User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম: 'ঢাকা পুরাণ' লেখক: মীজানুর রহমান প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন মূল্য: ৩০০৳ ( রকমারি.কম থেকে) পৃষ্ঠা সংখ্যা:২১৬ 'ঢাকা পুরাণ'- লেখক মীজানুর রহমানের লেখা বইটির নামকরণেই স্পষ্টত যে বইটি ঢাকার জানা-অজানা বিভিন্ন স্থান, কাল, পাত্রেরই সমন্বয়ে রচিত। সেই 'একই অঙ্গে কত রূপ' প্রবাদের মতো এই বইটিতে জানতে পারলাম ঢাকার ত্রিরূপ সম্পর্কে । একরূপ ব্রিটিশ শাসনামলের ঢাকা, মধ্যরূপ পাকিস্তান আমলের ঢাকা এবং শেষরূপটি আমাদের চিরচেনা মাতৃভূমি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার। সেই ব্রিটিশ আমলের নিরিবিলি ঢাকা হোক বা এখনকার এই জ্যামের শহর ঢাকাই হোক- যাই হোক না কেনো, ঢাকা তার রূপ,যৌবন যতোই পাল্টাক না কেনো,যতোই পুরোনো হোক বা যতোই জীর্ন হোকনা কেনো, তার প্রতি মানুষের টান কিন্তু কোন অংশেই কমেনি বরং দিনকে দিন বেড়েছে।ঢাকার ইতিহাসই এই মায়া, এই টান ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি। লেখকের লিপিযানে চড়ে ঢাকা ভ্রমণ করার শুরুর মুহূর্তেই সূচিপত্রের প্রথম স্টপেজ ছিলো নারিন্দা এলাকার ১১৩নম্বর শরৎগুপ্ত রোড, যার পুরোনো নাম ছিলো দয়াগঞ্জ।সেখান থেকে ক্রমান্বয়ে বকশী বাজারের কাছাকাছি 'চুহার বাজার' যা কি না ছিলো সাদা ইঁদুর অর্থাৎ গিনিপিগ কেনাবেচার স্থল, জয়নাগ রোডের কাছে বানরদের অভয়স্থল 'বানরটুলি', আহসানমঞ্জিলের রমরমা ইতিহাসের সাথে সাথে নতুন ঢাকায় তার ঘুণেধরা কড়িবর্গার কথা , কামিনীভূষণ রুদ্র রোড বা চাঁদনী ঘাটের হট্টবিলাসিনীদের হইহট্টগোলের আলাপ, সাঁচিবন্দর, জিন্দাবাহার,মালিবাগ,রমনার রেসকোর্স এ ঘোড়দৌড়ের মাঠ আজ যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শহরে কমলা সার্কাসের আগমন, মার্কিন মুলুক থেকে আগত সার্কারামের ঘুরন্ত পর্দার ত্রিমাসিক জাদু অভিজান,নামকরা প্রেক্ষাগৃহ 'ব্রিটানিয়া হল' এ দেখা বিভিন্ন ইংরেজি ছবি,প্রেক্ষাগৃহ 'মানসী', প্রেক্ষাগৃহ 'মুকুল' এর কথা,ঢাকার প্রথম প্রেক্ষাগৃহ 'নিউ পিকচার হাউজ', প্রেক্ষাগৃহ 'রূপমহল' যার নাম শুরু হয়েছিলো 'সিনেমা প্যালেস' পরিচয়ে.....একের পর এক অলিগলি, স্থান, কাল, পাত্র চলমান। ব্রিটিশ আমলে বিভিন্ন রাস্তার নামকরণের জানা-অজানা তথ্য যা কখনো মজার, কখনো গৌরবের অথবা কখনোবা অনুতাপের। এই যেমন 'ভিক্টোরিয়া পার্ক' এর নামকরণের পিছনের লজ্জাকর ইতিহাস অথবা ঘৃণ্য নবাব আবদুল গনির নামে 'নবাব আবদুল গনি রোড', আবার ধানমণ্ডি গ্রাম কিভাবে তার বিশাল ধানি জমি হারিয়ে হয়ে গেলো অভিজাত শহর। জমকালো চকবাজারের মুখরোচক ইফতারির ইতিহাস, ঢাকা শহরে কলেরার থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা,পুরান ঢাকার ঘুড়ি