User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সারা বিশ্বে প্রতিবছর সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে তিন গুণ বেশি মানুষ মারা যায় বিষধর মৌমাছির কামড়ে। অথচ জীবনের শুরুতেই, সেই শৈশবেই অক্ষর পরিচিতির সুবাদে সাপ আমাদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে ভয়াল জন্তু বা প্রাণী হিসেবে। ওই যে আমরা তখন পড়ে থাকি ‘অ-তে অজগর’, তারই মনস্তাত্ত্বিক জের ধরে। কেবল সাক্ষর জনগোষ্ঠীর কাছেই নয়, সারা বিশ্বের সাক্ষর-অসাক্ষরনির্বিশেষে সবার কাছে সাপ এক ভয়ঙ্কর প্রাণীবিশেষ। তাকে নিয়ে গল্প-কাহিনির অন্ত নেই, পুরাণ ও প্রতীকের শেষ নেই। পাশাপাশি সে ধর্মেও আছে। ধর্মেরও উপাদান। তাকে ঘিরে যেমন আছে ঘৃণা, ভীতি, সংস্কার ও কুসংস্কার, তেমনি আছে ভক্তি আর শ্রদ্ধাও। এই ধারা চলিত সুদূর আদিমকাল থেকে বর্তমান কালপরিসরেও। সাপ মাত্র ৮৫ পৃষ্ঠার বই। এক অর্থে চটি কলেবরের। অথচ সাপ সম্পর্কে তা-ই হয়ে উঠেছে একটা কোষগ্রন্থস্বরূপ কিছু। লেখক রেজাউর রহমান। তিনি গভীর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা নিয়ে সাপের বিচিত্র জীবন-চক্র, তাদের বিবর্তন, আচার-অভ্যাস, অভ্যন্তরীণ অঙ্গসংস্থান বা তাদের শারীরবৃত্তীয় কলাকৌশল এবং তাদের উপকারী ও অপকারী দিকগুলোর যত দূর সম্ভব তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। বইটির এক জায়গায় তিনি আমাদের জানাচ্ছেন, “…পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির সাপ রয়েছে এবং এর মাত্র সামান্য অংশই বিষধর। বাড়িয়ে বললেও এই পরিমাণ শতকরা ১০ ভাগের বেশি হবে না। সেই সঙ্গে এটাও জানা প্রয়োজন, সব বিষদাঁতওয়ালা সাপ মানুষের জন্য সমান ক্ষতিকর নয়। সেখানে বিষের কার্যকারণ ও আক্রমণ-প্রকোপেরও যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। কোনো প্রজাতির সাপ বেশি ক্ষতিকর, কোনো প্রজাতির সাপ খুব বেশি ক্ষতিকর নয়। কোনো কোনো জাতের সাপ বিষধর হলেও এরা যে মানুষকে কামড়ায় বা ছোবল মারে, তেমনটা শোনা যায় না। সুতরাং এই বৃহৎ গোষ্ঠীর শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি নিরীহ শ্রেণীর এবং এগুলো আমাদের জন্য মোটেই আশঙ্কাজনক নয়। বরং এগুলো আমাদের কৃষিপণ্যের ভাগীদার অনেক প্রাণী, যেমন—ইঁদুরদের খেয়ে পক্ষান্তরে আমাদের উপকারই করে থাকে। “পৃথিবীর তাবৎ প্রাণী, সে হিংস্রই হোক আর অহিংস্রই হোক, এই অনন্যসুন্দর প্রকৃতি বসুন্ধরার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই দৃষ্টিতে বন্য জন্তু-জানোয়ারের ক্ষেত্রে ‘হিংস্র’, ‘ভয়ংকর’, ‘মৃত্যুভয়াল’—এ ধরনের যেসব শব্দ আমরা সচরাচর ব্যবহার করে থাকি, সঠিক অর্থে তা যুক্তিসংগত নয়। সেটা একধরনের নিষ্ঠুরতাও বটে।” ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই লেখক রেজাউর রহমান অগ্রসর হয়েছেন। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর এই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয়। ‘অ-তে অজগর: জানার প্রথম সোপান’, ‘পুরাণ ও শিল্প-ভাস্কর্যে সাপ’, ‘সাপের আদি পরিচয়’, ‘সাপের গড়ন ও জীবনপ্রক্রিয়া’, ‘সাপ ধরার পেশাগত কৌশল’, ‘সাপের শ্রেণীবিভাগ ও বিস্তারভূমি’, ‘বাংলাদেশের বিষধর ও অবিষধর সাপ’, ‘সাপের বিষ ও বিষক্রিয়ার চিকিৎসা’, ‘সাপের পরিবেশতাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা’, ‘সাপ ও কুসংস্কার’ এবং ‘বন্যজীবন সংরক্ষণ’ শীর্ষক অধ্যায়গুলোর পাঠে আমরা শুধু চমৎকৃতই হব না, সমভাবে আমাদের মন ও মননে, সর্বোপরি, অবচেতন মনের খোপে খোপে সাপকে ঘিরে যে ধারণাগত অন্ধকার জমা হয়ে আছে, সেটা দূর হতে সাহায্য করবে। উল্লিখিত অধ্যায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঋদ্ধ হচ্ছে ‘সাপ ও কুসংস্কার’ শিরোনামের অধ্যায়টি। অধ্যায়টি আবার ‘সাপের বিষ নামানো’, ‘সাপের মাথার মণি’, ‘সাপের পা দেখা’, ‘সাপ গরুর দুধ খায়’, ‘সাপে-নেউলে সম্পর্ক’, ‘সাপুড়ের বিচিত্র বাঁশি’, ‘সাপের বিষ হজম করা’, ‘সাপের গুপ্তধন পাহারা’ ও ‘সাপ প্রতিশোধপরায়ণ’ শীর্ষক উপশিরোনামে বিভক্ত। স্বীকার করতে দোষ নেই, রেজাউর রহমান যে সত্যিকার অর্থেই পরিশ্রমনিষ্ঠ, যুক্তিবাদী মনস্বিতার অধিকারী—এ বইয়ের এই অধ্যায়টি পাঠ করলে সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোথাও তিনি গোঁড়ামির আশ্রয় নেননি। এ রকম একটি আলোকিত বই রচনার জন্য রেজাউর রহমানকে অজস্র অভিনন্দন।