Our User Product Reviews

বর্তমান সময়ে মৌলবাদী বলতে আমরা এমন একজন মুসলমানের কথা চিন্তা করি, যে একজন সন্ত্রাসী। প্রকৃতপক্ষে মৌলবাদী হলেন সেই ব্যক্তি যিনি কোন একটি বিশেষ মতবাদ বা তত্ত্বের অনুসারী এবং উক্ত বিষয়ে আনুগত্যশীল। যে ব্যক্তি একজন সফল চিকিৎসক, তাঁর চিকিৎসা বিষয়ক মৌলিক বিষয়াবলী সম্পর্কে জানা, অনুসরণ করা এবং চর্চা করা আবশ্যক। অন্যভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাকে মৌলবাদী বলা সঙ্গত। যে ব্যক্তি একজন উত্তম গণিতবিদ, তাঁকে গণিতের মৌলিক সূত্রাবলী ও বিষয়-আসয় সম্পর্কে ভালভাবে জানতে, বুঝতে ও অনুসরণ করতে হবে। তার উচিত গণিতের অঙ্গণে একজন মৌলবাদী হওয়া। একজন উত্তম বিজ্ঞানীকেও বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়াবলী সম্পর্কে অবহিত থাকা, অনুসরণ ও চর্চা করা উচিত। বিজ্ঞানের জগতে তাকে মৌলবাদী হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। অনুরূপভাবে, যে ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী জানে এবং তা বাস্তব জীবনে অনুসরণ ও চর্চা করে, সেই একজন মুসলিম মৌলবাদী। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত একজন প্রকৃত মুসলিম মৌলবাদী হওয়া। এ কারণে তাঁর লজ্জিত না হয়ে গৌরব বোধ করা উচিত। কেননা ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী মানবতার পাশাপাশি সারা পৃথিবীর জন্যেও কল্যাণকর। ইসলামে এমন একটি মৌলিক বিষয় নেই, যা ক্ষতি সাধন করে অথবা সার্র্বিকভাবে মানবীয় স্বার্থের ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করে। অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে এবং ইসলামের কিছু শিক্ষাকে বৈষম্যমূলক অথবা অযথা বলে মনে করে। ইসলাম সম্পর্কে অপর্যাপ্ত এবং ভ্রান্ত ধারণার কারণেই এমনটি হয়েছে। কেউ যদি খোলা মনে ইসলামের শিক্ষাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে, তবে একথা না বলে পারবে না যে, ইসলাম ব্যক্তি ও সামষ্টিক উভয় পর্যায়ে প্রভূত কল্যাণ দ্বারা পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছে। ইসলামের আলোচিত ভুল ধারণাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়টি হলো জিহাদ। জিহাদের অর্থ সবন্ধে কেবল অমুসলমানদের মাঝেই নয়, এমনকি মুসলমানদের মাঝেও ভুল ধারণা আছে। বেশির ভাগ মানুষই, মুসলমান হোক আর অমুসলমানই হোক, তারা মনে করে, যে কোন কারণেই মুসলমানরা যুদ্ধ করলেই সেটা হলো জিহাদ। এই ‘জিহাদ’ শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ ‘জাহদাহ’ থেকে। যার মানে হলো চেষ্টা করা, পরিশ্রম করা, উদ্যমী হওয়া। ইসলামিক অভিধান অনুযায়ী জিহাদ অর্থ কারো অসৎ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করা। ঊদাহরন্সারুপ, যদি কোনো ছাত্র চেষ্টা করে পরীক্ষায় পাস করার জন্য, তাকে আরবীতে বলে সে জিহাদ করছে। যদি কোনো চাকরিজীবী চেষ্টা বা পরিশ্রম করে তার মনিবকে খুশি করার জন্য সে ভালো কাজ দিয়েই করুক আর খারাপ কাজ দিয়েই করুক, সেটাই হলো জিহাদ। কোনো রাজনীতিবিদ যদি ভোট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে, সেটা ভালোভাবে হোক আর খারাপভাবেই হোক, সেটাকেই আরবিতে বলা হচ্ছে জিহাদ। জিহাদ বন্ধে আরো একটি ভুল ধারণা আছে যে, বেশির ভাগ মানুষ, মুসলিম হোক আর অমুসলিম হোক, তারা মনে করে, জিহাদ মানে পবিত্র যুদ্ধ। সত্যি বলতে, পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের কোনো জায়গায়ও ‘পবিত্র যুদ্ধ’ শব্দটা ব্যবহার করা হয় নি। ‘পবিত্র যুদ্ধ বা হোলি ওয়ার’ আরবিতে অনুবাদ করলে হয় ‘হারবুম মুকাদ্দাসা’। এ শব্দটা আল-কুরআনের কোথাও উল্লেখ নেই। সুতরাং জিহাদ শব্দের প্রকৃত অর্থ m¤^‡Ü প্রত্যেক মুসলমানের সতর্ক হওয়া উচিত। আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধ মানার ক্ষেত্রে আমরা যে চেষ্টা বা পরিশ্রম করব তাই হবে জিহাদ। এছাড়াও আমরা জানি যে, পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে জিহাদের ধরণ বদলায়। কোনো সময় মহানবী (সা.) বলেছেন, শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো সঠিক নিয়মে হজ্জ করা। মানে সঠিক নিয়মে তীর্থস্থান ভ্রমণ করা। আরেক জায়গায় মহানবী (সা.) বলেছেন, শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো বাবা-মায়ের সেবা করা। আরেক জায়গায় মহানবী (সা.) বলেছেন, শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলা। পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের বিরুদ্ধে জিহাদ, মৌলবাদ সংক্রান্ত অন্যান্য সকল বিভ্রান্তির, অপপ্রচার বা অপব্যাখ্যার পেছনে মূলত দায়ী মিডিয়া, বিশেষত পশ্চিমা মিডিয়া। এ কারণে আমাদের উচিত মিডিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া, মিডিয়া থেকে প্রচারিত কোন বক্তব্য একবাক্যে গ্রহণ না করে তা যাচাই-বাছাই করা। এসকল বিষয়ের সঠিক উপলব্ধি প্রদানের নিমিত্তেই ড. জাকির নায়েক কর্তৃক অত্র বিষয়ে যুগোপযুগী ভাষণ প্রদন করা হয় এবং অত্র গ্রন্থে সে ভাষণই তুলে ধরা হয়েছে।