User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
very nice.
Was this review helpful to you?
or
এক বড় আপু থেকে নিয়ে বইটা পড়া হয়েছিলো। পুরো বইটাই এক ধরনের ঘোর৷ বইটা পড়ে ঘোরের মধ্যে হারিয়ে যেতাম। ২ বছর আগে পড়েছি কিন্তু এখনও মাঝে মাঝে বইয়ের চরিত্রগুলোর কথা মনে পড়ে৷ খুব মিস করি বইটাকে ইদানীং। হাতের কাছে থাকলে পড়ডাম আবারও৷
Was this review helpful to you?
or
Original Copy
Was this review helpful to you?
or
জীবনের উদ্দেশ্যগুলোকে গভীর থেকে বুঝবার জন্য এই বই অপরিসিম
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ। প্রত্তেকটা চরিত্রের উপর মায়া জন্মায়া গেছে।
Was this review helpful to you?
or
আচ্ছা এ পৃথিবী কি রঙ্গশালা! আমরা সবাই কি রঙ্গশালার একেক অভিনেতা অভিনেত্রী। নাকি এ পৃথিবী একটি পান্থশালা, আর আমরা সবাই এই পরিগ্রহ ভ্রমনে আছি। আচ্ছা জীবন মানে কি? জীবন মানে কি শুধু বেঁচে থাকা, বেঁড়ে উঠা কর্মক্ষেত্র সংসার মৃত্যু? জীবনের সাথে মনের সংযোগটা কোথায়? মন আসলে কি? মনের অস্তিত্ব কোথায়? মন আর মনোজগৎ নিয়ে একগাধা প্রশ্ন। বলছি জীবন মন নিয়ে কথা। এই মনোজগৎ জীবনের অর্থবোধ নিয়ে ওপার বাংলার একটি বিশাল উপন্যাস শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রচিত পার্থিব। পার্থিব শব্দের আভিধানিক অর্থ জাগতিক বা জগৎ সাংসারিক। উপন্যাসের শুরুতেই বিষ্টুপুর গ্রামের শীতলাতলায় এক বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ। পেশায় মাস্টার ছিলো বর্তমানে রিটায়ার। এক রাতে সে স্বপ্ন কালঘড়ি দেখলো। মৃত্যুর আগে তার বাবা দাদা পরদাদাও নাকি কালঘড়ি দেখেছিল। তাই তো বিষ্ণুপদ মৃত্যুর চিন্তায় বিভোর। জীবনে কি করলাম কতটুকু করলাম ইত্যাদি চিন্তায় যাচ্ছে বিষ্ণুপদের জীবন। বিষ্ণুপদ চেয়েছে নিজের বাড়িতে থাকতে। বিষ্ণুপদের বড় ছেলে কৃষ্ণজীবন। জীবন সংগ্রামের ঘানি টেনে সে আজ শিক্ষিত মস্ত বড় প্রফেসর। কলকাতায় বিশাল ফ্ল্যাট করেছে। সে ভাবুক ; পৃথিবী নিয়ে তার বিশাল ভাবনা, মানুষ কেটে ফেলছে গাছ, উজার করছে অরণ্য, বায়ুতে দূষণের মাত্রা বারছে। ডার্লিং আর্থ নামে তার একটও বইও বের হলো পৃথিবী সম্পর্ক এ। আরো কত বই লিখেছেন তিনি। প্রয়োজন অপ্রয়োজনে ইউরোপ এ্যামেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন। কলকাতার এক শিক্ষিত আধুনিক মেয়ের সাথে ভালোবেসে সংসার পেতেছেন, সন্তান সন্তুটি হয়েছে। তবুও কৃষ্ণজীবন এর মনটা পরে আছে গ্রামের সেই লাঙ্গল এর ধারে। রামজীবন বিষ্ণুপদের আরেক ছেলে। পেশায় মাতাল। কিন্তু পিতামাতার প্রতি রয়েছে অবাধ শ্রদ্ধা ভক্তি। পিতার দুচরন বুকে নিয়ে কাঁটিয়ে দিতে পারে সারারাত। বীনাপাণি বিষ্ণুপদের মেয়ে। বাবার পছন্দে বিয়ে হয়েছে সৎ নিষ্ট এক ব্যাক্তি নিমাই এর সাথে। কিন্তু সততার মূল্য কি এই কলিযুগে আছে? তাইতো পেঁটের দাঁয়ে বীনাপাণিকে নামতে হয়েছে যাত্রাদলে। হেমাঙ্গ কলকাতার ধনী পরিবারের সন্তান। কখনো বিয়ে সাদী করবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। হটাৎই তার পরিচয় হলো রশ্নি রায় নামের বিলাত ফেরত এক সুশ্রী এর সাথে। শ্রীমতী রশ্নি রায় এর সাথে কখন যে মন দেয়া নেয়া হয়ে গেলো তার। দিদি চারুশীলাও উঠে পরে লেগেছে রশ্নি আর হেমাঙ্গ এর মিল দেখতে। কিন্তু ঐযে বলেনা জন্ম মৃত্যু বিয়ে এই তিন তাকে নিয়ে। হেমাঙ্গর কি হলো তবে। চয়ন, টিউশনি করে চলে। গনিত ইংরেজিতে ভালো মাথা। টিউশনের টাকায় দেখাশুনা করে মাকে। কিন্তু জীবন চয়নের পক্ষে নয়। এপিলটিকের কাছে বারবার পরাজিত হতে হয় চয়নের। চয়ন মা দাদা বৌদির সাথে নিজ বাড়িতে থাকে কিন্তু চারটে দেয়াল মানে নয়কো ঘর নিজের ঘরে অনেক মানুষও পর। মনীশ অর্পনার দু যুগের সংসার। ফটোগ্রাফার জীবনে মনীশের প্রেমে পরেছিলো অর্পনা। সেই প্রেম দ্বাড়ালো সংসারে, হলো সন্তান সন্তুতি এলো চাকুরী। কিন্তু হার্ট এর্টাক এর ধকল সামলাবে কে? তবুও সুখের সংসার মনীশ অর্পনার। ঝুমকি মনীশ অর্পনার বড় মেয়ে। শান্তশিষ্ট ঠান্ডা মেজাজী। চায় নিজের পায়ে দাড়াতে, সেলফডিপেন্ড হতে। ঝুমকি পছন্দ করে একজনকে। কিন্তু বুক ফাঁটে তো মুখ ফুঁটে না অবস্থা ঝুমকির। কি ভাবছেন এতোগুলো চরিত্র? হুম আরো আছে, চারুশীলা, বামাচরন শ্যামলী, নয়নতারা,কাকা,সজল,অনু, আরো আরো কত অপ্রধান চরিত্র। প্রায় ডজন খানের মূল চরিত্র আর প্রায় আধা ডজন গল্প নিয়ে লেখক এগিয়ে চলেছে পার্থিব উপন্যাসটি। প্রতিটা চরিত্রের মাঝে লেখক তুলে এনেছে জীবনের গল্প। প্রতিটা চরিত্রের আলাদা গল্প। লেখক এই চরিত্রগুলোর ভিতর থেকে দেখিয়োছেন জীবন, মানুষ আর মন। লেখক যেন লিখতে বসে হয়ে উঠেছেন দার্শনিক। গল্পের শুরুতে একেক করে চরিত্র বের হয়ে এগিয়ে গেছে সার্পিল গতিতে। সেই সাথে গ্রামীন জীবন শহুরে জীবন, আর পৃথিবী নিয়ে ভাবনা। বহু ঘটনা পর ঘটনার বিস্তৃত পটভূমিতে লেখক তুলে এনেছেন জীবন। ব্যাক্তিগত ভাবে শীর্ষেন্দু বাবু ধর্ম ও দর্শন বিষয়ক বই বেশি পড়েছেন। তার সেই নিজস্ব দর্শন আর জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিই তিনি পার্থিব উপন্যাস এর মাঝে তুলে এনেছেন। যেন সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভাবে তিনি বুঝাচ্ছেন জীবন কাকে বলে। এর আগেও আমি শীর্ষেন্দু বাবুর দূরবীন , চক্র, সাতাঁরু ও জলকন্যা এবং বেশ কিছু রহস্য উপন্যাস পড়েছি। তার সামাজিক উপন্যাস লেখার স্টাইল যতটা ঢিলে ঢালা তার থ্রিলার উপন্যাস গুলো ততটাই টান টান উত্তেজনাশীল। তো পার্থিব উপন্যাসটাও তেমন ধীরে ধীরে শুরু এবং এগিয়ে যাওয়া। অন্যসব লেখক এর থেকে শীর্ষেন্দু বাবুর মুন্সিয়ানার দিকটা হচ্ছে অন্যসব লেখক যেমন চরিত্র তৈরি করে ফিনিশিং দেয়, আর শীর্ষেন্দু বাবু তৈরিকৃত চরিত্রগুলোকে টেনে আনেন এক প্লটে। যেন অনেক জায়গা থেকে তুলে আনা সুতো দিয়ে বোনা একটি নকশিকাঁথা। পার্থিব ঠিক তেমনি। এর শেষ অধ্যায় গুলো যে এতো সুন্দর ভাবে তিনি ফিনিশিং দিয়েছে, যে বইটি পড়তে পড়তে নিজের অজান্তে ব্রিলিয়েন্ট শব্দটি মুখ দিয়ে বের হয়ে এসেছে। পার্থিব উপন্যাসটি আমি পড়েছি আর ভাবছিলাম এতোটা সুন্দর করে মানুষ কিভাবে লিখে। এতোটা গভীর ভাবে লেখক বলো যাচ্ছেন। যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। শেষমেশ এই একরাশ মুগ্ধতা নিয়েই শেষ হলো আমার পার্থিব। নিঃসন্দেহে পার্থিব একটি মাস্টার পিস। এতোদা স্বত্বেও লেখক সেদিন বাংলাদেশে এসে বলেছিলো তিনি একজন বাইচান্স লেখক। ভাগ্যক্রমে এই বাইচান্স লেখককে আমার সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়েছিলো। এবার তার ঐ হাত দুটো ছুঁতে চাই। ফিরে দেখা ::: বইয়ের নাম : পার্থিব লেখক : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জনরা : চিরায়ত সামাজিক উপন্যাস প্রকাশনা : আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা। প্রথম প্রকাশ কাল : ডিসেম্বর ১৯৯৪। পৃষ্টা সংখ্যা : ৭১৫। মূল্য : ৭০০ ভারতীয় রুপি। ধন্যবাদ মিদুল, চকবাজার ঢাকা। ২৩-০১-২০২০, রাত ১ টা।
Was this review helpful to you?
