User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথের তিনবার জাপান ভ্রমণ, জাপানি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ, জাপান সম্পর্কে চিন্তা ও তাঁর মূল্যায়ন—সব মিলে রবীন্দ্রনাথ ও জাপান নিয়ে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা নিয়ে এ বই। তিনটি লিখেছেন দুজন জাপানি লেখক, যাঁরা রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী; দুটি রচনা বাংলাদেশি লেখকের—যাঁদের আগ্রহ রয়েছে জাপান এবং রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে।
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবদ্দশায় জাপান ভ্রমণ করেন মোট তিনবার। প্রথমবার তিনি জাপানে যান সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের পর, ১৯১৬ সালে। রবীন্দ্র-কবিতার প্রথম জাপানি অনুবাদক মাশিনো সাবুরো তখন মৃত। মাশিনো মারা যান রবীন্দ্রনাথের জাপান ভ্রমণের অল্প কিছুকাল আগে। তাঁর মৃত্যু জাপানে রবীন্দ্রানুরাগী পাঠকদের জন্য বেশ বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য নয়, বরং তাঁর দর্শন জাপানে বেশ তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি করে। মূলত তাঁর দর্শন জাপানের জন্য উপযোগী কি না, সেটাই ছিল তখনকার তর্কের প্রধান বিষয়বস্তু। সেই মুহূর্তে ওই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে মাশিনোই ছিলেন একমাত্র বুদ্ধিজীবী, যিনি রবীন্দ্রনাথের প্রতি মৃত্যু অবধি তাঁর সমর্থন এবং অনুরাগ বজায় রেখেছিলেন। যদিও মাশিনোর অনুবাদ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল এ কারণে যে তাঁদের দুজনের প্রকৃতি ছিল বিপরীতধর্মী এবং ভারতীয় দর্শন সম্পর্কেও পরস্পরের চিন্তাভাবনার ভিন্নতা ছিল। তখনকার জাপানে সাহিত্যিক হিসেবে মাশিনো তেমন প্রভাবশালী না হলেও তাঁর প্রচেষ্টা ও আন্তরিক অনুরাগ ছিল প্রশংসনীয়। তা ছাড়া ঐতিহাসিক কারণেও মাশিনো গুরুত্বপূর্ণ। নোবেল পাওয়ার পর থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত জাপানে ব্যাপকভাবে রবীন্দ্রনাথের রচনা অনূদিত হতে থাকে। এরপর ১৯১৬ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত প্রায় আট বছর জাপানে রবীন্দ্রনাথের নতুন কোনো অনুবাদ প্রকাশিত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে জাপানের বুদ্ধিজীবী সমাজ প্রথম থেকেই বেশ দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তবু ১৯১৩ সালের পর জাপানে রবীন্দ্র-রচনা অনুবাদের জোয়ারের কালে নিঃসন্দেহে তাঁর একটি পাঠকগোষ্ঠী তৈরি হয়। ১৯২৪ সালে কবির দ্বিতীয়বার জাপান ভ্রমণ উপলক্ষে অল্প কিছু নতুন অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৯২৯ সালে শেষবারের মতো রবীন্দ্রনাথ জাপান ভ্রমণ করেন। এ ভ্রমণের প্রতিক্রয়াও ছিল খুব সামান্য। শেষবার জাপান ভ্রমণের পর সেখানে তাঁর প্রভাব একেবারেই ক্ষীণতর হয়ে আসে। পুনরায় জাপানে রবীন্দ্রনাথ আবারও পরিচিত এবং প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন ১৯৬১ সালে, তাঁর জন্মশতবর্ষে, যখন সেখানে আট খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’র অনুবাদ প্রকাশিত হতে শুরু করে। কার্যত জাপানে রবীন্দ্র-সাহিত্যের ব্যাপক বিস্তার শুরু হয় তখন থেকেই। জাপানে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব, সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সম্পর্ক, তাঁর দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে মোট পাঁচটি প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের জাপান, জাপানের রবীন্দ্রনাথ। বইটির চারজন লেখকের মধ্যে দুজন জাপানি এবং দুজন বাংলাদেশি। জাপানের লেখক কিওকো নিওয়া বেশ দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রবন্ধ লিখেছেন। কিওকো নিওয়া তাঁর প্রথম প্রবন্ধে জাপানে রবীন্দ্র অনুবাদের খুঁটিনাটি তথ্যের সঙ্গে সেখানে তাঁর প্রভাব, জাপানি বুদ্ধিজীবীদের তৎকালীন আচরণ, বিশ্বকবিকে নিয়ে জাপানিদের নানামুখী প্রতিক্রিয়া এবং প্রথম দিককার সেসব অনুবাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে কথা বলেছেন। কিওকো নিওয়ার দ্বিতীয় প্রবন্ধটির শিরোনাম ‘জাপান ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথ ও জাপানের জন্য কবির বার্তা’। একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাপানের জন্য রবীন্দ্রনাথের বার্তার প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই শীতল। জাপানের বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথের ‘শান্তিবাদী’ নীতিকে তখনকার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বরং বিপজ্জনকই মনে করেছিলেন। তা ছাড়া ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা ভারতের নাগরিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে তাঁরা একজন ‘অধঃপতিত’ জাতির সদস্য হিসেবে মূল্যায়ন করেছিলেন। উপরন্তু যে নোবেল পুরস্কারটি পাওয়ার পর তিনি জাপান সফর করেন, তা ছিল পাশ্চাত্যদেরই দেওয়া। কিওকো নিওয়া দেখান, জাপানি মূলধারার বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করেননি; তবে সেটা তাঁর কাজের জন্য নয়, বরং তাঁকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সে জন্য। হায়দার আলী খান তাঁর প্রবন্ধে রবীন্দ্র-মানসিকতা এবং তাঁর ওপর জাপানের সংস্কৃতি ও ব্যক্তির প্রভাব আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ জাপানিদের উগ্র জাতীয়তাবাদের খোলাখুলি সমালোচনা করেন। তখনকার প্রভাবশালী জাপানি বুদ্ধিজীবী নগুচির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পত্রালাপের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক অবস্থান এবং তাঁর চিন্তাচেতনার ক্রমপরিবর্তনের কিছু রূপরেখাও পাওয়া যাবে হায়দার আলী খানের প্রবন্ধটিতে। অসৎ উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথকে ব্যবহারের একটি উদাহরণ দিয়ে মনজুরুল হক তাঁর প্রবন্ধটি শুরু করেন। জাপানি জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। তখনকার বিশ্বে, অর্থাৎ ১৯১৬ সালের দিকে জাপানে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ও জাপানবাসীর উদ্দেশে দেওয়া তাঁর ভাষণ যেসব প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল, সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। কাজুহিরো ওয়াতানাবের প্রবন্ধটির নাম ‘জাপানে রবীন্দ্রনাথ বিস্মৃত’। এই বিস্মৃতির জন্য তিনি তিনটি কারণ শনাক্ত করেছেন; প্রথমত, এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে জাপানিদের উগ্র জাতীয়তাবাদের কঠোর সমালোচনা করেন রবীন্দ্রনাথ; দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জাপান প্রাচ্য নয় বরং আরও বেশি পাশ্চাত্যমুখী হয়ে পড়ে; তৃতীয়ত, আধুনিক মানুষের নানাবিধ দৈনন্দিন ব্যস্ততা। তবে রবীন্দ্রচর্চার মাধ্যমে জাপানিরা শান্তিময় জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠবেন বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।