের একটি মেয়ে। তারপর ফয়েজুর রহমান এর বদলির চাকরী কারনে আয়েশা ফয়েজ ঘুরেছেন সিলেট, পচাগড়, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্রগ্রাম, বগুড়া, কুমিল্লা এবং অবশেষে ফিরোজপুর। ১২ নভেম্বর ১৯৭০ সাল থেকে উঠে এসেছে সেসময়ের রাজনীতির বিখ্যাত পুরুষদের কথা। শেখ মুজিব, ভাসানী, ইয়াহিয়াসহ অনেকের কথা তিনি অকপটে বলে গেছেন।
Was this review helpful to you?
or
আক্ষরিক অর্থেই যেন একজন রত্নগর্ভা মা তিনি । ৭১ এ স্বামীর মৃত্যুর পর একাই হাল ধরেছেন সংসারের । শত প্রতিবন্ধকতায়ও থেমে যেতে চাননি । তিন ছেলে আর তিন মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । তাদেরকে মানুষের মত মানুষ করেছেন । তাঁর তিন ছেলের প্রত্যেকেই আজ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন নিজ প্রতীভায় । বড় ছেলে হুমায়ূন আহমেদ এদেশের সাহিত্য জগতের প্রবাদ পুরুষ,জনপ্রিয়তা যাঁর আকাশচুম্বী ।চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও সমান জনপ্রিয় । মেজ ছেলে মুহম্মদ জাফর ইকবাল একাধারে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,সাহিত্যিক । দেশে কিশোর উপন্যাসের ইতিহাসেও তাঁর নামটি দীপ্তিমান । দেশের লক্ষ লক্ষ কিশোরের প্রিয় সাহিত্যিকের নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল । আর ছোট ছেলে দেশের স্বনামধন্য কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব । "উন্মাদ" ম্যাগাজিনের সম্পাদক । এই তিনজন প্রতিষ্ঠিত মানুষের স্নেহময়ী জননী তিনি । আয়েশা ফয়েজ । একজন রত্নগর্ভা মা । 'জীবন যে রকম' তাঁর ঘটনাবহুল জীবন সংগ্রামের বৈচিত্র্যময় স্মৃতিকথা । এ বইয়ে তিনি পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদের সাথে তাঁর বিবাহবন্ধনের কথা থেকে শুরু করে তুলে ধরেছেন তত্কালীন সমাজের বিচিত্র সব পারিবারিক প্রথার কথা । তুলে ধরেছেন তাঁর প্রতিটি সন্তানের জন্মের ইতিহাস,তাঁদের রঙিন শৈশব আর ছেলেবেলার কথা । স্বামীর পুলিশের চাকরির খাতিরে কিভাবে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন এক জেলা থেকে অন্য জেলায় তারও বর্ণনা পাওয়া যায় বইটিতে । ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের কিছু ভয়ালো ইতিহাস আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তাদের পরিবারের বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রামের কথাও খুঁজে পাওয়া যাবে "জীবন যে রকম" বইটিতে । এই বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রামে তিনি হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে । স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ শুধু একজন পুলিশ অফিসারই ছিলেন না , ছিলেন ছেলেমেয়েদের সাহিত্য চর্চাসহ নানারকম প্রতীভা বিকাশের অনুপ্রেরণা । নিজেও ছিলেন একজন খেয়ালী গোছের অন্যরকম মানুষ । এই মানুষটিকে হারিয়ে কিভাবে আবার নতুন করে জীবন শুরু করলেন তাও খুঁজে পাওয়া যায় বইটিতে । আয়েশা ফয়েজের কঠিনতম জীবন সংগ্রাম বিফলে যায়নি । তাঁর জীবন সংগ্রাম আমাদের উপহার দিয়েছে দেশের প্রতীভাবান কয়েকজন বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে । তাঁরা "রত্নগর্ভা" আয়েশা ফয়েজেরই সন্তান । বইটিতে আরও পাবেন কিছু পারিবারিক ছবি , যে ছবিগুলো আমাদেরকে অনুপ্রেরণাই দেয় । অতঃপর পুরো বইটি আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে এক জীবন সংগ্রামী রত্নগর্ভা মায়ের সাথে,তাঁর বিচিত্র জীবনকথার সাথে ।