or
Someone give me gift this book ,really this book is nice
Was this review helpful to you?
or
বইটি শহুরে কলকাতা ও গ্রাম্য প্রেক্ষাপটে লেখা । কয়েকটা চরিত্র build-up এ কিছুটা একঘেয়মতা ছিল । চয়ন , নিমাই , হেমাঙ্গ , কৃষ্ণ এরা প্রত্যেক কেই লেখক বার বার ভিতু হিসাবে উপস্থাপন করেছে। পৃষ্ঠা সংখ্যা অধিক হওয়ার পাশাপাশি চরিত্র সংখ্যাও অধিক হওয়ায় ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কিছুটা সমস্যা হতে পারে । যাই হোক বইটা পড়তে খারাপ লাগবে না আশা করি , বেশ সুখপাঠ্য ।
Was this review helpful to you?
or
জীবন কেন, এই জীবনের অর্থ কি, কেনই বা শুধুমাত্র বেঁচে থাকা? নাকি এর গভীরে আছে কোনও হিরন্ময় তাৎপর্য? এমন নানা প্রশ্নে আকীর্ণ বস্তগ্রাহ্য এই জগত ও জীবন। এই সনাতন প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে চাইলে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পার্থিব পড়তে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
পার্থিব শীর্ষেন্দুর বিশাল ক্যানভাসে আঁকা এক উপন্যাস। এই উপন্যাসে পৃষ্ঠার সংখ্যাও যেমন অধিক, চরিত্রের সংখ্যাও তেমন অধিক। তবু প্রধান কয়েকটি চরিত্রের নাম যদি বলতেই হয় তাহলে বলতে হয়- কৃষ্ণজীবন, রিয়া, চয়ন, অনুশীলা, হেমাঙ্গ, মনীশ, অপর্ণা, অনিশ, আপা, ঝুমকি। কৃষ্ণজীবনের দিকে প্রায় পুরো উপন্যাস ঝুকে ছিল বেশি। কৃষ্ণজীবন হলো একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। সে প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য দেশ দেশান্তরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। দিনশেষে কৃষ্ণজীবন বড় নিঃসঙ্গ। কারণ কৃষ্ণজীবন যেভাবে পৃথিবীকে চায় সেভাবে অন্যরা চায়না। কৃষ্ণজীবন বাইরের দূষণকে যেমন ভয় পায় তেমনি ভয় পায় মানুষ ভেতরের দূষণকেও। এটাই তাকে ধীরে ধীরে এসকেপিজমের দিকে ঠেলে দিতে থাকে। এছাড়া অন্য চরিত্রগুলোর মধ্যেও প্রতিনিয়ত ভাঙা গড়া হতে থাকে। বীণাপাণি ও নিমাই এর প্রেক্ষাপটও গুরুত্ব পেয়েছে উপন্যাসে। যদিও বীণা বাস্তববাদী ও কখনো লোভী আর নিমাই হলো একজন সহজ সরল ধার্মিক স্বামী ও নির্লোভ সজ্জন। অন্যদিকে হেমাঙ্গ এক অদ্ভুত চরিত্র। যে কিনা নারী, বিয়ে এসবকে ভীষণ ভয় পাই। বিয়ে সে করবে না বলে ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছে। কিন্তু জীবন কি কারো ইচ্ছে মত চলে? জীবন কি বদলে দেয় না মানুষের মনের মানচিত্র ও চালচিত্র? শুধু খানিকটা সময়ই দরকার জীবনের। সময়টুকু পেলেই সে পাল্টে দিয়ে যাবে সব। এই এই পরিবর্তনটুকু ও জীবনের ক্ষণিক শান্ত ও ক্ষণিক অশান্ত সব মুহূর্তের সম্মুখীন হতে হলে পার্থিব বইটি হাতে তুলে নিতে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
এ পর্যন্ত যত বই পড়েছি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম অসাধারন একটি বই পার্থিব।মনে হবে সাধারন লেখা কিন্তু এর ভিতর লুকিয়ে আছে অনেকগুলো মানুষের ভাঙ্গা গড়ার গল্প।কিছু গল্প জিবন কে নাড়া দেয়,অনেক কিছু শিখিয়ে যায় ওই কাল্পনিক চরিত্রগুলো।রামজিবন,মনিশ,কৃষ্ণ জীবন ,বামাচরন,চারুশিলা,নিমাই,অনু,ঝুমকি,চয়ন,নয়ন্তারা,বিনাপানি,আপা,অপর্ণা-সবাই যেন চখের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানব মনের বিভিন্ন প্রশ্ন লেখক খুজেছেন তার লেখায়,অসাধারন এই বইটি সবারই একবার পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালী সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বৃহৎ প্রেক্ষাপটে তার মনোবৈচিত্র্যের স্ফূর্তি ঘটিয়েছেন ‘পার্থিব’ উপন্যাসে। সাহিত্য একাডেমি পুরষ্কার প্রাপ্ত ‘মানবজমিন’ পড়েই তার বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি। তারপর পড়েছি ‘দূরবীন’। ‘মানবজমিন’ এর সাথে ‘পার্থিব’ এর ভিত্তিগত মিল থাকলেও এই উপন্যাসে লেখক আরো বৃহৎ পটভূমিতে মানুষের নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন। শীতলাতলা গ্রামে বিষ্ণুপদ- নয়নতারা সম্পত্তি নিয়ে তাদের দুই ছেলে রামজীবন আর বামাচরণের মারামারি কাটাকাটি গালাগালিতে নাজেহাল। এই সময় তাদের বড় ছেলে কৃষ্ণজীবন পৃথিবী রক্ষার ভাবনার বহিঃপ্রকাশ করছেন ‘ডার্লিং আর্থ’ বই লিখে। ‘পৃথিবী কি দাড়ি কামায় বাবা?’ শিশুপুত্র দোলনের মুখে এই প্রশ্ন শুনে কলকাতার ফ্ল্যাটের ছাদে বসে বিশাল দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে বিশ্ববিখ্যাত এই পরিবেশবিজ্ঞানীর বুক থেকে, পৃথিবীর দাড়ি যে পৃথিবীর মানুষই কামিয়ে ফেলছে! ক্ষতি ডেকে আনছে নিজেদের। মা বাবাকে ছেড়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন অথচ মা- বাবার জন্য এক বুক ভালোবাসা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি তা কে জানতো! তার মন যে মনে আছে সেই অজপাড়া গাঁয়ে! এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও তিনি ঘটিয়েছেন। সব ব্যাপারে তার অস্বাভাবিক নির্লিপ্ততাই অধ্যাপিকা স্ত্রী রিয়ার সাথে তার দ্বন্দের কারণ। ষোড়শী কিশোরী অনুশীলার সাথে তার উদ্ভট অথচ মজার এক সম্পর্কের কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা লেখকও দিতে পারেন নি। কৃষ্ণজীবনের মেয়ে মোহিনীর প্রাইভেট টিউটর ‘চয়ন’ উপন্যাসের সবচেয়ে দুর্বল চরিত্র হয়েও সেই যেনো সবচেয়ে অপরাজেয়! শরীরের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে বাজা ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ নিয়ে ঠাঁয় জীবন বয়ে চলেছে এই মৃগীরোগীর। সবচেয়ে অদ্ভুত চরিত্র চারুশীলা যার অতি আতিথেয়তা আর সরলতায় সবাই হাঁপিয়ে উঠে। ভাইকে সংসারী করতে বিলেত ফেরত তরুণী রশ্নি রায়ের সাথে জুড়ে দিয়ে বিচ্ছিরি এক কাহিনীর অবতারণা করে সে। আর তার কিম্ভুত ভাই ‘হেমাঙ্গ’ যার দ্বিধান্বিত চরিত্রে পাঠকই দিশেহারা হয়ে যায়! কিন্তু তাতে কি, সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাপিয়ে ঝুমকির চোখের ভাষা ঠিকই পড়ে নিয়েছিলো হেমাঙ্গ। উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে ছিলো বীণাপানি আর নিমাই। বেঁচে থাকার তাড়নায় যে মানুষ কী কী করতে পারে তা বীণাপাণির মাধ্যমে বোঝা যায়। লোভে পাপে তাপে সব হারিয়ে নিঃস্ব বীণাপাণি শেষ পর্যন্ত জায়গা পায় স্বামী নিমাইয়ের কাছেই, যে