উড়ানোর ইতিহাস, নামকরা লেখক বা বিখ্যাত নায়ক-নায়িকার কথা আরো কতো কি! সাথে 'জাদুঘর', 'ঢাকা কলেজ', 'ইডেন কলেজ', 'বক্সীবাজার', ' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়', 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়', 'চারুকলা', 'ঢাকা মেডিকেল কলেজ', 'শহীদ মিনার', 'স্টেডিয়াম', ' লালবাগ কেল্লা', 'আহসান মঞ্জিল', 'বুড়িগঙ্গা নদী' এসবতো রয়েইছে। পোগোজ স্কুলের পিছনে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাক্ষ্ম সমাজ মন্দির এবং লাইব্রেরীর ইতিহাসও উঠে এসেছে তাঁর লেখনীতে, যা পরবর্তীতে ১৯৭১ এ বিহারীদের হাতে লুট হয়ে যায়।এছাড়াও লুট হয় ফরাসগঞ্জের 'নর্থবুক লাইব্রেরী'। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে শিখ সম্প্রদায়ের 'গুরুদুয়ারা'- ব্রিটিশ আমলে টেইলার সাহেব নিজেই যেখানে ঢাকা শহরের বুকে ১২টি গুরুদুয়ারা দেখেছেন, এখন সেখানে মাত্র এই একটিই সম্বল। ব্রিটিশ, নতুন বা পুরোনো ঢাকার ইতিহাসের মাঝে মাঝে লেখকের কৈশোর থেকে যৌবন সবটাই উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। শরৎগুপ্ত থেকে শুরু হয়ে, ঢাকার বিনোদন, চকবাজারের ফুল্ল কথা, কবি জসীমউদ্দিন, রমণীয় রমনা, দুধ ও আফিম সমাচার, ভিক্টোরিয়া পার্কের লজ্জাকর ইতিহাস,ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ হয়ে শেষ স্টপেজে ছিলো 'সংযোজন '- যেখানে আছে দেশভাগের পরে লেখকের ছেলেবেলার কলকাতা ফেলে ঢাকায় সপরিবারে পাড়ি দেওয়ার মন হু হু করা কাহিনী।মূলত ছেলেবেলায় কলকাতা ছেড়ে এসে ঢাকাকে লেখক কিভাবে দেখেছেন তাঁর এই বইয়ে সেসকল স্মৃতিচারণ মূলক তথ্যই গল্পাকারে উঠে এসেছে। বই এর শেষ স্টপেজে দাঁড়িয়ে একটাই কথা শুধু মনে এলো। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করে 'এই ব্যস্ত শহর, জ্যামের শহর ঢাকায় কিসের এতো টান?' উত্তর একটাই, 'জাদুর শহর ঢাকার ইতিহাসই, এই শহরের সবচেয়ে বড় টান।' যাকে নানাভাবে জেনেও জানার ইচ্ছা থেকে যায় 'আসমুদ্রহিমাচল।'
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার বই, ঢাকার বহু অজানা কথা জানতে এই বইয়ের জুড়ি নেই। তৎকালীন ঢাকার মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিলো জানতে হলেও এই বইটি অবশ্যপাঠ্য। অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখক তুলে এনেছেন তার শৈশব, কৈশর, যৌবনের এই প্রিয় ঢাকা।
Was this review helpful to you?
or
Average
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
ঢাকার ইতিহাস জানার জন্য একটি অসাধারণ বই।
Was this review helpful to you?
or
বেশ তথ্যবহুল বই
Was this review helpful to you?
or
a good one
Was this review helpful to you?
