User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার জন্য বাংলা একাডেমী একটি ছক বেঁধে দিয়েছিল। সেই ছকে লেখা হয়েছে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ফরিদপুর, নোয়াখালী, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ অন্তত ২০ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সেই ছকের বাইরে এসেও জেলাভিত্তিক ইতিহাস লিখেছেন মাহবুবর রহমান (গাইবান্ধা), আলী আহাম্মদ খান আইয়োব (নেত্রকোনা), সেলিনা শিউলী (বগুড়া), আনোয়ার হোসেন (যশোর), রজব বকশী (জামালপুর) প্রমুখ। এই ধারায় যুক্ত হলো বিলু কবীরের নাম। এবার বইমেলায় বেরিয়েছে তাঁর গাজীপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার বইয়ে তিনি ঢাকাসন্নিহিত এই জেলার মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজনা তথ্য উদ্ধার করেছেন। গাজীপুর জেলার সাধারণ তথ্য এবং উপজেলাওয়ারি অন্যান্য তথ্য প্রদানের পর তিনি চলে গেছেন অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলোতে। ১৯৭১ সালের গোটা মার্চ মাসের তারিখওয়ারি বিবরণ তিনি তুলে ধরেছেন। এই ধারাবিবরণ বেশ যৌক্তিক এবং বোধ্য। এরপর তিনি বয়ান করেছেন গাজীপুরের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের ভূমিকা। একাত্তরের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যে ঘটেছিল গাজীপুরে সেই তথ্য তিনি তুলে ধরেছেন। ২৫ মার্চ কালরাত এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার আগে ১৯ মার্চ তারিখেই গাজীপুরের অর্থাৎ তৎকালীন জয়দেবপুরে গড়ে ওঠে সশস্ত্র প্রতিরোধ। তখন স্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ তারপর যুদ্ধ হয়, নয় মাস পরে দেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭১ সালে এই এলাকা ছিল ঢাকা জেলার ঢাকা-উত্তর মহকুমার অন্তর্গত। এর কেন্দ্র ছিল জয়দেবপুর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জয়দেবপুরকে কেন্দ্রে রেখে ‘ভাওয়াল’ জেলা বাস্তবায়নের দাবি তোলা হয়। ১৯৭৮ সালে জয়দেবপুরকে মহকুমা করা হয়। শহরের নাম ঠিকই থাকে কিন্তু মহকুমার নাম হয় ‘গাজীপুর’। ১৯৮৪ সালে এটি একই নামে জেলায় রূপান্তরিত হয়। এই গ্রন্থের নাম গাজীপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না লিখে ‘মুক্তিযুদ্ধে জয়দেবপুর’ লিখলেই অধিকতর যথার্থ হতো। কারণ গাজীপুর নামে ১৯৭৮ সালের আগে কোনো এলাকার নাম ছিল না। বিলু কবীরকে ধন্যবাদ দিতে হয়, এই গ্রন্থে তাজউদ্দীন আহমদের অবদান বিশেষভাবে তুলে ধরার জন্য। তাজউদ্দীন আহমদ জাতীয় ইতিহাসের অংশ হলেও জয়দেবপুরের সন্তান হিসেবে ওই অঞ্চলের ইতিহাসেরও তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাঁর দুটি ভাষণও এই গ্রন্থের মূল্যবান দলিল। এই গ্রন্থে শ্রীপুর থানা ও জয়দেবপুর থানার যুদ্ধের বিবরণ যথাবিস্তৃত তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর ও কালীগঞ্জ থানার তথ্য পর্যাপ্ত নয়। গবেষক কিছু সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন। গাজীপুর জেলা পরিষদের সিদ্ধান্তে তিনি এই কাজ শুরু করেছিলেন। আর তাদেরই অনাগ্রহে এই কাজ পরিত্যক্ত হয়। অতঃপর কুষ্টিয়ার অধিবাসী বিলু কবীর নিজের উদ্যোগে, গাঁটের পয়সা খরচ করে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। বিলু কবীর গাজীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য যেমন উদ্ধার করেছেন, তেমনি অভিযুক্ত রাজাকারদের তালিকাও উদ্ধার করেছেন। বেশ কয়েকজন সংগঠন ও যোদ্ধার সাক্ষাৎকার এই গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। যুক্ত করেছেন জয়দেবপুর সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা ও হাইকমান্ড সদস্যদের ছবি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য কিছু ছবিও এই গ্রন্থের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বিলু কবীর নির্মোহ থাকার চেষ্টা করেছেন। তিনি যা বলেছেন, তার পেছনে তথ্য-দলিল খোঁজার চেষ্টা করেছেন। অযথা কাউকে বড় কিংবা অবজ্ঞা করার চেষ্টা তিনি করেননি। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেই তিনি এই ইতিহাস রচনা করেছেন, তাই তথ্যের ঘাটতি থাকলেও অসততা ও অস্পষ্টতা নেই বলে মনে হচ্ছে।