নিমাই অভাবে স্বভাব ধরে রেখে তার সব পেয়েছিলো। অপর্ণা এক পাক্কা গৃহিণী এবং বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন নারী, স্বামী মনীশের হার্ট এট্যাকের পর থেকেই ভীত সে। মনীশ, অনীশ, অনু আর ঝুমকিকে আগলে রাখতে সে বদ্ধপরিকর কিন্তু কোথায় যেনো তার শান্তির বড় অভাব। অনীশের ক্লাসমেট কালো সাউথ ইন্ডিয়ান বাচ্চা মেয়ে ‘আপা’ এই উপন্যাসের সবচেয়ে বিরল চরিত্র, বন্ধুরা যাকে বঙ্কিমচন্দ্রের "দেবী চৌধুরানীর" সাথে তুলনা করে। এই এতো এতো চরিত্রের ছড়াছড়ি আর তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ভরপুর এ উপন্যাসে খুব উৎসাহী হয়ে উঠার মতো কোনো কাহিনী না থাকলেও সাদামাটা ব্যাপারগুলো হঠাৎ কেমন অসাধারণ হয়ে উঠে তা বুঝেছি। গ্রাম-শহরের মেলবন্ধন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত অসংখ্য চরিত্র তবে কোনো চরিত্র নিয়ে না ভেবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, প্রত্যেকে স্ব স্ব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি চরিত্রের বিচিত্র রকমের কাহিনীর মারপ্যাঁচে কিছু সময় হাফ ধরে যায়, তবে লেখক আগ্রহ ধরে রেখেছেন তাদের মধ্যে অদ্ভুত সেতুবন্ধনের মাধ্যমে। বিশেষ ভালো লেগেছে নয়নতারা- বিষ্ণুপদের সরল মিষ্টি নির্ভেজাল দাম্পত্য জীবন, মনীশকে নিয়ে অপর্ণার উদ্বেগ। হেমাঙ্গের মধ্য দিয়ে লেখক যেভাবে এক সাগর দ্বিধাদ্বন্দ্বের পরও নিজের ভালোবাসাকে দিশেহারা হয়ে খুঁজে পাওয়া দেখিয়েছেন তা সত্যিই মজার ছিলো! ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের নিষ্পাপ ভালোবাসা ফুটে উঠেছে বোবা গোপালের প্রতি বড় ভাই পটলের গভীর ভালোবাসার প্রকাশে। বীণাপাণি আর নিমাইয়ের শেষ পরিণতিও মনে তৃপ্তির সঞ্চার করেছে। তবে উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো কৃষ্ণজীবন, যার সাথে প্রতিটি চরিত্রই জড়িত। উপন্যাস জুড়ে চরিত্রগুলো নিজের সাথেই কথা বলে, নিজের সাথে বোঝাপড়ার এক দৃষ্টান্ত ছিলো এতে। প্রতিটি চরিত্র আর তাদের বিচিত্র রকমের ভাবনার মধ্যে যেনো কিছু জায়গায় নিজেরই প্রতিচ্ছবি পাচ্ছিলাম। উপন্যাসটি মনে অসংখ্য প্রশ্নের উদ্রেক করবে, আবার উপন্যাসের মধ্যেই উত্তর খুঁজে পাবেন। এতো বৃহৎ উপন্যাস নিয়ে কিছু লিখা রীতিমতো ভয়ংকর! কূলকিনারা পাওয়া যায় না, সব চরিত্র নিয়েই লিখার মতো হাজারটা কথা আছে যা লিখে শেষ করার মতো নয়। শীর্ষেন্দুবাবু আপাদমস্তক মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে মোটামুটি একটি পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়ে তবেই ইতি ঘটিয়েছেন। আর এ কারণেই হয়তো বইটি শেষ করে মন কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে থাকলেও অন্যরকম পরিপূর্ণতায় ভরে আছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর মনোবৈচিত্র্য উপলব্ধিকরণে পড়তে হবে বইটি। বইয়ের নাম: পার্থিব; লেখক: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়; ধরন: পশ্চিমবঙ্গের উপন্যাস; প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৪ পর্ব : ৪ বইয়ের নাম : পার্থিব লেখক : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রকাশনী : আনন্দ পাবলিশার্স ( ভারত) পৃষ্ঠা : ৭১৩ মূল্য : ৯০০ টাকা রিভিউ - আমরা কেউ আসলে পরিপূর্ণ না। আমাদের রয়েছে নানান চাওয়া পাওয়া, রয়েছে নিজস্ব ভাবনা। যার বিস্তৃতি আমরা হয়তো নিজেরাও জানিনা। আমাদের প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব জগত আছে এবং প্রত্যেকেই নিজের মত করে চিন্তা করি, এই পার্থিব জীবনের চলার পথে অনেক চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় খেলে। আমাদের একটা অংশ বাউল হতে চায়, আবার আরেকটি অংশ নতুন প্রযুক্তি পেলে লুফে নিতে চায়। আমরা হয়তো আরো একটু আরো অন্যরকম, আরও অন্যরকম। ভেতরে আবার খন্ড খন্ড। উপন্যাসের শুরু হয়েছে এমন ভাবে "বাদামতলায় রামজীবনের পাকা ঘর উঠেছে ওই"। শেষ হয়েছে - "এসো কান্নায় একাকার হয়ে যায়। একাকার হয়ে যায়।" পার্থিব বলতে আমরা আসলে কি বুঝি? ইহকাল বিষয়ক কি, কিংবা জাগতিক সব বিষয়! এই পার্থিব জগৎটাই বা কি? কোন পান্থশালা? কিংবা রঙ্গশালা? জীবন কেন, এই জীবনের অর্থ কি, কেনই বা শুধু মাত্র বেঁচে থাকা? নাকি এর গভীরে রয়েছে কোন গভীর তাৎপর্য? বাংলা সাহিত্যের প্রবীণ লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় 'পার্থিব' উপন্যাসের মাধ্যমে সেই বিষয়বস্তুই দেখাতে চেয়েছেন। উপন্যাসের কাহিনীর মাধ্যমে এক আলাদা জগৎ তৈরী করেছেন। এই যে আমাদের জীবন এর উদ্দেশ্য কি ? আমরা কিসের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এই রকম অনেক দার্শনিক প্রশ্নের কোন উত্তর আমরা খুঁজে পাই না। এই উপন্যাসে লেখক তার সৃষ্টি বিভিন্ন চরিত্র ও আধডজন কাহিনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এইসব প্রশ্নের উত্তর। বিষ্ণুপদ দারিদ্রতা, অভাব, কষ্ট নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। বয়সে নুইয়ে পড়া এক বৃদ্ধ। চেয়ে থাকে ছেলে রামজীবনের অর্ধতৈরীকৃত ইটের বাড়িতে, যেখানে থাকার তার বড্ড ইচ্ছে। পাকা বাড়িতে থাকবে। খুব কি বড় চাওয়া? বৃদ্ধ বয়সে হয়তো মানুষের চাওয়ার উন্নতি হয়। বিষ্ণুপদের ছেলেমেয়ের মধ্যে কৃষ্ণজীবন মস্ত মানুষ, পৃথিবী ব্যাপি তার সুনাম। সে একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী তার রয়েছে সুন্দরী স্ত্রী, রয়েছে ছেলেমেয়ে। গুরুগম্ভীর, ভাবুক যে সবসময় সমাজ, শহর,দেশ, পৃথিবী নিয়ে চিন্তা করে। উপন্যাসের একজন শক্তিমান নিরীহ চরিত্র। রামাজীবন একজন মাতাল, ডাকাত দলের সদস্য। প্রতিদিন মদ খেয়ে, বউ, ছেলেদের মারে। কিন্তু বাবা-মাকে দেবতাতুল্য সম্মান, শ্রদ্ধা করে। পিতৃশ্রদ্ধার কাছে খারাপ গুণাবলি অনেকটা ম্রিয়মান মনে হয়। বামাচরন উপন্যাসে একজন কুলাঙ্গার সন্তানের চরিত্র হিসেবেই পরিচিত পেয়েছে। উপন্যাসের আরেক দিকে রয়েছে বিণাপনি এবং নিতাই। অভাবে বিণাপনিকে যাত্রার দলে নাম লেখাতে হয়। নিমাই হয়ে থাকে বউয়ের মুখাপেক্ষী। নিমাইয়ের গুণ সততা, ভক্তি, শ্রদ্ধা। এই গুণেই একসময় উপরে উঠে যায়, তীক্ততা সৃষ্টি হয় বিণাপনির সংগে। মনীশ এবং অপর্ণা দুজনের প্রেমের বিয়ে, একজন দৃঢ়চেতা মানুষ হলেও হার্টএ্যাটাক তাকে