or
বকশী বাজারের কাছে নাকি এক সময় চুহার বাজার ছিল, সেখানে চলত সাদা ইঁদুরের বেচাকেনা! পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় নাকি শুধু দুটি বাস যাতায়াত করত! তাদের একমাত্র রুট ছিল সদরঘাট - চকবাজার - সদরঘাট। ঢাকাকে নিয়ে এরকম অনেক মজার ও অবাক করা গল্প (ইতিহাস) নিয়ে লেখা এই বই। পড়তে গিয়ে বহুবার ইচ্ছে করছে সেকালের ঢাকায় চলে যেতে। পুরানো দিনের ঢাকা নিয়ে যারা আগ্রহী তাদের জন্যে 'ঢাকা পুরাণ' বইটি রিকমন্ডেড।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটি বই.....
Was this review helpful to you?
or
ঢাকা শহরেই আমাদের বেড়ে ওঠা। সত্তরের শুরুতে নতুন ঢাকার রাস্তাগুলোই ছিল অপ্রশস্ত। ক’জন মানুষেরই বা গাড়ি ছিল তখন? যে জ্যাম আজ ঢাকা মহানগরীর ললাটলিখন, তার দেখা মিলত কেবল নবাবপুর-সদরঘাটের দিকে গেলে। তাও গাড়ি-বাসের নয়, রিকশার; মাঝে মাঝে অটোরিকশার। সেই ঢাকাই দু-তিন দশকের মধ্যে বেমালুম পাল্টে গেল। ভরাট হয়ে গেল জলাভূমি, মাঠগুলো আর থাকল না, বাইরে লনওয়ালা বাড়িগুলো হারিয়ে গিয়ে উঠল অ্যাপার্টমেন্টের পর অ্যাপার্টমেন্ট—এক চিলতে জায়গাও ছাড়া হলো না। যে মোহাম্মদপুর বা মিরপুরের শরীরে মফস্বলের সুবাস পাওয়া যেত, তা-ও ছেয়ে গেল ইট-কাঠ-কংক্রিটে। ঢাকা শহর তার কেন্দ্রের চতুর্দিকে মেলে দিল ডানা। সে ডানা কেবলই প্রশস্ত হচ্ছে। যে কারণে নতুন প্রজন্ম যখন বেয়াড়া প্রশ্ন করে বসে তা যথেষ্ট বিব্রতকর: এক শায়েস্তা খাঁ’র আমলে টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত— এ কথা বলে ওদের কাছে আর নিস্তার নেই—হাতীর পুল নাম কেন হলো এই রাস্তার, এখানে কি হাতীর চলাচল ছিল? মালিবাগে কি মালীরা থাকত? এই জায়গাটার নাম লোহারপুল কেন? ধানমন্ডি নামের কারণ কী? তোমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রেসকোর্স বল কেন?—প্রশ্নের পর প্রশ্নে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার উপক্রম। মীজানুর রহমান আমাদের বাঁচিয়ে দিলেন। ঢাকা শহরের শিরা-উপশিরার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিলেন। এমন নয় যে ঢাকার ইতিহাস আগে কেউ লেখেননি, কিংবা মীজানের পর এ বিষয়ে লেখা থেমে থেকেছে। তারপরও বলা যায়, মীজানের ঢাকা পুরাণ বইটি মন কাড়ে আড্ডার ভাষা আর রসের ভিয়েন দিয়ে তথ্য পরিবেশনার অসাধারণ ঢংয়ের কারণে। এক একটি অধ্যায়ে প্রবেশ মানেই আজকের পুরনো ঢাকার এক একটি রহস্যের উন্মোচন। শুরুতে সত্তর দশকের ঢাকার কথা বলেছি। মীজানুর রহমান আমাদের নিয়ে যান তার চেয়েও অনেক দূরের এক ঢাকায়। সত্তরের দেখা ঢাকার কথা আমরা যখন বলি, তখন আমাদের সন্তানেরা যে অপার বিস্ময় নিয়ে তা শোনে, মীজানুরের কাছ থেকে তারও বহু আগের ঢাকার কথা শুনে আমাদের মধ্যে সে একই বিস্ময়ের জন্ম হয়। মীজানুর তাঁর