User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
দাস্তাম্বু মানে হল পুষ্পস্তবক। মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব যিনি মির্জা গালিব নামেই বেশি পরিচিত; ১৮৫৭ সালের মে মাস থেকে ১৮৫৮ সালের জুলাই পর্যন্ত দিল্লি শহরে অবস্থানকালে সিপাহি বিদ্রোহ প্রত্যক্ষ করেন। সেই সময়ে শহরের সার্বিক পরিস্থিতি, বিদ্রোহের খন্ড খন্ড চিত্র সর্বোপরি নিজের শোচনীয় অবস্থা লিপিবদ্ধ করার প্রয়াসেই এই দিনলিপি লিখেন। বৃটিশ রাজের পেনশনের উপর নির্ভরশীল বৃদ্ধ কবি এই দিনলিপিকে মুদ্রিত আকারে বের করে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিয়ে উপকৃত হোন। বিদ্রোহের দরুন সরকারি পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কবি খুবই বিপাকে পড়ে যান। তাই তাঁর মুদ্রিত দিনলিপি যা মূলত বৃটিশ রাজের প্রশংসায় ভরপুর ছিল; পেনশন পুনঃবহাল করার আবেদনের সাথে সংযুক্ত করে স্থানীয় বৃটিশ শাসক ও লন্ডন বরাবর পাঠিয়েছিলেন। প্রতি উত্তরে পেনশনের কোন আভাস তিনি পান নি। বৈচিত্র্যে ভরপুর গালিব শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সভাকবি ছিলেন। উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে মানা হয় তাঁকে। তিনি তাঁর তখল্লোছ অর্থাৎ উপনাম গালিব নিজে থেকেই গ্রহণ করেন, যার অর্থ হল জয়ী। তিনি তাঁর নিজের সময়ে কাব্যজগৎ কে প্রাণ উজার করে দিলেও বিনিময়ে পান নি কিছুই। তাঁর মৃত্যুর ১৪০ বছর পর তিনি উর্দু কবিতার প্রাণপুরুষ ও কিংবদন্তির কবির অভিধায় ভূষিত হোন। সিপাহি বিদ্রোহের দিনগুলিতে কবিকে যত দুঃখ, যন্ত্রণা সইতে হয়েছে তা আর অন্য সময়ের সাথে তুলনা হয় না। তারই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যায় দাস্তাম্বুতে। তিনি বিদ্রোহের সমালোচনা করেন অনেকটা একপেশে দৃষ্টি ভঙ্গী থেকে। সিপাহিদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাটের ঘটনাকে দেখেছেন অত্যন্ত ঘৃণ্য চোখে আর ব্রিটিশ সৈন্যদের শহর পুনঃদখল কালীন হত্যাকান্ড ও ততোধিক ভয়াবহ অনিয়মকে করেছেন ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা। শাসক শ্রেনির উপর অর্থ নির্ভরতাই যে তাঁকে এমন একচোখা করেছে তা সহজেই বোঝা যায়। ইতিহাস সচেতন এই কবির গভীর জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া যায় দিনলিপির শুরুতে মুখবন্ধের মাধ্যমে। পুরো বই জুড়েই তাঁর জ্ঞানের স্পর্শ পেতে থাকবেন পাঠকবৃন্দ। কদাচিৎ ভুল বানান চোখে পড়লেও বইটি সুখপাঠ্য নিঃসন্দেহে। বইটার মূল্যের প্রতি প্রকাশক আরেকটু মনোযোগ দিলে অনেক পাঠকই উপকৃত হবেন আশা করি। ব্যক্তিগত জীবনে চরম অসুখী এই কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রফেসর রশীদ আহমদ সিদ্দিকীর একটি মন্তব্য দিয়ে লেখা শেষ করছি, “মোঘলরা ভারতকে তিনটি জিনিষ দিয়েছেন; তাজমহল, উর্দু আর গালিব”!
Was this review helpful to you?