একদম অচলের মতো করে দেয়। জীবনের মানে খোঁজার চেষ্টা করে সে। অপর্ণা ভালোবাসায় আগলে রাখতে চায় মনীশ কে। তাদের রয়েছে তিন ছেলেমেয়ে। ঝুমকি, অনু বুবকা। আরেকদিকে নজর দিলে দেখা যাবে অন্যতম চরিত্র হেমাঙ্গ, রয়েছে চারুশীলা, তার চাচাতো বোন। হেমাঙ্গ থাকতে চায় একা, কিন্তু বারবার তার একাকীত্বে আঘাত হানতে চায় তার পরিবার, রশ্মী রায়, চারুশীলা। রশ্মীরায়ের সাথে বন্ধুত্ব হলেও পারিবারিক চাপে, কোন এক অজ্ঞাত কারনে বিয়ে করতে পারেনা। কোথায় যেন একটা শুন্যতা অনুভব করে। ঝুমকি এবং হেমাঙ্গ দুজন দুজনকে ভালোবাসলেও তা তাদের বুঝতে অনেক সময় লাগে। চারুশীলা একজন পরপকারীই নয়, খরুচে নারী। বরের অঢেল টাকা থাকায় খরচ করে সে। মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করে। মানুষের কষ্ট তাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করে। দেশ সম্পর্কে বিরক্ত থাকলেও বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য ছটফট করে। চয়ন চরিত্রটা আরও অন্যরকম। মৃগীরোগী, ভায়ের বাসায় থাকে। জীবন সম্পর্কে সে হতাশ। তবে পৃথিবীর জন্য সেও কিছু করতে চায়। আনন্দিতা নয়নকে উপরে তুলতে চেয়েও ব্যর্থ হয়। ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রের দেখা পাওয়া যায় আপার মাধ্যমে। আধাডজন কাহিনীর বহু চরিত্রের দেখা মেলে এই সুবৃহৎ উপন্যাসে। লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কাহিনীর প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন নানান চরিত্র, ঘটিয়েছেন ব্যাপ্তি। নিজের পুরাতন শিকড় শীর্ষেন্দু কখনই ভুলতে পারেননি। তাই তো বারবার ফিরে আসেন এই দেশে। আর লেখক নিজেও এদেশে এসে বলেন - এটা সত্যি যে ওপার বাংলার চেয়ে এখানে আমার পাঠক বেশি। এখানকার মানুষের কাছে যে ভালোবাসা পেয়েছি, এতটা কখনো ওখানেও পাইনি। পার্থিব শীর্ষেন্দুর এ যাবৎ কালের বৃহৎ উপন্যাসের একটি। নানান চড়াই উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, প্রেম-ভালোবাসার টানাপোড়নে এগিয়ে গিয়েছে সব চরিত্র। আরেকটি ভালোলাগার বিষয় এই উপন্যাসে শহর গ্রাম মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে- কখনও লন্ডন আবার কখনও আমেরিকা। আর যেভাবে সব চরিত্রগুলোকে একজায়গায় জড়ো করে এক স্রোতে মিলিয়েছেন লেখক, সেটা এককথায় অতুলনীয়। এ যেন শত নদী পেরিয়ে গিয়ে একই সাগরে পতিত হয়েছে। লিখেছেনঃ সাদিক জামান শুভ্র
Was this review helpful to you?
or
বই রাজা রকমারি।বই পড়তে চান রকমারিতে চলে আসুন...............।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #ডিসেম্বরঃ ২৩ বইঃ পার্থিব লেখকঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ঘরানাঃ মনস্তাত্বিক প্রকাশনীঃ আনন্দ প্রকাশনী প্রথম প্রকাশঃ ১৯৯৪ পৃষ্ঠাঃ ৭১৪ মূল্যঃ ৯০০টাকা . শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে।ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসেন।ঢাকায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যখন বুড়িগঙ্গা দেখতে গিয়েছিলেন।দুঃখ করে বললেন,“চোখে জল এল।একেবারে মরে গেছে।এখনো হয়তো উদ্যোগ নিলে একে বাঁচানো সম্ভব।নদীর সাথে সভ্যতার সম্পর্ক।নদী সংস্কার না হলে সভ্যতা বাঁচে না”।প্রকৃতির প্রতি লেখকের এই যে মায়া সেটার প্রমাণ হলো পার্থিব উপন্যাসটি।এই উপন্যাসে লেখক তার সৃষ্টি অসংখ্য চরিত্র ও তাদের কাহিনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন গ্রামবাংলা ও শহরের প্রেক্ষাপট। . রিভিউঃ বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ এক অজপাড়াগায়ে তার ভাঙা ঘরের দাওয়ায় বসে চেয়ে থাকে তার মেজো ছেলের অর্ধসমাপ্ত পাকা বাড়ির দিকে।সারাটা জীবন দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে আজন্ম ক্ষুধা নিয়ে,আধপেটা খেয়ে থাকা বিষ্ণুপদ শেষ বয়সে ছেলের পাকা বাড়িতে একটু সুখে থাকার স্বপ্ন দেখেন।কিন্তু বাড়িটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।বাড়িটা যেন তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে দাঁত মুখ খিচিয়ে যাচ্ছে।তার পাকা বাড়িতে থাকার ইচ্ছা কি শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছিল? বিষ্ণুপদের তিন ছেলে কৃষ্ণজীবন,রামজীবন ও বামাচরণ।তার এক মেয়েও আছে বিণাপাণি। বিষ্ণুপদের তিন ছেলের মধ্যে কৃষ্ণজীবন আলাদা।বিখ্যাত পরিবেশবিজ্ঞানী কৃষ্ণজীবন যেন ভালোবাসার এক আধার।পরিবার পরিজন ছাড়িয়ে সে অনেক উপরে উঠে গেছে।ছোট ভাইয়েরা যখন সামান্য জমি ভাগের জন্য রক্তারক্তি করছে তখন কৃষ্ণজীবন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সেমিনারের জন্য যাচ্ছে।পৃথিবীকে মানুষটা ভালোবাসে সে।তাই সেটার উপর বইও লেখে।সেটা আমেরিকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে।এত কিছুর পরেও তার মনটা পড়ে থাকে শৈশবের গ্রাম বিষ্টুপুরে।ক্ষুধার যাতনা সহ্য করে এখান থেকেই সে মানুষ হয়েছে।শিক্ষিত উঁচু বংশের মেয়েকে বিয়ে করার কারণে,এবং তার স্ত্রী তার পরিবারকে অপছন্দ করায় নিজের পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকতে হয় তাকে।কোন এক কারণে দীর্ঘদিন পরিবারের কোন খোঁজও নেইনা সে।কি সেই কারণ? এদিকে বিষ্ণুপদের অপর দুই ছেলের মধ্য রামচরণ প্রায় মাতাল হয়ে থাকে,কিন্তু মা বাবার ভক্ত সে।বাবা মা তার সব।বড্ড ভালোবাসে তাদের।ওদিকে বামাচরণ বউ নিয়ে আলাদা থাকে,সে আর তার বউ একই জায়গায় থাকলে বাবা মায়ের খেয়াল রাখেনা। বিষ্ণুপদের মেয়ে বিণাপাণি।তার বিয়ে হয় তারচেয়ে অভাবী এক সংসারে।স্বামী নিমাই,অসম্ভব সহজ সরল এক ভালো মানুষ।একসময় ভীষণ অসুস্থে পড়লে বিণাপাণিকে যাত্রাদলে যোগ দিতে হয়।নিমাই ভালো হওয়ার পরেও কোন কাজকর্মের সুবিধা করতে পারে না।বহুবছর বিয়ে হলেও তাদের সম্পর্কের জোড়া লাগেনা।একসময় বিণাপাণিকে ছেড়ে নিমাই চলে যেতে বাধ্য হয়।বিণাপাণি যাত্রাদলের একটি ছেলের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে।শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল বিণাপাণি ও নিমাইয়ের সম্পর্কের? এ উপন্যাস শহুরে সংস্কৃতিতে বড় হওয়া হেমাঙ্গের কাহিনী।যে সবসময় একা থাকতে পছন্দ করে।তাই এখন পর্যন্ত বিয়ে শাদি করেনি।কলকাতায় থাকতে থাকতে একসময় যান্ত্রিক ও একঘেয়ে জীবনে হাঁপিয়ে উঠে সে।