Our User Product Reviews

এ দেশে নির্বাচনী ঋতুতে লাল চায়ের খুব রমরমা, ছাতা-মার্কা কি চেয়ার-মার্কা মারা কাছারিতে ঢুকলেই মাঙনা চা, সেই চা মুখে দিয়ে আমাদের ছেলেপুলেদের স্থানীয় সরকারে হাতেখড়ি হয়। ছেলেবেলায় বিদ্যের বহর এত দূর থাকলেই বেশ, কিন্তু সেখানেই চিরকাল কড়ার হয়ে থাকলে দশজনের অমঙ্গল। তেমন কাঁচা পাঠকের জন্য এই বইটি আহামরি। ভাবনাটায় একটু ঝাঁকি দিলে যেসব প্রশ্ন গোড়াতেই ঝুরঝুর করে ছড়িয়ে পড়ে, তার সব কটির উত্তর এই ঝালরের মধ্যে আছে। লেখক বইটিকে মোটা দাগে দুই ভাগ করেছেন। প্রথম ভাগ—স্থানীয় সরকারের একটি সামান্য চিত্র। হিন্দুযুগ থেকে এই ছবির আরম্ভ, সহস্র বছরের ইতিহাসে একটা ত্বরিত চক্কর মেরে তিনি পৌঁছলেন এখনকার কাঠামোতে। ছবিটি বেশ মনে গেঁথে যাওয়ার মতো, তবে এত ফরশা নয় যে অলিগলিও মুখস্থ হবে। গুচ্ছের টীকা-ভাষ্য, পরিশিষ্ট জোগাড় করেছেন তিনি, এ সব ছেলে-বুড়ো সবারই সহায় হবে। বইটির জন্ম হয়েছে মহাফেজখানার আঁতুরঘরে। লেখকের সাফসুতরা পা, ধুলোকাদার দাগ নেই। এর ছোঁয়াচ দ্বিতীয় ভাগে কিছুটা পড়ল মনে হয়; নিয়মের ব্যামো বুঝতে নথিপত্র ঘাঁটলেই চলে, কিন্তু যে সপ্রাণ ‘স্থানীয় সরকার’ গ্রাম-বন্দরে ধুকপুকানি নিয়ে বেঁচে আছে, তার ক্ষতটা বুঝতে পথে নামা জরুরি। নতুন প্রশ্ন লেখক তুলেছেন বটে, তবে সেখানে হামেশাই ‘মেলেনি উত্তর’। তারপরেও বইটির পুঁজির ঠাঁটবাট কম নয়, কারণ স্থানীয় সরকারের বিবর্তনে আমাদের রাজনীতির ইতিহাসের কড়া ছাপ তিনি গিঁটে গিঁটে মিলিয়ে দেখেছেন, রাজস্ব কেন্দ্র থেকে ছিটিয়ে দেওয়া এবং লিঙ্গ ও উন্নয়নের ধারণা, উপজেলার ভূত-ভবিষ্যত, মূল সরকার আর স্থানীয় সরকারের লেনাদেনা—এ রকম নানান বিষয়ে তাঁর আলোচনা অর্থবোধক এবং আরও ভাবনার প্রেরণা। বইতে বিশ্লেষণ কম, বিবরণটাই বেশি—তবু আমাদের কাজের বোঝা এত হালকা যে এমন কেতাবেরও বড় অনটন আছে। কিছু অপ্রিয় কথা বলতে হচ্ছে। বইটির ধারণাগত কাঠামো বা তাত্ত্বিক পটভূমিটি স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার মতো। আমাদের সুশাসন, লিঙ্গ-চেতনা, বা এটা-সেটার জরুরত বোঝাতে তিনি গড়ি-ঘড়ি দোহাই মেনেছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি, হু-এর মতো প্রতিষ্ঠানের। ভাবখানা এমন যেন— ‘উনি-দের বরাত দিলেই ল্যাঠা চুকিয়া গেল।’ আমাদের স্থানীয় সরকার তো আমাদের দর্জি দিয়েই হবে, সেখানে বিদেশি টেইলার্সের কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকলে দেশের প্যাখনা গজাবে কেন?