User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ অরণ্য বেতার। লেখকঃ সৈয়দ আবুল মকসুদ। পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫২ প্রচ্ছদ শিল্পীঃ কাইয়ুম চৌধুরী। প্রকাশকঃ প্রথমা প্রকাশন। একটি অস্বাভাবিক সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাঙালি যোদ্ধারা সামরিক কৌশল কিংবা আধুনিক সমরাস্ত্র- কোনও ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের সমকক্ষ ছিল না। বাঙালিরা যে ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল সেটি হল দেশপ্রেম ও প্রচণ্ড রকমের মনোবল। যে পরিস্থিতিতে বাঙ্গালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে, তার নজির বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। কোনও সাংগঠনিক পরিকল্পনা এবং দাপ্তরিক যুদ্ধঘোষণা ছাড়াই বীর বাঙ্গালিরা যুদ্ধ শুরু করে দেয়। মূলত মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় পশ্চিমা হানাদারদের পাশবিক আক্রমনের প্রতিরোধ এবং প্রতি-আক্রমনের ভিত্তিতে। দীর্ঘ নয় মাস প্রবল সংগ্রাম এবং লাখো মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অবশেষে স্বাধীন হয় এই সোনার দেশ। প্রাসঙ্গিকভাবে বলাই যায় যে দেশের মুক্তিকামী সাধারণ জনতাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নায়ক। দেশের বাঙালি সামরিক সেনা সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, ভারতীয় মিত্রবাহিনী- এঁরা ছিলেন পার্শ্বশক্তি। তাঁরা যোদ্ধাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন, কেউ কেউ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধও করেছেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনতার সংগ্রাম, কোনও সামরিক বা রাজনৈতিক সংগ্রাম নয়। ঘটনাপ্রবাহে তাঁদের আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে মাত্র। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়- কথার যুদ্ধ। কে স্বাধীনতার ঘোষক, তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় ইতিহাসেরও। এর ফলে সাধারণ জনগণ হয় দ্বিধান্বিত। কিন্তু যুদ্ধকালীন ঘটনাপ্রবাহের স্বরূপ কি? এর জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনেক দ্বন্দ্বই দূর করে দেয়। স্বাধীনতার কথা কিংবা যুদ্ধের খবরাখবর সাধারণ মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতে বড় একটা ভূমিকা রেখেছিল ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’। যে সামরিক কর্মকর্তার ঘোষণাকে পরবর্তীতে তার অনুসারী রাজনৈতিক দল স্বাধীনতার ঘোষণা বলে দাবী করে, সেই মেজর জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ঘোষণাটিও সম্প্রচার করা হয়েছিল এই কেন্দ্র থেকেই। ২৬শে মার্চ কিভাবে এবং কি পরিস্থিতিতে ওই বেতার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কেমন ছিল তার পথচলা, তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবানিতে শোনাই সংগত। ’৭২ এর তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক রেকর্ডকৃত ৩০ জনের জবানবন্দির ভিত্তিতে তৈরি হয় এফআইআর বা ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাজনীতির পট পরিবর্তন হওয়ায় এই রিপোর্ট নিয়ে কোনও বই প্রকাশিত হয় নি। পরবর্তীতে রিপোর্ট তৈরিতে সম্পৃক্তদের মধ্যে অন্যতম জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ উক্ত ৩০ জনের মধ্য থেকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত ৬ জনকে নিয়ে তাঁর ‘অরণ্য বেতার’ বইটির কাজ সম্পন্ন করেন। একাত্তরের এপ্রিলে কলকাতার ‘দ্য স্টেটসম্যান’ এর বিশেষ সংবাদদাতা শ্রী অমূল্য গঙ্গোপাধ্যায় একটি প্রতিবেদনে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রকে ‘জাঙ্গল রেডিও’ বা ‘অরণ্য বেতার’ নামে অভিহিত করেন। লেখক বইটির নাম সেই প্রতিবেদন থেকেই নিয়েছেন। এফআইআর এ রেকর্ডকৃত জবানবন্দি সংরক্ষণের অভাবে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বক্তব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়নি বলে লেখক আফসোস করেছেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, প্রমুখ। তবে যাঁদের জবানবন্দি উল্লেখ আছে, তাঁরাও যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা হলেনঃ আবদুল্লাহ-আল-ফারুক, মুস্তফা আনোয়ার, রেজাউল করিম চৌধুরী, আ ম শারফুজ্জামান, কাজী হাবীব উদ্দিন আহমদ (মনি), এবং সৈয়দ আবদুশ শাকের। তাঁদের জবানবন্দি ছাড়াও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, টেলিফোন কল সম্পৃক্ত ঘটনা, বেতার কেন্দ্রের সূচনা, সেখান থেকে সম্প্রচারিত ঘোষণা, কথিকা ও খবর সম্পর্কেও উল্লেখ রয়েছে বইটিতে। দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা ও লেখালেখির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত ‘অরণ্য বেতার’ বইটি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত হবে বলে আশা করি।