তাই এক অজপাঁড়াগায়ে নদীর পাশে বাড়ি করে।সময় পেলেই ছুটে যায় সেখানে।সন্ন্যাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হেমাঙ্গের জীবনে হঠাৎ করেই পরিবর্তন আসে এক নারীর আগমনে।সেই সম্পর্ক নানান প্রতিকূল অনুকূল অবস্থায় এগিয়ে যায়।সম্পর্ক টা হয়েও যেন হয়না।কি হয়েছিল শেষ পর্যন্ত হেমাঙ্গের জীবনে? এই উপন্যাস আপা নামের একটি সংগ্রামী মেয়ের গল্প।যে বয়সে মেয়েরা নিজের ক্যারিয়ার, পরিবার,বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখে,সে বয়সেই আপা স্বপ্ন দেখে সমাজ পরিবর্তন করার,অসহায়দের সাহায্য করার।ক্লাস শেষে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিখারিদের সাক্ষাতকার নেয়।মানুষের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে।তার জীবনেট লক্ষ্য ব্যতিক্রম কিছু করার। আছে মনীশ নামের এল বাবার গল্প।যে কিনা সারাটা জীবন শুধু টাকা কামিয়েছেন আর খরচ করেছেন।ছেলেমেয়েদেরর আনন্দে রেখেছেন সবসবসময়।স্ত্রী টাকা জমাতে বললেও জমাননি,ভবিষ্যৎ চিন্তা করেননি।হঠাৎ একদিন তিনি গুরুতর অসুখে পড়লে তার পরিবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। আছে চয়ন নামের এক অসহায় ছেলের গল্প।যে আপন ভাই ভাবীর বাড়িতে আশ্রিতের মতো নানান অবহেলা সহ্য করে থাকে।মৃগী রোগ ও শারীরিক দূর্বলতার কারণে কোন কিছু করতে পারেনা।টিউশনি করিয়ে কোনরকম নিজের খরচ যোগাত করে।তার ভবিষ্যৎ কি সে নিজেই জানেনা। এরকম আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়ে অসাধারণভাবে এগিয়েছে এই কাহিনী। . পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে পড়েছিলাম বইটি।বইটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি থেকে পড়তে এনেছিলাম।৭১৪পৃষ্ঠার এতো মোটা বই,প্রথমে পড়তে ভয়ই পেয়েছি এতো বড় বই আদৌ শেষ পর্যন্ত পড়তে পারবো কিনা,শেষ করার আগেই বোরিং হয়ে যাবো কিনা ভেবে।সেজন্য ৫দিন পর্যন্ত বইটি শুধু হাতেই নিয়েছি কিন্তু পড়িনি।বলাবাহুল্য এটা যখন পড়তে নিই তখন সেটাই ছিল আমারর জীবনে সবচেয়ে বড় বই।তাই একটু বেশিই নার্ভাসে ছিলাম।কিন্তু যখন পড়া শুরু করি তখন শুধু পড়েই গিয়েছি।একবারের জন্যও মনে হয়নি বইটা হাত থেকে রাখি।লেখক এখানে অসংখ্য চরিত্রের আগমন ঘটিয়েছেন,তাই প্রথমে ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত চরিত্রের মারপ্যাঁচে পড়ে যাবো নাতো!এত চরিত্র মনে থাকবে তো!কিন্তু না লেখক চরিত্রগুলোকে এতো সুন্দর করে সাজিয়েছেন,এতো অসাধারণ কাহিনী এগিয়ে নিয়ে গেছেন যে একবারও চরিত্রের মারপ্যাঁচ বা কাহিনীর ধাঁধাঁয় পড়তে হয়নি।লেখক এক চরিত্রের সাথে অপর চরিত্র,এক ঘটনার সাথে অন্য ঘটনার অত্যন্ত সুন্দর সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন।অধিকাংশ উপন্যাসে একটি বা হাতে গোনা দুইতিনটি প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র থাকে।কিন্তু এই উপন্যাসে প্রতিটি চরিত্রই প্রধান,তাদের স্ব স্ব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ।লেখক এখানে যেমন শহুরে চিত্র এঁকেছেন,তেমনি গ্রাম্যচিত্রও এঁকেছেন।তুলে ধরেছেন উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন কাহিনী,তাদের সমস্যা,সুখ,দুঃখ।কাহিনীর প্রেক্ষাপট পশ্চিমবাংলার হলেও,বিষ্ণুপদের চোখ দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন পূর্ববাংলাকে।দেশ ছেড়ে চলে যাবার পর বহু বছর পরেও নিজের দেশের জন্য মনটা কেমন আকুলিবিকুলি করে সেটা তুলে ধরেছেন।কৃষ্ণজীবনের মাধ্যমের তুলে ধরেছেন স্বদেশপ্রেম,গ্রামবাংলার প্রেম।আপার মাধ্যমে একটি সংগ্রামী মেয়েকে তুলে ধরেছেন।এই উপন্যাসের সব চরিত্রকেই আপন মনে হবে।কোন একটি চরিত্র কে মনে হবে,এটি যেন আপনার নিজেরই প্রতিচ্ছবি।অসাধারণ একটি উপন্যাস।ঘোরের মধ্যেই পড়েছি।আমার খুব ভালো লেগেছে।লেখক প্রতিটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক,বাহ্যিক জীবনের প্রতিচ্ছবি লেখক তুলে ধরেছেন এ উপন্যাসে মাধ্যমে। রেটিং:- ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
"পার্থিব শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়" আমাদের প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব জগত আছে এবং প্রত্যেকেই নিজের মত করে চিন্তা করে, এই পার্থিব জীবনের চলার পথে অনেক চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় খেলে । অনেক প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়,সচেতন কিংবা অচেতন মনে মাঝে মাঝে অনেক প্রশ্ন এসে দাগ কাটে, আসলে এই যে আমাদের জীবন এর উদ্দেশ্য কি ? আমরা কিসের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এই রকম অনেক দার্শনিক প্রশ্নের কোন উত্তর আমরা খুঁজে পাই না । এই উপন্যাসে লেখক তার সৃষ্টি বিভিন্ন চরিত্র ও আধডজন কাহিনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এইসব প্রশ্নের উত্তর গ্রামবাংলা ও শহরের প্রেক্ষাপটে। বিষ্ণুপদ, কৃষ্ণজীবন, হেমাঙ্গ, নিমাই, চয়ন এই পাঁচটি পুরুষ চরিত্রকে কেন্দ্র করে এদের আশেপাশের অনেক চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে পার্থিব। এ উপন্যাসের উম্মোচন ঘটেছে এক অজ পাড়াগাঁয়ে যেখানে বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ তার ভাঙা ঘরের দাওয়ায় বসে প্রত্যাশায় চেয়ে থাকে সামনে তার সেজো ছেলের অর্ধসমাপ্ত পাকা বাড়িটির দিকে। আজীবন দারিদ্র ও ক্ষুধার সাথে লড়াই করে শেষ জীবনে বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ একটু সুখের আশার বাড়িটির দিকে চেয়ে থাকে। কিন্তু অর্ধসমাপ্ত বাড়িটির কঙ্কাল যেন তাকে দাত-মুখ খিচিয়ে বিদ্রুপ করে। বিখ্যাত পরিবেশবিজ্ঞানী কৃষ্ণজীবন যেন ভালোবাসার এক আধার। বিষ্ণুপদের তিন ছেলের মধ্যে কৃষ্ণজীবন যেন ব্যাতিক্রম। পরিবার পরিজন ছাড়িয়ে কৃষ্ণজীবন অনেক উপরে উঠে গেছে। খুব সামান্য নয়! অনেক বেশি উপরে! ছোট ভাইয়েরা যখন সামান্য জমি ভাগের জন্য রক্তারক্তি করছে তখন কৃষ্ণজীবন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সেমিনারের জন্য যাচ্ছে। মানুষটা ভালোবাসে এই পৃথিবীকে। কৃষ্ণজীবন চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক নিজের ভালোবাসাও কি প্রকাশ করেন নি? পড়লেই জানতে পারবেন। এত উপরে উঠলেও তার মনটা কিন্তু বরাবর মাটিতে ছিলো। কলকাতায় সাততলার উপরে নিজের ফ্লাটে থাকলেও তার মনটা পড়ে থাকে শৈশবের বিষ্টুপুরে। ক্ষুধার যাতনা সহ্য করে এই বিষ্টুপুরে থেকেই সে মানুষ হয়েছে। শেষ জীবনে আবারও এই গ্রামে ফিরেই লাঙল চালাবার স্বপ্ন তাড়া করে ফেরে কৃষ্ণজীবনকে। কলকাতার ব্যাস্ত জীবনে হাপিয়ে ওঠে হেমাঙ্গ। বিভিন্ন প্রযুক্তি পন্যের নেশায় বুদ হয়ে থাকা হেমাঙ্গ যেন হঠাৎ করেই পরিবর্তন হয়ে গেলো তার জীবনে নারীর আগমনে। সম্পর্কগত টানাপোড়নে অসহ্য জীবনকে নতুন করে জানতে সুন্দরবনের নিকটে একটি গ্রামে বসবাস করতে লাগলো। গ্রাম্য জীবনে এসে জীবন নতুন একটা দিক যেন উম্মোচন করলো সে। সামাজিক সম্পর্কের চাপে পিষ্ট হেমাঙ্গের মধ্যে কখনো কখনো নিজেকে খুজে পেয়েছি। অপরাধ আর অপকর্মের যুগে নিমাই যেন অন্যধাতুতে গড়া এক মানুষ। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন যোগ্যতা থাকে। নিমাইয়ের একটা যোগ্যতা একটাই, তার সততা। এই সততাকে আকড়ে ধরেই বেচে আছে সে। সততার দেখেই তারকাছে বীণাপাণিকে বিবাহ দেন বিষ্ণুপদ। একসময় অভাবের তাড়নায় যাত্রা পালায় নামতে হয় বীণাকে। সংসারে নিমাই যেন স্ত্রীলোক হয়ে থাকে। বীণার লোভ-পাপ কখনোই ছুঁতে পারে না তাকে। বিরক্ত হয়েই যেন নিমাইকে ত্যাগ করে বীণা। কিন্তু সৎ লোকের সততার কি দাম নেই? উপন্যাসে নিমাই চরিত্রের প্রতি একটা অন্যরকম শ্রদ্ধা কাজ করে। সততা আর বীণার প্রতি ভালোবাসায় অনন্য এই মহৎ মানুষ। এপিলেপটিক রোগে আক্রান্ত চয়ন নিজের মত করে তার পৃথিবী সাজিয়ে নিয়েছে। নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেওয়ার যেন এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। শত মানুষের চেষ্টা ও প্রবনঞ্চনায় বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি তার অবস্থান থেকে। উপন্যাসের সবচেয়ে দুর্বল চরিত্র মনে হলেও সবচেয়ে সবল ছিলো চয়ন। ব্যাক্তিগত মতামতঃ আমি আমার জীবনে বেশ কিছু অসাধারন বই পড়েছি। তবে সবসময় ভালো বইয়ের ধারা তৈরি করতাম। কোনটা বেশি ভালো আর কোনটা কম। কিন্তু সেটা আর সম্ভব না। ভালো বইয়ের ধারা তৈরি করা অসম্ভব। উপন্যাসের সাথে নিজে এক হয়ে গেছি। প্রত্যেকটা চরিত্র নিজের মধ্য দিয়ে অনুভব করাটা একটা আলাদা ব্যাপার। ৭১৪ পৃষ্ঠার একটা বই পড়ার পর থেকে একবারও বিরক্ত হই নি। শেষের প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠা একটানা পড়ে ফেলেছি। পড়তে পড়তে কখন যে রাত পার হয়ে সকাল সাতটা বেজে গেছে সেটা টের পাই নি। শেষ হওয়ার পরের অনুভূতি ছিলো "আহা! শেষ!"। এই কাল্পনিক চরিত্রগুলো বাস্তব হয়ে গেছিলো। আর কখনো এদের সাথে দেখা হবে না। এজন্য মনে হচ্ছে উপন্যাসটা শেষ না হলেই ভালো হতো। অনন্তকাল ধরে চললে ব্যাপারটা চমৎকার হতো। শেষ হওয়ায় মনে হলো স্বজনগুলো হারিয়ে গেলো। যারা বইটা বইয়ের আকার দেখে অথবা অন্য যেকোনো কারনে পড়েন নাই, তাদের উচিত বইটা পড়ে ফেলা।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যার লেখনীতে রয়েছে অন্যরকম স্বাদ।তার লেখা “পার্থিব” উপন্যাসটি অনেক ভাল লেগেছে।আমাদের প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব জগত আছে এবং প্রত্যেকেই নিজের মত করে চিন্তা করে, এই পার্থিব জীবনের চলার পথে অনেক চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় খেলে । অনেক প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়,সচেতন কিংবা অচেতন মনে মাঝে মাঝে অনেক প্রশ্ন এসে দাগ কাটে, আসলে এই যে আমাদের জীবন এর উদ্দেশ্য কি ? আমরা কিসের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এই রকম অনেক দার্শনিক প্রশ্নের কোন উত্তর আমরা খুঁজে পাই না । এই উপন্যাসে লেখক তার সৃষ্টি বিভিন্ন চরিত্র ও আধডজন কাহিনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এইসব প্রশ্নের উত্তর গ্রামবাংলা ও শহরের প্রেক্ষাপটে । বিষ্ণুপদের তিন ছেলের মধ্যে কৃষ্ণজীবন গ্রামের দরিদ্রতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন সাথে সাথে পরিবেশবিজ্ঞানী হিসাবে দেশ-বিদেশে তার নাম হয় , কিন্তু তারপরও তার সেই ছোট বিষ্ণুপুর গ্রামটি তাকে টানে । এই পৃথিবীর প্রতি তার অনেক মায়া কিন্তু পৃথিবী যে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা তিনি কাউকে বোঝাতে পারেন না তার স্ত্রীও তাকে বুঝতে পারে না। সকল পাঠকদের বলতে চাই যে এই লেখক এর কোন বই যদি নাও পড়ে থাকেন তাইলে এই বইটা অবশ্যই পড়বেন,এত বড় একটা বই কিন্তু পড়ে বিন্দুমাত্র হতাশ হবেন না এইটা বলে দিতে পারি। আপনাদের কাছেও ভাল লাগার খোরাক হতে পারে বইটি।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃপার্থিব লেখকঃশীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রকাশনীঃআনন্দ পাবলিশার্স মূল্যঃ ৯৫০টাকা প্রতিটি বই প্রেমীদের জন্য অবশ্যই পার্থিব অসাধারণ এক বই। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এমন অসাধারণ বই আর পড়িনি বললেও চলে।মোটা বইটি শেষ করার পরে আমি ভেবেছিলাম লেখক আরও হাজার পৃষ্ঠা লিখলে আমার আপত্তি হবে না।আমি এই বইটি থেকে প্রচুর জীবনের পাঠ শিখেছি। মানুষের সম্পর্কে আমি সবচেয়ে ভাল জিনিসটি শিখেছি হ'ল, মানুষ সর্বদা তার সমস্ত দুর্বলতা, বিচক্ষণতার প্ররোচনা, লোভ এবং অভিলাষকে যুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। তিনি জানেন বা হতে পারে এটি তার হৃদয়ের কোনও কোণে রয়েছে যে তিনি যা করছেন তা ভাল নয়। কিন্তু তারপরে আবার নিজেকে সমর্থন করার বিভিন্ন কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে। আমি ভেবেছি এবং উপলব্ধি করেছি মানুষ তার ভুলগুলি ছেড়ে যেতে চায় না। সে নিজেই নিজের ভুল পছন্দ করে। এবং এই ভালবাসার কারণে তিনি নিজের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলিকে ঘরোয়া পশুর মতো পুষ্ট করেন।এটি আরও একটি দার্শনিক যাত্রা। জীবন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রেখে যায়। সমস্ত চরিত্র সুন্দরভাবে চিত্রিত করা হয়।যাঁরা প্রকৃতি, সুন্দর পৃথিবীকে ভালবাসেন এবং যাঁরা অতিরিক্ত সময় চিন্তাভাবনায় হারিয়ে যেতে চান তাদের অবশ্যই এ বইটি একবার হলেও পড়া উচিত বলে মনে হলো।
Was this review helpful to you?