or
যেকোনো কাল-পরিসরে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনাসম্পৃক্ত উপাদানের অন্যতম বড় আধার সমসাময়িক ব্যক্তির স্মৃতিকথা, আত্মস্মৃতি, আত্মজীবনী বা দিনপঞ্জি। ইতিমধ্যে লিখিত সাধারণ বা প্রচলিত ঐতিহাসিক বিবরণের পাশাপাশি উল্লিখিত সাহিত্যিক বিবরণের গুরুত্ব তাই মোটেও হেলাফেলার কিছু নয়। ঠিক এই বিচারে ১৮৫৭ সালে সংঘটিত সিপাহি বিদ্রোহকে একেবারে অন্দরমহল থেকে অবলোকন করার সাহিত্যিক ভাষ্য উর্দু-ফারসি ভাষার কবি মির্জা গালিবের রোজনামচা বা দিনলিপি দাস্তাম্বু। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় সমগ্র ভারতে। একে অভিহিত করা হয় ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে, যাতে হিন্দু-মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রায় সমানে সমান। দাস্তাম্বুতে আমরা মির্জা গালিবের মতো একজন সংবেদনশীল অভিজাত ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিদ্রোহকে দেখার ও বিচার করার অবকাশ পাব। ঘটনার প্রেক্ষাপটে মির্জার দ্বান্দ্বিক চরিত্রটিকেই আমরা শুধু দেখব না, ইংরেজদের অনুগ্রহভাজন তথা তাদের পেনশনভোগী হওয়ায় শাসকদের প্রতি তাঁর অনুরক্তি ও অতিনির্ভরশীল মনের পরিচয়টিকেও প্রত্যক্ষ করব। ১৮৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা ইংরেজ শাসনের শতবর্ষপূর্তির লগ্নে সংঘটিত এই বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের হাতে তিনি ইংরেজ-নিধনকে ‘নক্ষত্রের চোখ দিয়েও রক্ত অশ্রু’ ঝরানোর মতো ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ইংরেজদের প্রতিশোধাত্মক ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্রোহী সেনাদের হত্যাযজ্ঞকে তিনি তেমনভাবে আমলে আনেননি। বরং বলেছেন, তারা ‘নিরপরাধ লোককে হত্যা করে না’। ইংরেজ নারী-পুরুষ ও শিশুদের হত্যাযজ্ঞের যে বর্ণনা তিনি তুলে ধরেছেন, তা মনকে মুহূর্তে আর্দ্র করে তোলে। দাস্তাম্বু খুবই ক্ষুদ্র আকারের বই। কিন্তু এর দালিলিক মর্যাদা অপরিসীম। চলমান ঘটনার বর্ণনায় তিনি দারুণ সব উপমার পর উপমার আশ্রয় নেন। বিশৃঙ্খল বিদ্রোহী ও লুটেরা লোকজনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলছেন, ‘তাদের বাচাল স্বভাব সর্বদা নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশে ব্যস্ত। তাদের দেখে মনে হয় যেন পানির বুকে ভেসে যেতে থাকা জাঙ্গিয়া।’ বলছেন, এসব ‘বজ্জাত লোকজন এখন আগুন আর বাতাসের ওপর রাজত্ব করতে উদ্যত। আমরা কিন্তু উদ্বিগ্ন মানুষ আর শোকাহত মানুষ, আমরা শুধু শান্তি ও নিরিবিলিতে বসবাস করতে চাই। আর ন্যায়বিচারের প্রত্যাশী।’ অন্যদিকে বিদ্রোহীদের ওপর যখন ইংরেজরা জয়ী হচ্ছে, তখন গালিব বলছেন, ‘পথভ্রষ্ট বিদ্রোহীরা শহরের ভেতর ও বাইরে থেকে শূয়োরের পালের মত পালাতে থাকে, আর বিজয়ীরা (ইংরেজরা) শহর ও কেল্লা দখল করে নেয়।’ এর পরপরই যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনভার গ্রেট ব্রিটেনের রানির এখতিয়ারে চলে যায়, গালিব তখন তাঁর প্রশস্তি করে রচনা করছেন কাসিদা। গালিব রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ওপরে উল্লেখ করা দ্বন্দ্ব ও ধন্দের শিকার হলেও বিদ্রোহের পটভূমিতে ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, শোচনীয় কপর্দকহীন দশা, অনাহারক্লিষ্টতা, মদের অভাব এবং নিজের ভাইয়ের অকাল দুঃখজনক মৃত্যুর যে বিবরণ তুলে ধরেছেন, তা সত্যিই মর্মবিদারী। পাশাপাশি নানা শ্রেণী ও পেশার লোকজন এবং তখনকার ভেঙে পড়া সমাজব্যবস্থার বিবরণও তুলে ধরেছেন নিজের পর্যবেক্ষণশীল ক্ষমতানুযায়ী। সে বিচারে দাস্তাম্বু ১৮৫৭ সালে সংঘটিত সিপাহি বিদ্রোহকে ব্যক্তির পর্যবেক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা এক অমূল্য স্মৃতিচারণাধৃত দলিল। জাফর আলম আমাদের দেশের একজন স্বনামধন্য অনুবাদক। উর্দু থেকে গালিবের এ বইটি অনুবাদ করে তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ। ‘প্রথমা প্রকাশন’ এ জাতীয় বইয়ের আরও অনুবাদে নিরলস হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৯, ২০১১