দেখা এবং তাঁর গবেষণা দিয়ে অজানা ঢাকাকে খুলে দিলেন আমাদের সামনে। মনোযোগী পাঠকের জন্য এ এক সোনার খনি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নামকরণ, ঐহিত্যবাহী খাবার-দাবার, বাজার, সিনেমা হল, মসজিদ-মন্দির, বইয়ের দোকান, আহসান মঞ্জিলসহ পুরনো প্রাসাদ, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, ঘোড়দৌড়ের মাঠ, জিন্দাবাহার-সাঁচিবন্দরসহ এমন অনেক বিষয় উঠে এসেছে, যাকে নতুন করে চিনে নিতে হচ্ছে, যার অনেককিছুই আজকের ঢাকায় পাওয়া যাবে না। আলোর ঝলকানির মতোই মাঝে মাঝে কিছু নাম উঠে এসেছে। হাবিবুল্লাহ বাহার, বুদ্ধদেব বসু, জসীমউদদীন, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ভানু বন্দোপাধ্যায়, শহীদ নিজামুদ্দীন আহমেদ, মাহমুদুল হক, কাইয়ুম চৌধুরী…এ রকম অনেক। সেগুলো তথ্য হিসেবে স্থির হয়ে থাকেনি, বরং ইতিহাসের গল্প হয়ে উঠেছে। তাই উল্টো করেই বলি, আমাদের চেনাজানা শহরটাকে এক বইয়ের আঘাতে অচেনা করে দিলেন মীজানুর রহমান। নতুন করে চিনতে হচ্ছে নিজেকে, নিজের শহরকে। তাই বইটি শেষ করেও মাঝে মাঝে পাতা উল্টিয়ে বার বার পড়ার আনন্দেই বিভিন্ন অধ্যায়ে চোখ রাখতে হয়। দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার…বহুবার ভাষা ও বিষয়বস্তুর কারণে ফিরে যেতে হয় বইটির কাছে। এ বড় আনন্দ যে, বইটি স্রোতস্বীনী নদীর মতোই টেনে নিয়ে যেতে পারে পাঠককে, এককালের প্রমত্তা ধোলাই খালের প্রবাহকে যেমন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেভাবে বন্ধ হয় না বইটির সচলতা, বরং পুনর্বার পঠনে তা আরো বেগবান হয়ে ওঠে।
Was this review helpful to you?
or
আমাদের প্রিয় ঢাকা আজকের রাজধানী কিভাবে এই দুঃসহ নগরীতে পরিণত হল? এই ঢাকা ছিল একসময় শান্ত,সুনিবিড়, প্রকৃতি ঘেরা সবুজে সবুজে একাকার এক মফস্বলের মত অস্তিত্ব। এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়ির দূরত্ব ছিল দূরবীন দিয়ে দেখার মত। এই ঢাকায় আজকে অশান্ত, জঞ্জাল পূর্ণ, শব্দময়তার ভীড়ে শান্তি খুঁজে পাওয়া এখানে দুষ্কর, আগে যেখানে এক মাইল জুড়ে ২০/৩০ ঘর খুঁজে পাওয়াও কষ্টকর ছিল, এখন সেই জায়গায় ১০০০ ঘরের বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই যেন। আগের ঢাকা ছিল horizontally বিস্তৃত, আর এখন horizontally তো বেড়েছেই--বেশি বেড়েছে vertically. আধুনিক বিল্ডীং নির্মাণশৈলী ও পশ্চিমা নগর ব্যবস্থা'র পুঁজিবাদী বসবাসের সমাধান হয় এখন আড়াআড়ি ভাবে। আড়াআড়ি ভাবে বসবাস না করলে এত মানুষের নাকি বসবাস অধিকার বঞ্চিত হবে। আসলে এক এক টা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এক এক ধরণের সমাজ ব্যবস্থার গড়ন মনের মধ্যে অঙ্কিত করে দিয়ে যায়। যেহেতু আজ অব্দী capitalism এর মত অধিক যুক্তিবাদী ও সর্বকল্যাণকর