or
আমাদের প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব জগত আছে এবং প্রত্যেকেই নিজের মত করে চিন্তা করে, এই পার্থিব জীবনের চলার পথে অনেক চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় খেলে । অনেক প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়,সচেতন কিংবা অচেতন মনে মাঝে মাঝে অনেক প্রশ্ন এসে দাগ কাটে, আসলে এই যে আমাদের জীবন এর উদ্দেশ্য কি ? আমরা কিসের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এই রকম অনেক দার্শনিক প্রশ্নের কোন উত্তর আমরা খুঁজে পাই না । এই উপন্যাসে লেখক তার সৃষ্টি বিভিন্ন চরিত্র ও আধডজন কাহিনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এইসব প্রশ্নের উত্তর গ্রামবাংলা ও শহরের প্রেক্ষাপটে । শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর পার্থিব বইটা যখন হাতে নেই এবং পড়া শুরু করি ভাবিনি বইটা পড়ে নিজেকে নতুন করে একবার আবিষ্কার করবো । পড়তে পড়তে অনেক সময় মনে হয়েছে এ যেন আমার জীবনের এক কাহিনী, বিষ্ণুপদ-নয়নতারা এর সরল নির্ভেজাল দাম্পত্য জীবনের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা আসলেই অন্য এক মাপের । বিষ্ণুপদের তিন ছেলের মধ্যে কৃষ্ণজীবন গ্রামের দরিদ্রতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন সাথে সাথে পরিবেশবিজ্ঞানী হিসাবে দেশ-বিদেশে তার নাম হয় , কিন্তু তারপরও তার সেই ছোট বিষ্ণুপুর গ্রামটি তাকে টানে । এই পৃথিবীর প্রতি তার অনেক মায়া কিন্তু পৃথিবী যে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা তিনি কাউকে বোঝাতে পারেন না তার স্ত্রীও তাকে বুঝতে পারে না । এই উপন্যাসে কৃষ্ণজীবন এর পরেই হেমাঙ্গ চরিত্র অনেক ভালো লেগেছে । শহরের যান্ত্রিক জীবনে একা থাকার ইচ্ছা এবং একঘেয়ে জীবন ভালো না লাগায় অচেনা নির্জন গ্রামে একা বসবাস এবং গ্রামের জীবনের সাথে খাপ খাওয়া, ভালোবাসার টানাপোড়েন, এইসব নিয়ে হেমাঙ্গর সাথে নিজের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি !! সকল পাঠকদের বলতে চাই যে এই লেখক এর কোন বই যদি নাও পড়ে থাকেন তাইলে এই বইটা অবশ্যই পড়বেন,এত বড় একটা বই কিন্তু পড়ে বিন্দুমাত্র হতাশ হবেন না এইতা বলে দিতে পারি । এই বইটা পড়ে কানে একটা গান শুধু কানে বাজছিলো, এই বই এর পুরো রিভিউ লিখতে গেলে পড়তে বিরক্ত লাগতে পারে তাই ওল্ড স্কুল এর এই গানের ছয়টা লাইন দিয়ে শেষ করলাম । ''কেউ খোঁজে কেউ পড়ে দেখে, পুরনো দিনের গল্প কেউ চুপ করে চুরি করে নিয়ে তুলে রাখে কিছু অল্প না তাকায় পিছন পানে সামনে ঝুকেছে হেটে সেই বোকাটাও এক ফাঁকেতে চোখ নিয়েছে মুছে হায়রে সময়, হায় পোড়া মন, হায় পুরনো স্মৃতি খানিক যদি কেঁদে নিয়ে একটু চলে যেতি ''
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ পার্থিব লেখকের নামঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মূল্যঃ ৯০০ টাঁকা (রকমারি মূল্য) পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৭১৪ প্রকাশনীঃ আনন্দ প্রকাশনী প্রকাশকালঃ ১৯৯৪ প্রচ্ছদঃ সুনীল শীল ক্যাটাগরি ঃ জীবনবোধের উপন্যাস এই উপন্যাস রিভিউ শুরুর আগে কটি কথা বলতেই হবে আমাকে, আমার ছোটমামা ছিলেন বইপাগল,কতশত বই সে পড়েছিল সে জানে, তার অনেক প্রিয় বইয়ের মধ্যে এটিও ছিল, মামা যখন মারা যান, সেসময় খালামনিরা এই বই টির কথা বলত, আরো ক’টি বইয়ের নাম শুনেছিলাম, তো তক্ষণ বইটি পড়া শুরু করলেও আমি কিছু বুঝিনি, কেন এই বই? কথা গুলা কঠিন লেগেছিল.........। যায় হোক, পড়ে বইটি দু-তিন বার পড়েছি! এই লেখকের ভাল রকম ভক্ত হয়ে গেছি বলা যায়...। বলা যেতে পারে এটি পুরুষ-প্রধান একটি উপন্যাস! পার্থিব শব্দটির আভিধানিক অর্থ পৃথিবী সংক্রান্ত। রামজীবন,বিষ্ণুপদ, কৃষ্ণজীবন, হেমাঙ্গ, নিমাই, চয়ন এবং অয়ন এই পুরুষ চরিত্রকে কেন্দ্র করে বাকি সব চরিত্র আর গল্প ঘুরেছে। । সারাজীবন দরিদ্রতার সাথে লড়াই করতে থাকা বিষ্ণুপদ, দারিদ্রতা সাথে যুদ্ধে ক্লান্ত অশীতিপর বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ জীবনের শেষবেলায় এসে মেজ ছেলে রামজীবনের তৈরি হতে থাকা পাকা বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে। বৃদ্ধের বড় ছেলে কৃষ্ণজীবন তাঁর কঠোর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে হয়ে গেছে নামী-দামী অধ্যাপক এবং দার্শনিক, অর্থাভাব নেই, নেই অভাবের তাড়না! কলকাতার সাততলার উপরে একটি সাজানো ফ্ল্যাটে, সুন্দরী স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে বেশ সুখেই আছে!আর বৃদ্ধ বাবা মা? ? ? মেজ ছেলে , অশিক্ষিত পেশায় ডাকাত রামজীবন অন্যায় আর দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাছে শুধু নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে বলে। আসলেই পার্থিব জীবন বড় নাটকীয় । কন্যা বীণাপাণি ও জামাই নিতাই, অর্থাভাবে বীণা কে যাত্রা দলে টেনে নিলেও নিমাই তার সততা- নিষ্ঠায় অবিচল? সততা নিষ্ঠা কি লোক দেখানো তবে? নিত্যদিন আমরা নতুন নতুন মানুষকে দেখি, চিনি জানি! কখন চেনা মানুষ অচেনা হয়ে যায়! এভাবেই গল্পে আরো অনেক চরিত্রের আগমন! হায় বিষ্ণুপদ, শেষ মুহূর্তে সাথে ছিল একটি আম্রপল্লব.....................।। এটাই কি শেষ? প্রতিক্রিয়াঃ পার্থিব, নামেই একটা আধ্যাত্মিক টান আছে, কৃষ্ণপদের জীবনের দর্শন পাঠক কে মুগ্ধ করবে, এটা হলফ করে বলতে পারি, উপন্যাসে্র আপনি জীবন কে নতুন করে ভাবতে শিখবেন, কখন নিজেকে রামজীবন বা কৃষ্ণপদ ভাবলেও ভাবতে পারেন! পার্থিব পড়ে আমার মনে হয়নি এটি কাল্পনিক, আমি আপনি নিজেই এই উপন্যাসের এক চরিত্র ।মাঝে মধ্যে মনে হয় মৃত্যুর সময় মানুষ না থাকলেও , আপন মানুষ না থাকলে আমাদের কি আম্রপল্লব থাকবে? পার্থিব জীবনের সব কি পার্থিব? না অপার্থিব? আসলে উপন্যাস টি পড়লে মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়, তবে প্রচণ্ড মন খারাপের মাঝে উপন্যাস টি পড়লে মন ভালও করে দিতে পারে, মাঝে মাঝে মনে হবে, না আমি তো ভালই আছি। সবাই ভাল থাক, বাবা-মা কে নিয়ে। রকমারি লিঙ্কঃ https://www.rokomari.com/book/43714/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%AC রেটিংঃ ১০/১০
Was this review helpful to you?