অর্থনীতি(অনেকের মতে) এখনো গড়ে উঠেনি সেহেতু এই যান্ত্রিক নগর ব্যবস্থাকেও হ্যাঁ বলাই বাস্তবসম্মত। আমি সম্প্রতি মীজানুর রহমান এর 'ঢাকা পুরাণ' পড়ে শেষ করেছি। পড়ার সময় আমার সারাক্ষণ মনে হয়েছে কোন প্রবীন ঢাকা প্রবাসী আমার কাছে ঢাকার গড়ে উঠার গল্প সিনেমা'র মত করে বর্ণনা করছেন। একবার ফ্ল্যাশব্যাকে মুঘল আমলে, আরেকবার বর্তমানে, আবার ব্রিটিশ পিরিয়ডে, আবার পাকিস্তানে। ব্রিটিশ পিরিয়ডের ঢাকা, পাকিস্তানের ঢাকা, অবশেষে বাংলাদেশের ঢাকা-মূলত এই তিন ঢাকাকে নিয়ে গল্প করেছেন লেখক। যদিও তিন সময়কাল--এর সুদূর অতীত কি না এসে পারে? কিভাবে এখানে চকবাজার স্থাপন হল, বিনটি বিবির মসজিদ এ বিনট বিবির শোক এখনো মুছেনা কেন?বর্তমান হাইকোর্ট ভবন থেকে কোন অভিশাপে ব্রিটিশ গভর্নর আবাস ত্যাগ করেছিলেন? রেস্কোর্সের বিনোদনে ঢাকাবাসী কীভাবে একত্রিত হত--এসব অতীত এর মাধ্যমে লেখক পরিচয় করিয়ে দেন ঢাকার অংগপ্রত্যংগ কিভাবে স্থাপিত হল--সমাজের মানুষের রোজদিনকার গল্প কিভাবে ঔপনিবেশিক শাসন অভিজ্ঞতা করেছিল, সদরঘাটের বিদ্যাপাড়ার আজ কি খবর, লুপ্ত ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের পিছনের ব্রাহ্মমন্দিরে "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে" র কবি কুসুমকুমারী দাশের পুত্র 'শুদ্ধতম কবি' জীবনানন্দ দাশের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সাধনা ঔষধালয়ের যোগেশ্চন্দ্রের "A stitch in time saves nine" প্রবাদের বাস্তবিকীকরনের গল্প, ১৯৫২ সালে হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর এর বুক ঝাঁঝরা হয়ে যখন শহিদ মিনার জন্ম দিল, তখন আস্তে আস্তে এই ঢাকা টের পাচ্ছিল একটি দেশের প্রসব বেদনা'র প্রথম অনুভূতি।১৯৭১ এ এত বীরশ্রেষ্ঠের গল্প থাকতে সামান্য দুধওয়ালা আহসানউল্লাহ'র ত্যাগস্বীকার ও মুক্তিযুদ্ধের পর তার আশংকা এই জাতির জন্য আজও মুক্তিযুদ্ধের সমান বার্তা বহন করে। লেখকের পুরো বইয়ে মূলত কয়েকটি বিষয় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। পুরান ঢাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাত্যহিক জীবন, ঢাকার সাহিত্যিক পরিমন্ডলের বিকাশ, এই নগরের বিনোদনের এক অকাট্য ইতিহাস, সিনেমা হল থেকে শুরু করে রেসকোর্সের ঘোড়দৌড় এর সরস আখ্যান, মফস্বল থেকে কোন রাজনীতির আদলে ঢাকা'র উন্নয়ন তত্ত্ব প্রকাশ পাচ্ছিল; এপার বাংলা ওপার বাংলা'র সাহিত্যক ও নাড়ির টান একসুতায় গাঁথার ইতিহাস, শিক্ষাবব্যস্থা, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের রক্তমাংসের ইতিহাস। এই বইয়ের যে স্মৃতিচারণ তা শুধু স্মৃতি চারণে আবদ্ধ ছিলনা। এই ঢাকা নগর হিসাবে যে বিবর্তন তার ঐতিহাসিক বর্ণনা থরে থরে প্রকাশ পেয়েছে। একজন ঢাকা বাসী হিসেবে যে সুস্থ পরিবেশের চাহিদা, এর সাথে জড়িয়ে আছে যে নাগরিকতার প্রশ্ন তাও নৈর্বক্তিক ভাবে ফুটে উঠেছে। লেখকের ঢাকার নগর ব্যবস্থাপনা নিয়ে সচেতন মন ধরা পড়ে নিচের বক্তব্যেঃ 'বিদ্যুৎ ছিল, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল, ছিলনা সুষ্ঠু পয়ঃপ্রণলী। সেকালে পায়খানা ছিল কাঁচা এবং মল ধারণের জন্য নিচে মাটির যে বড়সড় জালা থাকত, তার খোলা দিকটা রাস্তা মুখো হওয়ায় পথচারীর দৃষ্টিপথে ও নাসারন্ধ্রে যুগপত হানা দিতে কার্পন্য করতনা' ঢাকা কি আদৌ সুস্থ নগর হিসেবে গড়ে উঠতে পেরেছে? এর থেকে মফস্বলের গন্ধ এখনো কি গ্যাছে? ব্যাপারটা এমন না যে মফস্বল হলেই ঢাকা পিছিয়ে পড়ল। এর সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল নিয়ে তৎকালীন নানা সরকারের উদ্যোগের অভাব কে দারুণভাবে দায়ী করেছেন লেখক। আজকের ঢাকা আরো অনেক হাজারো সমস্যার সম্মুখীন। যে ঢাকায় বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ২/৩ লক্ষ লোক বাস করত সে ঢাকা পরিসরে আরো বেড়েছে ঠিকই কিন্তু লোক সংখ্যা বেড়েছে অনেক গুণ প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি!!! যে ঢাকা শহরের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একটি জাতি'র মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে, সেই ঢাকা শহরকে আজ পথ দেখাতে হবে সারা দেশকে। এর নাগরিক সুবিধা-যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ আরো অনেক সমস্যার সমাধান পথ দেখাতে পারে সারা দেশকে। কিন্তু মূল গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই ঢাকা বাসীর সাংস্কৃতিক বিকাশঃ এই প্রসংগে বিখ্যাত দার্শনিক-সমাজবিজ্ঞানী Henri Lefebvre বলেছিলেন এমন এক নগর গড়ে তুলতে যেখানে মনের পটে আঁকা স্বপ্ন গুলো যেন নগরে বাস্তবিক অস্তিত্ব লাভ করতে পারে। এতে করে বাস্তব আর কল্পনা'র সমন্বয়ে নাগরিকেরা গড়ে তুলতে পারবে এক সুন্দর সমাজ, বৈষম্যহিন সমাজ। মীজানুর রহমান অনেকটা দার্শনিক-অনেকটা শিল্পীর চোখ দিয়েই এই ঢাকাকে বুঝতে চেয়েছেন যেখানে অতীত সমাজজীবনের মধুর স্মৃতি সাথে নিয়ে একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে উঠার জন্য যে সাংস্কৃতিক সুস্থ পরিমন্ডল ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা'র প্রতিজ্ঞা পাশাপাশি অবস্থান করে। একটিকে ছাড়া আরেকটি যেন অচল।
Was this review helpful to you?
or
ঢাকার বাসিন্দা হিসেবে সবসময় আমার কৌতূহল ছিল এই শহরের ইতিহাস সম্বন্ধে।কিন্তু এই পর্যন্ত যেসব বই পড়েছি এই বিষয়ে তার সবগুলোতে পুঁথিগত ইতিহাস ছিল,ছিল না মানুষের গল্প।কিন্তু "ঢাকা পুরাণ" পড়ার পর এই আক্ষেপ ঘুচেছে।লেখক ঢাকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন গল্পের ছলে।ঢাকার সাধারণ মানুষের ইতিহাস জানার জন্য এই বইটি অবশ্য পাঠ্য।