or
ঢাকায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যখন বুড়িগঙ্গা দেখতে গিয়েছিলেন। দুঃখ করে বললেন, “চোখে জল এল। একেবারে মরে গেছে। এখনো হয়তো উদ্যোগ নিলে একে বাঁচানো সম্ভব। নদীর সাথে সভ্যতার সম্পর্ক। নদী সংস্কার না হলে সভ্যতা বাঁচে না”। প্রকৃতির প্রতি লেখকের এই যে মায়া, এই যে আদর তাঁর দালালিক প্রমাণ হলো পার্থিব উপন্যাসটি। যেখানে কয়েকটি চরিত্রের সমন্বয়ে পার্থিবতার আড়ালে লেখক সারা পৃথিবীকে নিজের ঘর ভাববার আবেগ তুলে ধরেছেন। বইয়ের নামঃ পার্থিব লেখকের নামঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ঘরানাঃ মনস্তাত্বিক পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৭১৪ প্রকাশনীঃ আনন্দ প্রকাশনী প্রথম প্রকাশঃ ১৯৯৪ বিষ্ণুপদ, কৃষ্ণজীবন, হেমাঙ্গ, নিমাই এবং চয়ন। পার্থিব উপন্যাসের এই পাঁচটি পুরুষ চরিত্রের মষ্কিত্ব আলাদা হলেও হৃদপিণ্ড ছিল অভিন্ন। এই পাঁচটি পুরুষ চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে আর অনেক চরিত্র আবতর্ন করেছে পুরো উপন্যাসটি জুড়ে। সারাজীবন দারিদ্রতা সাথে যুজতে যুজতে ক্লান্ত বিরাশী বছরের অশীতিপর বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ জীবনের কালবেলাতে এসে মেজ ছেলে রামজীবনের অসম্পূর্ণ পাকা বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে। পেশায় ডাকাত রামজীবন অন্যায় আর দারিদ্রের শেষ সীমায় পৌছেও লড়াই করে শুধু নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে বলে। সত্যি মানুষ কত অদ্ভুত! বিষ্ণুপদর জেষ্ঠ্য ছেলে কৃষ্ণজীবন তাঁর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে পরিবারকে। অধ্যাপক এবং দার্শনিক কৃষ্ণজীবনের কলকাতার সাততলার উপরে একটি সাজানো ফ্ল্যাটে, সুন্দরী স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে সুখের পরিবার। খিদের জ্বালা পেটে নিয়ে দশ-বিশ মাইল পায়ে হেটে পাড়ি দেয়া পুরনো কৃষ্ণজীবন তবু কখনো যেন এই সফল কৃষ্ণজীবনকে ছেড়ে যায়নি। মানুষ কি চাইলেই সবকিছু বদলাতে পারে? মানুষের ক্ষমতা কতটুকু? বিষ্ণুপদর মেয়ে বীণাপাণির স্বামী নিমাই এর একমাত্র যোগ্যতা সততা। যার মূল্য দিতে গিয়ে অভাবগ্রস্ত স্ত্রী বীণাকে যাত্রা পালায় নাম লেখাতে। লোভের স্রোতে গা ভাসিয়ে বীণা সেই স্রোতে নিমাইকেও টানতে থাকে। কিন্তু নিমাই অবিচল। সততা যেন চামড়ার মত লেপটে আছে তাঁর অস্তিত্ব। সত্যি কি সততার কোন অন্য চেহারা আছে যা মানুষের রোদে পোড়া সাধারণ চেহারার মাঝে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে? পারে সেই মানুষকে নতুন করে জীবন দিতে? পাঁচ ফিট এগার ইঞ্চির হেমাঙ্গ যেন বৈভবের মাঝে দিশেহারা। আর সেখান থেকে পালাবার একটা আলাদা আস্তানা গড়ে নেয় হেমাঙ্গ। সুন্দরবনের কাছে নি শিপুরে নদীর পাড়ে এক চিলতে ঘরে হেমাঙ্গ খুঁজে নেয় নিজের ব্যক্তিগত স্বর্গ। নদী যখন প্রমত্তা হয়ে ওঠে, গগনদেব যখন আক্রোশে নির্মাণ করে প্রলয়ংকরী ঝড়ের যখন সেই তান্ডের এক সৌন্দর্য আছে। যা মুগ্ধ করে হেমাঙ্গকে। বলে দেয় পৃথিবী কারো জ্ঞানের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। সে অসীম। এই উপন্যাসের আপাতদৃষ্টিতে সবথেকে দুর্বল চরিত্র হয়তো চয়ন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এপিলেপটিক চয়ন অপরাজেয়। যে বার বার ভাঙ্গে কিন্তু মচকায় না একটিবারও। বিষ্ণুপদ স্ত্রী নয়নতারাকে একবার একটি কথা বলেছিল, কোথায় পালিয়ে পার পাওয়া যায় না, নিজের মাঝেই ডুব দিতে হয়। হয়তো এই পাঁচ জন চরিত্রের মাঝে সেই ডুবটা চয়ন সবথেকে ভাল দিয়েছিলো। নিজের মাঝে নিজে ডুবে থাকার শিক্ষাটা না জানলে চারপাশের সস্তা ভাবনাগুলো ছিঁড়ে খেতে শুরু করে মনকে যার সবথেকে বড় উদাহরণ বিষ্ণুপদ নিজে। ব্যক্তিগত মতামতঃ সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই সময় আমার জীবনের পড়া শ্রেষ্ঠ দুটি উপন্যাস। প্রায় সাতশো ত্রিশ পৃষ্ঠ উপন্যাস দুটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছিলো এত অসাধারণ বই হয়তো আর পড়তে পাব না। পাইওনি। কিন্তু এইবইগুলো পড়ার সময় মনে হয়েছিলো কিছু অসাধারণ চরিত্রের সাথে দীর্ঘ এক পথচলার যাত্রী আমি। যখন শেষ হলো তৃপ্ত হলাম, ক্লান্তও হলাম। কিন্তু শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাতশত চৌদ্দ পৃষ্ঠার পার্থিব উপন্যাসটি শেষ করার পর মনের মাঝে শুধু যেন শব্দ এসেছে “ফুরিয়ে গেল?” পার্থিবতা মোহজাল সাতশো পৃষ্ঠা কেন, যেন সাত হাজার পৃষ্টাতেও কাটবে না। জীবনের লৌকিকতা আর পার্থিবতার ছবিটা একদম জীবন্ত উপন্যাসটিতে। পড়ার সময় যেন চরিত্রগুলো নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ওদের হাসি যেন আমার হাসি, ওদের কষ্ট যেন আমার কষ্ট, ওদের বেঁচে থাকাটার মাঝেই যেন আমিও আছি। উপন্যাটির শেষ লাইন হলো, "এসো আমার সঙ্গে তুমিও কাঁদো, এসো কান্নায় একাকার হয়ে যাই। একাকার হয়ে যাই ।" আমিও যেন একাকার হয়ে গেছি কখনো কৃষ্ণজীবন, কখনো চয়ন আবার কখনো বা নিমাই এর সাথে। একাকার হয়ে গেছে কতগুলো অদৃশ্য পরিবারের সাথে যাদের বাস্তবে কোনদিন দেখা যাবে না কিন্তু কল্পনায় তাদের সুখ-দুঃখ, পার্থিবতা বেঁচে থাকবে শেষ সীমা পর্যন্ত।